তি আমো পর্ব -৫০+৫১

#তি_আমো
পর্ব ৫০
লিখা- Sidratul Muntaz

মেয়েটি সিজনোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। সে তার আশেপাশে উদ্ভট সব আওয়াজ শুনতে পায়। পরিবারের সকলকেই সন্দেহের নজরে দেখে। তার ধারণা তাকে সবাই হ/*ত্যা করতে চায়। এই বিড়ম্বনায় সে নিজেই কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।

ঈশান মেয়েটিকে বেশ কয়েকবার একই প্রশ্ন করল,” তোমার নাম কি?”

মেয়েটি নিরুত্তর। সে নির্বিকার তাকিয়ে আছে দেয়ালে টানানো মস্তিষ্কের ছবিটির দিকে। এখানে আসার পর তার চেহারার মাঝে একটি রাগান্বিত ভাব তৈরী হয়েছে। ভাবটা ক্রমশ বাড়ছে। ঈশান হার মেনে মেয়েটির সঙ্গে আসা গার্ডিয়ানকে বলল,” ওকে আগে একজন ভালো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যান।”

ভদ্রমহিলা জবাব দিলেন বিনীত ভঙ্গিতে,” সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে ও একবার গিয়েছিল। কিন্তু ঔষধ খাওয়াতে পারিনি। আপনি একটু বলে দিন যেন সে ঔষধ খায়।”

ঈশান মেয়েটির দিকে চেয়ে বলল,” শোনো, তুমি ঔষধ খাও না কেন? যদি ঔষধ না খাও তাহলে তুমি কখনোই সুস্থ হতে পারবে না।”

মেয়েটি সহসা ঈশানের হাত খামচে ধরল। মেয়েটির মা দ্রুত ছুটে এলেন বাঁধা দিতে। কিন্তু ঈশান হাতের ইশারায় ভদ্রমহিলাকে থামতে নির্দেশ দিল। মেয়েটি ঈশানের হাত ধরেই রাখল। ঈশান কোমলভাবে তার হাতে মালিশ করে বলল,” এখন থেকে তুমি তোমার মায়ের সব কথা শুনবে। তিনি মা হয় তোমার। কখনও তোমার ক্ষতি করবেন না। আমার কাছে তিনিই তোমাকে এনেছেন। কারণ তিনি চান তুমি সুস্থ হও।”

মেয়েটি নিষ্পলক ঈশানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ঈশান একটি নোটপ্যাডে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের ফোন নাম্বার ও এড্রেস লিখে দিয়ে বলল,” ওর অবস্থা মোটামুটি সিরিয়াস। তাই আমি ওকে খুব ভালো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। ওখানে গিয়ে দেখতে পারেন। আর এক সপ্তাহ পর ঠিক এইসময় ওকে আবার নিয়ে আসবেন।”

” ওকে স্যার। থ্যাঙ্কিউ। ”

” মাই প্লেজার।”

ঈশান মেয়েটির দিকে চেয়ে কোমল স্বরে বলল,” আজকে বিদায়। আবার দেখা হবে।”

মেয়েটি প্রতিউত্তর করল না। কেবল তাকিয়ে রইল। তার চেহারায় এখন রাগান্বিত ভাবটি নেই। দৃষ্টি মসৃণ; তবে সে ধ্যানমগ্ন। তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে তার দুইজন ভাই এলো। তারা ধরাধরি করে মেয়েটিকে নিয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটি তখনও ঘাড় ঘুরিয়ে অপলক দেখছিল ঈশানকে।

রাতে খাওয়ার সময় তারিফ খোশমেজাজে বলল,” তারুর জন্য একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে৷ তোমার পার্বতী খালার কথা মনে আছে মা? তার ছেলে নাকি ফ্রান্সে জব করে। তারুকে নেওয়ার কথা বলছিল।”

তারিনের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তীব্র অসন্তোষ নিয়ে সে তাকাল মায়ের দিকে। আয়েশা বিব্রত হয়ে পড়লেন। ভীত চোখে একবার ছেলের দিকে তো আরেকবার মেয়ের দিকে তাকালেন। তারিফ তারিনের মুখের অবস্থা লক্ষ্য করে বলল,” ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। বিয়ে তোকে অবশ্যই করতে হবে। আজ নাহয় কাল।”

তারিন কঠিনগলায় বলল,” এসব কথা কি এখন বলা খুব জরুরী? আমি বিয়ে নিয়ে চিন্তাই করতে চাইছি না ভাইয়া।”

” কেন? কি সমস্যা?”

এদের দু’জনের মধ্যে আবার ঝগড়া না বেঁধে যায় তাই আয়েশা দ্রুত বললেন,” তারুর কি এখনও বিয়ের বয়স হয়েছে? আজকাল মেয়েরা পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরে বিয়ে করে। তারুর তো এখনও তেইশ বছরও হয়নি।”

” বয়স কোনো ফ্যাক্ট না মা। তোমার মেয়ে কেন বিয়ে করতে চায় না সেটা তুমিও জানো আমিও জানি।”

তারিন রেগে গেল। তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ আওয়াজে বলল,” কি বলতে চাও তুমি?”

তারিফ গরম দৃষ্টিতে তাকালো। আঙুল উঠিয়ে বলল,” গলা নিচে। চুপচাপ খেতে বস।”

” খাওয়ার মুড নষ্ট করে দিয়েছো।”

তারিন হাত ধুঁয়ে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল। তারিফ কড়া গলায় বলল,” তোমার মেয়ে অনেক বেয়াদব হয়ে গেছে মা। দিন-দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

আয়েশা বিরক্তিভরা কণ্ঠে বললেন,” প্রতিদিন বিয়ের কথা তুলে তুই ওর মেজাজ খারাপ করিস কেন?”

” ও এখনও ঈশানকে নিয়ে পড়ে আছে। নাহলে বিয়ে করতে ওর প্রবলেম কি?”

” এরকম কিছুই না। ও পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করতে চায়।”

” বিয়ের পর সেটা করা যায় না? আমি থাকতে ওর চাকরির প্রয়োজন কি? তোমাদের সামলাতে আমি একাই যথেষ্ট। ও যদি বিয়ে না করে তাহলে বলো বাড়ি থেকে যেন বের হয়ে যায়।”

আয়েশা খাবার গুছিয়ে নিতে নিতে বললেন,” তুই নিজেও তো বিয়ে করিসনি। তার মানে এখনও তুই মোহনাকে ভালোবাসিস!”

” আরে, এসব কি?”

তারিফের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে গেল। আয়েশা শীতল কণ্ঠে বললেন,” নিজের দোষ বললে সবারই গায়ে ফোসকা পড়ে। তারুকে সারাক্ষণই খোচাচ্ছিস। এবার বোঝ ওর কেমন লাগে!”

