অপেক্ষার শেষে পর্ব -২৫+২৬

#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা

আরাফের দিকে তী’ক্ষ্ণ নজরে তাকাতেই আরাফ দাঁত কেলিয়ে হেঁসে উঠে।”
এভাবে কী দেখছিস?” আমিই তো।”

হঠাৎ আরিয়া আরাফের কলার চে’পে ধরে বললো- তুমি আমাকে এইভাবে কেন বিয়ে করলে?” বিয়ে নিয়ে কতকিছু ভাবনা ছিল আমার কত ইচ্ছা ছিল!” কিছুই পূরন হলো না।”
আর এইদিকে যে আরিশার বিয়েতে আনন্দ করবো সেটাও করতে দিলে না!” এক জায়গায় বসিয়ে রাখলে পাথরে:র মতো।”

আরাফ আরিয়ার হাত ধরে বললো- কী করছিস আরিয়া?” তুই আমার কলার ধরেছিস?” আমি তোর বড় ভাই না না আমি তোর স্বামী!” তুই এইভাবে আমার কলার ধরতে পারলি?”

আরাফের এইভাবে ভাই স্বামী বলা দেখে আরিয়া ফি’ক করে হেসে উঠে এবং ওর কলার ছেড়ে দেয়।”
ওর হাসির মধ্যেই আরাফ ওর কোমর জড়িয়ে খানিকটা কাছে নিয়ে আসে এবং বললো- বিয়ে এইভাবে হোক আর সেভাবে হোক একদিন তো হতো।” আজকেই ফরজ কাজটা সেরে নিলাম।”

আর কত বোন হয়ে থাকবি?” আর কত সবার কাছে ভাই পরিচয় দিবি?”
আর তাছাড়া তুই যেভাবে চেয়েছিলি সেভাবেই বিয়েটা হতো! কিন্তু তোর আজকে’র ভু’লে’র জন্য এই ভাবে বিয়েটা হলো।”

আরিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো- হ্যাঁ সব তো আমার দোষ, আমার ভুল।”
আমি কী করবো? ওই ছেলে গুলো আমাকে এমন ভাবে এসে বলেছিল কেউ ডাকছে আমি না গিয়ে থাকতে পারলাম না। কিন্তু আমি কী জানতাম ওরা আমার সাথে ফাজলামি করছে।”
ওদের কথায় তো আমি গিয়েছিলাম! ওদের সাথে কী হাঁটতে গিয়েছিলাম?”

আরাফ: সে যাই হোক! কাউকে পেয়েছিলি সেখানে গিয়ে?”
আরিয়া এদিক সেদিক মাথা নাড়ায় অর্থাৎ সে পায়নি।”

আরাফ আবার বললো- কেউ ছিলনা সেখানে!” তুই তো সামনে হাঁটছিলি তাই দেখতে পাসনি ওরা কীভাবে তোকে দেখছিল!” এজন্যই তো আমার রা’গ উঠে গিয়েছিল।”

