#কুয়াশার_মাঝে_তোমার_দেখা
#তাওহিয়া_আক্তার
#পর্ব-০২
পাত্রপক্ষের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছি।অনুতাপে নই রাগে মাথা নিচু করে বসে নিজ রাগ সংযত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।এদিকে পাত্রপক্ষ আমার মা’কে যা নয় তাই বলে অপমান করছে।পাত্রের মা আমার মা’কে বলে,
“আগে বললেই পারতেন আপনার মেয়ে একজন এসিড ভিক্টিম তাহলে তো আর আমরা আপনার মেয়েকে দেখতে আসতাম না।আর যেভাবে আপনার মেয়ের মুখ নষ্ট হয়েছে সেখানে আমার ছেলে কেনো কোনো ছেলেই এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে না।”
“কিন্তু ভাবি আমার মেয়েটা কিন্তু গুণী অনেক।”
“আরে ভাবি গুণ দিয়ে কি করবো?লোকে তো আর গুণ দেখবে না,দেখবে রুপ আর তারও যে দশা তাতে তো এই মেয়ে নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।”
ফাবিয়ার মা চুপ হয়ে যায়।পাত্রের ফুপি বলতে শুরু করে,
“ভাবি আশেপাশে চেয়ে দেখলাম আপনাদের তো তেমন কিছুই নি। না আছে টাকা পয়সা আর না’ই বাহ আছে মেয়ের রুপ।তার উপর ভাবি আপনি নাকি লোকের বাড়ি কাজ করেন। তা আমাদের হিরোর টুকরো ছেলের গলায় আপনার মেয়ে ঝুলাতে একটুও কি বাঁধছে না।”
পাত্রের মা টিটকানি মেরে বলে উঠে,”আরে বাঁধবে কি করে নিজে তো করে ঝি’য়ের কাজ, মেয়েটাও ভবিষ্যতে তাই করবে।তা না মেয়েকে বিল্ডিং বানাচ্ছে।তা ভাবি শুনেছি ভাইয়া’ও বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছে। ভাইয়া’ও বুঝি বড়লোকের ছেলে ছিলো নাকি আপনার মতোই লোক ঠ*কানোর কাজ করতো।”
ফাবিয়া আর চুপ থাকতে পারলো না। গর্জে বলে উঠল,”যথেষ্ট হয়েছে আমার এবং আমার মায়ের খুত ধরা এবার আমি একটু আপনাদের খুঁত ধরি?”
পাত্রের ফুপি হেসে উঠে বলে,”কি বলো মেয়ে?তুমি তো এমনিই মুখ পোড়া তুমি কি’না আমাদের খুত ধরবে?ব্যাপারটা তো খুব হাস্যকর।তা মেয়ে শুনি তুমি কিভাবে খুঁত ধরবে?”
ফাবিয়া মুচকি হেসে পাত্রকে প্রশ্ন করা শুরু করে।
“তা মিস্টার পাত্র মশাই,কোন পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন শুনি?”
ফাবিয়ার মা মেয়ের রাগ সম্পর্কে অবগত তাই মেয়েকে সামলিয়ে বলে,”ফাবু চুপ কর।”
“না আম্মু এতোক্ষণ উনারা কথা বলেছে আমি শুনেছি এখন আমি বলবো উনারা শুনবে। আর এরমধ্যে কেউ আমাকে আটকাবে না।”
পাত্রের মা হকচকিয়ে বলে,”এটা কেমন প্রশ্ন?পাত্রকে এসব কেউ প্রশ্ন করে?”
ফাবিয়া হাতের ইশারায় পাত্রের মা’কে বলে,”ওয়েট বস,পার্টি তো আভি শুরু ভি নেহি হুয়ি ওর আপ ইতনা এক্সাইটেড, বাহ?”
“কি বলছো কি এসব?”
“প্রশ্ন আমি করছি সো উত্তর নিয়েই ছাড়বো।তা মিস্টার পাত্র উত্তর কি আপনি দিবেন নাকি আপনার মা?”
