#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_13
কপি নিষিদ্ধ ❌
ওসমান ও তিশা পায়ের তালে তাল মিলিয়ে হাটছে,হাটতে হাটতে তিশা বললো,
“Mein yaahaa hoon yahaa “গানটা শুনান না।
ওসমান : এটা কি তোমার ফেবারিট গান।
তিশা : উহুম ফেবারিট না, শুধু আপনি গাইলে আমার ভালো লাগে।
ওসমান মুচকি হেসে গানটা গাইল।
তিশা : [মনে মনে]: আপনি যখন এই গানটা গান, আমার কেন যেন মনে হয় আপনি সবসময় আমার আসে পাশে আছেন, কখনো আপনার শূন্যতা অনুভব হয়না, হাজার মানুষের ভীড়েও আপনার কন্ঠ স্বর শুনে আপনাকে ঠিক খুজে বের করতে পারবো।
ওরা সমুদ্রের কিছুটা সামনে যেয়ে মাটিতে বসে, ছোট ছোট ঢেউ আসায় বার বার সমুদ্রের পানি ওদের পা ছুয়ে দিচ্ছে। ওরা সামনের সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল।
ওমর : আসো পানিতে নামি।
আয়েশা : তোমার কি মাথা খারাপ?
ওমর : হুম তোমাকে দেখার পর থেকে।
আয়েশা ওমরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে পূনরায় সমুদ্রের দিকে তাকাল।
ওমর : চলো আরেকটু ঐদিকে যাই।
ওরা কিছুটা সামনে যাওয়ার পর আয়েশা বলে,
দেখাে ঐখানে কারা যেন বসে আছে।
ওমর : থাকুক বসে আমাদের কি।
আয়েশা : দেখোনা কেমন চেনা চেনা লাগছে একটু সামনে যেয়ে দেখি তো,
ওরা কিছুটা সামনে গেলো,
ওমর : ঐটা তো ভাইয়া আর আপু।
আয়েশা : হুম, একসাথে কতো কিউট লাগছে তাইনা।
ওমর : হুম মেড ফোর ইচ আদার।
আয়েশা : আমি চাই তিশা ও ওসমান ভাইয়ার বিয়ে হোক, তাহলে তুমি আমার বেয়াই হয়ে যাবা।
[কিউট স্মাইল দিয়ে ]
ওমর : আমিও এটাই চাই।
[মনে মনে]: আর আমি এটাও চাই তুমি যেন আমার বউ হও।
ওরা দু’জন অন্যদিকে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর ওরা চার জনই হোটেলে ফিরে আসে।
নিহারিকা রুমে বসে রাগে ফুঁসছে,
নিহারিকা : ঐ মেয়েকে খুব ভালোবাসো, বিয়ে করবে,কিন্তু আমি থাকতে তা কখনো হতে দিবো না, আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি শুধু আমার, ঐ মেয়ে যদি বেঁ*চেই না থাকে তাহলে তুমি কিভাবে ওকে বিয়ে করবে মে*রে ফেলবো হ্যাঁ মে*রে ফেলবো ঐ মেয়ে কে।
বলে বাঁকা হাসি দিল।
পরদিন সকালে,
ওরা সবাই মিলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে,
তিশা : আপু কাল আপনি চলে গিয়েছিলেন কেনো?
নিহারিকা : এমনই ভালো লাগছিলো না তাই রুমে গিয়েছিলাম।
তিশা : ওহ।
নিহারিকা : তিশা তুমি সাঁতার জানো?
তিশা : না আপু।
নিহারিকা : ওহ।
[মনে মনে]: তোকে মা*রা*র ভালো বুদ্ধি পেয়েছি।
ওরা সবাই কথা বলছি আর খাচ্ছিল, হঠাৎ তিশার কাশি উঠে যায়,
ওসমান দ্রুত ওকে পানি খাইয়ে দেয়।
ওসমান : আর ইউ ওকে?
