পৌষের কোন এক বিকেলে পর্ব -০৬+৭

#পৌষের_কোন_এক_বিকেলে
পর্ব – ৭
অপরাজিতা অপু

ঢেউ আর বাতাসের ছন্দ মিলেমিশে একাকার। অদূরে পানি পৃথিবীর সীমানা ছুঁয়ে আকাশে মিশে গেছে। নৌকাগুলো পানিতে ভেসে আকাশ ছুঁয়েছে। সূর্যটা ঠিক তাদের মাথার উপরে। এ যেনো শিল্পীর রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা একখানা শৈল্পিক ভাবনা। ভীষণ মুগ্ধকর দৃশ্য! যদিও একবার মন ভেংগে নতুন করে কাউকে বিশ্বাস করার সাহস আমার ছিলোনা। তবুও জানিনা আমার মন কেনো জানি পুনরায় এই পাশের মানুষটিকে বিশ্বাস করার অনুমতি দিয়েছে। তাই নিজের মনের সমস্ত ভয় কাটিয়ে আমি বরফ শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে দাড়িয়ে আছি। প্রথমে ঠাণ্ডা অনুভূত হলেও ধীরে ধীরে আশ্চর্যজনক ভাবে ঠান্ডার অনুভূতিটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। আমি দাড়িয়ে দূরের সেই দৃশ্য দেখছি। কখন যেনো সেসবের মাঝে হারিয়ে গেছি তার কোন খেয়াল নেই। রুপম মিহি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
” আপনি যে সেদিন বলেছিলেন আবার দেখা হবে। কিভাবে বুঝেছিলেন সেটা?”

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম। রুপম এর কথার উত্তর খুঁজতে কিছু সময় নিলাম। কারণ আমি তো নিজেই জানি না। সেদিন মনে হয়েছিল তাই বলেছিলাম। আমাকে ভাবতে দেখে রুপম বলল
” বলতে না চাইলে থাক। জোর নেই।”

আমি প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম
” আপনি জোর করে কখনো কথা বলেন না কেনো? মানে সবকিছু এতো সহজে মেনে নেন কিভাবে?”

রুপম হাসলো। তার হাসির শব্দ এই প্রথম আমার কানে লাগলো। ভীষণ মুগ্ধকর এক হাসি তার ঠোটে। আমি লাজ হারিয়ে সেদিকে তাকালাম। রুপম আমার চোখে চোখ রেখে বলল
” আগেই বলেছি আমি শান্তি প্রিয় মানুষ। শান্তি পছন্দ করি। তাই তর্কে জড়াতে চাইনা। মেনে নেয়ার মাঝেই জিত আছে ম্যাডাম। যুক্তিতর্কের মাঝে কোন জিত নেই।”

কয়েক মুহূর্ত থেমে আবার বলল
” এখনো ঠাণ্ডা লাগছে ?”

এবার আমি হেসে ফেললাম। ঠান্ডার অনুভূতিটা ভুলেই গিয়েছিলাম। রুপম বলল
” বলেছিলাম। একবার বিশ্বাস করেই দেখুন কোন ক্ষতি নেই।”

আমি হেসে ফেলে বললাম
” বুঝেছি মিস্টার। আর সেজন্যই তো বিশ্বাস করে এগিয়ে এলাম।”

” তাহলে এবার বিশ্বাস করে যদি নিজের কষ্টের কথা বলতে বলি খুব কি অন্যায় আবদার হয়ে যাবে?”

