ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব -০৭

#ভালোবাসি_প্রিয়_২ (০৭)

#লেখিকা_অপরাজিতা_রহমান

-“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

-“কোন বিষয়ে?

-“তোমার বিয়ের।”

-“আর ইউ ক্রেজি মম? আমি এখনো গ্ৰাজুয়েশন শেষ করতে পারলাম না। এখনো আমার লক্ষ্যে পৌঁছানো বাকি।ড্যাড তো আমাকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না।আমাকে সবসময় হেয় করে দেখে।আমাকে গুন্ডা, বখাটে বলে সম্বোধন করে। আমি ও বিসিএস ক্যাডার হয়ে ড্যাড কে দেখিয়ে দিব এই আশিয়ান আবরার বৃত্ত চাইলে সব করতে পারে।”

-“দেখ বেটা কোন বাবা মা চায় না তার সন্তান খারাপ পথে থাক। পৃথিবীর সমস্ত পিতা-মাতা তাদের সন্তানের মঙ্গল কামনা করে। তোমার ড্যাড যা বলে তোমার ভালোর জন্যই বলে।তিনি চান তোমার এই লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করো।”

-“আমার কাছে আমার এই জীবনটাই ভালো লাগে। আমি আমার এই জীবনে থেকেই নিজের নাম করে ড্যাডকে উচিত জবাব দিবো।আগে আমার লাইফ সেটেল করি তারপর না হয় বিয়ের চিন্তা ভাবনা করবো।”

-“তোমার মম ড্যাডের টাকা পয়সা অভাব নেই যে তোমার বিসিএস ক্যাডার হয়েই বিয়ে করতে হবে। তবে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছো এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু বিয়ের পরে ও তো প্রতিষ্টিত হ‌ওয়া যায় বেটা। আমি এই মেয়েটাকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারবো না।এমন একটা মেয়ের প্রয়োজন আছে তোমার লাইফে।তাই আমি যে ডিসিশন নিয়েছি সেটাই ফাইনাল।”

-“মম তুমি ভুল ডিসিশন নিয়েছো।”

-“নো বেটা। আমি যে সিন্ধান্ত নিয়েছি ভেবে চিন্তেই নিয়েছি। আমি চাই তোমার এই ছন্নছাড়া এলোমেলো জীবনে এমন কেউ আসুক সে যে তোমার জীবন টা কে আলোকিত করে দিতে পারে। তোমাকে হেদায়াতের পথ দেখাতে পারে। আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমি এমন একজনের দেখা পেয়ে গিয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি মা হয়ে তোমার প্রতি যে দায়িত্ব পালন করতে পারি নি, সে স্ত্রী হয়ে পারবে তোমাকে একটা সুন্দর জীবন দিতে।”

-“কিন্তু মম তুমি তো বলতে মামনির মেয়েকে তোমার ছেলের বউ করে আনতে চাও?”

-“হ্যাঁ বেটা। তোমার মামনির সাথে আমার পরিচয় হয় ক্লাস সিক্স থেকে। খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। ক্লাসের প্রথম দিনেই তার সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক বোনের সম্পর্কে রুপ নেয়।আর বোনের সম্পর্ক টা চিরস্থায়ী করার জন্য দুজনে বিয়াইন হ‌ওয়ার প্রতিজ্ঞা করি। কিন্তু ভাগ্যের
নির্মম পরিহাসে আজ বিশ বছর তার দেখা নেই। জানি ও আদৌ সে বেঁ”চে আছে কি না?আর বেঁ”চে থাকলে আদৌ কন্যা সন্তানের জননী হয়েছে কি না?তাই মামনির মেয়ের আশা বাদ দাও বেটা।”

-“নো ওয়ে মম।তাহলে তুমি ও তোমার বৌমা ,নাতি ,নাতনির মুখ দেখার আশা বাদ দাও।
তোমার মুখে মামনির গল্প শুনতে শুনতে মামনির মেয়েকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আই নিড মাই মামনির মেয়ে।মামনির মেয়ে ছাড়া আমার লাইফে অন্য কোন মেয়ে এলাও হবে না।পারলে মামনির মেয়েকে এনে দাও দেখবে নাচতে নাচতে বিয়ে করে নিবো।”

-” আমি বুঝতে পেরেছি বেটা পূরোটাই তোমার বিয়ে না করার বাহানা।”

-“এজন্যই তোমাকে এতো ভালোবাসি মম। আমি না বলতেই তুমি আমার মনের কথা বুঝে যাও।এই মুহূর্তে আমি কোন বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না ।আগে আমার ক্যারিয়ার তারপর বিয়ে।”

