#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৭
#লেখক_দিগন্ত
স্বর্ণার অতীতের ঘটনাগুলো শুনে বৃষ্টি এবং সূর্য দুজনেই মর্মাহত হয়৷ সূর্যর চোখে তো জলই চলে আসে। কেমন ভাই সে যে নিজের বোনের ভালো খারাপের কোন খবর নেয়নি? নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হয় সূর্যর।
স্বর্ণাও কান্না অব্যাহত রাখে।কান্নারত অবস্থাতেই গোঙাতে গোঙাতে বলে,
-“আমার সেইসময় নিজেকেই অপ*রাধী মনে হতো।বারবার মনে হতো সিরাজের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী…এইরকম সময়েই প্রিয়া প্রতিদিন আমায় ফোন করত…ও আমায় প্রতিদিন ফোন করে এটাই বলত, আমার সুখে থাকার কোন অধিকার নেই আমাকেও কষ্ট পেতে হবে।তার ভাই আমার জন্যই নাকি মা*রা গেছে।এই অপরাধবোধ থেকে আমি নে*শা করতে শুরু করি এমনকি নিজের ক্ষ*তি করার চেষ্টা করি, অনেকবার আত্ম*হ*ত্যারও চেষ্টা করেছি…একসময় প্রিয়ার কথা শুনতে শুনতে নিজের প্রতি ঘৃণা বেড়ে যায়।একদিন আমার ঘরে একটি ছেলে ঢুকে বলল প্রিয়া নাকি তাকে পাঠিয়েছে আমার ক্ষ*তি করার জন্য।আমি সেদিন ছেলেটিকে কিছু বলার আগেই সে আমার উপর ঝা*পিয়ে পড়ে আর তখনই আব্বু,ভাইয়া সবাই চলে আসে।সবাই আমার দিকেই আঙুল তোলে, নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা আর আপনজনদের উপর অভিমান করেই আমি সেদিন মিথ্যা বলি যে…”
স্বর্ণার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হয়না।সে ফুপিয়ে কেঁদেই চলে।বৃষ্টি স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা রাজের কি খবর? তার সাথে কি আর তোমার দেখা হয়নি?”
রাজের নামটা শুনেই স্বর্ণার অস্বস্তিবোধ হতে থাকে।মনে পড়ে যায় সেই মায়াবী চোখের ঝলমলে ছেলেটার কথা।
স্বর্ণা কিছুটা থমকে থেকে বলে,
-“রাজের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল সিরাজের মৃ*ত্যুর তিন দিন পরে।রাজ ততদিনে চিঠির ব্যাপারে সব জেনে ফেলেছিল।সেদিন রাজ এসে আমায় বলেছিল আমি কি চিঠি প্রেরককেই ভালোবেসেছিলাম রাজকে কি এতটুকুও ভালোবাসিনি?”
বৃষ্টি অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি বলেছিলে তুমি সেদিন?”
-“আমি সেদিন স্পষ্ট করে রাজকে বলি, আমি চিঠি প্রেরক সিরাজকেই ভালোবাসি।রাজ শুধু আমার ভুল ছিল।রাজের চোখ সেদিন জলে ছলমল করেছিল।কোন কথা না বলে সে চলে যায়।এরপর আমি আর ওর কোন খোঁজ জানি না।একবার শুনেছিলাম স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশ চলে গিয়েছে।অনেক ভালো গানের গলা ছিল ওর।হয়তো এতদিনে অনেক ভালো গায়ক হয়ে গেছে।”
স্বর্ণার মুখে সব কথা শুনে বৃষ্টি আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে প্রিয়ার রুমের দিকে ছুটে যায়।প্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে বলে,
-“প্রিয়া আমি সব জেনে গেছি।তোমার জন্য আমার খুবই খারাপ লাগছে।জানি তুমি তোমার মা এবং ভাইকে কখনো ফেরত পাবে না কিন্তু দেখ স্বর্ণার তো এখানে কোন দোষ নেই।সে তো আর ইচ্ছে করে তোমার ভাইকে কষ্ট দিতে চায়নি।তোমার ভাই তার মনের কথা প্রকাশ করতে পারেনি।কিন্তু তবুও বিনা কারণে স্বর্ণা অনেক কষ্ট পেয়েছে।তুমি প্লিজ ওকে আর কষ্ট দিওনা।”
