#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরাফে’র কথা শুনে আরিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। মনে হচ্ছে ও জানতো এমনটাই হয়তো হবে।”
সবকিছুর পর আরাফের জেদের কাছে হেরে বিয়েটা হয়েই গেলো। ও যেন জেদ ধরেছে আজ বিয়ে হবে মানে হবেই।
সবাই মেনেও নিলো যেহেতু ওদের বিয়ে ঠিক করা, আর এখন ওদের দুজনের সম্মতি আছে।
সবকিছুই স্বাভাবিক কিন্তু আরিয়া কেন যেন স্বাভাবিক হতে পারছেনা। ও আরাফে’র দিকে তাকায়, সে তার মতো করে ফোন টি’প’ছে বসে বসে।
আরিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে রইলো আরিশার পাশে।
আরিশা আরিয়াকে ধীর গলায় বললো-বাহ আরিয়া আমাদের দুজনের বিয়ে একসাথেই, তুই তো আমার ভাবীও হয়ে গেলি রিয়ু।”
আরিয়া মুখ ফুলিয়ে আরিশার দিকে তাকায়। ওর সব আনন্দ মাটি করে দিলো আরাফ।”
আরাফে’র সতেরোতম জন্মদিনে ওর ছোট আব্বু অর্থাৎ
আরমান চৌধুরী বললেন- আজ আমার ভাতিজা আমার কাছে যা চাইবে তাই দেবো।
বল আরাফ তুই তোর ছোট আব্বু’র কাছে কী চাস?
আরাফ: যা চাইবো তাই দিবে?”
আরমান চৌধুরী: হ্যাঁ হ্যাঁ দেবো তো বল কী চাই?”
সবাই ভেবেছিলেন আরাফ হয়তো বাইক, কার, বা অন্য কোনো কিছু চাইবে। কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে আরাফ বললো- আমি তোমার মেয়েকে চাই! ওকে আমার করে দাও।
তাহলেই তোমার পক্ষ থেকে দেওয়া সব থেকে বড় গিফ্ট আমি পেয়ে যাবো।”
সবাই অবাক হলেও ভেবেছিলেন আরাফ এগুলো আবেগের বশে বলছে একসময় ভুলে যাবে।
তাই আরমান চৌধুরী বললেন- আচ্ছা দিয়ে দেবো তোকে।”
কিন্তু তার জন্য তোকে আরো মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। নিজে চাকরি করতে হবে তবেই তুই আমার মেয়েকে পাবি।”
আরাফ: ওকে পাওয়ার জন্য আমি সব করবো।”
তারপর থেকে আরাফ পড়ালেখায় মন দেয়। ঢাকায় একা থেকে পড়ালেখা করতো। যখনই বাড়িতে যেতো তখন আরমান চৌধুরী কে বলতো: ছোট আব্বু তোমার মনে আছে তো?” তুমি বলেছিলে তোমার মেয়েকে আমার করে দেবে।”
তখন সবাই ভাবনায় পড়ে যান এতো দিন পরেও আরাফ ঘুরেফিরে সেই একই কথা বলে।”
যখন আরাফ একুশ বছর বয়সে পা রাখে তখন ওর কথায় সবাই ধরেই নিলেন আরাফ ওর কথায় অনড়। ওর আরিয়া কে চাই মানে চাই।” তখন সবাই মিলে ওদের বিয়ে ঠিক করে রাখেন। আরাফ যখন চাকরি পাবে তখন সে বিয়ে করবে বলে জানায়।
তবে আরিয়াও এসব জানতো, তবে আরাফ যে রাজি আর সেই এসব কথা বলেছে এটা জানতো না।”
আরিশা’র বিদায়ে’র সময় ঘনিয়ে এলো, সন্ধ্যা’র পরবর্তী সময় এখন। সবাই আরিশা কে ধরে নিয়ে আসছে বাহিরে,সবার চোখেই জল।”
কিন্তু আরিশা’র চোখে জল নেই, হাত মুঠো করে এগিয়ে যাচ্ছে বাহিরে’র দিকে।
আরিশা ভাবলো একবার ওর বরকে একবার দেখবে। মাথা উঁচু করে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় বর-বাবু অনেকটা সামনে চলে গেছেন। যার কারণে উনার চাঁদ মুখখানি দেখা হলো না আরিশা’র।”
আরিশা মনে মনে বললো- দূর আমি কী বো’কা নিজের স্বামী’র নামটাই শুনলাম না। একবার পাশে তাকিয়ে উনাকে দেখলে কী এমন হতো?”
