১.
আলোকে ঘর থেকে টে’নে হি’চড়ে বের করে দিয়ে নিজের সদ্য বিবাহিতা দ্বিতীয় স্ত্রী রূপার সাথে বা’সর রাত উপভোগ করছে তার স্বামী আতিক। আলো ঘরের দরজার সামনে বসে কেদেই চলেছে। কোন স্ত্রীই বা তার স্বামীর এরকম ব্যবহার সহ্য করতে পারে।
আলোর শাশুড়ী আমিনা বেগম এসে আলোকে শান্তনা দেন।
‘কি আর করব বল সব আমার কপালের দো’ষ। কত বড় মুখ করে তোকে নিজের ছেলের বউ করে আনলাম। তোর মাকে কথা দিয়েছিলাম তোকে সুখে রাখব। কিন্তু আমার ছেলেটা যে এরকম কাজ করবে সেটা ভাবতে পারিনি।’
আলো তার শাশুড়ীকে অনুরোধ করে,
‘উনি বিয়ে করেছে ঠিক আছে কিন্তু দেখবেন আমায় যেন বাড়ি থেকে বের করে না দেয়। আমায় ঘরের এককোণে ফেলে রাখলেও আমি থাকব, প্রয়োজন হলে চাক’রাণী হয়ে থাকব। তাও আমাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেবেন না।’
আমিনা বেগম আলোর এমন সামান্য আবদারে মুখে আচল দিয়ে কাদতে থাকেন। এই মেয়েটার প্রতি যে তার অন্যরকম মায়া লেগে আছে। মেয়েটা তার কত যত্ন নেয়, আতিককেও কত ভালোবাসে। তবুও কেন যে আতিক এমন একটা কাজ করল সেটা তার বোধগম্য হচ্ছে না।
আলোর আজ দুঃখে কষ্টে ম’রে যেতে ইচ্ছা করছে। এক বছর আগে আতিকের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। বিয়েটা অবশ্য দুই পরিবার মিলেই ঠিক করেছে। আলোর পরিবার নিম্ন-মধ্যবিত্ত ছিল যেখানে আতিক একটি বড় শপিং মলের মালিক।
আতিক কখনো আলোকে মেনে নিতে পারে নি। আলো এই এক বছরে আতিকের মন জয় করার জন্য অনেক কিছু করেছে কিন্তু আতিকের মন পায়নি। আলো যথেষ্ট সুন্দরী হওয়ার পরেও সে স্মার্ট না হওয়ায় আতিক তাকে নাকি বউ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পায়।
দীর্ঘ এক অন্ধকার রজনী নিজের স্বামীর বাসর ঘরের সামনে বসেই কা’টিয়ে দেয় আলো। আমিনা বেগম অনেকবার তাকে ডাকতে এসেছিল কিন্তু সে যায়নি। তার নাকি আতিকের সাথে খুব জরুরি কথা আছে তাই সারারাত তন্দ্রাহীন থাকল সে।
আলোর চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। তার মনোবল, আশা সব শেষ।
অবশেষে আতিক রূপার সাথে এক সুখের রাত জ্ঞাপন করে বাইরে বেরিয়ে আসে। আলো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আতিকের দিকে। তাকে দেখে খুব তৃপ্ত মনে হচ্ছে। অথচ আলোর সাথে বাসরের দিন সে আলোর উপর কিভাবে জা’নো’য়ারের মতো ঝা’পিয়ে পড়েছিল। যন্ত্রণায় সেদিন আলোর ম’রে যেতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু সে সব সহ্য করেছিল। শুধু বাসর রাত নয়, আতিকের সাথে তার কা’টানো প্রত্যেকটা রাতই ছিল ভয়ানক। আতিক ক্ষু’ধার্ত হা’য়নার মতো ঝা’পিয়ে পড়ত তার উপর।
আলোকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আতিক রেগে যায়। রাগে আলোর চু’লের মু’ঠি টেনে সে বলে,
‘এই বে* তুই আমার দিকে এভাবে কি দেখছিস? তোকে না কাল বলেছিলাম এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। তাও কেন নির্লজ্জের মতো এখানে আছিস?’
আলো আতিকের পা ধরে অনুরোধ করে বলে,
‘আমাকে দয়া করে এই বাড়ি থেকে বের করে দেবেন না। আমি সব মেনে নেব। আপনি নাহয় আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেই থাকবেন আমি আপনার বাড়ির সব কাজ করে দেব। তবুও আমায় বের করে দেবেন না। আমার যে যাওয়ার আর কোন যায়গা নেই।’
‘কেন তোর বাপের বাড়িতে যেতে পারছিস না?’
‘না এমন কথা বলবেন না। আমি যদি সেখানে যাই তাহলে সমাজের লোক আমার আব্বুকে অনেক কথা শোনাবে। আপনি তো জানেন আমার বড় আপু ডিভোর্সি হয়ে অনেকদিন থেকে বাড়িতে পড়ে আছে। এখন আমারও যদি একই হাল হয় তাহলে যে আমার আব্বু সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবে না।’
আতিকের যেন আলোর উপর একটুও দয়া হয়না। সে আলোকে লা’থি মে’রে সরিয়ে দিয়ে বলে,
‘তোর আব্বু বাচল কি ম’রল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। তুই ভালোয় ভালোয় আমার বাড়ি থেকে বের হ নাহলে ঘা’ড়’ধা’ক্কা দিয়ে বের করে দেব।’
‘আল্লাহর দোহাই লাগে এমন করবেন না। আমাকে মে’রে ফেলুন তাও এই বাড়ি থেকে বের করে দেবেন না।’
আতিক আলোর কোন কথা শোনে না৷ তার হাত ধরে টে’নে হি’চড়ে নিয়ে যায়। আলো বারবার আকুতি-মিনুতি করতে থাকে তার উপর একটু দয়া দেখানোর জন্য। আতিক আলোর কথায় কোন গুরুত্ব না দিয়ে তাকে ধা’ক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে যাবে তখনই কেউ এসে তাকে আটকায়।
২.
