#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৪
#লেখক_দিগন্ত
নতুন একটি দিন শুরু হয়।বৃষ্টি আজ বেশ সকাল সকালই ঘুম থেকে ওঠে।তারপর সুন্দরভাবে সেজে চলে যায় রান্নাঘরে।
বৃষ্টিকে এভাবে সেজে রান্নাঘরে আসতে দেখে আরশি ঠাট্টা করে বলে,
-“তুমি রান্নাঘরে এরকম সেজে এসেছ কেন? তোমাকে নতুন বউ কম নায়িকা বেশি মনে হচ্ছে।যতই সাজো সেই তো রান্নাঘরের আগুনে পু’ড়তেই হবে।”
বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে,
-“তুমিও তো সাজতে পারো ভাবী।সাজলে তোমাকেও সুন্দর লাগবে।”
বৃষ্টির এমন কথায় আরশি আর কিছু বলতে পারেনা।কোথায় ভেবেছিল মেয়েটাকে জ’ব্দ করবে তা না এই মেয়েই তাকে কথার জালে ফাসিয়ে দিল।
বৃষ্টি আর কথা না বলে আরশির হাতে হাতে সাহায্য করে দিতে থাকে।
__________________
মর্জিনা বেগমের সাথে ফোনে কথা বলছিল বৃষ্টি।মর্জিনা বেগম বৃষ্টিকে বলে,
-“আজ তুই তোর স্বামীকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসবি।”
বৃষ্টি আমতা আমতা করে বলে,
-“ওনার তো অনেক কাজ থাকতে পারে দাদি।আমি এখন কিভাবে ওনাকে যাওয়ার কথা বলব?”
-“আমি কোন কথা শুনতে চাই না।তোর বাবাকে বাজার করতে পাঠিয়ে দিয়েছি।তোর খালা আজ এসেছে।তোর বিয়েতে তো আসতে পারেনি, হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেল।বলেছে নিজের হাতে তোদের রান্না করে খাওয়াবে।তোর খালা তোকে কত ভালোবাসে।তার এই আবদার তুই পূরণ করবি না?”
খালার কথাটা শুনেই বৃষ্টির কেমন লাগতে শুরু করে।মায়ের মৃত্যুর পর খালার কাছ থেকেই তো মায়ের ভালোবাসা পেয়েছিল।এতদিন পর খালা এসেছে তাও আবার এমন আবদার নিয়ে।বৃষ্টি তাই আর না করতে পারে না।সে মর্জিনা বেগমকে বলে,
-“আচ্ছা দাদি।আমরা যাব।
সূর্য অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বাইরে যাচ্ছিল।বৃষ্টির কথা শুনে সূর্য তাকে বলে,
-“কোথায় যাওয়ার কথা বলছেন?”
বৃষ্টি তৎক্ষনাৎ ফোনটা কে*টে দিয়ে বলে,
-“দাদি আজ আমাকে আর আপনাকে আমাদেরও বাড়িতে যেতে বলেছে।আমার খালা এসেছে।”
সূর্য অজুহাত দেখিয়ে বলে,
-“আমার অনেক কাজ আছে।আমি যেতে পারব না।তাছাড়া আপনার বাড়িতে যাওয়ার কোন ইচ্ছেও আমার নেই।”
-“আমার কি খুব ইচ্ছে আছে নাকি আপনাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার? আমার আব্বুর এত কষ্ট করে উপার্জিত টাকা আপনাকে খাইয়ে ধ্বং*স করানোর।শুধুমাত্র খালার জন্যই রাজি হয়েছি।আমি আপনার কোন কথা শুনব না।আপনাকে যেতেই হবে।”
-“আমি যেতে পারব না।”
-“আপনাকে আমি নিয়ে যাবোই।এটা আমার চ্যালেঞ্জ।”
__________________
সূর্য বিকেলে অফিস থেকে ফিরে আসে।বৃষ্টি আবার সূর্যর সামনে এসে বলে,
-“আপনি কি যাবেন না?”
