তোমার নেশায় পর্ব ১১

# তোমার_নেশায় !!
,
,
(১১)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখলাম আমি রুপাঞ্জনের বুকে
শুয়ে আছি। মুচকি হেসে ওর বুক থেকে উঠে পড়লাম। ওর মুখ
টা সকালের মিষ্টি আলোয় অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে আমি
ওর কপালে একটা চুমু খেলাম। পাশ থেকে মোবাইল টা
নিয়ে টাইম দেখে তো চমকে উঠলাম, একি ১১ টা বেজে
গেল। আমি এতোক্ষন ঘুমিয়েছি?? আজকে না শহর টা ঘুরে
দেখার কথা ছিল দুর!! তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে
ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি
রুপাঞ্জন বিছানার উপর বসে বসে মোবাইল চাপছে।
আমাকে দেখতেই,
:– গুড মর্নিং, মাই বিউটিফুল ওয়াইফ!!
,
:– ছাই মর্নিং! রাখুন তো!! আজকে না আমার শহর টা ঘুরে
দেখার ছিল আর আপনি নিজেও পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছেন
আর আমাকে ও উঠাননি।
,
:– তুমি নিজেই তো বললে আমি ঘমিয়েছি তাহলে
তোমায় উঠাবো কি করে??
,
:– জানিনা,,, হু!!!
,
রাগ দেখিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। কিছুক্ষন পর
রুপাঞ্জন এসে আমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরএ বলল,
:– আচ্ছা সরি তো বউ!! আর রাগ করে থেকোনা প্লিস।
তুমি শহর টা ঘুরবে বলেই তো দশ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি
আমরা। আচ্ছা আমরা কিছুক্ষন পর নাস্তা করে বের হবো!
,
:– না না না!! আমি কিচ্ছু খাবোনা……এক্ষুনি ঘুরতে
যাবো বেশ!
,
:– অকে অকে! আমাকে কাইন্ডি গোসল করার জন্য ১০
মিঃ টাইম দেওয়া যাবে???
,
:– যেতে পারেন। (অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম)
,
:–Thanks a lot!! your highness!
,
রুপাঞ্জন চলে যেতেই আমি উচু বারান্দার গ্রীল ধরে
ব্যেস্ত শহর টা দেখতে লাগলাম। ভাবতেই আনন্দ লাগছে
আজ সারাদিন ঘুরবো আমি! কি যে ভালো লাগছে। এতো
সুখ কি শইবে আমার কপালে। দুর! কি সব ভাবছি যার এমন
একটা লক্ষ্মী বর আছে, তার কপালে সুখ থাকবেনা তো
কই থাকবে।
,
একটু পর রুপাঞ্জন আমায় ডাক দিল। আমি গিয়ে দেখি
উনি সাদা শার্ট আর কালো জিন্স, কালো ঘড়ি পরে
একদম রেডি হয়ে দাড়িয়ে আছেন। বুঝলাম আমি আজ
সাদা রং এর টপস পরেছি বলে উনি ও ম্যেচিং করে
সাদা শার্ট পরেছেন। যাই হোক দারুন লাগছে ওনাকে।
আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন,
:– ম্যেডামের আমাকে দেখা শেষ হলে আমরা কি এবার
বের হতে পারি।
,
:– হু!! কে বলল আমি আপনাকে দেখছি??
,
:– হা হা হা! এই তোমারই তো বর! তোমার বর কে দেখতে
আবার কারন লাগে নাকি।
,
:- হয়েছে আর ডং করা লাগবেনা।
,
আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রুপাঞ্জন একটা
ক্যেব বুক করেছেন, যাতে পুরো শহর টা ভালো ভাবে ঘুরে
দেখতে পারি। আমরা তো আর পুরো শহর আগে থেকে
চিনিনা তাই একটা গাইড তো লাগবেই। যাইহোক ক্যেবে
উঠে পরলাম প্রথমেই গেলাম একটা মিউজিয়ামে। এই
মিউজিয়াম টা এখানকার সব থেকে প্রাচীনতম একটা
মিউজিয়াম। ভিতরে ডুকতেই মনে হলো আমরা যেন অন্য
এক জগতে প্রবেশ করেছি। এখানে এখানকার আদিবাসি
দের বিভিন্ন নিদর্শন, চিত্রফলক, ও নানা ধরনের
আবিষ্কার করা যন্ত্র। সত্যি এইসব কিছু মন মুগ্ধকর। একটা
বিশাল পেইন্টিং দেখতে পেলাম মিউজিয়ামের ওয়ালে,
একজন লোক কেমন যেন অদ্ভুত পোশাক পরে একটা