তারিফ আর কথা বলার ভাষা পেল না। অগত্যা সেও টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। তারিনের দাদী সূর্যবানু তারিফকে নিজের ঘরে ডাকলেন,” এদিকে আয়। জরুরী কথা হুইনা যা।”

” ভালো লাগছে না দাদী। পরে কথা বলব।”

” আরে, তারুর বিয়ার ব্যাপারে।”

এই কথা শুনে তারিফ থামল এবং দাদীর ঘরের দিকে পা বাড়াল।

তারিন ঘরে এসে বসতেই নিহার মেসেজ পেল। অনেকদিন ধরে নিহার খোঁজ নেওয়া হয় না। অজস্র মেসেজ জমে আছে নিহার। তারিন ইদানীং এতো ব্যস্ত থাকে যে রিপ্লাইও দেওয়া হয় না৷ তাই সে আজ সরাসরি নিহাকে ফোন করল। মেজাজটা ভালো নেই। নিহার সাথে কথা হলে ভালো লাগতে পারে।

” হ্যালো নিহা, কেমন আছিস?”

” তোকে একটা থাপ্পড় দিলে বুঝবি আমি কেমন আছি। এই তুই এতো দূরে কেন? আমার কাছে আয়। তোকে থাপড়ানোর জন্য হাতটা আমার চুলকাচ্ছে।”

তারিন হাসতে হাসতে বলল,” তোর পুচকি কেমন আছে?”

” হয়েছে আর ঢং দেখাতে হবে না। আমার পুচকিকে নিয়ে যে তোর কত চিন্তা সেটা তো খুব ভালো করেই জানি। একবছর হতে চলল, একবার তো দেখতেও এলি না।”

” কিভাবে আসব বল? এতো ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ইদানীং! আমার ছেলে-মেয়েগুলোর পরীক্ষা।”

নিহা বিস্মিত হয়ে বলল,” ছেলে-মেয়েগুলোর পরীক্ষা মানে? তোর বিয়ে হলো কবে? এই, তুই আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে বাচ্চাও নিয়ে ফেলেছিস? কয়টা বাচ্চা হয়েছে? টুইন হয়েছিল নাকি?”

তারিন রাগী কণ্ঠে বলল,” নিহা, ইয়ার্কি ভাল্লাগে না সবসময়। ছেলে-মেয়েগুলো মানে আমার স্টুডেন্টদের কথা বলছি। যাদের আমি পড়াই।”

নিহা শান্ত হয়ে বলল,” ও আচ্ছা। তো সেটাই না বলবি! আচ্ছা শোন, সামনে কিন্তু আমার মেয়ের বার্থডে। তুই সিলেট আসছিস কবে?”

” ভাইয়া বলেছিল তার পরিচিত কিছু মানুষদের নিয়ে একটা গেট টুগেদার করবে। মানে সিলেটে আমাদের যে গেস্ট হাউজ আছে সেখানে।”

” কবে সেটা?”

” এইতো, এই মাসের শেষদিকে।”

” ওয়াও, আমার মেয়ের বার্থডেও তখন। তুই আসিস প্লিজ।”

” নিশ্চয়ই আসব। কতদিন তোকে দেখি না! আমারও তো ইচ্ছে করে দেখা করতে।”

” ইশ, ইচ্ছে করলে এতোদিনে ঠিকই আসতি। আমি তো অসুস্থ ছিলাম। ছোট বাচ্চা নিয়ে কোথাও যাওয়াও ঝামেলা। আমার অসুস্থতার সময় তো মা এসেছিল। তুই মায়ের সঙ্গে এলি না কেন?”

” ব্যস্ত ছিলাম রে!”

” ওই একটাই এক্সকিউজ পেয়েছিস। খালি ব্যস্ত আর ব্যস্ত!”

” তোর মেয়ের নামটা যেন কি?”

” তিশা। সাফিন পছন্দ করে রেখেছে।”

” খুব সুন্দর নাম।”

” তোকে রিসেন্ট কিছু ছবি পাঠিয়েছি। মেসেজও তো চেক করিস না। দেখিস, এখন একদম বাবার মতো লাগে। প্রথম প্রথম তো আমার মতো লাগতো।”

” আচ্ছা, দেখব।”

ঈশান একদিন তার বাড়ির জিমনেসিয়ামে পুশ আপস করছিল। ঘড়িতে সকাল সাতটা। নিহার ফোন তখনি এলো। হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওকল। রিসিভ করতেই ভেসে উঠল নিহার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা।

” হ্যালো ঈশান ভাইয়া, কেমন আছেন?”

” আলহামদুলিল্লাহ। তোর কি খবর নিহা?”

” আপনি তো একদম হলিউডের হিরো হয়ে গেছেন। জিম-টিম করে এলাহী অবস্থা!”

ঈশান হেসে জিজ্ঞেস করল,” সাফিন কোথায়? তোর মেয়ে কেমন আছে?”

” সবাই ভালো আছে। আপনাকে তো ফোন করেছি দাওয়াত দিতে। আমার মেয়ের জন্মদিন এই মাসের শেষদিকে। আপনি যদি এইবার বাংলাদেশে না আসেন আমি কিন্তু জন্মদিনই করব না। আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে।”

ঈশানের চেহারায় দুশ্চিন্তা ভর করল। বাংলাদেশের নাম শুনলেই তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠে একটি মিষ্টি মুখ। সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঝড় বয়ে যায়। তোলপাড় করে দেয় সবকিছু। ঈশানের নীরবতা দেখে নিহা কটমট করে বলল,” আসবেন না? আমি কিন্তু খুব রাগ করব। জীবনেও আপনার সঙ্গে কথা বলব না।”

” আচ্ছা দেখি…. আমি পরে জানাব।”

” এসব বললে তো হবে না। আপনাকে কথা দিতে হবে। বলুন আপনি অবশ্যই অবশ্যই আসবেন।”

” আচ্ছা, আসব।”

” কথা দিচ্ছেন?”

ঈশান ইতস্তত করে বলল,” আচ্ছা, দিচ্ছি।”

একজন ক্লায়েন্ট এসে দরজায় কড়া নাড়ল। তাই ঈশানকে সংক্ষেপে কথা শেষ করে ফোন রেখে দিতে হলো। ক্লায়েন্ট একজন ছেলে। তার চাল-চলন খুবই অশান্ত।

” স্যার, আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?”

ঈশান নির্দ্বিধায় বলল,” শিউর।”

ছেলেটি রুমে ঢুকেই অগোছালোভাবে ঈশানের সামনে বসল। ঈশান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,” একটু অপেক্ষা করুন। আমি আসছি।”

ঈশান পাঁচমিনিটে হাতমুখ ধুঁয়ে এলো। ছেলেটি ব্যস্ত হয়ে কিছু বলতে নিলেই ঈশান ঠান্ডা স্বরে বলল,” আগে আপনি শান্ত হোন। নিজের নাম বলুন।”

” আমি চার্লস ডার্ক।”

” আচ্ছা, চার্লস। কি সমস্যা আপনার?”