আরিয়া নরম কন্ঠে বললো- স্যরি! আর যাবো না এইভাবে কেউ ডাকলে।”
আরাফ মুচকি হেসে আরিয়া’র কানের পাশে বের হওয়া ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বললো- হুম!” লক্ষি টি এবার যা ফ্রেশ হয়ে আয়, নামাজ পড়বো।”
আরিয়া ঠিক আছে বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।”

~~~~~~~~~~~~~

সকাল সাতটা চোয়ান্ন মিনিট!””
দরজায় কারো করা করা’ঘা’তে’র ফলে আরিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়।” ও ফট করে শোয়া থেকে উঠে বসে।
ফজরের নামাজ আদায় করে শুয়ে ছিল, কীভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি।”
গতকাল রাতে নামাজ আদায় করে দু’জন রাত প্রায় আড়াইটার দিকে ঘুমিয়েছিল।” দু’জনের কতশত না বলা কথা একে অপরকে বললো।” এতো কথা জমেছিল শেষই হচ্ছিল না।”

আরিশা পাশে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ান বাচ্চাদের মতো হাঁটু ভাঁজ করে ঘুমিয়ে আছে।” আরিশার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে মুচকি হাসি জড়ো হয়। এই মানুষটা, এই মানুষটা তার সত্যিই তার হয়ে গিয়েছে।”
আরিয়ানের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আরিশা।”

তারপর দরজা খোলে দেয়।” দরজার ওপাশে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”

আরিশা কে দেখেই বললো- ওহহো ভাবী গুড মর্নিং!”” তোমাদের ঘুমে ডিস্টার্ব করলাম নাকি?” ডিস্টার্ব হলেও কিছু করার নেই!” এইভাবেই হয়তো প্রতিদিন ডিস্টার্ব করবো! বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়েটা।”
টোল পড়া গালে’র হাঁসি মেয়েটার সৌন্দর্য যেন বাড়িয়ে দিলো দুগুন।”

হাঁসি থামিয়ে মেয়েটা বললো- ভাবী আমি তোমার একমাত্র ননদ! আরো অনেকে‌ আছে তবে আমি আগে বুঝছো।”

আফরা নাম শুনেই আরিশার মুখের হাঁসি চওড়া হলো।” অনেক শুনেছে আরিয়ানের মুখে ওর কথা।”
আফরা আবার বললো- আচ্ছা ভাবী নিচে আসো বড় আম্মু ডাকবেন। ভাইয়াকেও তুলে দাও আমি যাই।”
আরিশা বললো- হ্যাঁ আসছি।
আফরা হেঁসে চলে যায় সেখান থেকে।”

আরিশা নিচে আসলো সাথে আরিয়ান।” নিচে নামতেই একজন মহিলার দিকে দৃষ্টি যায় আরিশার।”
উনাকে মহিলা বললে ভুল হবে এখনো তো যুবতী মনে হচ্ছে!” কী সুন্দর রুপ।”
আরিশার মুখ দিয়ে ওর অজান্তেই মাশাআল্লাহ শব্দটি বের হয়।”
আল্লাহর সৃষ্টি সবাই সুন্দর!” তবে উনাকে দেখলে মনে হবে খুব যত্ন সহকারে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা।”

আরিশা এখনো তাকিয়ে আছে উনার দিকে।” আরিয়ান আরিশার পেছন দিক থেকে কাঁধে হাত রাখতেই আরিশা অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরায়।”
আরিয়ান হালকা হেসে বললো- আআম্মু……

আরিয়ানের মুখ থেকে আম্মু শব্দটা শুনতেই আরিশার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়।”
মানে!” ইনি আরিয়ানের আম্মু মানে আমার শাশুড়ি আরিশা যেন খুব খুশি হয়।”

আরিশা দুকদম এগিয়ে যায় শাশুড়ি’র দিকে। হাঁসি মুখে সালাম করলো উনাকে।”
ততক্ষণে আরিয়ানের আম্মু আলিয়া আহসান কাছে চলে এসেছেন।” আরিশা কে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন- সুখে থাকো মা।”
আরিশা আরেকদফা মুগ্ধ হলো উনার কন্ঠস্বর শুনে।”

