#কল্পকুঞ্জে_কঙ্কাবতী
লেখনীতে: নবনীতা শেখ
|পর্ব ১৩|
বেলকনিতে রাখা বেতের চেয়ারে বসে আছেন কুঞ্জ ভাই। তাঁর ঠিক সামনের চেয়ারটিতে বসে আছি আমি। চোখে মুখে অবিশ্বাস্য ধরনের বিস্ময়। ভাগ্যিস, আমার হার্টটা যথেষ্ট স্ট্রং! নতুবা বিস্ময়ে অ্যানি টাইম অক্কা পেতাম।
কুঞ্জ ভাই আবারও আমার মুখের সামনে বিরিয়ানি তুলে ধরতেই আমি প্রতিবারের মতো হা করলাম। আর একটা যন্ত্রের মতোই চিবাতে লাগলাম। আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এই লোকটা মাঝ-রাতে হুট করে কীভাবে এলো? বাসায় কী করে ঢুকল? বিরিয়ানি, এই অসময়ে এখন কোথায় পেল?
উফফ! মাথা কেমন যেন ঘুরছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আবারও কুঞ্জ ভাই বিরিয়ানি মুখে পুরে দিলেন। আমি পাশ থেকে পানি দিয়ে এবার গটগট করে গিলে নিলাম। সঙ্গে একটা ছোট্ট ঢোক গিলে শুধালাম, “কেমনে কী?”
কুঞ্জ ভাই হয়তো হাসলেন। খুবই স্বল্প সময়ের জন্য, অল্প পরিসরের হাসি হাসলেন। ঠিকভাবে খেয়াল করার আগেই সেই হাসি মিলিয়ে ফেললেন। শান্ত ও বড্ড শীতল আওয়াজ তাঁর, “আমি কথা দিলে, তা রাখি।”
“তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু এর সাথে এখানে আসার সম্পর্ক কী?”
কুঞ্জ ভাই চোখের বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, “তুই বোধহয় ভুলে গেছিস, তুই একটা গাঁধি। উন্নতমানের গাঁধি।”
এতদিন পর কথা হলো। তার উপর আবার এমন অপমান! নাহ্! আমি মেনে নিতে পারলাম না। ইহা মানিয়া লইবার কথাও নহে। ওঁর করা অপমানে আমি নিদারুণ ভাবে অপমানিত বোধ করলাম। এক আকাশ সমান রাগ ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।
আমাকে খাওয়ার মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে কুঞ্জ ভাই ভ্রু-কুঁচকে ফেললেন। শীতল কণ্ঠটা বড্ড অধৈর্য শোনাল, “কী হয়েছে?”
আমি চাপা স্বরে বললাম, “আমার প্রশ্নের উত্তর দিন, নয়তো আমি চিৎকার করব।”
কুঞ্জ ভাই চকিতে বললেন, “চিৎকার করবি কেন?”
“বা রে! আপনি যদি কুঞ্জ ভাই না হয়ে অন্য কেউ হন, তখন?”
“আমি তোর কুঞ্জ ভাই হব না কেন?”
“আপনি আমার কুঞ্জ ভাই হবেনই বা কেন?”
“না হওয়ার কী স্পেসিফিক রিজন আছে?”
“হবারও তো কোনো সম্ভাবনা নেই।”
কুঞ্জ ভাই কিছুক্ষণ তাঁর সেই বিখ্যাত, আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বললাম, “আমার সব কুয়েশচনের অ্যানসর করতে হবে আপনাকে।”
কুঞ্জ ভাই ফোঁস করে একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন, “কুয়েশ্চন করতে থাক।”
আমি প্রশ্ন সাজিয়ে নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম, “এত রাতে আসার কারণ কী?”
কুঞ্জ ভাই বেশ নির্বিকার, “তুই আসতে বলেছিস।”
আমি কিছুটা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, “কখন?”
