#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
রাত নয়টা’র দিকে,আহান অধরা-কে নিজের বাসার সামনে, নামিয়ে দিলো।অধরা নেমে সোজা চলে যাবে।তখনি আহান পেছন থেকে ডাক দিলো।
–বাসার ভেতরে আসার জন্য একবার’ও তো বললে না।
–অনেক রাত হয়েছে।আপনি বাসায় ফিরে যান।সবাই আপনার জন্য অনেক চিন্তা করবে।
–আর তুমি।
–মানে।
–মানে,তুমি চিন্তা করবে না।
–আপনি আমার কে”?যে,আপনার জন্য চিন্তা করতে যাব।
–সেটা-ই আমি তোমার কে”আসছি।বলে-ই আহান চলে গেলো।
অধরা বাসায় আসতে-ই অধরার নানি প্রশ্ন করলো।
–এতরাত হলো কেনো”।
–একটু কাজে আঁটকে পড়েছিলাম।
–আচ্ছা যা,খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।সকালে চৌধুরী বাড়ির সবাই বেড়াতে আসবে।চৌধুরী সাহেব সকালে ফোন করেছিলো।
–কেনো আসবে।
–এটা আবার কেমন প্রশ্ন অধরা”।
–সরি নানি।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।বলে-ই চলে গেলো অধরা”।
পরের দিন সকাল বেলা অধরা অফিসে যাওয়ার,কিছুক্ষণ পরে-ই চৌধুরী বাড়ির সবাই আসলো।অধরা’র নানি আর মিনারা বেগম,সকাল থেকে রান্নার কাজ শুরু করে দিয়েছে।তিতির গিয়ে ওদের সাথে সাহায্য করছে।অধরা’র নানি অবশ্য নিষেধ করেছিলেন।তিতির শুনে নাই।
সবাই মিলে বেশ গল্প করছে।আড্ডায় মেতে উঠেছে রুবিনা বেগমে’র বাসা।মিনারা বেগম কিছু বলছে না।আগের থেকে অনেক’টা স্বাভাবিক হয়েছে,তিনি।বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকে।খুব কম কথা বলেন।মা’কে কাজে সাহায্য করে।কিন্তু কোনো কথা বলে না।মাঝে মাঝে আকাশ’কে ভালোবাসেন।
অধরা অফিসে কাজ করছে,আদিল এসে অধরা’কে ধন্যবাদ জানালো।
–অধরা কি করছো।বলল রিয়া।
–কাজ করছি।তোমার কাজ নেই।
–কাজ আছে।এখন লাঞ্চের জন্য সময় দিয়েছে।
–ওহ্ আমি খেয়াল করি নাই।
–কালকে কি হয়েছিল জানো,আমার ভাইয়া আর আমি রাত দুটো’র সময় বাইক নিয়ে,ঘুরছিলাম।অনেক মজা হয়েছিল।ফাঁকা রাস্তা কেউ ছিলো না।বলল রিয়া।
–আমার’ও অনেক দিনের ইচ্ছে,রাতে বাইকে করে নিজের প্রিয় মানুষের সাথে ঘুরবো।কিন্তু আফসোস।আমার না আছে প্রিয় মানুষ।আর না আছে বাইক।
–আফসোস করতে হয় না।হতে’ও পারে আল্লাহ তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করে দিলো।
–আচ্ছা যা-ও,আমি কাজ করছি।আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।রিয়া চলে গেলো।
সন্ধ্যাবেলা ছাঁদে পাটি বিছিয়ে,সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসেছে।অধরা ফ্রেশ হয়ে ছাঁদে আসলো।আহান এক কোণে বসে আছে।অধরা আড়চোখে একবার আহানের দিকে তাকালো।আকাশ গিয়ে তিতলির কোলের মধ্যে গিয়ে বসেছে।এই আকাশের একটা ব্যবস্থা করতে হবে।তিতলি কি এমন করেছে।যে,আকাশ তিতলির জন্য পাগল।অধরা’র নানি সবার জন্য নাশতা দিয়ে গেলো।আশরাফুল চৌধুরী অধরা’র নানি-কে বলল মুরি মাখিয়ে দিয়ে যেতে,তাহলে আড্ডা টা দারুণ জমবে।একটু পরে অধরার নানি মুরি মাখিয়ে দিয়ে গেলেন।মিনারা বেগম-কে ডাকলে তিনি আসেন নাই।অধরা গিয়ে তিতিরের পাশে বসলো।