বাহিরে বের হয়ে আসতেই আরিশার মাথা কেমন চ’ক্ক’র দিয়ে উঠলো! অস্থিরতা ঘিরে ধরলো ওকে। আবার চারিদিকে দৃষ্টি দিয়ে সবকিছু দেখে সামনের দিকে পা বাড়ায় ও।”
ইরিন, দিশা, সাওদা,মাওয়া ওকে ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় ওকে।”
আরিশা একবারো মা, বাবা, চাচা, চাচি, ভাই কারো’র দিকে তাকালো না। বড্ড অভিমান জমেছে সবার উপর। বুক ফে’টে কান্না আসছে ওর কিন্তু কাঁদতে পারছেনা।”
কীভাবে মানিয়ে নিবে নতুন পরিবেশে নিজেকে?” আরিয়ান ভাই কে ভু’লতে পারবে তো?”
আরিশা’র ভাবনা’র মধ্যেই ওর বর গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চলতে শুরু করে, কিছু টা সামনে এগিয়ে যেতেই আরিশা’র মাথা সিটে’র ওপর হে’লে পড়লো।” অর্থাৎ সে জ্ঞান হা’রি’য়ে’ছে অতিরি’ক্ত চিন্তা আর না’র্ভা’সনে’সে’র কারণে এমনটা হয়েছে।”
পাশ থেকে ওর বর ওর মাথাটা কাঁধে নিয়ে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে নিজেও মাথা এলিয়ে দেয় সিটে।”
দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে আরিশাকে, চোখ বন্ধ করে একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।”
মনে মনে ভাবে কীভাবে বুঝাবে তার এই অবুঝ অভিমানী কে।”
কেমন রিয়াকশন হবে তাকে দেখে তার আরুপাখি’র।
সেদিনের সেই যুবকটাই আরিশা’র বর এখন। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাঁসি ঝুলিয়ে রেখে বললো- আমার আরুপাখি, আমার মায়াপ’রি, একান্তই আমার। সারাজীবনের জন্য আমার! ইহকাল-পরকাল দুই জীবনের জন্যই আমার একান্ত আমার।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মুখে মনে হলো কেউ পানি ঝা’প’টা দিচ্ছে। চোখে মুখ কুঁচ’কে আরিশা পিঠ পিঠ করে চোখ মেলে তাকায়।”
চারিদিক অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন তবে হালকা আলো’র ছড়াছড়ি পুরো কক্ষ জুড়ে।”
আরিশা ধীরে ধীরে উঠে বসলো শোয়া থেকে। বেডের পাশে একটা সেন্টার টেবিলে একটা ফোন রাখা দেখে।
আরিশা হাত বাড়িয়ে ফোন নিয়ে ওপেন করতেই বুঝতে পারে এটা ওর ফোন।
ফোনে সময় দেখতেই আরিশা’র কপাল খানিক টা কু’ঞ্চি’ত হলো। এতোটা সময় আমি ঘুমিয়েছিলাম আল্লাহ!”
আরিশা বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো! বাহির থেকে কিছু কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে আসছে। কিন্তু ওর কক্ষে’র চারপাশে নিরবতা বিরাজমান।”
আরিশা পুরো কক্ষ জুড়ে একবার পা গুলো বিচরণ করলো। সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখলো! মনে মনে বললো- বাহ! খুব সুন্দর রুম তো!” এই রুম কী উনার?”