“নোটিফিকেশন প্যানেল থেকে তোর আনসেন্ট করা মেসেজ দেখেছি।”
কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলাম। মুহূর্তেই লজ্জায় মিইয়ে গেলাম। মানে, উনি সব জেনে গেছেন! এবার?
আমার ভাবনার মাঝেই কুঞ্জ ভাই বললেন, “টাইম কম। না থেমে কুয়েশচন কর।”
“ওকে, ওকে। এত রাতে না এসে সকালেও আসতে পারতেন।”
“এটা কুয়েশচন ছিল?”
আমি থতমত খেয়ে বললাম, “না, আসলে… উম… এখন এলেন কেন?”
কুঞ্জ ভাই সামান্য হেসে ওঁর রাশভারী কণ্ঠেই বললেন, “কারণ তুই এখন ডেকেছিস।”
আমি কিছুক্ষণ আবারও হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। লোকটা পাগল? আমি বলেছি বলেই এত রাতে আসার কোনো মানে আছে? আমি তো পাগল। সবাই জানে, নবু ইজ দ্যা টপ ‘পাগল’ ইন দ্যা হোল ইউনিভার্স। তবুও কেন আমার পাগলামিতে সায় দিচ্ছেন উনি? ওয়েট! ভালো-টালো বেসে ফেলেননি তো আবার!
আমার বিস্ময়-সূচক দৃষ্টিতে যেন উনি নির্বিকার ভাব দেখাতেই পছন্দ করলেন। এরকম শান্ত মানুষ তো কুঞ্জ ভাই আমার সামনে না। আমার কুঞ্জ ভাই তো আমার সামনে পুরোই এক অসভ্য। অসভ্য টু দ্যা পাওয়ার ইনফিনিটি। একটা বলদ, যাচ্ছে তাই করে যাওয়া এক ছাগল। স্পর্শ করলেই মান-ইজ্জতের ভয়ে প্রায় কেঁদে দেওয়া টাইপের একটা বজ্জাত।
কিন্তু… আমার সামনের জন তো কুঞ্জ ভাই নন। এটা নিশ্চয়ই ভূত। মুহূর্তেই আমার আজন্ম ফোবিয়া আমাকে টুপ করে চেপে ধরল। এই ফোবিয়াটির নাম হচ্ছে ভূতফোবিয়া। এই বংশের এক মাত্র আমার মাঝেই এই ভূতফোবিয়াটি আছে; আর কারোর নেই। ঐ যে! আমি বলি না, এঁরা আমাকে পালতে নিয়ে এসেছে?
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলাম, “আআপি.. আপপি!”
কুঞ্জ ভাই এবারও ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। কিছুটা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, “কী হয়েছে? রজনীকে ডাকছিস কেন?”
“আমি খেলব না। আমি থাকব না এখানে। ভূত! ভূত আপিইইই…”
কুঞ্জ ভাই যেন আমার এহেন কথায় দারুণ মজা পেলেন। সশব্দে হেসে উঠলেন উনি। ওঁর সেই হাসিটা এই মুহূর্তে আমার ভালো লাগার জায়গায় অপরিসীম ভয়ের মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়াল। আমি তৎক্ষণাৎ ছুটে গিয়ে ব্যালকনির লাইট অন করে দিলাম। কাঁপা কাঁপা হাতে ওঁকে টেনে ওঠাতে লাগলাম। কুঞ্জ ভাই কী বুঝলেন, জানা নেই; নিজ থেকেই উঠে দাঁড়ালেন। আমি লাইটের বিপরীতে ওঁর ছায়া দেখতে পেয়ে বুকে হাত রেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কুঞ্জ ভাই জিজ্ঞেস করলেন, “কী?”