-“না।”
-“আচ্ছা বেশ।যাওয়ার দরকার নেই।এই নিন কফি খান।আরশি ভাবি অনেক সুন্দর কফি বানায় খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।”
সূর্য বৃষ্টির হাত থেকে কফি নিয়ে খেতে শুরু করে।বৃষ্টি সূর্যকে কফি খেতে দেখে মুচকি হাসে।মনে মনে বলে,
-“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কিভাবে বা*কাতে হয় সেটা আমার খুব ভালোভাবেই জানা আছে।আপনি যখন সোজা রাস্তায় যাবেন না তখন এভাবে বাকা রাস্তাতেই তো আপনাকে নিয়ে যেতে হবে।”
কফিটা খাওয়ার পর থেকে সূর্য দূর্বল অনুভব করতে থাকে।হঠাৎ করে তার খুব ঘুম পায়।সূর্যর ব্যাপারটা কেমন জানি লাগে।যেখানে কফি খেয়ে ঘুম উড়ে যাওয়ার কথা সেখানে কফি খেয়ে সূর্যর ঘুম পাচ্ছে! খুব বেশিক্ষণ জাগ্রত থাকতে পারে না সূর্য।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের জগতে প্রবেশ করে।
বৃষ্টি সূর্যকে ঘুমাতে দেখে বলে,
-“আমি সিদরাতুল মুনতাহা বৃষ্টি।আমি যা বলি তা করেই দেখাই।চলুন এখন নিজের সাময়িক শ্বশুরবাড়িতে।আপনিই বোধহয় ইতিহাসে প্রথম জামাই যে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বশুরবাড়ি যাবে।হি হি হি।”
বৃষ্টি সূর্যকে নিয়ে বাইরে চলে যায়।ভাগ্য ভালো তার শাশুড়ী আর আরশি এখন বাড়িতে নেই।নাহলে সূর্যকে এভাবে নিয়ে যেতে দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করত।বৃষ্টি সূর্যকে গাড়িতে তুলে নিজেও উঠে বসে।তারপর ড্রাইভারকে বলে ড্রাইভ করতে।
ঘন্টাখানেকের ব্যবধানে তারা পৌঁছে যায় বৃষ্টির বাবার বাড়িতে।বৃষ্টি সূর্যর মুখে কয়েক ফোটা পানি ছিটিয়ে বলে,
-“এই যে মিস্টার সূর্য উঠে পড়ুন আমরা চলে এসেছি।”
সূর্যর ঘুম ভেঙে যায়।আড়চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনি কফিতে কিছু মিশিয়েছিলেন নিশ্চয়ই? আর কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে?”
-“আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি।উঠুন এবার ভেতরে চলুন।”
-“কাজটা কিন্তু ঠিক করলেন না।আমি যাব না।”
-“আমি সবসময় ঠিক কাজই করি।আর কি বললেন যাবেন না? আপনি যদি না আসেন আমি কিন্তু তাহলে আপনার বাবাকে এক্ষুনি ফোন করে আপনার আর প্রিয়ার ব্যাপারে সব বলে দেব।”
-“সবসময় এত ব্ল্যাকমেইল করেন কেন?”
