#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (১৮)
অরিদ রাগে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলেছে,চোখ,মুখ,নাক,গাল সব লালরং ধারন করে ফোলে উঠেছে। পালক অনেক কষ্টে নিজের গলা থেকে অরিদের একট হাত সরালেও সে থমকে যায়নি। ডান হাতটা মুঠো করে পালকের মুখের দিকে আনতেই পালক নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,
“” সেদিন যে কারনে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আজ সেই একি কারনে আমার গলা টিপে ধরেছেন,তাইনা বড় ভাই???””
পালকের প্রশ্নে অরিদের শক্ত হাতটা নরম হয়ে এসেছে,বন্ধ চোখ খুলে গিয়ে পালকের চোখের দিকে চেয়ে আছে। তবে এই চাওয়ার মধ্যে কোনো রাগ নেই রয়েছে অবাকতার ছোয়া।
অরিদের এমন নরম হয়ে আসায় কিছুটা খুশির রেখা ফুটে এসেছে পালকের মুখে। অরিদের হাত ধরে ঘুরিয়ে নিয়ে ওর উপর, ঠিক বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে পালক। কিছুটা শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে অভিমানের সুরে বললো,,,
“” বড় ভাই ছোট ভাইকে মারতেই পারে,এতে আমার কোনো রাগ,ক্ষোভ কিছু নেই। কিন্তু ভুল বুঝে মারাটা কি ঠিক?””
পালককে ছাড়ানোর চেষ্টায় অরিদ বলে উঠলো,
“” পালক ছাড়ো আমাকে,আমি কারো বড় ভাইনা।””
“” যাব্বাবাহ! ওইদিন তো আপনিই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,আজ থেকে আপনি আমার বড় ভাই। আর আজ যখন আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে মেনে নিলাম আপনি আমার বড় ভাই,অমনিই আপনি রং পাল্টে নিলেন?””
“” পালক,আমি সরতে বলছি। আমার কিন্তু প্রচন্ড…””
“” আপনি জানতেন আমার আর অনিকশার মধ্যে রিলেশন চলছিলো,তাও কেন ওকে বিয়ে করেছিলেন? খুব ভালোবাসতেন তাইনা? ভালোবাসার মানুষটিকে সারাজীবনের জন্য নিজের খাচায় বন্দী করতে চেয়েছিলেন? কি ভেবেছিলেন,আজ যদি আপনি ওকে ফিরিয়ে দেন তাহলে হয়তো আপনি ওকে আর কোনোদিনও নিজের করে পাবেননা? ভয় পেয়েছিলেন সেদিন,খুব ভয় পেয়েছিলেন তাইনা বড় ভাই?””
অরিদ পালককে নিজের থেকে সরিয়ে নিয়ে উঠে বসে পড়েছে। পালকের দিকে রাগরাগ চেহারা নিয়ে বললো,
“” না,এসব কিছুনা। আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও। এখনি যাবে,নাহলে আমি তোমাকে কি করবো আমি নিজেও জানিনা।””
পালক অরিদের কাছেই পাদুটো ভাজ করে আরাম করে মেঝেতে বসে নিয়ে বললো,
“” যে ছেলেটা তিন বছর ধরে একটা মেয়েকে দেখার জন্য গেইটের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে পারে সে ছেলেটা যে ঐ মেয়ের চলনগতি জানেনা এটা কি অসম্ভব কিছু নয়?””
পালকের কথায় অরিদ ওর দিকে অনুনয় নিয়ে তাকাতেই পালক হেসে উঠে বললো,,,
“” আমি জানি আপনি আমাকে মারবেন কি আমাকে ধমক দিয়ে কথাও বলতে পারবেননা। আপনার ভেতরে কঠিনতা নেই,রয়েছে শুধু নরমতা। নাহলে এভাবে এতো বছর অনিকশাকে নিয়ে আপনি কিছুতেই থাকতে পারতেননা।””
“” কে বলেছে নাই,অবশ্যই আছে। নাহলে ওর গালে আমি কি করে আমার হাতের দাগ বসালাম? বাসা থেকে বের করলাম? মুক্তি দিয়ে দিয়েছি আমি ওকে।””
অরিদ ফুপিয়ে কাঁদছে।
“” এতো ভালোবাসেন অথচ ছোট্ট একটা ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে এতো বড় কাহিনী করে ফেললেন? আমার সাথে ঘটা একটা ভুল নিয়ে মেয়েটা এতো কষ্ট নিয়ে এতোটা দিন পার করেছে। আর আজ যখন আমি সেই ভুল থেকে ওকে মুক্তি দিলাম তখনি আপনি আরেকটি ভুলের সূত্র নিয়ে ওকে কষ্ট দিচ্ছেন?””