আলিয়া আহসান আরিশার থুতনি ধরে ওকে ভালো করে দেখে বললেন- মাশাআল্লাহ কারো নজর না পড়ুক আমার এই মেয়েটার উপর।” বলেই আরিশার কপালে ভালোবাসার একটা পরশ এঁকে দিলেন। আরিশা চোখ বন্ধ করে উনাকে জড়িয়ে ধরে! মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো এরকম শাশুড়ি নামক আরো একটা মা উপহার দেওয়ার জন্য।”

আরিশা এবং আলিয়া আহসানের কাছে এসে আরিয়ান বললো- হ্যাঁ হ্যাঁ সব ভালোবাসা এই নতুন মেয়ের জন্য আমাকে কেউ ভালোবাসে না।” এ জীবন রেখে কী লাভ!””

আলিয়া আহসান,আরিশা দুজনেই হেসে দেন আরিয়ানের কথা শুনে।”
আলিয়া আহসান বললেন- তোমরা নাস্তার টেবিলে বসো। সবাই চলে আসবে।”
ধীরে ধীরে সবাই নাস্তার টেবিলে আসেন। সবার নাস্তার পর্ব শেষ হয়। আবার যে যার মতো কেউ রুমে কেউ বাহিরে যান।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

এই আফরা আহমেদ কখনোই কারো প্রস্তাব গ্রহন করেনি।” আর তুমি কোন হিরো যে দু’ একদিন পরিচয় হতেই প্রস্তাব দিলে আর ভাবলে কীভাবে যে আমি তোমার প্রস্তাব গ্ৰহন করবো?””
থাপ্পর খেতে না চাইলে এক্ষুনি আমার সামনে থেকে যাও তোমরা!”
কথার মধ্যে অনেক রাগ আর দুনিয়ার সব বিরক্তি যেন মিশ্রিত।”

মেয়েটার কথা কানে পৌঁছাতেই ইরফান তাকায় সেদিকে।” দ্রুত গতিতে দেখতে পেলো দুটো ছেলে বাসার ভেতরের দিকে যাচ্ছে।”

আর তাদের দিকে কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো আফরা নামের মেয়েটা।”
ইরফান নিজের অজান্তেই এগিয়ে যায় ওর দিকে।”

আফরা পিছন ফিরে ইরফান কে দেখতেই দুকদম পিছিয়ে যায়।
তারপর ইরফান আফরার দিকে এবং আফরা তাকায় ইরফানের দিকে।”

প্রথমে আফরা বলে উঠে- আআপনি ইরফান ভাইয়া না?” ভাইয়ার বন্ধু!”
ইরফান ছোট্ট করে জবাব দিল- হুম!”

আফরা হেঁসে বললো- আমি আফরা আরিয়ান ভাইয়ার বোন।”
ইরফান: ওহ আচ্ছা তুমি আমাকে চিনলে কীভাবে?”

আফরা: আপনাকে তো অনেকবার দেখেছি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে! আর ফটোও দেখেছি অনেকবার।” তাই চিনতে পেরেছি।
আফরার সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে ইরফান মনে মনে হাসলো।”

ইরফান আবার বললো- ওহ আচ্ছ!” তারপর আবার বললো- আফরা চলো ওইদিক থেকে একটু হেঁটে আসি।”
আফরা হেঁসে বললো- আচ্ছা ভাইয়া চলুন।”
ইরফান: তোমার কোনো সমস্যা হবে না তো?”

আফরা মাথা ঝাঁকিয়ে বললো- না!”
মাথা ঝাঁকানোর ফলে জুটি করে বেঁধে রাখা লম্বা চুল গুলো হেলে উঠলো দুইপাশে।”

হাঁটতে হাঁটতে দুজন গেইটের বাহিরে চলে আসে।”
ইরফান হাঁটার মধ্যেই জিজ্ঞেস করলো- আচ্ছা আফরা তুমি ওই দুটো ছেলে কে কিসের প্রস্তাবের কথা বলেছিলে?”
আফরা: আরে ভাইয়া আর বইলেননা! কালকে ওদের সাথে একটু কথা বলেছিলাম গেস্ট হিসেবে।” আর আজকেই আমাকে প্রপোজ করে বসলো।”
বুঝতে পারছেন কেমন ছেলে একদিন কথা বলতে না বলতেই সোজা প্রপোজ করে বসলো!”

ইরফান কিছুটা হেঁসে বললো- কেন ছেলেটা কী দেখতে খারাপ নাকি?”
আফরা: না! আসলে ভাইয়া আমার এসব প্রেম পিরিতি
ভালো লাগে না!”
কলেজে অনেকই আমাকে প্রপোজ করে আমি সবাই কে ফিরিয়ে দেই।” আর যারা পিছনে লেগে থাকে তারা তো মা’র ও খায়।” বলেই একটা চওড়া হাসি দেয় আফরা।”

ইরফান বললো- বাব্বাহ এতো ডে’ঞ্জা’রা’স তুমি?”
আফরা শুধু হাসলো।”
ও কী বুঝতে পারছে ওর হাসি দেখে কেউ একজন ভেতরে ভেতরে খু’ন হচ্ছে!””

অনেকক্ষণ হাঁটা’র পর ওরা বাসায় ফিরে আসে।”
ইরফান নিজের রুমে গিয়ে ঢ’ক’ঢ’ক করে এক গ্লাস পানি পান করে।”
শেষমেষ কী না এই বাচ্চা মেয়েকেই সে এতো দিন ভালোবেসে যাচ্ছে।” বড় হলে কী হবে ওর আচরণ টা যে এখনো বাচ্চাসুলভ।”