বৃষ্টির কথা শুনে গগণবিহারী হাসি হেসে প্রিয়া বলে,
-“কি বলছ স্বর্ণাকে আর কষ্ট দেবনা? কেন দেবনা কষ্ট? একশোবার দেব হাজারবার দেব।ঐ মেয়েটার জন্য আমার ভাইয়াকে আমি হারিয়েছি।ও আমার ভাইয়ের ভালোবাসাকে দাম দেয়নি কিন্তু ওকে বাঁচানোর জন্য আমার ভাই অকালমৃত্যু বরণ করেছে।যার শোক সামলাতে না পেরে আমার আম্মুও মারা গেছে।তুমি কি ভাবছ এতকিছু আমি এত সহজে ভুলে যাব? তুমি আমার কষ্টটা বুঝবে না বৃষ্টি।যে হারায় শুধু সেই বোঝে।শুধুমাত্র স্বর্ণাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই আমি সূর্যর ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম।তারপর যখন দেখলাম সূর্য হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন সোহেলকে।আমি এত সহজে আমার উদ্দ্যেশ্য থেকে সরব না।”
বৃষ্টি প্রিয়াকে বোঝানোর জন্য বলে,
-“দেখো জন্ম মৃত্যু এগুলো কিছুই আমাদের হাতে নেই সবটাই আল্লাহর ইচ্ছা হয়।আর অকালমৃত্যু বলে কিছু হয়না যার আয়ু যতটুকু সে ততদিনই বাঁচে।আমিও তো নিজের বাবা মাকে হারিয়েছি।আর স্বর্ণা কিন্তু আদতেও তোমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ি নয়।তাই এসব মিথ্যা প্রতিশো*ধের কথা ভুলে যাও।আল্লাহর কাছে তোমার ভাই আর আম্মুর জন্য দোয়া কর সেটা বেশি কার্যকর হবে।”
প্রিয়া রেগে গিয়ে বলে,
-“আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।স্বর্ণাকে শান্তিতে থাকতে দেব না আমি।ওর জীবনটা একেবারে জাহান্নামে পরিণত করে দেব।”
-“আমি থাকতে কিছুতেই সেটা হতে দেবো না।স্বর্ণার ঢাল হয়ে দাঁড়াব আমি।”
____________
নিউইয়র্কের একটি বিলাসবহুল হোটেলে অপেক্ষায় আছে বহু মানুষ।তাদের অপেক্ষার কারণ বিখ্যাত রকস্টার রাজ চৌধুরী।নিউইয়র্কে বেশ নাম কামিয়েছেন তিনি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ চৌধুরী এসে উপস্থিত হন।তাকে দেখে হাজার হাজার তরুণীর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।সবাই তার গানের সুরে,তার অপরূপ রূপে মুগ্ধ।রাজ চৌধুরী কয়েকটা ইংরেজি গান বলার পর সবাইকে তার নিজের মাতৃভাষার একটি গান শোনায়,
“যাদুরে যাদুরে এ কেমন ভালোবাসা
বুকটা করে খা খা আমার
অন্তর হারায় দিশা
দূরের মানুষ হইয়া গেলা
বুকে রাইখা প্রেমের নেশা।”
গানের মানেটা উপস্থিত কেউ বুঝতে না পারলেও গানের আবেগটা সবার বোধগম্য হয়।যে আবেগ দিয়ে রাজ চৌধুরী গানটা গেয়েছে তা সত্যি মনোমুগ্ধকর।গানটা শুনে অনেকের চোখেই জল চলে আসে।গান শেষ করে রাজ চৌধুরী সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম।সেই ভালোবাসার অনুভূতি থেকেই গানটা বলেছি।আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি।তাই সেই দুঃখে আমি নিজের দেশ ছেড়ে এই দেশে চলে এসেছিলাম।তারপর আর কখনো দেশে ফিরিনি।কিন্তু এবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজের দেশে ফিরে যাবার।এটাই হয়তো নিউইয়র্কে আমার লাস্ট শো।আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”
