#উষাকালে_ঊর্মিমালা
#পর্ব_০৫
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
শীতের মৌসুম চললেও তেমন একটা শীত পড়েনি। আজ হুট করেই শীতল বাতাস বইছে। কুয়াশার চাদরে সূর্যকরোজ্জ্বল দিবস ভাঁটা পড়লো। পরিপাটি কক্ষের কোথাও ধূলোময়লার আস্তরণ নেই। শামীম বেশ পরিপাটি থাকতেই পছন্দ করে। উষাও তার বিপরীত নয়। বাড়ির অন্যান্য কাজে মায়ের সাথে হাত না লাগালেও ঘরদোর, আসবাবপত্র পরিচ্ছন্ন, গুছিয়ে রাখার কাজ দিব্যি করে নিতো।
শীতল কক্ষ জুড়ে ঠান্ডা একটা ভাব। প্রতিটি কোণে অপার নিরবতা। শামীমের কয়েকটা শার্ট আয়রন করতে গিয়ে রাহাতের ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামানোর চেষ্টা করলো। তার বেখেয়ালিপনায় একটা শার্টের পিঠের দিক আংশিক পুড়ে গেল। দ্রুত শার্ট সরাতে গিয়ে হাতেও খানিকটা তাপ লাগলো। ভালো শার্টগুলোর সাথে পুড়ে যাওয়া শার্টিও গুছিয়ে রাখলো সে। শার্ট রেখে পেছন ঘুরতেই তাকে চমকে দিল শামীম। অফিস শেষে আজ দ্রুতই ফিরেছে সে। ভাবনার অতল গহ্বর থেকে বের করে আনার উদ্দেশ্য আলতো হেসে পেলব কন্ঠে শুধালো,
-“তৈরি হয়ে নাও। আমরা এখন বের হবো।”
উষার কৌতূহলী স্বর,
-“কোথায়?”
শামীম চওড়া হেসে জবাব দিলো,
-“ভুলে গেলে গতকাল কী বলেছিলাম? আমার শশুর বাড়ি যাবো।”
আঁধার ডিঙিয়ে আলো ফোঁটার ন্যায় উষার অধরে হাসি ফোটে উঠলো। ঝটপট তৈরি হতে নেমে পড়লো। শামীম ফ্রেশ হয়ে এসে শার্টের ভাঁজে হাত রাখলো। কাকতালীয়ভাবে সেই পুড়ে যাওয়া শার্টই তার হাতে পড়লো। বেখেয়ালি ভাবে উষাকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে পুড়ে যাওয়া অংশ চোখে পড়লোনা। সম্পুর্ণ তৈরি হয়ে শামীমের পেছনে এসে দাঁড়ালো উষা। তার চোখ পড়লো শামীমের পিঠে। পুড়ে যাওয়া অংশে সুন্দরভাবে স্যান্ডো গেঞ্জি দেখা যাচ্ছে। উষা মুখ চেপে হেসে চুপিচুপি ফোন হাতে একটা ছবি তুলে নিলো। শামীমের কপালে ভাঁজ পড়লো। সূক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“হাসছো কেন?”
এতক্ষণ যাবত চেপে রাখি হাসি দমফাটা হয়ে উপচে পড়লো। খাটের উপর কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে হাসলো। শামীম কন্ঠে জোর প্রয়োগ করে বলল,
-“আশ্চর্য! বলছোনা কেন, কি হয়েছে?”
উষা নিরবে ফোনের স্ক্রিন তুলে ধরলো। শামীমের চোখ চড়কগাছ। ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের পিঠ দেখতে গিয়েও ব্যর্থ হলো। দ্রুত শার্ট খুলে বলল,
-“এমন পুড়লো কিভাবে?”
উষা অপ্রস্তুত হাসলো। সন্দেহ হলো শামীমের। সন্দিগ্ধ গলায় বলল,
-“তুমিই পুড়িয়েছো, ইচ্ছে করে?”
