#পরীজান
#পর্ব ২৮
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
শাড়ির আঁচল টেনে ঘাম মুছলো পরী। গলার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পাশে ফিরে তাকালো পরী। হারিকেন এখনও জ্বলে বিধায় শায়েরের ঘুমন্ত চেহারার স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। তার মানে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল? কি ভয়ানক স্বপ্ন? পরী দ্রুত কম্বল ফেলে নেমে পড়ল। জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। এরপর কি আর ঘুমাতে পারবে সে??একবার ভাবলো জানালা খুলে বেলি ফুলের ঘ্রাণ নিবে। কিন্ত ফুপুর কথা মনে পড়তেই আর জানালা খোলা হলো না। এখন ওর পালঙ্কের দিকে এগোতেই ভয় লাগছে।
পরী তৎক্ষণাৎ নিজেকে সুধালো,পরী তুই তো সাহসি। রুপালির বাড়ি থেকেই আসার সময় তো কতগুলোকে একসঙ্গে পিটিয়েছে। এই সামান্য বিষয়ে ভয়ের কি আছে? কিন্ত স্বপ্ন টা ভাবাচ্ছে পরীকে।
-‘আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন?’
সম্বিৎ ফিরে এলো পরীর। তাকিয়ে দেখলো শায়ের জেগে গেছে। উঠে বসে পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। পরী কম্পিত কন্ঠে বলে,’পানি খেতে এসেছিলাম।’
কথাটা বলে পরী ধীর পায়ে এসে পালঙ্কে বসে। শায়ের বলে,’আপনি মনে হয় কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন তাই না?’
-‘হুম খুবই খারাপ স্বপ্ন।’
-‘আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।’
-‘নাহ।’ আতকে ওঠে পরী।
-‘কেন?’
-‘না মানে যদি স্বপ্ন টা আবার দেখি?’
হাসলো শায়ের,পরী কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
-‘তাহলে কি সারারাত জেগে থাকবেন নাকি?সকালে কিন্ত তাড়াতাড়ি উঠতে পারবেন না। কালকে আপনাকে নিয়ে আপনার বাড়িতে যাবো।’
মনটা ভালো হয়ে গেল পরীর। খুশিতে মনটা নেচে উঠলো। সে হেসে জিজ্ঞেস করে,’সত্যি!!’
-‘হ্যা সত্যি। এবার তো ঘুমান?’
পরী শুয়ে পড়ল। কিন্ত ঘুম আসছে না। পরীকে এপাশ ওপাশ করেতে দেখে শায়ের বুঝলো পরী ঘুমায়নি। বাড়িতে যাওয়ার খুশিতে নাকি স্বপ্নের ভয়ে? শায়ের বলল,’ছোটবেলায় আমি যখন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতাম তখন মায়ের হাত ধরে ঘুমাতাম। আর কোন খারাপ স্বপ্ন দেখতাম না।’
-‘আমিও কি তাই করব এখন?’
-‘করতে পারেন।’
-‘তাহলে আপনার হাত দিন?’
-‘হুম দেওয়া যায় আশেপাশে হারিকেন নেই এখন।’
অতীত মনে পড়তেই হেসে উঠল পরী। ইশ খুব বাজে ভাবে পুড়িয়ে দিয়েছিল হাতটা। আর এখন সেই হাতটাই সারা জীবনের জন্য ধরতে হচ্ছে। পরী আলতো করে শায়েরের হাতটা ধরে তারপর চোখ বন্ধ করে নেয়। শায়ের আনমনে বলে উঠল,’আপনার হাসি সুন্দর।’
চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই পরী বলে,’শুধুই সুন্দর?’
-‘ভিশন সুন্দর আপনার হাসি। আপনার থেকেও আপনার হাসি বেশি সুন্দর।’
পরী এবার জবাব দিল না। সে চুপচাপ শুয়ে রইল। শায়ের একটু চুপ থেকে আবার বলল,’বাড়াবাড়ি রকমের সৌন্দর্যের চোখ ঝলসানো মায়া থাকে। ঝলসে যাবে চোখ,হৃদয় পুড়বে তাও সে মাধুর্য থেকে চোখ ফেরানো যাবে না। যে আগুন সব জ্বালিয়ে দেয় সে আগুন কে ক’জন ভালোবাসতে পারে বলুন?’
পরী এবার শায়েরের হাত ছেড়ে অন্যদিক ফিরে শুয়ে রইল। সে বুঝতে পারছে পাশে থাকা মানুষটির মনের কথা। প্রথম দেখাতেই যে সে পরীতে বেঁধে গেছে। সে পরীর সান্নিধ্য চায় এটাও পরী বুঝেছে। পরীর অনুমতি ব্যতীত শায়ের তাকে স্পর্শ করবে না এটাও ওর জানা। তবুও কিসের এতো দ্বন্দ্ব? কেন পরী শায়েরকে কিছু বলতে পারে না? শায়েরের প্রতি ওর যেন অদৃশ্য টান উপস্থাপনা করেছেন সৃষ্টিকর্তা। সেজন্য পরীর নিজেরও ইচ্ছা করে দুদণ্ড শায়েরের সাথে বসে কথা বলতে। কিন্ত কোন এক আড়ষ্ঠতা জেঁকে ধরে ওকে।
পাখি ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে পরীর। গায়ের কম্বল ফেলে উঠে বসে সে। শায়ের এখনও ঘুমাচ্ছে। পরী পাশ ফিরে তাকালো। এবং কিছুক্ষণ ধরে সে তাকিয়েই রইল। প্রশ্ন জাগছে ওর মনে। এতক্ষণ ধরে দেখছে কেন সে মানুষ টাকে? মনে ধরেছে নাকি? পরী কোথায় যেন শুনেছে ভালোবাসলে সে যেমনই হোক না কেন তাকে দেখতে অসম্ভব ভাল লাগে। চোখ জুড়িয়ে দেখার আনন্দ অনেক। সেরকমই ভালো লাগছে পরীর। উঠতে গিয়ে পরী খেয়াল করে ওর আঁচল শায়েরের পিঠের নিচ পর্যন্ত। আস্তে করে পরী টান দিলো আঁচলটা কিন্ত পারে না। আরেকটু জোরে টান দিতেই শায়ের চোখ মেলে তাকালো। ঘুম জড়ানো গলায় বলল,’কোন সমস্যা?’