-“ঠিক আছে বেটা।আজ পর্যন্ত তোমার কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখি নি।আর এই চাওয়া টা ও পূর্ণ করলাম।”

-“লাভ ইউ মম।উম্মাহ।”


‌।


-“রাতে দোয়া পড়তে বসেছে এমন সময় দেখে সিমরান কল করেছে। দোয়া ফোন রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে সিমরান বললো, আসসালামুয়ালাইকুম কিউটি পাখি।”

-“ওয়ালাইকুমুস সালাম সুন্দরী।”

-“তুমি কি সুন্দরী বলে আমাকে অপমান করলে দোয়া।”

-“না সিমরান। আমার আম্মা আর বোনের পরে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী তুমি। উচ্চতাই পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি,
হরিণের মতো কাজল কালো চোখ, শ্যাম বর্ণের মায়াবী চেহারা। আহা যেকোনো লোকের মুখ থেকে মাশাআল্লাহ শব্দ বের হতে বাধ্য হবে তোমাকে দেখে। বিশ্বাস করো আমার যদি ভাই থাকতো তোমাকে আমার ভাইয়ের বউ করে নিতাম।”

-“সিরিয়াসলি!”

-“হুম অবশ্যই।”

-“তাহলে এখনই আন্টি কে আমার জন্য বর ডাউনলোড করতে বলো।”

-“বলি তো।এই তো কিছু দিন আগে ও বলেছি ,আম্মা আমাদের দুই বোনের জন্য একটা ভাইয়া আনার ব্যবস্থা করেন। আম্মা রাজি হন না। তিনি বলেন,মেয়েরা বড়ো হয়েছে এখন বাবু হলে সমাজের লোকেরা কি বলবে? মানুষ ছিঃ ছিঃ করবে। আম্মা কে কোন ভাবেই রাজি করাতে পারি না।”

-“ইশ্ মন টাই ভেঙ্গে দিলে। দোয়া!”

-“হ্যাঁ বলো।”

-“তোমার সাথে একটা কথা শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম।”

-“ঠিক আছে বলো।”

-“আমার মনে হয় আমি প্রেমে পড়েছি দোয়া!আই অ্যাম ইন লাভ দোয়া।অভি ভাইয়া কে দেখার পর আমার কি যে হয়েছে সবখানে শুধু অভি ভাইয়া কেই দেখতে পারছি।জানো তো আজ বাসায় আসার সময় গাড়িতে থাকা ড্রাইভারের মাঝের অভি ভাইয়া কে দেখেছি । আবার আমাদের বাসায় কাজ করে মকলেস ভাই তাকে ও আজ অভি ভাইয়া মনে হচ্ছিল। মোটকথা আমার মস্তিষ্ক জুরে শুধু অভি ভাইয়া বিরাজ করছে। প্লিজ দোয়া আমাকে একটু হেল্প করো।”

-“তুমি হারামের দিকে পা বাড়াচ্ছো সিমরান। আমি এই ব্যাপারে তোমাকে বিন্দু মাত্র সাহায্য করতে পারবো না।ইসলামে প্রেম কে স্পষ্ট হারাম করেছে।
Reference : রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যেখানে দু’জন বেগানা নারী-পুরুষ নির্জনে একত্রিত হয়, সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।”–
[সহীহ্ তিরমিযী, ১১৭১]
.
এখানে নির্জনে নারী-পুরুষ কে একত্রিত হতে স্পষ্টত নিষেধ করা হয়েছে।এমনকি আমরা মোবাইলে কথা বলার সময় নির্জনেই কথা বলি। নির্জনে
SMS আদান-প্রদান করি। এবং তখন দুজনের মধ্যে কোনোরুপ বাঁধা থাকে না।
.একসময় কথাবার্তা কতটা অশালীন মূহুর্তে পৌছায়)। যার দ্বারা মুখের ও অন্তরের যিনা হয়।
যা স্পষ্ট হারাম।
.
আল্লাহ বলেন, “তোমরা অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না”–[আল ইসার ১৭:৩২]
রাসূল (সঃ) বলেছেন, চোখের যিনা হচ্ছে দেখা,
কানের যিনা হচ্ছে শোনা, হাতের যিনা হচ্ছে ধরা,
জিব্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, পায়ের যিনা হচ্ছে তার দিকে হেটে যাওয়া, আর অন্তরের যিনা হচ্ছে তাকে নিয়ে কল্পনা করা এবং লজ্জাইস্থান তা মিথ্যায় বা সত্যে পরিনত করা।
/ মিসকাত ৮৬ /

রাসূল (সঃ) আরো বলেছেন, যে সকল নারী পুরুষ যিনা নামের অশ্লীল কাজ করবে, তারা একসাথে উলংগ অবস্থায় আগুনে জ্বলতে থাকবে। ( মিসকাত ৪৬২১)

-“যেইখানে ইসলামে এতো নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেইখানে আমি তোমার বান্ধবী হয়ে কিভাবে তোমাকে পাপের দিকে ঠেলে দিবো সিমরান?”