রুপম এর কথার প্রেক্ষিতে আমার কিছু বলার নেই। মানুষটা অদ্ভুত। তার সাথে আমার মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়। সে হিসেবে দেখতে গেলে আবদারটা সত্যিই অন্যায়। কিন্তু সেটা বলার উপায় নেই। এসব নিয়ে রুপম কেনো কারো সাথেই আমি আর কোন আলোচনা করতে চাই না। তাই এড়িয়ে গিয়ে বললাম
” মন খারাপের কথা বলে সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করতে চাইছি না। যেদিন সত্যিই মন খারাপ থাকবে সেদিন নাহয় বলবো।”

রুপম উত্তর দিলো না। তবে মেনে নিল আমার কথা। তার এই সহজে মেনে নেয়ার গুন টা আমার মনে ধরেছে। ভেবেছি আমিও আয়ত্ত করবো। এটাতে কিন্তু নিজেরই লাভ। আমার ফোন বেজে উঠলো। মাহীর নাম্বার দেখে পেছন ফিরে তাকালাম সে হাতের ইশারায় ডাকছে। আমি ফোনটা সাইলেন্ট করে রুপম কে বললাম
” আমাকে ডাকছে। আসছি।”
রুপম শুধু হাসলো। কোন কথা বলল না। আমি চলে এলাম। এসেই মাহী বলল
” কার সাথে কথা বলছিলে তুমি? তোমার পরিচিত কেউ?”

আমি মাহীর আগ্রহ দেখে ঘাবড়ে গেলাম। রুপম এর সাথে এভাবে কথা বলা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমার পরিবারের সবাই ধরেই নিয়েছে তারা না করে দিয়েছে। এরপর এভাবে কথা বলার অর্থ মোটেই ভালো হতে পারে না। তাই বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে বললাম
” তুই একা কেনো? সবাই কই?”

মাহী পেছনে হাত বাড়িয়ে দেখালো। বলল
” সবাই নাস্তা খেতে বসেছে। তোমাকে ডাকছে। তাই ডাকতে এসেছিলাম।”

আমি উত্তর না দিয়েই ওর সাথে চলে গেলাম। টেবিলে সবার সাথে বসে পড়লাম খেতে। রাতে ভালো ঘুম না হওয়ায় খাওয়ার তেমন রুচি নেই। খাবার দেখলেই গা গুলিয়ে উঠছে। শরীর টা বেশ খারাপ লাগছে। মুখের সামনে পড়ে থাকা খাবারটা কোন রকমে গিলে পানির গ্লাসটা মুখে ধরেছি ঠিক তখনি একজন বয়স্ক ভদ্রলোক পেছন থেকে বাবাকে দেখে বললেন
” আরে আজমল সাহেব যে। কেমন আছেন?”

বাবা ওনাকে দেখে অবাক হলেন। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলেন কিছুক্ষণ। তারপর উঠে দাড়িয়ে হাত মিলিয়ে বললেন
” ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

লোকটি সৌজন্য হেসে বলল “ভালো।”

আমার কাছে লোকটিকে বেশ পরিচিত মনে হলো কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারলাম না। হল ছেড়ে দিয়ে আবারো খাবারে মনোনিবেশ করলাম। এবার লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
” কেমন আছো মামনি?”

আমি অপ্রস্তুত হয়ে কিঞ্চিৎ ইতস্তত করে উত্তর দিলাম
” জি ভালো।”

বাবার সাথে তিনি আরো কথা বলছেন। এক পর্যায়ে আম্মুকে দেখে বলল
” ভাবী দেখছি সবাই মিলেই ঘুরতে এসেছেন। বাহ্ খুব ভালো লাগলো। আমরাও পরিবার সহ এসেছি। আসলে মাঝে মাঝে একসাথে ঘুরতে যাওয়া দরকার। এতে বন্ডিং ভালো হয়।”

বাবা কথাটাতে সম্মতি জানিয়ে বললেন
” এখানে বসেন। একসাথে নাস্তা করি।”

লোকটি আপত্তি জানালেও বাবার কথা ফেলতে পারলেন না। এক কাপ চা খাওয়ার জন্য বসে পড়লেন। এমন সময় পিছন থেকে ওনাকে একজন ডাকলো
” বাবা এখানে কি করছো? তোমাকে সবাই খুঁজছে।”

লোকটি পেছনে তাকিয়ে হেসে উঠে বললেন
” ওহ! এখানে চা খাচ্ছিলাম। এদিকে আসো।”

