“I LOVE U FABIYA…..WILL U MARRY ME?”
অতিরিক্ত গরমে ভার্সিটি থেকে বাসায় আসতেই ফোনে একটা মেসেজ বেজে উঠলো ফাবিয়া।ফাবিয়া একটু বিরক্ত হয়ে ফোন চেক করে। মেসেজ দেখে ফাবিয়ার চক্ষু চড়ক গাছে উঠে গেছে।
ফারহান ইসলাম আইডি থেকে তাকে প্রপোজাল দেওয়া হয়েছে।এক মুহুর্তের জন্য ফাবিয়ার চোখ খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলেও পরমূহুর্তেই নিজের অবস্থার কথা চিন্তা করে এসব ভুলে যায় ফাবিয়া।
“কি হয়েছে ফাবিয়া উত্তর দিচ্ছো না কেনো?”
ফাবিয়া এবার বেশ বিরক্ত হয়েই বলে,”আপনি কে?”
“I LOVE U…”
“আজব আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছি আপনি কে?”
“I LOVE U…”
“আপনি আমায় চিনেন যে আমাকে প্রপোজ করেছেন?আপনার কি আত্নসম্মান বোধ নেই।”
“I LOVE U…”
“এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে?আমি কিন্তু আপনাকে ব্লক দিতে বাধ্য হবো।”
“আচ্ছা আচ্ছা আ’ম সর্যি।”
“সর্যি মানে আপনাদের মতো কিছু প্লেবয় ছেলেরা প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিবেন তারপর তা অস্বীকার করলে তার ক্ষতি করবেন।কি মনে করেন কি নিজেকে?আপনার মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছি দেখে কি আমাকে কিনে নিবেন। আমারই ভুল হয়েছে রিপ্লাই।”
অপরপাশ থেকে ফারহান ইসলাম আইডি থেকে মেসেজ আসে।
“দেখুন আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আচ্ছা আ’ম রিয়েলি সর্যি।আসলে আমাকে একটা ডেয়ার দেওয়ার হয়েছে যে ফ্রেন্ডলিস্টের যে কোনো অপরিচিত মেয়েকে প্রপোজ করে প্রপোজালে এক্সেপ্ট করিয়ে দেখাতে। আমি মজা করেই করেই আপনাকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি যে এভাবে রেগে যাবেন তা বুঝতে পারি নি। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
“হে আপনারা তো খু*ন করেও কাউকে ছোট এই দুঃখিত বলে দিবেন আর সমস্যা সমাধান তাই নাহ?”
“আরে আরে আমি আবার কখন কাকে খু*ন করলাম।এটা নেহাৎ-ই একটা ডেয়ার ছিলো মিসআর তার জন্য আপনি আমাকে খু*নী বানিয়ে দিচ্ছেন।এ’তো ভারি অন্যায়?
” অন্যায় কাজ করে আমি কি ন্যায়ের প্রশংসা করবো?
“আচ্ছা আমি তো ক্ষমাও চাইলাম তাহলে এতো সিনক্রিয়েট করার কি আছে?”
“আপনার এই ডেয়ার একজনের পুরো জীবন নিয়ে নিতে পারে। আপনাদের মতো ছেলেদের সাথে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে।”
বলেই ফোনটা অফ করে রেখে দেই।রাগে ফাবিয়ার গা থর থর করে কাঁপছে। এটা নেহাৎ-ই একটা ডেয়ার কিন্তু এই ডেয়ার যে কতটা মারাত্মক তা ফাবিয়া জীবন দিয়ে বুঝেছে।ফাবিয়া আয়নায় নিজেকে দেখে কান্নায় ফেঁটে পড়ে।
ফাবিয়ার মা রান্না করছিলেন।ভার্সিটি থেকে এসেই মেয়ের এমন কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে এসে মেয়েকে ধরে মিসেস পারভীন। ফাবিয়া মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
“আমার সাথেই কেনো এমন হলো আম্মু।আমি তো এসব কিছুই চাই নি।আমি তো অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম।কেনো আমার সাথে এসব হলো?”