-“আপনি যদি বাধ্য ছেলের মতো আমার সব কথা শুনতেন তাহলে তো আমায় এমন করতে হতো না।যাইহোক এই নিন ধরুন এটা মিষ্টির প্যাকেট।প্রথমবার খালি হাতে তো যাওয়া যায়না।আপনার সম্মান নাই থাকতে পারে আমার আছে।আর শুনে রাখুন আমার পরিবারের কেউ যাতে আমাদের ব্যাপারে কিছু না জানে।আমরা এমনভাবে অভিনয় করব যেন আমাদের সুখী দম্পতি ভাবে।”
-“এসব অভিনয় করে কি হবে? একদিন তো সবাই সব সত্যটা জেনেই যাবে, যে আমরা কেউই এই সম্পর্কে খুশি নেই।আমরা সাময়িকভাবে বিবাহবন্ধ আবদ্ধ হয়েছি ঠিকই কিন্তু এই সম্পর্কটা তো চিরস্থায়ী নয়।”
-“আপনাকে সেসব ভাবতে হবে না।পরের ব্যাপারে পরে ভাবা যাবে।”
বৃষ্টি আর সূর্য একসাথে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।তাদের আসতে দেখে বরকত হোসেন খুবই আনন্দিত হন।তিনি এগিয়ে এসে বলেন,
-“তোমরা এসে গেছ।এসো ভেতরে এসো।”
মর্জিনা বেগম আর বৃষ্টির খালা লুবনা খাতুনও চলে আসে।বৃষ্টি তার খালাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।লুবনা খাতুন অভিমান করে বলেন,
-“ছোটবেলায় তো খুব খালা খালা করতি আর বড় হতেই খালাকে পর করে দিলি? তুই বিয়ে করে নিলি আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?”
বরকত হোসেন বলেন,
-“সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে কিছু বলার সময় বা সুযোগ কোনটাই পাইনি।আমরা তো আর জানতাম না তুমি এত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসবে।”
লুবনা খাতুন সূর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এই বুঝি তোর জামাই বৃষ্টি।”
বৃষ্টি হ্যাঁ বলে।লুবনা খাতুন তখন এগিয়ে এসে বলেন,
-“বাহ তোর জামাই তো বেশ হ্যান্ডসাম।তোমার নাম কি?”
-“সূর্য।”
-“খুব সুন্দর নাম।বৃষ্টির সাথে খুব ভালো মানিয়েছে।দোয়া করি তোমাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক।”
কথাটা শুনে সূর্য একবার আড়চোখে বৃষ্টির দিকে তাকায়।বৃষ্টির কোন ভাবান্তর নেই।সে তার দাদির সাথে গল্পে মজে আছে।
__________________
রাত ৮ টায় সবাই ডিনারের টেবিলে বসে পড়ে।সূর্য তেমন কিছু খাচ্ছিল না।লুবনা খাতুন সূর্যকে এভাবে কম খেতে দেখে বলে,
-“লজ্জা পাচ্ছো কেন সূর্য? তুমি এই বাড়ির নতুন জামাই।আজ যদি আপা বেঁচে থাকত তাহলে কত খুশি হতো।আপা অনেক সুন্দর রান্না করতে পারত জানো।আপার রান্না একবার যে খেত সেই মুগ্ধ হয়ে যেত।আমি তো বেশি ভালো রান্না করতে পারি না।তাই হয়তো তুমি তৃপ্তি করে খেতে পাচ্ছনা।”
সূর্য বলে,
-“না রান্না খুব সুন্দর হয়েছে।আমি তো বেশি খেতে পারিনা তাই….”
সূর্য কথা বলায় ব্যস্ত ছিল তখনই বৃষ্টি সূর্যর প্লেটে বেশি করে পোলায়,গোস্ত আর মাছ তুলে দিয়ে বলে,
-“রান্না খুব ভালো হয়েছে খালা।সূর্য একটু লাজুক তো।সূর্য খেয়ে নাও লজ্জা পেওনা।”
কথাটা যেন একটু হুম*কির সুরেই বলে বৃষ্টি।সূর্য ভয়ে ভয়ে সবটা খেয়ে নেয়।
বেশি খাওয়ার কারণে সূর্য ভালোভাবে নড়তেও পারছিল না।বৃষ্টি রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে সূর্য।বৃষ্টি ভিতরে এসে ভ্রু কুচকে বলে,
-“এভাবে শুয়ে আছেন কেন? আমি কোথায় থাকব?”