” আমি কিছুদিন ধরে খুব কনফিউশনে আছি।”

” কি ধরণের কনফিউশন?”

ছেলেটি সরাসরি প্রসঙ্গে এলো,” আমি কাউকে ভালোবাসি কি-না এটা বোঝার উপায় কি? একসঙ্গে দুইজনকে কি ভালোবাসা যায়?”

” আরেকটু ডিটেলস বলুন। আপনি কি দু’জনকে একসঙ্গে ভালোবাসতে চান?”

ছেলেটি এরপর যা বলল তার সারমর্ম কিছুটা এমন- সে দু’টো মেয়েকে ভালোবাসে। দু’জনকেই সে ভীষণ পরিমাণে চায়। কিন্তু দু’জনকে একসঙ্গে বিয়ে করা যায় না। আবার সে কাউকে ছাড়তেও পারছে না। দুইটি মেয়ের সঙ্গেই সে আলাদাভাবে প্রেম করে হাঁপিয়ে উঠেছে। এখন সে এর সমাধান চায়।

ঈশান মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা শোনার পর অবলীলায় বলল,” দু’জনকেই ছেড়ে দিন।”

ছেলেটি এই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। উদগ্রীব কণ্ঠে বলল,” এটা কি বলছেন স্যার? আমি ওদের একজনকে ছাড়াই থাকতে পারছি না। তাহলে দু’জনকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো? আর তারাও আমাকে ছাড়তে রাজি না।”

” যখন ওরা কেউই আপনার জীবনে ছিল না তখন কি আপনি বেঁচে ছিলেন না?”

” হ্যাঁ ছিলাম। কিন্তু এখন তো ওরা আছে। আমি ওদের ভুলবো কিভাবে?”

” কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখলে এমনিই ভুলে যাবেন।”

” আপনি ব্যাপারটা এতো হালকাভাবে দেখছেন কেন?”

” আপনিও হালকাভাবে দেখুন। ধরে নিন আপনার দুই প্রেমিকার মধ্যে কেউ অন্ধ হয়ে গেল। কিংবা এক্সিডেন্ট করে পা হারালো। আপনি কি তবুও তাদের সঙ্গে নির্দ্বিধায় জীবন কাটাতে পারবেন? তাদের যত্ন নিতে পারবেন? সারাজীবন পাশে থাকতে পারবেন?”

ছেলেটি এবার দ্বিধায় পড়ে গেল। ঈশান আলতো কণ্ঠে বলল,”ওদের কাউকেই আপনি ভালোবাসেন না। শুধু পছন্দ করেন। তাদের দু’জনের মধ্যে নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে! আপনি শুধু সেই বৈশিষ্ট্যগুলোকে পছন্দ করছেন। যেমন একটা যন্ত্রের কথা চিন্তা করুন। মোবাইল ফোন, আমাদের খুব দরকারি জিনিস। মোবাইলে প্রায় সব ধরণের বৈশিষ্ট্য আছে যা আমাদের এন্টারটেইন করতে পারে। কিন্তু গরম লাগলে আমাদের দরকার হয় এসি।এর মানে দু’টোর বৈশিষ্ট্য আলাদা। দু’টো জিনিসই আমাদের কাজে লাগে, আমরা এসব ছাড়া আরামে চলতে পারি না। কিন্তু এগুলো আমাদের ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা হচ্ছে সেই জিনিস যেটা আমাদের আরামের জন্য নয়, শান্তির জন্য প্রয়োজন হয়। আমরা সেই জিনিসটি আগলে রাখি, যত্ন নেই। হতে পারে সেটা একটি গাছ, কিংবা একটি প্রাণী। তাদের যত্ন নিলে আমরা অজান্তেই শান্তি অনুভব করি।”

ছেলেটি মনোযোগ দিয়ে শুনছিল আর কিছু একটা ভাবছিল। ঈশান চেয়ারে ঠেস দিয়ে আরাম করে বসল। বেপরোয়া কণ্ঠে বলল,” তারা কেউই আপনার ভালোবাসা নয়। তারা আপনার প্রয়োজন। প্রয়োজন ছাড়াও আমরা থাকতে পারি। কিন্তু শান্তি ছাড়া থাকা খুব মুশকিল…”

ঈশানের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলো এক মুহূর্তের জন্য। একটু পর বড় করে শ্বাস ছেড়ে বলল,” আপনি তাদের সঙ্গে অন্তত দুইমাস যোগাযোগ বন্ধ রাখুন। আশা করি এতে আপনি শান্তি হারাবেন না বরং অভ্যাসের কিছু পরিবর্তন হবে।”

” স্যার, আমি কি আপনার সাথে দুইমাস পর আবার দেখা করতে পারি?”

ঈশান হাই তুলে বলল,” আপনি চাইলে দুইদিন পরেও আসতে পারেন।”

” থ্যাঙ্কিউ স্যার।”

ছেলেটি ঈশানের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে চলে গেল। তখনি বাইরে থেকে ব্যাঞ্জো বলল,” স্যার, একটা মেয়ে অনেকক্ষণ ধরে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে৷ তাকে কি ভেতরে আসতে বলব?”

ঈশান একটু বিরক্ত হলো। আজ সকাল সকাল এতো ক্লায়েন্ট আসছে কেন তার কাছে? সে এখনও এতোটা দক্ষ সাইকোলজিস্ট হয়ে যায়নি যে নিয়মিত তার কাছে ডজন ডজন ক্লায়েন্ট চলে আসবে, তারা আবার অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষাও করবে!

ঈশান ক্লান্ত স্বরে জবাব দিল,” ঠিকাছে, বলো।”

ঈশান গায়ে টি-শার্ট জড়ালো। চমৎকার সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে ধীরপায়ে ভেতরে ঢুকছে। মাথা নত, দৃষ্টি আরও অবনত। তার হাতের আঙুলগুলো কাঁপছে, কাঁপছে ঠোঁটের ভাঁজটাও। এক মুহূর্তের জন্য ঈশান থমকে গেল। তারিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। অসহ্য একটা ব্যথা কুঁকড়ে ধরল ভেতরটাকে। ঈশান নিজেকে চট করে সামলে নিয়ে হাসিমুখে প্রশ্ন করল,” আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”

মেয়েটি নম্র কণ্ঠে বলল,” আমি কি এক গ্লাস পানি পেতে পারি?”

