#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_০৭
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
মনোয়ারা ধীরপায়ে শাশুড়ীর রুমে যায়।সকাল আর ধ্রুব ছাড়া সেখানে পরিবারের সবাই উপস্থিত।ধ্রুবর হাবভাব দেখে মনোয়ারার তীব্র ধারনা ধ্রুব সকালকে পছন্দ করে শুধু পছন্দ না উনার আন্দাজ মতে কয়েকদিন পরে ধ্রুব নিজেই বিয়ের কথা বলতো কিন্তু তার শাশুড়ী যে এভাবে শাহীনের জন্য সকালের হাত চেয়ে বসবে এটা চিন্তার বাহিরে ছিলো।তার বোনের সাথে একবার ধ্রুবকে নিয়ে কথা বলেছিলো এখন আবার সেই মুখেই কিভাবে শাহীনের জন্য কথা বলবে?সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে ধ্রুব কি বলবে?সে কি ব্যাপারটা মানবে?নুরজাহান মনোয়ারাকে দেখে বললো,
“আসো ছোট বউ।”
মনোয়ারা তার স্বামী সারোয়ারের দিকে তাকায়।ধ্রুব আর সকালের বিয়ের ব্যাপারে সারোয়ার জানে তাই সেও এই ব্যাপারে সন্দিহান।দুপুরে তার আম্মা বিয়ের কথা বলাতে ভেবেছিলো ধ্রুবর কথাই বলছে কিন্তু পরে যখন শুনলো ধ্রুব নয় শাহীন তখন থেকেই চিন্তা হচ্ছে।নুরজাহান বললো,
“মনোয়ারা তুমি কি বলো?আমার নাতীরে উপযুক্ত মনে হয়?”
শাহীন বিছানায় তার দাদীর পাশে বসে আছে মুখে মুচকি হাসি। মনোয়ারা শাহীনের দিকে তাকায়।শাহীন ভালো চাকরি করে ঠিক আছে কিন্তু তার চরিত্র ভালো না।ছেলেটা যেমন তাদের মেয়েটাও নিজেদেরই।সুতরাং জেনেশুনে এমন অপাত্রে মেয়ে দান করা যায় না।কিন্তু তিনি শাশুড়ির সামনে কি বলবে ভেবে পেলেন না।মনোয়ারাকে চুপ থাকতে দেখে নুরজাহান বললো,
“আমার নাতী ঢের উপযুক্ত।সবার মতামত আছে তো নাকি?দেও তোমার বোনকে ফোন দাও,আমি একটু কথা বলি।”
মিতু সকাল আর ধ্রুবর মনের ভাব কিছুটা হলেও জানে।তার ভ্রু-জোড়া কুঁচকে আছে।গলা খাকারি দিয়ে বললো,
“আমার মনে হয় বিয়ের কথা আগানোর আগে সকালের সাথে খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন।মেয়েটা আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে।এই অবস্থায় তার উপরে আমাদের মনমতো কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারিনা।তাইনা বড়োআব্বু?”
আনোয়ার ন্যায়পরায়ণ মানুষ।এইজন্যই মিতু তার বড়ো আব্বুর মতামত চাইছে।সে মনে প্রাণে চাইছে বড়োআব্বু হ্যাঁ বলুক।আনোয়ার এতোক্ষণ চুপচাপ সব শুনে গিয়েছে।শাহীনের মতো ছেলে এতো ছোট কম পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করতে পা/গল হয়ে গেছে এটা ভেবেই অবাক লাগছে।তার ছেলের চলাফেরা সম্পর্কে তার বেশ ভালো ধারনা আছে।মাসে মাসে প্রেমিকা বদলানোর অভ্যাসও অজানা না।এতো সুন্দরী সুন্দরী উচ্চশিক্ষিত মেয়ে ফেলে এই সকালকে বিয়ে করার কারণটাই মিলাতে পারছেছে না।শাহীন কিসের পা/গল সকালের রূপ নাকি জেদ নাকি অন্যকিছু?আনোয়ার মিতুর কথায় সায় দেয়।
“কথা বলো জিজ্ঞেস করো শাহীনকে তার কেমন লাগে।”
শাহীন যেনো জানে সকাল না বলবে সেই ভ/য়ে সে চেচিয়ে উঠে বললো,
“দাদীতো জিজ্ঞেস করেছেই এখন আবার কি জিজ্ঞেস করবে?”