ঘোড়ার উপর বসে আছেন তার হাতে বড় একটা বন্দুক।
মিউজিয়ামের পরিচারক বললেন, ইনিই নাকি এই দেশের
উদ্ভাবন করেন। কিছু পুরোনো গ্রন্থপঞ্জী ও দেখতে
পেলাম সেগুলা কাচের আলমারি তে সুসজ্জিত ভাবে
রাখা আছে। আর কিছুক্ষন ঘুরে মিউজিয়াম থেকে
বেরিয়ে পড়লাম। আমি ভিতরে থাকা কয়েকটা আজব
জিনিসের ছবি ও তুলেছি। তারপর ক্যেব ড্রাইবার
আমাদের একটা পার্কে সামনে নিয়ে গেল। এই পার্কের
ব্যেপারে আর কি বলবো, বাংলাদেশে মনে হয়না কেউ
কোনোদিন এমন পার্ক বানাতে পারবে। পার্ক টার
চারদিকে পাহাড়ের মতো আর মাঝখান টায় এই পার্ক।
পাহাড় গুলা কৃত্রিম হলেও দেখে বুঝার উপায় নেই এগুলা
আসল পাহাড় নয়। এই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে একটা গুহা
দেখা যাচ্ছে। পানি পথের গুহা, অনেকেই বোটে করে
সেই পানি পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার
চাপাচাপিতে রুপাঞ্জন ও একটা বোট নিল। আমরা বোট
নিয়ে গুহার ভিতরে প্রবেশ করলাম গুহার ভিতরে রাতের
মতোই অন্ধকার ও নির্জন কিন্তু বাহারি রকমের হাল্কা
আলোক রশ্মির ফলে গুহা টা অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আর
এর পাশাপাশি গুহার ভিতরেই কোথাও যেন একটা
রোমান্টিক ইংলিস গান বাজছে। আমার মন টা গানের
সুরেই হারিয়ে গেছে। আমি চোখ বন্ধ করে এই সৌন্দর্য
উপভোগ করছি । রুপাঞ্জনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,
বেচারা মন খারাপ করে বোট চালাচ্ছে!
আমি তাকাতেই বলে উঠল,
:– সিঙ্গাপুরের প্রেমে পড়ে আমার বউ আমাকেই ভুলে
গেছে।
,
আমি ওনার গাল টেনে বললাম,
;– ওলে আমার বর টা!! দিনটা সিঙ্গাপুরে জন্য আর রাত
টা আপনার জন্য!!
,
:– হুম।
,
প্রায় ১৫ মিনিট পর গুহা টা শেষ হলো। আমরা গুহা থেকে
বেরিয়ে একটা লেকের ধারে চলে এলাম। সেখানে একটা
রেস্টুরেন্ট দেখতেই আমার পেটের ইঁদুর গুলা পেটে লাথি
মেরে জানালো যে তাদের খাবার চাই। পরে মনে পড়ল
রুপাঞ্জন ও তো সকাল থেকে না খেয়েই আছে। আমি ও
না কি যে করি। ওর ও নিশ্চই খুব ক্ষিদে পেয়েছে। আমি
ওনার কাছে গিয়ে বলি,
:– চলুন এবার ব্রেকফাস্ট করে নেই!
,
:– এখন লাঞ্চের টাইম হয়ে গেছে মিসেস রুপশা খান!
,
:– অহহ সরি। আসলে ঘুরতে ঘুরতে সময়ের খেয়াল ছিলনা।
,
:– হুম চলো এবার!
,
আমরা রেস্টুরেন্টে ডুকে একটা টেবিলে বসে পড়লাম।
আমি মেনু কার্ড দেখে দুইটো ফ্রাইড রাইস, দুইটো গ্রীল,
আর দুইটো সফট ড্রিংক্স অর্ডার করলাম। কিছুক্ষন পর
খাবার চলে এলে আমি খাওয়া শুরু করে দিলাম। কিন্তু
সামনে তাকিয়ে দেখলাম রুপাঞ্জন খাচ্ছেনা। আমি
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আমাকে ইশারা করে
একটা বিদেশি কাপল দেখিয়ে দিল। দেখলাম ওরা একে
অন্যকে জড়িয়ে ধরে খাইয়ে দিচ্ছে। ওহহ বুঝলাম ওনার
একটু রোমান্টিক হতে ইচ্ছা করছে আচ্ছা কি আর করার!
আমারই তো বর। ওনার ইচ্ছা গুলা আমাকেই পুরন করতে
হবে। আমি ওনার পাশে গিয়ে বসলাম আর ওনাকে নিজের
হাতে খাওয়াতে লাগলাম। আর উনি আমার দিকে একমনে
তাকিয়ে আছেন। তারপর একি ভাবে আমাকে খাইয়ে
দিলেন। খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে
পড়লাম। লেকের পাড়ে আরো কিছুক্ষন ঘুরে আবার ক্যবে
উঠে বসলাম। এইভাবে প্রায় রাত ১০ টার দিকে হোটেলে
ফিরে এলাম। উফফ! আজ সত্যি অনেক আনন্দে দিন
কেটেছে। খুবই ভালো লাগছে আমার। আর এইসব হয়েছে
আমার লক্ষ্মী বর টার জন্য!!
