প্রিয়তার প্রণয়সন্ধ্যা পর্ব -০৫

#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৫

প্রিয়তা ফ্রেশ হয়ে এসে খাটের ওপর বসে পড়ে। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না, বাসায় কেউ নেই পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। দুপুরে সে ও বাড়ি থেকে খেয়েও আসতে পারে নি, গলা দিয়ে যেন খাবার নামা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে তার কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। বিছানার বালিশের দিকে চোখ গেলেই দেখে বই,বইটা হাতে নেয় সে। বইটা নেড়েচেড়ে দেখে, হ্যাঁ এই বইটাই তো ইয়াশ তখন তাকে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। বইয়ের নাম ‘চোখে দেখা কবরের আজাব।’ এখন তার ফোন ঘাটাঘাটিও করতে ইচ্ছে করছে না তার চেয়ে ভালো সে প্রিয়জনের বইটা পড়ুক। প্রিয়তা বালিশ উঁচু করে পিছনে হেলান দিয়ে বইটা পড়ে শুরু করে। একটা একটা করে ঘটনা পড়ছে আর একবার করে বই বন্ধ করে কি যেন ভাবছে তারপর আবার বই খুলে পড়া শুরু করছে। এভাবেই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বইটা পড়তে থাকে। তার আগ্রহ যেন বেড়েই চলেছে আর কি কি বিষয়ে লেখা আছে বইটায়! এতক্ষণে যেন সে বইটার ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। অর্ধেকের বেশিই প্রায় শেষ করে ফেলেছে সে।

দরজায় মায়ের গলা শুনে বইটা বন্ধ রেখে দরজা খুলে দেয় প্রিয়তা। মাকে অনেক দিন পর দেখে জড়িয়ে ধরে সে, কিছুক্ষণ পর উভয়ে নিজেদের ছাড়িয়ে নেয়।

” না জানিয়ে চলে আসলি যে?” ( মা,রমেলা)

” ভাবলাম তোমরা আমাকে না জানিয়ে আপুর বিয়ে ঠিক করে যেভাবে সারপ্রাইজ দিয়েছো ঠিক সেরকম আমিও তোমাদের না জানিয়ে চলে এসে সারপ্রাইজ দেই।”

” হ্যাঁ বুঝেছি এখন বল কি করছিলি?”

” ইয়াশ ভাই একটা বই দিয়েছে পড়ার জন্য ওটাই পড়ছিলাম।”

” কি বই?”

” প্রেমের বই দিয়েছে প্রেমিককে সুন্দর সুন্দর কথা বলা শিখতে।”

” আবার মজা…”

” মজা করলাম, সুন্দর একটা বই দিয়েছে, আমি পড়ে তোমাকেও দেব পড়ে দেখিও।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

” কোথায় গেছিলে তোমরা?”

” আমি আর তোর বাবা ঈশিতার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম। মনে শান্তি না থাকলে কি আর ভালো লাগে! রাতে আবার যেতে হবে কাজ হয় নি।”

” আপুর বিয়ে আর দুই তিনদিন পর, শান্তি নেই কেন মনে?”

” ঈশিতা বিয়েতে রাজি না।”

” কি!”

” হ্যাঁ, সে আগে কখনও বলে নি যে সে কারও সাথে সম্পর্ক ছিল এখন সে আমাকে বলছে বিয়ে কিছুতেই করবে না। সে নাকি অন্য কাউকে পছন্দ করে দুই সপ্তাহ সময় চাচ্ছে ছেলে দেশে নেই। আমি তোর বাবাকে বলার সাহসই পাচ্ছি না।

মিসেস রমেলার কথা শুনে এক মুহূর্তের মধ্যে প্রিয়তার মুখে হাসি ফুটে যায়। খুশিতে প্রিয়তার মুখটা চিকচিক করছে। মা যেন কিছু বুঝতে না পারে তাই তৎক্ষনাৎ মুখটা কালো করে ফেলে প্রিয়তা। প্রিয়তা মুখ মলিন করে তার মায়ের দিকে তাকায়।