পরক্ষণে সে নিজেই বুঝে গেল। পরীকে সাহায্য করলো সে। পরী উঠে চলে গেল। বাইরে এখন সে যেতে পারবে। তাই পরী কলপাড়ে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিলো। আসার পথে খুসিনা ফুপু এসে হাজির। তিনি বললেন,’নতুন বউ তুমি উইঠা পড়ছো। যাও গোসল কইরা একখান ভালা কাপড় পইড়া আহো দেহি। আমার রান্ধায় সাহায্য করো।’
মাথা নাড়লো পরী। ঘরে গিয়ে একটা কমলা রঙের শাড়ি নিয়ে কলপাড়ে গিয়ে গোসল করে নিলো। তারপর রান্নাঘরে খুসিনার কাছে গেলো। খুসিনা রুটি বানাচ্ছে পরী একটা পিঁড়িতে বসলো। খুসিনা বটি দিয়ে পেঁয়াজ মরিচ কাটতে দিলো পরীকে।
এটা সে পারে। তাই সে পেঁয়াজ কাটছে। এমন সময় চামেলি এলো সেখানে বলল,’নতুন ভাবি কি করো?’
পরী তাকালো চামেলির দিকে। মুচকি হেসে বলে, ‘কাজ করি। তুমি আমাদের সাথে নাস্তা করে যেও?’
-‘আইচ্ছা।’ হাসলো চামেলি। খুসিনা পরীকে জিজ্ঞেস করে,’কি কি রান্ধা পারো নতুন বউ?’
-‘আমি কিছুই রান্না করতে পারি না ফুপু।’
খুসিনা যেন আকাশ থেকে পড়লো। বলল,’কও কি? এতো বড় মাইয়া রান্ধা পারো না?’
-‘আম্মা আমাকে রান্না ঘরে যেতে দেয় না। কাজের লোক আর আম্মাই সব করে।’
চামেলি অবাক হয়ে বলে,’তোমাগো বাড়িতে কামের মানুষ আছে নতুন ভাবি? তোমার বাপের অনেক টাকা বুঝি?’
পরী আবারো হাসলো। তারপর বলল,’আমার আব্বা চার গ্রামের জমিদার। আমি জমিদার কন্যা।’
রুটি ছ্যাকা বন্ধ করে দিলো খুসিনা। শায়ের জমিদারের মেয়ে বিয়ে করে এনেছে শুনে বেশ অবাক তিনি। হেরোনাকে কতবার বলেছে যেন চম্পার সাথে শায়েরের বিয়ে দেয়। হেরোনা অনেক কথা শুনিয়েছিল তাকে। এখন খুসিনাও কথা শোনাবে। ভেবেই তিনি মনে মনে খুশি হলেন বললেন, ‘রান্ধা শিখবা আমার থাইকা। এহন বিয়া হইছে আর ক’দিন পর পোলাপান হইবো। নিজের সংসার নিজেরেই তো দেখতে হইব।’
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো পরী। এখনই বাচ্চার কথা বলছে এই মহিলা। না জানি পরে আর কি কি বলবে কে জানে?
ঘরে পাটি বিছিয়ে খেতে বসেছে শায়ের আর চামেলি। পরী খাবার বেড়ে দিচ্ছে। খুসিনার কথাতেই সে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। এই প্রথম সে এ খাবার বাড়ছে একজন স্ত্রী হিসেবে। চামেলি আর শায়ের খেতে বসেছে। সে পরীকে বলে,’আপনি খাবেন না?’
-‘আমি পরে খাবো ফুপুর সাথে। আপনারা খেয়ে নিন।’
শায়ের খাচ্ছে। চামেলি বলল,’ভাই তোমরা আইজ নতুন ভাবিগো বাড়িতে যাবা?’
শায়ের খেতে খেতে জবাব দিল,’হুম কিন্ত তোকে নিতে পারবো না।’
মুখটা কালো করে ফেলে চামেলি। সে তো যাবে বলেই কথাটা বলল। কিন্ত শায়ের আগেই বুঝে গেছে। পরী বলে,’যাক না ও আমাদের সাথে।’
-‘ও গেলে আপনাকে কথায় কথায় লজ্জিত হতে হবে। আগে ভাল করে কথা শিখুক তার পর নাহয় নিবো।’
চামেলি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,’কে কইছে আমি কথা পারি না। এই তো কথা বলতাছি। আমি খালি সুন্দর করে কথা কইতে পারি না। তাতে কি হইছে। আমারে কি নেওয়া যায় না? সবাই কি সব পারে?নতুন ভাবিও তো রান্ধা পারে না তাইলে হ্যারে নিবা ক্যান।’
চামেলির বোকা বোকা কথায় জবাব দিলো না শায়ের। এই মেয়েটা এরকমই। কথা না বুঝে বলে ফেলে। পরী বলে,’ঠিক আছে। তোমাকে আরেকদিন নাহয় নিয়ে যাবো।’
-‘নতুন ভাবি তুমি ভাইরে কও না? কিছু না পারলে কি বিয়াও হয় না? তুমি তো রান্ধা পারো না। তোমারও তো বিয়া হইছে। ফুপু তো কইলো আর কয়দিন পর তোমাগো পোলাপান হইবো। তাইলে তো আমারও,,,’
কথা শেষ করতে পারলো না চামেলি। শায়েরের কাশির শব্দে সে থেমে গেল। পরী স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। শায়ের কে পানি দিতেও ভুলে গেছে সে। চামেলির কথায় শায়ের পরী দুজনেই হতভম্ব। চামেলি বলে,’নতুন ভাবি পানি দাও ভাইরে।’
পরী তাড়াতাড়ি পানি দিলো শায়ের কে। পানি খেয়ে শায়ের রাগি দৃষ্টিতে তাকালো চামেলির দিকে।
বলল,’এতো কথা তোকে কে বলতে বলেছে? একটু চুপ থাকতে পারিস না তুই?’
খাওয়া শেষ না করে শায়ের চলে গেল। পরীর দিকে তাকানোর সাহস আর হলো না ওর।
বোরখা পরে তৈরি পরী। বাড়ি যাওয়ার আনন্দ ওর। তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েছে। চামেলিকে ফেলে যাওয়া সম্ভব হলো না। সে কেঁদে অস্থির। হেরোনা মানা করলো না মেয়েকে। কেননা চামেলির কাছ থেকে শুনবে শায়েরের শ্বশুর বাড়ি কেমন? গাড়ি ভাড়া করেছে শায়ের। তাতে করে তিনজন রওনা হলো। নূরনগর পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেলো। নিজ বাড়িতে এসে ছুট লাগালো পরী। সবার আগে গেলো মালার কাছে। মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,’কেমন আছেন আম্মা?’
