বেপরোয়া ভালোবাসা পর্ব -০৩+৪

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ০৩+০৪
#মনা_হোসাইন

-“আমি আর ভাইয়ার স্কুলে পড়ব না কাকীমা। মাত্র কদিন তো হয়েছে স্কুলে ভর্তি হয়েছি এখন চাইলে সহজেই স্কুল বদলানো যাবে তুমি বড় চাচাকে বলে আমাকে আপুদের স্কুলে ভর্তি করে দাও প্লিজ।

আদির মাকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল আদিবা। আদির মা মিনা বেগম জানেন আদি এটা সহজে মেনে নিবে না। কিন্তু আদিবার ভয় পাওয়ারো যুক্তি আছে। সামান্য একটা বিষয়ে আদিবাকে এভাবে বাথরুমে আটকে রাখা একদমি উচিত হয় না আদির। মিনা বেগম আদিবাকে সান্তনা দিয়ে বললেন তোর চাচা বাসায় আসুক আমি কথা বলব কেমন..?

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এর মধ্যে বেশ অনেকদিন পর আদিবার মা গ্রাম থেকে এসেছেন মেয়েদের সাথে দেখা করার জন্য। আদিবা তার মাকে কিছু না বললেও আদিত্যের বাবা আহমেদ সাহেব ফিরার পর আদিত্যের মা তাকে সব বলল তাতে খুব রেগে গেলেন আহমেদ সাহেব।

এদিকে আদিত্য সেই যে দুপুরে বেরিয়েছিল এখনো ফিরে নি সবাই আদিত্যের ফিরার অপেক্ষা করতে লাগলেন।

সন্ধ্যা পেরিয়েছে বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে বসে ছিল
তখন হাতে কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট নিয়ে বাসায় ঢুকল আদিত্য।আদরকে দেখেই আহমেদ সাহেব এগিয়ে গেলেন,

কোন কিছু না বলে আদরের গালে ঠাস করে থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বললেন,
-“তোর সাহস কি করে হলো এমন একটা কাজ করার..? সবার আদর পেয়ে সাপের পিছপা দেখেছিস তাই না?

আদি কিছু বলল না মাথা নিচু করে নিল।আদিত্য চোখমুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। আদিত্য যখন খুব রেগে যায় তার ফর্সা মুখে রাগের লাল আভা ছড়ায়।এটা নতুন কিছু না।

আদিত্য মাথা নিচু রেখেই আদিবার দিকে এগিয়ে আসল। অজানা আতঙ্কে কিছুটা সরে গেল আদিবা।

আদিত্য এগিয়ে গিয়ে আদিবার হাতে কাগজে মোড়ানো প্যাকেটটা দিয়ে বলল,
-“আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না আদিবা। তাই ব্লাড দেখে ভেবেছিলাম তুই ব্যাথা পেয়েছিস। তাই রেগে গিয়েছিলাম

আহমেদ সাহেব আবারো চেঁচিয়ে উঠলেন,
-“ব্যাথা পেলে তোর রাগতে হবে কেন? ও ব্যাথা পাক না পাক তুই ওকে শাস্তি দেয়ার কে..?

-“বাবা আমি….

-“তুই এখনো কথা বলার সাহস পাচ্ছিস কি করে..?

আদিত্য আর তার বাবার অবস্থা দেখে আদিবার মা শাহানা বেগম এগিয়ে আসলেন,

-“ভাইজান বাদ দিন ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি।

-“সবাই মিলে ওকে আদর দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলেছি তাই এত সাহস বেড়েছে কিন্তু আজ আমি কোন কথা শুনতে চাই না। আদিত্য এখনী আদিবার কাছে ক্ষমা চা…

আদিত্য চোখ গরম করে আদিবার দিকে তাকাল। ক্ষমা চাওয়ার মত কাজ আদি কখনই করবে না সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদিত্য বলে উঠল,

-“ক্ষমা করে দে আদিবা আর এমন হবে না…

আদিত্যের মুখে ভুল স্বীকারমূলক উক্তি শোনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল না আদিবার। সেকি ঠিক শুনেছে..? আদিত্য যত ভুলেই করোক না কেন কখনো তা স্বীকার করে না আজ হটাৎ সব নিয়ম ভেঙে গেল..??

বড় চাচার কথায় আদিবার হুঁশ ফিরল, আহমেদ সাহেব কড়া গলায় বললেন,

-“যাইহোক আদিবা আর তোমার স্কুলে যাচ্ছে না তাই এবার থেকে ওর পিছনে লাগা বাদ দিয়ে নিজের পড়াশোনায় মন দাও। কদিন পরেই তোমার মাধ্যমিক পরীক্ষা।

আদর অবাক হয়ে বলল,

-“ও স্কুলে যাবে না মানে??

-“মানে ও এখন থেকে অরিন আর সাদিয়ার স্কুলে যাবে।আমি কাল গিয়ে ওকে ভর্তি করে দিয়ে আসব।

-“কিন্তু কেন?

