# তোমার_নেশায় !
.
.
(০৪)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
.
মনের অজান্তেই চোখের কোনে অশ্রুজলের উপস্থিতি
টের পেলাম। আমি কাদছি? লাস্ট কবে কেঁদেছিলাম
আমি। হঠাৎ একটা পুলিশ আমার গায়ে বালতি ভর্তি
পানি ছুড়ে মারল। হকচকিয়ে উঠে বসলাম। নিজের চোখ
মুছে চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম আরে এটা তো পুলিশ
স্টেশন নয় আর সামনে দাড়ানো লোকটিকে পশুটার মতো
লাগছে কেন? আমার ভাবনার ঘোর কাটিয়ে কেউ বলে
উঠল,
:– ঘুম ফুরালো মহারানীর?
,
ভালো করে চেয়ে দেখলাম রুপাঞ্জন খান আমার সামনে
বালতি হাতে দাড়িয়ে। আর উনি ঘুমের কথা বলছেন কেন?
তারমানে আমি এতোক্ষন সপ্ন দেখছিলাম। আমি জেল
যাইনি! ভাবতে না ভাবতে আবার আমার গায়ে পানি
ছুড়ে মারলো। এবার হুশ হলো আমার। উঠে দাড়ালাম
রুপাঞ্জন খানের মুখোমুখি হয়ে বললাম, এই শীতের
সকালে আমায় এইভাবে ভেজানোর মানে কি রুপাঞ্জন
খান??
,
:– যাক ঘুম ভেঙেছে তাহলে! আর এই আপনি এইভাবে চোখ
দেখাচ্ছেন কাকে?? Don’t you kno who i am??
,
:– yes I know, you are a bloody lair Mr rupanjon khan!
,
:– mind your language…… তোমার সাহস হয়ে কি করে
আমার বাসায় দাড়িয়ে আমার সাথে এইভাবে কথা বলার?
,
:– listen, রুপশা চৌঃ কাউকে ভয় পায়না। আর রইল সাহসের
কথা সেটা আমার কাছে ফ্যেক্টরি আছে। বুঝতে
পারলেন??
,
এবার পশুটার চোখ রাগে লাল হয়ে গেল, যেন পারলে
চোখের আগুনে ভস্ম করে দিবে আমায়। এক ঝটকায় আমার
হাত পিঠের পিছনে নিয়ে মচকাতে লাগল,
,
:– আর একটা কথা ও বললে I will kill you!! শুনেন, এই বাসায়
তোমায় আরাম করে ঘুমানোর জন্য আনিনি, কষ্ট দিতে
এনেছি। আর তোমার কষ্ট আজ থেকে শুরু! আমি মাত্র ১০
মিঃ টাইম দিলাম তোমায়,At the time আমার টেবিলে
যেন আমার breakfast রেডি পাই। ক্লিয়ার??
,
:– আপনি ভাবলেন কি করে? ওইসব মেড-সার্ভেন্ট এর
কাজ আমি করবো?? আর আমার ডিলের কি হলো??
,
:– আমি জানিনা তুমি কিভাবে কি করবে। বাট যদি ১০
মিনিটে আমি আমার নাস্তা না পাই তবে তোমার
ডিলের কথা ভুলে যেও! your time starts now!
,,
এই কথা বলে পশুটা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ওর নাস্তার
কথা শুনে আমার পেট ও গর্জন করে আমায় জানিয়ে
দিচ্ছে যে তার খাবার চাই। মনে পড়ল রাতে ফুফির রুম
থেকে এসে বাবার সাথে কথা বলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
আর সারাদিনের স্ট্রেসের কারনে ওই অদ্ভুত সপ্ন টা
দেখেছি। ওও গড! আমি কি করছি?? হাত ঘড়িতে দেখলাম
মাত্র ৮ মিনিট সময় আছে এরমধ্যে যদি কিছু না বানাতে
পারি। তাহলে আমার ডিল……..
কি বানাবো আমি?? কোনোদিন এক গ্লাস পানি খেতেও
কিচেনে যাইনি, রান্না তো দুরে থাক। মেয়েলি রান্না
বান্না বাবা আমায় শিখাননি,শিখিয়েছেন শুধু বিজনেস।
এখন এই বিজনেস বাঁচাতেই রান্না করতে হবে। আমি ধীর
পায়ে রুম থেকে বের হলাম, একটু হাটতেই কিচেন পেয়ে
গেলাম। চলে তো এসেছি বাট কি বানাবো?? কমন রুপশা!