–অধরা মা তোমাকে একটা কথা বলবো।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।
–জ্বী স্যার বলুন।
–আমি তোমার স্যার হই।এখন থেকে ডাক টা পরিবর্তন করতে হবে মা।আমি তোমার বাবা হই না।আমাকে বাবা বলে ডাকবে কেমন।
–জ্বী আমি চেষ্টা করবো।
–আমি তিতলির বিয়ে ঠিক করেছি।পরশু দিন এঙ্গেজমেন্ট করতে চাচ্ছি।তুৃমি তো চৌধুরী বাড়ির বউ।তুৃমি যদি না থাকো,তাহলে সবাইকে কি জবাব দিব,আমি বলতো।
–আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি পরশু দিন যাবনি।আমার জন্য আপনাদের অসন্মান হবে।আমি এমন কোনো কাজ করবো না।চিন্তা করবেন না।
–একটা কথা বলবো।
–বলেন।
–তুমি কাল-ই চলো আমাদের সাথে।অনেক কাজ আছে।তাছাড়া বাড়ির বউ হিসেবে তোমার একটা দায়িত্ব আছে না।
অধরা বুঝতে পারলো।আশরাফুল চৌধুরী তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এতকিছু করছেন।অধরা আর কিছু বলল না।যাবে বলে সম্মতি জানাল।
আশা উঠে এসে অধরার পাশে বসলো।
–কি গো কেমন আছো।তুৃমি খালি আমার ছোট দেবর টাকে একা ফেলে চলে আসো কেনো।বলল আশা।
–উনি আমাকে পছন্দ করেন না।তাছাড়া এই বিয়ের আগে স্যারের সাথে আমার একটা শর্ত হয়েছিল।বলল অধরা।
–এভাবে নিজের স্বামীকে ছেড়ে রাখতে নেই বোন।কখন কিভাবে অন্যের হাতে চলে যায়।সেটা বোঝা মুশকিল।থাকতে মূল্য দাও।হারিয়ে গেলে খুঁজো না আবার।
আশার কথা শুনে অধরা,র বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।এমন কথা বলল কেনো ভাবি।
–ভাবি উনি অন্য কাউকে ভালোবাসে।তাই উনাকে হারানোর ভয় আমার নেই।
–মন থেকে বলছো।আমি জানি অধরা তুৃমি আহান’কে ভালোবাসতে শুরু করেছো।তুৃমি যে,দিন কক্সবাজার থেকে এসে নিজরে বাসায় যাচ্ছিলে।সেদিন আমি তোমার চোখে আহানের জন্য ভালোবাসা আর একবুক ভরা অভিমান দেখতে পেয়েছি।কিন্তু বলতে পারি নাই।তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা এখনো এতটা ভালো হয়ে উঠে নাই।তুমি যদি কিছু মনে করো।তাই আমি তোমাকে কিছু বলি নাই।একটা কথা সব সময় মনে রাখবে,নিজের ভালোবাসা’র মানুষ-কে পেতে হলে,কখনো কখনো স্বার্থপর হতে হয়।সেখানে আহান তোমার নিজের স্বামী।তুমি কেনো তোমার স্বামীর ভাগ অন্য কাউ-কে দিবে।
–ভাবি অধরা যে,শুধু আহান-কে ভালোবাসে এমনটা না।আহান’ও অধরা-কে ভালোবাসে।আমি দেখছি আহানর অধরা আর ওর ছবি বুকে নিয়ে রাতে ঘুমায়।অধরা-কে দেখার জন্য রাত করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।তোমরা এসব দিকে খেয়াল রাখো না।আমি ঠিকি রেখেছি।বলল তিতির।
–আমি’ও অধরা-কে তাই বোঝাচ্ছি।যাকে ভালোবাসো তাকে নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দাও।মানুষের বিয়ে একবার হয়।বারবার হয় না।এভাবে স্বামীর থেকে দূরে দূরে থেকো না।আমার বলার আমি বললাম।এখন কি করবে সেটা তোমার ব্যক্তিগত বিষয় বোন।বলে-ই উঠে চলে গেলো আশা।