-“আমি চাই না আদিবা তোমার সাথে থাকুক।

-“আদিবাও কি তাই চায়?

-“হ্যা চায় তোমার মত ইডিয়েটের আশেপাশে কেইবা থাকতে চাইবে..?

আদিত্য আর কিছু না বলে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিল।আদিবাও নিজের ঘরে ফিরল তারপর কাগজের প্যাকেট টা খুলল, কাগজের ভিতরে এক প্যাকেট প্যাড কিছু চকলেট আর এক টুকরো কাগজ ছিল। কাগজের টুকরো টা হাতে নিয়ে আদিবা পড়তে শুরু করল।

-“মানছি আমি ভুল করেছি কিন্তু তুই ও কাজ টা ঠিক করিস নি আদিবা। আমি যখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিভাবে ব্যাথা পেয়েছিস? তখন আমাকে সব খুলে বললি না কেন? তুই জানিস তুই ব্যাথা পেলে আমার খারাপ লাগে তাই তোকে আগলে রাখতে চাই এটাই কী আমার দোষ..?
তুই কেন আমার সাথে সংকোচ ছাড়া কথা বলতে পারিস না? আমি কি বাইরের কেউ যে মন খুলে কিছু বলা যাবে না? তাছাড়া আমি মেয়ে না হলেও একজন মানুষ তো নাকি?কোন না কোন দিন এই ব্যাপারটা আমি ঠিকি জানতে পারতাম। হয়ত এখন জানতাম না আজ থেকে দশবছর পর বা তারো পরে হলেও জানতে পারতাম সেটা তোর থেকে নাহোক বা অন্য কারো কাছ থেকে জানতে হতই তাই না..? তাহলে এখন বললে কী অসুবিধে ছিল?

যদি আমার খুব ভুল নাহয় তুই খুব ভাল করেই জানিস তোর আর আমার বিয়ে শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যার মানে হল তুই সারাজীবন আমার সাথেই থাকবি। তাই আমার ক্ষেত্রে ভয়,লজ্জা এই ব্যাপারগুলো বাদ দিয়ে দে। তুই আমার সাথে যত ফ্রী হতে পারবি ততই ভুল কম করবি। ভুল না করলে শাস্তি পেতে হবে না। শাস্তি না পেলে আমাকে ভয় পেতে হবে না। আমি চাই না তুই সারাজীবন আমাকে ভয় পা।

আদিবা কাগজ টা পড়ে সাথে সাথে গুছিয়ে রেখে দিল। পৃথিবীর সবাই মিলেও যদি আদিত্যের সাথে তার বিয়ে দিতে চায় তবুও সে এই বিয়েতে রাজি না। এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না। আদিত্যের মত রাগী ছেলের সাথে সারাজীবন থাকা অসম্ভব। আদিবা পড়াশোনা শেষ করে নিজের মত থাকতে চায় আদিত্যের অত্যা*চার থেকে মুক্তি পেতে চায়।

যাইহোক ভবিষ্যতে কি হবে সে নিয়ে এখন না ভাবলেও চলবে আপাতত আদিত্যের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত কারন তার জন্য আজ আদিত্যকে থাপ্পর খেতে হয়েছে।

আদিবা ভয়ে ভয়ে আদিত্যের ঘরে এগিয়ে গিয়ে বলল,
-“আদি ভাইয়া আসব..?

দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল,
-“আয়….

আদিবা এগিয়ে গিয়ে আদিত্যের সামনে দাঁড়াল।আদিত্য মুখ তুলে বলল,

-“শুনলাম তুই নাকি স্কুল বদলাতে চাইছিস…

-“না মানে ভাইয়া আমার জন্য তোমাকে অনেক বেগ পেতে হয় তো তাই ভাবছিলাম…

-“স্কুল বদলাবি ভাল কথা কিন্তু স্কুলে যাওয়ার জন্য হাত পা আস্ত থাকবে তো..?

– ” ম ম মানে?

– “আমি কি বুঝাতে চেয়েছি তুই বুঝেছিস আমি জানি।

-“কিন্তু আপুদের স্কুলে পড়লে কি অসুবিধে ভাইয়া?

-“আমার তো কোন অসুবিধে নেই তুই সারাজীবনের জন্য হাঁটাচলার ক্ষমতা হারাবি তাতে আমার অসুবিধে কিসের যা অসুবিধে সেটা তো তোর।

আমি বিছানায় বসে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু মুখ করে বল্লাম,
– ভাইয়া আমি তো বলে দিয়েছি আমি আপুর স্কুলে ভর্তি হতে চাই এখন বড় চাচাকে কি বলে নিষেধ করব?