মিসেস পারভীন ফাবিয়াকে ধরে নিজেও কাঁদে। মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষাই যে তার কাছে নেই।
“নিশ্চয়ই কষ্টের পর সুখ রয়েছে।তুই এভাবে ভেঙে পড়িস না মা।”
মায়ের সান্ত্বনায় ফাবিয়ার কষ্ট যেনো দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়, আরও জোরে জোরে কেঁদে উঠে ফাবিয়া।কিচ্ছুক্ষণ পর দু’জনেই শান্ত হলে ফাবিয়ার মা ফাবিয়াকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।যখন মেয়ে এভাবে ভেঙে পড়ে তখনই ফাবিয়ার মা না চাইতেও ফাবিয়াকে এভাবে ঘুমের দেশে পাঠিয়ে দেয় যাতে কিচ্ছুক্ষণের জন্য হলেও মেয়েটা শান্তি পায়।
সন্ধ্যায় ফাবিয়ার ঘুম ভাঙলে ফোনটা অন করে। ফাবিয়া ফোন অন করতেই ফারহান ইসলাম আইডি থেকে মেসেজে ভরে যায়।ফাবিয়া চেক করে দেখে ফারহান তাকে অসংখ্যবার তার প্রপোজের জন্য ক্ষমা চেয়েছে এমনকি কয়েকবার ফোনও দিয়েছে।
“আ’ম সর্যি মিস।আমার আচরণে আপনি ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছেন আমি জানি না তবে আমি নিছকই মজার ছলে আপনাকে প্রপোজ করেছি এতে আপনি কেনোই বাহ রিয়েক্ট করেছেন তাও আমার অজানা।তবুও আমি দুঃখিত আমার আচরণে আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।”
ফাবিয়া মেসেজের রিপ্লাই করে না দেখেই রেখে দেয়।ফোনটা রেখে নিজের পড়াশোনায় মন দেয়।এখন তার একমাত্র লক্ষ যে করেই হোক ভালো মতো পড়াশোনা করে ভালো একটা চাকরি করে মায়ের সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া।তাই এসব প্রপোজ, বিয়ের ঝামেলা থেকে ফাবিয়া বরাবরই দূরে থাকতে চায়।
রাত ৮ টা বাজে, ফাবিয়ার ফোনে ফারহান ইসলাম আইডি থেকে ফোন আসে।ফাবিয়াও কি মনে করে ফোনটা রিসিভ করে কিন্তু কোন উত্তর দেয় না।ওপর পাশে ফারহান বলতে থাকে,
“আসসালামু আলাইকুম ফাবিয়া?ফাবিয়া আ’ম সর্যি প্লিজ রাগ করবেন না।আমার উপর কেউ রাগ করে থাকবে আমার সেটা পছন্দ না।”
“আপনি কে?আপনার সাথে তো আমার আজ প্রথম পরিচয় কিন্তু এমন ভাবে আচরণ করছেন যে আমি আপনার খুব কাছের কেউ?”
ফাবিয়ার গলার আওয়াজ শুনে ফারহান এক প্রকার আর্কষিত হয় যা প্রচলিত সমাজে ক্রাস নামে পরিচিত।ফারহান কিছু বলছে বা দেখে ফাবিয়া’ই বলে,
“কি হলো কিছু বলছেন না কেনো?”
“না মানে,আমার গিল্ট ফিল হয় যদি কেউ আমার উপর রাগ করে থাকে। আমার মনে হয় আমি তাকে আঘাত করেছি।”
“তো আপনি কি আমাকে আঘাত করেন নি?”
“করেছি তো তাই তো ক্ষমা চাচ্ছি।এই অপ*রাধীকে কি ক্ষমা করা যায় নাহ?”
“আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এবার কল রাখুন।”
“না মানে সত্যিই ক্ষমা করেছেন?”
“আজব মিথ্যা কেনো বলতে যাবো আপনাকে?”
“না মানে এমনিই।আচ্ছা আপনি এতো গম্ভীর ভাবে কথা কেনো বলছেন?
” আমার ইচ্ছে তাই।”
“কিন্তু আমার যে আপনার….হ্যালো..হ্যালো….”
ফারহানের কথা শোনার আগেই ফাবিয়া ফোন কেটে দেয়। এই ফারহান ছেলেটাকে ফাবিয়ার মোটেও ঠিক লাগছে না তাই ফাবিয়া ফোন কেটে দেয়।কিচ্ছুক্ষণ পরে ফারহান আবার মেসেজ দেয়।
” আপনাকে মজা করে প্রপোজ করেছিলাম কিন্তু আপনি দেখি সিরিয়াসলি নিয়েছেন তাই ভাবলাম, এবার সিরিয়াসলিই প্রপোজ করবো।”
ফাবিয়া কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলে,”মানে?”