~~~~~~~ ~~~~~~~ ~~~~~~

যেহেতু আরিয়ান,আরাফ, আরিশা, আরিয়া চারজনের বিয়েটা একসাথে হয়েছে সেহেতু দুপরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন ওদের রিসিপশনটাও একসাথেই হোক। তাহলে দুপক্ষই রিসিপশনে উপস্থিত থাকতে পারবেন।”
সবকিছুর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একটা পার্টি সেন্টারে আজ রাতে ওদের রিসিপশনের আয়োজন করা হবে।””

চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা

সন্ধ্যা সাতটা সবাই সেন্টারে উপস্থিত হয়েছেন, অনেকেই এখনো আসছেন। চারিদিক সুন্দর ভাবে ডেকোরেট করা হয়েছে।
আরিয়া সবকিছু দেখে খুব খুশি হলো। ও তো চেয়েছিল ওর বিয়েটা ধুমধাম ভাবে হোক। যাই হোক বিয়েটাও ওতো ধু’মধা’ম ভাবেই হয়তো হঠাৎ। এখন রিসিপশন এইভাবে হচ্ছে এতেই ও খুশি।”

আরিশা সেন্টারে এসেই ওর বাবা অর্থাৎ আশরাফ চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করে। মা কে জড়িয়ে ও কান্না করে, ছোট আব্বু ছোট আম্মু সবাই কে জড়িয়ে ধরে-ই কান্না করেছে।”
ওর জন্য এতো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল আর ও কত অভিমান করলো। যাওয়া’র সময়টাতে মা বাবা কে জড়িয়েই ধরতে পারলো না।”

আয়শা সিদ্দিকা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কপালে অষ্ট ছোঁয়ালেন। অতঃপর আরিশা কে ওর জায়গায় বসিয়ে দিলেন। ওর পাশে আরিয়া ও, দুইবোন একসাথে বসে রইলো।”

আরিয়ান, আরাফে’র পাশে ইরফান দাঁড়িয়ে আছে।”
ইরফান আরাফ এবং ইরফানে’র উদ্দেশে বললো- ভাই তোরা দুজন তো একসাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলি। আর আমি এখনো সিঙ্গেল।”
ভাই তোদের কী কষ্ট হচ্ছে না একটু ও মায়া হচ্ছে না আমাকে সিঙ্গেল দেখে।”

আরাফ হেঁসে বললো- তুই জন্মগত সিঙ্গেল, আর সিঙ্গেলই থাকবি।” আরিয়ানও হেঁসে সায় দেয় আরা’ফে’র কথায়।”

ইরফান মেয়েদে’র মতো গাল ফু’লি’য়ে বললো- ভাই তোরা একজন বন্ধু’র বোন। আর একজন চাচাতো বোন কে বিয়ে করলি। বলি এই সিঙ্গেল আমাকেও ওতো কারো বোন দিতে পারিস।”
ইরফান কথাটা আরিয়ানে’র দিকে আ’ড়-চোখে তাকিয়ে বললো।”