বেলকনিতে যাবে যাবে বলেও যাওয়া হলো না।”
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনের লক খুলতেই আরিয়ানের ফটো ভেসে উঠে ফোনে’র স্ক্রি’নে।” আরিয়ানে’র মুখশীখানা দেখতেই ভেতরটা ধ’ক করে উঠে আরিশা’র। হৃদয় টা হাহাকার করে যেন বলে উঠলো- এই মানুষটা আমার নয় আর কখনোই আমার হবে না।”
আরিশা’র মন খুব করে চাচ্ছে সবকিছু ছেড়ে এই মানুষটার বুকে মুখ গুজে পড়ে থাকতে।”
আরিশা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- নাহ আর ভাববো না উনার কথা। আমি এখন অন্যে’র অর্ধাঙ্গিনী! তিনি ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষে’র দিকে দৃষ্টি দেওয়াও আমার অনুচিত।”
আরিশা আরিয়ানের ফটো টা ডি’লে’ট করার জন্য ক্লিক করবে তখনই ওর হাত থেকে কেউ ফোনটা কেড়ে নেয়।
আরিশার মনে হলো এখনই জ্ঞান হা’রা’বে ও।” মানে! এই রুমে ও ছাড়া তো অন্য কেউ নেই তাহলে ফোন কে নিল?”
ওর ভাবনা’র মধ্যেই কেউ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বললো- কী ব্যাপার আরুপাখি এইভাবে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে, আবার আমাকে না দেখিয়ে ডি’লে’ট করে দিচ্ছো?”
কথা গুলো শুনে আরিশার প্রা’ণ পাখি উড়াল দেবে এমন অবস্থা।” কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো- কেককে আআপনি?”
আরিশার কথা শেষ হতেই সেই মানুষটা ওকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিল।”
মানুষটা কে একপলক দেখতেই চ’মকে নেত্রযুগল বন্ধ করে নেয় আরিশা।”
আবার মানুষটার দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো- আরিয়ান ভাই আআপনি।””
আরিশা’র মুখে আরিয়ান ভাই ডাকটা শুনে আরিশা কে গভীর দৃষ্টিতে পরখ করলো আরিয়ান।”
আজ কতটা বছর পর এই মায়াবী ডাকটা শুনলো আরিয়ান প্রিয়তমা’র মুখে।”
আরিয়ান বললো- হ্যাঁ আমি আরু পাখি! তুমি কাকে চাইছিলে?”
আরিশা চঞ্চল কন্ঠে বললো-আরিয়ান ভাই আপনি এখানে কেন? প্লিজ চলে যান আপনি। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে আমার স্বামী আপনাকে আমার সাথে দেখলে কষ্ট পাবেন! ভু’ল বুঝবেন আমাকে দয়া করে চলে যান আপনি।”
আরুপাখি নিজের রুম নিজের বউ রেখে আমি বাহিরে থাকবো?”
আমার বউয়ে’র পাশে আমি নিজেকে দেখলে বউ কে ভুল বুঝবো! ক’ষ্ট পাবো?” এতোটাও খা’রা’প তোমার স্বামী নয় গো।”
আরিয়া’নে’র কথা শুনে আরিশা’র আবার কিঞ্চিত পরিমাণ কু’ঞ্চি’ত হলো।” ধীর গলায় বললো- মানে?”