ফ্রেশ হয়ে নিলাম আমরা। তারপর ডিনার করেই শুয়ে
পড়লাম। কারন কাল সকালে আবার ঘুরতে বের হতে হবে।
হাল্কা শীত লাগছে তাই আমি আমার বরের বুকে গুটিশুটি
মেরে ঘুমিয়ে পড়লাম। এই গরমের কাছে রুম হিটারের গরম
কিছুই না।
আবার যথা নিয়মে সকাল হলো। কিন্তু আজ লেইটে
উঠিনি। তাই ধীরে সুস্থে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা অর্ডার করে
রুপাঞ্জন করে জাগালাম। উনি উঠতে চাইছিলেন না
কিন্তু জোর করে টেনে তুলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলাম।
আমি ততক্ষনে টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে নিলাম। উনি
ফ্রেশ হয়ে এলে দুজনে নাস্তা করে নিলাম তারপর আগের
দিনের মতো বেরিয়ে পড়লাম। আজ আমরা সমুদ্রে ঘুরতে
গেলাম। আমি পানিতে নেমে অনেকগুলা ঝিনুক কুড়ালাম,
পাগল টা ওইভাবেই কয়েকটা ছবি তুলে নিল আমার।
সমুদ্রে পানিতে অনেক মজা করলাম যদিও ঠান্ডা
লাগছিল কিন্তু মাথার উপর সুর্য মামা থাকায় আমি
ব্যেপার টা এতো গায়ে মাখছিনা। রুপাঞ্জন আমায়
টেনে পানি থেকে তুলে আনল। আর উঠিয়ে বকা দিতে
লাগল, আমার ঠান্ডা লেগে যাবে বলে সাথে সাথে
একটা টাওয়েল কিনে আমার গা মুছে দিতে লাগল। আমি
অবাক হয়ে দেখছি অকে কতটা ভালোবাসে ও আমাকে।
আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবতি।
একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে ডুকতেই আমার হাচি শুরু
হলো। একের পর এক হাচির জালায় ঠিক মতো খেতে ও
পারিনি। রুপাঞ্জনের তো সেকি রাগ! আমায় এক দমক
দিয়ে বলল আজকে আর ঘুরা হবেনা হোটেলে ফিরে ড়েস্ট
নিতে হবে। কি আর করার ওর কথা মতো হোটেল এ চলে
এলাম। ও এসেই আমাকে একগাদা বকা দিতে দিতে
বিছানায় শুয়ে দিল তারপর কম্বল পরিয়ে দিয়ে বলল,
:– আমি মেডিসিন আনতে যাচ্ছি ততক্ষন পর্যন্ত বিছানা
থেকে এক পা ও নড়বানা। কিছু লাগলে রুম সার্ভিস ডেকে
নিও ওকে??
,
এই বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। আমি কিছুক্ষন শুয়ে
থাকলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি। ঘুম থেকে
উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে এলো। তাহলে রুপাঞ্জন এখন ও
এলেন না কেন?? ফোন দিতে যাবো দেখলাম ফোন টা
ঘরে রেখে গেছে। দুর কি যে করে না লোক টা! দেখতে
দেখতে রাত হয়ে গেল। আমার চিন্তা বেড়েই চলছে,
কোথায় চলে গেলেন উনি?? এখন ও ফিরছেন না কেন?
আমি কি করে আমার অস্থিরতা কমাবো। এখানে কাকে
জিজ্ঞাস করবো ওনার কথা। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৯
টা বেজে গেছে। মনে হচ্ছে দম
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তখন দরজা খোলার শব্দ হলো, হ্যা!
আমার রুপাঞ্জন তো!! আমার দেহে যেন প্রান ফিরে
এলো। আমি দৌড়ে গিয়ে ওনাকে ঝাপটে ধরলাম আর
কান্না শুরু করে দিলাম। আমি কাদতে কাদতে বলছি,
:– কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি?? আপনি জানেনা
আপনার জন্য আমার কতো চিন্তা হয়, কত অস্থির লাগে।
আর একটু হলে মরেই যেতাম,,,
,
:– এই মেয়ে চুপ করো! যখন নিজে ওইভাবে অসুস্থ হয়ে
গেলে আমার চিন্তা হয়নি হুম??
,
আমি অশ্রুভরা চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
:– আরর কখন ও হবেনা বললাম তো!!
,
উনি মুচকি হেসে আমার হাত ধরে আয়নার সামনে নিয়ে
গেলেন। তারপর আমার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে পকেট
থেকে একটা প্যেন্ডেন বের করে পরিয়ে দিলেন।
প্যেন্ডেন টার উপর যেন চোখ আটকে গেল মুক্তোর মতো
একটা ঝিনুক তারপর ডাইমন্ড দিয়ে “R” লিখা! দেখতে
কতটা সুন্দর লাগছে বুঝানো যাবেনা।
উনি আমার ঘাড়ের উপর মাথা রেখে বললেন,
:– আমার সুন্দর বউ টার জন্য, সুন্দর জিনিস টা আনতে এতো
লেইট হলো বুঝতে পারলে???
,
,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here