-” কিভাবে নিষেধ করবি সেটা তুই জানিস।তালবাহানা শুনার মত সময় আমার নেই।
আজকের রাত টা তোর কাছে সময় আছে হয় বাবার সিধান্ত বদলানোর ব্যবস্থা কর অন্যথায় সকালের জন্য প্রস্তুত হ…জানিস ত আমার কথার নড়চর হয় না। পা ভাংগব বলেছি মানে ভাংগবই

– ভাইয়া…

-আমার ঘরে কোন মেয়ের এতক্ষন থাকার অনুমতি নেই এখন যা এখান থেকে আমি শাওয়ার নিব।

কিভাবে কি করব বুঝতে পারছি না তবুও বাহানা বের করার চেষ্টায় লেগে পড়লাম কারন এছাড়া কোন উপায় নেই। আমি বিছানা ছেড়ে দরজার কাছে যেতেই ভাইয়া আবার আমায় ডাকল।

আমি পিছনে তাকিয়ে সাথে সাথেই আবার চোখ সরিয়ে নিলাম,কারন ভাইয়া শার্টের বোতাম খুলছে।

আমি লজ্জা পেয়েছি দেখে ভাইয়া বোতাম লাগাতে লাগাতে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে দাঁত কটমট করে বলল,

-“বলেছি না লজ্জা বাদ দিতে… আমার সাথে যেকোন ব্যাপারে ফ্রিলি কথা বলবি। যাইহোক,আচ্ছা আদিবা তুই আমার নামে নালিশ করার সাহস কোথায় পেলি?

প্রশ্নটা শুনেই গলা শুকিয়ে গেল আদিবার। কি উত্তর দিবে এখন?

-‘ভাইয়া আমি নালিশ করি নি…

-” নালিশ করেছিস কি করিস নি সেটা তোর কাছেই রাখ একটা কথা কান খুলে শোনে নে আজকের জন্য ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু যদি স্কুলের ব্যাপার টা ফয়সালা করতে না পারিস ওই শাস্তির সাথে এই শাস্তিটাও যোগ করে নিব বুঝেছিস?

ভাইয়ার কথার উত্তর দিতে পারলাম না চুপচাপ বেরিয়ে আসলাম। সকালেই চাচা আমাকে নতুন স্কুলে নিয়ে যাবেন যা করার আজকেই করতে হবে কিন্তু কিভাবে কি করব বুঝতে পারছি না এই বাসায় থাকলে কিছুদিনের মধ্যে আমি পাগল হব এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

অনেক ভেবে সিধান্ত নিলাম কাকীমনিকে বলব তাই নিচে গিয়ে সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে সবার ঘরে ঘরে দিয়ে এসে এক কাপ চা নিয়ে কাকিমার ঘরে গেলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে আবার থমকে গেলাম কারন ভাইয়া কাকিমনির ঘরে।

বিছানায় মায়ের কোলে মাথা রেখে পায়ের উপড় পা তুলে গেম খেলেছে সে। কাকিমা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে। ভাইয়া যতই ভুল করোক না কেন সে এই বাসায় সবার নয়নের মনি তাই কাকিমা প্রথমে থাপ্পর দিলেও এখন হয়ত ছেলের রাগ ভাংগাচ্ছেন আমি রুমে ঢুকব নাকি ঢুকব না ভাবছি। দরজার সামনে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাকিমা
বলে উঠলেন,

-“আরে আদিবা বাইরে কেন ভিতরে আয়।

কাকিমার কথায় ভাইয়া ফোন থেকে চোখ সরিয়ে একনজর আমাকে দেখে নিয়ে আবার খেলায় মনযোগ দিল। কাকিমা ভাইয়ার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে সরে বসে বললেন,

-হাতে কি চা নাকি?কে করেছে?

কাকিমার প্রশ্নের জবাবে বললাম
– আমি করেছিলাম কাকিমা…

কাকিমনি অবাক হলেন,
– তুই করেছিস? কিন্তু কেন?

আমি উত্তর দেয়ার আগেই আদিত্য উত্তর দিল,
-খেয়ে দেয়ে কাজ না থাকলে মানুষ কত কিছুই করে পতুল খেলে,শাড়ি পরে, চা করে…

আহ আদি তুই আবার ওর পিছনে লাগছিস? এত কিছুর পরেও তোর শিক্ষা হয় না..?চা করেছে খারাপ কিছু তো করেনি তাই না?

-“সেটাই, ও যাই করে সব ভালই করে…
আদিবা আজ থেকে আমার রাতের দুধ টা তুই করে দিস তো।

আমি মাথা নাড়লাম সাথে সাথেই কাকিমা বলে উঠল
-“ও দিবে কেন ও কি এসব পারে নাকি?

-“চা করতে পারে দুধ পারবে না…??