আরিয়ান: মানে খুব সহজ আমি তোমার বর আর তুমি আমার বউ।”
আরিশার কথাটা বোধগম্য হতেই ঝাড়া দিয়ে আরিয়ানের হাত ছাড়িয়ে নেয় এবং নিজে দূরে সরে গিয়ে বললো- পা’গ’লে:র মতো যা তা বলবেন না! আপনি এক্ষুনি বের হয়ে যান আমার রুম থেকে। মাত্র আজকেই আমার বিয়েটা হয়েছে, আমার সংসারটা ভা’ঙ্গ’বে’ন না দয়া করে।
আরিয়ান এক ক’দ’ম এগিয়ে এসে আরিশা’র হাত ধরে টেনে আবার নিজের কাছে এনে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো- বাব্বাহ আরুপাখি বিয়ে হতেনা হতেই দখলদারি শুরু করছো। আবার আমাকেই আমার রুম থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছো!” ইটস্ নট ফেয়ার বউ।”
আরিয়ান মুখটাকে কিছু টা বাচ্চা’দে’র মতো করে কথা গুলো বললো।”
তারপর আবার আরিয়ান বললো- শুধু আমার নয় তোমার নয়। আমাদের দুজনে’রই স্বপ্ন কুটির এটা! বুঝেছো মায়াপ’রি।”
চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরিয়ানের কথা শুনে আরিশা বললো-মানে কী বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন।
আরিয়ান:আমি তো বলতেই চাচ্ছি! তুমিই তো না শুনে আমাকে রুম থেকে বের করে দিচ্ছো।”
আরিশা: আচ্ছা ঠিক আছে বের করে দেবো না আপনি বলুন।”
আরিয়ান ডিভানে বসে আরিশা কে বললো- বসো এখানে ।
আরিশা চোখ গুলো বড় বড় করে বললো- আমি আপনার কোলে কেন বসবো?
আরিয়ান নিজেই টান দিয়ে আরিশাকে কোলে বসিয়ে দিয়ে বললো- না বসলে বলবো না!”
আরিশা চুপ করে বসে বললো- আচ্ছা বলুন।”
তারপর আরিয়ান আরিশা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে একহাত দিয়ে অন্য হাত দিয়ে আরিশার এক হাত আঁকড়ে ধরে বলতে লাগলো- আরু আমার সাথেই তোমার বিয়েটা হয়েছে। যেদিন তোমার আব্বু তোমাকে বিয়ের কথা বললেন সেদিন আমি মানে আমার পরিবারই প্রস্তাবটা নিয়ে গিয়েছিলেন।”
আরিশার চোখ গুলো আবারো নিজ থেকে বড় হয়ে যায়! অবাক কন্ঠে বললো-কীহ!
তাহলে কেউ আমাকে বললো না কেন?”
আরিয়ান: আমিই বলেছিলাম তোমাকে আমার কথা না বলতে। আসলে আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কী করো বা আমাকে কী বলো!”
কিন্তু তুমি তো ভারি অদ্ভুদ মেয়ে আরু পাখি। তা অবশ্য হবে না কেন! মেয়েদের তো বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফাটে না।” শত কষ্ট হলেও সহ্য করতে রাজি কিন্তু কারো কাছে প্রকাশ করতে রাজি না! যদি না সে নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞেস করে!”
আচ্ছা আরুপাখি আমাকে একবার কেন বললে না আরিয়ান ভাই আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি! তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো না।”
উল্টো আমাকে বললে- আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে!”
আরে এটা তো আমিও জানতাম যে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আর আমি না আসলে যে তোমার বিয়ে হবে না এটাও জানতাম।” তাইতো বলেছিলাম দাওয়াত দিলেও আসবো না দিলেও আসবো!”
আচ্ছা আরুপাখি আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে কী তুমি রাজি হতে বিয়েতে? না রাজি তো তুমি হয়েছো!”
আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে সংসার করতে পারতে?” পারতে নিজেকে অন্য কারো সাথে মানিয়ে নিতে?”
আরিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরিয়ানে’র দিকে।” মনে মনে বললো- সত্যিই কী পারতাম এই মানুষ টা কে ছাড়া অন্য কারো সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে!” ভেতর টা কেঁপে উঠলো! যেন ভ’য়া’র্ত কন্ঠে ভেতর টা বলছে কখনোই পারতাম না হয়তো।”
কিছু সময় চুপ থাকার পর আরিশা বললো- আব্বু যে বললেন- ছেলে লন্ডনে থাকেন, উনার ওখানে জব আছে। সেই ছেলের বাবা’র সাথে আব্বু আর ছোট আব্বু’র ভালো সম্পর্কও আছে।
আরিয়ান বললো- আমি কোথায় থাকি?”
