বালির সংসার পর্ব ২২

#বালির_সংসার(২২)
.
.
আদিত্যর রাগ, মান- অভিমান,সহ্য শক্তি, ভালোবাসা,অবহেলা সব কিছুর মাফ কাঠি অর্থি।
হ্যাঁ! হয়তো সে ভুল করেছিলো কিন্তু চার বছর শুধু কষ্ট পেয়েছে, শুধু কি তাই? যে অর্থির গায়ে নিজেই জোড়ে স্পর্শ করতো না তার উপর কি সব বয়ে গেছে।
.
অর্থির স্পর্শ তার জন্য সব কিন্তু প্রত্যাখ্যান? মোটেও মেনে নেওয়া যায় না।
অর্থির ঠোঁট কাপছে
ধীরেধীরে বললো
– স্পীড বোর্ডে কেউ আসছে।
.
আদিত্য তাকিয়ে দেখে সত্যি কেউ আসছে। অর্থি কে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে আসে।
– শ্যাম্পু করে জলদি বের হবি। নইলে…
– নইলে কি? আবার মারবে? মেরেই ফেলো না।
.
আদিত্য কিছু না বলে অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বের হয়। আদিত্য খাবার অর্ডার করেছিলো। তাই নিয়ে এসেছে।
.
১৫ মিনিট হয়ে গেলো মেয়েটা বের হয়নি।
ভেজা কাপড়ে কাপুনি ধরে গেছে।
কি পড়বে? কাপড় কই?
আদিত্যর হঠাৎ মনে হলো
ঈশ কাপড় তো দেওয়া হয়নি।
নক করে কাপড় দিয়েই চলে এলো।
খাবার টেবিল গুছাচ্ছিলো সে। অনেক দিন পর আজ আবার দুজনে একসাথে।
.
অর্থির ডাকে রুমে ঢুকতে নিলে অর্থি বলে
– বাইরেই থাকুন। বলি যে শুধু শাড়ি কিভাবে পড়বো?
– মানে?
– মানে শুধু শাড়ি দিয়েছেন।
আদিত্য রুমের ভিতরে ঢুকতেই ছানাবড়া।
অর্থি টাওয়াল প্যাচিয়ে দাড়িয়ে আছে। চুল থেকে টপটপ পানি পড়তেছে।।
যেকোন প্রেমিক পুরুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের জন্য যথেষ্ট নয় কি?
অর্থির গাল দুটো মনে হচ্ছে কমলা লেবু৷
খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
.
আদিত্য চুপচাপ অর্থি কে সব দিয়ে বাইরে চলে আসে।
চোখ জ্বলছে। গা গরম হয়ে গেছে। চোখ দুটোও লাল।
বড্ড কষ্ট হচ্ছে আজকে নিজেকে শান্ত করতে।
.
.
বেশ খানিক্ষন পার হলেও অর্থি আসে না।
আদিত্য গিয়ে দেখে শুয়ে আছে।
কোলে তুলে নিয়ে খাবার টেবিলে
– কথায় কথায় কোলে তুলেন! ভার লাগে না,?
আদিত্য চুপচাপ! খাবার মুখে দিতেই অর্থি সরিয়ে দিয়ে বলে
– আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন? নিজের রক্ষীতা বানানোর জন্য?
.
এবার রাগ উঠে। কষিয়ে থাপ্পড় মারে। এই নিয়ে তিনবার থাপ্পড় খেলো। অর্থি চুপচাপ বসে আছে। আদিত্য আবার খাবার এগিয়ে নিয়ে দিতেই চুপচাপ খেয়ে নিলো।
.
.
দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেলো। আদিত্যর সাথে এখানে আছে তবুও শুধু আদিত্য খাওয়ার সময় ওর কাছে আসে।
খাইয়ে দিয়ে চলে যায়। মাঝেমধ্যে কথা বলতে নিলেই দুজনের ঝগড়া লাগছে৷ অর্থির এক কথা কেনো সে এখানে।
.
.
গোসল সেরে স্কাইব্লু কালারের শাড়ি পরে অর্থি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়েছিলো।
নাভি থেকে চার আংগুল নিচে দাগ। বড্ড বেশি পোড়ায় তাকে।
.
