#My_First_Crush
#পর্ব-২৪
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
এরপর রাইয়ান সরাসরি যায় হৃদির কফিশপে। গিয়ে দেখে দরজা লক। কাঁচের গ্লাসের ভেতর দিয়ে দেখা যায় পুরো জায়গাটা খালি। বাইরে ‘Sold Out’ কার্ড ঝুলানো। রাইয়ানের ভ্রু সংকুচিত হয়ে উঠে। ভয় আরও বেড়ে যায়। ডি’সোজাকে ফোন করে একবার হৃদির বাড়িতে গিয়ে চেক করে আসতে বলে। ডি’সোজা ‘ওকে’ বলে ফোন রেখে দেয়। কফিশপের সামনে দিয়েই দুশ্চিন্তার সাথে জোরে জোরে পায়চারি করতে থাকে রাইয়ান। বারবার দেখতে থাকে ফোনের দিকে। কখন ডি’সোজা ফোন করবে? একেকটা সেকেন্ডও ঘন্টার মতো মনে হতে থাকে রাইয়ানের কাছে। অবশেষে বেজে উঠে রাইয়ানের ফোন। একবার বাজতে না বাজতেই রাইয়ান ফোন ধরে ফেলে। এক নিঃশ্বাসেই জিজ্ঞেস করে, ‘হৃদি আছে ওখানে?’
ডি’সোজা জানায়, ‘না। বাড়ি তো তালা মারা।’
নিরাশ হয়ে রাইয়ান চোখ বন্ধ করে ফেলে। ডি’সোজা জিজ্ঞেস করে, ‘হৃদি এসময় এখানে আসবে কেন? কিছু কি হয়েছে রাইয়ান?’
রাইয়ান কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। অস্থির হয়ে দু হাত মাথায় রাখে। কি করবে বুঝতে পারে না। সেখান থেকে যায় জেরিনের বাসায়। জেরিনের বাসার সামনে পৌঁছাতেই দেখা হয় জিশানের সাথে। জিশান দরজা দিয়ে বের হচ্ছিল, সেসময়ে রাইয়ানকে এই অবস্থায় সেখানে দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায়। রাইয়ানকে ধরে চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করে, ‘কি হয়েছে রাইয়ান? তোর এমন অবস্থা কেন?’
রাইয়ান কিছু না বলে আগে জেরিনের বাসার দরজায় ঠকঠক করতে থাকে। জেরিন দরজা খুলছে না দেখে শব্দ আরো বাড়িয়ে দেয়। জিশান ওর হাত ধরে টেনে বলে, ‘কি হয়েছে? তুই আগে শান্ত হঁ। জেরিন এখানে নেই। আরো চার পাঁচ দিন আগেই এখান থেকে চলে গেছে। আচ্ছা, কি হয়েছে বলবি তো!’
এই কথা শুনে রাইয়ান সেখানেই বসে পড়ে। অস্ফুট স্বরে বলে, ‘হৃদি চলে গেছে।’
জিশান বলল, ‘চলে গেছে মানে? কোথায় গেছে?’
‘জানি না।’
জিশান বিভ্রান্তের মতো উঠে দাঁড়ায়। চোখ যায় জেরিনের দরজার দিকে। জেরিনের হুট করে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কারণ পরিষ্কার হয় তার কাছে।
রাইয়ান বুঝতে পারে না হৃদি আর কোথায় যেতে পারে। যার সাথে হৃদির বিন্দুমাত্রও পরিচয় ছিল সেসব জায়গাতেও যেতে থাকে রাইয়ান। কিন্তু নেই। হৃদি কোথাও নেই। এ সূত্রেই সে যায় অ্যালেনের কাছেও। সাথে থাকে জিশানও। অ্যালেনের বাসায় গিয়েই অ্যালেনকে ধরে জিজ্ঞেস করে,
‘অ্যালেন, হৃদি কোথায়?’
অ্যালেন হেসে বলে, ‘হৃদি কি আমার ওয়াইফ নাকি যে আমি জানবো হৃদি কোথায়?’