–অধরা আমি’ও তোমাকে বলছি।তুমি আহানে’র থেকে আর দূরে দূরে থেকো না।এখন আহানের কাছে থাকাটা তোমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আশা ভাবি একদম ঠিক কথা বলেছে।ভেবে দেখো আমাদের কথা।সবাই গানে গানে মেতে উঠেছে।তিতির গিয়ে ওদের সাথে যোগ দিলো।অধরা অসহায় দৃষ্টিতে ওদের দিয়ে তাকিয়ে আছে।এখন সে,কি করবে।অনেক কষ্ট নিজের মন’কে বুঝিয়ে নিয়েছিলো অধরা।এরা দু’জন সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।
–এত চিন্তা করো না।বেশি চিন্তা করলে,অল্প বয়সে চুল সব পেকে যাবে।সবাই তখন বুড়ি বলবে।বলল আহান।
অধরা কোনো উওর দিলো না।
–আমাকে ইগনোর করছো।
–আপনি কি এমন এসে গেছেন,আপনাকে ইগনোর করতে হবে।
–মনে তো হচ্ছে করছো।অধরা কোলে মাথা রেখে শুইতে শুইতে বলল।
–আরে!
–কি’রে”?
–আপনি এখানে সবার সামনে অসভ্যের মতো আমার কোলে শুইয়ে পড়লেন কেনো।
–আমি কি ভুল করে অন্যের বউয়ের কোলে শুইয়ে পড়েছি।
–না।
–তাহলে এত কথা বলছো কেনো।মাথা ব্যাথা টিপে দাও।
–আপনার লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই।
–না নেই।বিয়ে করেছি সব লজ্জা সরম আমার বউ খেয়ে ফেলছে।
–একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি কিভাবে আপনার লজ্জা সরম খাইলাম।
–তাহলে শিকার করলে,তুমি আমার বউ।
–হ্যাঁ,না মানে ইয়ে।
–না মানে ইয়ে শেষ হলে,চুল গুলো একটু টেনে দাও।
অধরা আর কোনো কথা বলল না।আশা আর তিতির ওদের দেখে হাসছে।একটু পরে আহানের বন্ধুরা এসে হাজির।আহান ওদের দেখে লাফ দিয়ে উঠে বলল।
–আংকেল এখানে গানে অনুষ্ঠান হচ্ছে।আমরা সবাই মিলে গান গাইবো।
বাসর রাতে যে,গান শুনিয়ে ছিলো সবাই।এদের কিছুতে-ই গান গাইতে দেওয়া যাবে না।আহান চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো।
–না তোরা গান গাইবি না।তোরা এখানে আসলি কি করে।
–আমরা তোর বাসায় গিয়েছিলাম।তোকে খুঁজতে,কিন্তু গিয়ে দেখি পুরো বাসা ফাঁক।তোকে ফোন দিয়েছি।তুই ধরিস নাই।পরে তিতলি আপুকে ফোন করলাম।তিতলি আপু আমাদের বলেছে।তারপরে ভাবির নানি বলল আসতে তাই আসলাম।
–তোদের লজ্জা করে না।তোদের বলল আর নির্লজ্জের মতো চলে এলি।
–আমাদের কোনোদিন লজ্জা ছিলো না।আর কোনোদিন হবে না।বলল তাসরিফ।
ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো।সবাই মিলে খুব সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটালো।যা,সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।পরের দিন সকাল বেলা সবাই চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।আহানের বন্ধুরা রাতে-ই চলে গিয়েছিলো।আকাশ আগে গিয়ে গাড়িতে বসছে।আকাশ-কে রেখে যেতে চেয়েছিল অধরা।কিন্তু তিতলির জন্য পারলো না।এই আকাশের কিছু একটা করতে হবে।এখন নিজের বোনকে-ই চিনে না এই ছেলে।অধরা তিন দিনের ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে,আহান বাসায় এসে আবার অফিসে চলে গেলো।
