জানি তুমি ফিরবে পর্ব -১৪

#জানি_তুমি_ফিরবে
[পর্ব – ১৪]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

তিশা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সামনে বসে থাকা সেই লোকটার দিকে। তিশা মনে মনে ভাবতে থাকে কি হচ্ছে এসব? উনি কি ভাবে ফিরে আসতে পারে আবার? কোন মৃত লোক আবার কি ভাবে ফিরে আসে? আসলে তিশার সামনে বসে থাকা লোকটা আর কেউ না। সে হলো তিশার আগের স্বামী নিহান চৌধুরী।

নিহান তিশাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। আর সে তিশার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর তিশা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো নিহানের দিকে।

এবার নিহান চৌধুরী তিশার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। নিহান তিশার সামনে এসে তিশার দুই গালে হাত দিয়ে বলল — কেমন আছো তিশা?

তিশা নিশ্চুপ,,,

ধ্রুব তিশার গালে নিহানের হাত দেখে ধ্রুব হাত সরিয়ে দিয়ে বলল — কে আপনি?

নিহান ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল — আমি তিশার হাসবেন্ড। নিহান চৌধুরী।

নিহানের কথা শুনে ধ্রুব অবাক হয়ে বলল — মানে? বুঝলাম না!

— আপনি তিশাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তাহলে খুব সহজে বুঝতে পারবেন। আর হ্যাঁ আপনি কে? আপনাকে কেন আমাকে এতো কৈফিয়ত দিতে হবে?

— কারণ আমি তিশার হাসবেন্ড।

নিহান একটা হাসি দিয়ে বলল — তিশার হাসবেন্ড আমি ওকে!

এবার নিহান তিশার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — কি হলো তিশা তুমি কথা বলছ না কেন?

তবুও তিশা নিশ্চুপ,,,

নিহান আবার বলল — আমি জানি তুমি আমার উপরে রাগ করে আছো। আজ দুই বছর পরে আমি ফিরে আসলাম।

ধ্রুব এসব বলছে আর এমন সময় মিজান সাহেব বাসায় চলে আসলো। মিজান সাহেব নিহানকে দেখে বলল — কে তুমি বাবা?

— আমি নিহান চৌধুরী।

— তা এখানে কি কারোর কাছে আসলে নাকি?

— হুম আমি আমার বউকে নিতে আসছি।

— বউ নিতে আসলে মানে বুঝলাম না? আমাদের বাসায় কি তোমার বউ আছে নাকি?

— হুম আছে। তিশা আমার বিয়ে করা স্ত্রী।

বিহানের কথা শুনে যেনো মিজান সাহেবের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ধ্রুব তিশার সামনে গিয়ে বলল — তিশা তুমি চুপ করে আছো কেন? ওই লোকটা কি বলছে এসব?

তিশার কোনো রেসপন্স না পেয়ে ধ্রুব তিশাকে একটা ধাক্কা দিতেই তিশার ধ্যান ফিরে আসে।

ধ্রুব বলল — তিশা এই লোকটা কি বলছে তুমি নাকি ওর স্ত্রী? এসব কি তিশা?

— উনি ঠিকি বলছে।

তিশার কথা শুনে ধ্রুব তিশার হাত ধরে বলল — কি বলছ তুমি এসব? তুমি না বললে তোমার আগের হাসবেন্ড মারা গিয়েছে তাহলে এটা কে।

— আমিও কিছুই বুঝতে পারছিনা। এটা অন্যকেউ হবে। যে লোক মারা যায় সে আবার ফিরে আসে কি ভাবে?

তিশা এবার নিহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — আপনি কে? সত্যি করে বলুন!

— তিশা আমি নিহান।

— আপনি নিহানের মতো দেখতে কিন্তু নিহান না। কারণ নিহান তো মারা গেছে। নিহানের লাশ আমি নিজের চোখে দেখেছি।

— তিশা বিশ্বাস করো আমি নিহান। আর হ্যাঁ মনে পড়ে আমাদের বিয়ের প্রথম রাতের কথা। আমরা দুই জনেই ছেয়ে ছিলাম আমাদের যেনো একটা কন্যা সন্তান হয়। আর আমরা আমাদের মেয়ের নাম ও ঠিক করছিলাম। আমি এখনো কিছুই বলিনি।

তিশা এবার বুঝতে পারে এটাই নিহান। কিন্তু তিশার মনে একটাই প্রশ্ন নিহান যদি বেচে থাকে তাহলে ওই লাশ কার ছিলো?