এইটুকু বলতেই মেয়েটির সে কি দ্বিধা! ঈশান আন্তরিকভাবে বলল,” নিশ্চয়ই। ”

ঈশান তার পানির বোতল এগিয়ে দিল। বোতলটি নেওয়ার সময়ও মেয়েটির হাত কাঁপছে। ঈশান বলল,” আপনি বসুন, প্লিজ।”

মেয়েটি দূরে গিয়ে সোফায় বসল। ঈশানের মুখোমুখি চেয়ারে বসল না। ঈশানও এই নিয়ে কিছু বলল না। মেয়েটি যেখানে খুশি বসুক। ঈশানের কাঁধে উঠে বসলেও সে কিছু বলবে না। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের এটা দূর্বলতা। তারা ক্লায়েন্টের সাথে কোনোভাবেই জবরদস্তি করতে পারে না। মেয়েটি আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল,” ইদানীং আমার দৈনন্দিন কাজে খুব অসুবিধা হচ্ছে। আমি কোনোকিছুতে স্বস্তি পাচ্ছি না।”

” কি ধরণের সমস্যা? একটু এক্সপ্লেইন করবেন প্লিজ!”

মেয়েটি একহাতে কপালে আর গালে মালিশ করে বলল,” জ্বী। আমি কাউকে দেখলেই খুব অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছি। যেদিন তাকে দেখি, এমনকি তার কথা মনে পড়ে সেদিনই আমার সর্বনাশ হয়ে যায়। একটা কাজও ঠিকঠাক করতে পারি না। না ঘুম, না খাওয়া-দাওয়া। এমনকি পড়াশুনাতেও মন বসে না। আমার মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার শুধু হাত-পা কাঁপে। আর প্রচন্ড লজ্জা লাগে। এখনও লাগছে।”

” রিল্যাক্স… এসব কবে থেকে হচ্ছে?”

” যেদিন থেকে তাকে দেখেছি ঠিক সেদিন থেকে।”

” আচ্ছা। সে কি এসব জানে?”

মেয়েটি হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল। ঈশান অনুমান করেই বলল,” তার মানে সে আপনার ভালোই পরিচিত?”

” উমম… বলতে পারেন। আমার তো মনে হয় তার সাথে বুঝি আমার জন্ম-জন্মান্তরের পরিচয়।”

ঈশান মৃদু হেসে একটু মজা করেই বলল,” যদি সম্ভব হয়, তাহলে তাকে বিয়ে করে ফেলুন। কারণ আপনি তার প্রেমে পড়ে গেছেন।”

এই কথার সাথে সাথে মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাল। এবার সে আরও বেশি কাঁপছে। একহাতে মুখ চেপে ধরে না’সূচক মাথা নাড়তে লাগল। ঈশান ভ্রু কুচকে বলল,” কি হয়েছে?”

মেয়েটি তার জিন্সের পকেট থেকে মোবাইল বের করে ঈশানের সামনে রাখল। তারপর যথেষ্ট লজ্জামাখা কণ্ঠে বলল,” এই সেই মানুষটি।”

ঈশান হতবাক হয়ে গেল। কিছুটা রেগে বলল,” এটা তো আমার ছবি। আপনি কি আমার সাথে ফাজলামো করছেন?”

মেয়েটি ভয়ে উঠে দাঁড়ালো। ঈশান এতোক্ষণে মেয়েটির চেহারা ভালোভাবে লক্ষ্য করল। তার চোখ বড় হয়ে গেল। সবিস্ময়ে বলল,” তুমি ইয়াজিনের বোন উর্বশী না?”

উর্বশী দ্রুত মাথা নাড়ল। ঈশান ক্রোধান্বিত হয়ে বলল,” আমি তোমার ভাইয়াকে জানাচ্ছি দাঁড়াও। পড়াশুনা বাদ দিয়ে এইসব করে বেড়াচ্ছ?”

” আপনি এটা করতে পারেন না। আমি আপনার পেশেন্ট। আর আমি অসুস্থ।”

” এটা কোনো অসুখ না৷ তুমি আর কখনও আমার বাড়িতে আসবে না।”

মেয়েটির ফরসা মুখ লাল হয়ে গেল। চোখ টলমল। সে বের হয়ে যাওয়ার সময় ঈশান ধমকের স্বরে বলল,” তোমার মোবাইল কে নিবে?”

মেয়েটি ফিরে এলো। নতমাথায় মোবাইলটি নেওয়ার সময় বলল,” ইচ্ছে করেই ফেলে গেছি। যেন আবার আসতে পারি।”

ঈশান বাকরুদ্ধ হয়ে গেল৷ তার হতভম্ব দৃষ্টি দেখে মেয়েটি হেসে উঠল। ঈশান কঠিন গলায় বলল,” গেইট আউট।”

দ্বিতীয়দিন উর্বশী আবার হাজির হলো। ঈশান বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে বলল,” তুমি আবার এসেছো?”

উর্বশী ঝট করে ঈশানের মুখোমুখি চেয়ারটায় বসল। কিছুটা রোবটিক স্টাইলে বলল,” বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু চেম্বারে আসতে তো মানা নেই।”

“আমি কিন্তু তোমার ভাইয়ার কাছে সত্যি কমপ্লেইন করব।”

উর্বশী হাত ভাঁজ করে দায়সারাভাবে বলল,” করুন।”

ঈশান সাথে সাথে মোবাইল হাতে নিল। আঁড়চোখে উর্বশীর দিকে চেয়ে সে নাম্বার ডায়াল করতে লাগল। উর্বশী হঠাৎ সটান করে দাঁড়িয়ে গেল। ঈশান কিছুটা আতঙ্কবোধ করছে। উর্বশী তার দিকে একটু ঝুঁকে এসে বলল,” আপনি না মন বিশেষজ্ঞ? মানুষের ফিলিংস নিয়ে গবেষণা করেন? তাহলে আমার ফিলিংসটা কেন বুঝতে পারছেন না? আমি তো ইচ্ছে করে আপনার কাছে আসছি না। আমার মন আমাকে জোর করে নিয়ে আসছে। আমি কত চেষ্টা করছি নিজেকে আটকানোর। কিন্তু…”

উর্বশীর কথা থেমে গেল। তার দৃষ্টিগোচর হলো টেবিলে রাখা ফটোফ্রেমটি। উর্বশী সবিস্ময়ে উচ্চারণ করল,” উনি কে?”

ঈশান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” আমার ওয়াইফ।”

মুহূর্তেই মেয়েটির মুখ সাদা কাগজের মতো শুকিয়ে গেল। পাতলা ঠোঁট দু’টো আলাদা হলো নিজস্ব শক্তিতে। কাজলমাখা ডাগর চোখ দু’টো পানিতে টইটম্বুর। ভেঙে আসা কণ্ঠে শুধালো,” আপনি বিবাহিত?”

ঈশান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,” অফকোর্স। ”

মেয়েটি যেন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে। আহত দৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে সে আবার প্রশ্ন করল,” এটা কিভাবে সম্ভব?”

ঈশান অতি সহজ গলায় বলল,” আরে, আপনি কাঁদছেন কেন? স্ট্রেইঞ্জ!একটা মানুষ কি বিবাহিত হতে পারে না?”