একটু রাত করে-ই বাসায় ফিরলো আহান।হাতে কতগুলো ব্যাগ।আহান ফ্রেশ হতে গেলে,অধরার আগ্রহ হলো ব্যাগ গুলোর মধ্যে কি আছে।অধরা দেখতে যাবে।তখনি আহান বলল।
–এত দেখাদেখি কিছু নেই।ওগুলো তোমার জন্য-ই নিয়ে এসেছি।পড়ে রেডি হয়ে নাও।বাহিরে যাব।
–এত রাতে বাহিরে যাব কেনো।
–শহরের বাহিরে তোমাকে ফেলে দিয়ে আসবো।যেনো আর কখনো ঝগড়া করতে না পারো।এত মুখে মুখে কথা বলো কেনো বেয়াদবের মতো।
আহানের কথা শুনে অধরা মুখ ভার করে ফেলল।তা দেখে আহান বলল।
–তোমার যদি সমস্যা হয়।আমাকে বলতে পারো।আমি তোমাকে সাজিয়ে দিচ্ছি।
–লাগবে না।বলে-ই ওয়াশরুমে চলে গেলো।ব্যাগ গুলো খুলতে-ই অনেক গুলো শাড়ি দেখতে পেলো।তারমধ্যে খয়েরী রঙের শাড়িটা অধরা পড়ে নিলো।বাহিরের এসে হালকা করে সেজে নিলো।ঘুরতে অধরা’র বেশ ভালো লাগে।কোথাও ঘুরে যাবে।শুনলেই অধরা’র মন ভালো যায়।আজকে আর চুল বাঁধলো না অধরা।চুলগুলো ছেড়ে দিলো।অধরা-কে দেখে আহান মনে মনে বলল।মাশাল্লাহ।
–তুমি ঠোঁট লিপস্টিক দিয়েছো।
–না নারিকেল তেল দিয়েছি।কেনো আপনি দিবেন।আবার শখ জেগেছি বুঝি।দেখতে পাচ্ছেন না।
–হ্যাঁ দিব।অধরা লিপস্টিক নিয়ে আহানের দিকে এগিয়ে গেলো।আহানের ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে যাবে।তখনি আহান অধরার হাতে থেকে লিপস্টিক টা নিয়ে ফেলে দিলো।দু’হাতে অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।
–আমি এভাবে লিপস্টিক নিব না।তোমার ঠোঁট থেকে নিব।নাও দিয়ে দাও।
অধরা চোখ বড় বড় করে আহানে দিকে তাকালো।
–অসভ্য লোক একটা।আমি আপনার সাথে কোথায় যাব না।আপনি একাই যান।
–তুমি তো দেখি আচ্ছা স্বার্থপর।আমার ঠোঁটে থেকে তোমাকে লিপস্টিক দিয়ে দিয়েছিলাম।তখন তো ভালো-ই নিয়েছিলে।তাহলে এখন কেনো তুমি দিচ্ছো না ।এটা কিন্তু একদম ঠিক না অধরা।আহানে’র কথা শুনে দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল অধরা।
মানুষটা দিন দিন কি বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।মুখে কিছু আটকায় না।
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
আহান বাইক চালাচ্ছে।অধরা আহানের কাঁধে হাত রেখে ধরে আছে।একটু আগে দু’জন যে,যুদ্ধটা’ই না করেছিল।অবশেষে মিলেমিশে ঘুরতে বের হলো।
–এটা আপনার বাইক।বলল অধরা।
–না,চুরি করে নিয়ে এসেছি।
–আপনাকে ধরে গণধোলাই দিলে না।বাইকের মালিক।
–না,বাইকের মালিক কে বলে ছিলাম আমার বউয়ের,অনেক দিনের ইচ্ছা।আমার বউ রাতে ভূত,পেতনীদের মতো ঘুরে বেড়াবে।আমি যদি তাকে বাইকে করে না ঘুরাই,তাহলে আমার ঘাড় মটকে দিবে।আপনি প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে দিন।তখন,লোকটি আমাকে বলল আমি জানি বাবা,বউ যার আছে।তার মতো অসহায় দুনিয়ায় কেউ নেই।বউ মানে,দজ্জাল,রাক্ষসি,খাড়াপাত্তারডাইনি।আমাকে আমার বউ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিলো।তাই আমি তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি।তুমি আজকের জন্য নিয়ে যা-ও।আমাকে পরে দিয়ে যেও।
–গাড়ি থামান।
–কেনো”?