আমি রুপম কে দেখে চমকে উঠলাম। রুপম এরও একই অবস্থা। সে ধির পায়ে এগিয়ে আসলো তার বাবার কাছে। এবার আমার মনে পড়লো এটা রুপমের বাবা। আমাকে যেদিন দেখতে এসেছিল সেদিন তিনিও এসেছিলেন। আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলাম বলে এতো কিছু খেয়াল করিনি। একবার চোখ তুলে ওনাকে দেখেছিলাম। দ্বিতীয়বার দেখবো বলে আশা করিনি। তাই মনে রাখার প্রয়োজন হয়নি। রুপম এর বাবা বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে আমার বাবাকে বলল
” আমার ছেলে। রুপম।”

বাবা রুপমের দিকে তাকিয়ে থাকলো কয়েক মুহূর্ত। তারপর উঠে হাত বাড়াতেই রুপম অত্যন্ত ভদ্র ছেলের মতো সালাম জানালো। বাবা যেনো আরো মুগ্ধ হয়ে গেলো তার ব্যবহারে। বাবার সাথে হাত মেলাতেই বাবা রুপম কে আমাদের সাথে বসে চা খাওয়ার জন্য বললেন। সে ভদ্রতা রক্ষার্থে কোন প্রতিউত্তর না করেই বসে পড়লো ঠিক আমার সামনে। আমি এতক্ষণ সবকিছু নিশ্চুপ হয়ে দেখছিলাম। বাবা রুপমের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলেন। এবার সে চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো। কিন্তু বিষয়টা রুপমের বাবার চোখে পড়ে গেলো। তিনি তৎক্ষণাৎ বললেন
” তোমাদের তো মনে হয় কথা হয়েছে তাই না?”

রুপম নিচু স্বরে বলল
” জি বাবা।”

আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। বাবা এই বিষয়ে কোনো কথা বলল না। রুপম আর ওর বাবা অনেকক্ষণ বসে ছিলো। রুপম চুপচাপ থাকলেও তার বাবা আমার বাবার সাথে অনেক্ষণ কথা বলল। এর মাঝে আমরা কেউ কারো দিকে তাকাইনি। কথা শেষ করে রুপম আর ওর বাবা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বিষয়টা সাভাবিক হলেও আমার কাছে কেনো যেনো এতক্ষণের পরিবেশটা বেশ অস্থির লাগছিলো। ওরা চলে যাওয়ার পর আমি খেয়াল করলাম বাবার মুখটা কেমন যেনো মলিন হয়ে গেলো। খালামণি নিজের কৌতূহল চেপে রাখতে পারলো না। প্রশ্ন করে বসলো
” এদেরকে তো চিনলাম না দুলাভাই। কে ছিলো?”

বাবা মাথা নিচু করে খুব ধীরে উত্তর দিলো
” আমার কলিগের আত্মীয়। পরিচয় আছে একটু আধটু।”

আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম। বাবার এভাবে বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার কারণটা আমার দৃষ্টিগোচর হলো। রুপম কে বাবার অনেক পছন্দ হয়েছে। আর বাবা ধারণা করে থাকতে পারে যে আমার কোন আচরণেই রুপম না করে দিয়েছে। তাই হয়তো আমার উপরে কিছুটা মন খারাপ। আমি লুকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেললাম। খাওয়া শেষ করে সবাই যে যার মতো চলে গেলো। এখন রুমে গিয়ে এরপর কি করবে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। যে যার মতো আলোচনা করতেই ব্যস্ত। আমি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছিলাম। এমন সময় মেসেজ টোন কানে এলো।
” একটু বীচের ধারে আসতে পারবেন? আমি অপেক্ষা করছি। আর্জেন্ট!”