আনোয়ার মির্জা চিন্তিত্ব চোখে ছেলেকে দেখে বললো,
“করুক।বিয়ে তো আর একদিনের ব্যাপার না বিয়েটা সারাজীবনের ব্যাপার।জেনেশুনে আগানোই ভালো।”
নুরজাহান মনোয়ারার দিকে তাকিয়ে আবারো বললো,
“দাও।ফোন দাও।”
মনোয়ারা বললো,
“সকাল কি বলে জেনে ফোন দেই?”
নুরজাহান কিছু বলার আগে আনোয়ার মির্জা ছোট ভাইয়ের বউয়ের কথায় সম্মতি দিয়ে বলে,
“এটাই ভালো।”
নুরজাহান দ্বিমত করে বললো,
“ফোন দাও তো।কথা বলতে দোষ কি?আপন মানুষই তো।”
অগ্যতা মনোয়ারা বোনের কাছে ফোন দেয়।আছমা সব শুনে জানায় তারা ভেবে দেখবে।নুরজাহান বললো,তাদের কালকে তাদের বাসায় আসার জন্য।আছমা সম্মতি জানায় শতো হোক বোনের শাশুড়ি উনার কথা ফেলে কি করে,উনার কথার অমান্য করলে যদি তার আপার সংসারে অশান্তি হয়।
নুরজাহান মনোয়ারার হাতে ফোনটা দিয়ে বললো,
“আছমা এখানে আসলে আর কোনো কথা হবেনা ডিরেক্ট বিয়ে হবে।আমি চাই দুই একদিনের মাঝেই বিয়েটা সম্পন্ন হোক।”
শাহীন রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসে।চোখের পর্দায় ভেসে উঠে সকালের নিটোল দেহের গড়ন।ইশ এমন শরীর সামনে থাকলে ঠিক থাকা যায়?আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপরে এই দেহে ভাগ বসাতে কোনো বাধা থাকবে না।শাহীনের মুখ দিয়ে অ/শ্রবনীয় বাক্য বের হয়ে আসে সকালের বাকানো শরীরের বাক ভেবেই তো তার ঘুম আসেনা।এই শরীর ছুঁয়ে দেখার অনেক শখ।যতোক্ষণ না ছুঁয়ে দেখবে ততোক্ষন মন ভরবে না।
মিতু সকালকে কিছু জানায় না।তার ধারনা এসব শুনলে সকাল খুব কান্নাকাটি করে পার্টিতে যাওয়া ক্যানসেল করে দেবে তাই সে ঠিক করেছে পার্টি থেকে এসে এসব বলবে।ধ্রুব তাদের নিতে আসছে দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়।সকালের মন অনেক ফুরফুরে।হালকা গোলাপি থ্রী পিছের সাথে লম্বা চুলের বেনীতে খুবই স্নিগ্ধ লাগছে।ধ্রুব খানিক তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।আচ্ছা আজকাল সকালকে এতো ভালো লাগে কেনো?মনের খুব কাছে প্রেমময় বাতাস বয় তা ধ্রুব বেশ বুঝতে পারে।সকাল আড়চোখে ধ্রুবকে দেখছে।সাদা স্টেইপ শার্টে খুবই সুন্দর লাগছে।ধ্রুব এমিনিতেও চোখে পড়ার মতো আকর্ষণীয়।যদি তার আর ধ্রুবর বিয়ে হয় তাহলে এই শ্যামসুন্দর পুরুষটা সবটাই তার।অচেনা সুখে সকালের বুকটা ভার হয়ে আসে।মাথা নিচু করে গাড়ির সিটে বসে থাকে।
মিতু ভাইয়ের মুখে সুখের ছোঁয়া দেখে ভাবে শাহীনের সাথে সকালের বিয়ের কথা শুনলে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে।মিতুর এমন কোনো ইচ্ছা নেই যা ধ্রুব পূরণ করেনা সেই ধ্রুবই কিনা এতোবড়ো অপূর্নতা নিয়ে থাকবে?মিতুর কেনো যানি মনে হচ্ছে ধ্রুবকে জানানো উচিত ধ্রুব জানতে পারলে ঠিক সমাধান বের করে নেবে।সে সিদ্ধান্ত নেয় সকালকে জানানোর আগে ধ্রুবকে জানাবে।হঠাৎ গাড়ি থামে।মিতুকে অবাক করে দিয়ে ধীরপায়ে হেলেদুলে সামনের সিটে সামির উঠে বসে।পিছনে তাকিয়ে সবাইকে দেখে হাসে।ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো,
“সব কিছুতে আমাকে টানিস ক্যান?”
