তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -২৩+২৪

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–তুই সত্যি কথা বলছিস তো আকাশ।আমাদের বাবা সুস্থ হয়ে গিয়েছিল।

–আমি তোর সাথে কখনো মিথ্যা কথা বলছি আপাই।তুই তো আমাকে শিখিয়েছিস,মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ।

–তাহলে আমাকে এতদিন বলিস নাই কেনো।

–তিতলি আপু আমাকে ভয় দেখিয়েছিলো।আমাকে বলছে আমি যদি সত্যি কথা বলে দেই।তাহলে তোকে কেউ মেরে ফেলবে।তাই আমি ভয়ে বলতে পারি নাই।

–কিন্তু মা আমাকে কিছু বলল না কেনো।আর তিতলি আপু-ই সমস্যা কি।সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে রে ভাই।মাথা কাজ করছে না আমার।

–আপাই জানিস বাবা সুস্থ হয়ে যাওয়াতে মা অনেক খুশি হয়েছিলো।কোটি টাকা দিয়ে’ও মায়ের সেই খুশি তুই কিনতে পারতি না আপাই।বাবা সুস্থ হবার পরে তোকে একটা বার দেখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল।যেদিন তুই গ্রামে আসতে চেয়েছিলি না।সেদিন মা তোকে এতগুলো ফোন দেই নাই।আব্বু তোকে কল দিয়েছিল।তোর সাথে নাকি কি জরুরি কথা ছিলো আব্বুর।কিন্তু তুই ধরিস নাই।রাতে ঘুমাইলাম সকালে উঠে শুনি আব্বু নেই।আল্লাহর কাছে চলে গেছে।

–বাবা আমাকে দেখতে চেয়েছিল।আমি কতটা অভাগা মেয়ে নিজের বাবার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না।কোন হসপিটালে বাবার অপারেশন হয়েছিল আকাশ।কোন ডক্টর অপারেশন করেছিলো।

–হসপিটালের নাম জানি আপাই। কিন্তু ডক্টরের নাম জানি না।আব্বু সুস্থ হবার পর থেকে-ই মা,এমন অস্বাভাবি আচরণ করতে লাগছিলো।

–তার মানে মা বাবা মারা যাওয়ার পরে থেকে না।আগে থেকে-ই পাগলামি করছিলো তাই না রে আকাশ।

–হ্যাঁ রে আপাই।

–আচ্ছা তুই আমাকে এটা বল।বাগানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলি কেনো।তোর এত সাহস হলো কিভাবে।কলিজা খুব বড় হয়েছে তোর তাই না রে।বড় কলিজা কিভাবে ছোট করতে হয়।সেটা তোর আপাই ভালো করে-ই জানে।

আকাশ অধরার কথায় ভীতু দৃষ্টিতে তাকালো।

–আমি ইচ্ছে করে করি নাই আপাই।আমি তিতলি আপুকে মানা করছিলাম।কিন্তু তিতলি আপু আমার কথা শোনে নাই।আমাকে বলছে এটা ভালো জিনিস খাও।তোমার ভালো লাগবে।একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।শুধু এগুলো না আমাকে আরো অনেক কিছু শিখিয়েছে।ওগুলো আমার রুমে আছে দেখে নিস।

–আকাশ তুই আর ছোট বাচ্চা নেই।ক্লাস সিক্স এ উঠেছিস।তোদের বইয়ে কিশোর অপরাধ সম্পর্কে সুন্দর করে লেখা আছে।এখন বড় হচ্ছিস।যতদিন যাবে ততই জ্ঞান অর্জন করবি।আস্তে আস্তে নিজের ভালো-খারাপ দিকগুলো বুঝতে পারবি।এখন অনন্ত নিজের ভালোটা বুঝতে শিখ।না হলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।আমি যেমন ভালোবাসতে জানি।ঠিক তেমনি শাসন করতে’ও জানি।তোকে এত কষ্ট করে পড়াশোনা করাচ্ছি।নেশাখোর,চোর,ডাকাত,টোকাই এসব বানানোর জন্য।তুমি যদি চোর-ডাকাত হতে চাস আমার সমস্যা নেই।তোর পড়াশোনা এখানেই বন্ধ করিয়ে দিচ্ছি।সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় টোকাই গিরি করবি।আর রাতে চুরি করতে বাড়াবি।মাঝেমধ্যে জনগণের হাতে মার খাবি।খুব সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ হবে তোর তাই না রে ভাই।

–আপাই তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি।আমি চোর হবো না আপাই।আমি পুলিশ হবো আর চোরদের ধরে পিটাবো।

–তাহলে এতটুকু বয়সে নিজের জীবন কেনো শেষ করছিস।তোকে যদি কেউ আগুনে ঝাপ দিতে বলে।তুই তার কথা শুনে আগুনে ঝাপ দিবি।