আরিয়ানের বুঝতে বাকি নেই কী বলতে চাইছে ইরফান।
আরিয়ান বললো- হোপ বেডা, আমার বোন তো ছোট আর তুই বুড়ো।”
ইরফান মুখ ফুলিয়ে রইলো, আরিয়ান মুচকি হাসলো।”

আরিশার বিরক্ত লাগছে, আর কত এইভাবে বসে থাকবে কে জানে?”
ওর মোটেই ইচ্ছা নেই এভাবে মানুষের সামনে সেজে গুজে বসে থাকার।”

আরিশা আরিয়ার দিকে তাকায়। বুঝতে পারলো আরিয়া এসব দেখে খুশি। কারণ ও সবসময় বলতো ওর বিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে যেন হয়।”
আরিশা মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো- ভাই আর এই রিয়ু তো একে অপরকে পেয়ে গেলো। যাক আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ওদের কে যেন সবসময় একসাথে রাখেন।

সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। সেটা হোক #অপেক্ষার_শেষে বা প্রণয়ের। অপ্রকাশিত ভালোবাসা গুলোও প্রকাশিত হোক, দিন শেষে পূর্ণতার পাতায় নাম উঠুক।”

সবকিছু আবারো সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হলো।
সবাই বাসার উদ্দেশ্যে আবার রওনা দিলেন। আরিয়ান এবং আরিশা এখন আরিয়ানের বাসায় যাচ্ছে। কাল ওরা দুজন একসাথে আরিশার বাসায় আসবে।”

আজ সোহা, ইরফান, মিতু, আরাফদের বাসায় গেলো। এবং দিয়ান, দিশা, মাহিন আরিয়ানের বাসায়।
ইরফান, সোহা মিতু বিয়ের দিন আরিয়ানের বাসায় ছিল।” বরযাত্রী হিসেবে ওরা আরাফদের বাসায় এসেছিল। এজন্যই আরিশা সোহা, মিতু কে বিয়ের দিন দেখেনি।”

গাড়ি প্রায় দশটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের দিকে এসে গেইটের পাশে থামে আরিয়ানদের।”
দারোয়ান কাকা এসে গেইট খুলে দিলেন, গাড়ি পুনরায় চলে এবং ভেতরে প্রবেশ করে।” প্রায় সাতটা কার একসাথে এসেছে।”

সবাই বাসার ভেতরে চলে গেলেও এখনো অনেকেই বাহিরে।”
গাড়ি থেকে নেমে দিশা আফরা কে খোঁজার জন্য এদিক ওদেকি ঘুরছিল।”
হঠাৎই কারো সাথে ধা’ক্কা লাগে ওর।”
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেও দিশা।”
তারপর মানুষটার উদ্দেশ্যে বলে উঠে – এই আপনার চোখ কী পকেটের ভেতর ঢুকিয়ে রেখেছেন নাকি?” আপনি দেখতে পারছেন না?”
কথাটা বলতে না বলতেই দিশার গালে লোকটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়।”
থাপ্পরটা খুব জোরেই লেগেছে দিশার, সে অপ্রস্তুত হয়ে দু’কদ’ম পিছিয়ে যায়।” গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায় অপরিচিত মানুষের দিকে।”
গাল মনে হলো জ্ব’লে যাচ্ছে দিশার।”

