সাদাফুল পর্ব -০৭

পর্ব-৭
#সাদা_ফুল
#ফারিয়া_আক্তার_নূপুর
৯.
সময় বহমান। কথায় আছে সময় ও স্রোত কারো জন‍্য অপেক্ষা করে না। ঠিক তাই, সময় চলে তার নিজ গতিতে। শুভ্রতার জেএসসি পরীক্ষা শেষ। এই পুরোটা সময় তীব্র তাকে অনেক সাহায্য করে। এখন শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা। তালহা রহমান ছেলের কিছু একটা আচ করেছেন। তিথি রহমানকে জিজ্ঞেস করলেও তেমন কোনো উত্তর পায়নি। পরিবারের একমাত্র ছেলে তাই তিনি চাচ্ছেন বিয়েটাও তাড়াতাড়ি দিতেন। রাতে খাবার টেবিলে বসে তিনি নিজ থেকে কথা তুলেন। যেখানে তীব্রও ছিলো।

“আগামীকাল আমরা সবাই কামরুল চৌধুরীর বাড়ি যাবো।”

চকিতেই তিথি রহমান স্বামীর দিকে তাকালেন। পাশ থেকে তীব্র বলে,

“আব্বা আমি যেতে পারবো না”!

“কেনো? তোমার জন‍্যই তো যাওয়া”

“আমার জন‍্য মানে!”

অবাক হয়ে তীব্র জিজ্ঞেস করে।

“দেখো এতদিন পড়াশোনা করছিলে তাই তোমাকে এই ব‍্যাপারে বলা হয়নি। এখন বলছি অবশ‍্য তুমি বাদে সবাই জানেই”।

“কি কথা আব্বা? যা আমি জানিনা।”

“কামরুলের মেয়ে ঊর্মির সাথে আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি আরও দুবছর আগেই । এখন আগামীকাল আমরা যাবো ডেইট ফিক্সড করতে”

তীব্র মনোযোগ দিয়ে তালহা রহমানের কথা শুনলো। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“মাফ করবেন আব্বা। এই বিয়ে আমি করতে পারবো না”।

“কারন কি?”

তীব্রের অকপটে উত্তর,

“আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি”

“পছন্দের সেই মেয়েকি বাজারের কসাইয়ের মেয়েটা?”

“ওর ভালো একটা নাম আছে শুভ্রতা”।আর বিয়ে যদি করাতে হয় তাহলে রহমান চাচার বাড়িতে সম্মোধন নিয়ে যান”।

তালহা রহমান তাচ্ছিল্যের সূরে বলেন,

“কসাইয়ের মেয়ে হবে চেয়ারম্যান বাড়ির বউ”!

তীব্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

“বেয়াদবি মাফ করবেন আব্বা তবে ওই চেয়ারম্যানের পদ আমি মানিনা যে পদ মানুষকে সম্মান দিতে জানে না মানুষের কাজকে ছোট করে।”

তালহা রহমান গর্জে উঠেন। তীব্র সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রেনু রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“দাদি কাল একবার গিয়ে নাতি বউকে দেখে এসো।”

রেনু রহমান হেসে উঠেন। তালহা রহমান মায়ের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই হাসি বন্ধ করে চুপ হয়ে যান তিনি।

“শেষ অব্দি কসাইয়ের মেয়ে আহা কি রুচি। বাইরের মানুষ এইসব জানতে পারলে মাথা কাটা যাবে আমার। দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পরেছে?”

ঘরে পায়চারি করতে করতে বলতে থাকেন তালহা রহমান। রাগে তার পুরো শরীরে আগুন জ্বলছে। তিথি রহমান চুপ করে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রথম প্রথম তিনিও ভেতর থেকে নারাজ ছিলেন এই সম্পর্কে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে তিনি নিজে যান শুভ্রতাদের বাড়িতে কাজের অজুহাতে। শুভ্রতাকে দেখেই তার ভালো লেগে যায়। একদম আহামরি সুন্দরীদের কাতারে না পরলেও কেনো কারন ছাড়াই মেয়েটিকে ভালো লাগে তার। চোখ মুখ জুড়ে এক প্রশান্তির ছায়া। স্ত্রীকে চুপ থাকতে দেখে আরও চটে যান তালহা রহমান। তার সামনে ‍দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে বলেন,

“সব দোষ তোমার। ছেলেকে আদর করতে করতে বেয়াদব বানিয়েছো। আর এখন ছেলে কসাইয়ের এক মেয়েকে বিয়ে করবে”!