–না আপাই।

–তাহলে তিতলি আপু কথা মতো এসব বাজে জিনিস খেলি কেনো।

–আপাই আমাকে মাফ করে দে।আমি জীবনে এমন কাজ কোনোদিন করবো না।আমি তোকে কথা দিলাম।তুই আমাকে কতো কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছিস।আর আমি দুলাভাইয়ের সামনে তোর অসন্মান করে দিলাম।

–তুই যদি ভালো করে পরে পড়াশোনা করিস।খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকিস।তাহলে তোকে আমি মাফ করে দিব।

–আপাই তুই আমার সাথে আয়।আমার রুমে অনেক গুলো জিনিস আছে।সেগুলো খেলে-ই আমার নেশা ধরে যায়।তখন আমি তিতলি আপুর জন্য পাগল হয়ে যাই।আপুই তো আমাকে এসব দেয়।অধরা আকাশের সাথে আকাশের রুমে গেলো।আকাশ যেগুলো বের করে দিলো।তা দেখে অধরার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

–এগুলো তো সব নেশার জিনিস।তিতলি আপু কিভাবে পারলো একটা বাচ্চা ছেলেকে এসব দিতে।বিবেকে বাঁধা দিলো না।আজ যদি আকাশ তিতলি আপুর নিজের ভাই হতো।রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে অধরা’র।অধরা আকাশে’র থেকে সবকিছু কেঁড়ে নিলো।তারপরে বলল।

–এসব জিনিস হারাম।মরে গেলেও কোনোদিন তোর হাতে না দেখি।যদি দেখি তোকে-ই মেরে ফেলবো আমি।তোর এখন দুধ আর হরলিক্স খাওয়ার বয়স।তুই এসব খাবি।তা-না করে এসব করিস।তা-ও আবার অন্য মানুষের কথায়।আজ তুই বেঁচে গেছিস।এর পরে আমার হাতে যদি পড়িস।তাহলে আর বাঁচতে পারবি না।

–কিন্তু আপাই আমার যখন খেতে ইচ্ছে করে,তখন আমি কি করবো।

–আমাকে বলবি।আমি তোকে দুধ গরম করে দিয়ে যাব।তুই প্রতিদিন দুধ খাবি।তাহলে তোর মাথার ব্রেইন আরো ভালো হবে।

–আচ্ছা আপাই তুই আমাকে যেমনটা বলবি।আমি ঠিক তেমনটাই করবো।কিন্তু আমাকে মারিস না।

–অনেক রাত হয়েছে।তুই ঘুমিয়ে পড়।আজকে’র মারের কথা মনে করিস।যদি কখনো ভুল করতে যাস।তাহলে আর ভয়ে করতে পারবি না।বলে-ই অধরা চলে গেলো।

পরের দিন সকাল বেলা অধরা উঠে সোজা গ্রামে চলে গেলো।আগে সুমন কাকার দোকানে গেলো।

–কাকা মোতালেব সাহেব কি বাসায় আছে।

–অধরা তুই এত সকালে।

–আমি ভূত নাকি।এতটা ভয় পাচ্ছো কেনো কাকা।

–না মানে ইয়ে।

–কি হয়েছে বলবে তো।একটু দাঁড়া’ও একটা ফোন আসছে।

অধরা সরতে-ই সুমন চাচা কাকে জানি ফোন করলো।

–অধরা মা তো চলে আসছে।এখন যদি মোতালেব সাহেব কে না পায়।তখন কি উত্তর দিব।

–তুমি অধরা’কে কোনোরকমে আটকা’ও অধরা কোনোভাবে যেনো,আমার আগে হসপিটালে পৌঁছাতে না পারে।

–কিন্তু আমি কি ভাবে আটকাবো।অধরা কি আমার কথা শুনবে।

–সেটা আমার দেখার বিষয় না।নিজের ছেলে মেয়েকে বাঁচাতে চাইলে।আমি যা যা বলবো।তাই করতে হবে।

–অধরা মা অনেক ভালো।আমার অধরা মাকে ঠকাতে ইচ্ছে করছে না।প্লিজ তুমি আমার ছেলে-মেয়েকে দিয়ে দাও।

–লাশ প্যাকিং করে পাঠাবো নাকি এমনি।

–না এমন করো না।আমি অধরা মাকে আটকাবো।

–এই তো সোজা পথে আসলে।শুধু শুধু কেনো আমার সাথে লাগতে আসো।আচ্ছা রাখছি।আমি এখনি আসছি।বলে-ই কলটি কেটে দিলো।

–আমার সাথে গেম খেলছো কাকা।বাঁচতে পারবে তো।

–অধরা আমার কথা টা শোন।

–হসপিটালে যাচ্ছি।তোমার বসের আগে যাব।পারলে ঠেকিয়ে দেখা’ও।ভুলে’ও পেছনে থেকে আঘাত করার চেষ্টা করো না।এমন ভাবে কাটবো না।কুত্তা’ও তোমার আশেপাশে যাবে না।বলে-ই চলে গেলো।অধরা হসপিটালের রিসিপশনের মেয়েটির কাছে আসলো।

