#আমি_সেই_তনু
#পঞ্চম_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
রনি: আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে যেতে এসেছি….
লতিফা: সাহস কি করে হয় তোমার এই কথা বলার!?
এতো বছর পর এসেছে মেয়ে কে ফিরিয়ে নিতে, কোথায় ছিল এতদিন বাবার ভালোবাসা!? আমার বোন টা কে এক কাপড়ে যখন বের করে দিয়েছিলে কোথায় ছিল এই ভালোবাসা!? আজ এত বছর পর এসেছো মেয়ের দাবি নিয়ে, বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে এখনই!!
চেঁচামেচি শুনে আকাশ উঠে এলো,
আকাশ কি হয়েছে মা?
লতিফা দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো হঠাৎ রনি কে দেখে আকাশের যেনো রাগে ঘিলু টগবক করছে তবুও নিজেকে সংবরণ করলো।
আকাশ: কি চাই?
রনি: আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে যেতে এসেছি!
একশ রনির শার্ট এর কলার ধরে একটু উচু করে বললো how dare you!? নেহাত আপনি তনুর জন্মদাতা নইলে আপনার শরীর এর একটা টুকরো ও অক্ষত থাকতো না! বলে ই ছেড়ে দিলো।
রনির যেনো দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল প্রায় , হাফ ছেড়ে আবার বলতে শুরু করলো…. আচ্ছা আমার মেয়ে কে ডাকো আমি ওর মুখে শুনতে ভাই ও যাবে কিনা।
লতিফা তনু কে ডেকে আনলো।
আকাশ: তনু এই লোক টা তোকে নিতে এসেছে তুই জাবি?
তনু খুব ছোট বেলা নিজের বাড়ি ছেড়ে আসলে ও চিনতে ভুল হলো না লোক টাকে। তনু একবার আকাশের দিকে একবার লতিফার দিকে আর একবার রনির দিকে তাকাচ্ছে ! আকস্মিক ভাবে তনু দেখলো রনি তনুর পায়ের কাছে এসে বলছে, আমায় ক্ষমা করে দে মা আমার যে বড়ো ভুল হয়ে গেছে ।
তনু: কথা টা ১১বছর আগে ভাবা উচিত ছিল বাবা!
অনুকে অবাক করে দিয়ে আকাশ বলে উঠলো, তুই যদি যেতে চাস যেতে পারিস।
তনুর চোখ গুলো অশ্রুসিক্ত হয়ে যাচ্ছে.,, তনু লতিফা কে বললো, খালামনি তুমিও কি তাই চাও!?
লতিফা কিছু বলতে যাবে কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো! তনু লতিফার নিরবতা দেখে কান্না করে দিয়ে বললো আমি যাবো বাবা!
রনির মুখে খুশির ছাপ স্পষ্ট। তনু জমা কাপড় ব্যাগ এ রাখতে রাখতে ভাবছে যাদের এতদিন আপন ভেবেছি তারা কি করে এত সহজে আমাকে যেতে দিচ্ছে!? আকাশ ভাইয়া এটা কিভাবে পারলো আমার সাথে ভাবছে আর সমানে চোখের পানি পড়ছে!
যাওয়ার সময় একবার ঘরটায় চোখ বুলিয়ে , তার পর বললো একবার লতিফার দিকে আর একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, আসি?
করো মুখে কোনো কথা না দেখে তনু বেরিয়ে গেলো।
সারা রাস্তা কেঁদেছে তনু, কিন্তু একটু আগে রনি যেমন ক্ষমা চেয়েছিল, তনু এত কদছে তবু তাকে সান্তনা দিচ্ছে না!! যদিও বিষয় টা তনুকে ভাবাচ্ছে কিন্তু কিছু বললো না।
বাসায় পৌছতে খুব বেশি সময় লাগে নি , তনু বাসায় ঢুকে দেখল অনেক গুলো আধা বয়সী লোক বসা আর একটা মহিলা অনেক সেজেগুজে আছে তনুর মনে আছে এই মুখ টা , এটা যে তনুর সত মা।
মহিলা টা তনু কে দেখে বললো, বাহ রনি তোমার মেয়ে তো বহুত মিষ্টি দেখতে আছে।
তনুর খুব অসস্তি হচ্ছে আধা বয়সী লোক গুলো কিভাবে যেনো তাকাচ্ছিলো তনুর দিকে! তনু এখন আর চুপ থাকতে পারলো না, বাবা আমি বিশ্রাম নিবো (তনু)
মোহিনী তনুর সত মা বলে উঠলো, আমার সাথে আসো।
তনু কে একটা রুম দেওয়া হলো, তনু একটু একা হয়ে শান্তি পাচ্ছে। আকাশ ভাইয়ার কথা মনে পড়তে ই কান্না পাচ্ছে। কেনো কিসের মায়ায় তনু কাদঁছে? ভাইয়া আর খালামনি কে ছেড়ে এসেছে তাই? নাকি অন্য কোনো মায়া? ভাবতে ভাবতে তনুর মনে পড়লো আচ্ছা ওই লোক গুলো করা!!
তনু একটু উকি দিয়ে দেখলো একটা লোক তনুর বাবা কে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিচ্ছে আর বলছে বেটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কথা টা শুনতে ই তনুর কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে…. কী বিপদে পড়তে যাচ্ছে তনু!!