সূর্য কোন উত্তর দেয়না।বৃষ্টি তখন সূর্যকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সূর্যর ফোন বেজে ওঠে।প্রিয়ার ফোনকল।সূর্য ফোনটা রিসিভ করতেই প্রিয়া বলে,
-“তুমি কোথায় সূর্য? আমার তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে।প্লিজ তুমি চলে এসো।”
-“এত রাতে? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? ভুলে যেওনা আমি এখন বিবাহিত।”
প্রিয়া ন্যাকাকান্না করে বলে,
-“এখন নিজের বউকে পেয়ে আমায় ভুলে গেলে সূর্য? আমার যে তোমার খুব প্রয়োজন।”
সূর্য ফোনটা কে*টে যায়।ফোনটা স্পিকারে থাকায় বৃষ্টি সব শুনতে পেয়েছে।তাই সে সূর্যকে বলে,
-“কেমন বয়ফ্রেন্ড আপনি? আপনার গার্লফ্রেন্ডের সমস্যা হয়েছে আর আপনি বসে আছেন।”
-“তাহলে কি আমার এখন যাওয়া উচিৎ?”
-“হ্যাঁ অবশ্যই যাওয়া উচিৎ।চলুন আমি আপনাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।”
বৃষ্টির কথা শুনে সূর্যর অবাকের সীমা ছাড়িয়ে যায়।অন্য কোন মেয়ে হলে বোধহয় নিজের স্বামীকে এত রাতে কিছুতেই প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যেতে দিতনা।আর সেখানে বৃষ্টি নিযে তাকে যেতে বলছে।
সূর্য বৃষ্টির সাথে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি কিভাবে আপনাকে যেতে দিচ্ছি।আসলে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই আপনার উপর।আমি তো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় আছি।”
বৃষ্টির কথাটা শুনে সূর্যর কেন জানি খুব একটা ভালো লাগেনা।বৃষ্টি তাদের মেইন ডোর খুলতে যাবে তখনই পেছন থেকে কেউ বলে ওঠে,
-“এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
(চলবে)#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৫
#লেখক_দিগন্ত
সূর্য আর বৃষ্টি দুজনেই ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।মর্জিনা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে আছেন।
পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে বৃষ্টি বলে,
-“আমরা একটু বাইরে ঘুরতে যাচ্ছিলাম দাদি।”
-“এত রাতে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। যা ঘরে যা।”
বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগে সূর্য তাকে থামিয়ে বলে,
-“আচ্ছা দাদি আমরা ভেতরে যাচ্ছি।”
বৃষ্টি সূর্যর কথায় অবাক হয়।সূর্য বৃষ্টির হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায়।রুমে আসতেই বৃষ্টি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“আপনি চলে এলেন কেন? প্রিয়ার সাথে দেখা করবেন না?”
-“আপনার মাথা ঠিক আছে তো? আপনার দাদি যদি সন্দেহ করত তাহলে?”
-“আমি দাদিকে সামলে নিতে পারতাম।আপনি শুধু শুধু একটা মিথ্যা সম্পর্কের জন্য আপনার গার্লফ্রেন্ডকে কষ্ট দিলেন।”
-“প্রিয়ার সাথে আমি কথা বলে নেবো।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাচ্ছি।”
-“আপনি সোফায় থাকবেন?”
-“হুম।আপনি তো বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারেন না।”
বৃষ্টির কেন জানিনা সূর্যের এই ব্যবহারটা খুব ভালো লেগে যায়।পরে নিজেকেই গালি দেয় সে।সূর্যকে নিয়ে ভাবার এত কি আছে?
দরজার বাইরে দাড়িয়ে তাদের সব কথা শুনে ফেলেন মর্জিনা বেগম।সব শুনে তিনি হতবাক হয়ে বলেন,
-“তাহলে কি বৃষ্টির সাথে ওর স্বামীর সম্পর্ক ভালো নয়।এসব কি হচ্ছে।বৃষ্টির সাথে আমার কথা বলতেই হবে।”
__________
পরের দিন সকালে বৃষ্টিকে নিজের রুমে ডেকে পাঠান মর্জিনা বেগম।বৃষ্টি রুমে আসতেই মর্জিনা বেগম বলতে থাকেন,
-“বিয়েকে কি তুই ছেলেখেলা ভেবেছিস? কি শুনলাম এসব আমি? নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের হাতে তুলে দিতে চাস।ছি!”