–মনির ইসলাম নামে,একজন পেশেন্ট এক মাস আগে আপনাদের হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল।তার অপারেশন’ও এই হসপিটালে হয়েছিল।তার অপারেশন’টা কোন ডক্টর করেছিলো কাইন্ডলি আমাকে একটু দেখে জানাবেন প্লিজ।

–দেখুন ম্যাডাম।আমরা একজন অচেনা মানুষকে আমাদের পেশেন্ট সব তথ্য দিতে পারি না।

–পেশেন্ট আমার বাবা হয়।এই দেখুন আমার আইডি কার্ড।এখানে আমার বাবার নাম কি দেওয়া।আপনি চাইলে আশেপাশে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন।আমি এই গ্রামের-ই মেয়ে।

–আচ্ছা ম্যাডাম আমি দেখে আপনাকে জানাচ্ছি।একটু পরে মেয়েটি জানাল।জ্বী ম্যাডাম এই নামে একজনের অপারেশন হয়েছিল।মনির সাহেবর অপারেশন ডক্টর শারমিন করেছিলো।ডক্টরের নাম শুনে-ই অধরা চমকে উঠলো।

–কি বললেন,আপনি সত্যি কথা বলছেন।ডক্টর শারমিন আমার বাবার অপারেশন করেছিলো।অপারেশন থ্রিয়েটারে কে কে ছিলো।আরো ডক্টর নার্স তো ছিলো।তারা কোথায়।

–সরি ম্যাডাম আমি বলতে পারবো না।আপনি মালিকের সাথে কথা বলুন।অধরা রিসিপশনের দেওয়া নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে লাথি মারল।নিজের রাগ কিছুতে-ই কন্ট্রোল করতে পারছে না।কোনোরকমে হসপিটালের মালিকের কাছে গেলো।সিসি ক্যামেরা দেখে বোঝা গেলো।অপারেশনের পরে যে,দু’টো নার্স শারমিনের সাথে ছিলো।সেদিনের পরে তাদের আর হসপিটালে দেখা যায় নাই।অধরার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।কিছুতে-ই হিসাব মেলাতে পারছে না।

অধরা চলে যেতে-ই একজন দৌড়ে আসলো হসপিটালে।

–আচ্ছা একটা মেয়ে আসছিলো,তার বাবার খোঁজ করতে।আপনারা কি ডক্টরের নাম বলে দিয়েছেন।

–জ্বীর পেশেন্টের মেয়ে ছিলো।না বলার কোনো কারন দেখছি না।

তখনি ব্যক্তিটি রিসিপশনের মেয়েটির গলা চেপে ধরলো।আশেপাশের সবাই এগিয়ে আসতে লাগলে,ব্যক্তিটি পালিয়ে যায়।

অধরা গাড়িতে উঠে বসলো।সারাদিন পেরিয়ে সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো।অধরা বাসায় আসতেই আহান রেগে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।

–সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি।

–সব কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে।আমার যেখানে ইচ্ছে খুশি আমি যাব।কোনো কৈফিয়ত দিতে পারবো না।

–ভদ্র ভাবে কথা বলো।আমি তোমার স্বামী।ভালোবাসতে না পারো সন্মান দিয়ে তো কথা বলতে পারো।নাকি আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না।তুমি আমাকে সব কিছু বলতে বাধ্য।

–কিসের স্বামী।দু’দিন পরে তো দিব ডিভোর্স দিয়ে।তাহলে কেনো এত কৈফিয়ত দিতে হবে।আমাকে কোনো প্রশ্ন করার অধিকার আপনার নেই।সামনে থেকে সরুন আমি আমার মন মতো চলবো।যা,ইচ্ছে খুশি করবো।পারলে আমাকে আটকিয়ে দেখান।কথাগুলো গুলো বলার সাথে সাথে আহান অধরার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

–বেয়াদব মেয়ে।আমি তোমার বড় হই।বড় হিসেবে আমাকে সন্মান করতে পারো।তুমি নিজের বাসায় নেই।যে,নিজের মন মতো চলবে।তোমার মনে রাখতে হবে।তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।এখন তোমাকে কোনো কিছু করতে হলে আমাদের জানিয়ে করতে হবে।তোমার সাথে আমাদের পরিবারের মানসন্মান জড়িয়ে আছে।তুমি যদি নষ্টামি করো তাহলে’ও আমরা কিছু বলতে পারবো না।নিজের ভাইকে ভালো-ই শিক্ষা দাও।এদিকে তোমার নিজের-ই শিক্ষার অভাব।তুৃমি একটা বেয়াদব মেয়ে।তুমি আর আমাদের বাসায় থাকতে পারবে না।কৈফিয়ত যখন দিতে পারবে না।আমাদের বাসা থেকে বেড়িয়ে যা-ও।বেড়িয়ে গিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো চলো।দরজা খোলা আছে,যেতে পারো।