চলবে

( রিচেক করার সময় হয়নি। কিছু ভুল থাকতে পারে। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আর গল্পটা আদৌ কি আপনাদের ভালো লাগছে। ধীরে ধীরে পাঠক কমে যাচ্ছে। আর যারা পড়ছেন তারাও কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। একটু মন্তব্য করে জানাবেন কেমন লাগছে। এতে লেখার আগ্রহ বাড়ে।)#পৌষের_কোন_এক_বিকেলে
পর্ব – ৮
অপরাজিতা অপু

নাম্বার টা দেখেই আমার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেলো। রুপম এর নাম্বার থেকে মেসেজ টা এসেছে। আমি ভেবেই পাচ্ছি না কি এমন আর্জেন্ট কথা থাকতে পারে যে এভাবে ডাকছে আমাকে। সে যাই হোক দেখা তো করতেই হবে। যতটুকু চিনেছি রুপমের মতো ছেলে অন্তত অকারণে ডাকবে না। আমি আশে পাশে তাকালাম। সবাই বসে আছে। সকালেই তো বীচে গিয়েছিলাম। এখন আবার যেতে চাইলে প্রশ্ন করবে নানা রকম। সেসব প্রশ্নের উত্তর নাহয় দিলাম কিন্তু একা যেতে চাইলেই মাহী বাধ সাধবে। সেও সাথে যেতে চাইবে। এখন কি করি। ভীষণ অস্থির লাগছে। প্রেম করার সময়ও এতোটা হেনস্থা হতে হয়নি কখনো। আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করলাম। নিজেদের মতো গল্পে মশগুল। বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে এক পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে বেরোনোর পর খেয়াল করলাম আমাকে কেউ খেয়াল করেনি। দ্রুত হেঁটে বীচের ধারে চলে এলাম। কিন্তু সেখানে এসে রুপম কে দেখতে পেলাম না। মেজাজ টা চটে গেলো। একে তো সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এভাবে আসাটা বেশ কষ্টসাধ্য। আর সেখানে মহাপুরুষ এখনো আসেন নি। আমি বেশ বিরক্ত হয়ে গেলাম। আমার ঠিক পাশেই কয়েকজন ছেলে বেশ হাসাহাসি করছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি তারা আমাকে নিয়েই জল্পনা করছে। রুপম এর উপরে এবার আমার সত্যিই খুব রাগ লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ পর রুপম এলো। হাপাতে হাপাতে বলল
” কখন এসেছেন?”

আমি তীব্র অভিমান নিয়ে একপাশ ফিরে বললাম
” আপনার কমন সেন্স দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। একটা মেয়েকে কিভাবে ওয়েট করাতে পারলেন এতক্ষণ? এরকম একটা অপরিচিত জায়গায় আমি একা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি বিষয়টা কতটা অড ভেবে দেখেছেন? আজব একটা মানুষ আপনি।”

রুপম অপরাধীর মতো চেহারা নিয়ে বলল
” আসলে আপনি যে এতো তাড়াতাড়ি আসবেন সেটা ভাবতেই পারিনি। জানলে আমি সত্যিই আগে চলে আসতাম। তাছাড়া মাঝে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই এমন দেরি হলো। আমি সত্যিই খুব লজ্জিত।”

আমি তার কথায় কান দিলাম না। মুখ ভেংচিয়ে আরেকদিকে তাকিয়ে থাকলাম। রুপম ক্লান্ত স্বরে বলল
” কান ধরতে হবে? আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি এমন একটা পরিস্থিতি হবে।”

রুপম এর অপরাধীর মতো চেহারা দেখে আমার ভীষণ হাসি পেলো। আমি কোনরকমে হাসি আটকিয়ে বললাম
” ধরতে হবে না। এখন কেনো ডেকেছেন সেটা বলেন। জানেন আপনার জন্য কতো কিছু করতে হলো আমাকে। সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে তারপর চলে আসতে হলো। কি একটা পরিস্থিতি! মনে হচ্ছিলো টিন এজার দের মতো প্রেম করছি। ভয়ানক ব্যাপার।”

রুপম হাসলো না। তার চেহারা অন্যকথা বলছে। সে বেশ সিরিয়াস। আমিও হাসি ঠাট্টা বাদ দিয়ে বললাম
” কি হয়েছে? আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন সিরিয়াস ইস্যু। কোন প্রবলেমে পড়েছেন নাকি?”