অ্যালেনের ভাবভঙ্গি দেখেই রাইয়ান বুঝতে পারে অ্যালেন কিছু একটা জানে। সে আবারো রুক্ষ হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি এখানে তোর সাথে ফাজলামি করতে আসিনি।’
অ্যালেন খোঁচা দিয়ে বলল, ‘কেন? যে মেয়েকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলি আজ তার জন্য এমন ব্যাকুল হয়ে গেছিস কেন? তোর জন্য তো ভালোই হয়েছে তাই না? বাধা আপনাআপনিই সরে গেছে।’
রাইয়ান অ্যালেনের শার্টের কলার চেপে ধরে। তার চোখে মুখে ফুটে উঠে স্পষ্ট ক্রোধ। জিশান দুজনের মাঝখানে এসে ছাড়ানোর চেষ্টা করে অ্যালেনকে বলে,
‘শুধু শুধু কথা কেন পেঁচাচ্ছিস? দেখছিস তো রাইয়ানের কি অবস্থা। যা জানিস সরাসরি বলে দে না ভাই। হৃদি কোথায় গেছে?’
অ্যালেন নিজের শার্ট টেনে ঠিক করতে থাকে। একপলক তাকায় রাইয়ানের দিকে। রাইয়ানও একনজরে তাকিয়ে থাকে অ্যালেনের দিকে। এরপর অ্যালেন তাদেরকে যা জানায় তার ভাবার্থ হলো এই,
হৃদি অনেক আগে থেকেই এই প্রস্তুতি শুরু করে। রাইয়ানের লোন শোধ করার জন্য সে তার কফিশপ বিক্রি করে দিয়েছে। একা একা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে এই সবকিছু সে করেছে অ্যালেনের সাহায্য নিয়েই। প্রথমে হৃদির এরূপ সিদ্ধান্তে রাজী না হলেও হৃদির অনুরোধে পরে অ্যালেন শেষমেশ আর সাহায্য না করে পারে না। যখন হৃদি জানতে পারে দাদীমার চাপে পরে এই লোনের জন্যই বাধ্য হয়ে রাইয়ানকে বিয়ে করতে হয়েছে আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই লোনের জন্যই রাইয়ান এখনও এই সম্পর্কে বাঁধা পরে আছে তখন রাইয়ানকে সেই সমস্যা থেকে মুক্ত করতে, তার সব ইচ্ছা পূরণ করতে হৃদি তার একটু একটু করে গড়ে তোলা সাধের কফিশপটিই বিক্রি করে রাইয়ানের লোনের টাকা শোধ করে দেয়। যাতে রাইয়ানকে আর কারো কাছেই বাঁধা না থাকতে হয়। কারো চাপে না থাকতে হয়। সে তার যা ইচ্ছা করতে পারে। কাউকে পছন্দ না করা সত্ত্বেও তাকে জীবনে না রাখতে হয়।
মানুষ ভালোবাসে ভালোবাসার মানুষটিকে পাবার জন্য, পুরো পৃথিবী এদিক ওদিক করে হলেও সে শুধু তাকেই পেতে চায়। সারাজীবন তার কাছে থাকতে চায়। তাকে পাশে চায়। অথচ হৃদি! ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখার জন্য নিজেই নিজেকে দূর করার সকল ব্যবস্থা করে দেয়। তার ছেড়ে যাওয়াই যদি তার ভালো থাকা হয় তাহলে সেভাবেই। তাই তো, তুমি এই পৃথিবীর যেকোন বিষয়ের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রাখতে পারো, যেকোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারো কিন্তু হৃদির ভালোবাসায় কেউ কখনো প্রশ্ন তুলতে পারে এমন সাধ্য কার!