“” ভুল?””
“” হুম,ভুল। আজকে আপনাকে দুটো ভুলের গল্প শুনাবো। তার আগে চোখের পানি মুছেন,একে তো ছেলে মানুষ তার উপর ছোট ভাইয়ের সামনে কাঁদছেন,আমার খুব লজ্জা লাগছে!””
অন্ত্রীশা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই বুকটা ধক করে উঠেছে। পুরো ছাদটা অন্ধকারে ছেয়ে আছে। আশেপাশে তেমন লাইট না থাকায় ছাদে আলোর রশ্মিও পড়েনি,তার উপর আকাশে মেঘের ঘনঘটার ফলে তারা এবং চাঁদের ও কোনো দেখা নাই। আপু এখানে আছে তো? নাকি আবার বাইরে বের হয়ে গেছে। মন তো বলছে এখানেই আছে! অন্ধকারের মধ্যেই অন্ত্রীশা ধীর পায়ে এগিয়ে চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু চারপাশটা কোথায়ও না পেয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কারো ফুপানির আওয়াজ কানে আসলো। অন্ত্রীশা চুপ করে দাড়িয়ে কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করছে কোথা থেকে আসছে শব্দটা। বেশ কয়েক সেকেন্ড যেতেই ছাদের উত্তর দিকে পা বাড়িয়েছে সে। মনে হচ্ছে ঐদিক থেকেই শব্দটা আসছে। কিছুদুর যেতেই শব্দটা স্পষ্ট হয়ে আসে অন্ত্রীশার কানে। সাথে সাথে দৌড়ে সামনে এগুতেই অন্ধকারে একটা কালো ছায়া দেখতে পাচ্ছে। এই কালো অন্ধকারেও এবার অন্ত্রীশা নিজের বোনকে চিনতে পারছে। হাটুর উপর মুখ লুকিয়ে কাঁদছে অনিকশা!
অন্ত্রীশা অনিকশার পাশে বসেই ডাক দিলো,,
“” আপু!””
অন্ত্রীশা কন্ঠ পেয়েই অনিকশা ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,,
“” আমাকে তোর সাথে নিয়ে যা বোন,আমি আর এখানে থাকবোনা।””
“” আচ্ছা নিয়ে যাবো,কিন্তু কি হয়েছে সেটাতো আগে জানি। আর এভাবে কাঁদছো কেন? তোমার কান্না দেখেতো আমারও কান্না পাচ্ছে।””
অনিকশার মাথাটা তুলে নিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,
“” অরিদ ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছো?””
“” একটা থাপ্পড় খাবি,তোর কি মনে হয় আমি শুধু ওর সাথে ঝগড়া করি?””
“” তুমি করোনি? তাহলে কে করেছে?””
“” কে করেছে মানে? আমি ছাড়া ওখানে আরতো একজনই ছিলো। ওই করেছে।””
“” কে দুলাভাই?””
“” ওটা তোর দুলাভাই না।””
অন্ত্রীশা কপাল কুচকে বললো,,
“” দুলাভাই না মানে?””
“” মানে ওটা তোর দুলাভাই না। অন্য কেউ। তোর দুলাভাই আমার সাথে কখনোই ঝগড়া করতে পারেনা। আর এই টাতো আমাকে মেরেছে। দেখ আমার গালটা ফুলে গেছে।””
অন্ধকারে অন্ত্রীশা কিছুই দেখতে পারছেনা। তবুও মন খারাপ করে বললো,
“” কিন্তু কেন মারলো? পুরোটা খুলে বলো। নাহলে বুঝবো কিভাবে?””
“” আমার মনে হয় আজ সকালে পালক যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তা অরিদ দেখে ফেলেছে।””
অন্ত্রীশার মন খারাপ মুছে গিয়ে মুখটা শক্ত করে বললো,
“” পালক তোমাকে জড়িয়ে ধরেছে মানে?””