-“কাকিমা আমি পারব। আমি করে দিব ভাইয়া।

ভাইয়া মুখ বাঁকিয়ে তাছিল্যের হাসি দিয়ে খেলায় মন দিল।আমি কাকিমার কাছে এগিয়ে গিয়ে বল্লাম

-“কাকিমা একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম।

-“হ্যা বল কি বলবি…

-“আসলে আমি ভাইয়ার স্কুলেই থাকতে চাই।স্কুল বদলানোর দরকার নেই।

-“কী? কিন্তু কেন একটু আগেই তো বলছিলি তুই অরিনের স্কুলে ভর্তি হতে চাস।

– না মানে…

কাকিমা কি ভেবে যেন ভাইয়াকে বলল,
-বাবু নিজের ঘরে যা তো আমি আদিবার সাথে
একটু কথা বলব।

অন্য সময় হলে এটা বলার জন্য ভাইয়া কাকিমাকে হাজার টা কথা শুনাতো রাগারাগি করত কিন্তু আজ কোন জবাব দিল না।ভাইয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর কাকিমা আমাকে নিজের সামনে বসিয়ে দিলেন,

-“আদিত্য তোকে নিষেধ করেছে তাইনা..? কিন্তু
এই ভুলটা করিস না আদিবা, তোর চাচা যখন স্কুল বদলাতে বলছেন সুযোগ টা হাতছাড়া করিস না। স্কুল বদলালে আদির অত্যা*চার থেকে মুক্তি পাবি।

সেটা আমার চেয়ে ভাল আর কে জানে? কিন্তু স্কুল বদলালে ভাইয়া আমাকে আরও বেশি শাস্তি দিবে সেটা আমি কি করে বলব? যার নুন খাই তারেই ছেলের দুর্নাম করব কিভাবে?( মনে মনে)

মিনা বেগমের কথায় আদিবা নীরব গলায় জবাব দিল,

-“এখন থেকে আমি নাহয় একা একা স্কুলে যাব। ভাইয়ার সাথে যাব না। ওর সাথে বেশি কথাও বলব না তাহলে হবে না?

-তুই বুঝতে পারছিস না আদিবা, আদর তোকে অনেক জ্বালাবে

-তবুও আমি স্কুল বদলাতে চাই না।

-তাহলে আমি আর কি বলব দেখ ভেবে দেখ আমি তোর চাচাকে বলে দেখি।

-ঠিক আছে বলে বেরিয়ে এলাম।

রাত ১০ টা সবাই টেবিলে খেতে বসেছি কিন্তু আদর নেই। বড় চাচা চিন্তিত গলায় বললেন,

-“আদি এখনো রাগ করে আছে..?

চাচা, ভাইয়ার জন্য চিন্তা করছেন বুঝেই কাকিমা বললেন,
-“আরে নাহ রাগ করে থাকবে কেন একটু আগেই তো আদিবার সাথে সব মিটমাট হয়ে গেল। তাই না আদিবা..??

আমি অগত্যা হ্যাসূচক মাথা নাড়লাম বড়চাচা আবার প্রশ্ন করলেন,

-“তাহলে খেতে আসল না কেন?

-“হয়ত পড়াশোনা করছে।আদিবা যা তো মা ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।

কাকিমার আদেশে খারাপ লাগলেও চাচার দুচিন্তা বাড়াতে চাই না তাই উঠে ভাইয়ার রুমে গেলাম।

ঘরে ঢুকে দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকার আমি বড়াবড়ই ভয় পাই তাই ভয়ে ভয়ে বললাম ভাইয়া তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো…??

মৃদুগলায় জবাব দিল,
-“আমাকে এত জ্বালাস কেন আদিবা?

ওর কথায় কিছুটা ভয় পেলেও পরক্ষনে মনে পড়ল নিচে সবাই ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছে তাই বললাম,

-“ভাইয়া খেতে চলো…

-“খাব না।

-“সবাই অপেক্ষা করছে।

-“বল্লাম তো আমার ক্ষিধে নেই।

-“চাচা কাকিমা তোমার জন্য চিন্তা করছেন।
তুমি না গেলে ভাববে আমার জন্য খাচ্ছ না।

-“ভাবার কি আছে? তোর কি মনে হয় আমার গায়ে হাত তুলার পরেও আমি হ্যাংলার মত খেতে বসে যাব?

-“ভাইয়া আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি প্লিজ রাগ করে থেকো না। চাচা তোমাকে কত ভালবাসেন তুমি কি সেটা জানো না?

-“ওরা আমায় নয় তোকে ভালবাসে…যাইহোক এখন তুই এখান থেকে যা।

-“নিচে গিয়ে কী জবাব দিব?

-“যা যা আমি বল্লাম তাই বলবি…

-“চাচা অনেক কষ্ট পাবেন…

-“তুই কী যাবি নাকি আমাকে উঠতে হবে…

আর কথা বাড়ালাম না চুপচাপ নিচে নামতে লাগলাম। ভাইয়া আমার জন্য না খেয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। আবার চাচাকে যদি বলি ভাইয়া রেগে আছে তাহলে বড় চাচাও কষ্ট পাবেন। ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে আসলাম।
আমি নিচে যেতেই বড় চাচা জিজ্ঞাসা করলেন,

-“আদি আসল না…??রাগ করে আছে তাই না? আমি আমার ছেলেকে চিনি না..?

তাড়াতাড়ি বললাম,
-“না চাচা, ভাইয়া রাগ করে নি ও ঘুমিয়ে পড়েছে।

-” না খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে…??

