#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (৪)
পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“” নেশা করেছো কখনো??””
পালকের এমন আচরনে অন্ত্রীশা স্তব্ধ হয়ে গেলো। এভাবে হুট করে এতোটা কাছে টেনে নিবে সে তো ভাবতেও পারেনি। ভাববেই বা কিভাবে? এই মাঝরাতে তার রুমে পালকের উপস্থিতি পাবে সেটা তো কল্পনাও করেনি। পালকের নিশ্বাসের শব্দে অন্ত্রীশার জান যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে নেশার কথা শুনে মনে হচ্ছে এখনি টুপ করে জানটা বিদায় জানাবে! নেশায় তো সে কবেই ডুব দিয়েছে যার কাছে এই মদের নেশা অতি নগন্য!
পালকের ছোয়াতে অন্ত্রীশা ভালো লাগা খুজে পেলেও তা তো সে নিজের বোন তাও বড় বোনের সামনেই মাখাতে পারেনা। কিছুটা অস্থিরতা নিয়েই পালকের কোল থেক উঠে যেতে চাইলো। হালকা নড়ে উঠতেই পালক ওকে এবার দুহাতে ঝাপটে ধরে বললো,
“” এতো ছটফট করছো কেন? এখনো তো কিছুই করলাম না,ছটফটি! বললেনা তো নেশা করেছো নাকি?””
অন্ত্রীশার উত্তর শুনার অপেক্ষা বা করেই অনিকশার দিকে তাকালো পালক,
“” হবু বউয়ের সাথে ব্যাচলর পার্টি করার মনের মনি কোঠায় একটা ইচ্ছে জেগেছিলো। অনেক আগে থেকেই। তাই ভাবলাম ইচ্ছেটাকে মাটি চাপা না দিয়ে বরং পুরন করে নেই। আপু,আপনিও কি আমাদের সাথে জয়েন করবেন? যদিও বা আপনি বিবাহিত। আমার তরফ থেকে কোনো সমস্যা নাই। আপনি চাইলে জয়েন করতে পারেন!””
পালকের মুখে আপু ডাকটি সম্মানের নাকি তাচ্ছিল্যের বুঝে উঠতে পারছেনা অনিকশা। পালকের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঘুরে দাড়ায় সে। নিজের ছোটবোনের ঘনিষ্ঠ সময়ে সেখানে থাকাটা খুবই খারাপ দেখাচ্ছে। কেউ দেখাতে চাইলেই যে তাকেও দেখতে হবে এমন তো কথা নাই!
অনিকশা চলে যেতেই পালক মদের বোতলটায় হাত দেয়। গ্লাসে ঢেলে নিয়ে মুখের সামনে ধরতেই অন্ত্রীশা নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,
“” যেটাতে আপনি অভ্যস্ত নয় সেটা কেন করতে চাচ্ছেন? এই মাঝরাতে বমি করে আমার রুমটা নোংরা করতে চাচ্ছেন? আপনার দেওয়া শাড়িটা জড়িয়ে রাখতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে তার উপর রুম পরিষ্কার করা আমার জন্য খুবই কষ্টের হবে!””
অন্ত্রীশার এমন কথায় ওর দিকে চোখ পড়ে পালকের। খুবই বিস্ময়ের চাহনি। মিসেস তানিয়া বেগম এ পর্যন্ত ডজন খানেক মেয়ের ছবি দেখিয়েছিলো পালককে। গুনে গুনে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে তাদের বাড়িতেও পালককে নিয়ে হাজির হয়েছিলো। কিন্তু প্রত্যেকবাড়িই পাত্রীদের সামনেই দাড়িয়ে উঠে সবার সামনে বলেছিলো পাত্রী তার পছন্দ হয়নি। আর যেখানে তার বিয়ে করার ইচ্ছেই ছিলোনা সেখানে মেয়ের ছবি দেখে কি লাভ আর মেয়েকে দেখেই কি লাভ? তাই অন্য সব মেয়েদের মতো অন্ত্রীশার ছবিটাও হয়তো তার রুমের কোনো এক কোনে পড়ে রয়েছে। অন্যদের মতো এবারও সে একি কাজ করবে ভেবেই অন্ত্রীশাদের বাড়িতে আসা হয়েছিলো। পাত্রী কে, কোন পাশে বসে ছিলো,কি পড়েছিলো কিছুই সে দেখেনি। কখনো দেখার প্রয়োজনও মনে করেনি!