উর্বশীর মনে হলো তার সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর মানুষটি বসে আছে। ‘বিবাহিত’ শব্দটা যে এতো ধারালো হতে পারে তা সে কল্পনাও করেনি। উর্বশী আর একটাও কথা বলল না। দৌড়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে#তি_আমো
পর্ব ৫১
লিখা- Sidratul Muntaz

ওয়াসিফকে পড়াতে এসেছে তারিন। কিন্তু তার দৃষ্টি ঘুরছে আশেপাশে। সামনের বড় টেবিলে একটা ডায়েরী আছে। তারিন সেই ডায়েরীটি নেওয়ার পায়তারা করছে। ফারজানা আন্টি যেকোনো সময় ঘরে চলে আসবেন নাস্তা নিয়ে। তিনি যদি দেখেন যে তারিন তারই ছেলের ডায়েরী চুরি করে পড়ছে, তাহলে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই ভালোভাবে গ্রহণ করবেন না। অতএব ফারজানা আন্টি চলে যাওয়ার পরেই ডায়েরী নিতে হবে। তবে সমস্যা হচ্ছে ফারজানা আন্টি নাস্তা দিতে এসে অনেকক্ষণ বসে গল্প করেন। ততক্ষণে ওয়াসিফের ছুটির সময় হয়ে যায়। এমন হলে ব্যাপারটা মুশকিল হবে। ডায়েরী পড়ার জন্য আবার সামনের সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ওয়াসিফ মাদ্রাসার ছাত্র। সে ক্লাস সেভেনে পড়ে। পুরো সপ্তাহ মাদ্রাসাতেই থাকে। শুধু ছুটির দিনে বাড়ি আসে। তখন তারিন তাকে গণিত পড়ায়। ফাহিমের সাথে ওয়াসিফের সম্পর্ক হলো, তারা কাজিন। ফাহিমই তারিনকে নিয়োগ দিয়েছিল ওয়াসিফকে পড়ানোর জন্য। আগে ফাহিমরা নিহাদের বাড়িতে থাকতো। এখন আলাদা হয়ে গেছে। ফাহিম চাকরি পাওয়ার পর মাকে নিয়ে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে। ফাহিমের বাবা নেই। ঠিক তারিনের মতো। প্রথম যেদিন তারিন ওয়াসিফকে পড়াতে এই বাসায় এসেছিল, তখনি ফাহিমের ডায়েরীটার দিকে তার নজর যায়। তারিন কেবল ডায়েরী হাতে প্রথম পেইজটা পড়ল। দৈনন্দিন জীবনের কাহিনী লেখা। তারিনের ভালোই লাগছিল। হঠাৎ ফাহিম দেখে ফেলল এবং ভীষণ রেগে গেল।

” এটা ঠিক না তারু। কারো অনুপস্থিতিতে পারসোনাল ডায়েরী পড়া খুব বাজে অভ্যাস। রাখো, প্লিজ রাখো ”

তারিন থতমত খেয়ে বলল,” স্যরি, আমি ভেবেছিলাম ওয়াসিফের ডায়েরী।”

” ওয়াসিফের টেবিল পাশেরটা। এইটা আমার টেবিল।”

তারিন রেখে দিতে দিতে বলল,” স্যরি ভাইয়া।”

এই প্রথম তারিন ফাহিমকে এতো রাগতে দেখল। এর আগে কখনও তো ফাহিম এমন শক্ত কণ্ঠে কথা বলেনি! সেই থেকে তারিনের আগ্রহ কিংবা জেদ হলো এই ডায়েরী সে পড়েই ছাড়বে। আজকে ফাহিম বাড়িতে নেই। সুতরাং সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া গেছে ডায়েরী পড়ার। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের বরাবরই আগ্রহ বেশি। তারিনকে জানতে হবে যে ফাহিম ওই ডায়েরীতে কি এমন লিখে!

” আচ্ছা ওয়াসিফ, ফারজানা আন্টি কোথায়?”

” বড়ফুপি ঘুমায়।”

ওয়াসিফের উত্তর শুনে তারিন নিশ্চিন্ত হলো। অর্থাৎ আজ ফারজানা আন্টি নাস্তা নিয়ে আসবেন না। সুতরাং সে নিশ্চিন্তে ডায়েরী পড়তে পারে। তারিন বলল,”আমি তোমার ভাইয়ার বুকশেল্ফ থেকে একটা বই পড়ছি। তুমি অংক করতে থাকো। শেষ হলে আমাকে ডেকো।”

” আচ্ছা মিস।”

তারিন বুকশেল্ফের কাছে এলো। ডায়েরীটা কত যত্ন করে লুকিয়ে রাখা। তারিন হাতে নিল। এবার আর প্রথম থেকে না, মাঝখান থেকে পড়তে শুরু করল। কারণ প্রথম দিকে তেমন আগ্রহপূর্ণ ঘটনা নেই। ফাহিম তার বাবাহীন জীবনে শৈশবের অবহেলা, লড়াই, কষ্ট, ইত্যাদি সম্পর্কে লিখেছে। তারিনের মনখারাপ হচ্ছিল। সে একটা অপরাধ করছে। কারো ব্যক্তিগত জিনিস লুকিয়ে পড়া অনুচিত। কিন্তু কৌতুহলও দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কি এমন আছে এই ডায়েরীতে যে ফাহিম সেদিন এতো রেগে গেল? অন্তত এইটুকু জানার জন্য হলেও তারিন পুরো ডায়েরী পড়বে। সে নিখুঁতভাবে না পড়ে শুধু লেখাগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষের কয়েকটি পেইজে এসে সে থমকে গেল। কারণ এই পেইজগুলোতে ফাহিম তারিনের সম্পর্কে লিখেছে…

তারা। আমার আকাশের একমাত্র তারা। আচ্ছা, আকাশে একটি তারা কি কখনও হয়? আকাশ মানেই তো লক্ষ্য লক্ষ্য তারার সমাবেশ। কিন্তু আমার মনের এই আকাশটা একটি তারাতেই পরিপূর্ণ! এই তারা শুধু দূর থেকে দেখা যায়। কখনও কাছে যাওয়া হয় না। তারা পেতে হলে আকাশের চাঁদ হতে হয়। আমি তো আকাশের চাঁদ না। তাহলে কোন অধিকারে তারাকে চাইব? আমার মনের এই সংকীর্ণতা কখনোই তারাকে মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা জানাতে দেয়নি। আমি বাবাহীন অনাথ ছেলে। বড়চাচার দয়ায় এই বাড়িতে থাকি। তারিনকে চাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। ভেবেছিলাম একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তারিনের যোগ্য হয়ে তাকে মনের সব গোপন কথা বলে ফেলব।