রুপম একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল
” আপনাদের সাথে কথা বলে যাওয়ার পর বাবা সহ সবাই মিলে আমাকে ঝাপটে ধরেছে। আমি কেনো সময় চেয়েছি সেটা নিয়ে অনেক কথা বলল। আমি কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। আর আমার বলারও বা কি আছে। আমি তো আগেই বলেছিলাম পরিবারের পছন্দ মতই বিয়ে করবো। সে কারণেই তারা এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে আপনাকে দেখতে গিয়েছিলো আর পছন্দ করে এসেছে। সেখানে আপত্তি করার কারণ দেখানোর মতো কোন কিছু নেই। আপনাদের পরিবারকে সবার খুব পছন্দ হয়েছে। বাবার চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত আমি না করতে পারিনি। আমার মৌন সম্মতি দেখে বাবা খুব খুশি হয়ে বলল আপনার বাবার সাথে কথা বলবে আজই।”

কথা শেষ করে রুপম থেমে গেলো। আমি তার কথার সারমর্ম খুজে বের করতে অক্ষম হলাম। মাথা কাজ করছে না এক কথায়। বোকার মতো তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম
” এখন কি করতে হবে? মানে কি করতে বলছেন আমাকে? খুলে বলুন তো।”

” বোকার মতো প্রশ্ন করবেন না আজরা। আমার বাবা আপনার বাবার সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবেন। এতো কথার পরেও যদি আপনাকে খুলে বলতে হয় তাহলে আমি ভেবে নিতে বাধ্য হবো এটা আপনার হেয়ালি ছাড়া কিছুই নয়।”

আমি থ মেরে দাড়িয়ে গেলাম। রুপম এর কথার ধরন ভীষণ উগ্র। অবাক কণ্ঠে বললাম
” কি বলছেন এসব? এখন কি আপনাকে বিয়ে করতে হবে? সবকিছু কি মগের মুল্লুক পেয়েছেন? যখন যা ইচ্ছা তাই বলবেন আর আমাকে মেনে নিতে হবে? আপনার বাবাকে আপনি বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন সেটাতে আমার তো কোন দোষ নেই। তাহলে সেই দায় আমি কেনো নিবো? আপনার কি মনে হচ্ছে না যে আপনার ভুলের কারণে আমি ফেঁসে যাচ্ছি। এরকম একটা সম্পর্ক অযথাই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? বিয়ে মানে সারাজীবনের একটা সম্পর্ক। এটা কি ভেবে দেখেছেন?”

রুপম আমার কথাটা ঠিক ভাবে নিলো না। ওর চেহারার বোল পাল্টে গেলো। কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নিচু স্বরে বলল
” সেরকম কিছু না। আপনি না বলে দিলেই সমাধান হয়ে যাবে। এতো প্রেশার নেয়ার মতো কিছুই হয়নি।”

আমি শক্ত চোখে তাকালাম। মেজাজ টা এতটাই বিগড়ে গেলো যে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। উচ্চ স্বরে বললাম
” না বলে দিলেই হয়ে যাবে তাই না?”

রুপম উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলো। আমি আবারো বললাম
” একবার হ্যা বলে সেখানে আবার না বলবো? এমনিতেই বাবার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কই ভাবছে আমিই আপনাকে এমন কিছু বলেছি যার জন্য আপনি না বলে দিয়েছেন। আমার কারণে এমনিতেই বাবার মন খারাপ। সেখানে কিভাবে আবার না বলবো?”