-“ইচ্ছে করে না, বোয়ালখালি পুড়েছে। তবে ইচ্ছে করেই গুছিয়ে রেখেছিলাম।”
-“এখন তুমি আমাকে এমন একটা শার্ট কিনে দেবে।”
-“আচ্ছা, আমার হাজবেন্ড হাতে বেতন পেলেই আপনাকে নিয়ে শপিং এ যাবো। অনেক শপিং করবো। সে কিন্তু মোটেও কিপটে নয়।”
দৃষ্টি ছোট করে বেশ কিছুক্ষণ উষার অভিনয় দক্ষতা দেখে শামীমও হেসে ফেললো। অভিযোগ তুলে নিয়ে বলল,
-“থাক আপনার আর শার্ট কিনে দিতে হবেনা। আমি বুঝে ফেলেছি আপনারা উদার মনের দম্পতি।”
-“এখন তাড়াতাড়ি শার্ট চেঞ্জ করে আসুন। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
শামীম যাওয়ার আগে মায়ের কাছে বলে গেলো। প্রতিত্তোরে তিনি মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
-“আমার কথার কোন দাম আছে না-কি? আমার কাছে বলে না গেলেই বা কী?”
★★★
বাবার বাড়ি পৌঁছাতেই মা এসে দরজা খুলে দিলেন। এসময় বাবা ও বাসায় থাকেন। উষাকে দেখে মা অভিমানে কথা বললেন না। পাশ থেকে শামীম সালাম দিলে তার সাথে বেশ হাসিমুখেই কথা বললেন। উষা কিছু না বলেই মায়ের উপর হামলে পড়লো। ভর রাখতে না পেরে এক প্রকার পড়েই যাচ্ছিলেন উষার মা। উষা ছাড়তে নারাজ।
মা খানিকটা রাগত স্বরে বললেন,
-” সব যখন নিজের মর্জি মতোই করিস, তখন আমাদের আর কী দরকার?”
-“ক্ষমা করে দাও না, মা। আমি আর কখনো এমন করবো না।”
-“যা করার তা তো করেই ফেলেছিস। করার আর বাকি আছে কী?”
-“তুমি আমায় ক্ষমা না করলে আজ শক্ত করে চেপে ধরেই রাখবো। এক পা ও নড়তে দেবোনা। আচ্ছা আমি যদি এখন ম*রে যাই, তখন কি এই ভেবে তোমার আফসোস হবেনা? কেন মেয়েটাকে ক্ষমা করলাম না?”
মা ধ*ম*কে উঠে বললেন,
-“এসব নাটক বাজি ছাড়। উল্টোপাল্টা কথা বললে মা*র*বো এক চ*ড়।”
উষা গাল এগিয়ে দিলো।
-“মা*র, তবুও যদি তোমার রাগটা একটু কমে।”
-“জামাইকে নিয়ে ভেতরে আয়।”
রাগ কমলো কি-না বোঝা গেলনা। তবে শামীমকে পাশে দেখেই হয়তো মা কথা বাড়াতে চাইলেন না।
শামীম গিয়ে মোস্তফা সাহেবের সাথেই বসলো। আলাপচারিতা ভালোই চললো। যখনই উষা সামনে এলো, তখনই মোস্তফা সাহেবের মুখ থমথমে হয়ে গেলো। তিনিও মেয়ের সাথে কথা বললেন না।
উষা প্রথমেই বাবার সাথে কথা বললো না। ভাবি আর আপুর সাথে দেখা করেই বাবার কাছে গেলো।
-“কেমন আছো বাবা?”
মোস্তফা সাহেব জবাব দিলেন না। উষা বুঝলো ঝোঁকের মাথায় বাবাকে অনেকটা আ*ঘা*ত দিয়ে ফেলেছে। কাঁপা স্বরে আবারও ডাকলো,
-“বাবা!”
এবার ও কোন জবাব এলোনা। শত ভুল করলেও বাবা কোনদিন উষার সাথে কথা না বলে থাকতেন না। আজ নিজের কর্মফল হিসেবে বাবার কাছ থেকে অবহেলা পেয়ে নয়ন জোড়া জলে চিকচিক করে উঠলো। মিইয়ে যাওয়া স্বরে আবারও বলল,
-“আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না, বাবা?”
