শত ডানার প্রজাপতি পর্ব -১০+১১

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১০

সবার সামনে নিহার গায়ের উপর মগ ভরা কফি ফেলে দেই । নিহা আমার দিকে ভস্ম করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললেন ,

– “ইউ বেহেনজী ! এটা কি করলে ? আমার নতুন ড্রেসটা দিলে তো খারাপ করে ।তুমি জানো আমার ড্রেসের দাম কত? ”

নিহার মুখে ড্রেসে কফি পড়েছে । পেত্নী কে একদম চুন্নিবিল্লিদের মত লাগছে । আমার খুবই হাসি পাচ্ছে । আমি অনেক কষ্টে ঠোঁট চেপে নিজের হাসি আটকিয়ে বলি ,

– “ও হো এবার কি হবে পেত্নী আপু আই মিন সিনিয়র আপু ? ”

নিহা ঝাঁঝালো গলায় বললেন ,

– “চোখ কি কপালে নিয়ে ঘুরো ? দেখতে পাও না ? ”

নিহার কথায় শরীরে আগুন ধরে যায়। এক আমার বরের গায়ের উপর ডলে পড়ছে । তার উপর আবার আমাকে ঝাড়া হচ্ছে ? আমাকে? এত বড় স্পর্দা ? আমি জ্বলে উঠি আপন শক্তিতে ।
আমি নিহার চেয়ে দ্বিগুণ গলায় চেঁচিয়ে বলি,

– “চোখ তো আপনার ও আছে তাই না ? আপনি তা কোথায় রেখেছেন ছেলেদের উপর ? আপনি চোখে দেখেন না ? ”

– “এই বেহেনজি তুমি তো দেখছি বড্ড বেয়াদব । সিনিয়রদের মুখে মুখে তর্ক করছো । একতো আমার এত দামী ড্রেস নষ্ট করেছো তার উপর আবার ঝগড়া করছো ! ”

– “আপনি সিনিয়র বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন ? যা সত্যি তা তো বলবোই । তাই না ?
বায় দ্যা ওয়ে আপনার এইসব ছোট খাটো কাপড়ের দাম আর কতই হবে ? দেখে তো মনে হচ্ছে ত্যানা । ”

– “ইউ ইডিয়েট ! ডিজাইনার ড্রেস চিনো ? এটা ডিজাইনার ড্রেস । অবশ্য ,তুমি কি করে চিনবে ? তোমাদের মত ছোটলোকেরা এগুলো চোখে দেখেছে কখনো ? ”

– “দেখিনি আর দেখতে চাইও না । আমারা ছেড়াফাড়া কাপড় পড়িনা। এইসব কাপড় আপনার মত গায়েপড়া মেয়েদের মানায় ! ”

উনি আমার দিকে তেড়ে এসে বললেন ,

– “এই মেয়ে কি বললে তুমি? হ্যা ?”

– “কেন আপনি কি কানে কম শুনেন ? আমি কি বলেছি শুনতে পান নি ? ”

নিহা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিহার দুজন বান্ধবী এসে নিহাকে টেনে নিয়ে যায় । যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে গেলেন ,

– “তোমাকে আমি দেখে নিবো । এর ফল তোমাকে পেতে হবে । ”

আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম ,

– “আপনাকেও আমি ছেড়ে দিবো না! ”

পেত্নীটা যেতেই আমি রাগে বড় বড় শ্বাস ফেললাম । আমার বরের দিকে নজর দিয়ে আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছে । কত বড় সাহস ? ইচ্ছে তো করছে ডাইনীটার চুল গুলা ছিড়ে শাক রান্না করে ওকেই খাওয়াই । যতসব গায়ে পড়া মেয়ে । এসব বলে পিছনে তাকাতেই থম মেরে যাই । শরীর বরফের মত জমে যায় । গলা শুকিয়ে আসছে ।

অগ্নি আমার দিকে সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে । আচ্ছা উনি কি এখন আমাকে বকবে ? আমার উপর রাগ করবে ?
উনি একপা একপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন । আমি চোখ মুখ বন্ধ করে এক টানে বলি ,

– “দে…দে দেখুন আমার কোনো দোষ নেই সব দোষ ওই পে…পেত্নী চুন্নিবিল্লির আপনি আমাকে কিছু বলবেন না প্লিজ ,প্লিজ ,প্লিজ ! ”