-“দাদি আগে আমার কথাটা শোন।সূর্য আমাকে না অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে।এই সম্পর্কে আমরা কেউই ভালো থাকব না তাই…”
-“চুপ আর একটা কথাও বলবি না।তুই তো চেষ্টা করতে পারিস এই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য।মেয়েদের তো সংসার টিকিয়ে রাখা দায়িত্ব।”
-“কেন দাদি? মেয়েদের কি আত্মসম্মান থাকতে নেই? একজন আমায় বউ হিসেবে মেনে নেবেনা আর আমি তার বউয়ের মর্যাদা পাওয়ার জন্য নি’
*র্লজ্জের মতো পরে থাকব।কেন সবসময় মেয়েদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে? আমি অন্য মেয়েদের মতো নই।আমাকে যে চায়না আমি জোর করে তাকে ছিনিয়ে নিতে শিখিনি।যে আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে আমি তারই হবো।তাই আমি যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হবে।প্রয়োজনে সারাজীবন একা থাকব তবুও জোর করে কারো জীবনে যায়গা নেওয়ার চেষ্টা করব না।”
-“তুই একটু ভেবে দেখ…”
-“আমার যা ভাবার ভেবে নিয়েছি দাদি।তুমি বাবাকে এইসব কিছু বলো না।আমি আসছি।”
বৃষ্টি কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মর্জিনা বেগম ভাবতে থাকেন এখন কি করা যায়।
বৃষ্টি আর সূর্য বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।বৃষ্টির খালা লুবনা খাতুন বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
-“ভালো থাকিস বৃষ্টি।আমার কথা মনে পড়লে আমাকে ফোন করিস।আর সময় সুযোগ পেলে তোর স্বামীকে একটু নিউইয়র্কে আসিস আমার সাথে দেখা করতে।”
-“যাবো খালামনি।তোমার কাছে তো আমাকে একদিন যেতেই হবে।”
মর্জিনা বেগম সূর্যকে বলেন,
-“বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক।এই সম্পর্কর গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করো।আর আমার অবুঝ নাতনিটাকে একটু দেখে রেখো।স্বামী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করো।”
সূর্য তার কথাগুলো ঠিক ভালোভাবে বুঝতে না পারলেও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
সূর্য বৃষ্টিকে নিয়ে চলে আসে নিজের বাড়ির সামনে।বৃষ্টিকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় অফিসে।
______
বৃষ্টি বাড়িতে ঢুকতেই আরশির রুম থেকে চিৎকারের শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে চলে যায় তাদের রুমের দিকে।
আরশির সাথে তার স্বামী সোহেল ঝগড়া করছে।বৃষ্টি শুনতে পায় সোহেলের কথার কিছু অংশ।সোহেল আরশির দিকে রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে বলছে,
-“কি ভেবেছ তুমি আমি কিছু জানি না? আমার অবর্তমানে তুমি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলো।আমাকে ঠকাচ্ছো তুমি।আমি অফিসের কাজের জন্য সবসময় ব্যস্ত থাকি আর তুমি এই সুযোগে অন্য ছেলেদের সাথে প্রেম করো।তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করাই আমার উচিৎ হয়নি।শুধুমাত্র আম্মুর জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।নাহলে তোমার মতো মেয়ের কোন যোগ্যতা নেই আমার বউ হওয়ার।”
আরশি সোহেলের কথাগুলো শুনে হাসতে থাকে।আরশির হাসি সোহেলকে আরো রাগিয়ে দেয়।আরশি হাসি থামিয়ে বলে,
-“তোমার আমাকে যে কখনো পছন্দ ছিলনা সেটা আমি ভালো করেই জানি সোহেল।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সেই ছোটবেলা থেকে তোমাকেই ভালোবাসি।অন্য কারো আমি ভাবিনি সোহেল।ঠকিয়েছ তুমি আমায়।আমি তোমায় ভালোবাসি জন্য এতদিন চুপ ছিলাম কিন্তু আজ তোমার এরকম ব্যবহারে বলতে বাধ্য হচ্ছি, তুমি বিয়ের পরেও আমাকে লুকিয়ে অন্য আরো অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলে। আমি সব জেনেও চুপ ছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম তুমি একদিন বদলে যাবে।কিন্তু আমারই দো*ষ সব আমি ভুল ভেবেছিলাম।তুমি শোধরাও নি।আর আজ তুমি আমায় ব্লেইম করছো?”