–গাড়ি থামাতে বলছি না।কিছুটা রেগে বলল।
আহান গাড়ি থামিয়ে দিলো।
–আমাকে কিছু টাকা দিন।
–অধরা সরি।আমি মজা করে বলছি।তুমি রাগ করো না।তুমি জানো আমি লোকটি’কে কি বলছি।আমি বলছি,আমার বউ অনেক ভালো।আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমার অনেক খেয়াল রাখে।আমাকে সারাদিন চোখে হারায়।প্লিজ তুমি বাসায় চলে যেও না।
–আপনার থেকে,টাকা চেয়েছি।এত কাহিনি শুনতে চাই নাই।দিতে না পারলে বলে দিবেন।এত কথা বলার কিছু আছে।বলেই গাছের নিচের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়লো।আহান বাইক সাইডে রেখে দৌড়ে অধরার কাছে গেলো।
–তুমি এখানে এসে বসলে কেনো।
–এখানে থেকে বাস ধরে গ্রাম চলে যাব।আপনার কোনো সমস্যা।
–কেনো যাবে।কি কারনে যাবে।গ্রাম তোমার কে আছে।কার কাছে যাবে।মেয়ে মানুষ একা একা যাওয়ার দরকার নেই।আমি তোমাকে নিয়ে যাব।
–দরদ একবারে উথলে পড়ছে।এমন নাটক করছেন।আমি মনে হয় ওনার মহামূল্যবান কিছু।হারিয়ে গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে।
–এই নাও টাকা আর তোমার মুখটা বন্ধ রাখো।এমন ঝগড়াটে মেয়ে আমি দু’টো দেখি নাই।বলে’ই অধরার বিপরীত পাশে মুখ ঘুরিয়ে বসলো।অধরা টাকা হাতে পেয়ে দৌড়ে ফুলের দোকানে চলে গেলো।তারপরে রজনীগন্ধা আর একগুচ্ছ গোলাপ ফুল নিলো।এগুলো আহান’কে দিবে।ফুলগুলো দেখে খুব ইচ্ছে করছিলো কিনতে।টাকা নেই।সব লজ্জা সরম ফেলে আহানের কাছে টাকা চেয়ে বসলো।আহান সেটা না বুঝে ঝগড়া শুরু করে দিলো।অধরা ফুল গুলো নিয়ে এসে।আহানের পেছনে বসলো।ফুলের হাতটা পেছনে লুকিয় ফেললো।হাত বাড়িয়ে আহান’কে ডাকতে যাবে।তখনি আহান রুহি রুহি বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
–অধরা ঐ দেখো রুহি।তুমি এখানে বসো।আমি রুহির কাছে থেকে একটু আসছি।ওর সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।বলেই দৌড়ে চলে গেলো।অধরা আহানের যাওয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।না চাইতে-ও চোখের কোনে পানি এসে জমা হলো।চোখের পানিটুকু মুছে নিয়ে।ফুলগুলো ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।অধরা বসে আহানের জন্য অপেক্ষা করছে।
–আহান তুমি এখানে,তুমি আমাকে ডাকলে জান।কতদিন পরে আমার নাম ধরে ডাকলে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে।তোমার মুখে নিজের নাম শুনে।
–আল্লাহ এই কালনাগিনী টা কোথায় থেকে উঠে আসলো।আমি তো অধরা’কে রাগানোর জন্য এমনি বলছি।রুহি সত্যি সত্যি কোথায় থেকে চলে আসলো।আহান রুহিকে দেখে-ও না দেখার ভান করে একটা দোকানে চলে গেলো।রুহি যখনি আহানের হাত ধরতে যাবে।তখনি অভি এসে রুহির হাত ধরে বললো।
–বেবি আমি এখানে,তুমি কার হাত ধরতে যাচ্ছিলে।বলল অভি।
–নিকুচি করেছে তোর বেবি।হাত ছাড় শয়তান পোলা।আমার জান আমাকে মাফ করে দিয়েছে।কতদিন পরে আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে।একদম কোনো ঝামেলা পাকাবি না।বলল রুহি।