মোস্তফা সাহেবের এত নিশ্চুপ অবস্থা দেখে এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো উষা। বাবার পা জড়িয়ে অনবরত কেঁদেই চলেছে।
মোস্তফা সাহেব তুলে দাঁড় করালেন উষাকে। মেয়ের জলভরা চোখে তাকিয়ে বললেন,
-“কষ্ট হচ্ছে, মা? এমন কষ্ট আমি আর তোমার মা ও পেয়েছি। সেদিন নিজেকে কতটা ছোট মনে হয়েছে, জানো? মনে হয়েছে আমি সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আগে ভাবতাম আশিকই বুঝি বারবার আমার অসম্মানের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু সেদিন তুমি আমার ধারণাটি ভেঙে দিলে। তোমাকে আমরা সঠিক -ভুল শেখাতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে ঊর্মিটাকেই বোধহয় সুশিক্ষা দিতে পেরেছি।”
শামীম পাশেই ছিলো। যে কথাগুলো সে উষাকে বলতে পারেনি। সে কথাগুলো মোস্তফা সাহেব বলে দিলেন। কথাগুলো উষার জন্য প্রয়োজন ছিলো। শামীম বললে হয়তো সে উল্টো বুঝে হিতে বিপরীত হতো। হয়তো বাবার বলা কথাগুলো একটু হলেও আমলে নেওয়ার চেষ্টা করবে।
বাবার চোখের দিকে তাকানোর সাহস পেলোনা উষা। সেদিন কিভাবে সে দুঃসাহসিকতা দেখালো? বাবা কষ্ট না পেলে কখনোই কথাগুলো তাকে বলতো না।
ফ্লোরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে রইলো। মোস্তফা সাহেব শান্ত স্বরে বললেন,
-“দ্বিতীয়বার তোমার কাছে প্রত্যাশা করছি, তুমি আর এমন অ*ন্যায় কাজ করবেনা।”
তানজিনা এসে উষাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো। উষার মা শামীমের নাস্তার ব্যবস্থা করলেন। সে গিয়ে একবার ঊর্মি ঘরে নক করে দেখা করে নিলো। ঊর্মি জিজ্ঞেস করলো,
-“উষা আপনার সাথে খা*রা*প ব্যবহার করেছে, তাইনা?”
শামীম আলতো হেসে বলল,
-“ও তো রা*গ হলে সবার সাথেই এমন করে। এখন আর এমন করবেনা।”
-“ও’কে মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে আপনার। তবুও অনুরোধ করবো বুঝিয়ে – মানিয়ে নিতে।”
-“চিন্তা করবেন না ভাবি। ও নিজেকে উপর দিয়ে যতটা খা*রা*প বা কঠোর দেখায়, তেমনটা ও নয়। ওর স্বভাব হলো একরোখা। নিজে যা বুঝবে সেটাই সঠিক, বাকিসব ভুল। ওর ভেতর একটু খানি পরিপূর্ণতা দরকার৷ বয়স হলেও নিজের ভেতর পরিপূর্ণতা আনতে পারেনি।”
ঊর্মির ভেতরটা অনেকটাই হালকা হলো। এমনিতেও সে জানতো শামীম বুঝদার ছেলে। এখন অনেকখানিই স্বস্তি পেল।
★★★
উষা চোখেমুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে নিজের ঘরে বসে রইলো। শামীম পাশে এসে বসলো। কোমল স্বরে বলল,
-“তুমি আজ থাকো। কাল অফিস শেষে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।”
উষা আনমনেই বলে দিলো,
-“নিতে আসতে হবেনা। আমি আর যাবো না আপনাদের বাসায়। শুধু শুধুই আমার জে*দে*র জন্য সব অ*শান্তি সৃষ্টি হলো।”
শামীম আলতো হাতে নিজের সাথে উষাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