আরিশা কিছুক্ষণ থেমে বললো- লন্ডন!”
আরিয়ান: সেখানে আমি কী করি?” গরু’র ঘাস কা’টি?”
আরিশা: জব করেন!”
আরিয়ান: তাহলে এটা বুঝলা না গাধি! আর আব্বু’র সাথে শশুর আব্বার আর চাচা শশুরের বিজনেসের মাধ্যমে ভালো সম্পর্ক আছে। এই তো সেদিন তোমাদের অফিস থেকে আসলাম আব্বু’র সাথে। মিটিং ছিল একটা।”
আরিশা এবার আরিয়ানের হাতের বাঁধন ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো- আমি এই বিয়ে মানিনা।
আরিয়ান হাতের বাঁধন শক্ত করে বললো- ঠিক আছে মানতে হবে না শুধু তোমাকে আমার সাথে থাকলেই চলবে।”
আরিশা: আমি থাকবো না আপনার সাথে।”
আরিয়ান আরিশা কে ওর দিকে ফিরিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো- পারবে আমাকে ছাড়া থাকতে?”
আচ্ছা আরুপাখি তুমি কী সত্যিই পারতে আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে?”
পারতে আমি ছাড়া অন্য কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী করতে?”
আরিয়ান হালকা করে হাসলো!
তারপর বললো- হয়তো পারতে তাইতো একবারো কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটা জানতে চাওনি। আমাকে ভালোবাসো বলনি।” মা বাবার খুশি আর কথা কে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য নিজেকে বি’স’র্জ’ন দিতে প্রস্তুত হয়েছিলে। এটাই কী বুঝাতে চেয়েছিলে তুমি তোমার মা বাবার বাধ্য মেয়ে?”
সত্যিই কী নিজেকে বি’স’র্জ’ন দিয়ে অন্য কারো সাথে জীবনের বাকি পথ গুলো চলতে পারতে?” পারতে নতুন করে অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে?” পারতে অন্য কারো প্রতি নিজের অনুভূতি গুলো নতুন করে সাজিয়ে তুলতে?”
আরিয়ান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো- বল না আরুপাখি আমি ছাড়াও অন্য কাউকে কী তুমি ভালোবাসতে পারতে?”
আরিশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আরিয়ানের নেত্রযুগলে’র দিকে। কতশত ভালোবাসা ওর জন্য,তা যেন এই চোখ দু’টোতে পড়তে পাড়ছে আরিশা।”
ওর চোখের কোণে জল ঝড়ো হলো।”
আরিয়ানের বুকে মুখ গু’জে ডু’ক’রে কেঁদে উঠলো। কান্না ভে’জা গলায় বললো- আমি পারতাম না আরিয়ান ভাই সত্যিই পারতাম না। আমার খুব কষ্ট হয়েছিল এই বিয়ের কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো। যখন আমাকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল খুব কষ্ট হয়েছিল আরিয়ান ভাই। কিন্তু আমার কী করার ছিল? কেন একবার আমাকে কেউ বললো না আমার আপনাকেই আমি পেয়ে যাচ্ছি কী এমন হতো বললে?” আমার যে খুব কষ্ট হয়েছিল আরিয়ান ভাই!”