___________________________________________________
(রাইয়ান)
আমি যখন দাদীমার বাড়িতে যাই তখন আমার অবস্থা পুরোপুরি বিধ্বস্ত। বিশেষ করে অ্যালেনের মুখে ঐ কথাগুলো শোনার পর একেবারেই ভেঙে পড়েছিলাম আমি। অনুতপ্তের আগুনে দগ্ধ ছাই ছাড়া তখন আর আমি কিছুই না। হৃদি আমাকে এতো ভালোবেসেছে আর আমি? হৃদিকেও হারিয়ে ফেললাম। এই পৃথিবীর সবথেকে নিঃস্ব বলে বোধ হতে লাগলো আমার নিজেকে। আর সবথেকে নিকৃষ্টও। কুড়ে কুড়ে যন্ত্রণাগুলো আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিতে লাগলো। কোথায় গেলে আবার ফিরে পাবো হৃদিকে? অ্যালেন বলেছিল সে শুধু অতটুকুই জানে। এর বাইরে হৃদি কোথায় গেছে বা আছে সে সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। হৃদি তাকেও কিছু বলেনি। নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হতে লাগলো আমার। আমি পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলাম সোফায়। দাদীমা আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। সবটাই এখন তাকে জানিয়ে দিয়েছি আমি। কিছু যে একটা হয়েছে সেটা ডি’সোজার ফোনের কারণে আগে থেকেই আঁচ করতে পারেন তিনি। বাবা দাদীমার পাশেই দাঁড়ানো। দাদীমা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললেন,
‘আমি ভেবেছিলাম একবার বিয়েটা হয়ে গেলে তুমি সব মেনে নিবে। হৃদিকে নিয়ে তুমি ভালো থাকবে। একারণেই তোমাকে বিয়ের জন্য জোর করেছিলাম আমি। কিন্তু তুমি যে বিয়ের পরও আলাদা হবার চিন্তা নিয়ে থাকবে তা যদি একটু আঁচ করতে পারতাম তাহলে কখনোই তোমাকে এভাবে বিয়ের জন্য জোর করতাম না আমি৷ আসলে, দোষটা আমারই হয়েছে। সব দোষ আমার। আমার তোমাকে এভাবে বিয়ের জন্য জোর করা ঠিক হয়নি। আমি শুধু তোমার কথাই ভাবছিলাম। তোমার ভালোটাই চিন্তা করছিলাম। হৃদির কথা একটুও ভাবিনি। ভাবিনি তুমি যদি ওকে না মেনে নাও তাহলে ওর কেমন লাগবে? ওঁ কতটা আঘাত পাবে! মন থেকে না করা বিয়েটায় তুমি হৃদির যত্ন ঠিকমতো নিবেও কিনা। কিচ্ছু ভাবিনি। মা বাবা মরা মেয়েটার সাথে আমি এটা কি করলাম! না যেন মেয়েটা কতোটা কষ্ট পেয়েছে।’
দাদীমা আরও বিলাপ করতে লাগলেন। মাথা নিচু করে বসে রইলাম আমি। চোখ থেকে অনর্গল টপ টপ করে পানি পড়তে লাগলো আমার। বুকের মধ্যে কেউ যেন ক্রমাগত ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। আমার শরীর কাঁপতে লাগলো। দাদীমা আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। হাত রাখলেন আমার কাঁধে। আমি দু হাত দিয়ে দাদীমাকে পেঁচিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। কান্নার চোটে শরীর আরও কাঁপতে লাগলো আমার। বাবা চিন্তিত হয়ে উঠলেন। দাদীমা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সামলাতে লাগলেন। দাদীমার হাতটি মুখের কাছে নিয়ে আমি অনবরত কাঁদতেই লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতেই কোনমতে শুধু বললাম, ‘আমি হৃদিকে চাই দাদীমা। আমি হৃদিকেই চাই। আমার কাছে হৃদিকে এনে দাও। প্লিজ এনে দাও!’