তিশা : হুম।
ওসমান তিশার এতো কেয়ার করছে দেখে নিহারিকার গা জ্ব*লে যাচ্ছে।
নিহারিকা : [মনে মনে]: বেবি যতো ভালোবাসা দেখানোর তা দেখিয়ে নাও, তোমার তিশা কিছুক্ষনপর লা*শে পরিনত হবে।
কিছুক্ষন পর,
ওসমান বিচে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে ও মূলত কিছু ভাবচ্ছে তখনই দুটো হাত ওর চোখ ধরে,
ওসমান : তিশা এটা তুমি।
তিশা ওর চোখ থেকে হাত সরিয়ে বলে,
আপনি বুঝলেন কিভাবে?
ওসমান : ওয়াও নীল শাড়ীতে অনেক সুন্দর লাগছে।
তিশা : বলুননা কিভাবে বুঝলেন।
ওসমান তিশার হাত ধরে বলে,
চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজে বুঝতে পেরেছি, আর কে যে চুড়ি পাগলি তা আমি জানি।
তিশা জিভে কামড় দিয়ে,
ইসস চুড়ি গুলো না পরে ধরলে বুঝতে পারতেন না।
ওসমান : উহুম তোমার উপস্থিতি আমি বুঝতে পারি।
তিশা : কিভাবে?
ওসমান : তোমার গায়ের মিষ্টি সুভাস পেলে আমি বুঝতে পারি তুমি আমার আশে পাশে আছো।
তিশা : বাহ বাহ।
ওসমান : তা এভাবে সমুদ্রকণ্যা হয়ে ঘুরছো কেন।
তিশা : সমুদ্রকণ্যা?
ওসমান : নীল শাড়ী পরে সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে আছো সমুদ্রকণ্যা বলবোনা তো কি বলবো।
তিশা : এতো নাম কই রাখবো।
ওসমান : মনের মাঝে।
তিশা : আমাকে কালোতে সুন্দর লাগে নাকি নীলে সুন্দর লাগে?
ওসমান : দুটোতেই তবে কালোতে অপসরা লাগে।
তিশা : হায় লজ্জা পেলাম।
ওসমান তিশার কথা শুনে হাসলো,
ওসমান : ডাব খাবে?
তিশা : হুম খাওয়া যায়।
ওসমান : তুমি দাড়াঁও আমি নিয়ে আসছি
তিশা : আচ্ছা।
ওসমান ডাব আনতে কিছুটা দুরে গেলো,
তিশা ভাবলো এখানে দাঁড়িয়ে কি করবে হেটে একটু সমুদ্রের কাছে গেলে ভালো লাগবে,তাই সামনের দিকে পা বারালো, তিশা সমুদ্র দেখতে ব্যস্ত ছিল,তখনই কেউ দু’হাত দিয়ে ওকে স্ব জোরে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিল,তিশা সাঁতার জানে না,আর সাঁতার না জানলে পানি পড়লে ঐ ব্যাক্তি প্যানিক করবে এটাই স্বাভাবিক। তিশার বেলাও সেটাই হয়েছে, ও এতটাই দূর্বল হয়েছে যে দুবার চেঁচাতে গিয়েও ডুবে গেছে শেষ বার জোরে চিৎকার দিয়ে “ওসমান” বলে ডুবে যায়।
ওসমান হাতে করে ডাব নিয়ে এদিকটায় আসছিল কিছুটা সামনে যেতেই তিশার চিৎকার শুনতে পেল, হাত থেকে ডাব ফেলে ঝাপ দিল পানিতে,
ইতিমধ্যে অনেকেই সেখানে জড়ো হয়েছে,
আয়েশা ও ওমর দৌড়ে সেখানে আসলো।
ওসমান তিশার খুব নিকটে চলে যায়, পানির প্রায় গভীরে চলে যাচ্ছিল তিশা, ওসমান ডুব দিয়ে ওকে টেনে তুলে সাঁতরে কিনারায় নিয়ে আসলো,
আশেপাশের মানুষ নানারকম কথা বলছে,
একে তো তিশার জ্ঞান ফিরছে না আর এরা কিসব বলছে,ওসমান হুঙ্কার দিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলল,
শাট আপ!!!ও ম*রে নি।আর একবার কেউ মরার কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।
সবাই চুপ হয়ে গেলো।বিড়বিড় করেও কেউ কথা বলছেনা এখন।ধমকে কাজ দিয়েছে।
ওসমান তিশার মুখ টিপে ধরে ঘুরিয়ে হাতের নাড়ি চেক করলো।নাড়ি তো ঠিকই আছে।ওসমান পেটে চাপ দিল আর তিশার মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল
অনবরত,কিন্তু তিশার জ্ঞান ফিরছেনা দেখে ওসমান মাউথ টু মাউথ দিলো তিশাকে, ২/৩ বার দেয়ার পর তিশা কাশতে কাশতে চোখ মেলে তাকায়।
দেখে সবাই ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে এতো মানুষ দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
ওসমান তিশার জ্ঞান ফিরতে দেখে তিশাকে কোলে করে হোটেলে ওর রুমে নিয়ে আসে।
ওসমান : আয়েশা তিশাকে ড্রেস চেঞ্জ করতে হেল্প করো।
আয়েশা : হুম।
ওসমান রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
তিশা : আমি চেঞ্জ করে আসছি।
আয়েশা : আমি হেল্প করবো?