কথাটা বলেই আমি চুপ হয়ে যাই । বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায় অগ্নির কোনো সাড়াশব্দ নেই । আচ্ছা ! উনি আছে না কি চলে গেছে ? আমি এক চোখ একটু ফাকা করে সামনের দিকে তাকাই । সামনে তাকাতেই দেখতে পাই অগ্নি তখনো আমার দিকে আগের মত একই দৃষ্টি তে তাকিয়ে । শক খেয়ে কি কোমা টোমা তে চলে গেলো নাকি ? আমি চোখ খুলে তাড়াতাড়ি করে উনার সামনে যেয়ে হাত নাড়িয়ে বললাম,

– “আপনি ঠিক আছেন ? ”

উনি আমার কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়। আমি বেকুবের মত উনার দিকে তাকিয়ে । উনি কিছুতেই নিজের হাসি থামাতে পারছে না । আমি উনার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে !
মুহূর্তেই সকালের সব রাগ হাওয়া হয়ে যায়। এই হাসিটা এতটুকু শক্তি আছে যে সব কিছু ভুলিয়ে নিমিষেই মুগ্ধতা ছুঁয়ে দিতে পারে ।
উনার রক্তলাল ঠোঁট আর নিচের ঠোঁটের তিলটা কেন জানি আমাকে খুব বেশি আকর্ষণ করে ।উনা সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয় । আর যখন তিলে কামড় দিয়ে হাসি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে । ইসসস ওই সময়টা উনাকে যা ভালো লাগে ।
আহ ! কি সুন্দর হাসি ।ছেলেদের হাসিও কি এতো সুন্দর হয় ? আমি যে উনার এই হাসি দেখেই দিবারাত্রি পাড় করতে পারবো ।
কতদিন পর আজ উনাকে মন খুলে হাসতে দেখলাম ।আস্তে আস্তে উনি আগের মন স্বাভাবিক হচ্ছে ।আবার আগের অগ্নি রুপে ফিরে আসছেন । উনার হাসি দেখে মনে শুধু একটা গানই বাজছে ,

আমার সকল অভিযোগে তুমি

তোমার মিষ্টি হাসিটাকে আমি

আমার না বলা কথার ভাজে

তোমার গানের কত সুর ভাসে

তোমায় নিয়ে আমার লিখা গানে

অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে

আমার হাতের আঙুলের ভাজে

তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে

ভুলিনি তো আমি তোমার মুখের হাসি

আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি

আসো আবারো কাছে হাতটা ধরে পাশে

তোমায় নিয়ে যাবো আমার পৃথিবীতে ……..

আমি এখনো অগ্নির ধ্যানে বিলিন । উনার হাসির মুগ্ধতায় এখনো ডুবে । আমার ধ্যান ফিরে উনার আওয়াজে । উনি হাসতে হাসতে বললেন ,

– “হুর মানতে হবে ইউ আর গ্রেড! মানে নিহার মত ঝগড়াটে মেয়েকেও তুমি হারিয়ে দিয়েছো । ওয়াও !
বায় দ্যা ওয়ে থ্যাংকস ,এই মেয়ে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলো । তুমি বাঁচালে । যা গায়ে পড়া মেয়ে উফফফ । ”

আমি ভাব নিয়ে বললাম,

– “উমম্ম ,এই সব থ্যাংকস ট্যাংকস দিতে হবে না । আপনার জন্য এতটুকু করতেই পারি । ”

উনি উদার কন্ঠে বললেন ,

– “আপনার এই উদারতায় আমি কৃতজ্ঞ থাকিবো । উদারতার ভেট হিসেবে আপনার জন্য কি করিতে পারি মহারাণী ? ”

আমি বড় শ্বাস টেনে আরো ভাব নিয়ে বললাম ,

– “মহারাণী রাজবাড়ির দিকে প্রস্থান করতে চায় ”

উনি হো হো করে হেসে বললেন,

– “যো আজ্ঞেয়া মহারাণী ”

দুজন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই ।এবার আর সকালের মত দুজনের মাঝে পিনপতন নিরবতা নেই । পুরোরাস্তা দুজনের মাঝে টুকটাক কথাবার্তা হয় ।