-“বিয়ে করেছো নিজের ইচ্ছেতে, দূরে যাবে আমার ইচ্ছেতে। বাবার কথায় মন খা*রা*প করোনা। তিনি ভালোর জন্যই তোমাকে বোঝালেন।”
উষা নিরব রইলো। প্রতিত্তোর করলোনা। সবাইকে বলেই বেরিয়ে পড়লো শামীম। কেউ ছাড়তে না চাইলেও অফিসের কথা বলেই বেরিয়ে পড়লো। আসার পূর্বে অবশ্য রাতের খাবার খেয়ে এসেছে। নয়তো উষার মা বের হতে দিতেন না।
শামীম যাওয়ার পর যখন সবাই রাতের খাবারে একসাথে বসলো, তখনই আশিকের মুখোমুখি হলো উষা। দু’বছর যাবত একে অপরের সাথে কথা বলেনা।
ছোটবেলা থেকেই ভাইয়ের সাথে উষার সম্পর্ক ভালো ছিলোনা। রাস্তাঘাটে, স্কুলে-কলেজে যাওয়ার সময় প্রায়শই তাকে বখাটেদের সাথে মিশতে দেখা যেত। বাবা – মায়ের অগোচরে সিগারেট ফুঁকত। তার বন্ধু ছিল তারা, যাদের নে*শা*দ্র*ব্য স্পর্শ করার দায়ে দুদিন পরপরই পুলিশ ধরে নিয়ে যেত। বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে উষার চেয়ে বড় মেয়েদের বিরক্ত করতো। ভাইয়ের এসব স্বভাব তার কোন কালেই পছন্দ ছিলো না। তাই মাঝেমাঝেই বাবার কানে আশিকের ব্যাপারগুলো তুলে ধরতো।
মোস্তফা সাহেব কিছু বছর আগে পর্যন্ত ছেলেকে পি*টি*য়ে*ছে*ন। শুধু উষা নয়, প্রায় সময় লোকেরা তার কানে আশিকের ব*খা*টে*প*না তুলে ধরতো।
বাবার কাছ থেকে শাসন পেয়ে উষাকে শাসাত আশিক। ছোটবেলায় ভ*য় পেলেও ধীরে ধীরে উষার ভ*য় কে*টে একসময় ঘৃ*ণা*র জন্ম নিলো।
ঊর্মির একটা ভিন্নধর্মী বান্ধবীকে পছন্দ করতো আশিক। ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে দু’পরিবার রাজি থাকা দূরের ব্যাপার, ঊর্মির বান্ধবী নিজেই কখনো তাদের পরিণয় চাইতো না। ঊর্মির বান্ধবীকে বিয়ে করতে না পেরে আশিক পণ করলো এর চেয়ে সুন্দরী মেয়ে সে বিয়ে করবে।
মোস্তফা সাহেব ভাবলেন বিয়ে দিলে ছেলে যদি ঠিক হয়। অনেক মেয়ে দেখে আশিক তানজিনাকে পছন্দ করলো। বিয়ের ছয়-সাত মাস পর্যন্ত সব ভালো চলতে থাকলো। মোস্তফা সাহেব স্বস্তি পেলেন এই ভেবে যে, ছেলে শুধরে গিয়েছে।
সমস্যা দেখা দিলো প্রায় সাত মাস পর। রাতে দেরি করে বাসায় ফিরতো আশিক। যেদিন তাড়াতাড়ি ফিরতো, সেদিন আবার বন্ধুদের ফোন পেয়ে বেরিয়ে যেত। জু*য়া*য় বসে অনেক টাকা ঋণ কর তানজিনার কাছে অনুনয় করলো। বাবা যাতে না জানতে পারে এসব বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে তানজিনার গয়না বিক্রি করে ঋণ শোধ করলো। কয়েকদিন ঠিকঠাক চলার পর আবার তার পূর্বের হালচাল দেখে শশুর শাশুড়ীকে জানাতে বাধ্য হলো তানজিনা। সেদিন আবার ও বাবা আশিকের গায়ে হাত তুললেন।
দুদিনপর মা নানার বাড়ি গেলেন। ঊর্মি-উষা দুজনই পড়াশোনার কাজে কলেজ ছিলো। বাবাও তার রড-সিমেন্ট এর ব্যাবসায় বাজারে ছিলেন।