” কি বলছো মা, ইশু আপু কাউকে পছন্দ করে এটা তো আমাদের কাউকে কখনো বলেনি! তুমি কি জানতে এ ব্যাপারে কিছু? আমি তো সারা বছর বাইরে থাকতাম না এ ব্যাপারে কিছু।”

” না আমাকে গতরাতে বলেছে, কিন্তু তোর বাবা যে পরিমাণে ক্ষেপে আছে ইশুর এসব কথা তো শুনি মেনে নেবেই না। মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করছে গতকাল থেকে। কি যে করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। ”

” আম্মু তোমার কিন্তু বাবার জিদ দেখার আগে তোমার মেয়ের ইচ্ছাটা পূরণ করা উচিত। তুমি বাবাকে বোঝাও, আপু যাকে পছন্দ করে সেও নিশ্চয়ই ভালো ছেলে! ভালো ছেলে না হলে আপু কেন তাকে পছন্দ করতে যাবে তাকে পাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করবে! আর আপু যেরকম মানুষ তার কথামতো কিছু না হলে বাসায় যা পরিবেশের সৃষ্টি করে আর এখন তো বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে সারা জীবনের ব্যাপার। আমার মনে হয় আপুর পাশে তোমার থাকা উচিত। আমি আপুর সাথে কথা বলছি বাবার সাথেও কথা বলবো প্রয়োজনে। ”

” মেয়ের যা মাথা গরম আমি তো ভয়ে আছি। একদিকে তোর বাবা কে ঈশিতা আমি পড়েছি মহাবিপদে। ”

” আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না আমি আপুর সাথে কথা বলি। ফুপির বাড়ি থেকে আসার পর একটু অসুস্থ অসুস্থ লাগছিল জন্য শুয়েছিলাম ফ্রেশ হয়ে। আর ইয়াশ ভাইয়া যে বইটা দিয়েছে এত ভালো ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। ”

” তুই-ই ভরসা, তোর কথা তোর বাবা শোনে। একটু বলিস তোর বাবাকে আমি তো ঈশুর কান্না আর দেখতে পারছি না রে মা। আল্লাহ আল্লাহ করে তোর বাবা মেনে গেলেই হয়, ইয়াশ ভালো ছেলে জানি কিন্তু ওর মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দেওয়া তো উচিৎ হবে না।”

” আচ্ছা মা তুমি যাও বিশ্রাম নাও, আমি আগে আপুর সাথে দেখা করি তারপর সময় বুঝে বাবার সাথে কথা বলব।”

আরও কিছুক্ষণ কথা চলে মা আর মেয়ের মধ্যে। প্রিয়তা মনে মনে খুশি হলেও আরেকটা দিক তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে বিষয়টা যদি অন্যদিকে চলে যায় তাহলে! তার বাবা যদি সত্যি সত্যি জোর করে ইয়াশের সাথে ঈশিতার বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে তো খুব খারাপ হয়ে যাবে। ইয়াশ বিষয়টা জানলে হয়তো বিয়ে থেকে পিছপা হতে পারে।

প্রিয়তার মা মিসেস রমেলা নিজেদের রুমের দিকে চলে গেলে প্রিয়তা এবার ঈশিতার রুমে প্রবেশ করে।
ঈশিতা তখন তার প্রেমিক আবিরের সাথে ফোনালাপ করছিল। রুমে প্রিয়তাকে দেখে ফোনটা মুহুর্তের মধ্যে রেখে দিয়ে চুপ করে বসে। প্রিয়তা এগিয়ে এসে ঈশিতার সামনাসামনি বসে। সে স্পষ্ট খেয়াল করে ঈশিতার চোখে পানি। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে প্রিয়তার দিকে তাকায় ঈশিতা।

” কিছু বলবি?” (ঈশিতা)

” হ্যাঁ বলব তো পরে আগে শুনতে এলাম।” (প্রিয়তা)

” কি শুনতে এলি?”

” এই যে তুমি কাউকে পছন্দ করো সেটা আগে কাউকে কেন বলো নি?”

” কে জানতো বাবা এমন আচরণ শুরু করবে?”