-“চিন্তা করো না চাচা তোমাদের খাওয়ার পরে আমি ভাইয়ের ঘরে খাবার দিয়ে আসব। তখন ডেকে খেতে বলব।

আমার কথা শুনে কাকিমা হেসে বললেন,

-“সেই ভাল, আয় আগে তুই খেয়ে নে। খাওয়া শেষ করে আদি খাবার দিয়ে আসবি কেমন?

আমি হ্যা সূঁচক মাথা নাড়ালাম।খাওয়া শেষ করে সবাই একে একে উঠে গেল কাকিমা ভাইয়ার খাবার গুছিয়ে দিয়ে আমাকে এসে বলল,

-আদিবা খাবার টা একটু দিয়ে আয় কেমন।তোর সাথে আমিও যেতাম কিন্তু আজকে সিরিয়ালের লাস্ট এপিসোড না দেখতে পারলে সব বৃথা তুই তো সিরিয়াল দেখিস না আর আদিকে তো চিনিস ওকে ঘুম থেকে তুলতে তুলতে আমার সিরিয়াল শেষ হয়ে যাবে।

বলেই কাকিমা টিভির রুমে চলে গেলেন। সেখানে আপু সাদিয়া সবাই আছে। সবাই মন দিয়ে সিরিয়াল দেখছে বড় চাচা ডায়বেটিস এর রোগী তাই খাবারের পর হাঁটতে বেরিয়েছেন।
এটাই এ বাড়ির নিয়ম রাতের খাবারের পর বাড়ি একেবারে সুনশান-নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

আমি খাবার টা নিয়ে ভাইয়ার ঘরের দিকে যাচ্ছি আর ভাবছি আমার কপালে আজ কি লিখা আছে? ভাইয়া যে রেগে আছে খাবার তো খাবেই না উল্টে আমাকে হয়ত মারবে।

যাইহোক ভয়ে ভয়ে ঘরে গেলাম ভাইয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আমি খাবার টা সাইড টেবিলে রেখে ভাইয়াকে ডাকলাম।

-ভাইয়া শুনছো…?? খাবার নিয়ে এসেছি উঠো প্লিজ



চলবে..!!!

বেপরোয়া ভালবাসা
পর্বঃ০৪
মনা হোসাইন

আমি ডাকছি কিন্তু ভাইয়ার সাড়াশব্দ নেই হঠাৎ ভাইয়া ২ হাত বাড়িয়ে হ্যাচকা টানে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল…

-কি করছো ভাইয়া ছাড়ো…

-তোকে মানা করেছিলাম না? তবুও আসলি কেন?

-ভাইয়া আমি তোমাকে খাবার টা দিতে এসেছিলাম ছাড়ো প্লিজ কেউ দেখলে খারাপ ভাব্বে ছাড়ো…

আদর ভাইয়া আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
– এত বড় কবে হলি…?? এইটুকুখানী মেয়ে খারাপ ভালর কি বুঝিস তুই? আর আমি কি তোর সাথে খারপ কিছু করছি? চুপচাপ শুয়ে থাক।

এর আগে আমি অনেকবার ভাইয়ার সাথে ঘুমিয়েছি কিন্তু কেন জানি না আজ কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু ভাইয়া নিজের সিধান্তে অটল ছাড়বে না মানে ছাড়বেই না।চোখ বন্ধ করে নির্জীব প্রানীর মত আমাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে একটু নড়লোও না পর্যন্ত পুরো ৫ মিনিট পর ছাড়ল।

আমাকে ছেড়ে উঠে বসল,আমিও তাড়াতাড়ি উঠে নিজেকে সামলনে নিলাম।

-ভাইয়া আমি তাহলে যাই…

বিরক্ত নিয়ে জবাব দিল,
-তাহলে এসেছিল কেন…???

-খাবার টা দিতে

-“আমি কী বলেছিলাম আমি খাব…?

-“রাতে না খেয়ে থাকতে নেই শরীর খারাপ করে তাই দিতে এসেছিলাম।

-শুধু দিলেই হবে? খায়িয়ে দিবে কে শুনি?

-ম মমানে…??

-বাংলাতেই তো বল্লাম। না বুঝার মত করে তো বলি নি।

-“আমি খায়িয়ে দিব? তাই বলছো..?

-“দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি.

-ভাইয়া… এসব তুমি কি বলছো কেউ দেখলে…??

-সেটা আমি বুঝব তোর তো বুঝার দরকার নেই আর আজকে সিরিয়ালের লাস্ট এপিসোড। ১ ঘন্টার এপিসোডের কেবল ৫ মিনিট গিয়েছে বাকি ৫৫ মিনিটে খাওয়া সহ আরও অনেক কিছু ঘটতে পারে। যদি অন্য কিছু ঘটাতে না চাস তাহলে চুপচাপ যা বলছি তাই কর তানাহলে আমি কি কি করব ভাল করেই জানিস। আর হ্যা এই ৫৫ মিনিটে কেউ উপড়ে আসা তো দূর টিভির রুম থেকেও বের হবে না তাই তোকে বাঁচানোর কোন অপশন নেই।

ভাইয়ার কথায় বেশ অবাক হলাম।কি চায় ভাইয়া?আমার কাছে?এমন অদ্ভুত আচারন করে কেন? ওকি আমাকে খারাপ নজরে দেখে?