________
আকাশ আজ সকালে তনু যাওয়ার পর বেরিয়েছে আর বাসায় ফেরে নি! লতিফার মণ খুব খারাপ কিন্তু প্রকাশ করছে না, কারণ আকাশ দের বাসায় প্রীতি আর ওর বাবা এসেছে। তনুর মা তাদের সাথে গল্পঃ করছে ।
__
__
বিকাল হয়ে এসেছে
তনু গোসল শেষে বের হয়ে চুল ঝরছিল হঠাৎ তনু দেখলো, মোহিনী ওর মাথায় একটা বাড়ি দিলো আর সাথে সাথে তনু অজ্ঞান হয়ে গেছে!
তনুর যখন চোখ খুললো তখন সে ঘরে নেই, একটা কেমন সাজানো গোছানো রুম,তনুর হাত পা বাঁধা কপালে প্রচন্ড ব্যাথা! তনু নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু তনু পারলো না।
হঠাৎ সেই লোক তার প্রবেশ, তনু দেখে ভয়ে মনে মনে শুধু আকাশ কে ডাকছে! আজ অভিমান করে চলে না আসলে এমন টা হতো না, কোথায় আপনি আকাশ ভাইয়া আমাকে বাঁচান!!
তনু: কে আপনি?
ব্যাক্তি: তোমায় আমার খুব পছন্দ হয়েছে ফুলপরী, বিকেলে ই তোমায় নিয়ে বিদেশ চলে যাবো , তনুর থুতনি ধরে বললো ব্যাক্তি টি।
হঠাৎ তনুর বাবার প্রবেশ…. রনি বলল, এই লোক টা খুব ভালো আছে তোকে অনেক ভালো রাখবে বুঝলি তোকে অনেক পছন্দ করেছে।
ব্যাক্তি: অনেক ভালোবাসা দিব পাখি হা হা হা
তনু ওর বাবার দিকে তাকিয়ে শুধু বলছে,,, কি করে পারলে বাবা ? আমি তো তোমার ই মেয়ে, কিভাবে তুমি নিজের মেয়ে কে অন্যের কাছে বেচেঁ দিতে পারো!?
রনি তনুর গালে একটা জোরে থাপ্পর মে*রে বললো, আমি সব পারি। টাকার জন্য আমি তোকে মেরে ও দিতে পারি।
ব্যাক্তি: নেহি নেহি , রনি সাহেব আমি আমার ফুল কে নিয়ে যাবো যত দিন ভালো লাগে ভালোবাসা দিবো তার পর না হয় মারার কথা ভাবা যাবে হা হা হা
তনু আর নিতে পারছে না চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে…
হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে গুলির আওয়াজ শুনলো তনু , ঝাপসা চোখে সব বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
আকাশ পুলিশ নিয়ে এসেছে, ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আকাশ সোজা রনি কে গিয়ে মুখে ঘুষি মারে।
আকাশ: আমি জানতাম তুই এমন কিছু ঘটাবি,তাই তনু কে এখানে আসার সম্মতি দিয়ে ছিলাম । প্রমাণের অভাবে তোকে ১১বছর আগে শাস্তি দিতে পারি নি আজ দেব, বলে ই এলোপাথাড়ি মে*রে যাচ্ছে রনি কে।
পুলিশ: আকাশ আইন নিজের হাতে নিবেন না, আমাদের দেখতে দিন!
তনু শুধু আকাশ ভাইয়া বলে ই জ্ঞান হারালো!
______
লতিফার আজ মণ খারাপ ছিল বলে প্রীতি কে আর বাসায় যেতে দেয় নি প্রীতি ও সুযোগ বুঝে থেকে গেলো। যে করে ই হোক আকাশ কে পটানো তার এক মাত্র লক্ষ।
___
আকাশ রনি কে ছেড়ে দিল, পুলিশ ওদের কে ধরছে, আকাশ তনু কে দেখে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। Im sorry tonu! আমি তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম, এ ছাড়া আমার এর উপায় ছিল না রে বলে আকাশ তনুর চোখে চুমু খেলো।
তনু কে পাজকলা করে গাড়িতে এনে রাখলো।
বাসায় কলিংবেল এর আওয়াজ শুনে প্রীতি যেনো আনন্দে আত্নহারা! দরজা খুলে লতিফা ঘাবড়ে গেল ।
লতিফা: কি হয়েছে আমার তনুর?
আকাশ: তনু কে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে, মা আগে সরো যেতে দাউ পরে বলছি।
লতিফা সরে দাঁড়ালো, আকাশ তনুকে নিয়ে সোজা তনুর রুম এ চলে গেলো।
প্রীতি এসব দেখে যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না! কে এই মেয়ে !? কাকে আমার আকাশ কোলে নিয়ে এসেছে!
লতিফা সমানে কেঁদে যাচ্ছে…
আকাশ তনুর মাথায় ওষুধ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।
কিছুক্ষন পর চোখ খুলেছে তনু, চোখ খুলে আকাশ ভাইয়া কে দেখে কিছু না ভেবে ই বাচ্চা মেয়ের মত জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো….
আকাশের চক্ষু শীতল,শুধু আলতো করে তনু কে ধরে রেখেছে।
লতিফা কিছু বলতে যাবে, তখন আকাশ ইশারা করে বললো কাদতে দাউ।
প্রীতির যেনো গা জ্বলে যাচ্ছে!!
তনু: তুমি কেনো আমায় চলে যেতে বললে আকাশ ভাইয়া? আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, তুমি খুব খারাপ!! খুব খারাপ!! এসব বলে ই চলেছে তনু…
চলবে..?