একটা কর্কশ কন্ঠে লোকটা বলে উঠে- বেয়াদব মেয়ে নিজেই এসে ধা’ক্কা দিয়ে এখন আমাকে বলছো আমি ধা’ক্কা দিয়েছি?”
নিজেরই এরকম ছেলে দেখলে গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে।” যেচে এসে ধা’ক্কা দিয়ে কথা বলার সুযোগ খুঁজো?”
তোমার মতো মেয়েদের খুব ভালো করে চেনা আছে আমার।”
অসভ্য মে,,,,,
কথাটা শেষ করার আগেই লোকটার গালে পরপর দুটো থা’প্পর পড়ে।”
দিয়ান র’ক্তি’ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।”
লোকটা কিছু না বলে দিয়ান কে পাল্টা থাপ্পর মা’রা’র জন্য হাত উঠাতেই, দিয়ান সেই হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।”
তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো- আপনার সাহস দেখে তো আমি অবাক হচ্ছি!”
আপনি আমাদের বড় ভাইয়ের মতো, আপনাকে মারা টা উচিত হয়নি কিন্তু প্রয়োজন ছিল।”

বাচ্চা একটা মেয়ে, হয়তো দোষই ছিল। হয়তো ওর ভুলের জন্যই ধা’ক্কা লেগে গেছে।
আর কী এমন বলেছে সে যার জন্য আপনি ওর গায়ে হাত দিলেন?”
আবার ওকে থাপ্পর মেরেও বি’শ্রী কথাবার্তা বলছেন।”
সত্যি বলতে আপনাকে আমি কী করবো?” সত্যিই বুঝতেছিনা।””

যে মেয়ের গায়ে একটা ফুলের টোকাও আমরা লাগতে দেইনা সেই মেয়ের গায়ে আপনি! একজন অপরিচিত মানুষ হাত তুলেছেন।”
আপনাকে যদি আশেপাশে দেখি তাহলে এখনো তো শুধু দুটো থাপ্পর দিয়েছি, পরের বার দেখলে পুঁতে ফেলতেও আমার হাত কাঁপবে না।
কথা গুলো বলে লোকটার ধরে রাখা হাতটা ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ান।”

লোকটা চোখ পাকিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো- তোদের আমি দেখে নেবো। তোরা জানিস না আমি কে? আর কী করতে পারি!”

দিয়ান তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো- আপনার মতো মানুষের সাথে নিশ্চয় আমাদের আর দেখা হবে না।”
আর হলেও আপনি আমাদের কিছু করতে পারবেন না।”

লোকটা অ’গ্নিচোখে ওদের দিকে তাকিয়ে গট গট করে পা চালিয়ে চলে যায়।”

দিয়ান দিশাকে বাগানের দিকে নিয়ে আসে।” লাইটের নিচে দাঁড় করিয়ে দিশার গাল থেকে হাত সরায়।”

তারপর দেখলো দিশার ফর্সা গালে তিনটা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।”
দিয়ান আলতো করে সেখানে হাত বুলিয়ে দেয়।”
মানুষ এরকম কেন?” দিয়ানের রা’গে যেন ফেটে যাচ্ছে।”

দাঁতে দাঁত চেপে দিয়ান জিজ্ঞেস করলো- এখানে হাঁটছিলি কেন এভাবে?”
আর যদি হাঁটবিই তাহলে দেখে শুনে হাঁটলি না কেন?”
এরকম মানুষের সাথে ধা’ক্কা লাগলো কীভাবে তোর?”

দিশার চোখ বেয়ে এখনো জল গড়িয়ে পড়ছে।”
ভেজা গলায় বললো- ভাইয়া আমি আফরা কে খুঁজছিলাম।” কিন্তু এই লোকটার সাথে কীভাবে…….