” তুমি ইয়াশ ভাইয়াকে নিয়ে যা তা বলেছো জন্যই তো বাবা এতটা ক্ষেপে গেছেন।”

” আমি ইয়াশ ভাইকে মানুষ হিসেবে অপছন্দ করি তা না, আমি একজনকে ভালোবাসি তাকে রেখে আমি অন্যকাউকে কীভাবে বিয়ে করব!”

” পছন্দ করো কাকে তুমি?”

” ওর নাম আবির, অনেক কষ্ট করে কানাডা গিয়েছে পাঁচবছর আগে ওখানে পড়া শেষ করে ভালো একটা জব পেয়েছে। আবির বলেছিল কয়েকমাস গেলে ও দেশে আসবে এসে বিয়ে করে আমাকে ওর সাথে নিয়ে যাবে।”

” আবির কে? আগে থেকে পরিচিত তোমার?”

” হ্যাঁ আমার কলেজ ফ্রেন্ড, সম্পর্ক বেশি দিনের না।”

” আচ্ছা বুঝলাম।”

” প্রিয়, তোর কথা তো বাবা শোনে প্লিজ তুই বাবাকে বল না আবিরকে যেন মেনে নেয়। উনি না মেনে নিলে তো আমাদের বিয়ে হবে না। ও সামনে সপ্তাহে দেশে আসছে শুধুমাত্র আমার জন্য।”

” বাবা মেনে না নিলে বিয়ে হবে না এটা তো খুব জানো, প্রেম করা যে বড় গুনাহ এটা জানো না?”

” জানি তো, ভুল হয়ে গেছে তার জন্য আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি আল্লাহর কাছে উনি তো সব ক্ষমা করে দেন। আবিরকে আমার জীবনে অনেক প্রয়োজন, ওকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না। তুই প্লিজ কিছু কর না আমাদের জন্য।”

” আগে ছেলের সাথে কথা বলা আমাকে।”

” ওকে কি বলবি?”

” কথা বলাবি না?”

” দাঁড়া দাঁড়া, কল দিচ্ছি ওকে।”

” ভিডিয়ো কল দিবি, আমি দেখব তাকে আগে তারপর সবকিছু।”

” ঠিক আছে।”

ঈশিতা আবিরকে পুনরায় কল দেয় সাথে সাথে ওপাশ থেকে কল রিসিভ হয়ে যায়। ওপাশের মানুষটাও এই একদিনে কেমন হয়ে গেছে। প্রিয় মানুষ একেই তো হাজার মাইল দূরে তার ওপর বিয়ের কথা তিনদিনের মধ্যে তাহলে তো খারাপ থাকার কথাই।
ঈশিতা কথা বলে জানিয়ে দেয় তার ছোট বোন প্রিয়তা কথা বলবে, আবির প্রথমে ইতস্ততবোধ করলেও পরে রাজি হয়ে যায় এটা ভেবে যে যদি কোন উপকার হয়।

ঈশিতা ফোনটা প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দেয়। ফোনটা সামনে নিয়েই প্রিয়তা প্রথমে সালাম দেয় ওপাশ থেকে আবিরও সালামের জবাব দেয়। প্রিয়তা এক নজর দেখেই বুঝে যায় উনিও খুব চিন্তায় আছেন, মুখের মলিন অবস্থা স্পষ্ট বলে দিচ্ছে রাতে হয়তো ঘুম হয় নি।

” কি অবস্থা ভাইয়া এখনই যদি চেহারার এই অবস্থা হয় তাহলে আমার বাবা তো বাড়ির জামাই হিসেবে আপনাকে পছন্দই করবে না। এমন চেহারা কেন বানিয়েছেন শুনি?”