আরিয়ান কিছু বললো না আরিশাকে।” মাথায় হাত রেখে বসে রইলো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আরিয়ানের আম্মু’র শেষ কথা ছিল এটাই যে আরিয়ান কে এইবার বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করেই যেতে হবে।”
মায়ের কাছে হার মেনে আরিয়ান বললো আরিশার কথা। আরিশাকে দেখে কেউ অমত প্রকাশ করেননি, বরং তাদের ও পছন্দ হয় ওকে।”
তারপর উনারা আরিশার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান।”
আহাদ আহমেদ ( আরিয়ানের বাবা) আশরাফ চৌধুরী এবং আরমান চৌধুরী চিনেন তাদের বিজনেসের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে চিন-পরিচয় ছিল আগে থেকেই ভালো একটা সম্পর্ক।”
আরিয়ান কে দেখে আশরাফ চৌধুরী ও অমত প্রকাশ করেননি।”
যখন আরিশার মতামতের কথা বললেন আশরাফ চৌধুরী তখন আরিয়ান সবকিছু সবার সামনে প্রকাশ করে।” এটাও বলেছে তারা কখনোই এইভাবে কথা বলেনি । দু’জনেই অপেক্ষারত ছিল ভালো সময়ের। তারপরেও যদি আপনাদের বিশ্বাস না হয় তাহলে ইরিন, আরিয়া কে জিজ্ঞেস করতে পারেন ওরা দু’জন জানে।”
ইরিনও বলে দেয় সবকিছু।”
সবকিছুর পর সবাই দেখলেন দুজনের জন্যই দুজন পারফেক্ট। একে অপর কে যেহেতু পছন্দ করেই তাহলে ওদের কে বাঁধা না দেওয়াটাই ভালো।”
আর আল্লাহ তায়ালা হয়তো চান ওদের মিলন তাইতো এতো বছর পরেও দুজন দুজনকে খুঁজে পেলো।”
আরিয়ান বলেছিল আরিশা কে কেউ যেন না বলে ওর সাথেই বিয়ে হচ্ছে।” ওর বিষয়ে সবকিছু বলতে পারেন কিন্তু নাম নয়।”
উনারা আর ঘাটলেননা এসবে,ওদের যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই হোক।”
অভিভাবক আর আপনজন হিসেবে উনাদের দায়িত্ব হলো ছেলে মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করা। তাদের পছন্দ সঠিক হলে সেই পছন্দ কে পূর্ণতা দেওয়া।” এমনটাই করেছেন আরিশা এবং আরিয়ানে’র পরিবার।”
আরাফ সেদিন রাতে আরিয়াকে আরিয়ান এবং আরিশা’র কথাই জিজ্ঞেস করেছিল। তখন আরিয়াও সবকিছু আরিয়ান কে বলে দেয়। এবং আরিয়াও জানতে পারে আরিয়ানে’র সাথে আরিশার বিয়ে হচ্ছে তবে আরিশা যেন সেটা জানতে না পারে।”
সেদিন যদি আরিশা’র বাবা ওর সাথে এইভাবে কথা না বলতেন তাহলে আরিশা কখনোই বিয়েতে রাজি হতো না।” তখন ওর কাছে প্রকাশ করতে হতো আরিয়ানে’র কথা তাই এভাবে বললেন।”
আরিশা নিজেও অভিমানে, রা’গে কখনো কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটা জানা’র চেষ্টা করেনি! ছেড়েদিয়েছিল তো ভাগ্যে’র উপর।”
~~~~~~ ~~~~~~~~ ~~~~
আরিশা আগের মতোই আরিয়ানের বুকে মুখ গু’জে আছে। এবার আরিয়ান আরিশাকে বুক থেকে তুলে বললো- হয়েছে এবার শেষ। চলো নামাজ পড়বো!” আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করবো না আল্লাহ তায়ালা যে আমাদের কে এক করলেন।” এতো বড় প্রাপ্তি আমাদের দুজন কে দিলেন আল্লাহ’র দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে হবে আরুপাখি।” উঠো এসব চেঞ্জ করে আসো।”
আরিশা মাথা নেড়ে ব্যাগ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।”
আরিয়ান আগেই সবকিছু পরিবর্তন করে ফ্রেশ হয়েছে।”
~~~~~~
আরাফ রুমে প্রবেশ করেই দেখলো পুরো কক্ষ জুড়ে নিভু নিভু আলো’র খেলা। আরো কিছুটা এগিয়ে যেতেই জানালার পাশে আরিয়া কে দেখতে পায়।”
আরাফ মুচকি হেসে আরিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।”
তারপর স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো- এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস আরিয়া?”
আরিয়া আরাফে’র কথা শুনে পাশে থাকায়।”
চলবে!