গোটা দিনটা কেটে গেলো। হৃদির কোন খবর পেলাম না আমি। নিজের অ্যাপার্টমেন্টে একা একা ফিরে যাবার সাহসও হলো না আমার। আমি দূর্বল, ভয়ার্ত, অসহায় বাচ্চাটির মতো দাদীমার কাছে পড়ে রইলাম। রাত গভীর হলে আমি বের হলাম আমাদের নেইবার হুডের রাস্তায়। আকাশে একটা বড় চাঁদ। তার আলোতে আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম হৃদির বাড়ির সামনে। ঠায় দাঁড়িয়েই রইলাম। একটা সময় পা আবারো চলতে শুরু করলো। আমার কাছে বাড়ির চাবি ছিল। সেটি নিয়ে দরজা খুললাম আমি। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দরজার পাশের সুইচ টিপতেই আলেকিত হয়ে উঠলো ঘর। অনেকদিন যাবৎ কারো না আসায় ধুলো জমে গেছে আসবাবপত্রে। মাকড়সার জালে ভরে আছে ঘর।আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম একটি দেয়ালের দিকে। সেখানে হৃদির কিশোরী বয়সের একটা ছবি টাঙানো। সম্ভবত তেরো কি চৌদ্দ বছরের। ছবিটিতে হলুদ রঙের ফ্রক পরনে সাইকেলে বসা হাসিমাখা হৃদির কিশোরী মুখটি ফুটে আছে। আমি হাত দিয়ে হৃদির মুখটির উপর থেকে ধুলো মুছে দিলাম। ছবিটা নিজের হাতে নিয়ে গেলাম হৃদির বেডরুমে। দেয়ালে আমার ছবির মেলা এখনো আছে। জানালার ধারে ঝুলছে হৃদির বানানো রঙিন ঝুল। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম আমি। সবকিছুতেই হৃদির ছোঁয়া। হৃদিকেই যেন অনুভব করতে লাগলাম আমি। হৃদির রুম থেকেই একটা পুরনো ডায়েরি পেলাম। আমি ডায়েরিটা নিয়ে চলে এলাম বাড়ির বাইরে। কাঠের সিঁড়িতে বসে ডায়েরির মাঝখানের একটা পৃষ্ঠা খুললাম। সেখানে কালার পেন্সিল দিয়ে লেখা, ‘আজকে রাইয়ান আমার সাথে প্রথম কথা বলেছে। আমি ভাবতেও পারছি না সত্যিই ব্যপারটা হয়েছে। আমি সুপারশপে গিয়েছিলাম। সেখানে যখন আমি কিছু পেন আর পেপার দেখছিলাম তখন পেছন থেকে হঠাৎ একটা সুন্দর কণ্ঠ শুনতে পাই, ‘হ্যালো!’
আমি পেছনে ঘুরতেই দেখি রাইয়ান। কিছুক্ষণের জন্য তো আমার মনেই হচ্ছিল আমি কোন স্বপ্ন দেখছি। পা মাটির সাথে জমে যাবার মতো অবস্থা। রাইয়ান আমার পড়ে যাওয়া রুমালটা আমার দিকে বারিয়ে দিলো। আমি হাত বাড়িয়ে নিলাম। তারপর রাইয়ান চলে গেলো। আর আমি তখনও হা হয়ে দাঁড়িয়ে। নিজের কানকে আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে সত্যিই সেখানে রাইয়ানের কণ্ঠস্বরই পৌঁছেছে। সামান্য একটা ‘হ্যালো’ শব্দও কতোটা সুন্দর শোনায়। আজ থেকে আমার প্রিয় শব্দই ‘হ্যালো।’ হ্যালো! হ্যালো! হ্যালো! হি হি হি!’
কষ্টের মধ্যেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমি আরো এক জায়গার পৃষ্ঠা মেলে ধরলাম। সেখানে লেখা, ‘আজকে রাইয়ান বাস্কেটবল খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়েছে। কত আনন্দ নিয়ে স্টেডিয়ামে রাইয়ানের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রাইয়ান যখন মুখ থুবড়ে মাঠে পড়ে গেলো আমার কি যে কষ্ট লাগলো! গোড়ালি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল রাইয়ানের। না জানি রাইয়ানের কতো ব্যাথা লাগছিল! ম্যাচটা যদিও তারা জিতেছে তবুও অন্যদিনের মতো কোন আনন্দ লাগলো না। বারবার রাইয়ানের আঘাতটাই মনে আসছিল। খুবই খারাপ লাগছে আমার। আল্লাহ, প্লিজ তাড়াতাড়ি রাইয়ানের ব্যাথাটা কমিয়ে দিও!’