-“আসলে দোয়া ইসলাম সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই কম। আমি জানি না ও এসব বিষয়ে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই বিষয়ে জানানোর জন্য।আমিও চেষ্টা করব তোমার মতো হতে ।আমাকে সাহায্য করবে তো দোয়া?”

-“ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে আমার সম্পূর্ণ সাপোর্ট পাবে তুমি।”

-“ঠিক আছে দোয়া।রাখছি আল্লাহ হাফেজ। আসসালামুয়ালাইকুম।

-“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”





প্লিজ বেবি কুল ডাউন!এতো হাইপার হচ্ছো কেন?”

-“সিরিয়াসলি পাপা! তুমি এতো কিছুর পরেও আমাকে শান্ত হতে বলবে? আমার মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঐ গাইয়া মেয়েকে শেষ করে দিতে।”

-“তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো বেবি।এমন তো নয় যে বৃত্ত তোমাকে ছেড়ে ঐ গাইয়া মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে।বৃত্ত তোমার ছিল আর তোমার‌ই থাকবে।”

-“ইউ নো পাপা বৃত্তকে আমি কতোটা ভালোবাসি। এতো গুলো বছর বৃত্তের জন্য আমার মনে একটু একটু করে অনুভূতির জন্ম দিয়েছি।আর আজ শুধু মাত্র ঐ গাইয়া দেড় ফুট মেয়ের জন্য বৃত্ত সবার সামনে আমাকে অপমান করলো। এমনকি আমাকে মে”রে ফেলার হুমকি ও দিয়েছে। পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করা গেলে ও ভালোবাসার মানুষের দেওয়া কষ্ট সহ্য করা যায় না পাপা।”

-“আই ফিল ইউর পেইন বেবি।সেই ছোটবেলায় তোমার মম মা,রা যায়। তারপর থেকে আমি একাই তোমাকে মায়ের আদর বাবার আদর দিয়ে বড়ো করেছি। বিন্দু মাত্র কষ্ট পেতে দেই নি।আজ তোমার এই চোখের পানি আমার ক”লি”জা”য় আঘাত করছে।”

-” পাপা আমি কিছুতেই ঐ মেয়েকে সহ্য করতে পারছি না। ভার্সিটিতে ঐ গাইয়া মেয়ে যতোবার আমার চোখের সামনে আসবে ততবারই বৃত্তের করা অপমানের কথা আমার মনে পড়ে যাবে।”

-“তুমি টেনশন করো না বেবি। আমি কাল সকালেই ঐ গাইয়া মেয়ের ব্যবস্থা করছি বলেই কোথাও ফোন দিলো।ঐ পাশ থেকে ফোন রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ স্যার বলুন।”

-“আমি একটা মেয়ের পিক সেন্ড করছি কাল দুপুরের মধ্যে যেন মেয়েটার লা”শ পাই।আর হ্যাঁ কোন প্রমাণ রাখবে না কিন্তু। তোমার কাছে ৫০০০০ টাকা পৌঁছে যাবে।”

-“ঠিক আছে স্যার । যেমন টা আপনি বলবেন। কিন্তু আমি মেয়েটা কে কোথায় পাবো।ওর বিষয়ে কোনো কিছুই তো জানি না।”

-” আমার বেবির ভার্সিটি তে অনার্স প্রথম বর্ষের হিসাববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। ভার্সিটি তেই পাবে মেয়েটাকে।তবে সাবধানে কাজ করবে।কোন কাক পক্ষী ও যেন টের না পায়।”

-“কিন্তু স্যার মেয়েটার অপরাধ কি?”

-“আমার বেবির চোখের পানির কারন ঐ মেয়েটা।ওর বেঁ”চে থাকার কোন অধিকার নেই। ফিনিশ করে দাও মেয়েটাকে বলেই ফোন রাখলেন কামরুল হাসান।”

-“কিন্তু পাপা বৃত্ত যদি কোনভাবে জানতে পারে আমরা ঐ মেয়ের ক্ষতি করেছি তাহলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছো?বৃত্ত সোজা আমাদের কে জেলে পাঠাবে।”

-“কেউ জানতে পারবে না বেবি।না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁশি বলেই পৌশাচিক হাসিতে মেতে উঠলেন কামরুল হাসান।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here