আর বলতে না দিয়ে দিয়ান আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো- হয়েছে আর কান্না করতে হবে না।”
আর আফরা তো ভেতরে চলে গিয়েছে আন্টি ওকে ডেকে নিয়ে গিয়েছেন প্রয়োজন আছে হয়তো।”
কিছুক্ষণ পর দিশার কান্না থামে, ওরা বাসার ভেতরে চলে যায়।”

ফ্রেশ হয়ে সবাই নিজেদের কক্ষে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেন।”

আরিশা সবকিছু পরিবর্তন করে এসে দেখলো আরিয়ান রুমে নেই।”
আরিশা টাওয়াল মেলে দিয়ে বেলকনির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।”
বেলকনিতে পা দিতেই ওর দৃষ্টি যায় বেলকনিতে রাখা দুটো বেতের চেয়ারের দিকে।”
চেয়ার দুটোর মধ্যে একটাতে আরিয়ান বসে আছে।”

আরিশা এক টুকরো মুচকি হেঁসে ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে, ধীর গতিতে চরণ ফেলে এগিয়ে যায় নিজের প্রিয়তমের নিকট।”
কত অপেক্ষার পর আজ এই মানুষটা তার। একান্তই তার, কথাটা ভাবতেই আরিশার বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।”

আরিশা আরিয়ানের পাশে অন্য একটা চেয়ারে বসলো নিঃশব্দে।”
আরিশা বলতেই আরিয়ান ওর দিকে দৃষ্টিপাত করে।” সে বুঝতে পেরেছে, তার প্রিয়তমা তার নিকট উপস্থিত হয়েছে মাত্রই।”
আরিয়ান মুগ্ধ চোখে দেখলো চাঁদের আলোয় ঝলমল করা প্রিয়তমার মায়াবী বদনখানি।”

আরিয়ান চোখ ফিরিয়ে নিল একটা প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে। এই মেয়েটার দিকে তাকালে কেমন যেন একটা নেশা ধরে যায়। এতো মায়াবী কেন মায়াপরি টা?”
আরিয়ান পুনরায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বাহিরের দিকে।”

কেটে যায় অনেকটা সময়।””
আরিয়ান এতক্ষণ লন্ডনে কাটানো সময় নিয়ে গল্পে মেতে উঠেছিল আরিশার সাথে।”
আরিশা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে শুধু আরিয়ানের কথা গুলো শুনছিল।”
এই ছেলেটাও যে এতো কথা বলতে পারে আরিশার ভাবেনি‌!”
আরিশা এখনো মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে‌ আরিয়ানের পানে।”
যেন সাত জনম না দেখার তৃষ্ণা নিবারণের প্রয়াস।”
সত্যিই তো সে দেখেনি । দেখেনি ভালোবাসার মানুষটাকে দীর্ঘ নয়টি বছর।”

হয়তো নয় বছর বলা আর লেখাটা খুব সহজ। কিন্তু যে নয়টা বছর পার করে আর করেছে সে জানে কেমন?”
একটা মাস প্রিয় মানুষ না দেখলে মনে হয় একটা বছর।”
আর একটা বছর না দেখলে মনে হয় একটা যুগ।”
তেমনি হয়তো আরিশার নয়টি বছর কে’টে’ছে নয়টা যুগের মতো।”

সবকিছুর পর যে প্রিয় মানুষটাকে পেয়ে যায় সেই তো প্রকৃত সৌভাগ্যবান।”

কেটে গেছে একটি মাস।”
আগামীকাল আবার সবাই সিলেট যাবে।” সবাই যাওয়ার কথা থাকলেও সবাই যাবে না।”
এইবার যাবে আরিশা, আরিয়ান, আরিয়া, আরাফ, আফরা।” এই পাঁচজন সদস্য যাবে এইবার।”

দুপুর দুটো!””
আরিশা, আফরা নিজেদের রুমে ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত। নিজেদের ব্যবহৃত সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে ওরা।”
বিকেলে আরিশাদের বাসায় যাবে ওরা। তারপর সেখান থেকে আরাফ এবং আরিয়া সহ রাতের ট্রেনে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে সবাই।”
ট্রেনে রাতের ভ্রমণটা মূলত আফরার ইচ্ছে।”

বিকাল প্রায় চার টা!”” আরিয়ান, আরিশা, আফরা বাসা থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় আরিশাদের বাসার উদ্দেশ্যে।”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here