তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -২৭+২৮

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

তিতির রান্না করছে।সাথে তিতরে’র বাসার কাজের মেয়েটি’ও আছে।অধরা গিয়ে সেখানে দাঁড়াল।দূর থেকে এসেছে সবাই,ক্লান্ত শরীর নিয়ে,কেউ বেশিক্ষণ আড্ডা দিতে পারলো না।সবাই নিজের রুমে গিয়ে,বিশ্রাম করছে।

–আপু আমি’ও তোমাকে সাহায্য করি।বলো আমাকে কি করতে হবে।বলল অধরা।

–তোমার এত কিছু করা লাগবে না।আমার বাবা-মা কতদিন পরে আমার বাসায় আসছে।আমি নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবো।আমি তোমাকে কাজ করানো’র জন্য নিয়ে আসছি।তুমি বড় বোনের কাছে আসছো।একদম রাণীর মতো করে থাকবে।আমাকে নিজের বোন মনে করো না নাকি।

–না এমনটা না।আমি’ও তো আমার বোনকে সাহায্য করতে পারি।আমার বোন একা একা কষ্ট করছে।

–আমার অভ্যাস আছে।আমি অনেক বছর ধরে সংসার করছি।এক সন্তানের মা হয়েছি।এখনো যদি সবকিছু না পারি।তাহলে কেমন বউ আমি।

–তোমার সাথে কথা বলে পারা যাবে না।

তখনি মিসেস আফরোজা চৌধুরী আসলেন।অধরার মাথায় হাত রেখে বলেন।

–মা,তুই আমাকে মাফ করে দিস।জেনে-বুঝে তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে।দয়া করে তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।

–ছিঃ আন্টি আপনি এসব কি বলছেন।আপনি আমার বড়।আমার গুরুজন।আপনি যত-ই অন্যায় করেন না কেনো।বড় হয়ে ছোটদের কাছে মাফ চাওয়া বড্ড বেমানান লাগে।আপনি এমন করে বলবেন না।আমার খারাপ লাগে।

–তুই আমাকে মা ডাকিস।তুই যে,আমাদের বাসার প্রাণ হয়ে গেছিস।তোকে ছাড়া আমার ছেলে ভালো থাকতে পারে না।আমি বুঝে গেছি।তুই আমার ছেলের জন্য কতটা কি।আমাকে মাফ করে দিস রে মা।তোকে কষ্ট দিলে আমার ছেলেকে কষ্ট দেওয়া হবে।আমি মা হয়ে নিজের সন্তানদের কিভাবে কষ্ট দেই।আর রাগ করিস না মা।আমাদের সাথে বাড়ি ফিরে যাবি।কথা দে মা তুই আমাকে।

–এমন করে বলবেন না।আপনি আমাকে যতই কষ্ট দেন না কেনো।আপনি আমার বড় আপনি মাফ চাইলে আমার খারাপ লাগে।যে,নিজের ভুল বুঝতে পারে,মাফ চায়।তাকে অবশ্যই মাফ করে দেওয়া উচিৎ।

মিসেস আফরোজা চৌধুরী অধরা’কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।দুপুরে সবাই খাওয়া দাওয়া করে আড্ডা দিচ্ছে।আহান এখনো উঠে নাই।সারাদিন পেড়িয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসলো।ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে নাশতা করছে।অধরা’ও বসে আছে সবার সাথে।সবাইকে পেয়ে খুব খুশি অধরা।ভালোবাসার মানুষ গুলো পাশে থাকলে সমস্ত রাগ,অভিমান নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়।আহান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো।সবাই আড্ডা দিচ্ছে,আহান কোনো কথা না বলে চুপচাপ অধরা’র পেছনে এসে দাঁড়াল।

–শুনেন বেয়াইন তিতিরের সাথে,আপনাদে’র-ও যেতে হবে।আমরা আপনাদে’র কথা রেখেছি।এখন আপনাদে’র পালা।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আপনি চিন্তা করবেন না।আমরা’ও আপনাদে’র একটু জ্বালাতে চৌধুরী বাড়িতে আপনাদে’র পিছু পিছু চলে যাব।বলল তিতিরের শশুর।

