প্রিয়তার প্রণয়সন্ধ্যা পর্ব -০৪

#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৪

” আমি তোমাকে ভালোবাসি ঈশু, তুমি একদম চিন্তা করো না আমি দেখছি কি করা যায়। আমি কিছুতেই তোমাকে আমার কাছে থেকে হারিয়ে যেতে দেব না।”

ফোনের ওপাশে কারো সান্ত্বনায় কান্নায় ভেঙে পড়ে ঈশিতা। কান্না করতে করতে নাক আটকে আসছে তার। দমবন্ধ হয়ে আসছে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।
ওপাশ থেকে কেউ কান্না করতে বারবার নিষেধ করছে তবুও যেন ঈশিতার কান্না বাঁধ মানতে চাইছে না।

” তুমি চিন্তা করো না, আমি প্লেনের টিকিট কেটেছি, এ সপ্তাহের মধ্যে চলে আসছি। ” (ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তি)

” আমিও ইয়াশ ভাইয়ার সাথে কথা বলবো এ ব্যাপারে। ”

” তুমি যদি উনাকে বুঝিয়ে বলতে পারো, তাহলে তার সাথে একা দেখা করে কথা বলো, দেখো পরিস্থিতি খানিক’টা সামলে নিতে পারো কি না।”

” আমি আজকেই কল দেব উনাকে, আগামীকাল দেখা করতে বলব।”

ঈশিতা কথা বলে কিছুক্ষণ পর ফোনটা রেখে দেয়। সে এতক্ষণ কথা বলছিল তার প্রেমিক আবিরের সাথে। আবির বাহিরের দেশে পড়াশোনা শেষ করে সেখানে ভালো একটা জব পেয়েছে তিনমাস যাবৎ। ঈশিতা ভেবেছিল আবির বছরখানেক জব করলে বাসায় তার ব্যাপারটা জানাবে কিন্তু বাড়িতে অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় সে আর রিস্ক নিতে চায় না। ভালোবাসার মানুষকে কে ছেড়ে দিতে চায়! যারা ছেড়ে যায় তারা হয়তো কখনো ভালোইবাসে নি বা ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি।
______

গাড়ি এসে প্রিয়তাদের বাড়ির সামনে থামে। প্রিয়তা সারা রাস্তা অন্যমনস্ক ছিল, একটা কথা বলে নি ইয়াশের সাথে। ইয়াশ এমনিতেও সবার সাথে বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না তার জন্য চুপচাপ পরিবেশই ইয়াশের জন্য ভালো। কিন্তু প্রিয়তা অনেক বেশি কথা বলে সেজন্য এই চুপচাপ পরিবেশটা একটু অন্যরকমই লেগেছে। বাড়ির সব ভাই-বোনেরা এক হলে এই মেয়েটা বেশি কথা বলে, অট্টহাসিতে যেন তার উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়। কতবার ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে তাকে! ইয়াশ গাড়ি থামিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই বলে, ” কি রে নামবি না? নাকি এখানে এভাবেই বসে থাকবি?”

ইয়াশের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে প্রিয়তা। এতক্ষণ তার মন কোথায় পড়ে ছিল কে জানে!

” হ্যাঁ! কিছু বললেন আমাকে?” ( প্রিয়তা)

” বললাম বাড়ি তো চলে এসেছিস, নামবি না?”

” ওহ চলে এসেছি এত তাড়াতাড়ি! ”

” হ্যাঁ চলে এসেছিস, যা বাসায় যা। আর শোন যেভাবে দিন কাটাচ্ছিস এভাবে কাটালে কবে দিন শেষ হয়ে যাবে বুঝতেই পারবি না আফসোস করতে হবে। ”

” কিসের আফসোস? ”

” এই যে আমাদের কেন দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে আর আমরা কি করছি! তুই কি জানিস এই যে তুই যেভাবে চলাচল করিস এটা ঠিক না? ”

” আমি শালীনভাবেই চলাচল করি তো।”

” চলাচল তিন ধরণের শালীন, অশালীন, আর পর্দার সহিত চলাচল। বাড়িতে মাহরামের সামনে শালীন আর নন-মাহরাম, বাহিরের জন্য পর্দা। তুই যে এভাবে বের হয়েছিস তোর ও গুনাহ, যে তোকে দেখবে তার ও গুনাহ। একটা ভালো, ইমানদার কোন ছেলেই কিন্তু এরকম স্ত্রী চাইবে না। ”

