#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_০৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
বাসায় যাওয়ার পরেও সকাল কাঁদছে।ধ্রুব যে তাকে ভালোবাসে এটা ছোট সকালও বুঝতে পেরে গেছে।শাহীন ধীর পায়ে মিতুর রুমে ঢুকে।অনেক দিন ধরেই অফিস থেকে কানাডায় লোক নেয়ার কথা হচ্ছিলো শাহীন নিজেও এপ্লিকেশন করেছে ভাগ্যভালো বিধায় তার বিসা হয়ে গেছে,কিছুদিনের মাঝেই ফ্লাইট।যাওয়ার আগে সকালের নরম দেহে নিজেকে বিলিন করতে না পারলে মনটা শান্ত হবেনা।বিয়ের আগে সকাল ভুলেও এসব ছোঁয়াছুঁয়িতে আসবে না তাইতো বিয়ে করতে এতো তাড়া।সে থাকতে সকালকে ধ্রুব ভোগ করবে এটা ভাবলেই শাহীন পরাজয়ের ব্যা/থা অনুভব করে,ধ্রুব জিতে সে হেরে যাবে এটা কখনো হবে না।সকাল বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে।শাহীনের উপস্থিতি টের পায়নি।শাহীন তার চোখ দিয়ে সকালের শরীরটা গিলে খেতে চায়,আহা!আস্তে করে সকালের পায়ের কাছে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে সকালের ছোট নরম পা স্পর্শ করে।হঠাৎ পায়ে কারো ছোঁয়া পেয়ে সকাল লাফিয়ে উঠে।শাহীনকে দেখে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়।শাহীন সকালকে বললো,
“আরে এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেনো?”
সকাল বললো,
“আপনি এখানে কেনো?”
“আমার বাড়ি আমি যেখানে খুশী সেখানেই যেতে পারি।”
তারপর সে একপা এগিয়ে সকালের একটা হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,
“তোমাকেও যা ইচ্ছা করতে পারি দুদিন পরেই তো বিয়ে!তাহলে আগেই প্রিপারেশন নিয়ে ফেলি কি বলো?”
সকাল তার হাত ছাড়াতে চায়।চেচিয়ে বলে,
“হাত ছাড়েন।অ/সভ্য নাকি?একদম আমাকে ছুঁবেন না।”
“দুদিন পরে তো ছুঁবই আজকে ছুঁয়ে দিলে ক্ষতি কি?এমন মোচড়ামুচড়ি করো কেনো,কাছে আসো তুমিও মজা পাইবা।”
সকাল শাহীনের কথায় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।শাহীন সকালের গালে হাত দিয়ে বললো,
“ইশ,একদম মাখন।”
সকাল গলা ছেড়ে মিতুকে ডাকে।শাহীন আরো কাছে এসে বললো,
“চিল্লাও কেনো?মজা লাগে না?”
সকাল অপ্রস্তুত হয়ে শাহীনের গালে থা/প্পড় দিয়ে বললো,
“আপনার মতো অ/সভ্য,লু/চ্চার সাথে বিয়ে হওয়ার চেয়ে সারাজীবন কুমারী থাকা ঢেড় ভালো।”
শাহীন রা/গে ফোসফাস করে বললো,
“তোমাকে কুমারী রাখবে কে?আমার কাছেই সব হারাবে।আজকের প্রতিশোধ এমনভাবে নিবো যে কিছু বলতে বারো বার ভাববে।”
শাহীন চলে গেলে সকাল তার আম্মাকে ফোন দেয়।সে তার আম্মাকে বলে,
“আম্মা আমি এই বিয়ে করতে চাই না।”
আছমা বললো,
“কেনো?ছেলে দেখতে ভালো,চাকরী ভালো,তাছাড়া ঢাকায় স্থায়ী,পরিচিত ছেলে কোনো চিন্তা নেই।”
সকাল কি করে বলবে সে ধ্রুবকে তার মনের মনিকোঠায় স্থান দিয়ে ফেলেছে।তাছাড়া শাহীন দেখতে সুন্দর,ভালো চাকরী কিন্তু চরিত্র যে নড়েবড়ে!এমন ছেলেকে বিয়ের প্রশ্নই আসে না।
“তাতে কি আম্মা।আমি পড়তে চাই।পড়ালেখা করে অনেক বড়ো হতে চাই।তখন এর চেয়ে ভালো পাত্রও আসবে।আমাকে পড়াবে না আম্মা?”