তিতিরে’র শশুরের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।অধরা হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে আহান’কে দেখে চিৎকার করে উঠলো।সবাই অধরা’র দিকে তাকালো।আচমকা কেউ না বলে চুপচাপ পেছনে দাঁড়িয়ে,থাকলে ভয় পাবার-ই কথা স্বাভাবিক।

–কি রে তুই কখন ঘুম থেকে উঠলি।ভূতের মতো কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।বলল তিতির।

–মেয়েটা মনে হয় খুব ভয় পেয়ে গেছে।ও মেয়ে দেখি তোমার স্বামীকে একটু ছুঁইয়ে দেখো।তাহলে ভয় মনে বসবে না।বলল তিতরের শাশুড়ী।

–ডং এত ভয় পাবার কি আছে।আর এসব কুসংস্কারে’ বিশ্বাস করেন আপনারা।বলল তিতলি।

–তিতলি এটা কেমন ধরনের ব্যবহার।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।তিতলি চুপ হয়ে গেছে।

–এবার দেখবো আমাকে না ছঁইয়ে কোথায় যা-ও।মনে মনে বলল আহান।সবাই’কে অবাক করে দিয়ে।অধরা সবার মাঝখানে থেকে উঠে চলে গেলো।যাওয়ার আগে একটা কথা’ও বলল না।আহান ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।কতোটা বদলে নিয়েছে নিজকে।

–মেয়েটা’কে ভয় পাইয়ে দেওয়ার কি ছিলো।আয় তোকে খেতে দেই।মহারাজ বিশ্বজয় করে আসলেন।সারাদিন এভাবে ঘুমাবি না।

অধরা রুমে এসে চুপচাপ শুইয়ে পড়ল।সকালে একটু ঘুমিয়েছে।এখন ঘুমালে মন্দ হয় না।কিন্তু তিতির আপু রাতে খাবার জন্য আবার ডাকবে।ভালো লাগে না।

আহান চুপচাপ রুমে এসে অধরা’র পাশে শুইয়ে পড়ল।দু’জনে মাঝে বেশ দুরত্ব।আহান’কে দেখে অধরা বালিশ নিয় ফ্লোরে শুইয়ে পড়ল।যার মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না।যার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।এখন তাহলে তার পিছু পিছু ঘুর ঘুর করছেন কেনো।মনে মনে বলছিলো অধরা।

–জানো অধরা তুমি সামনে আসলে আমার অভিমান’রা-ও তোমাকে ভালোবেসে ফেলে।এতটা সুন্দর তুমি।বলল আহান।

আহান আগে কথা বলেছে।অধরা’র জেদ সফল হয়েছে।তবু্’ও অধরা কোনো কথা বলল না।আহান পকেট থেকে চকলেট বের করলো।অধরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।তোমার জন্য।তা-ও অধরা কিছু বলল না।চোখ বন্ধ করে শুইয়ে রইলো।উত্তর না পেয়ে আহান আবার বলল।

–আমি তোমাকে কিছু বলছি।রাগ করে কি বলে ছিলাম এখনো ধরে বসে আছো।আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে মাফ করে দাও।

অধরা’র আগের ন্যায় শুইয়ে আছে।কোনো কথা বলছে না।আহান আবার বলল।

–ও অধরা ম্যাডাম।আমার ভুল হইয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করি দেন।

অধরা এবার না হেঁসে পারলো না।কয়দিন আগে একটা চোর চুরি করে গিয়ে ধরা পড়েছিল।তখন চোর’টি এভাবে মাফ চেয়েছিল।আহান’ও লোকটার মতো কপি করলো।

–এই অধরা কথা বলছো না কেনো।এবার কিন্তু সত্যি সত্যি আমি কিছু একটা করে ফেলবো।

আমাকে কথা বলতে নিষেধ করে।এখন নিজে-ই হুমকি দিচ্ছে।কথা বলবো না মানে,বলবো না।আহান অধরা’র পাশে গিয়ে অধরা’কে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে পড়ল।

–এটা কেমন ধরনের ফাজলামি।দূরে সরুন বলছি।

–আমার সাথে কথা বলবে না তাই না।আমি’ও দেখবো,তুমি আমার সাথে কথা না বলে,কি করে থাকতে পারো।বকবক করে যদি তোমার মাথা নষ্ট করে না দিয়েছি।তবে আমার নাম’ও আহান না।

