# তোমার_নেশায় !
.
.
(০৬)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
জানালার ফাক দিয়ে গলে আসা সকালের রৌদ্রময় আলো চোখে
পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল। ধীরে ধীরে চোখ খুলে এক
জোড়া লাল চোখ দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম,
:— ভুতততততততত!!!!!!!!!!
,
:– এই মেয়ে এই! কোথায় ভুত দেখেছো??
,
:– আ…আপনি, এ…এখানে??
,
:– এই বাসা টা আমার! ভুলে যাওনি নিশ্চই?? আমি যেখানে খুশি
আসতে পারি। তুমি একটা মেড, মেডের মতই থাকো! এতো
প্রশ্ন করার কোনো অধিকার নেই তোমার। বুঝেছো???
,
মুহুরতেই মন খারাপ হয়ে গেল আমার। আমি তো ওইভাবে মিন
করিনি তাও উনি আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করছেন কেন?
ওহহ! আমি তো ওনার এক মেড মাত্র। এর থেকে ভালো কিছু
আশা করা যায়না।
আমি কিছু বলছিনা দেখে উনি আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে
বললেন,
:– কোথায় হারিয়ে গেলে? আমার কাছে সারাদিন সময় নেই
তোমাকে পাহারা দিতে। দুদিন একটু সেবা করেছি বলে মাথায়
উঠে বসেছো?? এতো কাজ বাসার কে সামলাবে এগুলো??
,
:– স্যার আমার হাত………
,
:– শাট আপ!! আর মোটেও হাতের এক্সকিউজ চলবেনা।
তোমার সাহস হয়ে কি করে আমার উপর হুকুম চালানোর? কি
ভেবেছো আমি তোমায় কাজের লোকের মতো খেটে
খেটে খাওয়াবো আর তুমি মহারানীর মতো বসে থাকবে।
ভুলে যেওনা তোমায় আমি জাস্ট কষ্ট দিতে এখানে এনেছি!
এমনেতেই কাল সারারাত তোমার মাথায়………
,
:– আমার মাথায় কি স্যার???
,
:– চুপ… এতো কথা জানতে হবেনা তোমার। এখন ডাক্তার
আংকেল এসে তোমার ব্যান্ডেজ খুলে দিবেন। তারপর তুমি
আমার রুমে এসো!
এই বলে উনি চলে গেলেন।
আর আমি ব্রাশ করতে করতে ভাবছি, আমার যতটুকু মনে পড়ে
কাল রাতে আমার খুব জর হয়েছিল আর আমি কোনো মেডিসিন
ও নিনাই তাহলে আমি সুস্থ হলাম কি করে? আর স্যার ই বা কি বলতে
গিয়ে আটকে গেলেন। জানিনা ওই হারামি টার মাথায় কি চলে। এখন
না জানি আমাকে দিয়ে কি করাবে। ব্রাশ করে বের হতেই দেখি,
একজন ভদ্রলোক আমার বিছানায় বসে আছেন। দেখে মনে
হলো ডাক্তার, উনি আমাকে দেখে হাস্যমুখে বললেন,
:– গুডমর্নিং রুপশা!
,
আবার সকাল আবার গুড হতে দিল নাকি ওই শয়তান টা। কিন্তু এই
আংকেল কি আর সেটা বলা যায়। আমি ও যতসম্ভব হাসিমুখে কথা
বললাম ওনার সাথে। এই লোকটা তো বড্ড বাচাল। যতক্ষন আমার
ব্যন্ডেজ খুলছিল ততক্ষন নিজেও চুপ থাকেনি আর আমায় ও চুপ
থাকতে দেয়নি। আমি ও ভদ্রতা দেখাতে হুম, হ্যা করে গেলাম।
ইচ্ছা তো করছিল বুড়োর টাকলা ফাটিয়ে দেই, আমি মরি আমার
জালায় আর উনি আছেন ওনার গল্পে। কিন্তু রুপাঞ্জন হারামির কথা
মনে পড়তেই পারলাম না, এই লোক কে কিছু বললে উনি আমায়
আস্ত রাখবেন না। ব্যান্ডেজ টা খুলতেই যেন হাফ ছেড়ে
বাঁচলাম। ডাক্তার বিদায় হতেই কয়েক গ্লাস পানি খেলাম। এখন যদি
গ্রীষ্মঋতু হতো না নিশ্চিত পানির অভাবে ডিহাইড্রেশান হতো।
হাত টার দিকে তাকালাম এবার ক্ষত গুলা শুকিয়ে গেলেও পুরোপুরি
ভালো হয়নি। ওও নো! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম রুপাঞ্জন
বাদর না মানে স্যার আমাকে ওনার রুমে ডেকেছিলেন। প্রায় দৌড়
দিয়েই উনার রুমে গেলাম। আমি নক করতেই উনি ভিতরে
যেতে বললেন। রুমে ডুকেই তো বিষম খেলাম একি দেখছি
আমি, সারারুম ভর্তি ছেলেদের পোশাক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
যেন একটা ছোট খাটো শপিং মল। কি ব্যপার শয়তান টা কি এবার
কাপড়ের ব্যবসা করবে নাকি! একবার জিজ্ঞাস করবো? উনি আলমারি
থেকে আরো কাপড় বের করছেন। আমি বোকার মতো
দাড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছি! উনি আমাকে এক নজর দেখে বললেন, জি
না আমি ব্যবসা করার জন্য এগুলা নামাইনি! & for your kind information!