-‘ভালো!!তুই কেমন আছোস?’
-‘আপনাদের ছাড়া আমি ভালো নাই আম্মা। অনেক মনে পড়ে সবাইকে।’
মালা পরীর গালে হাত রেখে বলে,’সবকিছু যেদিন আপন কইরা নিবি সেদিন দেখবি ওই বাড়িই তোর সব।’
জুম্মান দৌড়ে এলো পরীর কাছে। পরীকে দেখে সে খুব খুশি। পরী জুম্মান কে নিয়ে গেল রুপালির কাছে। বাবুকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করলো। ওখানে বসেই হাসিতে মেতে উঠলো। কুসুম দৌড়ে এসে বলে,’পরী আপা আপনে এইহানে! বড় আম্মা ডাকতাছে।’
মায়ের কাছে যেতেই একগাদা বকুনি খেতে হলো পরীকে। শায়ের কে কেন এখনও বৈঠকে একা ফেলে এসেছে সেজন্য। কোন জ্ঞান বুদ্ধি কি ওর নেই নাকি? যথেষ্ট বড় হয়েছে সে। তবুও এমন ভুল করে কিভাবে? পরী মাথা নিচু করে সব শুনলো। মালা নিজের কথা শেষ করে পরীকে নিজের ঘরে পাঠালেন। মন খারাপ করে ঘরে গেল পরী। শায়ের কে খেয়াল করলো না। পরীকে এভাবে আসতে দেখে
শায়ের বুঝলো না যে কি হয়েছে? সে জিজ্ঞেস করে, ‘বাড়িতে আসলেন মন ভালো করার জন্য। আর এসে মন খারাপ করেন বসে রইলেন কেন?’
-‘আমার মন ভালো করানোর কেউ নেই। তাহলে মন ভালো হবে কীভাবে?’
-‘আপনি বুঝলেন কীভাবে যে কেউ নেই?’
-‘আমি বুঝি সব। আমি কি ছোট নাকি?’
-‘ওহ,আপনি তো যথেষ্ট বড়। বিয়েও হয়ে গেছে। কিন্ত,’
জুম্মান তখনই এসে বলে ওদের খেতে ডাকছে মালা। তাই আর কথা হলো না ওদের। নিচে নেমে গেলো।
খাওয়া শেষে মালা শায়ের কে ডাকলেন। তিনি বললেন,’আমি জানি না বাবা তুমি কেমন? যতটুকু দেখছি জানছি খারাপ জানি নাই। পরী আমার সব চাইতে আদরের মাইয়া। ওরে এতোদিন অনেক কষ্টে আগলাইয়া রাখছি। এহন ও তোমার কাছে থাকবো। তুমি আমার মাইডারে আগলাইয়া রাইখো। পরী এহনও জানে না বাইরের দুনিয়া কেমন? কোনদিন বাইরে যায় নাই তো। ওরে তুমি সব বুঝবা। আমার মাইয়াডারে ভালো রাইখো।’
বলতে বলতে মালা চোখ মুছলেন। শায়ের মালাকে আশ্বস্ত করে বলল,’আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ে আমার দায়িত্ব। এখানে থাকাকালীন আমি যেমন আমার সব দায়িত্ব নিখুঁত ভাবে পালন করেছি তেমনি আপনার মেয়ের সব দায়িত্ব ও পালন করবো। আপনি চিন্তা করবেন না।’
শায়েরের কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মালা। পরী বড়ই দূরন্ত। কখন কি করে বসে বোঝা অসম্ভব। রাগটাও একটু বেশি। শায়ের পরীকে সামলাতে পারবে কি না এই চিন্তা মালার বেশি। কিন্ত শায়েরের সাথে কথা বলে সে বুঝতে পারল শায়ের ঠিকই পরীকে মানিয়ে নিতে পারবে। মালা চলে গেল। শায়ের সামনে পা বাড়াতেই দেখলো পরী দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা এখনও গম্ভীর করে আছে। শায়ের কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পরী বলে উঠল,’আমি সত্যিই কি শুধু আপনার দায়িত্ব? আপনি আপনার কাজকে আর আমাকে একই নজরে দেখেন?’
-‘নাহ আসলে,,’
-‘আপনাকে আর কষ্ট করে কিছু বলতে হবে না।’
চলে গেল পরী। খুব রাগ হচ্ছে শায়েরের উপর। পরীকে দায়িত্ব মনে করে সে? বিয়েটা কি ছেলেখেলা নাকি? পরীর কাছে তাই মনে হচ্ছে প্রথমে নওশাদ তারপর শেখর। শেষমেশ শায়েরের সাথে বিয়ে হলো। এটাকে তো খেলাই মনে হয়। সে ঠিক করলো শায়েরের সাথে কথাই বলবে না।
শায়ের বুঝলো পরী অভিমান করেছে। এখনই এতো অভিমান। পরে আর কি হবে কে জানে? কিন্ত সে আর পরীর মান ভাঙাতে যেতে পারলো না। কারণ আফতাব তাকে ডেকেছে। সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরলো শায়ের কিন্ত পরী নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়ের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
ছাদের কার্ণিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে পরী। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিন্দুকে খুঁজছে। বিন্দুই একদিন বলেছিল যে মানুষ মারা গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়। তাই পরী এসেছে বিন্দুর সাথে কথা বলতে।
-‘তুই থাকলে খুব ভালো হতো বিন্দু। আজ তুই নেই বিন্দু কিন্ত তোর মাঝি তোকে এখনও ভালোবাসে। সোনা আপা তার ভালোবাসা পেয়েছে। রুপা আপা পায়নি কিন্ত সিরাজ ভাইয়ের ভালোবাসা সত্যি। আর আমাকে দেখ,একজনের দায়িত্ব আমি। ওই সুখান পাগল টাও ভালোবাসা বোঝে। কত গভীর ওর ভালোবাসা। আমার কপাল খারাপ বিন্দু।’
জ্বলন্ত তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে হাসলো পরী। বিন্দুকে খুব মনে পড়ছে। কিন্ত ওই বিন্দু এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
-‘চাদর ছাড়া ছাদে কেন এসেছেন আপনি? ঠান্ডা লাগছে না?’