একসাপ্তাহ কেটে যায় । এই এক সাপ্তাহ নিজের মন জান প্রাণ উজাড় করে পার্ফেক্ট ওয়াইফ হওয়ার চেষ্টা করেছি । এতে মা আর হিয়া আপু প্রচুর সাহায্য করেছে । মায়ের থেকে অগ্নির পছন্দ অপছন্দ সবটা জেনেছি । মা হয়তো আমার উদ্দেশ্যেটা ধরতে পেরেছে । তাই তো মাও নিজের থেকে সবরকম চেষ্টা করছে যেন আমি আর অগ্নি কাছাকাছি থাকতে পারি । এতো দিনে আমি বেশ বুঝতে পেরেছি । আমি অগ্নিকে ভালোবেসে ফেলেছি । তাও আবার প্রচন্ড ভাবে । তাই তো আজ কাল কোনো না কোনো বাহানা করে অগ্নির পাশে থাকা চেষ্টা করি ।চোখের আড়াল হলেই মনে হয় আমার জগত আন্ধকারে তলিয়ে গেছে । বুকের বাঁ পাশটায় খুব ব্যথা করে । আর এদিকে আমি অগ্নির যতটা কাছাকাছি আসতে চাই উনি আমাকে ততটাই দূরে ঠেলে দেয় । কেন এমন করে ? আমাকে একটু মেনে নিলে কি হয় ? আমাকে কি মেনে নেওয়া যায় না ?

বিকেলে মা আর আপুর সাথে বাগানে বসে চা খাচ্ছিলাম আর আড্ডা দিচ্ছিলাম । এমন সময় মা জানালেন দুদিন পর আমাদের চিটাগাং যেতে হবে । মায়ের বড় ভায়ের মেয়ের বিয়েতে । মা বিয়ের আগের দিন যাবে । আমি অগ্নি হিয়া আপু আর আবির ভাইয়া দুদিন পর যাবো ।
শুনে আমি আর আপু খুব বেশি এক্সাইটেড হয়ে যাই । কারণ কখনো আমাদের ঢাকার বাহিরে যাওয়া হয়নি।আর চিটাগাং যাওয়ার আমাদের দুজনেরই খুব ইচ্ছে ছিলো ।চিটাগাং অরেক ঢাকা হলেও কেন জানি এই শহরটার প্রতি খুবই আকর্ষন । সেখানকার আচার অনুষ্ঠান দেখার আমার খুব ইচ্ছে আর ফাইনালি আমরা চিটাগাং যাচ্ছি তাও আবার বিয়েতে । আ’ম ভেরী এক্সাইটেড ! কিন্তু সেই সাথে নার্ভাসনেসও কাজ করছে । এই প্রথমবার উনার নানুর বাড়িতে যাচ্ছি ।উনারা আমাকে পছন্দ করবে তো ? তার মধ্যে আমি যেই বকবক করি ও আল্লাহ্‌ না জানি উনারা কি ভাববে । আইডিয়া আমি সেখানে যেয়ে কথাই বলবো না । একদম না একটুও না । যা জিগ্যেস করবে তার উত্তর দিয়ে আবার চুপ হয়ে যাবো । না না মুখে তালা মারবো !
কিন্তু কেন জানো মনে হচ্ছে এই ট্রিপ আমার জীবনে খুব বড় পরিবর্তন আনবে । অনেক কিছু আমার জীবনের পাল্টিয়ে দিবে ।

______________________

রাতে গভীর ঘুমে তলিয়ে । হ্ঠাৎ ই ঘুমের ঘোরে অনুভব করলাম কারো গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে । শরীর থেকে সেই অতি চেনা মাতাল ঘ্রাণ । চোখ বন্ধ করেই বলতে পারছি এটা অগ্নিই । যাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি । নিশ্বাসটা আমার আরো কাছে আসছে খুব কাছে । ঠোঁটের উপর পড়ছে কেন জানো মনে হচ্ছে অগ্নি আমার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে । হ্ঠাৎই কপালে খুব গভীর উষ্ণতর স্পর্শ পেলাম । স্পর্শটা এতই গভীর ছিলো যে । আমার মন থেকে শরীরের লোম লোম পর্যন্ত তা জানান দিয়েছে । এই স্পর্শের মধুরতায় আমার ঠোঁটের কনে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে । #শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১১

আজ চিটাগাংয়ের জন্য রওনা হবো ।খুব ভোর সকালে উঠে পেকিং করা শুরু করি । অগ্নি এখনো ঘুমে । উনি উঠার আগেই সব পেকিং শেষ করি । আট টায় অগ্নির ঘুম ভাঙে । ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় উনার ঘুম জড়ানো মুখটা দেখতেই স্নিগ্ধতা ছুঁয়ে যায় । উনি আমার দিকে কেমন জানো মাতাল চাহনীতে তাকিয়ে । উনার এই চাহনির অর্থ আমার জানা নেই । কেমন জানো নেশা নেশা চোখের গাঢ় চাহনি । কেন জানো উনার এই চাহনিতে আমার মাঝে লজ্জাবোধ কাজ করছে ।
হ্ঠাৎ ই উনি কিছু একটা ভেবে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন,