এইসবগুলা পোশাক আমার!
,
এই লোকটা কি জাদু বিদ্যা শিখছে নাকি? আমার মনে মনে বলা কথা
জানলেন কিভাবে? না আর চুপ থাকা যায়না। এবার সাহস করে জিজ্ঞাস
করেই ফেললাম,
:–স্যার! If u don’t mind….আমি কি জিজ্ঞাস করতে পারি, এগুলা কি
জন্য বের করছেন??
,
শয়তান টা একটা বাকা হাসি দিয়ে বলল,
:– এগুলা ওয়াশ করতে হবে!
,
:– ওহহ তাই, তো এগুলা লন্ড্রি তে পাঠাবেন বুঝি??
,
এবার সে রেগে আমার দিকে এগোতে লাগল আর আমি ভয়ে
পিছাতে লাগলাম। ওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলে চোখ
বন্ধ করে ফেললাম। উনি আমার একদম কাছে এসে বললেন,
:— হেই, এতদিন যে কাজ না করে আরাম করেছেন, আমায়
এতো খাটিয়েছেন। সেগুলার ক্ষতিপুরন দিতে হবেনা??
,
:– ম…..মা….মানে??
,
:– মানে এগুলা তুমি ওয়াশ করবে তাও কোনো ওয়াশিং মেশিন ছাড়া!
,
এবার আমার চোখ কপালে উঠল। যে আমি কোনো দিন
নিজের একটা রুমাল ওয়াশ করিনি সে আমি কিনা প্রায় শ খানেক কাপড়
ওয়াশ করবো তাও মেশিন ছাড়া! রুপশা আজ নিশ্চিত এই বাসা থেকে
তোর জানাজা বের হবে। আমায় চুপ থাকতে দেখে উনি আবার
বললেন,
:– তুমি মরো বা বাচো that’s none of my buisness! আমি আমার
কাজ গুলা কম্পলিট চাই। কাপড় ধোয়া শেষ হলে রান্না করে রাখবা,
আর then ঘর মুছে পরিষ্কার করে রাখবা। get that! Now lets go
back to work!!!
আমি অফিস থেকে এসে যেন দেখি সব কাজ হয়ে গেছে।
এই বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। আমি তো জানি ও না কিভাবে
মেশিন ছাড়া কাপড় ওয়াশ করতে হয়। কি আর করার, লোকটার যখন
আমার উপর দয়া হলোনা আমি কি করতে পারি। আচ্ছা এক কাজ করি
সব গুলা জামা একসাথে ভিজিয়ে দেই। বাট এতো গুলা কাপড় বাল্টি
তে জায়গা হবেনা হুম বাথ টাবে বিজিয়ে দেওয়া যায়! কিন্তু আমি
জানতাম না আমার জন্য আরো কত ঝন্ত্রনা অপেক্ষা করছে।
ডিটারজেন্ট এ হাত দিতেই আমার পোড়া হাত টা ক্ষত গুলা আরো
বেড়ে গেল। আমি পানিতে হাত বিজিয়ে জোরে জোরে
কান্না করতে লাগলাম । জোরে কান্না করলেও যে আমার
ঝন্ত্রনা কমছেনা। উনি ইচ্ছা করেই আমার সাথে এমন করেছেন
উনি জানতেন যে আমার পোড়া হাতে ডিটারজেন্ট পাউডার
লাগলে প্রবলেম হবে তাও কি করে ওনার আমার প্রতি একটুও দয়া
হলোনা। আমি হাতের এই অসহ্য ঝন্ত্রনা নিয়ে কি করে
এতোগুলা কাপড় ওয়াশ করবো। কোনো মতে বাম হাত দিয়ে
কাপড় গুলা নিংড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ওনার মোটা আর শক্ত
ব্লেজার গুলা কিছুতেই নিংড়ানো যাচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে ডান হাত
দিয়ে কান্না করতে করতে নিংড়ালাম। কাপড় গুলা ওয়াশ করে আমি
বাথরুমের মেঝেতে দপাশ করে বসে পড়লাম আমার মধ্যে
যেন এক ফোটা শক্তি নেই ওগুলা বেলকনি তে শুকাতে
দেওয়ার। কিছুক্ষন বসে পড়লাম হাত টা পানি থেকে উঠালেই জালা
করছে তাই একটা ছোট মগে হাত টা ডুবিয়ে রাখলাম। তারপর
অনেক কষ্টে কাপড় গুলা ব্যলকনি তে শুকাতে দিলাম। আমাকে
বাবা খুব আদরে বড় করেছেন তো তাই আল্লাহ আমার থেকে
একটু একটু করে সুখ গুলা ছিনিয়ে নিচ্ছেন। যাই এবার রান্না করতে
হবে যে, কিচেনে গিয়ে সবজি আর মাংস বের করলাম ফ্রিজ
থেকে ওগুলা কোনো মতে কেটে নিলাম। তারপর চিকেনে
মশলা মাখতে হবে বাম হাত দিয়ে তো আর মশলা মাখানো যাবেনা
তাই ডান হাত টাই ইউজ করতে হবে। ভয়ে ভয়ে মশলায় হাত দিলাম
ঝন্ত্রনায় চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো গলা থেকে, উনি প্রতি
পদে পদে আমার জন্য ঝন্ত্রনার কাটা জাল বিছিয়ে রেখেছেন,
Hatts off you রুপাঞ্জন খান। আমি এক এক বার হাত দিয়ে মশলা মাখছি
আর কান্না করতে করতে আবার পানি তে হাত টা ডুবাচ্ছি। তখনই
ফোন টা বেজে উঠল, বাবার ফোন!