তিশা : তার প্রয়োজন নেই।
একটু পর ওসমান সুপ নিয়ে আসে, ওমর দরজায় নক করে, আয়েশা দরজা খুলে দেয়,ওসমান ভিতরে এসে দেখে তিশা বসে আছে, আয়েশা ওর মাথা মুছে দিচ্ছে।
তিশা : আর মুছতে হবে না।
আয়েশা টাওয়াল টা বেলকনিতে রেখে আসে।
চামচে করে সুপ নিয়ে তিশার মুখের কাছে নিয়ে ওসমান বলে,
হা করো।
তিশা : খেতে ইচ্ছা করছেনা।
ওসমান : কথা না বলে চুপচাপ খাও।
তিশা লক্ষ্য করলো ওসমানের চেহরায় রাগ স্পষ্ট তাই আর কিছু না বলে হা করলো।
ওসমান সম্পূর্ণ সুপ তিশাকে খাইয়ে দিল।
ওসমান : পানি খাও।
তিশা খেয়ে নিল।
একটুপর ওসমান গম্ভীরস্বরে বলে,
তুমি পরলে কিভাবে?
তিশা : আমি পরিনি, আমাকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে।
ওসমান : কি!
তিশা : হুম।
ওমর : আপু আপনি কি তাকে দেখেছেন।
আয়েশা : মনে করে বল।
তিশা : আমি তার মুখ দেখিনি, কিন্তু যখন সে আমাকে ধাক্কা দিয়েছিল তখন এতোটুকু বুঝেছি তার সব আঙুলে আংটি ছিল, আংটিগুলো ধার ধার ছিল।
ওসমান ও ওমর : নিহারিকাই তো সব আঙুলে আংটি পরে।
তিশা : আরে না না উনি কেন হতে যাবে, তার সাথে আমার কোনো শ*ত্রু*তা আছে নাকি।
ওমর : হুম আছে ও হয়তো আপনাকে মে*রে ফেলতে চায়।
ওসমান, তিশা, আয়েশা : কি!
ওমর : দোষ টা আমারই,
ওমর ওদের কালকের কথাগুলো বললো।
ওসমান : তুই কেন ঐসব বলেছিস।
ওমর : আমিতো ঐ গরুর নেহারি টার কাছ থেকে তোমাকে বাঁচাতে এমনটা বলেছি,সবসময় বেবি বেবি বলে তোমার তো মাথা খায় সাথে আমারও কানের বারোটা বাজায়।
ওসমান বের হতে নিলে তিশা ওর হাত ধরে,
তিশা : কোথায় যাচ্ছেন?