কথাটা বলে নিজের দামী গাড়িতে করে বেরিয়ে আসে রাজ চৌধুরী।তার উদ্দ্যেশ্য এখান থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে গিয়ে ফ্লাইটে ওঠা।নিজের দেশের বাতাসের ঘ্রাণ নিতে যে তার বড্ড ইচ্ছে করছে।
______________
স্বর্ণার মন কেন জানিনা আজ বেশ ভালো।তার বারবার মনে হচ্ছে তার সাথে ভালো কিছু হতে যাচ্ছে।হারানো কোন কাছের মানুষকে ফিরে পেতে চলেছে।কিন্তু তার এমন মনে হওয়ার কারণ কি সে কোনভাবেই সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না।
বৃষ্টি এসে স্বর্ণার পাশে বসে।প্রিয়ার ভয়ে স্বর্ণাকে একা রাখতেও তার বড্ড ভয় লাগে।
স্বর্ণা বৃষ্টিকে তার মনে তৈরি হওয়া ভালোলাগার কথা জানায়।বৃষ্টি মজা করে বলে,
-“তোমার ভালোবাসার কেউ হয়তো আসছে।”
ভালোবাসা শব্দটা শুনে স্বর্ণার মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।সে মলিন গেসে বলে,
-“ভালোবাসা জিনিসটা আমার জন্য নয় বৃষ্টি ভাবি।জীবনে আর যাই পাই না কেন ভালোবাসা কখনো পাবো বলে মনে হয়না।”
স্বর্ণার এমন কথা শুনে বৃষ্টি বলে,
-“আল্লাহর ইচ্ছাতেই পৃথিবীতে সব হয়।তিনি চাইলে সব হয়।তাছাড়া তোমাকেও তো সুখী হতে হবে।জীবনটা সুন্দরভাবে গোছাতে হবে।হাত ধরার জন্য একটা সঙ্গীর খুব প্রয়োজন মানুষের।আমার মনে হয় তুমিও জীবনে এমন কোন মানুষ পাবে যে তোমাকে ভালোবাসবে।তাছাড়া তোমার বিয়ের বয়সও তো পেড়িয়ে যাচ্ছে।বিয়ে তো করতে হবে তাইনা?”
বিয়ের কথা শুনে স্বর্ণা রাগ দেখিয়ে বলে,
-“আমি কখনো বিয়ে করবো না।এই নিয়ে প্লিজ কথা বলো না।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে আর রাগ করতে হবে না।কাল আমরা দুজনে একটু বাইরে বেড়াতে যাব কিন্তু।এখানে এসেছি থেকে দেখছি তুমি ঘরেবন্দি হয়ে আছো।একটু বাইরে ঘুরতে চলো।দেখবে মন মেজাজ সব ফুরফুরে হয়ে যাবে।”
স্বর্ণা সায় জানায়।
__________
অবশেষে রাজ চৌধুরী বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে।মাতৃভূমির বাতাসে শ্বাস নিয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি খুঁজে পায় সে।রাজ চৌধুরী বলে,
-“আবার ফিরে এলাম নিজের দেশে।একদিন সবকিছু হারিয়ে অভিমান করে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।অবশেষে সব অভিমান চুকিয়ে ফিরে এলাম।দেখি এই দেশ আমাকে এবার কিছু দিতে পারে নাকি আবার প্রাপ্তির খাতা শূন্যই থেকে যায়।”
(চলবে)#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৮
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি ফোনে চিত্রার সাথে কথা বলছিল।সে চিত্রাকে বলে,
-“আজ আমি আমার ননদ স্বর্ণার সাথে ঘুরতে যাব।তুইও চলে আয় না।সবাই মিলে একসাথে ঘুরব।”
-“নারে আমি যেতে পারব না।তোকে আমার একটা চাচাতো ভাইয়ের কথা বলেছিলাম না যে কয়েক বছর আগে বিদেশে চলে গিয়েছিল সে আজ আবার দেশে ফিরছে।”
-“ও আচ্ছা তোর সেই গায়ক ভাই। কি যেন নাম ছিল…রাজ তাইনা?”
