#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ৭
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
ছাদে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে রিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে বর্ষা । সেদিনের পর কেটে গেছে এক মাস । বর্ষা কফির কাপে চুমুক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো সেদিনের ঘটনা ।
সেদিন রাতে বর্ষা অশ্রুসিক্ত চোখে বারান্দায় চলে গিয়েছিল। রিয়ান বিছানার এক কোনে ঝিম মেরে বসে অনেকক্ষণণ কি জেনো ভাবলো । তারপর বিছানা থেকে উঠে চলে গেল বারান্দায় ।
বর্ষা বারান্দায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে । রিয়ান বারান্দায় গিয়ে অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বলল,
” সরি !
বর্ষা একবার মুখ তুলে তাকালো । তারপর আবার ও নির্বিকার ভাবে বসে রইল । রিয়ান গিয়ে ধপাস করে বর্ষার পাশে বসল । রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,
” তোমার জায়গায় নিলার থাকার কথা ছিল । আমাদের দুজনের কত স্বপ্ন ছিল । একসাথে সারাজীবন বেঁচে থাকার প্রতিঙ্গা করেছিলাম কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমাকে একা করে নিলা চলে গেল । আম্মু আমাকে কসম দিয়ে বিয়ে দিলো তোমার সাথে । তুমি আমার বিয়ে করা বউ কথাটা ভাবতেই আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠে ।
রিয়ানের কথার মাঝে বর্ষা ছলছল চোখে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমি ও জানি আপনি নিলা আপুকে কতটা ভালোবাসেন । আমি তো ইচ্ছে করে বিয়ে করতে চাই নি । আমাকে ও জোর করে বিয়ে দিয়েছে । এখানে আমার দোষটা কি বলবেন ?
রিয়ান মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” তোমার কোনো দোষ নেই । আমরা দুজনই পরিস্থিতির শিকার । আমি একটু বাড়াবাড়ি করে তোমার সাথে অকারনে রাগ দেখাই । যেখানে তুমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
রিয়ান আর বর্ষা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকল । বর্ষা হঠাৎ রিয়ানের দিকে মুখ করে বলল ,
” স্ত্রী হিসেবে মানতে নাই পারেন । বন্ধু তো মানতেই পারবেন।
রিয়ান বর্ষার দিকে তাকিয়ে হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল ,
” অবশ্যই।
সেদিন থেকে রিয়ান বর্ষার সাথে রাগ দেখায় না । সবসময় বন্ধুসুলভ আচরণ করে।
” আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবা হচ্ছে ?
রিয়ানের প্রশ্নে বর্ষা অতীত থেকে ফিরে এলো । তারপর রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” আমার আর আকাশের মধ্যে কিছু গোপন বোঝাপড়া হচ্ছে । আপনাকে তা বলা যাবে না ।
রিয়ান আয়েশী ভঙ্গিতে বলল,
” ওকে বলো না । শুভ নিচে এসেছে যাও দেখা করে এসো ।
বর্ষা রিয়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে এক ছুটে নিচে যাচ্ছিল। তখন তিন্নির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তিন্নি পথ আটকে বলল ,
” কিরে এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন ?
বর্ষা চোখ টিপ দিয়ে বলল ,
” তোর ক্রাশের সাথে দেখা করার জন্য ।
বর্ষা এখানে না দাঁড়িয়ে নিচে চলে গেল । সোফায় বসে মোবাইল টিপছে শুভ । তখন বর্ষা শুভর কাছে এসে বলল ,
” কেমন আছিস ভাইয়া ?
শুভ তার আদরের বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভালো বোন , তুই কেমন আছিস ?
” ভালো ।
দুজনের কথার মাঝে রিয়ান এসে শুভর পাশে বসল । রিয়ানের পিছু পিছু শুভকে এক ঝলক দেখার আশায় তিন্নিও নিচে আসলো ।
শুভ আড়চোখে একবার তিন্নির দিকে তাকিয়ে রিয়ানকে বলল ,
” রিয়ান , আমি নাকি দেখতে হেব্বি হয়েছি ?
কথাটা বলে শুভ আড়চোখে তিন্নির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো । রিয়ান আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইল। তিন্নি শুভর কথা বলার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে দৌড়ে উপরে চলে গেল । তিন্নি চলে যেতেই বর্ষা হেসে উঠলো ।
———————-
রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা । রিয়ান রুমে ল্যাপটব দিয়ে কাজ করছে । বর্ষার এখন ঘুম আসছিলো না তাই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। তখনই বর্ষার ফোনে মেসেজ আসলো । বর্ষা মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে । তাতে লেখা ,
” এতো রাতে বারান্দায় কি করছো বর্ষামনি ?
মেসেজটা পড়ে বর্ষার প্রথমেই রাতুলের কথা মাথায় এলো । নিচে তাকিয়ে ল্যামপোস্টের আলোয় রাতুলকে দেখতে পেলো । পাশেই একটা বাইক দাড় করানো । বর্ষা রিপ্লাই দিলো ,
” আপনি এখানে কি করছেন ?
রাতুল বর্ষার মেসেজটা দেখলো না । কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাইক নিয়ে চলে গেল !
#চলবে