ধ্রুব ইচ্ছে করেই সামিরকে টানে।বেকার জীবনে ছেলেটা হাপিয়ে যাচ্ছে,বারবার ডিপ্রেশনে পরে।ধ্রুব চায় সামির স্বাভাবিক থাকুক চাকরি তো হবেই কিন্তু এই খারাপ সময়ের স্মৃতিগুলো মনে থাকবে।পিছনের সিট থেকে সামিরের মাথায় থা/প্পড় দিয়ে বললো,
“কোনো সমস্যা?”
“আলবাত সমস্যা।আমি ঘুমাচ্ছিলাম তুই বিরক্ত করলি।”
“এই সন্ধ্যায় ঘুম?”
“আরে রাতে ঘুমাতে পারিনি।”
ধ্রুব মজা করেই বললো,
“কেনো?প্রেমিকার সাথে রাত-বর প্রেমালাপ করিস নাকি যে ঘুমাতে পারিসনা।”
ধ্রুবর কথায় মিতু আর সামির দুজনেই চমকে উঠে।সামির হাসে কিছু বলেনা।সামিরের হঠাৎ আগমণ মিতুর কাম্য ছিলোনা।সে তার ভাইয়ের কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে তারপর পিছনের সিট থেকেই সামিরকে দেখে।পিছন থেকেও সামিরকে কতো সুন্দর লাগে।মিতু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়,যেমনি থাকুক সুন্দর লাগে,বুকের মাঝে দামামা বাজে।আচ্ছা প্রেমিক পুরুষ এতো সুন্দর হয় কেনো?
পার্টিতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে সামির লক্ষ করে ধ্রুব বারবার সকালকে দেখছে।তারপর সামির ধ্রুবকে চোখ মেরে বললো,
“মাম্মা!তলে তলে টেম্পু চালাও,আমরা বললেই হরতাল!”
ধ্রুব হেসে বললো,
“টেম্পু চালাবো কেনো?ভালো লাগে।বিয়েও করে ফেলতে পারি।”
“করে ফেল দেরি করলে দেখা যাবে টেম্পু বুকিং।”
ধ্রুব সামিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সকালকে তো কিছুই জানাই নি এখনো।”
“জানিয়ে দে।”
“কিভাবে জানাবো?”
সামির খানিক ভেবে বললো
“প্রেম নিবেদন কর।মেয়েরা এই ফিল্মি স্টাইলে প্রেম নিবেদন বেশ পছন্দ করে,না চাইতেও ফিদা হয়ে যায়।”
ধ্রুব মুচকি হাসে।মাথা নেড়ে বললো,
“ধুর আমাকে দিয়ে এসব হবেনা।”
মিতু এগিয়ে আসে।মিতুকে দেখে সামির বললো,
“তোমার ভাই তো প্রেমে পরে ম/রে যাচ্ছে।তুমি থাকতে ম/রতে দাও কি করে শুনি।”
মিতু ধ্রুবর দিকে তাকালে ধ্রুব বললো,
“সকালের কথা বলছে।”
মিতুর গলায় শ্বাস আটকে আসে।যা ভাবছিলো তাই।আর দেরী করা ঠিক হবেনা।দম ফেলে পেছনে তাকিয়ে সকালের অবস্থান দেখে নিলো।তারপর বললো,
“ভাইয়া,তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।”
ধ্রুব মিতুর চুপসানো মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কোনো সমস্যা?কেউ ডিস্টার্ব করেছে?”
“না এসব কিছু না।সকালের ব্যাপারে।”
ধ্রুব নড়েচড়ে দাঁড়ায়।
“কী?”
“দাদী শাহীন ভাইয়ের সাথে সকালের বিয়ে ঠিক করেছে।”
ধ্রুবর চেহারার রঙ মূহুর্তেই পাল্টে যায়।কন্ঠে আসে একরাশ ক/ঠোরতা।
“মানে কি?”
মিতু ভাইয়ের চেহারা দেখে ভ/য় পায়।ধ্রুব রে/গে যাচ্ছে,মিতুর কি উচিত ছিলো না বলা?মিতু আস্তে করে বললো,
“মানে দুই-এক দিনের মধ্যে বিয়ে হবে।”
ধ্রুবর চোখের বর্ণ লাল হচ্ছে।গম্ভীর গলায় বললো,
“সকাল রাজী?”