ওসমান : নিহারিকার কাছে।
তিশা : এখন আপনার মাথা গরম, পরে যান।
ওসমান : হাত ছাড়ো।
তিশা : বুঝার চেষ্টা করুন এখন যেতে হবেনা।
ওসমান : ছাড়ো হাত, ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে মা*রা*র চেষ্টা করার।
রাগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল,
তিশা : শুনুন, উনি তো চলে গেল,ভাইয়া আপনি ওনার কাছে যান, ওনার মাথা গরম কি করতে কি করে ফেলবে কে জানে।
ওমর : আপু আমি যাচ্ছি ভাইয়ার কাছে, আপনি চিন্তা করবেন না।
ওমরও নিহারিকার রুমের দিকে যাচ্ছে।
নিহারিকা রুমে পায়চারি করছে আর বিড়বিড় করে একা একা কথা বলছে,
ঐ মেয়েটা ম*র*লোনা কেন, যেভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম ওর তো ম*রে যাওয়ার কথা, ওসমান আসতে আসতে তো ওর পানির গভীরে চলে যাওয়ার কথা, সিট আমার প্ল্যান ভেঝতে গেল।নতুন প্ল্যান বানাতে হবে।
দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে ওসমান দাঁড়িয়ে আছে, ওমরও প্রায় চলে এসেছে, ওসমান ভেতর এসে দরজা লাগিয়ে দিল,
ওমর : ভাইয়া দরজা খুলো।
ওসমান রাগি কন্ঠে জোরে বলল,
ওমর চলে যা।
ওসমান এক পা এক পা করে নিহারিকার কাছে যাচ্ছিল।
নিহারিকা : কি হয়েছে বেবি?
ওসমান রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেন এখনই ওকে ভ*স্ম করে দিবে।
রাগী কন্ঠে,
তুমি কি তিশাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলেছো?
নিহারিকা : বেবি আমার কথা শুনো।
ওসমান : আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি,তার উত্তর দাও,তুমি ধাক্কা দিয়েছিলে?
নিহারিকা : আমার কথাটা শুনো।
ওসমান : ইয়েস ওর নো।
নিহারিকা : হ্যাঁ আমি ধাক্কা দিয়েছি মে*রে ফেলবো ওকে,তুমি শুধু আমার ঐ মেয়েকে আমি শে*ষ করে দিব।
নিহারিকার কথা শুনে ওসমানের মাথায় র*ক্ত উঠে গেল।
ওসমান একহাত দিয়ে নিহারিকার গলা চে*পে ধরলো,
#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_14
কপি নিষিদ্ধ ❌
ওসমান একহাত দিয়ে নিহারিকার গলা চেপে ধরলো,নিহারিকা দু হাত দিয়ে ওসমানের হাত ছারোনোর চেষ্টা করছে,ওসমান আরো জোরে চেপে ধরে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে,
তোর সাহস কিভাবে হয় আমার জানপাখিকে মা*রা*র প্ল্যান করার, তোকে এতদিন সহ্য করেছি শুধু ভালোবাসার জন্য, তুই আমাকে ভালোবাসিস আর আমি ভালোবাসাকে সম্মান করি তাই তোকে সহ্য করেছি,আর তুই কিনা আমার ভালোবাসাকে আমার জীবন থেকে সরাতে চেয়েছিলি,তুই আমার
জানপাখিকে মা*র*তে চেয়েছিলি বাট পারিসনি, কিন্তু এখন আমি তোকে মে*রে ফেলবো।
নিহারিকা ছটফট করছে ওসমান হাত সরাচ্ছে না, নিহারিকা চোখ উল্টে আসছে তখন ওসমান ওকে ছেড়ে দেয়,নিহারিকার কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে পানি পরছে,
ওসমান : আর কোনো দিন আমার জানপাখির ক্ষতি করার চেষ্টা করার আগে আজকের দিনটা মনে রাখিস,আর হ্যাঁ আজ ছেড়ে দিলাম,কিন্তু,
পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে, নিহারিকা ইনজেকশনটা দেখে কাপতে শুরু করে,
ওসমান ইনজেকশন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলে,
তুই তো জানিস এর কাজ কি, তাই বলছি আমার জানপাখির থেকে দূরে থাকবি।
ওসমান রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
নিহারিকা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরলো।
ওসমান রুম বসে কপালে দু আঙুল ঠিকিয়ে বসে আছে,তখন তিশা দরজায় নক করে বলে,
ডক্টর সাহেব আসবো?
ওসমান : হুম।
তিশা ভেতরে এসে ওসমানের পাশে বসে,
নিহারিকা আপুকে কি বলেছেন?
ওসমান সোজাসাপটা উত্তর দিল,
ওর গলা চে*পে ধরেছিলাম,
তিশা : কি!
ওসমান : হুমম।
তিশা : আপনার হাঁচ্ছু এত রাগ হাঁচ্ছু কেন?
ওসমান : তোমার ঠান্ডা লেগেছে?