আছমারও ইচ্ছা তার মেয়েটা পড়ুক কিন্তু সবসময় তো আর ভালো সমন্ধ আসে না।ভেবে বললেন,
“আচ্ছা আমি তোর আব্বাকে বলে দেখি।”
সকাল কান থেকে ফোনটা নামিয়ে রাখে।মিতু ধীরপায়ে রুমে আসে।সকালের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
“দাদী ডাকে।”
সকাল সিদ্ধান্ত নেয় সে তার মতামত জানাবে।সে যেনো প্রস্তুত এমন ভঙিমায় উঠে দাদীর রুমের দিকে যায়।নুরজাহান সকালকে দেখে বললো,
“এই যে সুন্দরী কমলা!আমার নাতীর মন কাইড়া তো ঘুম হারাম কইরা দিছেন।”
দাদীর পাশে বসা শাহীনের দিকে তাকাতে সকালের ঘৃ/ণা লাগছে।দাদীর দিকে তাকিয়ে আগের কথাগুলো না শোনার ভঙ্গিতে বললো,
“ডেকেছিলেন দাদী?”
নুরজাহান পরম স্নেহে সকালের হাত ধরে বললো,
“ডাকুম না?কয়দিন পরে আমার নাত বউ হবা তোমারে না ডাকলে ডাকমু কারে কও দেখি।”
সকাল শান্ত চোখে নুরজাহান বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে।মিতুর থেকে খবর পেয়ে মনোয়ারা শাশুড়ীর রুমে আসে উনার পিছুপিছু বাড়ির পুরুষ সদস্যসহ সবাই আসে।নুরজাহান সকালকে বললো,
“আমার নাতীরে কেমন লাগে?পছন্দ হয়?আমরা কিন্তু তোমাদের বিয়ের কথা ভাবতেছি।এখন বলো তোমার মতামত কি?”
সকাল একপলক শাহীনের দিকে তাকিয়ে নেয়।ছোট্ট সকালের বুকটা কাঁপছে।কথা বলতে গিয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাকে কথাগুলো বলতে হবেই।হোক একটু অপমানিত,একটু বেয়াদব কিন্তু সারাজীবন অপমানিত হওয়ার চেয়ে এখন একটু অপমানিত হওয়া,একটু বেয়াদব হওয়া অনেক ভালো।সকাল সাহস করে বললো,
“দাদী বেয়াদবি নিবেন না।আসলে আমি এখনি বিয়ে করতে চাইছি না।আমি অনেক পড়তে চাই।আর গ্রামে আমাকে নিয়ে কি সমস্যা হয়েছে তা তো জানেন’ই ওই ছেলেও কিন্তু এমপির ছেলে।আমার আম্মা আব্বা আমার ইচ্ছার কথা জানে বলেই এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায়নি।তাই বলি কি এখনি বিয়ে করতে চাইনা,দয়া করে আপনি কষ্ট পাবেন না।”
নুরজাহান অবাক হয়ে সকালের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই মেয়ের এতো সাহস?উনার মুখের উপরে কথা বলে!উনি গম্ভীর গলায় বললো,
“বিয়ের পরেও পড়বা আমরা কি মূর্খ ফ্যামিলি যে বউকে ঘরে বসাই রাখবো?তুমি যতো ইচ্ছা পড়বা।”
সকাল আস্তে করে বললো,
“আমি বিয়ে করতে চাই না।দয়া করে আপনারা আমাকে জোড় করবেন না।”
শাহীন তেড়ে কিছু বলতে গিয়েও নুরজাহানের বাধায় থেমে যায়।নুরজাহান বললো,
“শাহীন ভালো ছেলে।”
সকাল শাহীনের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো,
“অন্য যায়গায় মেয়ে দেখুন।ভালো ছেলের জন্য নিশ্চয়ই ভালো মেয়েও পাবেন।”
শাহীন কড়কড়ে গলায় বললো,
“আমি তোমাকেই বিয়ে করবো তারপর তোমার এই দেমাগ ছুটাব।”
