ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব -০২

#ভালোবাসি_প্রিয়_২ (০২)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

সো মিস দেড় ফুট তুমি তো বোরকা খুলবে না। সমস্যা নেই আমি খুলে দিচ্ছি বলেই বৃত্ত আমার হিজাবে হাত দিতেই আমি ঠাস ঠাস করে বৃত্তের গালে থা”প্প”ড় মে”রে দিলাম। মূহুর্তের মধ্যেই যেন পুরো ভার্সিটি থমকে গেল। দূর থেকে ফিসফিস আওয়াজে ছাত্র ছাত্রীরা বলাবলি করছে,এই মেয়ের সাহস তো কম নয়। যেইখানে আমারা সিনিয়র হয়েও আজ পর্যন্ত বৃত্তের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারলাম না আর এই মেয়ে ভার্সিটি তেই প্রবেশ করেই মালিকের ছেলের গালে থা”প্প”ড় দিয়ে দিলো ?আহারে বেচারা মেয়েটার জন্য আফসোস হচ্ছে।বৃত্তকে আমরা খুব ভালো করেই চিনি।ওর যে রাগ আর ক্ষমতা,মেয়েটা হয়তো যে হাত দিয়ে ওকে থা”প্প”ড় দিয়েছে বৃত্ত ওর সেই হাত টাই কে”টে নিলো। মেয়েটার ভাগ্য‌ই খারাপ। ভার্সিটিতে প্রথম দিন এসেই ঝামেলায় জড়িয়ে গেল।বৃত্তের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে ও কোন হিংস্র জন্তু।চোখ দিয়ে ‌যেন আগুন বের হচ্ছে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে বৃত্ত বললো, ছোট মরিচে ঝাল হয় জানতাম কিন্তু এতো পরিমাণে ঝাল থাকে জানা ছিল না। যেইখানে আজ পর্যন্ত আমার মম ড্যাড আমার গায়ে হাত তোলে নি ,সেইখানে তুমি আমাকে ভার্সিটির সবার সামনে থা”প্প”ড় মে”রে দিলে? তুমি নিজেও জানো না বৃত্তের সাথে লাগতে এসে নিজের কতো বড় স”র্ব”না”শ ডেকে আনলে ।সাপের লেজে পা দিয়েছো ছোবল তো তোমাকে খেতেই হবে মিস দেড় ফুট‌।

সাপের বিষ দাঁত কিভাবে ভেঙ্গে ফেলতে
হয় সেইটা ও আমার খুব ভালো করে জানা আছে মিস্টার বৃত্ত।আপনাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।আপনার মধ্যে নূন্যতম লজ্জাবোধ টুকু ও নেই ।পর্দা নারীর সৌন্দর্য। পর্দা নারীর অহংকার।আর আপনি সেই পর্দার অপমান করে আবার বড় মুখে কথা বলছেন। থা”প্প”ড় দিয়েছি বেশ করেছি। আপনি যেটার যোগ্য সেটাই পেয়েছেন।ইসলামে পর্দা করার গুরুত্ব কতোখানি জানেন আপনি? আপনার মতো বখাটের জানার ও কথা নয়।
★আল্লাহ বলেন, হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)

★রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
দুই শ্রেণীর জাহান্নামীদের এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায়। এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের খুশবু তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।-মুসলিম ২/২০৫, হাদীস : ২১২৮
এই হাদীসে বেপর্দা নারীদের প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি শোনানো হয়েছে। সুতরাং তাদের মৃত্যুর আগেই তাওবা করে পর্দার বিধানের দিকে ফিরে আসা কর্তব্য।

ইউ! তুমি আবার ও আমার জান বৃত্তকে হাদিসের জ্ঞান দিচ্ছো। তোমাকে আজ আমি মে”রে”ই ফেলবো।জাষ্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। তোমার এমন হাল করবো তুমি ভাবতেও পারবে না। আমার জানের গায়ে হাত?

এতো জান জান করছেন তো আপনার জান কে বাইরে রেখেছেন কেন? নিজের ক”লি”জা”র মধ্যে ঢুকিয়ে রাখুন ইংলিশ আপা।

বেয়াদব মেয়ে আবার ও আমার মুখে মুখে কথা বলছো?

কথায় বলে না বৃক্ষ তোমার নাম কি?ফলে পরিচয়। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন। আপনার মতো অর্ধনগ্ন হয়ে ছেলের শরীর দেখিয়ে বেড়াচ্ছি না আমি।তাই আমাকে বেয়াদব,ব্লাডি গার্ল, ডার্টি গার্ল বলার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দশ বার ভেবে নিবেন।

তুমি আর এক মিনিট ও এইখানে থাকতে পারবে না বলেই ইংলিশ আপা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার আগেই বৃত্ত বললো,স্টপ বিন্দু।তোর সাহস হলো কি করে মিস দেড় ফুটের গায়ে হাত দেওয়ার?