-“হুম।আচ্ছা আমি রাখছি তুই তো জানিস চাচা চাচি কয়েক বছর আগে একটা দূর্ঘটনায় মা’রা গেছে।সেই দুঃখে রাজ ভাইয়া চলে গিয়েছিল।এখন তো এইদেশে আমরা ছাড়া তার আর কোন আত্মীয় নেই।তাই আমাদের এখানেই আসবে।তোরা মজা করিস।”
______________
বৃষ্টি আর স্বর্ণা বেড়িয়ে পড়ে একটু ঘোরাঘুরি করতে।সূর্যও আছে তাদের সাথে।সারা রাস্তায় সূর্য বৃষ্টির দিকে বারবার তাকায়।যেটাতে বৃষ্টি খুবই বিব্রতবোধ করে।সে বিড়বিড় করে বলে,
-“এই লোকটা এভাবে আমায় দেখছে কেন কোন কাজ নেই নাকি? আজ শুক্রবার তাই অফিস বন্ধ।উফ আজকে বেড়ানোটাই ভুল হয়ে গেছে।”
সূর্য বৃষ্টির মনোভাব বুঝতে পারে।সূর্য মুচকি হেসে বলে,
-“আমরা তো স্বামী স্ত্রী এভাবে আলাদা বসা উচিৎ হয়নি।আচ্ছা স্বর্ণা ফিরে আসার সময় তুই নাহয় সামনে বসিস আমি পেছনে বসব।”
বৃষ্টি হচকচিয়ে বলে,
-“আমার আপনার পাশে বসার কোন ইচ্ছে নেই।স্বর্ণা তুমি কিন্তু আমার পাশেই বসবে।”
স্বর্ণা এসব কাণ্ড দেখে না হেসে আর পারেনা।নিজের ভাই আর ভাবির এমন খুনশুটি তার খুব ভালো লাগছিল।সূর্য জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা তোমরা কোথায় যেতে চাও বলো ড্রাইভার সত্যিই খুব কনফিউজড।”
স্বর্ণা বলে,
-“যেখানে খুশি নিয়ে চলো আমার কোন আপত্তি নেই।”
বৃষ্টি ভেবে বলে,
-“মিরপুর চিড়িয়াখানায় চলুন।”
-“চিড়িয়াখানায় কেন? ঘোরার কি আর কোন যায়গা নেই?”
সূর্যর কথাটা শুনে বৃষ্টি মুখ ফুলিয়ে বলে,
-“আমার ইচ্ছে করছে তাই।শুনেছি চিড়িয়াখানায় ক্যাঙারুর দুটো বাচ্চা হয়েছে।আমি কখনো বাচ্চা ক্যাঙারু দেখিনি তাই দেখতে চাই।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে তাই চলো।”
তারা সবাই চিড়িয়াখানায় যায় এবং কয়েক ঘন্টা সেখানেই অতিবাহিত করে।বৃষ্টি সূর্যকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা এই চিড়িয়াখানায় সবথেকে কিউট প্রাণী কোনটি বলুন তো।”
-“তুমি।”
-“কি!!!!! আপনার আমাকে প্রাণী মনে হয়?”
-“হ্যাঁ।কেন তুমি কি প্রাণী নও? নাকি তুমি কোন এলিয়েন।এই পৃথিবীতে যারা বসবাস করে সবাই তো প্রাণী।সেই হিসেবে দেখতে গেলে তুমিও প্রাণী,আমিও প্রাণী।”
-“আমি এনিমেলের কথা বলছিলাম।”
-“ও আমার তো সব এনিমেলই ভালো লেগেছে।তবে সিংহটা একটু বেশিই কিউট।”
-“আপনার আবার সিংহ পছন্দ? আমার তো মনে হয়েছিল আপনি বা*দর পছন্দ করবেন।”
-“কি বললে তুমি?”
-“কিছু না চলুন এখন।স্বর্ণা যে কোথায় গেল ওকে তো কোথাও দেখছি না।”
-“হ্যাঁ তাইতো।স্বর্ণাকে তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না।দাঁড়াও ওকে একটা ফোন করে দেখি।যা চঞ্চল মেয়ে একটুও শান্ত থাকে না।”
স্বর্ণা হরিণ দেখছিল।হরিণের মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে তার খুব ভালো লাগে।এই চোখের দিকে তাকিয়ে তার রাজের কথা মনে পড়ে যায়।রাজের চোখও এমন মায়াবী ছিল।রাজের কথা ভাবতে না চেয়েও কেন যে বারবার তার কথা ভাবে সেটা স্বর্ণা বুঝতে পারে না।স্বর্ণা যতই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুক রাজ কেবলমাত্র তার একটা ভ্রম, সিরাজই তার আসল ভালোবাসা কিন্তু তার মন মানতে চায়না।কতদিন রাজকে দেখেনি সে।রাজ এখন কোথায় আছে কেমন আছে সেটাও জানেনা।
হঠাৎ সূর্যর ফোনকলে স্বর্ণার ধ্যান ভাঙে।সে ফোনটা রিসিভ করতেই সূর্য বলে,
-“কোথায় তুই স্বর্ণা? আশেপাশে কোথাও তো তোকে দেখছি না।”
-“আমি তোদের থেকে একটু দূরে আছি।ভাবলাম তোদের একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে দেওয়া উচিৎ।আমি আসছি।”
-“তাড়াতাড়ি আয় আমাদের যেতে হবে।”
স্বর্ণা বৃষ্টি আর সূর্যর কাছে যায়।এরপর তারা সবাই মিলে চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে আসে।বৃষ্টি এবার স্বর্ণাকে বলে,
-“এরপর কোথায় যাবে বলো।এবার কিন্তু যেখানে খুশি বললে হবে না তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানেই যাব আমরা।”
স্বর্ণার মন চাইছিল একবার তার ভার্সিটিতে ঘুরতে যেতে।কত সুন্দর সুন্দর স্মৃতি জড়িয়ে আছে।তাই স্বর্ণা বলে,
-“চলো তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
সূর্য স্বর্ণার কথা শুনে বলে,
-“এটা তো তোর ভার্সিটি তাইনা? তুই আবার কেন যেতে চাইছিস সেখানে?”