অধরার এবার হুঁশ ফিরলো।আসলেই সেই সকালে কাউকে কিছু না বলে বেড়িয়েছে।সবাই চিন্তা করেছে।বাড়ির বউ এভাবে না বলে যখন-তখন বেড়িয়ে যায়।সবাই জানলে তাদরে কটুকথা শোনাবে।আহান তো আমার স্বামী উনার তো সবকিছু জানার অধিকার আছে।তাহলে আমি এমন করছি কেনো।দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছি কেনো।অধরা কিছু বলতে যাবে।তার আগে-ই আহান অধরার হাত ধরে দরজার কাছে নিয়ে গেলো।হাত ছেড়ে দিয়ে বলল।

–এখন থেকে যেখানে খুশি যাও।কেউ প্রশ্ন করবে না।শুধু চৌধুরী বাড়িতে আসবে না।চৌধুরী বাড়ির দরজা তোমার জন্য বন্ধ।তুমি যখন কৈফিয়ত দিতে পারবে না।তোমাকে যেনো চৌধুরী বাড়ির আশেপাশে না দেখি।চিৎকার করে বলল আহান।আহানের চিৎকার শুনে সবাই রুম থেকে বাহিরে আসলো।অধরার সাথে চিৎকার করা দেখে আশরাফুল চৌধুরী এগিয়ে আসলেন।

–কি হয়েছে বাবা।তুমি চিৎকার করছো কেনো।অধরা কি করেছে।

–এমনি এমনি করছি।ওকে জিগাস্যা করো।সারাদিন কোথায় ছিলো।সাতসকাল বেলা বেড়িয়েছে।এখন বাজে সন্ধ্যা ছয়টা।উনি উনার ইচ্ছে মতো চলবে।কাউকে কোনো কৈফিয়ত দিতে পারবে না।উনি উনার বাসায় গিয়ে উনার মন মতো চলাফেরা করুক।আমাদের বাসায় থেকে এসব করতে পারবে না।আশরাফুল চৌধুরী দেখলেন তার ছেলে ভয়ংকর ভাবে রেগে আছেন।চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে।

–আহান শান্ত হও।রাগ করো না বাবা।ওকে ভেতরে আসতে দাও।আমরা বসে শুনছি ও কোথায় গিয়েছিল।

–ও আমাকে যখন কৈফিয়ত দিতে পারবে না।যাকে দিবে সেখানে গিয়ে থাকবে।একদম আশকারা দিবে না বাবা।তোমার আশকারা পেয়ে পেয়ে আজ ওর এত সাহস হয়ে গেছে।ওর কত সাহস হয়েছে আমি’ও দেখে নিব।বাবা ওকে বলে দাও।আহান চৌধুরী খুব সহজে রাগে না।একবার যদি রেগে যায়।তাহলে পরিণাম খুব ভয়াবহ হয়।

অধরা কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।

–বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর কখনো আপনাদের না বলে যাব না।এখন থেকে কোথা’ও গেলে আপনাদের বলে যাব।

আহান কিছু বলতে যাবে।তখনি আশরাফুল চৌধুরী তাকে থামিয়ে দিলো।আহান রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো।

–এমন কাজ করো না আর।আহান তোমার স্বামী হয়।সবকিছু জানার অধিকার তার আছে।সে,তোমার থেকে বয়সে বড়।তুমি তাকে সন্মান দিয়ে কথা বলবে।তোমার ভালোমন্দ সবকিছু বলবে।আহানের কথা মতো চলবে।দেখবে এই অশান্তি গুলো আর হবে না।আমি’ও আহানকে বলবো যেনো তোমার সাথে রাগারাগি না করে।ভালোভাবে বুঝিয়ে বলে।আজ তুমি যেটা করছো সেটা নিসন্দেহে অন্যায়।আমি তোমাকে খুব ভরসা করে এ বাড়িতে নিয়ে আসছি।আমার ভরসার মূল্য দিও মা।

–এই মেয়ে আমার ছেলের জীবন টা শেষ করার জন্য আসছে।আমি আগেই জানতাম মেয়েটা ভালো না।আমার ছেলে একা ছিল তাও ভালো ছিলো।যেদিন থেকে এসেছে।আমার ছেলের সব শান্তি কেঁড়ে নিয়েছে।বললেন আফরোজা চৌধুরী।

–খুব বেশি কথা হয়েছে তোমার।আমার মুখের ওপরে কথা বলো।স্বামীর কথায় মাথা নিচু করে ফেললেন আফরোজ চৌধুরী।

–গালে কি হয়েছে তোমার।লাল হয়ে আছে কেনো।

–কিছু হয় নাই বাবা।অধরার কথা শুনে তিতির হাসলো।বড়রা কথা বলছে দেখে সে,চুপ করে আছে।