হ্যাভ ইউ গন ম্যাড বৃত্ত?এই মেয়েটা তোকে এক্ষুনি ভার্সিটির সব স্টুডেন্টদের সামনে থা”প্প”ড় দিল ।আর এরই মধ্যে তুই ঐ মেয়েটার পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস।নরম হাতের থা”প্প”ড় খেয়ে তোর স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়ে গেল নাকি?

না।মিস দেড় ফুট আমার শিকার।ওর ব্যবস্থা স্বয়ং বৃত্ত করবে। শুধু তুই না এই ভার্সিটির একটা ছেলে মেয়ে ও যেন মিস দেড় ফুটের দিকে চোখ তুলে না তাকাই।আর তাকালে আমি তার চোখ তুলে নিতে দুই বার ভাববো না কিন্তু ‌।মাইন্ড ইট বলেই বৃত্ত আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আই উইল সি ইউ লেটার বলে শিষ বাজাতে বাজাতে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গেল।

আমি ক্লাস রুমে এসে দেখি সবাই আমাকে নিয়ে কানাঘুষা করছে। আমি রুমে প্রবেশ করতেই সবাই চুপচাপ হয়ে গেল। ক্যাম্পাসে সময় নষ্ট করার কারণে এসে দেখি প্রথম বেঞ্চ বাদে সব বেঞ্চ বুক হয়ে গিয়েছে। প্রথম বেঞ্চে কালো বর্ণের একটা মেয়ে একা বসে আছে। আমি ও তার পাশে গিয়ে বসলাম। আমি বসতেই মেয়েটা বলে উঠলো,একি! তুমি আমার পাশে বসলে কেন?

কেন আমি বসলে কি তোমার কোন সমস্যা হবে?

না!আসলে আমার গায়ের রঙ কালো দেখে ‌সবাই আমাকে ইগনোর করে চলে গিয়েছে।কেউ আমার পাশে বসে নি।

কে বলেছে তুমি কালো? তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আকৃতির মেয়ে।

আমি জানি তুমি আমার মন‌ রাখতে মিথ্যা কথা বলছো।কালো মেয়ে নিয়ে যতোই গল্প , কবিতা ,নাটক উপন্যাস লেখা হোক না কেন বাস্তবে সবাই ফর্সা চামড়ার মেয়েই খোঁজে।যায় হোক ফ্রেন্ড হবে আমার?

তোমার মতো এতো কিউট মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবো না এইটা কেমন কথা?

আমি সিমরান মাহমুদ। তুমি?

আমি দোয়া।মাইশাতুল দোয়া। অসাধারণ পরিবারের খুবই সাধারণ একটা মেয়ে আমি।আব্বা, আম্মা , আমার বোন মাইশাতুল ছোঁয়া এদের নিয়েই আমার পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। আমার আব্বা প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং একই সাথে একজন কৃষক ও বলা যায়।মানে আমাদের নিজস্ব জমি চাষ করেন। সকালে ফজরের নামাজ আদায় করে জমিতে চলে যান। নিজের হাতেই ফসল বোনা থেকে শুরু করে বাড়ি নিয়ে আসা পর্যন্ত সবটাই করেন। তারপর আমি ,আম্মা , বোন মিলে আনন্দের সাথে ফসল ঘরে তুলি। আব্বার মতে কোন পেশায় ছোট নয়। আমি ও চেয়েছিলাম ব্যাংকের জব করবো সেই জন্যই হিসাববিজ্ঞানে অনার্স করা। কিন্তু যখন জানতে পারলাম সুদী কারবার করে এমন ব্যাংকে চাকরি করা হারাম তখন এই পথ থেকে সরে আসি। কারণ, এতে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করা হয়। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ অর্থ: “ পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ: ২)
সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জাবের রা. হতে বর্ণিত:
أنه لعن آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه، وقال: هم سواء
“সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং স্বাক্ষীদ্বয়কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান (গুনাহগার)।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৯৫, শামেলা)
তবে যে সকল ইসলামী ব্যাংক সুদ মুক্তভাবে কার্যক্রম করে সে সকল ব্যাংকে কাজ করায় দোষ নাই।

আচ্ছা বুঝলাম।কিন্তু তুমি আব্বু কে আব্বা ডাকো কেন?

আসলে আব্বা ডাকার মধ্যে আমি যে শান্তি খুঁজে পাই আব্বু বাবা এসব ডাকের মধ্যে তেমন শান্তি পাই না।আমরা দুইজনে গল্প করছি এর‌ই মধ্যে মধ্যবয়স্ক একটা লোক ক্লাস রুমে প্রবেশ করলো।হয়তো আমাদের ডিপার্টমেন্টের দপ্তর হবে। তিনি এসে সকলের উদ্দেশ্যে বললো, তোমাদের মধ্যে মাইশাতুল দোয়া কে?তাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছেন।
দোয়া কথাটা আমার কানে বাজতে লাগলো। প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ডেকেছেন তার মানে কি সত্যিই এই ভার্সিটি তে আমার পড়াশোনা করা হবে না। অন্যায়ের কাছে হেরে যাবো আমি?

চলবে ইনশাআল্লাহ….

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here