” সেটা তো আপনার অজানা না, কেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা।”

” আমি আপনার অনেক ছোট সুতরাং তুমি করেই বলতে পারেন৷ আর শোনেন চিন্তার কোন কারণ নেই, প্রিয়তা আছে তার আপুর জন্য। আমি থাকতে কোন অঘটন ঘটবে না কথা দিলাম। তবে আপনাকেও একটা কথা দিতে হবে তবেই আমি আমার কাজ করব।”

” হ্যাঁ হ্যাঁ যেকোন মূল্যে আমি ঈশুকে চাই।”

” আপনাকে কথা দিতে হবে, আপনি এত ভালো বর হয়ে দেখাবেন যেন আমার বাবার আফসোস করে বলতে হয় যে ইশ এরকম একটা ছেলে হাতছাড়া করতে যাচ্ছিলাম। এই ছেলের মতো কেউ আমার মেয়েকে ভালো রাখতে পারতো না।”

” কথা দিলাম, আমার ভালোবাসাকে সবসময় আমি ভালো রাখব।”

এমন সময় ঈশিতার ফোনে ইয়াশের কল আসে, নেটওয়ার্কের সমস্যা হলে প্রিয়তা ইয়াশের কল কেটে দেয়। আবিরকে ভালোভাবে বুঝিয়ে ফোনটা কেটে দেয়।
প্রিয়তা এবার ঈশিতার কাছে জানতে চায় ইয়াশ কেন কল দিচ্ছে। ঈশিতা জানায় সে ভাবছে ইয়াশের সাথে দেখা করবে। প্রিয়তাও ভেবে দেখে সবকিছু মসৃণভাবে শেষ করতে ইয়াশের দিক থেকেই সবকিছু নিষেধ করতে হবে। নিজের ভাবনা অনুযায়ী প্রিয়তা ঈশিতাকে ফোন এগিয়ে দিয়ে কথা বলতে বলে। প্রিয়তা ঈশিতাকে জানিয়ে দেয় সে যেন ইয়াশকে কালকেই দেখা করতে বলে সন্ধ্যায়। ঈশিতাও ইয়াশকে চিন্তানুযায়ী কল দেয়। ওপাশ থেকে খুব তাড়াতাড়িই কল রিসিভ করে ইয়াশ।

” আসসালামু আলাইকুম। ” (ঈশিতা)

” ওয়ালাইকুমুস সালাম। ” (ইয়াশ)

সালামের জবাব দিতেই ঈশিতা প্রিয়তার দিকে তাকায়। কথা বলতে তার ভয় ভয় লাগছে পাশে থেকে প্রিয়তা সাহস যোগাচ্ছে।

” আমি ঈশিতা।”

” হ্যাঁ নম্বর সেভ আছে আমার কাছে।”

” আচ্ছা, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”

” হ্যাঁ শুনছি আমি। ”

” ফোনে না, দেখা করা যাবে আগামীকাল? সময় হবে আপনার?”

” আগামীকাল কখন?”

” বিকেলবেলা বা সন্ধ্যা আপনি যখন বলেন।”

” আচ্ছা বিকেলের শেষে সন্ধ্যার আগে দেখা করা যায়। বাই দ্যা ওয়ে কোন সমস্যা?” (ইয়াশ)

কথা বলতে গিয়ে ঈশিতা স্পষ্ট বুঝতে পারছে তার গলা কাঁপছে। তবুও সে নিজেকে সামলে নেয়, নিজের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে এটুকু সাহস করতেই হবে। নিজের জড়তা কাটিয়ে বলে, ” দেখা হলেই না হয় সব বলি! আমি আর প্রিয়তা আগামীকাল বের হচ্ছি তাহলে লোকেশন আপনাকে জানিয়ে দেব।”

ঈশিতা ফোন রাখার সাথে সাথে জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। মনে হলো বুকের ওপর থেকে ভারী কিছু নেমে গেল। পাশে থেকে প্রিয়তা কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে।
” থাকো চিন্তা করো না, আমি গিয়ে বইটা শেষ করি।” বলেই প্রিয়তা নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।

চলবে………
(আইডি রেস্ট্রিকটেড, শনিবারের আগে আর গল্প দিতে পারব না)
আজকে বেশি বেশি কমেন্ট চাই সবার কাছে।
যারা পড়বেন লাইকটা অন্তত দিয়ে রাখবেন, এই রিচ এ লেখার শক্তি হারিয়ে গিয়েছে বিশ্বাস করুন। এভাবে চললে কাহিনী সংক্ষেপ করে ফেলতে পারি😑

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here