রুপম এক্কেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। কিছুটা সময় অমনি থাকলো। তারপর ধির কণ্ঠে বললো
” আমি যত টা সম্ভব চেষ্টা করেছি। বাকিটা আপনাকেই করতে হবে। বিয়ের জন্য যদি রেডি না থাকেন তাহলে সেটা বাসায় সরাসরি বলে দেয়াই ভালো। অযথা এভাবে সময় নষ্ট করবেন না। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন।”

আমার কথাটা যে রুপমের খারাপ লেগেছে সেটা তার কথা আর চেহারা বলে দিচ্ছে। আমি আসলে না ভেবেই বলেছিলাম। ভেবেছিলাম তো বিয়েটা ভেংগে গেছে কিন্তু আবার সেটা এভাবে শুরু হবে ভাবতেই পারিনি। হুট করেই এমন কথা শুনে নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। আমি গলার স্বর নামিয়ে বললাম
” আচ্ছা আপনি তো বললেন এখনো ভালোবাসা বাকি তাহলে কিভাবে বিয়ে করবেন? ভালোবাসা ছাড়া বিয়ের মানে কি?”

রুপম তাকাল। শীতল দৃষ্টি বিনিময় করে বলল
” ভালো না বাসলে যে বিয়ে করা যায়না সেটা কে বলল? এরেঞ্জ ম্যারেজ তাহলে কিভাবে হয়? দুজন মানুষের মাঝে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো থাকলেই একসাথে থাকা সম্ভব। ভালোবাসাটা নাহয় বিয়ের পরেই হলো। ভাববেন না আমি আপনাকে ফোর্স করছি। আপনার কথার জবাব দিলাম শুধু। বাকিটা আপনি বুঝে নেবেন না হয়। আমার কথা শেষ। এখন আসতে পারেন। আর হ্যা, সরি! এভাবে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য।”

রুপম চলে গেলো। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আমার কোন কথাটা তাকে এতটা হার্ট করলো। ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা মনে হয় আমি হারিয়ে ফেলেছি। এখন খুব খারাপ লাগছে। কেনো না ভেবেই বলতে গেলাম। আমিও এক রাশ মন খারাপ নিয়ে চলে এলাম রুমে। আমার মাথা কাজ করছে না। ভেতরটা কেমন অস্থির হয়ে আছে। রুমে আসতেই ভাবী বলল
” তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমরা হিমছড়ি বেড়াতে যাচ্ছি এখন। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”

আমি কথা বাড়ালাম না। রেডি হয়ে সবাই মিলে বেরিয়ে গেলাম হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। সেখানে এক মোহনীয় দৃশ্যের দেখা মিললো। পাহাড়ি ঝর্ণা। আমি কোনো কিছুতেই মনস্থির করতে পারছি না। প্রথমে নিজের মনের উপরে জোর করে রাজি হলেও পরে যখন ওদের দিক থেকে বাধা এলো তখন আমি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। নিজেকে মুক্ত মনে হলো। মনে হয়েছিল এই অযাচিত বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যেনো আমার কাছে এক দমবন্ধ কর পরিস্থিতির সূত্রপাত হতে চলেছে। কিন্তু এখন যদি রুপমের কথা অনুযায়ী তার বাবা আবারো প্রস্তাব পুরুত্থান করেন তাহলে তো আমার কাছে আর কোনো উপায় থাকলো না। সারাদিন মাথায় একরাশ ভাবনা নিয়ে সবার সাথে সময় কাটালাম। কোথায় গেলাম কি করলাম কোন কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারলাম না। হোটেলে ফিরে এসে ক্লান্ত আমি ফ্রেশ হয়ে শরীর এলিয়ে দিলাম বিছানায়। চোখ ভর্তি ঘুম আমার। নিজেকে ক্লান্ত আর বিদ্ধস্ত লাগছে। সবকিছু ভুলে এখন শান্তির ঘুম দরকার। আর কিছু ভাবতে ইচ্ছা করছে না। পরের কথা পরে ভাবা যাবে।

চলবে

( আজকেও রীচেক করার সময় পাইনি। একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here