চোখের পানি মুছে ফোন ধরলাম।
,
:– হ্যালো বাবা! কেমন আছো??
,
:– মা আমি ঠিক আছি। তুই কেমন আছিস রে?? সকাল থেকে আমার
মন টা তোর জন্য কেমন কেমন করছে, যেন তুই খুব কষ্ট
পাচ্ছিস।
,
:– না বাবা, আমি একদম ঠিক আছি। এখন রান্না করছি, পরে কথা বলব
( বাবা থেকে কান্না লুকাতে চাইছি, আমি জানি আমি বেশিক্ষন কান্না
ধরে রাখতে পারবোনা)
,
:– তুই কাঁদছিস কেন রে মা??
,
:– আরে বাবা, বললাম না চুলার পাশে আছি তাই ধোয়া লেগে ওই
আরকি!
,
:– মা রে, বাবার মন কখন ও মিথ্যা বলেনা, গ্যাসের চুলায় ধোয়া
হয়না। তুই কি খুব কষ্ট পাচ্ছিস?? আমি কি একবার আসব তোর কাছে?
,
:– না বাবা, তুমি এই অসুস্থ শরিল নিয়ে কেন আসবে? বরং আমি
কিছুদিন পর তোমায় একবার দেখে আসব। রাখছি নিজের খেয়াল
রেখো!
,
:– আচ্ছা আসিস তাহলে, নিজের খেয়াল রাখবি। আর ওই হারামি
তোকে কোনো কষ্ট দিলে আমায় জানাবি কিন্তু।
,
:-আচ্ছা বায়।
,
আমি জানি আমি বাবা কে বলেছি কিছুদিন পর যাবো কিন্তু এটাই সত্যি
রুপাঞ্জন আমায় কখন ও এই নরকপুরি থেকে বের হতে
দেবেনা। কিন্তু আমার যে বাবা কে দেখতে খুব ইচ্ছা করে।
চোখের পানি মুছে রান্না টা শেষ করলাম। ঘর মুছছিলাম তখনই কলিং
বেল বেজে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম, রুপাঞ্জন
আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল আর নাক শিটকিয়ে বলল,
:– ইয়াক!! এই কি অবস্থা করেছো নিজের?? সারা গায়ে মশলা, পানি
আর ময়লা মাখিয়ে রেখেছো তোমায় আর কতোবার বলতে
হবে, আমার মেড দের ও একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকে। বাট তুমি……
যাও চেঞ্জ করো! উফফ ডিসগাস্টিং।
,
আমি রুমে এসে আনমনে হাসছি, হায়রে মানুষ! আমায় গায়ে
তেল,মশলার ময়লা দেখল কিন্তু আমার ব্যথায় কাতর হওয়া পোড়া
হাত টা একবার দেখলোনা।
রিভেঞ্জ নিতে কেউ এতো নিষ্টুর হতে পারে?
তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিলাম আর বেরিয়ে ওনার সামনে গেলাম।
উনি আগুন লাল চোখ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন আমি সামনে যেতে
কিছু বুঝে উঠার আগেই, ঠাসসসসসসসস!!!!!!
থাপ্পর টা এতো জোরে ছিল যে আমার দুর্বল শরিল সেটার ভার
নিতে না পেরে মাটিতে আছড়ে পড়ল। আমি বুঝতে পারছিনা আমি
কি এমন অপরাধ করেছি যে উনি এতো রেগে আছেন,
আমাকে টেনে উপরে উঠালেন আর আমার পোড়া হাত
চেপে ধরে রাখলেন আমি ব্যথায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। উনি
আমাকে একটা হোয়াইট শার্ট দেখিয়ে বললেন,
:– তুমি এতো টা ইউজলেস আমি জানতাম না, আমার মিটিং এর ফেবারিট
শার্টের মধ্যে তুমি অন্য শার্টের রং লাগিয়ে,Look what have
you done????…….
তারপর আমার হাত ছেড়ে দিতেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়লাম।
,
,
,
,