“” উফ! পুরোটা না শুনে রেগে যাচ্ছিস কেন,অনতি? চুপ করে শোন।””
অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অনিকশা বলতে শুরু করেছে,,,
“” আজ সকালে পালককে আমি যখন সব খুলে বললাম,তখনি ও খুব কাঁদছিলো। ওর কান্না দেখে আমার অনেক মায়া হচ্ছিলো রে অনতি। আমি ওকে শান্ত্বনা দিয়ে যখন চলে আসবো তখনি ও আমার হাতটা আকড়ে ধরে,হালকা করে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,অনিকশা দোষ তোমার ছিলোনা,সবটায় ভুল বুঝাবুঝির মধ্যে ছিলো। আর এই ভুল বুঝাবুঝিটা আমার দ্বারায় শুরু হয়েছে। সেদিন যদি আমি ভুল করে তোমাকে পত্রীকন্যা না ভাবতাম,তোমাকে প্রপোস না করতাম তাহলে আজ এতোকিছু হতোনা। তুমি তো না বুঝেই আবেগের বসে সব করেছিলে। কিন্তু আমি? আমি শুধু তোমাকেই না পত্রীকন্যাকেও কষ্ট দিয়েছি। ওর বিশ্বাসটাও ভেঙে ফেলেছি। আমার ভালোবাসার উপর ওর পুরোপুরি বিশ্বাস ছিলো। হয়তো সেদিন আমি তোমাকে প্রপোস না করলে আজ সবকিছুই অন্যরকম হতো। এমনও হতে পারতো আমার জায়গায় তুমি অরিদের সাথে প্রেম করছিলে আর তারপর বিয়ে।
যা হয়েছে সব ভুলে যেও। ক্ষমা তোমাকে না তোমার আমাকে করা উচিত। আমার জন্যই এসব কিছু হয়েছে! সরি অনিকশা! আই এম রেলি সরি!!””
“” এসব পালক বলেছে?””
“” হুম।”
“” কিন্তু তোদের এই ক্ষমাক্ষমির মধ্যে অরিদ ভাইয়া কি করে এলো? উনি কিভাবে জানলো তোরা তখন জড়াজড়ি করছিলি?””
অন্ত্রীশার কথায় অনিকশা কিছু বলতে চাইলেও তার আগে অরিদ বলে উঠলো,,,
“” অনতি জড়াজড়ি আবার কি কথা? শুনতে বিচ্ছিরি লাগছে।””
অরিদের কন্ঠ পেয়ে অনিকশার চোখ আবার ভিজে এসেছে। বসা থেকে উঠে চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা আবার টেনে বসিয়ে দিলো।
“” সেটা আপনাকে না শুনলেও হবে তার আগে বলেন আপনি কিভাবে জানলেন?””
“” আমি তো ওখানে একটা সারপ্রাই পার্টির আয়োজন করতে গিয়েছিলাম,আমার আর অনিকশার বিবাহ বার্ষিকীর উপলক্ষে। ভেতরে ঢুকতেই দেখি পালক ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।””
অন্ত্রীশা অনিকশার পাশ থেকে সরে এসে অরিদকে বললো,,,
“” আমি আপনাকে সরল মানুষ ভেবেছিলাম,কিন্তু আপনি তো জটিল মানুষ। সহজ জিনিসকে এতো বড় জটিল করে দিয়েছেন? আপনার জন্য আমাদের সারপ্রাইজটাও মিস।””
“” সরি,শালিকা।””
“” আপনার সরি আপনিই খান।””
অন্ত্রীশা অনিকশার হাত ধরে বললো,,
“” আপু তুই আমার সাথে আয়। এমন জটিল মানুষ কখনোই আমার দুলাভাই হতে পারেনা।””
অনিকশাও অন্ত্রীশার কথায় তাল মিলিয়ে উঠে চলে যেতে নিলে অরিদ বললো,,,
“” তুমি আর এক পা ও যদি বাড়িয়েছো,অনি। তাহলে আমি সত্যি সত্যি এই ছাদ থেকে লাফ দিবো। উফ! আমি আর এসব নিতে পারছিনা। আমার একটু শান্তি চাই।””
অনিকশা থমকে যেতেই পালক অন্ত্রীশার হাত থেকে অনিকশাকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। অন্ত্রীশার কানে কানে বললো,,,
“” ওদেরকে ছেড়ে দাও। ওরা ওদের মতো করে নিজেদের গুছিয়ে নেক! আমরা নাহয় আমাদেরটা নিয়ে ভাবি??””