শায়েরের গলার আওয়াজ চিনলো পরী। তাই পেছন ফিরে তাকালো না। পরী ওভাবেই বলল,’এই দায়িত্ব টা আপনার নিতে হবে না।’
পরীর অভিমান যে গাঢ় হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে শায়ের। সে পরীর পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,’স্ত্রীকে সূখে রাখার দায়িত্ব তো স্বামীর নিতে হয়। শুধুই সুখ নয় ভালোবাসার দায়িত্ব ও কিন্ত নিতে হয়। আপনি কোন দায়িত্বের কথা বলছেন বুঝলাম না।’
পরীর জবাব না পেয়ে শায়ের বলতে শুরু করল, ‘আমি আপনাকে প্রথম কবে দেখেছি জানেন? হয়তো জানেন বিয়ের দিন। নাহ,আমি আপনাকে প্রথম দেখছি সম্পানের নৌকাতে। বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছি আর আপনি ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমিও ভেতরে গেলাম। আপনি তখন ঘোমটা টেনে বসেছিলেন। নেকাব পড়েননি। আপনার খেয়াল ছিল না যে আপনার মুখ বরাবর আয়না গাঁথা ছিলো নৌকার ছইয়ের সাথে। যেখানে স্পষ্ট আপনার মুখটা আমি দেখে ছিলাম।’
#পরীজান
#পর্ব ২৯
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
-‘আপনি এমন একজন নারী যাকে ফেরানোর সাধ্য কারো নেই। আপনাকে দেখে যদি কোন পুরুষ প্রেমে না পড়ে তাহলে সে সবচেয়ে বড় পাপী। আমিই সেই পাপ কি করে করি? কিন্ত আমার কাছে আপনি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমরা বেশি আকৃষ্ট হই। তবুও আপনার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি সবসময়। আপনার আমার মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। কোথায় রাজকন্যা আর কোথায় রাজার বাগানের সামান্য মালি!! এই দ্বন্দ্ব আপনার থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কিন্ত নিয়তি দেখুন। আমি কখনোই এটা ভাবিনি যে আমার ভাগ্যে আপনিই আছেন।’
আকাশের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শায়েরের দিকে তাকালো পরী। কিন্ত শায়ের তখনও আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে। পরীর জবাব না পেয়ে শায়ের আবারো বলল,’আমি আপনার বড় বোনকে দেখিনি আর তার ভালোবাসার মানুষ কেও দেখিনি। সুখান পাগল আর তার বউয়ের ভালোবাসাও দেখিনি। আর রইল সিরাজ ভাইয়ের কথা। সে চলে যাওয়ার পরই কিন্ত আপনাদের বাড়িতে আমি প্রথম আসি। মূলত সিরাজ ভাইয়ের জায়গাটা আমাকে দেওয়া হয়েছে। ওদের ভালোবাসা আমি বুঝবো কিভাবে? তবে সম্পান বিন্দুর ভালোবাসার সাক্ষী আমি নিজেও।’
আকাশের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে পরীর দিকে তাকালো শায়ের,’পৃথিবীতে কেউ কারো মতো করে ভালোবাসতে পারে না। তাহলে সব ভালোবাসার পরিণতিও যে একই হত। নিজ স্থান থেকে নিজের প্রিয় মানুষ কে ভালোবাসতে হয়। সে ভালোবাসার মাধুর্য থাকে অন্যরকম। এখন আপনিই বলুন ওদের মতো ভালোবাসা চাই নাকি আপনার স্বামীর ব্যক্তিগত ভালোবাসা চাই কোনটা?’
দ্বিধায় পড়ে গেল পরী। কি উওর দিবে বুঝতে পারল না। চেয়েও পরী কঠোর হতে পারছে না। যেই মেয়েটা অধিকতর সাহসি,রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার মিশে আছে রাগ। আজ সেই মেয়েটির রাগ উধাও!!সাহস ও হারিয়ে গেছে যেন।
ভালোবাসা মানুষের দূর্বলতা। ভালোবাসলে মানুষ কোন না কোন কারণে ভয় পাবেই। সেই ভয়টা পরীর হচ্ছে। কিন্ত কিসের ভয়? হারিয়ে ফেলার নাকি অন্য কিছু? বুঝে উঠতে পারে না পরী। সে নির্দিধায় শায়েরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা এই মুহূর্তে পরী পড়তে অক্ষম। তাই বেশিক্ষণ দাঁড়াতে চাইলো না সে। ঘুরে হাঁটা ধরতেই শাড়ির আঁচলে সজোরে টান পড়তেই সে দাঁড়িয়ে গেল। পেছন ফিরে তাকাতেই শায়ের বলল,’আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন না?’
পরী এবার ঘুরে দাঁড়াল। শায়েরের দিকে এগোতে এগোতে বলল,’আপনার প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। ভালোবাসা বলতে আমি ওদের কাহিনী গুলো বুঝি। এর বেশি কিছু জানা নেই আমার। পড়ালেখা শেখানোর শিক্ষক থাকলেও ভালোবাসা শেখানোর শিক্ষক কিন্ত নেই।’
-‘ভালোবাসার শিক্ষক থাকে না। দুজনের মধ্যে তৈরি করতে হয়। তাহলেই ভালোবাসার মানে বুঝবেন।’
পরী শায়েরের আরেকটু কাছে আসলো। অন্ধকারের আবছা আলোতেই চোখ রাখলো শায়েরের চোখে। বলল,’তাই? তাহলে দুজনের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি কিভাবে করা যায় বলুন তো?’
শায়ের এবার থামলো। এবার একটু বেশিই বলছে সে। ঠান্ডাও লাগছে, সে নিজেও চাদর আনেনি। তাই সে বলল,’আজকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিখে ফেলেছেন বাকিটা অন্য একদিন শেখাবো।’
শায়ের চলে আসতে গিয়ে থেমে গেল পেছন ফিরে বলল,’হাত ধরার অনুমতি দিবেন নাকি আঁচল ধরে টেনে নিয়ে যাবো?’