অন্ত্রীশার নজর ড্রিংকস ভর্তি গ্লাসে থাকলেও পালকের নজর তার দিকে। লাইটের দিকে মুখ করে থাকায় অন্ত্রীশার মুখটা খুব ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে। ছোট ছোট চোখের উপরে জোড়া ব্রু,দেখে মনে হচ্ছে দুটো কালো রংধনু একসাথে সুখ দুখের কথা বলছে। তার মাঝখান দিয়েই চিকন,সরু নাক। অতটা খারা না হলেও বোচাও বলা যাবেনা। নাকের সামনের দিকে বিন্দু বিন্দু ঘামের সমাবেশ। তার নিচেই গোলাপী আভার চিকন ঠোট,ঠোটের উপরের হালকা পশমও জন্মগ্রহন করে আছে,বয়স বোধহয় খুবই ছোট হবে যার কারনে তেমনভাবে ভেসে উঠেনি,এমনটা খুব কম মেয়েরই থাকে। অন্যদের দেখতে কেমন দেখায় পালক জানেনা কিন্তু তার হবু বউটাকে বেশ মানিয়েছে মনে হচ্ছে,নাকের মধ্যে ঘামের সমাবেশের কিছু সদস্য ঠোটের উপরে বসে আছে,মনে হয় নাকের জায়গায় তারা ঠাঁই পাইনি। গালগুলোর চোখের নিচ দিয়ে একটু ফোলা হলেও ঠোটের দিকে এসে মিশতে মিশতে চেপে এসেছে। ঠোটের নিচের থুতনিটা ধার বেয়ে এসে কিছুটা ভেতরে ঢুকে গর্ত সৃষ্টি করেছে,যার ফলে থুতনিটা অনেকটা লাভের উপরের শেপটার মতো দেখাচ্ছে! কপালের কাছটাতে বেবি হেয়ারগুলো কপালের সাথে ল্যাপ্টে আছে,হয়তো সবেই গোসল করে এসেছে তাই। সব মিলিয়ে অন্ত্রীশাকে সুন্দরী কন্যাদের কাতারেই ফেলা যায়। তবে এত সুন্দর মুখটার কোথাও তিলের দেখা না পেয়ে একটু মন খারাপ হলো পালকের। একটা তিল থাকলে হয়তো আরো বেশি ভালো লাগতো। পালক চোখটা বন্ধ করে অন্ত্রীশার মুখে কোনো এক জায়গায় তিল বসিয়ে নিলো। কিন্তু পরক্ষনেই চোখ খুলে বিড়বিড় করে বললো,
“” না,বেমানান দেখাচ্ছে!””
“” কিহ?””
অন্ত্রীশার মুখে কি শুনে পালক হুশে এলো। ওকে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে দাড়ালো। যে পথ দিয়ে এসেছিলো সেই পথে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“” গ্রিলছাড়া বেলকনি আমার একদম পছন্দ না। তোমার আব্বুকে বলে দিও।””
পালকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অন্ত্রীশা মুচকি হেসে মনে মনে বললো,
“” আমার তো এবার নেশায় গোসল হয়ে গেছে, চুমুবাবু!”
অনিকশা রুমে ঢুকেই দেখলো অরিদ্রার পাশেই অরিদ শুয়ে আথে,সোজা হয়ে শুয়ে হাতের কব্জীর অংশটা দিয়ে চোখটা ঢেকে আছে। লাইটের আলোতে ঘুমুতে পারেনা অরিদ! খুব করেই জানে অনিকশা। তবুও এমনভাবে শুয়ে আছে যেন সে গভীর ঘুমে মুগ্ন।
অনিকশা অরিদ্রার অন্যপাশে শুয়ে পরলো। উল্টো দিকে কাত হয়ে শুলেও পরক্ষনে ইচ্ছে করেই সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো। তার কপালে চুমু না খাওয়া পর্যন্তও যে অরিদ ঘুমুবেনা এটা অজানা নয় অনিকশার। যতই সে ঘুমের বাহানা করুক। তার সাথে বাহানার দিক দিয়ে তো অনিকশা অনেকটাই এগিয়ে!