–কি বলছো এসব রুহি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি আমাকে রেখে এখন অন্য ছেলের কাছে যাবে।
–আমি আহানের জন্য সব করতে পারি।বলেই আহানের কাছে ছুটে গেলো।অভিও রুহির পেছনে পেছনে গেলো।
–আহান।
–কে আপনি।
–আহান আমি রুহি।তুমি আমাকে চিনো না।তুমি আমার সাথে মজা করছো আহান।
–সরি খালামনি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।এক্সকিউজ মি বলে-ই আহান চলে গেলো।
–খালামনি!কে ওর খালামনি”? আমাকে খালামনি বলে চলে গেলো।এতটাই পরিবর্তন করে ফেলছে।আমাকে রীতিমতো ইগনোর করছে।এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি।
আহান রুহিকে খালামনি ডাকায়।অভি হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।একবার দেওয়ালের সাথে টলে পড়ছে।তো আবার বেঞ্চে বসে পড়ছে।
আহান দৌড়ে অধরার কাছে আসলো।
–তুমি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলে মনে হয়।কি বলতে চেয়েছিলে বলো।অধরা মাথা নিচু করে বলল কিছু না।আহান অধরা কোলে মাথা রেখে কান্না করতে করতে বলল।
–জানো অধরা আমি না রুহি কে অনেক ভালোবাসি।রুহি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।বাবার জন্য তোমাকে আমি বিয়ে করছি।রুহিকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।আমি যদি তোমাকে ছেড়ে দেই।তুমি কি আমার ওপরে রাগ করবে।
অধরার কাছে থেকে কোনো উওর আসলো না।এতক্ষণ আঁটকে রাখা কান্না গুলো ধরে রাখতে পারলো না।নীরবে কান্না করে যাচ্ছে অধরা।আহান যা বলছে সব সত্যি।আহানের কোনো দোষ নেই।সে,আমাকে প্রথম থেকে-ই বলে আসছে।সে,তার গার্লফ্রেন্ডকে ভালোবাসে।আমার এই সহজ ব্যাপারটা মেনে নিতে এতটা কষ্ট হচ্ছে কেনো।গালে গরম পানি স্পর্শ পেতে-ই সামনের দিকে তাকালো আহান।অধরার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল আহান।অধরা কান্না করছে।চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।আহানে’র বুকের ভেতরে ঝড় উঠে গেলো।ব্যস্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে।তখনি অধরা বলল।
–আমি বাসায় যাব।প্লিজ আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন।
–অধরা আমার একটা কথা শোনো।
–মামা যাবেন।
–কোথায় যাবেন আপা।
তারপরে অধরা আহানদের বাসার ঠিকানা বলল।রিক্সা আলা যেতে রাজি হলো।আহানের দেওয়া টাকা।ফুল কিনে কিছুটা বেঁচে ছিলো।সেটা নিয়েই রিক্সায় উঠে পড়লো।আহান অধরার হাত ধরলে অধরা আস্তে করে আহানের হাত সরিয়ে দিলো।তারপরে রিক্সা আলা অধরাকে চৌধুরী বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেলো।অধরা বাসায় এসে কোনো রকম ওপরে চলে গেলো।তিতির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।অধরা তো আহানের সাথে গেলো।একা ফিরে এলো কেনো।তিতলির মুখে হাঁসির রেখা ফুটে উঠেছে।তিতির তিতলির হাসির কারনটা বুঝতে পারলো না।একটু পরে ঝড়ের গতিতে আহান ভেতর প্রবেশ করলো।আহান’কে অস্থির দেখে,তিতির,তিতিল দুজনেই এগিয়ে আসলো।