মৃদু হাসে পরী,’কোলে তুলে নিয়ে গেলে মন্দ হয়না।’
কালবিলম্ব না করে চোখের পলকেই সে পরীকে কোলে তুলে নিলো। পরী ভেবেছিলো শায়ের তাকে কোলে নিবে না। কিন্ত সে পরীকে বিষ্মিত করে দিয়েছে।
পরী আজ শাড়ি পাল্টে নিজের ঘাগড়া পড়েছে। শাড়ি পরার তেমন অভ্যাস নেই তার। তাই আপাতত বাড়িতে এটাই পরুক। শীত নিয়ন্ত্রণ করা খুবই মুশকিল হয়ে আসছে বিধায় পরী শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দে চোখটা বন্ধ করে ফেলে যাতে শায়ের বুঝতে পারে পরী ঘুমিয়ে গেছে। কিন্ত চতুর পরী জানে না যে তার স্বামী তার থেকেও কম নয়। সব বুঝেও না বোঝার ভান করে শায়ের শুয়ে পড়ল। বেলি ফুলের সুবাসে চোখ মেলে তাকালো পরী। একটু আগেও তো ফুলের ঘ্রাণ পায়নি সে। এখন কোথা থেকে আসলো? ওপাশ ফিরতেই দেখলো শায়ের ফুলগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে। নিজের অজান্তেই পরী ধরা দিয়ে বলে,’ফুল কোথা থেকে আনলেন?’
-‘আপনি ঘুমাননি? একটু আগেই তো দেখলাম ঘুমাচ্ছেন।’
-‘ওই চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। দেখি ফুলগুলো!’
পরী হাত বাড়াতেই শায়ের হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে,’দেওয়া যাবে না।’
পরী একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে বলে,’মালি সাহেব আমার রাজ্যে থাকতে হলে আমার কথা মেনে চলতে হবে যে। আপনার একটাই কাজ আমার বাগানে ফুল ফোটানো। কাজ ঠিকমতো করতে পারলেই পুরষ্কার পাবেন।’
-‘তাই নাকি? তা পুরষ্কার টা কি?’
-‘সময় হলেই জানতে পারবেন মালি সাহেব।’
-‘যথা আজ্ঞা রাজকুমারী।’
পরী হাসলো। শায়ের তাকিয়ে রইল পরীর দিকে। কপালে কিঞ্চিত ভাজ ফেলে পরী বলে,’ওভাবে দেখছেন কেন? আপনার সাহস তো কম নয়। এর শাস্তি কি হতে পারে জানেন?’
প্রশ্নের জবাবে শায়ের হাত বাড়ালো পরীর দিকে। গাল গলিয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে কাছে টেনে আনে পরীকে। গভীর ভাবে প্রেয়সীর কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় বলে,’শাস্তি স্বরূপ মৃত্যুদণ্ড হলেও আমি মাথা পেতে নিবো পরীজান।’
ঈষৎ কেঁপে উঠল পরীর সর্বাঙ্গ। কর্ণকুহরে ‘পরীজান’ শব্দটি বার বার বাজতে লাগল। এই ডাকেও যেন মাদকতা আছে। আফিমের মতো নেশালো। আফিমের নেশা কেটে গেলেও এ নেশা যেন কাটবার নয়। নিজের অর্ধাঙ্গিনী কে এইভাবে চেয়ে থাকতে দেখে শায়ের হাসে বলে,’অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। এবার কি শাস্তি দিবেন বলুন।’
আগের ন্যায় পরীকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বলে,’শাস্তিটা কি দেবেন ভাবতে থাকুন। আমি ঘুমাই।’
ঊষার আলো ফুটতেই চারিদিক ঝলমল করে ওঠে। ঘাসে পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু চিকচিক করে উঠলো। সূর্য রশ্মিতে মেঘপুজ্ঞের রূপবত্তা যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। শিশির ভেজা পথ পেরিয়ে মানুষ যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে। শীত আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। দিনের বেলাতে তেমন শীত না লাগলেও রাতে শীত বাড়ে। চাষিরা দলে দলে শীতের ফসল ঘরে তুলছে। তাদের খুশি যেন আর ধরে না। বন্যার পর যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল তা এখনো কিছুটা রয়ে গেছে। এবারের ফসলে বোধহয় তা মিটবে।
সূর্যের আলোতে ঝলমল করছে জমিদার বাড়ির আঙ্গিনা। তখনই সেখানে আগমন ঘটে শেখরের। শায়েরই প্রথমে দেখে। সে কিছুটা ঘাবড়ে গেল শেখর কে দেখে। কেননা তার হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ করা। সারা মুখেও অসংখ্য দাগ স্পষ্ট।
শেখর শায়েরের সাথে কোন কথা না বলে বৈঠকে গিয়ে হাজির হয়। আফতাব আর আখির বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। শেখর কে আস্তে দেখে আফতাব প্রচন্ড রেগে গেলেন। বললেন,’তুমি? এখানে কি চাই? তোমার সাহস তো কম না। এতো কিছু করে আবার এখানে এসেছো!!’
মুহূর্তেই বাড়ির সকলে জেনে গেলো শেখরের আমার কথা। মালা জেসমিন ছুটে গেলেন বৈঠকে। পরী কুসুম আর জুম্মান দরজার আড়ালে কান পেতে রইল। শেখর সবার কাছে কিছু বলার অনুমতি চাইছে। আফতাব শুনতে চাইলেন। তিনিও দেখতে চান ছেলেটা কি বলে? শেখর বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগল,’বিয়ের দিন রওনা হওয়ার আগেই খবর পেলাম আমার ছোট বোন কে কেউ অপহরণ করেছে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। পুলিশ কেও জানাতে পারিনি যদিও আমার বোনের কোন ক্ষতি করে দেয়? আমার পরিবারের সবাইকেই অপহরণকারী একটা জায়গায় যেতে বলে। কিন্ত দূর্ভাগ্য বশত গাড়ি দুর্ঘটনায় ওইদিনই সবাই আহত হই। হঠাৎই কি হয়ে গেল বুঝিনি। পরে পুলিশই আমার বোনকে উদ্ধার করে। এর পেছনে ছিল আমার বন্ধু নাঈম। ওই এই জঘন্য কাজটা করেছে।’
আফতাব জিজ্ঞেস করলো,’সে কেন এরকম করবে?তুমি মিথ্যা বলতেছো।’
-‘আমি সত্যি বলছি। নাঈম কে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। নাঈম নিজের মুখে সব স্বীকার করেছে। বিশ্বাস না হলে আপনি খোঁজ নিতে পারেন। নাঈমের এরকম করার কারণ সে পরীকে পছন্দ করতো।’
-‘আচ্ছা দেখবো। যদি তোমার কথা মিথ্যা হয় তাহলে কঠিন শাস্তি পাবে তুমি।’
শেখর মাথা নেড়ে বলে,’ঠিক আছে। তাহলে কি এবার বিয়েটা হচ্ছে?’