তিশা : হ্যাঁ হাঁচ্ছু পানিতে হাঁচ্ছু ডুবেছি ঠান্ডা তো হাঁচ্ছু লাগবেই।
ওসমান একটা ট্যাবলেট ও এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলো।
ওসমান : ট্যাবলেট টা খেয়ে নাও দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
তিশা খেয়ে নিল।
ওসমান : জ্বর এসেছে?
তিশার কপালে হাত রেখে চেক করে বলে,
যাক ভালো জ্বর আসেনি।
ওসমান স্বস্তির নিশ্বাস নিল।
তিশা : চলুন না হাঁচ্ছু ঘুরে আসি।
ওসমান : চলো।
ওরা সবাই সারাদিন অনেক জায়গায় ঘুরে রাতে ডিনার করে যার যার রুমে চলে গেল।
রিক ও তামিমকে এক রুম দেওয়া হয়েছে,
তামিম ঘুমিয়ে গেছে, রিক একটা গোলাপ হাতে নিয়ে আপন মনে বিরবির করছে,
রিক : তিশা ডার্লিং কাল তোমাকে প্রোপোশ করবো, এত দিন হাতের কাছে পেয়েও ধরতে পারিনি,কাল তোমাকে আমার হতেই হবে, হয়তো সারাজীবনের রানী নয়তো এক রাতের রানী।
বলে শয়তানি হাসি দিল।
সকালে সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছে,
হৃদিকা : সবাইতো এখানে নিহারিকা আপু কোথায়?
সাজ্জাত : ও চলে গেছে।
হৃদিকা : কখন?
সাজ্জাত : কিছুক্ষণ আগে।
হৃদিকা : ওহ।
ওরা সবাই ব্রেকফাস্ট শেষ করে ঘুরে এসে লাঞ্চ করে বিশ্রাম নিচ্ছে।
তিশা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে,
তিশা : হ্যালো কোথায় আপনি?
ওসমান : রুমে ওমরের সাথে কথা বলছি।
তিশা : ওহ, কথা শেষ করে ছাদে আসবেন।
ওসমান : আচ্ছা।
তিশা কল কেটে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
মিস তিশা,
তিশা কারো আওয়াজ শুনে পেছনে ঘুরে দেখে রিক দাঁড়িয়ে আছে,
তিশা তো ওকে দেখতেই পারেনা তাও ভদ্রতার খাতিরে বলে,
জ্বি বলুন।
রিক হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে ফুলের তোড়াটা বারিয়ে দিয়ে বলে,
অনেক দিন ধরে একটা কথা বলবো বলবো করে বলা হচ্ছে না, মিস তিশা আপনি যখন অফিস জয়েন করেন তখন থেকেই আপনার রুপের জালে আমি আটকা পরেছি,আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি,
I love you Tisha.
তিশা দু কদম পিছিয়ে বলে,
সরি মি. রিক আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবোনা,
তিশা চলে যেতে নিলেই রিক ওর ওড়না ধরে টান দেয়,তিশা রাগী কন্ঠে বলে উঠে,
তিশা : আমার ওড়না ছাড়ুন।
রিক : নো ডার্লিং ওড়না তো ছাড়ার জন্য ধরিনি, চেয়েছিলাম সারাজীবনের রানী করতে কিন্তু তা তো হলো না তুমি নাহয় এক দিনের রানী হও।
রিক তিশার ওড়না ছুড়ে ফেলে দিয়ে তিশার হাত ধরে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, তিশা ছাড়ানো চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, রিক যখন তিশার ঘাড়ে মুখ ডুবাতে নেয় তখনই একটা শক্ত হাতের ঘুষ অনুভব করে,রিকের হাত আলগা হয়ে যায় তিশাও সরে আসে,রিক সামনে তাকিয়ে দেখে, ওসমান রাগী চোখে চোয়াল শক্ত করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, রিক কিছু বলতে নিলে ওসমান আবারও রিককে ঘুষি দেয়,রিক দু কদম পিছিয়ে যায় ওর নাক দিয়ে রক্ত পরছে,ওসমান রিককে এলোপাথাড়ি মারছে আর বলছে,
তোর সাহস কি করে হয় আমার তিশার দিকে কুনজরে তাকানোর, ওকে স্পর্শ করার,আজতো তোকে আমি মে*রেই ফেলবো।