অধরা কোনো কথা বলল না।চুপচাপ শুইয়ে রইলো।

এভাবে পাঁচ দিন থেকে সবাই চৌধুরী বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।তিতলির বিয়ের জন্য,আজ বাসায় গিয়ে সন্ধ্যায় শপিং করতে যাবে।অধরা সকাল থেকে জেদ ধরে বসে আছে।সে,কিছুতেই চৌধুরী বাড়িতে যাবে না।

–তুমি যাবে না।বলল আহান।

–না,যাব না।বলল অধরা।

–কেনো যাবে না।

–যে,বাসায় আমাকে অপমান করা হয়।আমি সে,বাসায় কিছুতেই যাব না।

–আমাকে রাগাবে না বললাম।এই কয়টা দিন অনেক ধৈর্য ধরেছি।এখন যদি এমন করো,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

–আপনি মানুষটা এমনতেই খারাপ।ভালো ছিলেন কবে।

–আমি যখন ভালো মানুষ না।তাহলে ভালোভাবে বলে কাজ নেই।

–আমি যাব না।

–তোমাকে যেতে হবে না।বলেই আহান অধরা’কে কোলে তুলে নিলো।

অধরা রাগী দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো।

–তুমি ভালোভাবে যাবে না।এখন তুমি যদি চাও বরের কোলে চড়ে শশুর বাড়ি যাবে।তাহলে বর হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না।

–আমাকে নামিয়ে দিন।আমি যাব।

–এইবার পথে আসো।বলে-ই অধরাকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।অধরা আর আহান’কে একসাথে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো।সবাই মিলে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।বাসায় এসে সবাই মিলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আহান ফ্রেশ হয়ে অধরা’র পাশে বসতে-ই অধরা দূরে সরে গেলো।

–দেখুন আপনার সাথে আসছি।তারমানে এই না যে,আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।একদম আমার কাছে আসবেন না।

–তুমি বললে-ই আমি শুনবো নাকি।

–না শুনলে আমি আবার চলে যাব।

–ঠ্যাং ভেঙ্গে দিব।

–সাহস থাকলে দিয়ে দেখান।

–তুমি আমার সাহস দেখতে চাও।বলে-ই অধরা’র দিকে এগোতে লাগলো।কিছু একটা মনে করে বাহিরে চলে গেলো আহান।একটু পরে হাতে অনেক গুলো গোলাপ ফুল নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।সেগুলো অধরা’র সামনে ধরে বলল।

–সরি বউ মাফ করে দাও।এই যে,তোমাকে ভালোবাসে এতগুলো ফুল দিচ্ছি।প্লিজ আহানের বউ গলে যা-ও।

–সময় হলে,একা-ই কমে যাবে।এত তেল দেওয়ার দরকার নেই আহান।বলল তিতলি।

–তিতলি মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কথা বলা ছেড়ে দে।দু’দিন পরে তুই’ও শশুর বাড়ি যাবি।আল্লাহ না করুক।তোর সাথে’ও যদি এমন টা হয়।তখন তুই কি করবি।স্বামী হয়ে যদি বউয়ের রাগ ভাঙাতে না পারে।তাহলে আহানের স্বামী হবার কোনো যোগ্যতা নেই।বলল তিতির

–নিজের বোন হয়ে আমাকে অভিশাপ দিচ্ছিস।

–আপু বাদ দাও।তিতলি আপু অনেক ভালো।পারে-ই শুধু অন্যের ক্ষতি করতে।বলে-ই অধরা বাহিরে চলে গেলো।

সন্ধ্যা বেলা সবাই মিলে শপিং মলে গেলো বিয়ের শপিং করতে।শপিং মনে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো।কাকে দেখছে সে”?
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিজের মেজো খালা’কে বহুবছর পরে বাংলাদেশে দেখে,নিজে’র চোখকে’ও বিশ্বাস করতে পারছে না অধরা।যে,করে-ই হোক না কেনো।আজ খালা’কে ধরতে-ই হবে।বহুবছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন উনি।আজ যখন চোখের সামনে পেয়েছি,কিছুেত-ই ছাড়বো না।আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর ওনাকে দিতে হবে।বলে-ই দৌড়ে তার মেজো খালার কাছে গেলেন।খপ করে তার খালার হাত শক্ত করে ধরলো।হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে সামনের দিকে তাকালো শারমিন বেগম।অধরা’কে দেখে চমকে উঠলো।

–অধরা তুই”?