-কিরে কি ভাবছিস ?

কথা ঘোরানোর জন্য তাড়াতাড়ি বল্লাম,
-তুমি সিরিয়াল দেখো ভাইয়া…??

-হা হা হা আমি সিরিয়াল দেখব কেন? আমি জানতাম আজ সিরিয়ালের শেষ এপিসোড আর আমি সেই সুযোগটাই খুঁজছিলাম যাইহোক তুই অযথা সময় নষ্ট করছিস সামনে থেকে সর ওয়াশরুমে যাব। বাই দ্যা ওয়ে যদি পালানোর চেষ্টা করিস ধরে এনে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দিব। বলে ভাইয়া চলে গেল।

-ভাইয়ার আচারনের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না ও সুযোগ খুঁজছিল মানে কি?তারমানে ইচ্ছে করেই খেতে যায়নি যাতে আমি খাবার নিয়ে আসি?

আমার ভাবনার ছেদ পড়ল ভাইয়ার ভিজা টাওয়ালের ছোঁয়ায়।ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে এসে টাওয়াল টা আমার উপড় ছুড়ে ফেলেছে।

অবাক চোখে তাকালাম,
-মাঝে মাঝে কি নিয়ে এত ভাবতে বসিস দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়।

বলেই ভাইয়া এসে আমার গাঁ ঘেষে বসে পড়ল। তারপর ফোন বের করে টিপতে টিপতে বলল,

-“নে শুরু কর…

আমি কোন জবাব দিলাম না..

-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ইডিয়েট?
যাগ গে নে শুরু কর…

জানি না কেন নিজের অজান্তেই প্রশ্ন করে বসলাম,
-ভাইয়া তুমি নিজের হাতে খাচ্ছ না কেন? তোমার হাতে কি ব্যাথা…??

ভাইয়া একটু থমকে গিয়ে আমার দিকে তাকাল তারপর ছোট একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
-হুম ব্যাথা খুব ব্যাথা তবে হাতে নয় বুকে…

আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালাম,
-কি বলছো আগে বলো নি কেন তোমার শরীর খারাপ? এই জন্যই সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়েছিলে তাই না?
আমি এখনী কাকিমনি কে ডেকে আনছি দাঁড়াও।

বলে আমি যখন উঠে দাঁড়ালাম তখনী ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল।

-কি হল ভাইয়া আমাকে আটকালে কেন তোমাকে ওষুধ দিতে হবে না?

– তোর বয়স কত রে?

-এটা আবার কেমন প্রশ্ন…?কখন কি প্রশ্ন করতে হয় সেটাও জানো না?

-জানব না কেন ভাল করেই জানি।

-তাহলে এখন এমন প্রশ্নের কারন কি?

-জেনে বুঝেই প্রশ্ন করেছি।
আচ্ছা তুই বড় হোস না কেন?

-আমি ছোট কে বলল ক্লাস নাইনে পড়ি ভাইয়া আমি মোটেও ছোট না।

-আমিও সেটাই বলতে চাইছি, ক্লাস ফাইবে পড়া বাচ্চারাও এখন তোর চেয়ে বেশি বুঝে…শুধু তুই এই একটা মাথা মোটা …

-আজব তো তোমার অসুখ করেছে ওষুধ দিব এতে মাথা মোটার কি হল?

-এটা কোন অসুখ তুই যদি বুঝতি তাহলে অসুখ থাকত না…যাক গে নে খাওয়া শুরু কর তাড়াতাড়ি,শুধু শুধু সময় নষ্ট করিস না।

-আগে কাকিমনিকে বলে আসি তোমার শরীর খারাপ।

-চুপ একটাও কথা বলবি না চুপচাপ বসে খাওয়া।
(ধমক দিয়ে)

-কথায় কথায় এত বকো কেন?

-তাহলে কি মারতে হবে?

উপায় না পেয়ে আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি খাওয়াতে শুরু করলাম।ভাইয়া ফোন টিপতে টিপতে খাচ্ছে,
খেতে খেতে আবার প্রশ্ন করল,
-ভর্তির কি হল? মা কি বলল?

এই প্রশ্নের জবাব দিতে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কারন কাকিমনি নিষেধ করেছেন ভাইয়ার স্কুলে পড়তে তাই জবাব দিতে পারছি না।

-কি রে বল ভর্তির ব্যবস্থা করতে পেরেছিস?