ওসমান রিক কে মেরেই যাচ্ছে, রিক নিচে পরে ব্যাথায় কাতারে কাতারে একসময় জ্ঞান হারায়।
তিশা এতক্ষণ ভয়ে কিছু বলেনি রিক কে জ্ঞান হারাতে দেখে ও ওসমানকে থামানোর চেষ্টা করে একটু পর ওসমানও শান্ত হয়ে যায়।
ওসমান তিশার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, ওরা দুজন নিচে ওসমানের রুমে চলে যায়।
ওসমানের রুমে,
ওসমান পায়চারি করছে, তিশা ওর দিকে তাকিয়ে আছে,ওসমান কিছুতেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।
হঠাৎ ওরা বাহিরের থেকে চেচামেচি শুনতে পেল, ওরা রুম থেকে বের হল, বের হয়ে দেখে রিককে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ওরা ছাদ থেকে চলে আসার কিছুক্ষণ পর একটা স্টাফ ছাদে যেয়ে রিককে আহত অবস্থায় মাটিতে পরে থাকতে দেখে তৎক্ষনাৎ ম্যানেজারকে খবর দেয় একটু পর সবাই ছাদে যেয়ে রিককে তুলে এ্যম্বুলেন্সে করে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়।
রাতে তিশা ওর রুমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,
ওর মাথায় বারবার একটা কথাই বারি খাচ্ছে, “আমার তিশা”।
তিশা : উনি কেন বললো আমার তিশা? আচ্ছা আমি যা ভাবছি তাই কি ঠিক?
পরদিন সকালে,
আজ সবাই ঢাকা ব্যাক করবে শুধু তামিম আর তিশাদের কোম্পানির ম্যানেজার রিকের সাথে হসপিটাল থাকবে, রিককে ২ দিনপর ডিসচার্জ দেওয়া হবে।
তিশা ওর রুমে রেডি হচ্ছিল আর ওসমানের কথা ভাবছিল,আজ কাল ওর ভাবনা জুড়ে শুধু ওসমানেরই বসবাস।
তিশা চুল আঁচড়াচ্ছিল তখন দরজায় কেউ নক করে, দরজা খুলে দেখে ওসমান দাঁড়িয়ে আছে।
ওসমান : তুমি, আয়েশা আর ভাবি আমাদের সাথে যাবে।
তিশা : কিন্তু,
ওসমান : কোনো কথা শুনতে চাইনা,দশ মিনিট পর নিচে আসবে।
তিশা বুঝলো ওসমানের রাগের রেশ এখনো কাটেনি তাই তিশা আর কিছু বললোনা।
ওরা সবাই হোটেল থেকে চেকআউট করে বের হল,
তিশাদের কলিগরা সবাই বাসে উঠে চলে গেল।
তিশারাও গাড়িতে করে বের হল।
কিছুক্ষণ পর ওরা প্লেনে উঠল,
ওসমান, তিশা একসাথে, ওমর,আয়েশা একসাথে, সাজ্জাত, হৃদিকা একসাথে, ইয়াসিন, প্রিয়া একসাথে, সামির, রিয়া একসাথে বসেছে।
ওরা ঢাকার এয়ারপোর্টে সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ওসমান ওর ড্রাইভারকে গাড়ি আনতে বলছিল তাই ওনার জন্য অপেক্ষা করছে, কিছুক্ষণ পর গাড়ি চলে আসে ওরাও গাড়িতে উঠে বসে।
ওসমান ও ওমর তিশা, আয়েশাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে, বাসায় চলে আসে।
আজ এক সপ্তাহ হল ওরা ট্রুর থেকে এসেছে,
ওরা আবার নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো,রিক একটু সুস্থ হওয়ার পর কোম্পানি থেকে রিজাইন নিয়েছে,ও না থাকায় তিশা এখন শান্তি মত কাজ করতে পারে,
এই একসপ্তাহে তিশার সব দ্বিধা দন্ড কেটে গেছে ও বুঝতে পেরেছে,ও ওসমানকে ভালোবেসে ফেলেছে, খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে, এখন শুধু ওসমানকে বলার পালা।
তিশা অফিসে বসে ভাবছে কিভাবে ওসমানকে ভালোবাসার কথা টা বলবে,
ওর ভাবনার সুতো ছিড়ে হৃদিকার কথায়,
হৃদিকা : এই নাও আমার বিয়ের কার্ড,একসপ্তাহ পর মেহেদী অনুষ্ঠান, তারপরদিন হলুদ, তারপর দিন বিয়ে আর শেষে বউভাত।
তিশা কার্ডটা নিয়ে হৃদিকাকে প্রশ্ন করে,
তিশা : তুমি এই বিয়েতে খুশিতো?