কিন্তু আমার যোগ্য হওয়ার অপেক্ষায় কেউ বসে থাকলে তো! তারিন আজীবনের জন্য আমার কাছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরের সেই আকাশের তারা হয়েই থেকে গেল। আজ তারিনের সাথে ঈশান ভাইয়ের এংগেজমেন্ট হয়েছে। তারা হয়তো সবসময় সুখে থাকবে। হয়তো কি? নিশ্চিত সুখে থাকবে! এই কথা আমি জানি। তবুও তাদের একসঙ্গে দেখলে আমার কষ্ট হয়৷ কেউ আমার আকাশের একমাত্র তারাটি ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এটা মানা আমার পক্ষে মৃত্যুর মতো কঠিন। যখন তাদের একসঙ্গে হাত ধরে হাঁটতে দেখি, অদম্য একটি ঈর্ষার আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে আমার বুকের মধ্যে। দিন দিন আমি পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছি। শ্বাসরুদ্ধকর একটা কষ্টে দম আটকে আসার উপক্রম হচ্ছে। মাঝরাতে প্রায়ই কান্না পায়।

তারা! তুমি কেন আমার হলে না? মানছি আমি ঈশান ভাইয়ের মতো না। আমি তোমার আকাশের চাঁদ না। কিন্তু তুমি যে আমার আকাশের একমাত্র তারা!তোমাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি। তোমাকে বলতে না পারার এই কষ্ট সারাজীবন আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে। আমি কিভাবে থাকব তারা? তুমি কেন আমার জীবনে এলে বলোতো? ধ্যাত!

আমি সবসময় চাইতাম, কোনো একটা আশ্চর্য ঘটুক। ঈশান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়েটা ভেঙে যাক। খুবই স্বার্থপর চাওয়া। ভালোবাসা বুঝি মানুষকে স্বার্থপরও বানিয়ে ফেলে? না, এমনটা নয়। কারণ মেহেন্দীর অনুষ্ঠানে যখন তারিফ ভাই সত্যি তোমাদের বিয়েটা ভেঙে দিচ্ছিল তখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। খুব করে চাইছিলাম যাতে সব ঠিক হয়ে যায়। তোমাদের বিয়েটা না ভাঙে। কারণ তুমি খুব ব্যাকুল হয়ে কাঁদছিলে। তোমাকে অন্যকারো সাথে খুশি দেখার ক্ষমতাটা আমি আয়ত্ত করে নিয়েছি। কিন্তু তোমাকে কষ্টে দেখার ক্ষমতা আমার নেই। আমি সহ্য করতে পারি না। তোমার মুখের হাসি যেন সবসময় অটুট থাকে। রবের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা।

ভালো থেকো তারা। তোমার সুখের জীবনের জন্য শুভকামনা কিন্তু…

তারিন দ্রুত ডায়েরী বন্ধ করল। অস্বস্তিতে দম আটকে আসছে। সে যদি আগে জানতো ডায়েরীতে এইসব লেখা থাকবে তাহলে কখনোই পড়তো না। দ্রুত সে ডায়েরীটা বুকশেল্ফে রেখে দিল। ঠিক যেভাবে ছিল সেভাবেই রাখল। যাতে কেউ বুঝতে না পারে। টেবিলের কাছে আসতেই ওয়াসিফ বলল,” মিস, আর দুইটা অংক বাকি। মনে পড়ছে না। একটু নোট দেখতে পারি?”

তারিন ধমকের স্বরে বলল,” অংক কি তুমি মুখস্ত করো যে বার-বার নোট দেখতে হবে? মনে পড়ে না আবার কি?”

ওয়াসিফ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারিন নিজেকে শান্ত করে বলল,” যা করেছো তাই যথেষ্ট। আর অংক করতে হবে না। বাকিগুলো হোমওয়ার্ক। আমি এখন আসছি।”

দ্রুত ছুটি পেয়ে ওয়াসিফ খুশি হয়ে গেল। সানন্দে মাথা নেড়ে বলল,” ওকে।”

ঈশান বাড়ি ফিরে দেখল মোহনা এখনও জেগে আছে। সে খুব স্বাস্থ্য-সচেতন মহিলা। নিয়মিত ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, ব্যয়াম কঠোরভাবে মেনে চলে। কিন্তু যেদিন ঈশানের বাড়ি ফিরতে দেরি হয় সেদিন সব নিয়ম খু/*ন করে সে দীর্ঘরাত পর্যন্ত জেগে বসে থাকবে। ঈশান সোজা নিজের ঘরে চলে গেল। আগে সে একটা ফ্রেশ শাওয়ার নিতে চায়।

বসার ঘরের সোফায় বসে বই পড়তে পড়তে ঝিমিয়ে পড়েছিল মোহনা। ঈশানের ঠান্ডা হাতের স্পর্শে ঘোর কাটল তার। ঈশান মোহনার মুখের উপর থেকে বইটা সরিয়ে রাখতে রাখতে বলল,” গুড ইভিনিং, মম। এখনও ঘুমাওনি কেন?”

মোহনা হাই তুলে জিজ্ঞেস করল,” কোথায় ছিলি তুই? এতো দেরি লাগল যে!”

” একটা সিরিয়াস ক্লায়েন্ট এসেছিল। তার সাথে ডিসকাস করতে করতেই এতো লেইট হয়ে গেছে।”

মোহনা হাসল। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল,” নিহা ফোন করেছিল। দেশে যেতে বলছে। লিটল গার্লের বার্থডে।”

” আজ সকালে আমাকেও ফোন করেছিল।”

” তাই নাকি? তুই কি বললি? যাবি?”

” জোর করে আমার থেকে কথা আদায় করেছে। যেতেই হবে। এখন ভাবছি..”

” আরে শোন, যাওয়াটা কিন্তু উচিৎ। নিহার মেয়ে যখন হলো তখনি তো আমাদের যাওয়া উচিৎ ছিল। তোর কাজের এক্সকিউজের জন্য আর যাওয়া হলো না। এবার কিন্তু নিহা কড়াভাবে বলে দিয়েছে। যেতেই হবে। ”

ঈশান প্রসঙ্গ ঘুরাতে বলল,” ক্ষিদে পেয়েছে। লেটস হ্যাভ সাম মীল।”

মোহনা গরম দৃষ্টিতে তাকাল,” ঈশান, তোর প্রবলেমটা কোথায় আমাকে বলবি?”

” কিসের প্রবলেম? নো প্রবলেম!”

ঈশান দায়সারা একটা ভাব নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। ফ্রীজ থেকে ডিনারের জন্য সবজি বের করল। চিকেন সিদ্ধ বসালো। ইন্সট্যান্ট কিছু একটা বানাবে সে। মোহনাও উঠে ঈশানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ঈশান বলল,” তোমার জন্য কি বানাবো?”

মোহনা গম্ভীরমুখে বলল,” কিছু না।”

” কেন?”