-ভাইয়া বলছিলাম তুমি একবার কাকিমনি কে বলো না তাহলেই আর কেউ আপত্তি করবে না। তুমার কথা ত বাসার সবাই শুনে…

-আমি বলব কেন? আমার যাকে বলার তাকে ত বলেছিই…আর তার সেটা শুনতে হবে নাহলে একটা মার ও মাটিতে পড়বে না। আমার কথা সবাই কেন শুনে জানিস? কারন আমি কখনো উল্টাপাল্টা কথা বলে না তাই সবাই শুনে বুঝেছিস?

-এটা যদি উল্টাপাল্টা ব্যাপার হয় তাহলে আমাকে দিয়ে কেন বলাতে হবে? ভাইয়া এমন কেন নিজের ইচ্ছে গুলো আমার উপড় চাপিয়ে দেয় কিন্তু সব এমনভাবে করে যেন কেউ তাকে কোন দোষ দিতে না পারে। (মনে মনে)

– এই যে ভাবনার রানী,ভাবনার বক্সটা বন্ধ করে খাবার টা কি দিবেন নাকি হাতে কামড় বসাব?

তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আমতা আমতা করে বল্লাম,

-ভাইয়া বলছিলাম কি আমি আপুর স্কুলে পড়লে হয় না…?

আমি এটা বলার সাথে সাথে ঘরের পরিবেশটা পুরো বদলে গেল ভাইয়া হাত থেকে খাবারের প্লেট টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল লক্ষ করলাম আমি কিছু বুঝার আগেই ভাইয়া রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে। ভাইয়া হাত মুষ্টি করে দাঁতে দাঁত চেপে মৃদু শব্দে কাকিমনিকে ডাকতে লাগল। সে চিৎকার না করলেও আমি বেশ বুঝতে পারছি ভাইয়া প্রচন্ড রেগে গিয়েছে,কিন্তু তার কারন টা কি বুঝলাম না।

-মা এই মা আমার রুমে এসো ত একবার..

ভাইয়াকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে বল্লাম,
-কি হয়েছে ভাইয়া কাকিমনিকে ডাকছ কেন আমাকে বলো না আমি করে দিচ্ছি..

ভাইয়া অগ্নিদৃষ্টিতে একবার তাকাল কিন্তু কিছু বলল না।
ভাইয়ার ডাক আর ভাংচুরের শব্দে কাকিমনি,আমার মা সহ সবাই ছুটে আসল।এসে প্লেট আর খাবার মেঝেতে দেখে সবাই অবাক হল। কাকিমনি এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন,

-কি ব্যাপার জয় কি হয়েছে?

ভাইয়া শান্তগলায় বলল,
-মা আজ আমি নিচে খেতে যাই নি কেন?

কাকিমনি অবাক হলেও স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিল,
-তুই ঘুমিয়ে গিয়েছিলি তাই..

এবার ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল,
-তাহলে এই মেয়েটার সাহস হল কি করে আমার ঘুম ভাংগানোর?

ভাইয়ার চিৎকারে ঘরের সবাই কেঁপে উঠেছে বিশেষ করে আমি।

কাকিমনি ভাইয়াকে শান্ত করার জন্য বলল,
-না মানে বাবা, না খেয়ে ঘুমালে শরীর খারাপ করত তাই আর কি…

-থামো মা আমি বাচ্চা নই যে বুঝব না কখন কি খেতে হবে আর কখন খেতে হবে না। সবসময় বলো আমি নাকি আদিবার সাথে বেশি বেশি করি কিন্তু কখনো ওর ভুলগুলো দেখ না। ওর বয়সী মেয়েরা কত পটু আর ওর মাথায় গোবর ছাড়া কিছুই নেই। ওকে বলে দাও ভবিষ্যতে আমার কথা না শুনলে ওর কি অবস্থা হবে আমি নিজেই জানি না।

এবার ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-“এই বাসায় থাকতে হলে মানুষের মত চলতে হবে আমার কথা মানতে হবে বুঝেছিস তুই?এমন অগোছালো ছন্নছাড়া পশুর মত চলা যাবে না যদি আমার কথা না শুনিস তোর সাথে কি ঘটবে সেটা নিশ্চুই বুঝতে পারছিস…

ভাইয়ার হটাৎ সুর বদলানো টা আমার সহ্য হল না চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়তে লাগল,

আমাকে কাঁদিয়ে ভাইয়া হয়ত শান্তি পেয়েছে,তাই হটাৎই সব রাগ থামিয়ে দিয়ে বরফ জমা হয়ে গেল,
অসহায় ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাল।

ভাইয়ার আচারনে এতক্ষনে সবাই অবাক হয়েছে তবে সবচেয়ে বেশি অবাক আমার মা হয়েছে। কারন মা দুপুরের ঘটনা জানে না। আজ সন্ধ্যা বেলায় আমাদের এখানে এসেছে। আমি ইচ্ছে করেই মাকে কিছু বলিনি। মা এসব দেখে বলল,

-ভাবি আমার মনে হয় আদিবার এখানে থাকাটা ঠিক হবে না আসলে আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম কিছু একটা ঘটেছে কিন্তু আপনাদের বিব্রত করতে চাইনি তাই প্রশ্ন করিনি।