” আমার আপু তো আমার চেয়েও আরও এক কাঠি ওপরে। তাহলে তাকে কেন বিয়ে করছেন? আপনার সাথে তো আপুর কোনভাবেই যায় না। ”

” এখানে আমার পরিবার জড়িত, আর নিজের ওপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে আমি আমার স্ত্রীকে ঠিক করে নিতে পারব। তুই আমার অনেক ছোট, আমার ছোট বোনের সমবয়সী, দশ থেকে এগারো বছরের ছোট তো হবিই, তুই ছোট আমার তোকে শাসন করার অধিকার আমার আছে।”

” হুম।”

” তোর তো আমার সামনে আসাও ঠিক না।” ( ইয়াশ)

” কেন ঠিক না?”

” কারণ আমি পরপুরুষ। যদিও তুই আমার মামাতো বোন, তবুও নিজের বোন তো আর না!”

” ওহ আচ্ছা ঠিক আছে আর সামনে আসব না।”

” তোর বয়স কম হলেও ভালো বুঝিস, ধর্মীয় জ্ঞান অনেক কম তোর। পরেরবার আমাদের বাসায় গেলে আমার থেকে কিছু বই নিয়ে আসবি। দাঁড়া এখানেই একটা ভালো বই ছিল নিয়ে যা, পড়বি অবশ্যই । ”

ইয়াশ সামনেই একপাশে থাকা বইটা নিয়ে প্রিয়তাকে ধরিয়ে দেয়। প্রিয়তার এসময়ে কি বলা উচিৎ সে বুঝতে পারছে না। একে তো প্রিয় মানুষকে হারানো দহনে পুড়ছে আবার অন্যদিকে এসব জ্ঞান যেন তার সহ্য হচ্ছে না। তার অবস্থা এরকম যে, না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।
বইটা হাত থেকে নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যাবে এমন সময় মনে পড়ে অবনী তার চুড়ি পছন্দ করেছিল, বলেছিল দুইটার একটা যেন তাকে দেয়।
হাতে থাকা ছোট ব্যাগটাতেই চুড়ি ছিল। বের করে ইয়াশের দিকে বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু একটা না দুটোই। ইয়াশ কিছু বুঝতে না পেরে জানতে চায়,” এগুলো আমাকে কেন দিচ্ছিস?”

” অবনীর পছন্দ হয়েছিল, চুড়ি তো দুটো। সে বলেছিল একটা তাকে দিতে কিন্তু আমার মনে ছিল না দিয়ে আসার কথা। আপনি এটা সাথেই রাখুন, বাসায় গিয়ে ওকে দিয়ে দিবেন।”

” তুই এটা পছন্দ করে কিনেছিস না?”

” হ্যাঁ কিনেছিলাম।”

” এটা তোর কাছেই রেখে দে আমি ওকে কিনে দেব, পছন্দের জিনিস কাউকে দিতে নেই।”

” ভালোবাসার মানুষটাই নির্দ্বিধায় অনিচ্ছায় অন্যকাউকে দিয়ে দিতে হয় কখনো কখনো , পছন্দের জিনিস না হয় নিজের ইচ্ছেতে ভালোবেসেই দিলাম কাউকে, আমার পছন্দের জিনিসটা তারও যে পছন্দের। ”

” বুঝলাম না।”

” কিছু না, এটা রাখুন ওকে দিয়ে দিবেন। আমি আসছি, আসসালামু আলাইকুম।”

প্রিয়তা নিজেও আর কথা বাড়ায় না ইয়াশকেও কিছু বলতে না দিয়ে চুড়ি জোড়া সিটের ওপর রেখেই চলে যায়।

দরজায় দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজিয়েই যাচ্ছে প্রিয়তা। মিনিট দুয়েক পরেই ঈশিতা এসে দরজা খুলে দেয়। দরজায় প্রিয়তাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় ঈশিতা কারণ প্রিয়তা আসবে সেটা সে জানে না। প্রিয়তা কোন কথা না বলে ভেতরে প্রবেশ করে। ঈশিতা দরজা আটকে প্রিয়তার পিছু নেয়।

” কি রে তুই! বাসায় আসবি জানাস নি তো?”

ঈশিতার কথায় কোন জবাব না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়৷ ঈশিতাও প্রিয়তার রুমে চলে আসে। প্রিয়তা ততক্ষণে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে, খুব ক্লান্ত লাগছে নিজেকে। ঈশিতা এসে পাশে বসলো।
” কি রে কিছু হয়েছে তোর?” (ঈশিতা)

” নাহ, কি হবে আমার?”