-“পুরাতন স্মৃতিগুলো হাতছানি দিচ্ছে।খুব করে ডাকছে আমায়।তাই ইচ্ছে করছে একবার যেতে।”
-“তোমার কষ্ট হবে না তো স্বর্ণা? ওখানে তো তোমার ভালো স্মৃতির পাশাপাশি কিছু দুঃখের স্মৃতিও আছে যা তোমার কষ্টের কারণ।”(প্রিয়া)
-“আমার কোন অসুবিধা হবে না।চলো না যাই।”
বৃষ্টি আর সূর্য শেষপর্যন্ত রাজি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে।স্বর্ণার মন ছটফট করতে থাকে কত দ্রুত পৌঁছাতে পারবে সেই নিয়ে।
___________
অবশেষে সবাই পৌঁছে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।গাড়ি থেকে নেমে নিজের পুরাতন ক্যাম্পাসে পা রেখে স্বর্ণার মনে আনন্দের দোলা বয়ে যায়।এখানেই কত সুন্দর সুন্দর স্মৃতি আছে তার, বন্ধুদের সাথে আড্ডা হাসি,খুনশুটি।আবার কত বেদনাদায়ক স্মৃতিও আছে।রাজের কথা আজ আবারো মনে পড়ে যায় স্বর্ণার।স্বর্ণা বুঝতে পারছে না বারবার কেন তার রাজের কথাই মনে পড়ছে।সে তো জানত সে সিরাজকেই পছন্দ করতো।কিন্তু মনের অজান্তে সে এই বছরে রাজের কথাই ভেবেছে।রাজের সাথে কা*টানো মুহুর্তগুলো যদিও খুব কম ছিল কিন্তু সেগুলো যেন তার জীবনের সুন্দর স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।
তাহলে কি স্বর্ণার মন রাজকেই ভালোবেসেছে? সিরাজ কি স্বর্ণার মস্তিষ্কে চাপিয়ে দেওয়া ভালোবাসা? মন আর মস্তিষ্কের এই লড়াইয়ে কে জয়ী হবে সেটা স্বর্ণা জানে না।মস্তিষ্ক সিরাজকে ভুলতে চায়না কিন্তু মন চায় রাজের কথা ভাবতে।
স্বর্ণা এগিয়ে যায় একটু।অবচেতন মনে হাটতে হাটতে হঠাৎ কারো সাথে প্রবল বেগে ধা*ক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয় স্বর্ণা।তখনই তাকে ধরে নেয় কেউ একজন।
স্বর্ণা মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে মাস্ক পরিহিত একটি ছেলে তাকে ধরে আছে।স্বর্ণার নজর যায় ছেলেটির চোখের দিকে।সেই মায়াবী চোখ যার কথা সে আজও ভুলতে পারেনি।এই মায়াবী চোখের অধিকারী মানুষটাকে স্বর্ণা খুব ভালো করেই চেনে।
স্বর্ণা অস্ফুটস্বরে বলে,
-“রাজ….”
মুখ থেকে মাস্ক নামিয়ে দেয় রাজ।স্বর্ণার দিকে এতক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল সে।হুশ ফিরতেই চোখ নামিয়ে বলে,
-“অনেকদিন পর দেখা হলো।কেমন আছেন আপনি?”
রাজের মুখে আপনি ডাক শুনে স্বর্ণার কেন জানিনা খুব খারাপ লাগছিল।স্বর্ণা সিরাজের জন্য অনুশোচনার জন্যই তার প্রতি মায়াকে ভালোবাসা ভেবেছিল স্বর্ণা।হাজার হোক ছেলেটা তাকে চিঠি দিত, যেই চিঠি তার মন জয় করেছিল আবার ছেলেটা তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিয়েছে।
স্বর্ণা অবশ্য জানে রাজ তার উপর খুব রাগ করে আছে।স্বর্ণাও দুচোখ ভরে দেখে নেয় রাজকে।বেহা’য়া মন যেন কিছুই মানতে চাইছিল না।স্বর্ণা রাজকে বলে,
-“আমি ভালো আছি।আপনি হঠাৎ এখানে?”