কিছু একটা আইডিয়া বের কর! তখন অন্ধকারে সুক্ষ্ম
আলোর রেখার মতো পাউরুটি দেখতে পেলাম। কয়েক
স্লাইস কেটে প্লেটে নিলাম। উফফ আর মাত্র ৪ মিনিট।
ফ্রিজ খুলে ডিমের দিকে চোখ পড়ল বাট এটা বানায় কি
করে। ইয়েসস! ইউটুব থাকতে চিন্তা কিসের? তাড়াতাড়ি
করে রেছিপি কোনো মতে বানাতে সক্ষম হলাম। আজ
বিজনেসে উমেন রুপশা চৌঃ রান্নাঘরে! আনবিলিভেবল।
গায়ে মশলা মেখে একাকার অবস্থা আমার। তাড়াতাড়ি
ডাইনিং এর দৌড় দিলাম প্লেট নিয়ে। ওই পশুটা জুস
খাচ্ছিল টেবিলে বসে। আমাকে দেখে হাত ঘড়িটার
দিকে তাকিয়ে বলল,
:– ২ সেকেন্ড লেইট তুমি!
,
:– ওয়াট??? ২ সেকেন্ড একটা টাইম হলো।
,
পশুটা ব্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর প্লেট
উল্টালো। প্লেট টা দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ল।
আমার দিকে বলল,
:–what nonsense is this??
,
:–কেন চোখ নেইই আপনার? ভালো ডাক্টার দেখান।
পাউরুটি আর ডিম। আপনার ব্রেকফাস্ট।
,
:– এগুলা কি বানিয়েছ তুমি?? ওয়াক! এই বলে কিছুটা মুখে
দিল। তারপর ছুড়ে ফেলে দিল প্লেট!
.
.
আমি ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। প্লেট ভাঙার শব্দে
চমকে সেদিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে এগিয়ে
এসে বললেন,
:– তুমি মেয়ে হয়েছো কেন?? একটা ডিমে লবনের
জায়গায় চিনি দিয়েছো???
,
:– আমি আসলে বুঝতে পারিনি কোনটা লবন কোনটা
চিনি??
,
:– ওও খুব ইননোসেন্ট তাইনা???? এবার থেকে সব
তোমাকেই বুঝতে হবে। এই বাসার সব সার্ভেনট দের বের
করে দিয়েছি আমি। আজ থেকে ওদের সব কাজ তুমি
করবে।
,
:– স..সব বলতে??
,
:- বাসন মাজা, রান্না বান্না, কাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার
সব!
,
:– আমি এগুলা পারিনা। আর আমি আপনার কখনই ওগুলা
করবনা।
,
:– তোমার ডিল রক্ষা করতেই তোমাকে ওইসব করতে হবে।
আজ তোমার জন্যই নাস্তা না খেয়েইই অফিসের যেতে
হচ্ছে আমার। শুনো দুপুরের লাঞ্চ ও আমি বাসায় করবো।
বাইরের খাবার আমার পছন্দ না।
,
:– আমি আর এক মিনিট ও আপনার বাসায় থাকবোনা।
,
:– হুম ওকে যাও! কাল নিউজ পেপারে বড় হেডলাইন বের
হবে, চৌঃ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি বিদেশি লোন শোধ করতে
না পারায় সিইজ করে দেওয়া হয়েছে। খবর টা নিশ্চই খুব
মজার হবে তোমার জন্য তাইনা? আর তোমার বাবা? উনি
তো হার্ট পেশেন্ট উনি যদি এই শক নিতে না পেরে…..
,
:– না কিছু হবেনা বাবার, আমি…আমি সব করবো।
,
:– গুড গার্ল তুমি আমাকে হ্যেপি রাখো তাহলেই তোমার
বাবা হ্যেপি থাকবেন। যাও কাজে লেগে পড়ো। আমি
যেন লাঞ্চে এসে দেখি সব হয়ে গেছে। আর এই কি দশা
করেছো নিজের? আমার মেড সার্ভেনট কে আমি আরো
ভালো পোশাকে রাখি। আলমারি তে তোমার জন্য ড্রেস
আছে আজ থেকে ওগুলাই পরবা। আমার অপরিষ্কার থাকা
পছন্দ না। আর হ্যা আমার ফুফির খেয়াল রাখার দায়িত্ব
ও তোমার। উনার টেবিলের পাশে সব প্রেস্ক্রিপশান
আছে। কোনো টের মেটের হলে কিন্তু……….. চলি, সি ইউ!
.
.