মিতু দুপুরে খাবারের টেবিলের কথোপকথন ধ্রবর কাছে বলে।ধ্রুব হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে দূরে চেয়ারে বসা সকালের দিকে তাকিয়ে আছে।মিতু বললো,
“সকাল হয়তো মনে করেছে তোমার কথাই বলেছে।আজকে সারাদিন মেয়েটা কি খুশী ছিলো।”
ধ্রুব রুক্ষ গলায় বললো,
“সকাল বাচ্চা না মিতু!দাদীর বিয়ের সমতুল্য নাতী দুইটা।কাকে ইন্ডিকেট করে বলছে এটা বুঝবে না?তাছাড়া সেখানে তো আমি উপস্থিত ছিলাম না ভাইয়া ছিলো তাহলে?ও কি এতোটাই অবুজ?সব জায়গায় হাসতে হবে কেনো?”
মিতু বুঝলো ধ্রুব রেগে গেছে।সে আস্তে করে বললো,
“হয়তো বুঝেনি।”
“বুঝেছে!বুঝেই রাজি হয়েছে।”
সামির ধ্রুবর কাধে হাত রেখে বললো,
“রে/গে যাচ্ছিস কেনো?ছোট মানুষ হয়তো বুঝেনি।তুই নিজেই কথা বল।”
“কেনো?আমি কেনো কথা বলবো?ও আমাকে দেখে আমার মন বুঝেনা?আর দাদী নাতী বললেই তো সেই নাতী আমি হবো না আরেকজনও হতে পারে,তাইনা?।ষ্টুপিড মেয়ে।”
মিতু আরো বললো,
“খালা কালকে আসবে।তারপর বিয়ে।”
ধ্রুব থমকায়।অহ,সব ফাইনাল।মাত্র কবুল বলা বাকি!বি/ষাদে ধ্রুবর অন্তর ছেঁয়ে যায়।সে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“হোক বিয়ে।আমার কি?আমাকে এসব ছাতামাথা বলতে কে বলেছে?ফা/লতু।”
মিতু আর সামির আর কিছু বলার আগেই ধ্রুব সরে যায়।রা/গে তার গা কাঁপছে।বিয়েতে রাজী?মানে কি?রা/গে দুঃখে ধ্রুব আরেকটা কাজ করে বসে।
সকাল অনেকক্ষণ ধরেই লম্বা সুন্দর মেয়েটাকে লক্ষ করছে মেয়েটা বারবার ধ্রুবর গা ঘেষে দাড়াচ্ছে।কেমন হেসে হেসে কথা বলছে।সকালের একদম ভালো লাগে না।ধ্রুবর পাশে এই মেয়েকে দেখলেই শরীর বি/ষিয়ে যাচ্ছে।ধ্রুব মেয়েটার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে মেয়েটার নাম স্নেহা,ধ্রুবর কলিগ।মিতুদের সাথে ধ্রুবর কি নিয়ে যানো কথা কাটাকাটি হয় সকাল একবার ভাবে এগিয়ে যাবে আরেকবার ভাবে উনাদের ব্যাপারে গেলে যদি পছন্দ না করে তাই চুপচাপ বসে থাকে।এর মাঝেই ধ্রুব স্নেহার কাছে যায়।স্নেহা মোবাইলে কিছু দেখিয়ে আবদার করাতে ধ্রুব রাজি হয়ে যায়।তারপর দুজনে বেশ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছবি তুলে।স্নেহা এই প্রথম ধ্রুবর এতো কাছে আসার সাহস পাচ্ছে সে বেশ খুশীমনে ছবিগুলো তুলে।ধ্রুবর দেয়া সাহসে স্নেহা আরো সাহসী হয়ে উঠে।ধ্রুব হাতধরে এপাশে ওপাশে কতোক্ষন হাটাহাটি করে খালি টেবিলে ধপ করে বসে পড়ে।ধ্রুব আড়চোখে সকালকে লক্ষ করে।হ্যাঁ তাদেরকেই দেখছে।ধ্রুব চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলাতে চায়।