রাজ মুচকি হেসে বলে,
-“অনেকদিন পর এলাম পুরানো স্মৃতি হাতড়াতে।”
স্বর্ণাও আনমনে বলে দেয়,
-“আমিও।”
রাজ তখন বলে,
-“আচ্ছা আমি আসছি এখন।”
কথাটা বলেই রাজ চলে যায়।একবারের জন্যেও পিছনে ফিরে তাকায় না কারণ তাকালে যে সে দূর্বল হয়ে যাবে।এদিকে স্বর্ণা তখনও রাজের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে ছিল।
(চলবে)#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৯
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি স্বর্ণাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে আসে।স্বর্ণা তখনো রাজের কথাই ভাবছিল।বৃষ্টি স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“এভাবে কি দেখছ? কেউ তো নেই এখানে।”
স্বর্ণা আনমনে বলে দেয়,
-“রাজ…”
বৃষ্টি ভীষণ অবাক হয়ে যায়। সে বলে,
-“কি বললে তুমি রাজ?”
স্বর্ণা কথা ঘুরিয়ে বলে,
-“চলো এখন যেতে হবে আমাদের।আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।”
স্বর্ণা কথাটা বলেই হাটা শুরু করে।বৃষ্টির খুবই অদ্ভুত লাগে স্বর্ণার ব্যবহার।তার মনে হয় স্বর্ণা কিছু লুকাতে চাইছে।এদিকে সূর্য বৃষ্টিকে ডাকতে থাকে।তাই বৃষ্টি আর বেশি না ভেবে গাড়ির কাছে চলে আসে।
_____________
বৃষ্টি বাড়িতে ফিরে স্বর্ণার কথাই ভাবছিল।তখন সূর্য রুমে চলে আসে।সূর্যর উপস্থিতি বৃষ্টি উপলব্ধি করে।বৃষ্টির মনে হয় স্বর্ণার ব্যাপারে সূর্যর সাথে কথা বলা উচিৎ।তাই বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“শুনুন আপনার সাথে খুব জরুরি একটা কথা আছে।”
সূর্য চুল আ*ছড়াতে আ*ছড়াতে বলে,
-“কি কথা বলো? আমার সাথে সময় কা*টাতে চাও?”
-“আপনার মাথা ঠিক আছে তো? ভালো কিছু ভাবতে পারেন না বোধহয়।আমি স্বর্ণার ব্যাপারে বলতে চাই।”
সূর্য উৎকন্ঠার সাথে বলে,
-“স্বর্ণার আবার কি সমস্যা হলো?”
-“কিছুই হয়নি।ওর ব্যবহার আমার কেমন জানি অস্বাভাবিক লাগছে।”
সূর্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।বৃষ্টিকে বলে,
-“জানোই তো ওর সাথে কত কি হয়েছে তাই একটু অস্বাভাবিক আচরণ করাই স্বাভাবিক।তুমি এই নিয়ে ভেবোনা একটু সময় যাক ও ঠিক হয়ে যাবে দেখো।”
বৃষ্টি সূর্যর কথায় কোন ভরসা পায়না।তার মনে হয় স্বর্ণার ব্যাপারটা এতও সহজ নয় যতটা ভাবা হচ্ছে।
বৃষ্টি ঘুমিয়ে পড়ে।সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নেয়।এরপর আবার একটু শুয়ে পড়ে।
সকাল ৭ টার দিকে চিত্রার ফোন আসে।বৃষ্টি তো খুবই অবাক হয়ে যায়।চিত্রা এত সকালে ফোন করেছে! অথচ এই মেয়েটা তাদের বান্ধবীমহলে সবচেয়ে অলস বলে খ্যাত।বৃষ্টি ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে চিত্রা কাদো কাদো গলায় বলে,
-“আমায় বাঁচা বৃষ্টি।আমি মাই*নকার চি*পায় পড়ে গেছি।”
-“কি হয়েছে চিত্রা? তোকে গলাটা এরকম লাগছে কেন কোন বিপদে পড়লি নাকি?”