ধ্রুব এতোক্ষন তার মা বাবার সাথে সকালের বিয়ে নিয়েই তর্কাতর্কি করছিলো।মিতুর কথা শুনে এসে
বাহিরে দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনছিলো।সকালের কথা শুনে মনে মনে সকালকে সাবাশ দেয়।সে ভেবেছিলো নিজেই নুরজাহানের সাথে কথা বলবে কিন্তু তার আগেই সকাল নিজের মনোভাব প্রকাশ করে দেয়।কিন্তু এখন শাহীনের উগ্র কথা শুনে নিজেকে আর আটকে রাখা গেলো না সে আস্তে করে দাদীর রুমে ঢুকে যায়।শাহীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“শুনো নি সকাল যে বিয়েতে রাজি না।তাহলে এতো কথা বলছো কেনো?আর কিসের দেমাগ ছুটাতে আসো?জোড় করে বিয়ে করবে নাকি?”
আগুনে ঘি পরলে যেমন ধপধপ করে আগুন জ্বলে উঠে ধ্রুবকে দেখে শাহীন ঠিক তেমন করেই রেগে যায়।
“দরকার হলে জোড় করেই বিয়ে করবো।”
ধ্রুব শাহীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি তা হতে দিবনা,বাচ্চা একটা মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে!আল্লাহ!।”
শাহীন তেড়ে এসে বললো,
“সকাল বাচ্চা!তাহলে তুই সকালের পিছনে ঘুরিস কেনো?”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,
“আরে ভাই আমার খালাতো বোন লাগে না!”
শাহীন দাদীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“দাদী আমি সকালকেই বিয়ে করবো ব্যাস।”
ধ্রুব বললো,
“বিয়ে করার হলে আমিই তো করতে পারি।খালাতো বোন আমার,হক বেশিও আমার।”
সকাল দুজনের দিকে ভেবলার মতো তাকিয়ে থাকে।মানে তাকে কে বিয়ে করবে এটা নিয়ে কথা হচ্ছে?সকাল বললো,
“আমি কাউকেই বিয়ে করবোনা।আম্মাকে খবর দিয়েছি কালকেই আমাকে নিয়ে যাবে।”
আনোয়ার মির্জা বললেন,
“এটাই ভালো হবে।মেয়ে যেহেতু রাজি না তোমরাও আর জোর করতে পারো না।সবগুলো বেয়াদব।যাও,যার যার রুমে যাও।”
সবাই রুমে চলে যাবার পরে মনোয়ারা তার বোনকে ফোন করে বিস্তারিত খুলে বলেন।আছমা জানায় সে একদিন পরে আসবে এসে সকালকে নিয়ে যাবে।মনোয়ারা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।শাহীন রুমে গিয়ে ছটফট করে।রাগে মাথা ব্যাথা হয় চোখ ফেটে র/ক্ত বের হবার উপক্রম।এতোটুকুন মেয়ে তাকে প্রত্যাখ্যান করে!তাকে থাপ্পড় মা/রে?কি সাহস।শাহীনের মাথা খারাপ হয়।কিন্তু চুপচাপ নিরবতা পালন করে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলে নেয়।তার বুকে প্রতিশোধের আগুন তখনো দাউদাউ করে জ্ব/লছে।
ধ্রুব অস্থির পায়ে পায়চারি করছে।সকাল চলে যাবে?মানে কি?ধ্রুব বিছানায় বসে ভাবে কিভাবে সকালের যাওয়া আটকানো যায়।শাহীন এতো সহযে মেনে যাওয়ার ছেলে না তাহলে?ধ্রুব শাহীনকে নিয়ে ভাবে সে কি অন্য কোনো ফন্দি আটছে?