” কোন কথা বললি না যে? একাই আসলি বাসায়?”

” কি কথা বলব? না জানিয়ে বিয়ে করে নিচ্ছো আমি আর কি বলব! তোমার হবু বর দিয়ে গেল বাসার সামনে অব্দি।” (প্রিয়তা)

” কি! ইয়াশ ভাই এসেছে? এখনও কি আছে বাহিরে? বাসায় আসলো না কেন, আসতে বলিস নি তাকে বাসায় আসতে! ”

” না বলি নি, বিয়ের দিনই আসুক একেবারে।”

” আজব মানুষ তুই প্রিয়, উনার সাথে আমার প্রয়োজনীয় কথা আছে।”

” সেটা আমাকে না বলে তাকে বলো।” ( প্রিয়তা)

” উনি কি চলে গেছেন?”

” দেখো গিয়ে, চলে গেছে নাকি তার হবু বউ তাকে দেখতে বের হবে বলে বাহিরে অপেক্ষা করছে কে জানে!”

ঈশিতা প্রিয়তার কথা কানে না নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় রুম থেকে যদি ইয়াশ কোনভাবে বাহিরে থাকে তাহলে তো মেঘ না চাইতেই জলের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ঈশিতার এমন তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া দেখে প্রিয়তা আবারও ভেঙে পড়ে। তার মানে ওদিকেও ইয়াশ রাজি এদিকে তার বোন ও রাজি! মাঝখানে শুধু সে একা একা কষ্ট পাচ্ছে। প্রিয়তা গিয়ে রুমের দরজা আটকে দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। সে নিজেই নিজেকে গতকাল থেকে একবারও আয়নায় দেখেনি, মুখের অবস্থা কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছে। ইয়াশের কথা মনে পড়তেই যেন বুকে ব্যথা করে ওঠে তার। চিৎকার করে কান্না করতে থাকে, আজকে প্রিয় মানুষ না হলেও চিৎকার করে কান্না করাটা তার হোক। সবাই চিৎকার করে কান্না করতে পারে না, নিজেকে হালকা করতে পারে না। কান্না করতে না পারলে যে বুক ভারি হয়ে অতলে গভীরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ঈশিতা তাড়াহুড়ো করে বাড়ির বাহিরে চলে আসে ইয়াশের সাথে দেখা করার জন্য কিন্তু ইয়াশ ততক্ষণে চলে গিয়েছে। ঈশিতা ফোনে থাকা সেভ করা নম্বর থেকে ইয়াশের নম্বর বের করে তাড়াতাড়ি করে কল দেয় কিন্তু দুই/ তিনবার কল দেওয়া সত্ত্বেও কল রিসিভ হয় না তার মানে ইয়াশ ড্রাইভ করার সময় ফোন সাইলেন্ট রেখেছে। ঈশিতা মন খারাপ করে বাসার ভেতরে চলে যায়।
ঈশিতা সোজা নিজের রুমে চলে যায়। তার বাবা-মা আজ বাসায় নেই, দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বের হয়েছে বিয়ের কেনাকাটা করতে। সামনের শুক্রবারেই বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে সবাই। আর মাত্র তিনদিন হাতে সময় আছে অথচ আবিরের দেশে আসতে সপ্তাহখানেক বা তার বেশি সময় লাগবে। এই পরিস্থিতিতে ইয়াশের সাথে কথা বলা ছাড়া উপায় নেই কারণ সেদিন ওরকম করে কথা বলায় তার বাবা একদম বেঁকে বসেছে তার কোন কথাই শুনছে না। ঈশিতার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে, ইয়াশের সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা বলতে হবে। ইয়াশই একমাত্র ব্যক্তি যে কি না সমস্যার সমাধান করতে পারবে। ঈশিতা বসে বসে ইয়াশের ফোনের অপেক্ষা করতে থাকে। ইয়াশ ফোন দিলেই সে দেখা করার কথা বলবে বলে ভেবে রাখে। ফোনটা পাশে রেখে বারবার তাকিয়ে দেখছে কিন্তু ফলাফল শূন্য।

চলবে………

সবাই লাইকটা দিয়ে রাখবেন আর একটু বেশি বেশি কমেন্ট করবেন যেন সকলের নিউজফিডে যায়।😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here