-“তোর মতো আমারও কপালে বিয়ে নামক বিপদ অপেক্ষা করছে।সব তো ঠিকঠাকই ছিল।জানি না আমার মা বাবার মাথায় হঠাৎ করে কিভাবে বিয়ের ভূত চাপলো এখন আমি কি করব বল দোস্ত?”
-“কি বললি তোর মা বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে! আলহামদুলিল্লাহ।”
-“এদিকে আমার জীবনে সর্ব*না*শ হতে যাচ্ছে আর তুই কিনা খুশিতে আত্মহারা হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলছিস! তুই আমার বান্ধবী নাকি শত্রুনি?”
-“আমি বান্ধবী জন্যই তো খুশি হয়েছি চিত্রা।বিবাহবন্ধন একটা পবিত্র বন্ধন।বিয়ে করে নে দেখ সুখী থাকবি।”
-“তুই হঠাৎ করে এরকম বড়দের মতো কথা বলছিস কেন রে? বিয়ে করে খুব পাকা হয়েছিস তাইনা? আমি কিছু শুনতে চাইনা, আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।আমি প্ল্যান করছি যেভাবেই হোক বিয়েটা ভা*ঙ্গার।তুই আমাকে সাহায্য করবি বুঝেছিস?”
-“আমাকে দিয়ে এমন কাজ করাবি!”
-“আমি জীবনে তোর কত উপকার করেছি আর তুই আমার এই সামান্য একটু উপকার করতে পারবি না।কেমন বান্ধবী তুই?”
-“আচ্ছা হয়েছে এত রাগ দেখাতে হবে না।আমি দেখছি কি করতে পারি তোর জন্য।”
_________________
বৃষ্টির ভার্সিটির পাশে দাড়িয়ে ছিল চিত্রার অপেক্ষায়।পাশেই একটি কফিশপে নাকি আজ চিত্রা সেই ছেলেটিকে দেখেছে যার সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।বৃষ্টির রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।চিত্রা যে ভীষণ আনপাংচুয়াল সেটা বৃষ্টি জানে।কিন্তু তাই বলে আজকেও লেট করবে?
হঠাৎ পেছন থেকে কারো ডাকে পেছনে ঘুরে তাকায় বৃষ্টি।আরশি বৃষ্টির কাছে এসে বলে,
-“বৃষ্টি তুমি ভার্সিটিতে কি করছ কোন দরকার আছে?”
-“হুম দরকার আছে।তুমি কেমন আছে এখন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।বৃষ্টি জানো এখানে পাশেই একটি কফিশপ আছে।চলো সেখানে।”
-“হুম চলো।”
বৃষ্টি এবং আরশি একসাথে কফিশপে যায়।কফিশপে নিজের ভাই আদনানকে দেখে আরশি অবাক হয়ে বলে,
-“ভাইয়া তুমি এখানে?”
আদনান এতদিন পর নিজের বোনকে দেখে খুশি হয়।মুচকি হেসে বলে,
-“দরকারেই এসেছিলাম আরশি।অনেকদিন পর তোকে দেখলাম একটু খোঁজ খবরও নিসনা আমাদের।কেমন আছিস তুই?”
চিত্রা তখনই হাফাতে হাফাতে সেখানে চাপ আসে আর বলে,
-“বৃষ্টি তুই কখন এলি? আমি সারা ভার্সিটিতে তোকে খুঁজলাম।শোন যে করেই হোক বিয়েটা কিন্তু আমাদের…..”
কথা বলতে বলতে চিত্রার নজর যায় আদনানের দিকে।কালো রঙের টিশার্ট, হাতে স্মার্ট ওয়াচ পরিহিত ছেলেটাকে দেখে মুহূর্তেই সে ক্রাশ খায়।অন্য সব কথা ভুলে সে বলে ওঠে,
-“ওয়াও কি হ্যান্ডসাম!”