শায়ের নড়েচড়ে দাঁড়াল। তার সামনে তার স্ত্রীকে বিয়ে করার কথা বলছে তা মানতে পারছে না সে। আফতাব বলল,’সেকথা ভুলে যাও। কারণ আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।’
শেখর অবাক হয়ে বলল,’কি বলছেন এসব? পরীর বিয়ে হয়ে গেছে মানে! কার সাথে? আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন পরীকে আমার হাতে তুলে দেবেন!’
-‘শোন তোমার জন্য আমি আমার সম্মান হারাতে বসেছিলাম অনেক কষ্ট করে সব ঠিক করেছি। এখন বিয়ে হয়ে গেছে। তুমি যেতে পারো।’
এবার শেখর রেগে আগুন। সে আফতাবের সাথেই দুএক কথায় ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেললো। শায়ের আর ওখানে থাকলো না। অন্দরে চলে গেল। শেখরের কথাগুলো বিষের মতো লাগছে। শায়ের কে ঘরে যেতে দেখে পরীও পিছু পিছু ঘরে গেল। শায়ের কে চিন্তিত দেখে বলল,’আপনি শুধু শুধু চিন্তিত হচ্ছেন কেন?’
-‘আমি কোন কারণে চিন্তিত নই।’
-‘তাহলে এভাবে চলে এলেন যে?’
-‘ওই ছেলেটা বার বার আপনাকে বিয়ে করবে বলছে। তাছাড়া ওর সাথে আপনার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আমার ওকে ভালো লাগছে না।’
মৃদু হাসলো পরী। শায়ের জ্বলছে,এতঃ খুশিই লাগছে পরীর। ওকে হাসতে দেখে শায়ের রুষ্ঠচিত্তে বলে, ‘আপনি হাসছেন?’
পরী শায়েরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে,’তো কি হয়েছে? আমার তো আর বিয়ে হচ্ছে না তার সাথে।’
-‘আমি ওর মুখে আপনার নাম সহ্য করতে পারছি না।’
-‘আচ্ছা ঠিক আছে আপনার শুনতে হবে না আমিই যাই। গিয়ে শুনে আসি।’
পরীর হাত টেনে ধরে শায়ের। টানের ফলে পরী শায়েরের একদম কাছে চলে আসে। দেখে মনে হচ্ছে তার স্বামীর মনক্ষুণ্য হচ্ছে।
-‘ওই ছেলেটা যতক্ষণ পর্যন্ত না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি এখানেই থাকবেন।’
-‘মালি সাহেব আপনার বউকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না। আপনার কাছ থেকে তো নয়ই।’
পরীকে পালঙ্কে বসিয়ে শায়ের নিজেও ওর পাশে বসলো। পরী জিজ্ঞেস করলো,’আচ্ছা ওই ছেলেটা এমন কেন করলো? বন্ধু হয়ে বন্ধুর এতো বড় ক্ষতি করতে পারলো? যদি মরে যেতো ছেলেটা?’
-‘আপনাকে পছন্দ করে ছেলেটা আসামীদের খাতায় নাম লিখিয়েছে। যেখানে তার ডাক্তার হওয়ার কথা ছিল।’
-‘সত্যি কারের ভালোবাসা কখনোই মানুষ কে খারাপ পথে নিয়ে যায় না। বরং একটা খারাপ মানুষ কে ভালো পথে নিয়ে আসে।’
পরী শায়েরের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে। মুহূর্তটা বেশ লাগছে পরীর কাছে। অনেকগুলো হাত পেরিয়ে পরী এক বিশ্বাসী হাত পেয়েছে। হোক নাসে নিম্নবিত্ত ছেলে। কিন্ত তার ভালোবাসায় তো কোন খাদ নেই। ভালোবাসাটা সত্যি হলে নূন পান্তা খেয়েও
সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। শায়েরের সাথেই অনায়াসে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। কোন নিকষ কালো মেঘের ছায়া যেন কখনোই না আসে।
কিন্ত নাঈম নামের ছেলেটা একটু বেশিই করছে বলে মনে হলো পরীর। ভালোবাসা তো কোন প্রতিযোগিতা নয় যে জোর করে হলেও তাকে পেতে হবে। তাহলে কেন ছেলেটা এমন করে বসলো? এখন এর জন্য কতদিন জেলে থাকতে হবে কে জানে?
#পরীজান
#পর্ব ৩০
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
“আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি তোমায়,দেখতে আমি পাইনি। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে বাহির পানে চোখ মেলেছি,বাহির পানে। আমার হৃদয় পানে চাইনি,আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে আমি পাইনি।”
রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে গাইতে রুমালের সেলাই খুলছে চম্পা। তার প্রিয় ব্যক্তিকে যখন দেওয়ার অধিকার নেই তাহলে এসব রেখেই কি হবে? খুব যত্ন করে সে এগুলো বানিয়েছিলো। সেলাইয়ের প্রতিটি ফোড়ে ছিল নিত্য নতুন অনুভুতি গাঁথা। যা সে শায়ের নামক পুরুষটির জন্য রেখেছিল। কিন্ত সে পুরুষ টি আজ অন্য কারো দখলে। অন্য কারো হাসিতে সে তৃপ্তি পায়। অন্য কাউকে নিয়ে ভাবে। আগে যদি জানতো এই পুরুষটি তার হবে না তাহলে কোন অনুভুতি সে জমিয়ে রাখতো না। দিতো না ওই পাষাণ পুরুষ কে মন।
শায়ের পরীকে বিয়ে না করলেও হেরোনা কিছুতেই শায়েরের কাছে চম্পাকে বিয়ে দিতেন না। দেখতে শুনতে তো মেয়েটা কম নয়। কোমড় ছড়ানো ঘন কালো চুল। ডাগর ডাগর চোখ,কি সুন্দর চেহারা!! এমন সুন্দর মেয়েকে তিনি অর্থহীন এতিম ছেলের কাছে কেন বিয়ে দেবেন? তার মেয়েকে তিনি আরো বড় ঘরে বিয়ে দেবেন। তবে যখন সে শুনেছে শায়ের জমিদারের মেয়ে বিয়ে করে ঘরে তুলেছে তখন থেকেই হিংসায় জ্বলে যাচ্ছেন। রূপবতী পরীকেও তার সহ্য হচ্ছে না। তাই তিনি খুসিনার সাথেও তেমন কথা বলেন না। কেননা খুসিনা খুব বড়াই করেন পরীকে নিয়ে। হেরোনার মেয়ের থেকেও দ্বিগুণ সুন্দরী মেয়েকে ঘরে তুলেছে শায়ের। এজন্য দুজনের মধ্যে চলে কথার প্রতিযোগিতা।
চামেলি মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে বোনের কান্ড দেখতাছে। সে ভালোবাসার অর্থ বোঝে না বলেই বোনের কষ্ট বুঝতে ব্যর্থ। তাই চেয়ে চেয়ে দেখছে শুধু। পরীদের বাড়ি থেকে এসে অনেক গল্পই বলেছে পরীর বাড়ি সম্পর্কে। চম্পা শুধু শুনেছে।
বারান্দার মাটির তৈরি সিঁড়িতে চম্পা আর বারান্দার মেঝেতে চামেলি বসে আছে। পরী সেখানে আসতেই চামেলি খুশি হলো। তবে চম্পা পরীর উপস্থিতি পেয়েও নিজের কাজ করতে লাগলো। পরী কিছুক্ষণ চম্পার দিকে তাকিয়ে থেকে চামেলিকে বলল,’ঘরে একা একা লাগছিল তাই তোমার কাছেই ফুপু পাঠালেন।’
চামেলির বদলে চম্পা বলে,’কেন সেহরান ভাই নাই?’