–কি হয়েছে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো।কোনো কিছু চুরি করে পালিয়েছিস নাকি।বলল তিতলি।
–তুমি একদম কথা বলবে না আপু।তোমার জন্য আজ আমার সংসার ভাঙতে যাচ্ছে।যা,কিছু শিখিয়ে দিয়েছিলে।কিছু তো হলোই না।উল্টো অধরা আমাকে ভুল বুঝল।
–কি হয়ে আহান।কি করছিস।
–আচ্ছা আপু ধরো তোমাকে কেউ ভালোবাসে।কিন্তু তুমি তাকে বললে,তাকে ছেড়ে দিবে।তুমি তাকে ভালোবাসো না।তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো।তাহলে তার মনের অবস্থা কেমন হবে।
–শোন নিজের প্রিয় মানুষের পাশে কারো ছায়াও সয্য করা যায় না।সেখানে,ছেড়ে দাওয়া।তার-ই সামনে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা বলা মানে বুঝিস তুই।কলিজাতে আঘাত করা আর এই সব কথা বলা এক।আর সে যদি স্ত্রী হয়।তাহলে কোনো কথাই নেই।স্ত্রীকে কখনো ছেড়ে দাওয়ার কথা বলতে হয় না।সবথেকে বেশি কষ্ট পায় এই কোথায়।তাছাড়া আল্লাহও নারাজ হন স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা বললে।
–তারমানে ছেড়ে দিব।অন্য কাউকে ভালোবাসি বললে খুশি হয় না।খুশি হয়ে মনের কথাও বলে না।তাই না আপু।
–তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।তুই তোর প্রিয় মানুষকে দুইটা থাপ্পড় দিবি।সে,রেগে তোর সাথে ঝগড়া করবে।কিন্তু যখনি এইসব কথা বলবি।দেখবি মানুষটা একদম চুপ হয়ে গেছে।বুঝে নিবি আঘাত টা একটু বেশিই লেগেছে।
আহান অসহায় দৃষ্টিতে তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে।তিতলি কে দেখলেই রাগ উঠে যাচ্ছে।তার জন্যই আজ অধরাকে কষ্ট দিয়ে ফেললো।আহান উপরে যাবে।তখনি আশরাফুল চৌধুরী ডাকলেন।তিতলির এঙ্গেজমেন্ট নিয়ে আলোচনা করছিলেন।আহান তিতলির ভাই।আহানেও কিছু দায়িত্ব আছে।আহান ওপরে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে।বাবার জন্য যেতেও পারছে না।এতক্ষণ হয়ে গেলো অধরা’ও নিচে নামছে না।কাজ করতে করতে একটা বেজে খেলো।সবাই জাগা আজ।শুধু তিনটা বাচ্চা খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।রাতে এখনো খাওয়া দাওয়া হয় নাই।সবাই খাবার টেবিলে বেসেছে।
–তিতির অধরা কোথায়।মেয়েটাকে দেখছি না।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।
–বাবা অধরার নাকি খারাপ লাগছে।অধরা ঘুমিয়ে গেছে।
–না খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।তুমি যা-ও অধরাকে ডেকে নিয়ে আসো।না খেয়ে কোনো ঘুম নেই।রাতে না খেয়ে কখনো ঘুমোতে হয় না।ওর শরীর খারাপ করবে।যা-ও ডেকে নিয়ে আসো।
আহান তড়িঘড়ি করে বলল।বাবা আমি ডেকে নিয়ে আসছি।
–একদিন না খেলে কিছু হবে না বাবা।থাক মেয়েটা যখন ঘুমিয়েছে।এত ডাকাডাকি করো না।বলল তিতলি।
–তুমি তাহলে রুমে চলে যাও।একদিন না খেলে কিছু হবে না।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।
–বাবা তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে।