নিহান বলল — আমি জানি এতো দিনে কি কি হয়েছে। আমি বাসায় গেলাম সেখানেও সবাই আমাকে বিশ্বাস করে নাই প্রথমে। আসলে তোমরা আমাকে যাকে মনে করছিলে সে অন্য কেউ ছিলো। আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট হওয়ার পরে আমি ৬ মাস কোমায় ছিলাম। আমি আমার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলছিলাম। আমি একটা বাসায় ছিলাম অনেক দিন ধরে। তারা আমার দেখা শোনা করছে। এর মধ্যে কি ভাবে দুই বছর পার হয়ে গেলো আমি বুঝতেই পারিনি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও তিশা। আর আমার সাথে আমার বাসায় চলো তুমি।

ধ্রুব এগিয়ে এসে বলল — আপনার সাথে বাসায় যাবে মানে কি? তিশা আমার স্ত্রী। তিশা কোথাও যাবে না ও এখানেই থাকবে।

— তিশা আপনার স্ত্রী হলেও সে আমার স্ত্রী এখনো আছে। তার সাথে আমার এখনো ছাড়া ছাড়ি হয়নি।
তিশা চলো আমার সাথে।

তিশা কি করবে বুঝতে পারছেনা। তিশা নিহান কে বলল — আমি আপনার সাথে যেতে পারবোনা। আর আপনার আমার উপরে কোনো অধিকার নেই।

— হাহাহা অধিকার নেই মানে? এখনো অধিকার আছে। আমি তো তোমাকে নিয়ে যাবোই। প্রয়োজন হলে আমি আইনের সাহায্য নেবো।

— আপনার যা ইচ্ছে করুন। আমি কার সাথে থাকবো সেটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। আপনি এখান থেকে চলে যান।

— আমি তোমাকে না নিয়ে কোথাও যাবোনা তিশা।

এই কথা বলেই নিহান তিশার হাত ছেপে ধরলো। তখনই ধ্রুব এসে নিহানের হাত ধরে বলল — ওর হাত ছাড়ুন অনেক্ষন ভদ্রতা দেখিয়ে কিছুই বললাম না। এখন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার আগে এখান থেকে চলে যান।

— আমি এখন চলে যাচ্ছি তবে আমি আবার আসবো। তখন একা আর ফিরে যাবোনা তিশাকে সাথে নিয়েই যাবো। গুড বায়।

এই কথা বলে নিহান তিশার হাত ছেড়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। নিহান চলে যাওয়ার পরে তিশার বাবা-মাকে ফোন করে নিয়ে আশা হলো। তিশার মা-বাবা নিহান ফিরে আসার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো। সবাই চুপচাপ হয়ে বসে আছে। কারো মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। এখন কি করবে তারা?

মিজান সাহেব বলল — তিশা তুমি কি স্পষ্ট নিহানের চেহারা দেখে ছিলে ওর মৃত্যুর সময়?

— হুম কিন্তু ওর মুখ চেনার কোনো উপায় ছিলনা। কারণ পুরো মুখ পড়ে গিয়েছিলো।

— ওহ।

এবার ধ্রুব বলল — এখন কি করা যায় বাবা? আমি তিশাকে হারাতে পারবোনা। তোমরা কি করবে করো।

হঠাৎ করে মিজান সাহেবের ফোনে একটা কল আসলো। নাম্বার দেখে মিজান সাহেব চিনতে পারলো। আর নাম্বার টা ছিলো পুলিশের। আর এই পুলিশটা মিজান সাহেবের খুব কাছের একজন বন্ধু।
মিজান সাহেব তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করে বলল — হ্যালো। হঠাৎ করে ফোন দিলি কেন?

তারপর পুলিশ অফিসার বলল — তোর ছেলের নামে একটা মামলা হইছে। আর নিহান নামের একটা ছেলে মামলা করছে। তোর ছেলে নাকি তার বিয়ে করা বউকে অপহরণ করে তোর বাসায় রেখে দিয়েছে? কাহিনি কি বলতো আমাকে।

মিজান সাহেব পুলিশ অফিসারকে সব কিছুই খুলে বলল। পুলিশ অফিসার তো অবাক হয়ে গেলো কথাটা শুনে।

পুলিশ অফিসার বলল — এই ক্যাচ টা কোডে তোলা হবে। আর আমি একটা উকিল ঠিক করে দেবো। তুই ওনাকে সব কিছুই খুলে বলিস।

— ঠিক আছে বন্ধু।

— হুম রাখলাম।

পুলিশ অফিসার ফোন কেটে দিয়ে। পুলিশের সাথে বলা সব কথা বলল সবার কাছে। ধ্রুব রাগ করে নিজের রুমে চলে গেলো। তিশাও উঠে রুমের দিকে চলে গেলো। তিশা রুমে গিয়ে দেখে ধ্রুব খাটের উপরে বসে আছে। তখন তিশা ধ্রুবর কাছে গিয়ে বসতেই ধ্রুব তিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

তিশা ধ্রুবকে বলল — আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাবোনা।

— আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা তিশা। খুব বেশি ভালোবাসি তোমাকে। তুমি আমার থেকে ধুরে চলে গেলে আমার সব কিছুই এলোমেলো হয়ে যাবে। আমি তোমাকে অন্য কারো হতে দিতে পারবোনা। তিশা তুমি শুধুই আমার।

এসব বলছে আর তিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই যাচ্ছে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here