কায়া দেখলে মায়া বাড়ে কথায় আছে না? আদিত্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে সিগারেটের সাথে।
ফোন নিতে রুমে এসে অর্থি কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে কোমরে।
চলে যেতে নিলে অর্থি শার্টের কলার চেপে ধরে আদিত্যর পায়ের উপর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে
– কেনো করছেন এসব?
– জানি না!
– ভালোবাসেন আমায়?
– জানিস না?
– সারাজীবন আপনাকে সবাই আমার দ্বিতীয় স্বামী বলবে! পারবেন মেনে নিতে? সমাজের সব খোটা?
– কবুল।
– পারবেন আমার নাভির নিচের এই দাগ টা সহ আমাকে গ্রহণ করতে?
– কবুল।
– পারবেন কুমারিত্ব হীন অর্থি কে মেনে নিতে?
– কবুল।
.
আদিত্যর কথা শুনে নিজের প্রতি আরো রাগ হয় অর্থির। সে রুশাকে ঠকাচ্ছে যে।
আদিত্য অর্থি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পায়ের উপর ভর দিয়েই নিয়ে যায় ব্যলকনিতে।
পরিবেশ টা বড্ড বেশিই সুন্দর৷ আদিত্যর সেই চিরচেনা গন্ধ যেনো অর্থি কে বার বার বলছে
– আদিত্য তোর ছিলো। ফিরিয়ে দিস না। কিন্তু রুশা?
.
.
দূর থেকে স্পীড বোর্ডে৷ করে কেউ এলো৷ ফুল এগিয়ে দিয়ে বললো
– কংগ্রেস মিসেস. অর্থি আদিত্য আহমেদ ।
.
.
আয়ানের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে অর্থি। কি বলছিস এসব?
– তুমি এখানে আসার পর কোথাও সাইন করেছো?
– হুম।
– ওটা তোমাদের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো মোনাপাখি।
– মানে কি?
-মানে যা তাই।
– জোড় করে বিয়ে করে লাভ নেই। রুশা আপুকে কষ্ট দিতে পারবো না।
.
তার থেকে বরং মরেই যাই। রুশা অন্তত সুখী হবে৷
আদিত্য,আয়ান একটু দূরে ছিলো। অর্থি ছুড়ি ততক্ষনে হাতে চালিয়ে দিয়েছে৷
দৌড়ে এসে ধরাতে বেশি লাগেনি। জায়গা মতো লাগলে খবর ছিলো।
আদিত্য রেগে আয়ান কে বলে আয়ান প্লিজ কিছুক্ষণ সময়ের জন্য বাহিরে গিয়ে সব ব্যবস্থা করো। আমি চাই না তোমার সামনে তোমার বোন কে কষ্ট দিতে।
.
আয়ান অর্থির মাথার কাছে বিছানায় বসে ছিলো। বোনের কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়।
.
আদিত্য দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে বেডরুমের দরজা লাগায়৷ অর্থি চুপচাপ শুয়ে আছে। সে জানে এখন বেশি তিরিং বেরিং করলে বারোটা বাজাবে৷
আদিত্য এসে চুপচাপ অর্থির পাশে শুয়ে পড়ে।
এ যেনো ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুক্ষণ পর
অর্থি উঠতে নিলেই আদিত্য ধমক দিয়ে শুয়ে থাকতে বলে।
শুয়ে শুয়েই আদিত্য এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করছে।
ঘর ধোয়ায় ভরে গেছে।
আদিত্যর রাগ অর্থি জানে, এখন তাকে শান্ত করা প্রয়োজন৷
চুপচাপ সরে গিয়ে আদিত্যর বুকে মাথা রাখতেই আদিত্য হাতের সিগারেট অর্থির পিঠে লাগে।
বেশ চেচিয়ে উঠে।
চিৎকার বন্ধ করতে আদিত্য ঠোঁট রাখে অর্থির ঠোঁটে।
.
.
ছয় মাস সতেরো দিন পর রুপ অর্থির খোজ পেয়েছে।
আল্লাহ তার ডাক শুনেছে। সে কি না করেছে ওর সাথে।
নাহ্ অর্থি কে আর দূরে রাখবে না সে। দরকার হলে ওর পায়ে ধরে মাফ চাইবে।
তবুও তার অর্থি কে চাই। অর্থির বুকেই যে সে পেয়েছিলো সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here