আমি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম। সব জায়গাতেই আমাকে নিয়েই লেখা। লেখাগুলো পড়তে পড়তে কখনো আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো, কখনো চোখ ছলছল করতে লাগলো। প্রতিটা পাতায় পাতায় আমার প্রতি হৃদির প্রগাঢ় ভালোবাসার ছাপ। আমি জানতাম হৃদি আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু সেই পছন্দের মাত্রা অতিক্রম করে হৃদির ভালোবাসার গভীরতা আজ আমি পুরোপুরি উপলব্ধি করলাম। আমাকে তার চৌদ্দ বছর বয়সে প্রথম দেখা, সেখান থেকে ভালোবাসা, আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করা, সাড়ে আট বছর ধরে লুকিয়ে ভালোবেসে যাওয়া… সবকিছু সেই ডায়েরি থেকেই জানতে পারলাম আমি। ডায়েরিটি পড়তে পড়তে আমার চোখে পানি চলে এলো। অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম আমি। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো বারবার। তবুও সেভাবেই পড়তে থাকলাম। কখনও না কান্না করা আমি আজ একদিনেই যেন সারা জীবনের অশ্রু ঝরিয়ে দিলাম। হৃদি আমার জন্য এই পর্যন্ত যা যা করেছে সেই সব দৃশ্য আমার চোখে ভাসতে লাগলো। আমার কোন খুশিই সে বাদ রাখেনি। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমার বাবাকেও পর্যন্ত এনে দিয়েছে আমার কাছে। কেউ কাউকে এতোটা ভালো কিভাবে বাসতে পারে? এই পৃথিবীর সবথেকে ভাগ্যবান মানুষ হয়েও, এতোটা নিখাদ ভালোবাসা পেয়েও আমি সেটা ধরে রাখতে পারলাম না। আমি কি করে না বুঝে পারলাম! কি করে এতদিন হৃদিকে না ভালোবেসে পারলাম! নিজের অনুভূতি উপলব্ধি করতে আমার এতোটা দেরি কি করে লেগে গেলো! আর যখন উপলব্ধি করতে পারলাম তখন হৃদি আমার পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ উধাও। হৃদিকে হারিয়েই আমি বুঝতে পারলাম হৃদি আমার জন্য আসলে কি ছিল। আমার নিজস্ব জগতের কতটুকু সে দখল করে ছিল। যার চলে যাওয়ায় এখন আমি সম্পূর্ণ শূন্য। সম্পূর্ণ নিঃস্ব। যাকে আমি নিজের জন্য পারফেক্ট না ভেবে এমনটা করেছিলাম আজ আমি উপলব্ধি করলাম আমি নিজেই তার অযোগ্য। আমি পরাজিত। আমি ব্যর্থ!
আমি পুনরায় ধীরে ধীরে হৃদির রুমে ফিরে গেলাম। আমার চোখে যেন ভাসতে লাগলো একটি কিশোরী মেয়ের প্রথম প্রেমে পড়ার প্রতিচ্ছবি। আমি যেন দেখতে লাগলাম কিভাবে হৃদি উৎসুক হয়ে এই জানালা দিয়ে আমার জানালার পানে তাকিয়ে থাকতো। কিভাবে হৃদি আমার ছবিগুলো এখানে লাগাতো। কিভাবে অনুভূতি নিয়ে সে এই ডায়েরিটা লিখতো। আমি বিছানায় বসলাম। সেখানেও যেন হৃদির স্পর্শ। বুকটা হাহাকার করতে লাগলো আমার। হৃদির ছবি বুকে জড়িয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আমি হৃদির ঘরে হৃদির বিছানাতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে হঠাৎ চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম হৃদি আমার পাশে বসে আছে। আমি ব্যাকুল হয়ে অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলাম, ‘হৃদি!’
চলবে,