অধরা’র মুখে তৃপ্তি’র হাসি।তবু’ও জেনে’ও না,জানার ভান ধরে বলল।

–খালামনি তুমি এখানে,জানো তোমাকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি।এতদিন কোথায় ছিলে,তুৃমি কি নানির সাথে দেখা করছো।

অধরা’র খালা,কোনো কথা না বলে অধরা’র চুলগুলো নিজে’র হাতের মুঠোয় পুরে নিলো।খুব শক্ত ভাবে-ই ধরেছে অধরা’র চুল গুলো।

–খালামনি কি করছো।ছাড়ো চুলে ব্যাথা পাচ্ছি তো।তুমি আমার চুল ধরছো কেনো।

–একদম নাটক করবি না।তুই ইচ্ছে করে আমাকে গর্ত থেকে বের করছিস তাই না।সাপের সাথে খেলতে আসিস না অধরা।একবার যদি দাঁত বসিয়ে দেই।সয্য করতে পারবি না।ছটফট করতে করতে মরবি।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে খালামনি।তুমি আমাকে ছোট থেকে নিজের হাতে মানুষ করছো।আর আমি তোমার সাথে গেম খেলবো।তোমার মনে আছে,আমরা সাপ লুডু খেলতাম।চলো তুমি চলে এসেছো।আবার জমিয়ে খেলা হবে।বলে-ই নিজের চুলগুলো শারমিন বেগমের থেকে,ছাড়িয়ে নিলো।তারপরে শারমিন বেগমে’র এক হাত উল্টো করে ধরলো।ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো শারমিন বেগম।

–অধরা ছাড় আমার লাগছে।আমি তোর খালামনি হয়।তুই আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।ছোট বেলা থেকে বড় করেছি তোকে।তার প্রতিদান এভাবে দিচ্ছিস।

–এর থেকে’ও বেশি কষ্ট।তুমি নিজে’র বোন’কে দাও।তোমার তখন বিবেকে বাঁধা দেয় না।তোমার বড় বোনের কোমরের বাম পাশে দেখো এখনো কালো দাগ হয়ে আছে।কেনো হয়েছে জানো তোমাকে ছোট বেলায় কোলে নিতে নিতে কড়া পড়ে গেছে।তুুমি সেই বোন’কে কষ্ট দিতে পারছো।আমি তোমাকে এতটুকু দিতে পারবো না।তাছাড়া তুমি ডক্টর নিজের চিকিৎসা নিজে করে নিতে পারবে।বারতি টাকা খরচ হবে না।

–অধরা”!

–গলা নামিয়ে কথা বলো”।অধরা’র সামনে কেউ উঁচু গলায় কথা বলে না।আর যে,বলে তার গলা-ই থাকে না।এখন তুমি চিন্তা করো।তোমার গলা রাখবে কি না।

–অধরা মা আমার বলছিলাম কি।

–কোনো কথা শুনতে চাই না।তাড়াতাড়ি বলো আমার বাবা-মা কোথায়।

–আমি জানি না।

–আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না।তুমি আমার খালামনি হও তাই না।তোমার সাথে আমি খারাপ কিছু করতে পারি।

–অধরা তুমি এখানে কি করছো।ওনার হাত ওভাবে ধরে আছো কেনো।ব্যাথা পাচ্ছেন উনি।আহান কথা গুলো বলছিলো।এই সুযোগে শারমিন বেগম।অধরা’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।তারপরে দৌড়ে পালালো।

–আপনি আসার আর সময় পেলেন না।সব সময় ভুল জায়গায় ভুল সময়ে চলে আসেন।কতদিন পরে সাপলুডু খেলা খেল ছিলাম।আপনার জন্য খেলা’টা শেষ করতে পারলাম না।কোনো ব্যাপার না সবে শুরু আবার খেলা শুরু করবো।

–কি সব বলছো।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।কে ছিলেন মহিলা’টি।

–পাগল”!