–আচ্ছা যাও নিজর রুমে যাও।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।সারাদিন কিছু খেয়েছো।

–না।

–আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো।বলে-ই নিজের রুমের দিকে গেলেন।অধরা রুমে আসতেই অধরা’কে দেখে আহান বেলকনিতে চলে গেলো।বিছানায় বসে মাথায় হাত দিয়ে,রাগ কমানোর চেষ্টা করছিলো আহান।অধরাকে দেখে রাগের মাত্রা দিগুন বেড়ে গেলো।অধরা অসহায় দৃষ্টিতে আহানের যাওয়ার দিকে তাকালো।তারপরে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে,ভয়ে ভয়ে বেলকনিতে গেলো।আহান দু’হাতে বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।অধরা গিয়ে আহানকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে-ই ধরেছে।

–সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে মাফ করে দেন।আমি আর কখনো এমন করবো না।শেষ বারের মতো আমাকে একটা সুযোগ দেন।এমন ভুল আর কোনোদিন করবো না।যেখানে যাব আগে আপনাকে বলে যাব।আপনার অনুমতি নিয়ে যাব।

–ছাড়ো আমাকে।

–না ছাড়বো না।

–ভালোভাবে বলছি কিন্তু।

–মেরে ফেললে’ও ছাড়বো না।

আহান অধরাকে শক্ত দিয়ে ছাড়িয়ে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।রুমের দিকে যাবে।তখনি অধরা আহানকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে আছে।

–এটা কেমন ধরনের অসভ্যতা।দু’দিন পরে যাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।তার সাথে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করতে লজ্জা লাগে না।

–আমি যতদিন বেঁচে আছি।আপনাকে কখনো ছাড়বো না।চিনি জুকের মতো আপনার সাথে লেগে থাকবো।এখনো ছাড়বো না।

–একজন পরপুরুষ’কে জড়িয়ে ধরে আছো।লজ্জা করছে না।এত ছ্যাঁচরা কবে থেকে হয়েছো।আমি রেগে যাওয়ার আগে ছাড়ো বলছি।

–নিজের স্বামীকে জড়িয়ে ধরেছি।এখানে ছ্যাঁরামির কি দেখলেন আপনি।

–যাকে স্বামী হিসেবে মানো না।কয়দিন পড়ে ছেড়ে দিবে।এখানে তোমার স্বামী আসলো কোথায় থেকে।

–আমি তো ডিভোর্সের কথা..

–হুসস আর একবার ডিভোর্সের কথা মুখে আনলে তোমার মুখ আমি ভেঙে দিব।

অধরা এবার আহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

চলবে…..#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

ড্রয়িং রুমে রুহির পুরো পরিবার বসে আছে।আজকে-ই বিয়ের তারিখ ঠিক করতে চায় তারা।আহান তার বাবা-কে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে আসলো।

–বাবা তুমি জেনে শুনে আপু-কে রুহির ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিবে।বলল আহান।

–সবাই-তো আর এক হয় না বাবা।রুহি বদমাইশি করেছে।তার জন্য তার ভাই-কে একরকম ভাবা ঠিক না।আমি খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি।ছেলেটা ভিষণ ভালো,আমি’ও জানতাম না।রুহি বীরের বোন।সবকিছু দেখা শোনার পরে জেনেছি।রুহির পরিবারের সবাই অনেক ভালো।তোর কি মনে হয়।আমি মানুষ না চিনে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিব।তাছাড়া এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে।সবাই জানাজানি হয়েছে।এখন চাইলে’ও বিয়ে ভাঙা সম্ভব না।

–বাবা আমি তোমাকে বলছি।তুমি ভুল করছো।তিতলি আপুর জন্য তুমি আরো ভালো ছেলে দেখতে পারো।

–আহান তুমি আমার সিদ্ধান্তের ওপরে কথা বলছো।

–রাগ করছো কেনো।তিতলি আপু আমার নিজের বোন।ভাই হয়ে কি করে নিজের বোনের খারাপ চাই বলতো।

–আমার ওপরে বিশ্বাস রাখো।তোমার বাবা কখনো মানুষ চিনতে ভুল করে না।তিতলি’ও এই বিয়েতে খুব খুশি তুমি দেখেছো।আগে কতগুলো বিয়ে ভেঙে গেছে,তোমার বোনের বয়স তো আর কম হলো না।মানুষে’র কাছে নানান কথা শুনতে হয়।বয়স হলে গেলে তখন কে বিয়ে করবে।

–আমার আপু কি দেখতে শুনতে কম নাকি।আমার আপুর জন্য কত ছেলে পাগল।দেশে কি ছেলের অভাব পড়েছে।

–খালি ছেলে’র মতামত থাকলে-ই হবে না।তোমার বোনের’ও মত থাকতে হবে।আর তোমার বোন যদি এই বিয়েতে খুশি থাকে।তাহলে তোমার সমস্যা কোথায়।