পালকের কথায় অন্ত্রীশা হা করে ওর দিকে তাকাতেই পালক আবার বললো,,
“” আমি বাসায় যাওয়ার কথা বলছি। কত রাত হয়েছে দেখেছো? আমার খুব ঘুম পাচ্ছে!””
পালকরা চলে যেতেই অরিদ দুহাত দিয়ে দুকান ধরে বললো,,
“” সরি অনি। তোমার বুঝি খুব লেগেছিলো??””
অনিকশার চোখ আবার ভিজে এসেছে তবে কষ্টে নয়,সুখে। এই তো এটাই তো তার অরিদ। যে শুধু ভালোবাসতে জানে,কষ্ট দিতে নয়। তার ভোলাভালা স্বামী,নরম মনের মানুষ,নরম সুরের পাগল মানুষ! এই মানুষটাকে সে আর কষ্ট দিবেনা। কখনোও না। শুধু ভালোবাসা দিবো। ভালোবাসা আর ভালোবাসা!
অনিকশা অরিদকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
“” হুম,খুব পচা তুমি। আমাকে একদিনেই এতোগুলা কষ্ট দিছো!””
অরিদ অনিকশাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,,
“” আজ সব কষ্ট মুছে দিয়ে ভালোবাসায় মেখে দিবো তোমায়! মাখবেতো আমার ভালোবাসার রেনুতে???””
অনিকশা লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,,
“” হুম!””
আতিশ দুঘন্টাযাবত পালকদের বাড়ির পেছন সাইটে দাড়িয়ে আছে। চোখদুটো তাক করা পাপড়ির রুমের বেলকনিটায়। আজ চারদিন হতে চললো সে পাপড়িকে দেখেনা। ওকে দেখার জন্য বুকটা হাসফাস করছে আতিশের। কিন্তু বাড়ীর ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। কোনো কারন ছাড়া সে কেন যাবে? তাই ভেবে পাচ্ছেনা। অথচ এতোদিন যখন তখন ঐ বাসায় ঢুকতেও কোনো প্রকার সংকোচবোধ হয়নি। তাহলে আজ কেন হচ্ছে?? এতো ভয়ই বা কেন পাচ্ছে সে? এখন পালককে তার কাছে বন্ধুর জায়গায় পাপড়ির ভাই হিসেবে মাথায় ঢুকে বেশি। ওকে দেখলেই বুকের ভেতরটা ভয় জায়গা করে নেয়। একেই হয়তো বলে ভালোবাসার ভয়!
দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আতিশের পা ব্যথা হয়ে এসেছে। তবুও পাপড়ির একবারও দেখা মেলেনি। মেয়েটা কি এখনো ঘুমুচ্ছে? এতো ঘুম কিসের ওর? এইখানে যে আমি অফিস রেখে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পা ব্যথা করে ফেলেছি সেটা কে দেখবে? দুদিন আগেও তো আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেঁদে কেটে নাকের পানি,চোখের পানি এক করে ফেলেছিলো অথচ এখন আমাকে একটা কল দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনা?? আবার আমার কল কেটে দেওয়া হয়,ইচ্ছে করছে ওকে তুলে নিয়ে একটা আছাড় মেরে দেখাতে,ঘুম কাকে বলে,কত প্রকার ও কী কী!!!
আতিশ পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে পাপড়ির নাম্বারে কল দিলো। বেশ কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ঘুমঘুম কন্ঠে পাপড়ি হ্যালো বলেছে। তাতে যেন আতিশের মেজাজ আরো বেশি চটে যাচ্ছে,,
“” এতো ঘুম তুই কোথায় পাস? সারা দুনিয়ার মানুষের ঘুম কি তুই একাই ঘুমিয়ে দিস? রাতে কি ঘুম রেখে চুরি করে বেড়াস??””
আতিশের কন্ঠ পেতেই পাপড়ির ঘুম উধাও। শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,,
“” জ্বী,আপনি চাইলে আপনারটাও ঘুমিয়ে দিবো!””
“” থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবো। পড়া রেখে শুধু ঘুমানো??””
“” আমার পড়া দিয়ে আপনার কি? আপনিতো আর এখন আমার টিউটর না আতিশ ভাইয়া। কেন কল করেছেন তাই বলেন!””
কেন কল করেছে সেটাও এখন ওকে বলতে হবে?? দুদিনেই এতো পরিবর্তন?
“” কি হলো বলছেন না যে?””
“” একটু নিচে আসবি?””
“” কেন?””
“” তোর জন্য কয়েকটা শীট বানিয়েছি। এগুলো পড়লেই পরীক্ষায় হুবহু কমন পাবি। তোর যে মাথা,পরীক্ষায়তো লাড্ডু ছাড়া আর কিছু পাবিনা।””
“” লাগবেনা,আমার নতুন টিউটরই আমাকে হাজারটা শীট বানিয়ে দিবে৷ শুধু শীট কেন আমি চাইলে উনি আমাকে আরো অনেককিছুও বানিয়ে দিবে।””
“” অনেক কিছু বানিয়ে দিবে মানে?””
আতিশের কথার উত্তর না দিয়েই পাপড়ি কলটা কেটে দিয়েছে। সাথে সাথে ফোনটাও অফ করে রেখেছে।
পালকের বন্ধু কাদিরের সামনে চা,বিস্কুট রাখতেই কাদির অবাক হয়ে বললো,,
“” অন্ত্রীশা তুমি?””
“” জ্বী,কেমন আছেন ভাইয়া?””
“” ভালো। কিন্তু তুমি এখানে? তারমানে পালকের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে? আই মিন তুমিই পালকের বউ??””
“” আপনার বন্ধুকেই জিজ্ঞেস করেন।””
অন্ত্রীশা সেখান থেকে প্রস্থান করতেই পালক বলে উঠলো,,
“” তুই ওকে চিনিস নাকি?””
“” আরে চিনি মানে,ওই তো আমার ক্রাস ছিলো।””
“” ক্রাস বলতে?””
“” আরে আমরা যখন থার্ড ইয়ারে ছিলাম তখন আমি তোকে আর আতিশকে নিয়ে একটা মেয়েকে প্রপোস করতে চেয়েছিলাম না? ঐ মেয়েটাতো অন্ত্রীশাই ছিলো।””
পালক কপাল কুচকে বললো,,
“” তুই সিউর ওটা অন্ত্রীশা ছিলো?””
“” সিউর হওয়ার কি আছে? আমি ওর পেছনে পুরো ১ বছর ঘুরে তারপর প্রপোস করেছিলাম।””
পালক কাদিরের দিকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে বললো,,
“” তারমানে তুই ওর প্রেমিক? কিন্তু তোরে কোনদিক দিয়ে আমার মতো লাগে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।””
“” আমি কেন ওর প্রমিক হতে যাবো? ও তো আমার প্রপোজাল এক্সেট করেনি। উল্টো ভাইয়া বানিয়ে দিয়েছিলো।””
পালক এবার একটু নড়েচড়ে বসে ভাবুক কন্ঠি বললো,,
“” কেন?””
“” তখন তো বলেছিলো ও নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে!””
“” কাকে?””
“” আমাকে জানায়নি””
“” কেন?””
কাদির বেশ বিরক্ত হয়ে বললো,,
“” আমি কিভাবে বলবো ও কেন আমাকে জানায়নি?””
কাদিরকে বিদায় করে পালক নিজের রুমের দিকে এগুচ্ছে। মাথায় নানান প্রশ্নরা ঘুরপাক খাচ্ছে। একটারও উত্তর খুজে পাচ্ছেনা। কাদিরের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে অন্ত্রীশা আমাদের ভার্সিটির অন্তর্গত কলেজেই পড়াশোনা করেছে। এটা ও আমাকে কেন জানায়নি? তার উপর কাদিরতো এটাও বলেছে অন্ত্রীশা অন্য কাউকে ভালোবাসতো তাহলে ও কেন এতো সহজে আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গিয়েছিলো?? তবে কি ওদের প্রেমটা ক্ষনস্থায়ী হয়েছিলো? নাকি অন্য কোনো কারন? এমন নয় তো কারো চাপে পড়ে আমাকে বিয়ে করতে হয়েছে?? যদি এমনটাই হয় তাহলে ও এতো স্বাভাবিক আচরন কিভাবে করছে? আমি তো পারিনা আমার পত্রীকন্যা জায়গায় অন্য কারো কথা ভাবতে। ও কিভাবে ভাবছে??