আদনান চিত্রাকে দেখে বলে,
-“আপনি চিত্রা রাইট? হাই আমি আদনান।আপনার হবু স্বামী।”
চিত্রা কিছু বলে না শুধু অবাক চাহনিতে আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকে।চিত্রাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদনান বিব্রতবোধ করে।তবুও মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,
-“নিশ্চয়ই ভাবছেন আপনাকে চিনতে পারলাম কিভাবে? আপনার ছবি আমি দেখেছি তাই সহজেই চিনে গেছি।”
বৃষ্টি তখন বলে,
-“চিত্রা তুই চুপ আছিস কেন? ওনাকে বল তুই বিয়েটা করতে চাস না।”
বৃষ্টির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় চিত্রা।তার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল বৃষ্টিকে খে*য়েই ফেলবে।
-“ও আপনি বিয়েটা করতে চাননা।কোন ব্যাপার না আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলব।”(আদনান)
চিত্রা বলে,
-“আরে না না।বৃষ্টি তুইও না এরকম প্যাংক করিস কেন? আমি কখন বললাম বিয়ে করবোনা 🙄 আমি তো বিয়েটা করবোই।”
চিত্রার হঠাৎ এমন পরিবর্তনে বৃষ্টি চরমভাবে অবাক হয়।চিত্রা সেদিকে লক্ষ্য না করে বলে,
-“আপনি বসুন মিস্টার আদনান।আমরা একটু কফি খাই।”
বৃষ্টির ইচ্ছে করছিল এক্ষুনি চিত্রার মাথায় গা*ট্টি মা*রতে।তাকে সাঝ সকালে বিয়ে বাতিল করতে ডেকে এনে এখন বলছে বিয়ে করতে চায়না।আরশি চিত্রাকে বলে,
-“আমার সাথে পরিচয় হয়ে নাও আমি আরশি।তোমার হবু ননদ।শুনেছিলাম পৃথিবীটা গোল।এখন তার প্রমাণও পাচ্ছি।বৃষ্টির বান্ধবী আমার ভাইয়ের বউ হতে চলেছে।খুব ভালো লাগছে আমার।তুমিও নিশ্চয়ই খুশি হয়েছ তাইনা বৃষ্টি?”
-“হুম খুশি তো হয়েছি।কিন্তু তোমরা কি জানো চিত্রা তো বিয়েটা করতেই চাইছিল না।বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আমায় ডেকেছিল।ওর তো বয়ফ্রেন্ডও আছে।”
চরম মিথ্যা কথাটা শুনে চিত্রা বৃষ্টির দিকে রাগি চোখে তাকায়।এটা ঠিক যে সে প্রথমে বিয়েটা করতে চায়নি।কিন্তু বয়ফ্রেন্ডের ব্যাপারটা তো পুরোপুরি মিথ্যা।বৃষ্টি চোখের ইশারায় চিত্রাকে বোঝায়,
-“কেমন লাগল? এটা আমাকে একঘন্টা ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে রাখার শাস্তি।”
চিত্রা বিড়বিড় করে বলে,
-“তোর মতো বান্ধবী থাকলে শত্রুনীর আবার কি প্রয়োজন।”
আদনানের মনটা খারাপ হয়ে যায়।চিত্রাকে এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেলেছিল আদনান।তাই মন খারাপ করে বলে,
-“আচ্ছা আপনি বিয়েটা করতে চান না।কোন ব্যাপার না সোজাসুজি বলে দিলেই হতো।”
চিত্রা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।বৃষ্টির তো খুব মজা লাগছিল চিত্রাকে এভাবে ফাসিয়ে।
চিত্রার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সে কেঁদেই দেবে।বৃষ্টি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে হেসেই ফেলে।তাকে এভাবে হাসতে দেখে আদনান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে,
-“এভাবে হাসছেন কেন আপনি?”
বৃষ্টি তখন পুরো ঘটনা বলে।সব শুনে চিত্রা বাদে উপস্থিত সবাই হেসে ফেলে।বৃষ্টি আরশিকে নিয়ে বাইরে চলে আসে চিত্রা আর আদনানকে একান্ত সময় কা*টানোর সুযোগ করে দিতে।আরশি ঠাট্টা করে বলে,
-“বৃষ্টি তুমি তো মহাপা*জী।চিত্রা ভাবি তো আরেকটু হলে কেঁদেই দিত।”
-“বাবা! এখন থেকেই ভাবি।”
ঐদিকে আদনান আর চিত্রা একসাথে কথা বলছিল।আদনান চিত্রাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আপনার কি আমাকে সত্যিই পছন্দ হয়েছে? বিয়ে করতে কোন প্রবলেন নেই তো? প্রবলেম থাকলে বলতে পারেন আমি কিছু মাইন্ড করবো না।”
চিত্রা অধৈর্য হয়ে জোর গলায় বলে,
-“নেই কোন কোন কোন প্রব্লেম নেই।”
চিত্রা এত জোরে কথাটা বলে যে কফিশপের সবার দৃষ্টি পড়ে চিত্রার উপর।চিত্রা খুবই লজ্জা পায়।আদনান হেসে ফেলে।
(চলবে)