আহান আর কিছু বলল না।সত্যি তো তিতলি বিয়েতে খুব খুশি।তার বোন যদি ভালো থাকে।তাহলে তার মেনে নিতে সমস্যা কোথায়।সবাই তো আর এক হয় না।বাবা ঠিকি বলছে।বাবা-মা কি কখনো সন্তানের খারাপ চায়।তিতলি আপুর ভালো হবে দেখে-ই বাবা রাজি হয়েছে।আহান গিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসলো।অধরা মন খারাপ করে নিচে আসলো।তখন আহান তাকে সরিয়ে দিয়ে নিচে চলে আসছে।অধরার সাথে কথা বলছে না।রুহি আহানে’র দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।অধরা সেদিকে খেয়াল করে দেখলো।রুহি আহানে’র দিকে-ই তাকিয়ে আছে।অধরা’র মনে পড়ে গেলো।এই মেয়েটাই তো আহানের অফিসে আহান-কে জড়িয়ে ধরে ছিলো।এটাই কি তারমানে রুহি।মুহুর্তেই অধরা’র হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেলো।বুকের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।অজানা ভয় এসে মনে হানা দিয়ে যাচ্ছে বারবার।পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে।আর একটু দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো পড়ে যাবে।অধরা ধীর পায়ে আহানে’র পাশে গিয়ে বসলো।অধরা-কে আহানে’র পাশে বসতে দেখে,রুহি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তিতলি-কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–ভাবি মেয়েটা-কে আহানের গাঘেঁষে বসলো কেনো।কি নির্লজ্জ মেয়ে’রে বাবা।এতগুলো মানুষের সামনে একটা ছেলের পাশে বসে পড়ল।তিতলি মনে মনে হাসলো আর বলল কাকে তুই নির্লজ্জ বলছিস রুহি।অধরা তো আহানের বিয়ে করা বউ।অধরা’র সম্পূর্ন অধিকার আছে।আহানে’র ওপরে,কিন্তু বিয়ের আগে-ই তোর অশ্লীলতার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়।সে,মেয়ে কতটা ভালো আমার জানা আছে।টাকা দিয়ে যত-ই সবকিছু ডিলিট করে দিস না কেনো।তোর চরিত্র কি পবিত্র হয়ে যাবে।তুই নষ্ট মেয়ে,আর সারাজীবন নষ্ট-ই থেকে যাবি।কথা গুলো মনে মনে বললে’ও বাহিরে প্রকাশ করলো না তিতলি।কারণ যেকোনো মূল্যে তার বীর-কে চাই।ছোটখাটো বিষয়-কে এতবড় করে,বিয়েটা আবার না ভেঙে যায়।তাই তিতলি চুপ করে রইলো।তিতলি’র পাশে তিতির বসে ছিলো।সে,ভেবেছিল তিতলি কিছু বলবে।কিন্তু তিতির’কে ভুল প্রমান করে দিয়ে তিতলি চুপ থাকলো।কিন্তু তিতির চুপ থাকতে পারলো না।সে বলে উঠলো।

–তুমি কাকে নির্লজ্জ বলছো রুহি।যে,মেয়েটা আহানের পাশে বসেছে।ও হচ্ছে অধরা,আহানের বউ।একজন স্ত্রী তার স্বামীর পাশে বসতে-ই পারে।এখানে নির্লজ্জতার কি দেখলে তুমি।

তিতিরে’র কোথায় রুহি উত্তেজিত হয়ে পড়লো।অস্থির হয়ে উঠতে যাবে।তখনি বীর শক্ত করে রুহির হাত চেপে ধরলো।রাগি দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকালো।রুহি শান্ত হয়ে বসে পড়লো।সবাই মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করলো।আর একমাস পরে-ই বিয়ে।খুব ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু করতে চায় দুই পরিবার।রাতে খেয়ে রুহির পরিবারে’র সবাই চলে গেলো।

অধরা কখন থেকে রুমে বসে আহানের জন্য অপেক্ষা করছে।আহানে’র আসার নামে কোনো খোঁজ নেই।অবশেষে অধরা’র অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আহান রুমে আসলো।

–আপনি এতক্ষন নিচে কি করছিলেন।আমি আপনা’র জন্য সে-ই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।

আহান কোনো উওর দিলো না।চুপচাপ ওয়াশরুমে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে শুইয়ে পড়ল।

–কি হলো আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো।কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আপনার জন্য।আর আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না।

–আমি তোমাকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছি।কেনো করেছো অপেক্ষা।আমার প্রচুর ঘুৃম পেয়েছে।আমি ঘুমাবো কথা বলে বিরক্ত করো না।