” আমার কথার জবাব দে আগে তুই। কেন বাংলাদেশে যেতে চাস না? তারিনের জন্য!”

ঈশান চপিং বোর্ডে সবজি কাটতে নিয়েছিল। এই কথা শোনার পর তার চেহারার হাসি উধাও হয়ে গেল। হাত থেকে ছুরিটা ছুঁড়ে ফেলে কিছুটা রাগ নিয়েই বলল,” প্রতিদিন কোনো না কোনো এক্সকিউজে তারিনের নামটা কি তুলতেই হবে?”

মোহনা ছেলের কাছে এসে স্পষ্ট করে বলল,” তারিনের প্রতি যদি তোর উইকনেস না থাকে তাহলে ওর কথা শুনে রেগে যাস কেন? তোর তো নরমাল থাকা উচিৎ। ”

” আ’ম বোরড। প্রতিদিন এক টপিকে কথা বলতে বলতে লিটরেলি টায়ার্ড হয়ে গেছি। আমার ভালো লাগে না, মম।”

মোহনা নিশ্চুপ হলো। ঈশান মেঝে থেকে ছুরিটা তুলে আবার সবজি কাটায় মনোযোগ দিল। মোহনা মাথা নিচু করে থেকে হঠাৎ বলল,” তোকে আমি জন্ম দেইনি বলে কি তোর মনের কথাও বুঝতে পারব না? এতোটাই কেয়ারলেস মা মনে হয় আমাকে?”

ঈশান অবাক হয়ে বলল,” মম, আমি এমন কিছু মীন করিনি..”

ঈশানকে থামিয়ে মোহনা আদেশের কণ্ঠে বলল,” শুধু মুখে না, যদি আমাকে মন থেকে মা হিসেবে মানিস তাহলে আজকে তুই সত্যি কথাটা বলবি।”

” কিসের সত্যি?”

” তারিনের সাথে তোর কি হয়েছিল? কেন তোদের ব্রেকাপ হলো? কেন তুই তারিনের কথা শুনতে চাস না? এমনকি তারিনও কিছু বলতে চায় না আমাকে। এসবের রহস্য কি? কি এমন হয়েছিল তোদের মাঝখানে? প্লিজ ঈশান, মিথ্যা না। একদম সত্যিটা বল।”

” মম, প্লিজ ডন্ট ফোর্স মি। সত্যিটা আমি বলতে পারব না। আর মিথ্যা কথা আমি বলতে চাই না।”

” ঠিকাছে। তাহলে আজকে থেকে আমার সাথে আর একটাও কথা বলবি না তুই।”

ঈশান অসহায়ের মতো তাকাল। মোহনা নিজের ঘরের দিকে চলে যাচ্ছে। পেছন থেকে ঈশান ডাকল,” মম।”

মোহনা থামল না। ঈশান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্নায় মনোযোগ দিল। খাবার রান্না করা শেষ হলে সে নিজেরটা আর মায়েরটা একসঙ্গে বেড়ে ঘরে নিয়ে গেল। মোহনা ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল। ঈশানকে দেখেই দ্রুত ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘুমানোর ভং ধরল। ঈশান টেবিলে শব্দ করে বলল,” আমি জানি তুমি ঘুমাওনি। ওঠো।”

মোহনা জবাব দিচ্ছে না। ঈশান কাছে গিয়ে বলল,” মম প্লিজ, তুমি কি বাচ্চা? বাচ্চাদের মতো জেদ করছ।”

মোহনা তখনও সাড়াহীন। ঈশান অবশেষে হার মানল। বিছানায় বসে লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলল,” ঠিকাছে। যা জানতে চাও সব বলব। কিন্তু তার আগে খেতে হবে। আর… তারিনকে এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।”

মোহনা উঠে বসতে বসতে বলল,” আচ্ছা। আগে তুই বল। খাওয়া-দাওয়া পরে।”

ঈশান সম্পূর্ণ কাহিনী বলার পর মোহনা হতভম্ব হয়ে গেল। তীব্র রাগে ফেটে উঠে বলল,” এইজন্য তুই তারিনের সাথে ব্রেকাপ করবি কেন? এইখানে তারিনের কি দোষ ছিল? ওর ভাইয়ের অপরাধের শাস্তি ও কেন পাবে?”

ঈশান শান্ত কণ্ঠে বলল,” এজন্যই তো আমি ব্রেকাপ করেছি মম। কারণ ওর ভাইয়ের অপরাধের শাস্তি আমি ওকে দিতে চাই না।”

মোহনা ঈশানের কথার কোনো অর্থ খুঁজে পেল না। বিরক্তি নিয়ে উচ্চারণ করল,” মানে?”

” যেদিন থেকে আমি জানতে পেরেছি আশু নামের লোকটিই তারিনের ভাই, সেদিন থেকে বিশ্বাস করো তারিনকে দেখলেই আমার অদ্ভুত একটা কষ্ট হয়, রাগ হয়। আমি মনে হয় বিয়ের পর ওকে সুখে রাখতে পারব না। প্রতি মুহূর্তে মনে হবে, যার ভাই আমার মায়ের জীবন নষ্ট করেছে তাকে বিয়ে করে আমি সুখের সংসার করছি। ইজ ইট পসিবল? এই অনুভূতি নিয়ে বাঁচার চেয়ে তো মরে যাওয়া অনেক ভালো! আমি মৃত্যুকে বেছে নিতে পারি মম। কিন্তু তোমাকে যে ডিচ করেছে তাকে ক্ষমা করতে পারব না। ”

মোহনা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বামচোখ থেকে সরল রেখার মতো টুপ করে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু।একটু পর হতাশাগ্রস্ত কণ্ঠে আওড়ালো,” এর মানে আমার জন্য? আমার জন্য তুই তারিনকে কষ্ট দিলি? আর নিজেও তো কষ্ট পাচ্ছিস।”

” আমি মনে ক্রোধের আগুন নিয়ে তারিনের সঙ্গে থাকতে পারব না। বরং এতে আমরা কেউই ভালো থাকব না। তার চেয়ে এটাই ভালো না যে আমরা আলাদা হয়ে যাই? ও যত কষ্টেই থাকুক, অন্তত আমার থেকে কম কষ্টে আছে। কারণ ওর কাছে আমি প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক। ও আমাকে খুব সহজেই ঘৃণা করতে পারবে। কিন্তু আমি তো ওকে ঘৃণা করতে পারব না। আবার ওই লোকটিকেও ক্ষমা করতে পারব না। আমার বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন মম।”

মোহনার চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। ঈশান ধাতস্থ হয়ে বলল,” ছাড়ো এসব কথা। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। চলো এখন আমরা খাই।”

মোহনা খাওয়ার আগে বলল,” তার আগে আরেকটা শর্ত আছে।”

ঈশান অধৈর্য্য কণ্ঠে বলল,” আবার কি? আচ্ছা, বলো।”

” তোকে আমার সাথে বাংলাদেশে যেতে হবে।”

” ওকে, যাবো। হ্যাপি?”