-‘নাহ,উনি তো বাজারে গেছে। আসতে দেরি হবে।’
পরীর মুখে উনি শব্দটা শুনে মৃদু হাসলো চম্পা। চামেলি উঠে এসে পরীর হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গেল। পরীকে চৌকির উপর বসিয়ে নিজেও বসলো। তারপর বলল,’নতুন ভাবী আপার লগে কথা কইও না। আপার মন ভালা না। দেখো না সেহরান ভাইয়ের লাইগা রুমাল বানাইছে এহন আবার খুলতাছে।’
-‘উনার জন্য রুমাল বানিয়েছে কেন?’
পরী বুঝেও না বোঝার ভান করলো। যাতে চামেলি সব কথা বলে।
-‘আর কইয়ো না নতুন ভাবি। খুসিনা ফুপু মা’রে কত্ত কইলো সেহরান ভাইয়ের লগে আপার বিয়া দিতে কিন্ত মা তোর রাজিই হয়না। আপা সেই আশায় রুমাল বানাইলো। কিন্ত দেহো শেষমেশ তোমারে ভাই বিয়া কইরা আনলো। যদি আপার লগে বিয়া হইতো তাইলে কি তোমার মতো সুন্দর ভাবি পাইতাম!!’
খিলখিল করে হেসে উঠল চামেলি। পরী আগেই বুঝেছিলো চম্পা শায়ের কে পছন্দ করে। কিন্ত পুরোপুরি সব সে জানে না। যদি হেরোনার মত থাকতো তাহলে হয়তো পরীর জায়গায় চম্পা থাকতো। পরী সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখে একটা ছেলের ছবি আর কিছু পোস্টার টানানো। পরী জিজ্ঞেস করে,’এসব কার ছবি?’
চামেলি যেন আকাশ থেকে পড়ল। মাথায় হাত দিয়ে বলল,’আল্লাহ গো!!হেরে চিনো না তুমি? সালমান শাহ,অনেক বড় নায়ক হেয়।’
-‘নায়ক!!’ পরী ঠিক বুঝলো না। ঘরবন্দি থাকাতে এসবের সাথে পরিচিত না সে। তাই বিখ্যাত নায়ককে চিন্তে পারলো না। চামেলি আবার বলল,’হ নতুন ভাবি। আমি আর আপা প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় টুনিগো বাড়িতে যাইয়া টেলিভিশন দেহি। তুমি দেখবা?’
-‘নাহ আমি দেখবো না। রাতের বেলা ফুপু বের হতে বারণ করেছে।’
-‘ওহ তুমি তো নতুন বউ। আহো আমরা তোমাগো ঘরে যাই। দেহি সেহরান ভাই আইছে নাকি?’
চামেলি গান ধরলো,’উওরে ভয়ংকর জঙ্গল দক্ষিণে না যাওয়াই মঙ্গল পূর্ব পশ্চিম দুই দিগন্তে নদী।’
চামেলি নাচতে নাচতে যেতে লাগল আর পরী হেঁটে হেঁটে। মেয়েটার দূরন্তপনা দেখতে ভালোই লাগে পরীর। কিন্ত চম্পার জন্য খারাপ লাগছে।
সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরেছে শায়ের। পরী মাগরিবের নামাজ শেষ করে বসেছিল। একাই ছিল সে,ফুপু পাশের বাড়িতে খোশ গল্প করতে গেছেন। চামেলি চম্পা টেলিভিশন দেখতে গেছে। পরী ঘরে সম্পূর্ণ একা। দরজার ঠকঠক আওয়াজ শুনে পরী দরজা খুলল। শায়ের পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। পরী খেয়াল করেছে আসার পর থেকে শায়ের কেমন যেন আচরণ করছে। পরীর থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোন কারণে শায়ের এরকম করছে পরী তা ভেবে পাচ্ছে না!!
এতে খারাপ লাগছে পরীর। কেননা এই পুরুষটিকে যে তার ভিশন মনে ধরেছে। সেই প্রথম যেদিন সম্পানের নৌকাতে দেখা হয়েছিল সেদিন থেকেই। শায়েরের কথা গুলো শ্রুতিমধুর মনে হতো পরীর কাছে। এত সুন্দর আর গুছিয়ে বোধহয় কেউ কথা বলতে পারে না। ক্ষণে ক্ষণে যখনই পুরুষটির সাথে দেখা হতো তখন সে আবারো পরীকে মুগ্ধ করতো। আর আজ সেই পুরুষই পরীর স্বামী। স্বামীর অবহেলা তো প্রতিটি নারীকেই ব্যথিত করে। সেজন্য পরীর মনটাও ভিশন ব্যথিত। কাল থেকে শায়ের কোনো কথা বলেনি পরীর সাথে। পরী কিছু জিজ্ঞেস করলে জবাব দিয়েছে শুধু। এর বাইরে একটা কথাও সে বলেনি।
পরনের পাঞ্জাবি খুলে একটা গেঞ্জি পরছে শায়ের। পরী তাকিয়ে আছে শায়ের দিকে। নিজেকে পরিপাটি করে পিছন ফিরতেই পরীর চোখে চোখ পড়ল। সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পরী বলে উঠল,’কোথায় যাচ্ছেন??’
শায়ের না তাকিয়েই জবাব দিল,’কাজ আছে।’
-‘আমাকে একা রেখে যাবেন না।’
থমকে দাঁড়াল শায়ের। পিছন ফিরে বলল,’কেন? ফুপু নেই?’