-“আমার সামনে বেশি নাটক করো না।অয়ন কে? যার সাথে প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলো।”
-“অয়ন ছেলেটা কলেজ থেকে আমায় বিরক্ত করতো।আমায় ভালোবাসার কথা বলতো।আমি কখনোই ওকে পাত্তা দেইনি।ওর ভয়েই বাবা এত তাড়াতাড়ি আমায় বিয়ে দিয়ে দেয়।এতদিন সব ঠিক ছিল না জানি এক সপ্তাহ থেকে কোথা থেকে ও আমার নাম্বার পেল।দিনরাত কল করে আমায় বিরক্ত করে।আমি তোমাকে বলেও ছিলাম কিন্তু তুমি…”
-“আমি কিছু বুঝিনা ভেবেছ।এসব মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই।আমি ডিশিশন নিয়ে ফেলেছি তোমায় ডিভোর্স দেব।”
আরশি অসহায় কন্ঠে বলে,
-“সোহেল…”
সোহেল আর কোন কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।সোহেল চলে যাওয়ার পর বৃষ্টি রুমের ভেতরে আসে।আরশি অনবরত কেঁদেই চলেছে।
বৃষ্টি এসে আরশির পাশে বসে।আরশির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,
-“কার জন্য এভাবে কাঁদছ তুমি? যে তোমাকে একটুও বিশ্বাস করে না, তোমাকে শুধু অবহেলা করে।তার জন্য কেঁদে এভাবে নিজের চোখের জল ন*ষ্ট করো না।”
আরশি বিব্রতবোধ করে।বৃষ্টি সেটা বুঝতে পেরে বলে,
-“আমি বাইরে দাড়িয়ে থেকে তোমাদের কথা শুনেছি।জানি এভাবে অন্যদের কথা শোনা ঠিক না।কিন্তু সবসময় এত নিয়ম মানলে চলে না।”
আরশি বৃষ্টিকে ইতস্তত হয়ে বলে,
-“তুমি যা শুনেছ প্লিজ কাউকে বলোনা।সবাই এসব জানলে সোহেলকে কথা শোনাবে।”
-“যে তোমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করে তুমি তার কথা ভাবছ?”
-“হ্যাঁ ভাবছি।কারণ খুব ভালোবাসি যে তাকে।”
-“ভালোবাসায় অন্ধ হলে চলবে না।অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানতে হয়।মনে রেখো অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহ্য করে দুজনেই সমান অপরাধী।আর একটা কথা জানো আমরা মেয়েরা সবসময় এত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি জন্যই সবাই এত সহজে আমাদের কষ্ট দিতে পারে।শক্ত হওয়ার চেষ্টা করো।এত নরম হলে টিকে থাকা যায়না।”
-“তোমার কথাগুলো শুনে ভালো লাগল বৃষ্টি।আমি তোমাকে ভুল ভেবেছিলাম।তুমি সত্যি অন্যরকম।তোমার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।”
আরশির কথার বিপরীতে বৃষ্টি শুধু একটু মুচকি হাসে।
তন্মধ্যে সোহেলের চিৎকার তাদের কানে ভেসে আসে।সোহেল অশ্রব্য ভাষায় গালাগালি করে আরশিকে ডাকছে।আরশি ভয়ে চুপসে যায়।বৃষ্টি আরশির হাত ধরে অভয় দিয়ে বলে,
-“একদম ভয় পাবে না।আমি আছি তোমার সাথে।”
(চলবে)