‘রূপা তুমি আমাকে আটকালে কেন?’
আতিকের কথাটা শুনে রূপা মুচকি হেসে বলে,
‘ও যখন বাড়ির কাজের লোক হয়ে থাকতে চাইছে তখন থাকুক না। আমাদেরই লাভ হবে। এমনিতেও আমি কোন কাজ করতে পারি না। তুমি ওকে এই বাড়ির কাজের লোক হয়ে থাকতে দাও।’
রূপার আবদারে আতিক শান্ত হয়।
‘আচ্ছা ও থাক এখানে কাজের লোক হয়ে। আমার কোন আপত্তি নেই।’
আতিক তার ঘরে চলে যায়। আলো রূপাকে বলে,
‘আমাকে থাকার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনাদের জীবনে কোন হস্তক্ষেপ করব না। কোনদিন ওনার স্ত্রীর অধিকারও চাইব না। আমাকে শুধু এই বাড়িতে থাকতে দিন।’
রূপা শ’য়’তা’নী হাসি দিয়ে বলে,
‘তুই আজ থেকে আমার জুতো পা’লি’শ থেকে রান্নাবান্না সব কাজ করে দিবি। যদি কোন কাজ ঠিকমতো না করিস নাহলে তোকে কিন্তু এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।’
‘কোন ভুল হবে না।’
‘তাহলে যা বেশি কথা না বলে রান্নাঘরে গিয়ে আমার জন্য কফি বানিয়ে আন।’
আলো রান্নাঘরে চলে যায়। আমিনা বেগম এসে তাকে বলে,
‘তুই কেন এভাবে এখানে পড়ে আছিস? তুই কেন কাজের লোক হয়ে থাকবি? তোকে আমি এই বাড়ির বউ করে এনেছিলাম।’
‘সব আমার ভাগ্যের দোষ আম্মা। আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না। আল্লাহ যদি চান তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার ভরসা আছে তার উপর।’
‘আমি মা হয়ে বলছি তুই যা গিয়ে আমার ছেলের নামে মামলা কর। ও তোর অনুমতি না নিয়ে এভাবে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে না।’
‘এসব করে কি লাভ হবে? টাকার কাছে যে সব অন্ধ। উনি টাকা দিয়ে সব করতে পারবেন। তাছাড়া এরকমটা করলে আমার যে এই বাড়িতে আর যায়গা হবে না। তখন আমি কোথায় যাব? আমার জীবনটা তো বিবর্ণ হয়েই গেছে। এখন আমি চাইনা আমার বাপের বাড়িতে গিয়ে তাদের জীবনটাও বিবর্ণ করে দিতে। তার থেকে ভালো আমি সব সহ্য করে এখানেই পড়ে থাকি।’
আমিনা বেগম আলোর মুখে এমন কথা শুনে নিজেকে আর সামলাতে না পেরে আলোকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকেন।
‘তোর মতো একটা ভালো মেয়ের উপর যে এত অন্যায় হলো আল্লাহ নিশ্চয়ই তার উচিৎ বিচার করবেন। তুই দেখে নিস আতিক আর ঐ রূপা তাদের পা’পের শাস্তি নিশ্চয়ই পাবে।’
‘ও এখানে দুই কু’টনী মিলে আমাকে অভি’শা’প দিচ্ছে?’
রূপা রাগে ফুসতে ফুসতে কথাটা বলে।
আমিনা বেগমও সমান রাগ দেখিয়ে বলেন,
‘তোমার মতো একটা ন*ষ্ট মেয়েকে এর থেকে বেশি আর কি বলব? তুমি কি ভেবেছ আমি তোমার ব্যাপারে কিছু জানি না? তুমি সেই স্কুল থেকে আতিকের বান্ধবী ছিলে। সবসময় তো দেখতাম ছেলেদের সাথে ঢ’লা’ঢলি করতে। আমি বুঝতে পারছিলাম তুমি আমার ছেলেটাকেও নিজের জা’লে ফা’সা’তে চাইছ তাই বাধ্য হয়ে নিজের ছেলের বিয়ে দিলাম। কিন্তু আমার ছেলে তো নিজের ভালো বুঝতে পারল না। তোমার মতো একটা ন* মেয়েকে বাড়ির বউ করে আনল।’
রুপা আমিনা বেগমের গায়ে থু’থু ছিটিয়ে বলে,
‘কি বললি তুই বু’ড়ি? আজ এখনই তোকে বাড়ি তগর বের করে দেব।’
অমনি আতিক ছুটে এসে রূ’পাকে এলো’পা’তা’ড়ি মা’র’তে মা’র’তে বলে,
‘তোর এত বড় সাহস আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করিস।’
চলবে ইনশাআল্লাহ
#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃদিশা মনি
>>