–সত্যি করে করে বলো।

–আমি আপনার সাথে মজা করছি।

–আহান বেইবি তুমি এখানে কি করছো।আমরা চলে এসেছি।চলো সবাই কত জামাকাপড় কিনছে।আমরা’ও কিনবো।আজ’কে সব জামাকাপড় তোমার পছন্দে কিনবো।বলল রুহি।

–ওলে আহান বেইবি।সকালে ফিডার খাইছিলে বাবু।বলল অধরা।

রুহি রাগী দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকালো।অধরা সে,দিকে পাত্তা না দিয়ে,আহানের হাত ধরে টানতে টানতে রুহির কাছে থেকে চলে আসলো।

–তুমি আমার আহান’কে আমার কাছে থেকে-ই নিয়ে চলে গেলে।তোমাকে আর আহান’কে যদি আলাদা করতে না পারি।তাহলে আমার নাম’ও রুহি না।বলে-ই সবার দিকে এগিয়ে গেলো।এঙ্গেজমন্টের তিতলি আর বীরের কথা,দেখা কোনো টাই হয় নাই।আজ’কে বীর’কে দেখে তিতলি খুব খুশি হয়েছে।অনেক দিন পরে বীর’কে দেখে তিতলির মনের মধ্যে শান্তি লাগছে।বীরের পাশে পাশে হাটছে তিতলি।বীর একবারো তাকায়নি তিতলি’র দিকে।

–তুমি আমাকে নিয়ে চলে আসলে কেনো।

–আপনি আমাকে তিতির আপুর বাসা থেকে নিয়ে আসলেন কেনো।

–আমার বউ আমার ইচ্ছে হয়েছে।তাই নিয়ে এসেছি।কোনো সমস্যা।

–আমার জামাই আমার ইচ্ছে হয়েছে।তাই আমি নিয়ে এসছি।তাহলে আপনি কেনো এত প্যাক প্যাক করছেন।

–কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা।আমি কি হাঁস নাকি।যে,প্যাক প্যাক করবো।

–হাঁসের থেকে কোনো অংশে কম না।আর একটা কথা বললে,শপিং মলে-ই মারামারি শুরু করে দিব।

–শপিং করতে এসে’ও ঝগড়া।অধরা এদিকে আসো এই শাড়ি টা দেখো তো কেমন লাগছে।তোমার গায়ে সুন্দর মানাবে।এটা আমি তোমার জন্য পছন্দ করেছি।বলল তিতর।

–আপু এটা তো অনেক সুন্দর।আমার খুব পছন্দ হয়েছে।আমার লালা টুকটুকে শাড়ির অনেক দিনের শখ জানো আপু।এটা-ই আমি নিব।

–তাহলে তোমার জন্য নিয়ে নিলাম এটা।

–না আপু,এটা অধরা’কে একদম মানাবে না।একদম বাজ লাগছে।এত টাকা দিয়ে ওকে শাড়ি কিনে দেওয়া লাগবে না।যা-ও গিয়ে রেখে দাও।

–তোকে ধরে কয়টা লাগিয়ে দিব।বেশি কথা বলতে শিখে গেছিস তাই না।এটা অধরা’র জন্য-ই নিব।

–শাড়িটা’র দাম দেখছো পনেরো হাজার টাকা।এত টাকা দামের শাড়ি সামলাতে পারবে না।এটা আমাকে দাও।আমি বরং আমার ফ্রেন্ড’কে এটা গিফট করে দেই।

হুট করে কোথায় থেকে জানি,রুহি এসে শাড়ি’টা অধরা’র হাতে থেকে কেঁড়ে নিয়ে বলল।

–এটা পড়লে আমাকে মানাবে।খুব সুন্দর শাড়ি।এটা আমি নিব আপু।বলল রুহি।

–আপু শাড়ি’টা আমি অধরা’র জন্য নিয়েছি।বলল তিতির।

–অধরা’র জন্য অন্য শাড়ি পছন্দ করে না-ও।

তিতির কিছু বলতে যাবে।তখনি অধরা থামিয়ে দিয়ে বলল।

–থাক আপু কিছু বলা লাগবে না।সত্যি রুহি আপু’কে সুন্দর লাগছে।কেউ হয়তো রুহি আপুকে-ই শাড়ি’টা গিফট করতে চেয়েছিল।এমনিতে-ই শাড়ি আমি পড়ি না।তিতলি আপুর জন্য কি নিলে,চলো দেখবো।