বাড়ি ছিলো ফাঁকা। সেদিনও আশিকের কাজে বাঁধা দেওয়ায় দুজনের মধ্যে ত*র্কা*ত*র্কি শুরু হয়। দুদিন আগের ক্ষোভ ধরে রেখে প্রথমবার তানজিনার গা*য়ে হাত তুললো আশিক। কলেজ থেকে সবার আগে উষা বাড়ি ফিরলো। তানজিনাকে মা*র*তে দেখে ব্যাগ ফে*লেই দৌঁড়ে এলো সে। আশিকের কাছ থেকে তানজিনাকে ছাড়াতে না পেরে দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়লো। টেবিল থেকে কাঁচের গ্লাস নিয়ে ছুঁ*ড়ে মা*র*লো আশিকের উপর। আশিক মাথায় আ*ঘা*ত পেয়ে ছিটকে পড়ে। তানজিনাকে দ্রুত নিজের ঘরে নিয়ে দরজা আটকে বাবাকে ফোন করলো উষা।
সেদিন বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হলো আশিককে। উষা তানজিনাকে পরামর্শ দিলো,
-“তুমি চলে যাও ভাবি। তোমাদের কোন বাচ্চা ও নেই, যার টা*নে এই অ*মা*নু*ষে*র সাথে থেকে যাবে। নিজের ভবিষ্যত নষ্ট করো না। বাবা তোমার পড়ালেখার খরচ দেবে, তুমি ভর্তি হয়ে যেও।”
তানজিনা গেলোনা। তার বাবা নেই। মায়ের ঘাড়ে আরও দুটো বোন অবিবাহিত। সমাজ ডিভোর্সি মেয়েদের ভালো নজরে দেখেনা। তার সাথে সাথে মা বোনের জীবন ও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
আশিক ফোন দিয়ে বারবার অনুনয় করে ক্ষমা চাইতো তানজিনার কাছে। বলতো ‘সে ভালো হয়ে যাবে।
গলে গিয়ে তানজিনা শশুরকে অনুরোধ করলো আশিককে বাড়িতে জায়গা দিতে। সে স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকতে চায়।
তানজিনার অনুরোধ রাখলেন ঠিকই, কিন্তু এবার আর ভুল করলেন না মোস্তফা সাহেব। স্ট্যাম্প এ স্বাক্ষর নিয়ে বাড়িতে জায়গা দিলেন আশিককে। সেই থেকেই উষা আশিকের সাথে কথা বলেনা।
দু’বছর যাবত যদিও আশিক ঠিকঠাকমতো চলাফেরা করছে, তবুও সেদিন ঊর্মির কাছে জমা টাকা দেখে জমি কেনার কথা বলে ফেললো। সেটা অবশ্য মোস্তফা সাহেবের ধমকে দমে গিয়েছে। তবুও উষা এখনো বিশ্বাস করতে পারেনা নিজের ভাইকে।
খাবার টেবিলে আশিক বেশ কয়েকবার বোনের দিকে তাকালেও উষা এখনো ঘৃ*ণি*ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আজ নিজের দৃষ্টিতে নিজেকেই নিকৃষ্ট মনে হলো আশিকের। দৃষ্টি নামিয়ে খাওয়া শেষ করলো।
★★★
উষাকে নিয়ে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরলো শামীম। রাহাত বাড়িতে ছিলো। তার সাথে কথা বলা প্রয়োজন মনে করে রাহাতকে ডেকেই ছাদে গেলো সে।
ভাইয়ের মুখোমুখি হয়ে কাঠকাঠ সুরে শামীম বলল,
-“তোমার সাথে আমার এই কয়েকদিন কথা বলার সুযোগ হয়নি। আচ্ছা একটা কথা বলো তো আমায়। তুমি কি আদোও ভাবিকে ভালোবাসেছো?”
অসহায় দৃষ্টি রাহাতের। জবাব দিতে গিয়েও শুধু দীর্ঘশ্বাস ফে*ল*ল।
শামীম আবার ও বলল,
-“তোমার কারণে আমি প্রবলেম ফেইস করছি। অফিস করে বাসায় ফিরলেই মা, উষা দুজনের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। দিনদিন মানসিক শান্তি হারিয়ে যাচ্ছে।”
রাহাত অম্লানবদনে বলল,
-“মায়ের কথা শুনে আমার মতো ভুল করিস না। আগে নিজের বিবেকের কথা শুনিস।”
কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো শামীমের। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে বলল,
-“মানে?”
#চলবে….