“কিছু না বেশি রাত জাগবেন না ঘুমিয়ে পড়ুন।”
এবার ফাবিয়ার ফারহান ছেলেটার উপর বেশ রাগ উঠলো।কিন্তু নিজ রাগ সংযত করে নিজ লক্ষ্য মনোযোগী হলো।
পরেরদিন, ফাবিয়া ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হতেই ফাবিয়ার মা বলে,
“ফাবু আজ একটু আগে আছিস তো।”
“কেনো আম্মু?”
“দরকার ছিলো তাই।”
“আচ্ছা।”
ভাবিয়া একটা রিকশা করে ভার্সিটিতে গিয়ে পৌছায়। ভার্সিটিতে যেতেই সবাই ফাবিয়ার দিকে আড়চোখে তাকায় আর মুচকি মুচকি হাসে, কেউ কেউ তো ঘৃণার চোখেও তাকাচ্ছে।অবশ্য এসব ফাবিয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ ফাবিয়ার সাথে এসবই হয়ে উঠছে আর হবেও।দিবা এসে পিছন থেকে ফাবিয়া সাহস যোগাতে বলে,
“ফাবুউউউ তোকে কত্তত্ততক্ষণ দেখি না আমি বলললল।”
ফাবিয়া একটু আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”কালই তো ভার্সিটিতে এলাম।”
“সেই কাল আর আজ এর মধ্যে কত্তত্তত্ত সময় গিয়েছে জানিস?”
“আমার জানতে হবে না, হুট করে উড়ে এলি কেন বল।আর এত্ততো মিষ্টি কথাই বাহ বলছিস কেনো আমার হজম হচ্ছে নাহ।”
“আমি কি একটু মিষ্টি করেও আমার ফাবুর সাথে কথা বলতে পারি না।”
“না পারিস কিন্তু?”
“কিন্তু কি ফাবু?আচ্ছা বাদ দে,ফাবু কিছুদিন পর ভার্সিটিতে একটা গানের প্রতিযোগিতা আছে তোর কন্ঠ তো মাশাল্লাহ নাম দে নাহ?”
ফাবিয়া রাগান্বিত হয়ে বলে, “দিবা তুই জানিস আমার এসব পছন্দ না তাও?”
“ফাবু প্লিজ একবার নাম দে।আর জিতলে তুই অনেক অনেক টাকা পাবি তা দিয়ে তুই তোর ক্যারিয়ারও গড়তে পারিস।”
“দিবা আমাকে দেখে তো নামই দিতে হবে না আর জিতা?বিষয়টা কি হাস্যকর না?”
“ফাবু চেষ্টা করতে দোষ কিসের?”
“বাদ দে না।”
“না তুই নাম দিবি আমি প্রতিযোগিতায় তোর নাম যোগ করে দিয়েছি। আর কোনো কথা না।”
“তুই কেনো মানতে চাস না বল তো?”
“মানবোও না।”
অবশেষে দিবার কাছে হে*রে ফাবিয়া গানের প্রতিযোগিতায় নাম দেয়।এই একটা মাত্র মেয়ে যে কি’না মায়ের পর ফাবিয়াকে সব থেকে বেশি বুঝে। আর কেউ তো ফাবিয়ার সঙ্গও পর্যন্ত দেয় না। ফাবিয়া আর দিবা ক্লাস টাইম পার করে বাসায় যায়।কখনো যদি ফাবিয়ার মন খারাপ হয় তাহলে দিবা ঠিক করে দেয়। প্রথম প্রথম ফাবিয়ার এসব সিম্প্যাথি মনে হতো কিন্তু পরে বুঝেছে দিবা এসব মন থেকেই করে।বাসায় গিয়ে ফাবিয়া চমকে যায়। কারণ ফাবিয়াকে দেখতে পাত্রপক্ষ এসেছে।
পাত্র পক্ষ ফাবিয়াকে দেখার সাথে সাথে পাত্রপক্ষের একজন ফাবিয়াকে উদ্দেশ্য করেই বলে উঠে,
“হায় আল্লাহ পাত্রী তো এসিড ভিক্টিম।”
#চলবে
#কুয়াশার_মাঝে_তোমার_দেখা
#তাওহিয়া_আক্তার
#সূচনা পর্ব
আসসালামু আলাইকুম। গল্প কেমন লাগলো জানাবেন।