–আহান তোমার যাওয়ার দরকার নেই।তিতির যা-ও অধরাকে ডেকে নিয়ে আসো।
তিতির আর কোনো কথা বাড়ালো না।ওপরে গিয়ে অধরাকে ডেকে নিয়ে আসলো।চোখ ডলতে ডলতে এসে চেয়ারে বসলো।সারা রাজ্যের ঘুম অধরার চোখে।কেউ কোনো কথা বলতে না দেখে।অধরা আবার ড্রাইনিং টেবিলে মাথা রেখে শুইয়ে পড়ল।
–অধরা কি হচ্ছে টা কি।এখানে বড়রা সবাই আছে।তুমি এমন করছো কেনো।যা-ও চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।বলল তিতির।
তিতির নিজে-ই অধরাকে নিয়ে গেলো ফ্রেশ হয়ে এসে কিছুটা ঘুমের রেশ কেটেছে।কিন্তু পুরোপুরি কাটে নাই।সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে চলে গেলো।অধরা রুমে এসে শুইয়ে পড়ল।আহান রুমে এসে ভাবছে।কিভাবে আহানের রাগ ভাঙবে।অধরার পাশে শুইয়ে পড়ল আহান।অধরা কাত হয়ে শুয়ে আছে।আহান এক হাত অধরার হাতের ওপরে রাখলে অধরা সরিয়ে দিলো।তিন বার অধরার হাতে হাত রাখলে অধরা তিন বার-ই হাত সরিয়ে দিলো।আহান উপায় না পেয়ে অধরা কে নিজের নিয়ে এসে,শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
–সমস্যা কি আপনার।এমন করছেন কেনো।
–কি করলাম।
–কোথায় কোথায় এত গায়ে হাত দেন কেনো।
–এটা তুমি ছিলে,আমি মনে করেছি।আমার কোলবালিশ সরি।
অধরা তার পাশে থেকে কোলবালিশ টা আহানের দিকে ছুড়ে দিলো।
–বাবা রে কি রাগ।আমার থেকে-ও বেশি রাগ তোমার।এই মেয়ে নিয়ে সারাজীবন সংসার করতে হবে।
–এতটা কষ্ট করতে হবে না।কয়দিন পরে-ই ডিভোর্স দিয়ে দিব।
আহানের ভেতরে ধক করে উঠলো।অধরা এটা কি বলল।ঠিকি তো বলেছে।আমি তো ওর মাথা টা খারাপ করে দিয়েছি।তাহলে আমার কেনো এত খারাপ লাগছে।তাহলে অধরার কি হয়েছে।একটা কথায় সয্য করতে পারছি না।এতগুলো কথা অধরা কিভাবে সয্য করলো।আহান কিছু বলতে যাবে।আবারো অধরার ফোনে মেসেজ আসলো।আহানের মাথা গেলো খারাপ হ’য়ে।প্রতিদিন কে তাকে মেসেজ দেয়।আজ সে দেখেই ছাড়বে।অধরা তাকে ফোন দেখতে না দিলে,আজ অধরার ফোন ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।এর মধ্যে দুইবার ফোনও আসলো।অধরা ধরলো না।আহান হাত বাড়িয়ে অধরার ফোন নিতে গেলো।অবাক করা বিষয় অধরা কিছু বলল না।চুপচাপ শুইয়ে আছে।আহান ফোনটা হাতে নিয়ে-ই দেখো মা লিখা।আহান মেসেজ এর ইনবক্সে ঢুকলো।তিনটা মেসেজ দেখলো।
–অধরা।
–অধরা আমার মেসেজর রিপ্লে দিস না কেনো।
–অধরা তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।সময় পেলে প্লিজ আমার সাথে কথা বলে নিস।
তিনটা মেসেজ দেখে আহানের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।অধরার মা এত রাতে অধরাকে মেসেজ দেয়।এই ছোট ব্যাপার টা তাকে বলে দিলে-ই পারতো।তাহলে এত অশান্তি হতো না।
–অধরা তোমার আম্মু মেসেজ দিয়েছে।তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।তুমি ফোন দিয়ে কথা বলো।
কিন্তু অধরার কাছে থেকে কোনো উওর আসলো না।অধরা ঘুমিয়ে গেছে।আহান অধরাকে নিজের কাছে এনে।বুকের মধ্যে শুইয়ে নিলো।
চলবে…..
চলবে…..