সকালের চোখে পানি টলমল করে।ধ্রুব কি এমন ছেলে?এতোদিনে তো একবারও এমন মনে হয়নি।কষ্টে মনটা ভরে উঠে।কিছুক্ষণ পরে ভাবে আচ্ছা তার সাথে যদি ধ্রুবর বিয়ে ঠিক হয় তাহলে ধ্রুব তাকে দেখিয়েই কেনো অন্য মেয়ের সাথে ঘুরবে?এসবের মানে কি?নাকী দাদীর বলা পাত্র ধ্রুব নয় বরং শাহীন?সকালের গলা শুকিয়ে আসে।ছলছল চোখে ধ্রুবকে দেখে।মিতু সকালের পাশে বসে সকালকে বিস্তারিত খুলে বলে।সব শুনে সকাল মুখে হাত দিয়ে কেঁদে দেয়।সত্যিই সে ভেবেছিলো পাত্র ধ্রুব তাইতো লজ্জা পেয়ে লাজুক হেসেছিলো,কিন্তু এই হাসিই যে তার কাল হয়ে দাড়ালো।সে আস্তে করে বললো,
“আমি ভেবেছিলাম ধ্রুব ভাই।”
মিতু অসহায় গলায় বললো,
“না।শাহীন ভাই।”
সকাল বললো,
“আমি কালকেই বাড়ি চলে যাবো।”
মিতু সকালের হাত ধরে বললো,
“চলে যাওয়া মান্র সব সমস্যা সমাধান এটা ভাবা ভুল।”
“আমি না থাকলেই সব সমস্যা শেষ।”
শাহীন যখন শুনেছে সকাল ধ্রুবর সাথে গেছে তখন থেকেই চিন্তিত্ব।অনেক ভাবার পরে ধ্রুবর নাম্বারে ফোন দেয়।ধ্রুব শাহীনের নাম্বার দেখে কপাল কুঁচকে যায়।ফোন রিসিভ করে বললো,
“জ্বী ভাইয়া।”
শাহীন বললো,
“তোর ভাবী নাকি তোদের সাথে?”
ভাবী ডাকটা শুনে ধ্রুব আরো রে,গে যায় কিন্তু নিজেকে সংযত রেখে বললো,
“ভাবী!ভাবী কে?”
“আরে সকাল।সকালের কথা বলছি”
“কবে বিয়ে করলেন?”
“করিনি তবে দাদী বলেছে দুই এক দিনের মাঝে বিয়ে হবে।”
শাহীনের এসব কথা ধ্রুবর ভালো লাগেনা।সে বললো,
“আচ্ছা বাসায় এসে কথা বলি।একটু ব্যস্ত আছি।”
এটা বলে ফোনটা কেটে দেয়।শাহীন যে তাকে জানানোর জন্যই ফোন করেছে এটা বেশ বুঝতে পারছে।মিতুদের কাছে গিয়ে বললো,
“বাসায় চল।”
সকালের চোখ তখনো ভিজা।ছোট মস্তিষ্কে এতো চাপ নিতে পারছেনা।অসহায় চোখে ধ্রবর দিকে তাকিয়ে থাকে।যেনো প্রিয় পুরুষের সাহায্য চাইছে।ধ্রুবর রা/গ তখন আকাশ ছোঁয়া তাই হয়তো সকালের মলিনতা দেখেও দেখলো না।সামির আগে চলে যায়।গাড়িতে মিতু সামনে বসে সকাল আর ধ্রুবকে পেছনে বসতে দেয়।সকাল ধ্রুবর দিকে তাকায় কিন্তু ধ্রুব তার দিকে ভুলেও তাকায় না।যেই ধ্রুবর চোখে মুখে মুগ্ধতা বিরাজ করতো সেই মুখে কি বিশাল কঠোরতা!সকাল নিঃশব্দে কাঁদলো।সাহস করে লজ্জাশরম ভুলে দু’হাত দিয়ে ধ্রুবর একটা হাত আঁকড়ে ধরে।ধ্রুব সকালের দিকে তাকায়।সকাল কান্নাভেজা গলায় বললো,
“আমি বুঝতেই পারিনি।”
ধ্রুব শান্ত গলায় বললো,
“কি বুঝতে পারোনি?”
“দাদী যে শাহীন ভাইয়ার কথা বলেছে।”
ধ্রুব খানিক কৌতুকের গলায় বললো,
“তাতে কি!তুমি তো রাজি,সুন্দর বর,বড়ো চাকরী আর কি চাই?”
“না।”
ধ্রুব একটানে তার হাত ছাড়িয়ে বললো,
“একদম বাচ্চাবাচ্চা ভাব নিবেনা,আরে শাহীন না হয় আমার থেকে হাজার বিশেক টাকা বেশীই পায় তাই বলে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে?”
সকাল কিছু না বলে চুপচাপ কাঁদে।ধ্রুব সেই কান্নাভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে খুব আস্তে বললো,
“সকাল!আমাকে মনে পড়লো না?”
সকাল বললো,
“আপনাকে ভেবেই তো হেসেছিলাম।”