বাদর, ইতর টা বেরিয়ে গেল। আর আমায় পাহাড় পরিমান
কাজ দিয়ে গেল। আমি তো আজ রাতেই পটল তুলবো।
মানে মারা যাবো, কি হয়েছে আমার কাজের লোকদের
মতোই কথা বলছি। দুর! যাই আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। গায়ে
তেল মশলার বিছ্রি গন্ধ বের হচ্ছে। গোসল সেরে
বেরিয়ে এলাম। আলমারি খুলে দেখি সব থ্রিপিচ রাখা।
আমি তো এই মেয়েদের পোশাক পড়তে কম্ফরটেবল ফিল
করিনা। কি আর করার, এইভাবে এডযাস্ট করতে হবে।
হাল্কা কফি কালারের একটা থ্রিপিচ পরে নিলাম।
আয়না তাকিয়ে দেখলাম, not bad! যাই এবার ফুফিকে
দেখে আসি। ফুফির রুমে গিয়ে দেখি উনি সেই আগের
মতো তাকিয়ে আছেন। উনার পাশে বসে কিছুক্ষন বকবক
করলাম। পশুটার নামে এক গাদা নালিশ করলাম। কি আর
করার, উনি তো কোনো রিপ্লে দিতে পারবেননা। তাই
উনার প্রেস্ক্রিপশান গুলাতে চোখ বুলিয়ে নিলাম। দুপুরে
মেডিসিন দিতে হবে। ও মাই গড, রান্না! সকালে তো
কোনো মতে চালিয়ে নিয়েছিলাম দুপুরে কি খাওয়াবো
ওই পশু কে। ফ্রিজ খুলে দেখলাম, মুরগির আর গরুর মাংস
আছে। ইচ্ছা তো করছে ওই পশুকে এগুলা কাচা খাইয়ে
দেই। নিচে ফলের ঝুড়ি দেখে খিদে টা আরো বেড়ে
গেল। কয়েকটা আপেল আর পেয়ারা নিমিষে সাবাড় করে
দিলাম। ইউটুব নিয়ে বসলাম আবার, চিকেন রেছিপি
দেখছি । চিকেন ভুনা টা অনেক সহজ মনে হলো এবার এটা
ট্রায় করা যায়। এবার আর কিচেন এপ্রোন পরতে ভুলিনি।
চিকেন গুলা পিস করে নিলাম ভিডিও দেখে দেখে
তারপর রান্না ও করে নিলাম। এবার আগে নিজে টেস্ট
করে দেখি, না খারাপ না। তারপর লবন আর চিনির বক্সের
দিকে চোখ পড়ল। আরে বক্সের গায়ে তো লবন আর চিনি
লেখা আছে তাহলে সকালে তো আমি ঠিকই ইউজ
করেছিলাম তাহলে পশুটা ইচ্ছা করে আমায় ইন্সাল্ট
করল। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা, মরিচের বক্স হাতে নিয়ে
একটা মুচকি হাসি দিলাম। রুপশা চৌঃ রান্নার জাদু
বুঝবে আজ রুপাঞ্জন খান। উনি এখন ও ফিরেনি এরফাকে
বাবার সাথে কথা বলে নিই । দুপুর হতেই বেল বেজে উঠল।
আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। পশুটা ডুকেই আমার দিকে
না তাকিয়ে বলা শুরু করল, এবার কি রান্না করেছো,
লবনের জায়গায় ডিটারজেন্ট পাউডার ইউজ করোনি
তো??
আমি মুখ বাকা করে বললাম,
:- সেটা নাহয় খেলেই বুঝবেন।
.
উনি মুচকি হেসে আমার দিকে তাকাতেই হা করে রইলেন।
হয়ত রুপশা চৌঃ কে ফাস্ট টাইম থ্রিপিচ দেখে অবাক
হয়েছেন। আমি তার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললাম,
:– খাবেননা??
,
:– হুম দাও!!
,
আমি ওনাকে খাবার সার্ব করে দিলাম। উনি বললেন,
:–স্মেল তো খুব সুন্দর বের হচ্ছে, তুমি তো কিছু পারোনা
তাহলে কিভাবে রান্না করলে?
,
:– তাতে আপনার কি? খেয়ে নিন তারপর কথা বলবেন।
,
উনি প্রথম লোকমা খেলেন। তারপর আরো দুএকটা
লোকমা মুখে দিতেই ওনার মুখ লাল হয়ে যেতে লাগল।
উনি চিৎকার দিয়ে প্লেট ছুড়ে ফেলে দিলেন। আমি
ওনার চেচানো দেখে খুব ভয়ে পেয়ে গেলাম। উনার চোখ
দিয়ে পানি বের হচ্ছে, আমি বুঝতে পারিনি উনার এতো
ঝাল লাগবে। উনি কয়েক গ্লাস পানি খেলেন। তারপর ও
ঝাল মিটছেনা। উনি এক ঝটকায় আমার হাত চেপে
ধরলেন তারপর বললেন,
:- তুমি ইচ্ছা করে করেছো তাইনা??
,
:– না মানে উম..ম..ম……..
.
কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমার ঠোট নিজের দখলে
নিয়ে নিলেন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
,