পাত্র আমতা আমতা করে বলে,”আ…আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি।”
“ওহ গ্রেট তাহলে বলুন তো, ❝What is the full meaning of HSC?❞
পাত্র তার পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘামটুকু মুছে নেয়।তারপর সামনে থাকা পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সেই সব পানি খেয়ে নেয়। পাত্রের এমন করুন অবস্থা দেখে ফাবিয়া নিজের হাসি আটকে রাখতে পারে না।অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে,
” কি মিস্টার পাত্র মশাই? এই সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তোমার ঘাম বেরিয়ে গেলো, হা হা হা সো ফানি।”
পাত্রের মা একটু রেগে বলে উঠে,”এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে,আমার ছেলের ইন্টারভিউ নেওয়ার?একেই তো নিজেই মুখ পোড়া আবার আমার ছেলের দোষ বের করছো?”
“চুপ,একদম চুপ।ডোন্ট কল মি,মুখ পোড়া।আ’ম দ্য এসিড ভিক্টিম। আর যারা আমার এই মুখটাকে পুড়িয়েছে না তারাও আপনার ছেলের মতোই ছেলে।সো ভুলেও মুখ পোড়া বলতে আসবেন না।আর যতদূর আমার রুপ নিয়ে কথা বলছেন না?আমার রুপ নেই কিন্তু আপনার হিরোর টুকরো ছেলের ম্যা ম্যা ছাড়া সার্টিফিকেট সাথে যোগ্যতা নেই।”
পাত্রের ফুপি রেগে বলে,”এই মেয়ে তুমি তো বড়দের সম্মানই করতে পারো না আবার আমাদের ছেলের যোগ্যতা তুলে কথা বলছো?”
“ও আপনারা ঠিক আমার মা’কে কি সম্মানটাই দিয়েছেন যে আমার কাছে আপনাদের জন্য সম্মান আশা করেন?”
“এতো চ্যা*টাং চ্যা*টাং কথা যে কও তোমার যোগ্যতা কি শুনি?”
ফাবিয়া পুনরায় মুচকি হেসে বলে,”আমার যোগ্যতা, ওকে ফাইন আমি বলছি।আপনারা ঝি’য়ের বাড়ি এসেছেন ঠিক আছে,পাশাপাশি আপনারা একজন লয়ারের কাছেও এসেছেন।আমি একজন ল’য়ের স্টুডেন্ট। এখুনি যদি চাই না লোক হ্যা*রাজের কেসে আপনাদের জেলে ভরতে পারি।”
ল’য়ের স্টুডেন্ট কথাটা শোনা মাত্রই পাত্রের মা আর ফুপির মুখটা চুপসে যায়।ফাবিয়া রেগে বলে,
“এখুনি যান আমার বাড়ি থেকে। আপনারা কি আমাকে রিজেক্ট করবেন এই পোড়ামুখী মেয়েই আপনার হিরোর টুকরো ছেলেকে রিজেক্ট করছে।বেরিয়ে যান।”
ফাবিয়ার ধমকে পাত্রসহ তার পরিবার বেরিয়ে যায়।অতিথি যাওয়ার সাথে সাথেই ফাবিয়া রেগে বসে পরে।ফাবিয়ার মা ফাবিয়ার কাছে গিয়ে বলে,
“কি দরকার ছিলো পাত্রের মায়ের সাথে এমন তর্ক করার?ওরা কি আমাকে নিয়ে ভুল কিছু বলেছে।”
ফাবিয়া মায়ের মুখে এসব কথা শুনে রাগ সংবরণ করতে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।পিছন থেকে ফাবিয়ার মা মিসেস পারভীন অনেক ডাকে কিন্তু ফাবিয়া কোনো জবাব দেয় না।
ফাবিয়া দরজা আটকিয়ে এক দৃষ্টিতে তার মুখ দেখতে থাকে। মুখের এক অংশে মাংস উঠে এসেছে,ইতিমধ্যেই সেখানে কালচে দাগ হয়ে গিয়েছে।ফাবিয়া ভাবছে,একসময় এই রুপের জন্য কত্ত ছেলে তার পিছে ঘুরেছে আর আজ কি’না এই রুপের জন্যই তাকে হেনস্তা হতে হচ্ছে।ফাবিয়া নিজের চেহারা দেখে কাঁদতে থাকে।তারপর নিজেকে সামলিয়ে দরজা খুলে দিতেই ফাবিয়ার মা চটজলদি ঘরে প্রবেশ করে ফাবিয়ার হাত পা দেখতে থাকে।
“তুই নিজের কোনো ক্ষতি করিস নাই তো?
” আমি কি পিচ্চি যে আমার কথা শুনো নি দেখে নিজের ক্ষতি করবো”
“তোকে নিয়ে আমার ভয় হয়।”
“আম্মু ছাড়ো এসব।”
“এই তুই ওদের তোর পড়ার সাব্জেক্ট কইতে গেলি কেন?”