–আমি আপনাকে বিরক্ত করছি।আচ্ছা আর করবো না।বলে-ই আহানে’র বিপরীত পাশে শুইয়ে পড়ল।ঘুম কিছুতে-ই আসছে না।একবার এই দিকে হচ্ছে।তো আরেকবার এই দিক।কি করলে আহানে’র রাগ ভাঙবে সেটা-ই ভেবে পাচ্ছে না।ঝগড়া’ও করছে না আহান।কিছুক্ষণ ঝগড়া করার উছিলা খুঁজল।কিন্তু হতাশ হলো অধরা,ঝগড়া করার মতো কোনো কারন-ই খুঁজে পেলো না।আহান’কে অবাক করে দিয়ে।অধরা আহানে’র সামনে গিয়ে শুইয়ে পড়ল।তারপরে আহানের পায়ের মধ্যে নিজের পা দিয়ে,আহানে’র এক হাত নিজের গলায় জড়িয়ে নিয়ে।নিজে’ও আহান’কে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে রইলো।আহান চোখ বড় বড় করে অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা’কে ভূতে ধরলো নাকি।তবে আহানের বেশ ভালো লাগছে।তাই সে অধরা-কে কিছু বলল না।নিজে থেকে-ই অধরা-কে জড়িয়ে নিলো।অধরা’র চুল থেকে খুব সুন্দর একটা ঘ্রাণ পাচ্ছে আহান।একদম পাগল করা ঘ্রাণ।অধরা’র গালে চুমু খেলে বলল।

–বেশি ব্যাথা পাইছো।আমি আসলে তখন তোমাকে মারতে চাই নাই।রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।আর তুৃমি আমার মুখে মুখে কথা বলছিলে।এটা আমি সয্য করতে পারি নাই।তাই জন্য তোমার গায়ে হাত তুলে ছিলাম।প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।

–তাহলে এখন বেশি বেশি আদর করে দেন।

–কি বললে।

অধরা আহানে’র দু-চোখ এক হাত দিয়ে ধরে ফেললো।কি বলে ফেললো এটা বেশ লজ্জা লাগছে।

–কিছু বলি নাই।বললাম অনেক রাত হয়েছে।ঘুমিয়ে পড়েন,সকালে আপনার অফিস আছে না।

–তুমি চুলে কি শ্যাম্পু ব্যবহার করো।খুব সুন্দর ঘ্রাণ।একদম পাগল করা।যে,কোনো মানুষ পাগল হয়ে যাবে।

–সবাই পাগল হয়ে শুধু আপনি বাদে।আমার প্রশ্নের উত্তর এটা ছিলো না।

–তুমি কয়টা বিয়ে করেছিলে।

–কেনো দশটা।

–মজা করো।

–আপনি মজা করেন।দেখনে না।একটা রাক্ষসের জ্বালায় বাঁচি না।দশটা বিয়ে করে আমি কবরে যাব।

–আউট”!এটা কি হলো।

–কি হলো।

–কামড় দিলেন কেনো।

–রাক্ষস বললে কেনো।

–আজব আমি রাক্ষস বললাম আর আপনি কামড়ে দিবেন।যা-তা লোক একটা।আমার আপনার কাছে আসা-ই ভুল হয়েছে।থাকবো না আমি চলে যাব।বলে-ই অধরা উঠতে যাবে।আহান অধরা-কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে।

–আমার কাছে এসেছো নিজের ইচ্ছায়।কিন্তু যাবে আমার ইচ্ছায়।আমি যতক্ষণ না ছাড়ছি এক চুল পরিমাণ’ও সরতে পারবে না।

–ড্রয়িং রুমে একটা মেয়ে এসেছিলো।আগে কখনো খেয়াল করি নাই।আজ’কে দেখলাম আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলো।মেয়েটা কে।

–তা-জেনে তুমি কি করবে।তোমার হিংসা হচ্ছে বুঝি।

–আমার হিংসা হবে কেনো।আমি শুধু জানতে চেয়েছি।আপনার ইচ্ছে হলে বলবেন।না হলে নাই।আমার এত জানার ইচ্ছে নেই।বলে-ই চুপ করে রইলো অধরা।আহানে’র দিকে অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে।মুখে যতই বলুক জানার আগ্রহ নেই।কিন্তু ভেতরে ভেতর প্রচুর আগ্রহ জাগছে অধরার মনে।কিছুক্ষন নীরব থেকে আহান বলল।

–ওর নাম রুহি তিতলি আপুর ছোট ননদ।মানে বীর ভাইয়ার ছোট বোন।

–আর”!