– “চুলের পানিতে পিঠ ভিজে যাচ্ছে । চুলগুলো ভালো করে মুছো না হয় সর্দি লেগে যাবে !
আ …আর জামার পিছনের ফিতাটা বাঁধো । ”

উনার কথা শুনে সাথে সাথে উনার দিকে ফিরে দেয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে ঘেষে দাড়াই । চোখ জোড়া যেন কোটর থেকে বের হয়ে আসবে । লজ্জায় আমার অবস্থা ত্যানা ত্যানা । অগ্নি হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পারেছে উনি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে । উনি চলে যেতেই আমি ছোট নিশ্বাস ফেলি । আয়নার সামনে পিঠ দিয়ে দাড়াতেই দেখি পুরো পিঠ দেখা যাচ্ছে । এমনিতেই এই জামার পিছনের দিকটা একটু বড় । ফিতা খোলা থাকায় পুরো পিঠ দেখা যাচ্ছে।এমনকি পিঠের মধ্যভাগের কালো তিলটিও । ইশ ,কি লজ্জা ! কি লজ্জা !

প্রায় আধঘণ্টা পর উনি বের হয়ে আসেন । আমি উনার দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছিনা তার উপর উনি আবার খালি গায়ে । শরীরে বিন্দু বিন্দু জল । উফফফ শ্বাস দ্রুত চলাচল করছে । বুকটা ভারী হয়ে আসছে । কেমন জানো মাতাল মাতাল লাগছে । এমন কেন হচ্ছে । এইসব লক্ষণ তো প্রেমরোগের ।তবে কি দিন দিন আমি এই কঠিন অসুখে গভীর ভাবে আক্রান্ত হচ্ছি !

আমি আড়চোখে অগ্নিকে বারবার দেখে যাচ্ছি । অগ্নি ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে নিজের হেয়ার ব্রাশ করছে ।আর আয়নায় আমার দিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন ।
হ্ঠাৎ ই গম্ভির আওয়াজে বললেন ,

– “কি হলো এই ভাবে রঙ্গান হচ্ছ কেন ? এনিথিং রং? ”

আমি নিজ গালে হাত দিয়ে চেক করতে করতে আদো গলায় উত্তর দেই ,

– “কই ,কই না তো আমি একদম রঙ্গান হচ্ছি না । আ আপনি ভু ভুল দেখছেন । ”

উনি এবার আমার দিকে ফিরে বাঁকা হেসে বললেন,

– “ও আচ্ছা ? তাই বুঝি ? তো তোমার গাল এমন লাল হচ্ছে কেন সুন্দরী ? ”

– “কোনো লাল- টাল কিছুনা সবই আপনার চোখের ভুল । অকে ? ”

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন ,

– “তাই ? এই যে মুখে মুচকি মুচকি হাসি গাল গুলো ব্লাশিং করছে ? আবার বলছো আমার দেখার ভুল? ”

উনি আমার একদম কাছে । আমার দু’বাহুতে হাল্কা করে চেপে ধরেছে । এবার আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা । নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে । বুকের বাঁ পাশের ব্যথাটাও বেড়ে যাচ্ছে । উনি আমার দিকে ঝুঁকে ছোট ছোট চোখ করে বললেন ,

– “আজকাল তোমার কি হচ্ছে বলো তো সুন্দরী ? ”

– “আমার কিছু হয় নি আপনিই আজকাল আমার দিকে একটু বেশি নজর দিচ্ছেন । বায় দ্যা ওয়ে আজ কাল আমার দিকে কেন এতো নজর দিচ্ছেন ? ঘটনা কি আমার প্রেমে পড়েছেন নাকি ? ”

উনি আমার কথায় কিছুটা রেগে যায় । আমার বাহু ছেড়ে কিছুটা দূরে যায় । অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন,

– “শার্ট আপ ! এমন কিছুনা তুমি খুব বেশি বেশি ভাবছো । ”

বলেই উনি কাবার্ডের দিকে এগিয়ে যায় ।আমি মিটমিট করে হাসছি । উনি মানুক আর না মানুক আমি ঠিক বুঝতে পারছি উনি আমার উপর ধীরেধীরে দুর্বল হচ্ছে । আমার ঘুমের ঘোরে উনার গভীর স্পর্শ তা বলে দেয় অগ্নি আমার উপর দুর্বল তাও খুব গভীর ভাবে ।
অগ্নি আমার দিকে ঘুরে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ,

– “আমার কাপড় কই ? ”

আমি ভ্রু কুঁচকে ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেই ,

– “কেন এই যে বিছানার উপরই তো আছে ! ”

– “তা তো আমিও দেখছি। বাকি কাপড় কই? ”