” হুম।”

কিছুদিন ধরে তারিন ইউনিভার্সিটি যাচ্ছে না। সকালটা সে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ায়। অনেকেরই এখন পরীক্ষা চলছে। তাই সকালে পড়াতে যেতে হয়। সন্ধ্যায় সে বাসায় থাকে। আজকেও সেরকম একটি দিন। তারিন বাসায় বসে পড়াশুনা করছিল৷ তারিফ বসার ঘর থেকে তারিনকে ডাকল,” তারু, এদিকে আয়। জরুরী কথা শুনে যা।”

তারিন বই বন্ধ করল। ভাইয়ার জরুরী কথা মানেই বিয়ে নিয়ে ঘ্যানঘ্যানানি। আজকেও যদি সেরকম কিছু বলে তাহলে তারিন ছাড়বে না। দুই-চারটা কথা শুনিয়ে দিবে। নিজে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে সেদিকে হুঁশ নেই। তারিনকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পরে লেগেছে। আশ্চর্য! চুল বেঁধে একদম তৈরী হয়ে বের হলো তারিন। দেখা গেল মা, দাদী, ভাইয়া সবাই একসাথে বসে আছে। বোঝা যাচ্ছে বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারিন কপালে ভাঁজ ফেলে সবার সাথে বসল। আয়েশা প্রথমে বললেন,” কেমন আছিস মা?”

তারিন এমন উদ্ভট প্রশ্নে অবাক হয়ে চোখমুখ কুচকে ফেলল। সে জবাব দেওয়ার আগেই তারিফ বলল,” যা ভেবেছিস তাই। বিয়ে নিয়েই কথা বলব। কিন্তু আজকে তুই নিষেধ করতে পারবি না। আর তুই নিষেধ করলেও আমরা শুনব না।”

তারিন খুব রেগে কিছু বলতে নিলেই দাদী বললেন,” আগে হুইন্না লো, পাত্রের নাম কি? আগেই চেতিস না। পাত্র হইলো আমার ফাহিম।”

তারিনের বিষম উঠে গেল। আশ্চর্য হয়ে উচ্চারণ করল,” হোয়াট? ফাহিম ভাই? মানে তোমরা কি পাগল?”

আয়েশা হাসতে হাসতে বললেন,” এখানে পাগল হওয়ার কি আছে? ফাহিম খারাপ কই? পাত্র হিসেবে একদম সঠিক।”

তারিন বসা থেকে তড়াক করে উঠে দাঁড়ালো। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে প্রশ্ন করল,” ফাহিম ভাই কি এইসব জানে?”

তারিফ ভ্রু কুচকে জবাব দিল,” জানবে না কেন? সে-ই তো বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সেজন্যই আমরা এখন তোর মতামত চাইছি।”

তারিনের মাথা ঘুরে উঠল৷ অসম্ভব, অবিশ্বাস্য লাগছে ব্যাপারটা। যেই মানুষ এতোবছরেও ভালোবাসার কথা তারিনকে মুখ ফুটে বলতে পারেনি, এমনকি নিজের পছন্দের মেয়েটিকে অন্যকারো সাথে প্রেম করতে দেখেও মুখে কুলুপ এঁটে থেকেছে, শান্ত থেকেছে, সে হঠাৎ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিল? ব্যাপারটা একদম মানতে পারছে না তারিন। সে বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,” তোমরা মিথ্যা বলছ না তো? ফাহিম ভাই সত্যি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে?”

তারিফ বলল,” হ্যাঁ। তো আমি কি বানিয়ে কথা বলছি? আমার কি খেয়ে কাজ নেই? তোর সাথে ড্রামা করব তাও এমন বিষয় নিয়ে! বেকুব!”

তারিন সত্যিই বোকা বনে গেছে। একই সাথে তার ফাহিমের উপর রাগও হচ্ছে। সে তারিনকে জিজ্ঞেস না করে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো কোন সাহসে? তারিন তাকে পছন্দ করে কি-না এটাও কি জানার প্রয়োজন নেই তার? আশ্চর্য তো!”

দাদী বললেন,” ওমা, এমন তব্দা খাইয়া গেলি ক্যান? বিয়াতে রাজি থাকলে কইয়া ফালা! আমরা ব্যবস্থা করি! ফাহিম কইছে ওর মায়রে নিয়া আইবো।”

তারিন গজগজ করে বলল,” অসম্ভব। আমি কোনো বিয়ে-টিয়ে করতে পারব না। আর ফাহিম ভাইকে তো অবশ্যই না।”

তারিন ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল। বিরক্তিতে ফুঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। ফাহিমের আগ বাড়িয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারটি তার অসহ্য লাগছে। একটু পর আয়েশা এসে দরজা ধাক্কালেন,” তারু, শোন মা। তোর সাথে কথা আছে।”

তারিন কাটকাট গলায় বলল,” বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় হলে চলে যাও। আমি এসব শুনতেও চাই না।”

আয়েশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,” ফাহিম বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়নি। তোকে মিথ্যা বলা হয়েছে।”

তারিন দ্বিতীয়বারের মতো অবাক হলো। দ্রুত দরজা খুলেই প্রশ্ন ছুঁড়ল,” এর মানে? তাহলে মিথ্যা কেন বললে? কি শুরু করেছো বলোতো?”

আয়েশা তারিনকে ঠেলে ঘরের ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,” বস। সব স্পষ্ট করে বলছি।”

তারিন মনোযোগী শ্রোতার মতো তাকাল। আয়েশা বললেন,” তুই ভার্সিটিতে যাচ্ছিস না বলে ফাহিম এসেছিল খোঁজ নিতে। তখন তুই স্টুডেন্ট পড়াতে গিয়েছিস। আমি আর তোর দাদী ওকে বসতে বললাম। তারপর আমরাই বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছি। আগে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও তোকে পছন্দ করে কি-না। প্রথমে বলতে চায়নি। তারপর স্বীকার করেছে। ছেলেটা খুব লাজুক! নিজে থেকে বিয়ের কথা মরে গেলেও বলবে না। সেজন্য আমিই বলেছি আর কি, তোকে পছন্দ হলে যেন মাকে নিয়ে আসে। তখন সে বলল, আগে তোর মতামত নিতে। তুই রাজি থাকলে সেও রাজি।”

তারিনের এখন হাসি পাচ্ছে। এমন মানুষও হয়? ভালোবাসতে পারে অথচ বলার সাহস নেই। ইশ, ফাহিম যদি এই কথা আরও আগে বলতো তাহলে তারিন ঈশানের সাথে সম্পর্কে জড়াতোই না। কিন্তু এখন কি খুব বেশি দেরি হয়ে গেল না?

চলবে

*

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here