“কসাইয়ের মেয়ে, কসাইয়ের মেয়ে! কি শুরু করলেন আপনি? কসাইরা কি মানুষ না? তাহলে নিজেরাই গরু জবাই দিয়ে মাংস কেটে খাইয়েন কসাই এর দরকার পরবে না আর। ছেলের উপর এত রাগলেন অথচ এইটাই ভুলে গেলেন আপনিও এক দাড়োয়ানের মেয়েকেই বিয়ে করেছেন। সেদিন কিন্তু আপনিই আব্বাজানের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন কর্ম দিয়ে মানুষের তফাৎ হয় না পরিচয় হয় না। তাহলে আজ সেই কথার মূল্য কোথায় রাখলেন আপনি?”

কঠিন কন্ঠে কথাগুলো বলে একটু থেমে স্বামীর মুখের পানে তাকায় তিথি রহমান। চোখ থেকে তার এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। তালহা রহমান চুপ করে তিথি রহমানের পাশে বসেন। পুরো ঘরে নিশ্চুপতা বিরাজমান। খানিকক্ষণ বাদে তিথি রহমান স্বামীর দিকে ফিরে হাতে হাত রেখে বলেন,

“মাফ করে দিবেন উচুস্বরে কথা বলার জন‍্য। মেয়েটিকে আমি দেখেছি। বিশ্বাস করুন আপনারও ভালো লাগবে তাকে। কসাইয়ের মেয়ে বলে কোনো খুত পাবেন না আপনি”।

তালহা রহমান ছলছল চোখে তাকায়। অপরাধীর ন‍্যায় বলেন,

“আমার ভুল হয়েছে তিথি। মূহুর্তেই আমি ভুলে গিয়েছিলাম সব। এইরকম একটা সময় আমিও পার করেছিলাম। তোমার কথা বলার পর আব্বাও ঠিক আমার মতই অগ্নিরূপ ধারন করেন। তারপর যখন তোমায় বিয়ে করলাম চারটে বছর কথা বলেননি আমার সাথে। একসময় তীব্র হলো। সেদিন দেখলাম বাবাকে আবারও আমার সাথে তোমার সাথে কথা বলতে। আমি সব বেমালুম ভুলে গেলাম আহা! আমি কালই কামরুলকে ফোন করে বলবো এই বিয়ে সম্ভব না। এতে যদি আমাদের মাঝে রাজনৈতিক সম্পর্কের ভাঙন ঘটে তবে তাই ঘটুক আমার আফসোস নেই।”

শুভ্রতার ফলাফল এ+ এসেছে। রহমান মিয়া আজ খুব খুশি। আশেপাশে বাড়িতে এমনকি বাজারের দোকানগুলোতেও উনি মিষ্টি বিলিয়েছেন। ইংরেজিতে ভালো করায় উনি নিজে তীব্রকে দুপুরে তার বাড়িতে খাওয়ার জন‍্য দাওয়াত করেছেন। তীব্রও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে তা গ্রহন করে। শুভ্রতা শুহানা বেগমের সাথে হাতে হাতে কাজ করছে। খানিক’বাদেই যোহরের আযান দিবে। শুহানা বেগমকেও বেশ ব‍্যাস্ত দেখাচ্ছেন। তার মতে চেয়ারম্যান বাড়ির রাজপুত্র আসবে তার ঘরে। তার আপ‍্যায়ন কি আর সামান্যভাবে করা যায়। কানে আযানের শব্দ আসতেই শুভ্রতা রান্নাঘর থেকে উঠে গোসল করার জন‍্য কলপারে যায়। রহমান মিয়া লায়লাদের বাড়ি থেকে খাবার টেবিল এনে বারান্দার এক কোণে বসান। সাথে দুটি চেয়ার বসিয়ে দেন। শুভও বাবার সাথে সব ধরনের তদারকি করছে। সকলের মাঝেই এক ধরনের খুশি খুশি ভাব!

চলবে……
[প্রথম গল্প লেখা। শব্দ গোছাতেও সময় লেগে যায়। পর্ব ছোট হলে দুঃখিত। আগামীকাল বড় পর্ব দিবো ইনশাআল্লাহ। হ‍্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here