–আর তোমার সতীন বানাতে চাও।কথা বালার সাথে সাথে অধরা তেলে বেগুন জ্বলে উঠলো।আহানের কাছে থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য দু’জন মিলে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলো।অধরা উঠে বসলো।আহান’ও উঠে বসলো।অধরা’কে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।অধরা ছোটাছুটি শুরু করে দিলো।

–আমি মজা করছি।তুমি রাগ করছো কেনো।ময়না পাখি আমার।জান পাখি আমার।রাগ করে না আহানে’র বউটা।

–আমাকে পাখি বললেন না।কালকে-ই উঠে চলে যাব।আজ’কে বাসে আসার সময় কি সুন্দর একটা ছেলে আমার পাশে বসেছিল।কি সুন্দর দেখতে।আমার কাঁধে মাথা রেখে যখন ঘুমিয়েছিল তখন বেশি কিউট লাগছিলো ছেলেটা-কে।ইস এমন একটা ছেলে যদি বলতে বলতে আহানে’র দিকে তাকালো।রেগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।দু-হাত শক্ত করে ধরে আছে।

–সকালে তুমি কোথায় গিয়েছিলে।ঐ ছেলের সাথে-ই দেখা করতে গিয়েছিলে তাই না।এজন্য বলতে চাইছিলে না।বিবাহিত মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়া’ও লজ্জা করে না।তোমাকে আরো দু’টো লাগিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো।

–বিবাহিত ছেলে হয়ে।বউয়ের সামনে আরেক-টা বিয়ে করতে চান।তখন লজ্জা কোথায় থাকে আপনার।এখন আপনাকে কি করা উচিৎ।

–আমি তো মজা করছি।

–আমি মনে হয় সত্যি সত্যি বলছি।বলল অধরা।

–সকালে কোথায় গিয়েছিলে।

–গ্রামে।অনেক কিছু হয়ে গিয়েছে।আমাদের সাথে কেউ গেম খেলছে বুঝছেন।একটু ধৈর্য ধরুন আপনাকে সব খুলে বলবো।

–কে গেম খেলছে।কিসব বলছো।মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার।

–আগে না আমার মাথা ঠিকি আছে।আপনার মতো আমি এত মাথামোটা না।এদিকে এগিয়ে আসুন।আহান অধরা’র কাছে আসলে।অধরা জোরে আহানের গালে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।দিয়ে-ই বালিশের নিচে মুখ লুকালো অধরা।

–এটা কি হলো অধরা আমাকে ধোঁকা দিলা তুমি।তোমাকে তো আমি,,

–আমার কিছু করতে পারবেন না।অধরা কারো ঋন রাখে না।আপনি আমাকে কামড়ে দিয়েছেন।আমি’ও আপনাকে কামড়ে দিয়েছি শোধ।

আহান কিছুক্ষণ অধরার মুখ সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করলো।অনেক রাত হয়েছে।তাই অধরা-কে কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে পড়ল।

পরের দিন সকাল বেলা,তিতর আজ শশুর বাড়ি চলে যাবে।অনেক দিন হয়ে গেছে।শশুর বাড়ির সবাই নাতির জন্য পাগল হয়ে গেছে।আবার তিতলির বিয়ের সময় আসবে।অধরা সকাল থেকে তিতিরে’র সাথে-ই আছে।আহান অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিল।ড্রেসিং টেবিলে অধরার ফোন রাখা ছিলো।অধরার ফোনে একটা মেসেজ আসলো।আহান ভেবেছিলো।হয়তো অফিস থেকে করেছে।পরে দেখলো না অধরার মা করেছে। অধরা-কে ডাক দিতে যাবে।তার আগে-ই মেসেজে’র প্রথম লাইনটা চোখে পড়তে-ই পুরো মেসেজ-টা পড়ার আগ্রহ জাগলে আহানের।মেসেজ-টা ছিলো এমন।

–অধরা সংসার জীবনে গিয়ে কি নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসছিস।তুই এটা ভুলে যাস না।তুই চৌধুরী বাড়িতে সংসার করতে যাস নাই।তোকে আমি সংসার করতে পাঠিয়েছি।নাকি চৌধুরীদে’র ধংস করতে পাঠিয়েছি।আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।তুই আর সময় নিস না মা।তাড়াতাড়ি চৌধুরীদের সবকিছু শেষ করে দে।আমি বেঁচে থাকতে চৌধুরীদে’র ধংস দেখতে চাই।চৌধুরী পরিবারে’র সবাই-কে এমন ভাবে মারবি।রাস্তার কুত্তা গুলা’ও যেনো,তাদের দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।যা করার তাড়াতাড়ি কর।ফ্রি হলে মেসেজের উত্তর দিস।

~~তোর মা~~

মেসেজ-টা পড়ে আহান কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়।তার কাছে সবকিছু মিথ্যা মনে হচ্ছে।অধরা তাদের ক্ষতি করার জন্য এসেছে।নিজে’র চোখকে’ও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আহানের।হাত-পা কাঁপছে,সাদা বর্নের চোখ গুলো,আস্তে আস্তে লাল হয়ে আসছে।চিৎকার করে অধরা’কে ডাকলো।অধরা আহানে’র ডাক শুনে দ্রুত আহানের রুমে আসলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here