-‘পাশের বাড়িতে গেছে।’
-‘আপনি একা থাকতে ভয় পান??’
পরী কয়েক কদম এগিয়ে এলো। শায়েরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,’সূর্যাস্তের পর হৃদয়ের একাকীত্ব বাড়ে। তখন মানুষ সূক্ষ্ম একটা হৃদয় খোঁজে তার হৃদয়কে বাঁধার জন্য। একাকীত্ব দূর করতে চায়। ভয়ের থেকে মানুষ একাকীত্বে বেশি ভোগে। আপনি কি আমার একাকীত্ব বোঝেননি??’
এবারও পরীর চোখে চোখ রাখলো না শায়ের। তবে চোখ দুটো যেন অনেক কথা বলতে চাইছে। নিজেকে সংযত করে শায়ের চলে এলো। বাইরে গেলো না। পরী বলল,’কিছু বলবেন না??’
এবার শায়ের মুখ খুলল। কন্ঠে গম্ভীরর্যতা এনে বলল,’আমার জন্য একাকীত্ব ভোগ করতে হবে না আপনাকে। যেখানে আমি আপনার যোগ্য নই সেখানে আমার জন্য আপনি নিজেকে দূর্বল করবেন না। যদি কখনও আফসোস হয় তাহলে বলবেন আমি সরে যাবো আপনার পথ থেকে।’
পরীর মনে জানান দিলো যে শায়ের কিছু শুনেছে। তাহলে কি রুপালির বলা কথা শায়ের শুনেছে? তাই হবে নাহলে শায়েরের এতো পরিবর্তন হতো না। বাড়ি থেকে আসার আগে রুপালি পরীকে কিছু কথা বলে। শায়ের ছোট ঘরের ছেলে,পরীর যোগ্য না,বামুন হয়ে চাঁদে হাত দিয়েছে এমনকি অনেক আফসোস করেছিল। কিন্ত পরী তখন একটা জবাব দিয়েছিল,’যদি টাকা পয়সা সুখ দিতো তাহলে তুমি কেন সুখি হলে না আপা?’
রুপালি তারপর আর একটা কথাও বলেনি। শায়ের বোধহয় অর্ধেক কথা শুনেই এসব বলছে।
-‘আমার মনের পথে যে একবার আসে তার ফিরে যাওয়ার পথ নেই। আপনি ফিরবেন কীভাবে??’
শায়ের জবাব দিলো না। পরীর সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বললে নিজেকে সংযত রাখা অসম্ভব। তাই পরীর থেকে সরে গিয়ে পালঙ্কে বসলো। পরী এগোলো না শায়েরের দিকে। সে ভাবলো রুপালির মাথা খারাপ বলে কি শায়ের কেও মাথা খারাপ করতে হবে নাকি? রুপালি সবসময় পরীর সুখ চেয়েছে বিধায় এসব বলেছে। পরী তখন ভেবেছিল সে নিজের সুখকে দেখিয়ে দেবে বোনকে। কিন্ত শায়ের নিজেই তো বুঝতেছে না কিছু। পরী এগিয়ে গেলো জানালার দিকে। হাত বাড়িয়ে খুলে দিলো জানালা। হুড়মুড়িয়ে বেলি ফুলের সুবাস ঘরে এসে ঢুকলো। পরী পেছন ফিরে শায়েরের দিকে তাকালো। শুয়ে আছে শায়ের। অস্থিরচিত্ত নয়নে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে আবারো জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।
এশার নামাজ পড়েই শুয়ে পড়ল পরী। শায়ের আগেই ঘুমিয়ে গেছে। ফুপু বলে গিয়েছেন শায়ের এলে যাতে ওরা খেয়ে শুয়ে পড়ে। তার আসতে দেরি হবে। পরীর খাওয়ার জন্য শায়ের কে ডাকলো না এবং নিজেও খেলো না। অর্ধেক রাত কাটলো এপাশ ওপাশ করে।
সকালে শায়ের আগেই ঘুম থেকে ওঠে। কালকে সে একটা কাজ যোগার করেছে। গ্রামের মাতব্বর শায়ের কে বেশ পছন্দ করেন। তিনিই তার আড়তে কাজ করতে বলেছেন শায়ের কে। আজকে সেখানেই যাবে শায়ের।
পরীও উঠে ফুপুর কাছে গেল। কাজ না পারলেও কিছু কিছু সাহায্য সে করে। রান্নাঘরে ছিলো পরী। তখনই একজন বৃদ্ধ মহিলা এলেন আজহারি করতে করতে। খুসিনা দৌড়ে গেলেন উঠোনে আর পরী বসে রইল। মিহিলাটি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘সেহরান কই?ওর বউ কই?’
শায়ের ও সেখানে গেলো। বাড়ির সকলেও উপস্থিত। মহিলাটি কাঁদছে আর বলছে,’হ্যারে সেহরান কোন অপয়া মাইয়া ঘরে তুললি। যে কিনা আমার পোলাডারে খাইয়া দিলো??’
কথাটা বুঝলো না শায়ের তাই জিজ্ঞেস করে,’কি হয়েছে চাচি??’
-‘কি হয় নাই ক?? তোরে আর তোর বউরে আইনা আমার পোলাডা মইরা গেলো!! অলক্ষী মাইয়া আইতেই আমার পোলা খাইলো। তুই থাকবি কেমনে? তোরেও খাইবো দেহিস।’
শায়েরের মনে পড়ল এই চাচির ছেলের গাড়ি করে পরীকে প্রথম এই বাড়িতে এনেছে। ছেলেটা মারা গেছে!!সে বলে,’আপনার ছেলে মারা গেছে কখন?’
-‘কাইল রাইতে ভালা পোলা ঘুমালো সকালে আর উঠলো না। অহন বউ পোলাপান খাইবো কি? সব তোর বউর লাইগা হইছে। অলক্ষি,এই সংসার টিকবো না সেহরান। টিকবো না।’
শায়ের ধমকে মহিলাটিকে বের করে দিলেন। অতঃপর নিজের ঘরের দিকে গেল। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে পরী। ছলছল নয়নে সে শায়েরের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে সেখানে না দাঁড়িয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল। শায়ের বুঝে গেল এতক্ষণের সব কথাই পরীর কানে গিয়েছে। সে দ্রুত ঘরে গিয়ে পরীর হাত টেনে ধরলো। পরী কাঁদছে দেখে ওকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো সে।
#চলবে,,,,,,
#চলবে,,,