–হ্যাঁ রুহি শাড়িটা তুমি রেখে দাও।তোমাকে-ই ভালো লাগবে।

তিতির রাগী দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো।তারপরে অধরা’কে বলল।

–তুৃমি রাগ করো না।আমি তোমাকে আরেক’টা শাড়ি নিয়ে দিচ্ছি।

–আমার লাগবে না।বাসায় অনেক শাড়ি ওগুলো-ই পড়া হয় নাই।চলো তোমরা শপিং করবে।আমি পছন্দ করে দিব।বলে-ই দু’জন চলে গেলো।অধরা চলে যেতে-ই আহান রুহির হাতে থেকে শাড়ি’টা কেঁড়ে নিয়ে বলল।

–দে,শাঁকচুন্নি।আমার বউয়ের শাড়ি।আমার বউ কত পছন্দ করেছে।শখ কতো,আমার বউয়ের শাড়ি নিবে।তোর কোনো যোগ্যতা আছে,এই শাড়ি পড়ার।বাজে মেয়ে একটা।আমার আশপাশে দেখলে খবর আছে।বলে-ই গটগট করে আহান চলে গেলো।তিতির বিভিন্ন রকমের শাড়ি দেখাচ্ছে।অধরা’র শরীরে ধরে দেখছে কেমন লাগে।কালো আর কলাপাতা রংয়ের দু’টো শাড়ি অধরা’র শরীরে ধরলো।বেশ মানিয়েছে অধরা’র শরীরে।তা দেখে আহান ঝটপট বলে ফেললো।

–মামা এই দু’টো শাড়ি আমাকে প্যাক করে দিন।আমার ফ্রেন্ড’কে উপহার দিব।তিতির রেগে বলল।

–তোর বান্ধবী কে”?কতো শাড়ি দেওয়া লাগে”!যেটা-ই অধরা’র জন্য পছন্দ করছি।সেই শাড়িটা-ই তোর বান্ধবীর জন্য নেওয়া লাগছে।

–এই দুটো-ই শেষ আর নিব না।

–আমি তোকে দিব না।এগুলো অধরা’র।তুই অন্য শাড়ি কিনে দে।

–না আমি এগুলো-ই দিব।

অধরা বিরক্ত হয়ে,সেখানে থেকে চলে গেলো।অধরা ঘুরে ঘুরে পুরো শপিং মল দেখছিলো।তখনি পেছনে থেকে বীর ডাক দিলো।

–অধরা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

–আসার পরে থেকে আমার সাথে একটা কথা বললে না।এদিকে আমার ছোট ভাইয়ের বউকে ডেকে ঠিকি কথা বলছো বীর।বলল তিতলি।

–আমার যার সাথে ইচ্ছে,আমি তার সাথে কথা বলবো।তুমি কিছু বলতে পারবে না।এখনো তুমি আমার বউ হও নাই।

–বীর তুমি আমার সাথে সব সময় এমন করো কেনো।

অধরা ওদের মাঝখানে থেকে চলে গেলো।

অন্ধকার রুমের মধ্যে।ভারি দেহের একটি লোক’কে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলছে।তবু’ও দাঁতের ফাঁক দিয়ে একটা কথা’ও বের করছে না।তখনি ভেতরে প্রবেশ করে সাইকো কুইন।কুইন’কে দেখে লোকটি’র আত্মা কেঁপে গেলো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে লোকটি’র।

কালো রংয়ের ওনার দিয়ে পুরো মুখ ঢাকা কুইনে’র।চোখে কালো রংয়ের সানগ্লাস পড়া।ধীর পায়ে লোকটি’র কাছে এগিয়ে এসে নিচে বসলো কুইন।

–তোর কলিজা খুব বড়।তোর সাহস আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে।এমন বিশ্বস্ত লোক আমার খুব দরকার।এই চাকু টা দে তো।কুইন হুকুম করার সাথে সাথে চাকু নিজে হাজির হলো।

–ম্যাডাম আপনার চাকু।

–এটা আমার হাতে দে,লবণ আর মরিচের গুঁড়ো নিয়ে আয়।চুলায় গরম পানি বাসাতে দে।বেচারা’কে অনেক মেরেছিস তোরা।এভাবে কেউ কাউকে মারে,তোরা কি মানুষ নাকি অমানুষ রে।