হৃদিকা : হুম, আমি খুশি,তোমার কথা মতো আমি মুভ অন করেছি,সাজ্জাতের সাথে মিশেছি ওকে জানার চেষ্টা করেছি, পরিশেষে বুঝতে পারলাম সাজ্জাতই আমার জন্য বেস্ট শোভন নয়।
তিশা উত্তরে মুচকি হাসলো।
হৃদিকা : আসবেতো আমার বিয়েতে?
তিশা : আবার জিগায়।
হৃদিকা মুচকি হেসে বাকিদের কার্ড দিতে চলে গেল।
In Wahid Hospital,
সাজ্জাত : এই নে বিয়ের কার্ড।
ওসমান ও ওমর : তোরই কপাল বিয়ে করে ফেলছিস,আর আমরা প্রেমও করতে পারলাম না।
সাজ্জাত : প্রেম করছিস না কি করেছিস তা আমি কক্সবাজারেই দেখেছি, দু’জনই তো আমার শালি সাহেবাদের পিছে পিছে ঘুরেছিস।
ওসমান : পিছে পিছে না পাশে পাশে ঘুরেছি।
ওমর : তোর শালি তো আমাদের বেয়াইন, আর বেয়াইনের সাথে ঘুরবো নাতো কার সাথে ঘুরবো।
সাজ্জাত : ঘুর তাতে আমার কি আমি তো বিয়ে করছি এটা বড় কথা, আচ্ছা আমি যাই বাকিদের কার্ড দিতে হবে, তোরা বিয়েতে চলে আসবি নাহলে কিন্তু খবর আছে।
ওসমান ও ওমর : ওকে ব্রো।
রাতে তিশা আয়েশা রুম যেয়ে আয়েশার হাত ধরে ওকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বলছে,
আই অ্যম ইন লাভ, আই অ্যম ইন লাভ,আই অ্যম ইন লাভ।
আয়েশা : থাম থাম আর ঘুরাইসনা আমার চারপাশ গোল গোল ঘুরছে,
ওরা দু’জন বিছানায় শুয়ে হেসে দিল।
আয়েশা : তুই প্রেমে পরেছিস?
তিশা লজ্জা পাওয়ার ভান করে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে মাথা উপর নিচ করে।
আয়েশা : সিরিয়াসলি! কার প্রেমে পরলি?
তিশা আবারও ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বলে,
ডক্টর সাহেবের।
আয়েশা : সত্যি!
তিশা আবারও মাথা উপর নিচ করে।
আয়েশা জোরে চিল্লিয়ে বলে,
ইয়াহু, ওয়ে বাল্লে বাল্লে ওয়ে সাবা সাবা,আমার জানু প্রেমে পরেছে, লেটস নাচো।
ওরা নাগিন শং ছেড়ে নাগিন ডান্স দিল💃, নাচতে নাচতে হয়রান হয়ে আবারও বিছানায় শুয়ে পরলো।
আয়েশা : ভাইয়াকে কিভাবে বলবি।
তিশা : জানিনা।
আয়েশা : তাের বলতে হবে না, দেখিস ভাইয়াই তোকে প্রোপোশ করবে।
তিশা : সত্যি বলছিস!
আয়েশা : হুম শুধু একটু অপেক্ষা কর।
তিশা : হুম।
আয়েশা : চল খুশির ঠেলায় আবারও নাচি।
তিশা : লেটস নাচো।
ওরা আবারও নাচানাচি শুরু করলো।💃
পরদিন সকালে,
তিশা : আপনারা ঠিক সময় চলে আসবেন।
চলবে কি?
[