“কেনো কি হয়েছে?”
“তুই জানিস না তোর কেস লড়তে গিয়েই তোর বাবা মারা গেলো এখন আবার তুই ওদের পড়ার সাবজেক্ট বললি?ভয় হয় তো আমার।”
“কিচ্ছু হবে না আমার।”
ফাবিয়ার মায়ের ভয় হলেও মেয়ের সামনে প্রকাশ করে না।ফাবিয়ার মা চলে গেলেই ফাবিয়া পুরনো স্মৃতিচারণে লেগে যায়।
সবে মাত্র ইন্টার লাইফটা শেষ করেছে ফাবিয়া। বাবার অফিসের বদলি নতুন এলাকায় হাজির। নতুন নতুন তখন ফেসবুকে চালাতে শুরু করেছে সে।
ফেসবুকেই এক ছেলের সাথে তার পরিচয়। ঘটনার সাক্ষাৎ এ ছেলেটা মানে তারেক তাদেরই এলাকায় থাকে। একসময় তারেকের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কের চেয়ে বেশি সম্পর্ক হয়ে যায়।ফাবিয়া তারেককে পছন্দ করলেও মুখে কখনোই স্বীকার করে নি।
একদিন তারেকই ফাবিয়াকে প্রপোজ করে বসে।প্রথমে ফাবিয়া বিশ্বাস না করলেও সে তারেকের ফাঁ*দে পা দেয়।
ফোনের টুং মেসেজের শব্দে ফাবিয়া তার স্মৃতিচারণ থেকে বের হয়।ফাবিয়া নিরাশ হয়ে ফোন ধরতেই ফারহান ইসলাম আইডি থেকে মেসেজ আছে।
“কি করছেন ম্যাডাম?”
ফাবিয়ার এসব আলগা প্রেম দেখলেই রাগ উঠে তাই একটু বিরক্ত হয়েই রিপ্লাই দিলো।
“ম*রতে যাচ্ছি।যাবেন?”
“আপনি নিলে ক্ষতি কি?যেতেও রাজি?”
“এসব ফ্লার্ট না অন্য মেয়েদেরকে গিয়ে করুন আমার সামনেও ভুলেও করতে আসবেন না।”
“আচ্ছা তাহলে সোজা কথাই আসি।”
“কি কথা?”
“আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই।”
বন্ধুত্ব কথাটা পড়ে ফাবিয়ার প্রচুর হাসি এলো। তারপর ফাবিয়া উত্তর দেয়,
“হ্যা প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম করতে চাইবেন তাই তো?”
“না না বিশ্বাস করুন আমি ওমন ছেলে না।”
“প্রত্যেকটা ছেলেই বলে আমি ওমন ছেলে না কিন্তু দিনশেষে ওমন ছেলে তেই আসে।”
“তবে কি আমাকে বিশ্বাস করলেন না।”
“জ্বি না করলাম না।”
“কিভাবে আপনার বিশ্বাস অর্জন করতে পারি?”
“আমার বিশ্বাস অর্জন করার এতো প্রয়োজনই বাহ কিসের?”
“বন্ধুত্বের মধ্যে বিশ্বাস না থাকলে কি হয়?”
“আমি কি বন্ধুত্ব করতে চেয়েছি?”
“আমি তো চেয়েছি।আমাকে কি একটুও বন্ধু মনে করা যায় না?নাকি এখনো রেগে আছেন?”
“বন্ধুত্ব করলে কি এই পিছু ছাড়বেন?”
“হুম বলা চলে।”
“ঠিক আছে তাহলে বন্ধু বানালাম কিন্তু এর বেশি কিছু আশা করবেন না।”
“ঠিক আছে।”
ফাবিয়া বেশ বিরক্তই লাগছিলো এই ফারহান ইসলাম আইডি থেকে মেসেজের উত্তর দিতে মানবিক খাতিরে উত্তর দেওয়া। আস্তে আস্তে ফারহান ফাবিয়ার বন্ধুও হয়ে যায়। ফাবিয়াও খুব ইজিলি ফারহানকে বন্ধু বলে মেনে নেয়। কিন্তু একদিন ফারহান এক অদ্ভুত আবদার করে ফেলে।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। গল্প কেমন লাগলো জানাবেন।