কুইনের এমন শান্ত ভাবে কথা বলা দেখে,ভয়ে সবার হাত পা কাঁপছে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।কথা বলার শক্তি হারিয়ে আসছে।কুইন কখনো এতটা শান্ত থাকার মতো মেয়ে না।ঝড় আসার আগে,পরিবেশ শান্ত থাকে।তবে আসার পূর্বাভাস।লোকটি ভয়ার্ত চেহারায় কুইনে’র দিকে তাকিয়ে আছে।কুইন সে,দিকে পাত্তা না দিয়ে।লোকটির পা কাটতে শুরু করলো।নিমিষে-ই পায়ের মধ্যে চারবার চাকু ছুঁইয়ে দিলো।লোকটির পা থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করলো।লবন আর মরিচের গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে।লোকটির পায়ে চেপে ধরলো।সাথে সাথে লোক’টি গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগলো।চিৎকার করছে লোকটি।বারবার মাফ চাইছে।কিন্তু কুইনের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।

–তোরা দেখছি খুব খারাপ মানুষ দেখছিস।একটা মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।যা গিয়ে পানি নিয়ে আয়।একজন লোক দৌড়ে গিয়ে টগবগে গরম পানি নিয়ে আসলো।কাঁপা কাঁপা হাতে কুইনের দিকে এগিয়ে দিলো।

–অনেক ব্যাথা করছে তাই না।এখনি কমে যাবে।পানি দিয়ে আমি ঠান্ডা করে দিচ্ছি।কে কোথায় আছিস তাড়াতাড়ি লেবু দিয়ে যা,দেখছিস না।উনি কতটা কষ্ট পাচ্ছেন।আমি আবার মানুষের কষ্ট সয্য করতে পারি না।

–আমি আর পারছি না।আমারকে গরম পানি দিবেন না।আমি বলছি ওরা কোথায় আছে।ওরা আমেরিকায় আছে।শুধু ওরা দু’জন না।তিনজন আছে।

লোকটির কোথায় কুইন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

–তিনজন মানে,আচ্ছা ওটা আমি পরে বুঝে নিব।তুই শুধু শুধু এতগুলো দিন মার খেলি।আমাকে তোর সামনে নিয়ে আসলি।তবে-ই মুখ খুললি।আমাকে এভাবে হয়রানি করালি।এখন তোকে কি শাস্তি দিব বলো।

–আমাকে শাস্তি দিবেন না।আমি তো সব সত্যি কথা বলে-ই দিলাম।

–আমাদের মধ্যে থেকে কেউ আমাদের সাথে বেইমানি করছে।কে করছে”?জানতে পারলে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো আমি।আজকের ঘটনা।আমাদের মধ্যে থেকে যদি বাহিরে যায়।তোদের সবার মুখ চিনে রাখলাম।সবগুলো’কে শেষ করে ফেলবো।বলে-ই কুইন বেড়োতে যাবে।তখনি বীরের সাথে ধাক্কা খায়।কুইন বীরের কলার চেপে ধরে বলে।

–কুত্তার বাচ্চা তোকে আমি,কাজের জন্য চৌধুরীতে পাঠিয়েছি।তুই চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে প্রেম আলাপ শুরু করেছিস।

–আজ-কাল আমাকে রেখে-ই কাজ করছেন।

কুইন কোনো কথা বলল না।এক প্রকার দৌড়ে চলে গেলো।

অধরা শপিং মলের বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আছে।আহান এসে অধরা’র পাশে দাঁড়ালো।দু-হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ।

–আহানের বউ বলছিলাম কি,আহানের এতগুলো ব্যাগ টানতে সমস্যা হচ্ছে।তুমি যদি সাহায্য করতে,তাহলে আহানে’র খুব উপকার হতো।

অধরা মন খারাপ করে আহানের হাতে থেকে ব্যাগ গুলো ধরলো।শপিং করে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়েছে।সবাই এসে ফ্রেশ হয়ে।খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেছে।সবাই বড্ড ক্লান্ত।

আহান রুমে এসে দেখলো অধরা রুমে নেই।পুরো অবাক হয়ে গেলো আহান।এত রাতে মেয়েটা গেলো কোথায়।

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here