কয়েক মিনিট যেতেই অরিদের ঠোঁটের ছোয়া পেলো অনিকশা। চোখ বন্ধ করেই অনিকশা বললো,
“” সেদিন যদি আমি তোমার কাছে না যেতাম,তুমি কি আসতে আমার কাছে?””
“” তুমি এখনো ঘুমোওনি,অনি? কতরাত হয়েছে জানো? একটু পরেই তো ফজরের…””
“” আমি একটা প্রশ্ন করছি অরিদ!””
“” কি?””
“” সেদিন আমি তোমাকে বিয়ের কথা না বললে কি তুমি আমাকে বিয়ের কথা বলতে.””
“” এগুলো এখন কেন টেনে আনছো অনি?””
অনিকশা শুয়া থেকে উঠে বসে অরিদের মুখোমুখি হয়ে বললো,
“” আমি যা জানতে চাইলাম তার উত্তর দাও।””
অরিদ ঠোটদুটো প্রসস্থ করে অনির গালটা হাত দিয়ে ছুয়ে বললো,
“” আমি তোমাকে আমার সারাজীবনের সংগী হিসেবেই চেয়েছিলাম,অনি!””
অনিকশা রাগে অরিদের হাতটা সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো,
“” না,তুমি মিথ্যে বলছো,যে তিন বছর পার করেও ভালোবাসি বলতে পারেনি সে বিয়ের কথা কিভাবে বলতো?””
“” অনি, অরিদ্রা উঠে যাবে,শান্তু হও প্লিজ! আমার লক্ষী বউ!””
অনিকশা বসা থেকে উঠে পড়ে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,
“” খবরদার,তুমি আমাকে বউ বলে ডাকবেনা। যে ছেলেটা আদৌ বিয়ের কথা বলতেই পারতোনা সে ছেলেটার বউ বলে ডাকার কোনো অধিকার নেই!””
অরিদ ও বিছানা থেকে নেমে অনিকশার সামনে এসে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,
“” ছুবেনা, তুমি আমাকে। যেখানে তুমি বিয়ের কথা বলতেই পারতেনা সেখানে আমার এক কথাই তুমি কেন বিয়ে করলে আমায়? সেই দিনের সেই ছোট্ট আবদার রাখতে গিয়ে আজ আমরা এখানে এসে থমকে গিয়েছি। তুমি কেন সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দাওনি? বলো কেন দাওনি? সেদিন যদি আমাকে ফিরিয়ে দিতে তাহলে আজ হয়তো আমার জায়গায় তোমার জীবনে অন্য কেউ থাকতো,তোমার জীবনটা আরো সুন্দর হতে পারতো,আর অরিদ্রা! অরিদ্রার আম্মুও হয়তো অন্য…””
অনিকশাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো অরিদ। খুব যত্ন সহকারে আগলে ধরে বললো,
“” আমার খুব লোভ হয়েছিলো সেদিন। তোমাকে পাওয়ার লোভ,নিজের করে পাওয়ার! হয়তো সেদিন তোমাকে বিয়ে করার কোনো চিন্তাভাবনা আমার ছিলোনা,কিন্তু এতটুকু জোর দিয়ে বলতে পারবো,তোমার জায়গায় তুমি না থাকলে এ জায়গাটা শুন্যই পরে থাকতো। এখানে অন্য কারোর অস্তিত্বের আগমন কখনোই ঘটতোনা””
“” আমি বিশ্বাস করিনা,তুমি আমাকে ভুলানোর জন্য এসব মিথ্যে বলছো,অরিদ!””
অরিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিদ্রা বলে উঠলো,,
“” পাপাই,মামনি,তোমলা আমাকে লেখেই আদল আদল খেলছো? আমি ঘুমিয়ে পললেই তোমাদেল আদল আদল খেলতে হয়? তোমলা এত দুষ্তু কেন? আমাকে কখনোই আদল আদল খেলায় নেওনা। তোমাদেল সাথে আলি!””