– ” বাকি গুলো পেকিং করেছি । ”

– “তুমি কেন করতে গেলে । এসব তোমার কাজ না । আমারটা আমি করতে পারতাম । ”

আমি জানি উনি ইচ্ছে করে এসব বলছে । উনি বার বার আমাকে কন্ট্রাক্ট মেরেজের কথা মনে করিয়ে দিতে চাইছে । উনার থেকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছে । কিন্তু আমি যে তা হতে দিবো না ।যে করেই হোক না কেন উনার সাথেই থাকবো । উনার মুখ থেকে “ভালোবাসি “কথাটা বের করেই ছাড়বো ।
তাই উনার কথার উত্তরে বললাম ,

– “আমি আপনার বউ আর এসব আমার দায়িত্ব । তো আমি করতেই পারি । ”

বলেই রুম থেকে চলে আসলাম । পিছনে একবারের জন্যও উনার দিকে তাকালাম না । নিশ্চিত রাক্ষসরাজ পেঁচার মুখ করে রেখেছে যা দেখার ইচ্ছা এই মুহূর্তে আমার একদম নেই !!!

______________________

মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠেছি । আপু আর ভাইয়া পিছনে । অগ্নি ড্রাইভ করবে । উবার পাশের সিটে আমি । মা বলেছিলো ফ্লাইটে যেতে ।কিন্তু আপু জিদ ধরেছে গাড়ীতেই যাবে । আপু প্রেগন্যান্ট আর আপুর কথা চিন্তা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ফ্লাইটে যাবো । এখন আপুর যেহেতু কোন সমস্যা নেই তাহলে গাড়ী তে যাওয়াই যায় ।তাছাড়া লং জার্নিতে অন্যরকম আনন্দ ।
গাড়ী ছাড়তেই আমি জানা খুলে দিলাম। মিষ্টি রোদ আর সেই সাথে মন শীতল করে দেওয়ার মত ঠান্ডা হাওয়া ।পাশের সিটে নিজের ভালোবাসার মানুষটা আর কি প্রয়োজন ? সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি ! ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে হয়তো প্রত্যেকটা বেলা প্রত্যেকটা মুহূর্ত এমই মধুর আর আনন্দের হয় । আমি একবার আড়চোখে অগ্নিকে দেখে নিলাম তার পুরো মন এই মুহূর্ত ড্রাইভিং এর দিকে ।প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে মনে শুধু একটা প্রশ্ন জাগে ! আর বার বার উনাকে বলতে ইচ্ছে করে ।
আপনি এত সুন্দর কেন ? যে নজর সড়ানো মুশকিল হয়ে পড়ে !
উনার নেশা নেশা চোখ যে আমাকে মাতাল করে তা কি উনি বুঝে ?
মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে “ভালোবাসি ! খুব বেশি ভালোবাসি । আমাকে কেন আমার মত ভালোবাসেন না ? ”
কিন্তু তা যে বলা সম্ভব না ।ভয় হয় যদি কথা বলা বন্ধ করে দেয় ? আমার থেকে দূরে সরে যায় ?
উফফফ এই দোটানা যন্ত্রণা যে আর সয্য হয় না !
আমি মুখ ভার করে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম । উনার দিকে তাকিয়ে থাকলে শুধু বুকের যন্ত্রনা বাড়বে ।আগুন জ্বলবে । এই দহন যে আমার আর সয্য হয় না ।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার কারনে ঘুমে চোখ ভেঙে আসছে । আস্তে আস্তে চোখজোড়া লেগে যায় । ঘুমে তলিয়ে যাই ।

______________________________

দীর্ঘ নয় ঘন্টার পথ অতিক্রম করে এক বিরাট বাড়ির সামনে আমাদের গাড়ী দাড়িয়ে । দেখে মনে হচ্ছে কোন রাজবাড়ি । বাড়ির সামনে ইয়া বড় এক বাগান ।ধবধবে সাদা বাড়ি । আমি ভাবলেশহীন ভাবে অগ্নির দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করি ,

– “আমরা এই রাজবাড়ির সামনে দাড়িয়ে কেন ?এটা কোথায় ? ”

অগ্নি সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়

– “ভিতরে গেলেই জানতে পারবে ”

আমি অবাক হয়ে অগ্নির দিকে তাকাই । পাশফিরে আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি আপুরও আমার মত একই অবস্থা । গেট খুলে দিতেই অগ্নি শু করে একটানে গাড়ী নিয়ে ভিতরে চলে যায় । বাড়ীর সামনে গাড়ী থামতেই যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখ কপালে ।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here