পালক রুমে ঢুকেই দেখলো অন্ত্রীশাকে বিছানায় বসে রয়েছে। কোলে একটা বালিশ নিয়ে তার উপর বা হাতের কনুই ভর করে থুতনি ধরে কিছু একটা ভাবনায় ব্যস্ত। ভাবনার সাথে সাথে ঠোটে এক অমায়িক হাসি লেগে আছে। পালক ওর কাছে চলে আসাতেও ওর কোনো নড়াচড়া নেই। কি এতো ভাবছে? আর এভাবে হাসছেই বা কেন??
“” প্রিয় মানুষটির কথা ভাবছো তো?””
পালকের কথায় অন্ত্রীশা কিছুটা নড়ে উঠে। অনেকটা ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে গিয়েছে ও।
পালক অন্ত্রীশার পাশে বসে বললো,,
“” আমার সব তো তুমি জেনে নিয়েছো,তাহলে তোমার কি উচিত নয় তার বিনিময়ে তোমার ও আমাকে কিছু বলা উচিত?””
অন্ত্রীশা পালকের দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,,
“” কি শুনবেন?””
“” ভালোবাসো তাকে?””
অন্ত্রীশা নিজের হাতদুটো প্রসারিত করে বললো,,
“” হুম,অনেক। এই এতোটা!””
“” বাহ! এতোটা? তাহলে তাকে ছেড়ে আমার কাছে কেন এলে?””
“” আমিতো ছাড়িনি!””
“” তাহলে সে চলে গিয়েছে?””
“” না,সেও চলে যায়নি।””
“” তাহলে?””
অন্ত্রীশা নিজের কোল থেকে বালিশটা রাখতে রাখতে বললো,,,
“” ঐযে আপনার মতো ছোট্ট ভুল বুঝাবুঝিতে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।””
“” আমার মতো মানে? কি রকম ভুল বুঝাবুঝি?””
অন্ত্রীশা কিছু বলার আগেই পালকের ফোন বেজে উঠেছে। কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে কিছু শুনেই সাথে সাথে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অন্ত্রীশা পিছু ডাকতে গিয়েও ডাকেনি।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে অন্ত্রীশা নিজেকে ভালো করে পরখ করে দেখে নিচ্ছে। মিস্টি কালারের শাড়ী,আর ঠোটে হালকা গোলাপী কালারের লিপস্টিকে নিজেকে সাজিয়েছে। আজ আপনাকে সব বলবো আমি। যে কথা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা।
অন্ত্রীশা ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখে ১১ টা বেজে ৩৫। এখনো উনি এলেননা কেন? সেই যে কার কল পেয়ে গেলো আর বাসায় আসার নাম নেই। কখন আসবেন আপনি? আমার যে আর তর সইছেনা। উফ! কখন যে আপনাকে সব কথা বলে পেটটা হালকা করবো!
অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে নিজের ফোনটা হাতে নিয়েছে পালককে কল দেওয়ার জন্য। লক খুলে ডায়াললিস্টে যেতেই পালকের আগমন।
অন্ত্রীশা পালকের দিকে তাকাতেই ওকে জড়িয়ে ধরেছে পালক। অন্ত্রীশাকে জড়িয়ে নিয়েই বললো,,
“” আমি আমার পত্রীকন্যাকে পেয়ে গেছি,অন্ত্রীশা।””
“” পত্রীকন্যা?””
“” হুম,স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধাই আমার পত্রীকন্যা।””
“” স্নিগ্ধা?””
পালক অন্ত্রীশাকে ছেড়ে খুশি খুশি কন্ঠে বললো,,
“” তোমাকে বলেছিলাম না আমার আর পত্রীকন্যার চিঠী আদান-প্রদান করতো বোরকা পড়া একটি মেয়ে? আসলে ও আর কেউ নয় ঐ আমার পত্রীকন্যা!””
চলবে