অরিদ্রার কন্ঠ পেয়ে অনিকশা নিজেকে সরিয়ে নিলো অরিদের বুক থেকে। অরিদ্রার দিকে তাকিয়ে বুঝলো,তাদের ঝগড়ার কারনেই হয়তো ওর ঘুম ভেংগে গেছে,উঠে বসে আছে,গালদুটো ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে আছে। অনিকশা আর অরিদের চোখাচোখি হতেই দুজনে একসাথে হেঁসে উঠলো!
অন্ত্রীশার বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় যেতে ইচ্ছে হলোনা পালকের। তাই পথ ঘুরে বাল্যকালের বন্ধু আতিশের বাসার দিকে রওনা দিলো। ছোটবেলা থেকেই একসাথে হেসেখেলে বড় হয়ে উঠা। স্কুল,কলেজ ভার্সিটিও একসাথে। অন্ত্রীশার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ওর সাথে দেখা হয়নি পালকের। কালকে একটা নতুন সূচনার আগে আতিশের সাথে দেখা করারটা খুবই দরকার। এ কইদিনে মনের ভেতরে জমে থাকা হাজারও কথা সেগুলো তো ওর উপর ঢেলেই হজম করতে হবে। সেতো তার কথা হজম করার বন্ধু!
ফজরের আজানের সাথে সাথেই আতিশের বাসায় হাজির হলো পালক।
“” এতো ভোরে আমার বাসায়। কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক তো?””
আতিশের বিছানায় শরীরটা মেলে দিয়ে হাসিমুখেই পালক বললো,
“” অনেকদিন দেখা হয়না,তাই ভাবলাম একটু দেখে যায়। তোর চাকরির কি হলো?””
পালকের পাশে আতিশও শুয়ে পড়লো,
“” নতুন কোনো খবর নেই। আজকেও একটা ইন্টারভিও আছে। চাকরীর বাজারের যে অবস্থা!””
দুজনে বেশ কিছুক্ষন সুখদুখের গল্প করার পর পকেটে হাত দিলো পালক। একটা সাদা খাম বের করে আতিশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“” নে,এটা ধর!””
আতিশ খামটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পালকের হাত পিছিয়ে দিয়ে বললো,
“” আমি আর তোর বোনকে পড়াতে পারবোনা,পালক!””
পালক মুচকি হেসে আতিশের বালিশের নিচে খামটা রাখতে রাখতে বললো,
“” তোর সাথে কথা বলে আমি যেমন আমার মনের জ্বালায় মিটাই। তার বিনিময়ে তোর পেটের কিছুটা জ্বালা কমানো আমার জন্য ফরয। আর তাছাড়া এটাতো এমনি এমনি নিচ্ছিসনা,পাপড়িকে পড়ানোর জন্য তোর যে সময়টা ব্যয় হয় তার জন্য!””
আতিশ মনে মনে বললো,ছাই পড়াই। পাপড়ি পড়লেতো পড়াবো। সারাক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে কোন ভাবনায় হারায় আল্লাহই জানে!
“” কিছু বললি?””
“” না। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলবি?””
“” কি?””
“” যে কুপিটা নিভে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে তাতে কেরোসিন কেন ঢালছিস? এতে যে তোর সাথে অন্যরাও জড়িয়ে পুরে যেতে পারে তা তুই বুঝতে পারছিস না?””
আতিশের কথার পিঠে পালক বড় করে একটা হামি দিয়ে আরাম করে শুয়ে বললো,
“” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,দোস্ত! আমাকে দু ঘন্টা পর জাগিয়ে দিস তো। নাহলে বিয়ে ভেংগে গেলে তোর পুরে যাওয়া পুরানী কন্যারা বিয়ের আগেই জ্বলে যাবে!””
পালকের দিকে তাকিয়ে আতিশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।
অন্ত্রীশা বিয়ের শাড়ী দেখে বেশ আশ্চর্যিত! মিস্টি কালার শাড়ীর মধ্যে সাদা মুক্তো পাথরের ভারী কাজ। এমন মিস্টি বেনারশী পড়ে বিয়ের কনে হয়তো সেই প্রথম সাজবে। কেমন লাগবে তাকে? মিস্টি কনের মতো মিস্টি লাগবে তো?
অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,
“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিসনা,অনতি!””
চলবে