এরপরের দিন বাসার সবাইকে আনোয়ার সাহেবের এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত দিয়েছে।যদি না যায় তাহলে হবে না সুতরাং সবাইকেই যেতে হবে।ধ্রুব আর শাহীন অফিস শেষ করে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা।বাসার সবাই গেলেও সকাল গেলো না।সবাইকে বললো,তার ভালো লাগছে না তাই যাবে না।আসলেও সকালের ভালো লাগছে না কেনো যানি মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে আছে।সন্ধ্যা হতেই কলিংবেল বাজে।সকাল ভাবে এই সময় কে আসবে?সে দরজা খুলে না কিন্তু অপরপ্রান্তের লোকের বুঝি খুব তাড়া একটানা কলিং দিয়েই যাচ্ছে।সকাল ধীর পায়ে দরজা খুলে দেখে শাহীন দাঁড়িয়ে।শাহীনকে দেখে সকাল ভ/য় পেয়ে যায়।এখন বাসায় কেউ নেই শাহীনেরও দাওয়াতে থাকার কথা ছিলো কিন্তু শাহীন যে বাসায়!সকাল শাহীনের দিকে তাকায় শাহীন তার দিকেই তাকিয়ে আছে মুখে মুচকি হাসি।সকাল মনে মনে বি/পদের আশংকা করে মিতুর রুমের দিকে দৌড় দেয় কিন্তু সফল হয় না তার আগেই একজোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে।শাহীনের মতো বলিষ্ঠ ছেলের সাথে অল্পবয়সী সকাল পেরে উঠে না হাত পা ছুড়ে নিজেকে মুক্ত করতে চায়।এলোপাতাড়ি শাহীনকে থা/প্পড় মে/রে যায়।শাহীন সকালকে পাজকোলা করে তার রুমে নিতে নিতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“খুব তেজ না?আজকে আমিও দেখবো এই শরীরে কতো তেজ।”
শাহীন সকালকে বিছানায় নিয়ে ফেলে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে গায়ের শার্ট খুলতে থাকে।
সম্ভাব্য পরিস্থিতি টের পেয়ে সকালের কলিজা শুকিয়ে যায়।মনে মনে আল্লাহকে ডেকে সাহায্য চায়।বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে ছুটে যায়।শাহীন খপ করে সকালের হাত ধরে দেয়ালে চেপে ধরে।সকাল কেঁদে দেয়।চোখের পানি নদীর মতো ছুটছে।কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,
“আল্লাহর দোহাই লাগে ভাই,এমন কাজ করবেন না।”
শাহীন সকালের গালে হাত ভুলিয়ে বললো,
“একবার!মাত্র একবার তোমার শরীরটা দাও।আমি কাউকে কিছু বলবোনা।”
শাহীনের কথায় সকাল মুখ কুঁচকে ফেলে।শাহীনকে ঠেলে সরাতে চায়।শাহীন সরে না নিজেকে সকালের মাঝে হারিয়ে দেয়।সকাল তখনো চাইছে নিজেকে রক্ষা করতে।শাহীন সকালের চুলের মুঠি ধরে বললো,
“আমাকে থা/প্পড় দাও?আজকে বুঝবে আমি কি!”
খালি ফ্লাটে সকালকে কেউ রক্ষা করতে আসে না আসে শুধু ঘুরেফিরে তার আত্মচিৎকার।সকাল গলা ছেড়ে কাঁদে।এমনটাও হবার ছিলো???
ধ্রুব তখন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছে।ক্ষুনাক্ষরেও টের পেলোনা তার ছোট পাখির করুন পরিনতি।
এদিকে সকাল গলা ছেড়ে কাঁদে।শারিরীক সুখ তখনি আনন্দদায়ক হয় যখন মানুষটা আপন,একান্ত,প্রিয় কেউ হয়।
চলবে…..