মায়ের কথায় কাকিমা লজ্জা পেলেন তাড়াতাড়ি বললেন,

-“শাহানা তুমি অযথা চিন্তা করছো তেমন কিছু হয় নি আসলে আদি বুঝতে পারে নি।

-” ভাবী তুমি আমার মেয়েদের নিজের মেয়ের মতই আগলে রাখ এই নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু আদিবা একটু দুষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। গ্রামে ত সারাদিন ছুটাছুটি করত তাই এখানে মানিয়ে নিতে পারছে না ও এখানে থাকলে সমস্যা হবে তারচেয়ে আমি বরং ওকে নিয়ে যাই সাদিয়া এখানে থাকুক।

মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই ভাইয়া বলে উঠল,
-” চাচীম্মা তুমি কি বুঝাতে চাইছো..মা তোমার মেয়েদের আদর করেন আর আমি তোমার মেয়ের উপড় অত্যা*চার করি ..??

-“ছিঃ ছিঃ বাবা কি বলছিস আমি এভাবে বলতে চাই নি।

-“তুমি কি বললে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল আমি আদিবার বড় ভাই। আদিবার সাহস হয় কি করে বড় ভাইয়ের মুখে মুখে কথা বলার? আর তুমিই না কি করে ওকে লায় দিচ্ছো
.? কি করে বললে ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা? ওহ দরদ উতলে পড়ছে তাই না? বানিয়েছো তো একটা জংগলি। ও যে এমন বোকা প্রকৃতির তাতে তোমার তো কিছু আসে যায় না লোকে যা বলার আমাদের বলবে।বলবে বাবা নেই বলে মেয়েটা মানুষ হয় নি। তোমরা এভাবে লায় দিলে মানুষ হবে কি করে? ছুটাছুটি করা খুব ভাল কাজ বুঝি? কেমন এলোমেলো চুল,ড্রেস আপের কোন ছিড়িছাদ নেই, কারো সাথে সুন্দর ভাষায় ঠিকমতো কথাও বলতে পর্যন্ত পারে না।

ভাইয়াকে থামানোর জন্য কাকিমা বলল,

-“হয়েছে ওকে তোর মানুষ করার দায়িত্ব নিতে হবে না। যেমন আছে বেশ আছে।

-“তাই নাকি? তুমি ওর মার্কসিট দেখেছো? গোল্লা পেয়েছে গোল্লা বুঝেছো? আমি ওর বড় ভাই আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি এতে কারোর কিছু বলার নেই এমনকি চাচীম্মারো না। আদিবা গ্রামে যাবে না। আর স্কুল ও বদলাবে না। ও আমার স্কুলেই পড়বে আমার সাথে যাবে আমার সাথে আসবে আর বাসাতেও মানুষের মত করে থাকবে গাইয়া ভুতের মত না।

ভাইয়ার কথায় মাথা চাপড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিভাবে এত অপমান করতে পারছে? গ্রামে তো সবাই এমনভাবেই থাকে তাই বলে এভাবে অপমান করতে হবে? না এই গন্ডারের কাছে আমি থাকব না কিছুতেই না। কিন্তু ও যেভাবে বলল মা আমাকে কিছুতেই নিয়ে যাবে না তবে শেষ একটা চেষ্টা করতেই হবে,

-আমি শতকরা ৭০% নাম্বার পেয়েছি ভাইয়া এর চেয়ে ভাল রেজাল্ট আমার দরকার নেই আর আমি যেমন আছি তেমনেই ভাল বুঝেছো আমি চলে যাব….

কথা শেষ করার আগেই ভাইয়া হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-অনেক বলেছিস আর না।রাত টা অনেক লম্বা আগে রাত টা পার হোক তারপর দেখা যাবে সকালে কে যায় আর কে থাকে। বলেই হন হন করে সেখান থেকে চলে গেল।

বুঝতে পারলাম রাতে আমার কপালে দুঃখ আছে তারই ইংগিত দিয়ে গেল।

ভাইয়া চলে যাওয়ার পর কাকিমনি মাকে বলল,
-শাহানা কিছু মনে করোনা আসলে বেশি আদরে ছেলেটা উছন্নে গিয়েছে কারো কথা শুনে না।

-কি বলছো ভাবি জয় উছন্নে যাবে কেন ওর মত ছেলে লাখে একটা হয় নিজের বোনের কথা এত কে ভাবে বলোতো জয় যা যা বলল সবি ঠিক বলেছে আদিবার বদলানো দরকার…আমিও ত চাই আমার মেয়ে ফিটফাট পরিপাটি হোক।ও এখানে থাকলে সব ভাল হবে দেখে নিও।

এখানে থাকলে আমার যে কি হবে সেটা শুধু আমিই জানি বন্ধ ঘরে ওর রুপটা যে কি সেটা তো কেবল আমি জানি



চলবে…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here