আমি সাবলীল ভঙ্গিমায় বললাম, “আপনার ছায়া আছে কি না, দেখলাম। শুনেছি, ভূতের ছায়া থাকে না। এ্যাই! আজ তো ৫০% শিউর হলাম। বাকি ৫০% শিউর হওয়ার জন্য দিনের বেলার সূর্যের আলোর প্রয়োজন। সকালে আপনাকে নিয়ে বাইরে গিয়ে দেখতে হবে, ছায়া পড়ে কি না। আপনি এই নবুকে চেনেন না। যদি ছায়া পড়ে, তো বেঁচে গেলেন। নয়তো জানেন না আমার আব্বু আর কুঞ্জ ভাইকে। হসপিটালেও জায়গা পাবেন না। বাই দ্যা ওয়ে! আপনাদের ভূত-সমাজে হসপিটাল আছে তো?”
কুঞ্জ ভাই অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি সেই চোখের কোনায় কোনায় অসহায়ত্ব খুঁজে বের করে বললাম, “নেই, না? ব্যাপার নাহ্! আমি আবার প্রচুর মহান। মহৎ মহৎ কাজ করাই আমার নেশা। আপনার জন্য একটা হসপিটাল বানিয়ে দেবনি। ওহ্, হ্যাঁ! থ্যাংকস মি লেটার।”
মুচকি হেসে কুঞ্জ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কুঞ্জ ভাই তাঁর সেই অদ্ভুত, বিখ্যাত, স্থির, শীতল, শান্ত, গম্ভীর দৃষ্টিতেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। হেল-দোল হলো না। আমি বসে পড়লাম।
ওঁকেও বসার জন্য ইশারা করে বললাম, “আরে! হাফ ভূত মশাই! বসে পড়ুন। আমার কুয়েশ্চন শেষ হয়নি তো!”
কুঞ্জ ভাই সেই একই ভঙ্গিতে আমার দিকে চেয়ে থেকেই বসে পড়লেন। আমি আবার বলা শুরু করলাম, “তা বাসায় ঢুকলেন কী করে? বারান্দা দিয়ে? না কি ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে?”
কুঞ্জ ভাই স্বাভাবিক গলায় বললেন, “মেইন ডোর দিয়ে।”
“কী ! কীভাবে? কলিং বেলের আওয়াজ পাইনি আমি।”
“তোর সাথে কথা বলার সময়, রজনীকে কল দিয়ে বলে দিয়েছিলাম, দরজা খুলতে।”
“বাঃ! চমৎকার। আমাকে বললেও তো হতো! কী? হতো না?”
কুঞ্জ ভাই জবাব দিলেন না এর। আমি এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা না করে আবারও শুধালাম, “বিরিয়ানি কই পেলেন?”
“ভূত পাওয়ার ইউজ করেছি।”
আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম, “ও মা! তাই? তবে ভূত পাওয়ার ইউজ করে আমাকে এখন চান্দে নিয়ে যান।”
“চাঁদে গিয়ে কী করবি?”
“আয়হায়! আপনি জানেন না? চান্দের ৮ নম্বর গলির ৪ নম্বর বাড়ির দোতলায় আমি একটা ফ্ল্যাট কিনেছি; ওনলি টু ডু বাসর, উইথ মাই সুইট, হট, অ্যাট্রাকটিভ জানটুষ।”
কুঞ্জ ভাই হালকা কেশে জিজ্ঞেস করলেন, “জানটুষ! হু ইজ হি?”
আমি কুঞ্জ ভাইয়ের দিকে একটু এগিয়ে এলাম। কুঞ্জ ভাই চোখ দুটো সামান্য বড়ো করতেই আমি বলে উঠলাম, “ইট‘স ইউ, জানটুষ!”
কুঞ্জ ভাই তো পুরোই টাশকি খেয়ে গেলেন। হতাশা মিশ্রিত পাঁচ-ছয়টা নিঃশ্বাস ফেললেন। বুঝে গেলেন, তাঁর সামনে দুষ্টুমি মাখানো হাসি নিয়ে দাঁড়ানো এই কিশোরীটি বড্ড জটিল, মাথা খারাপ করে দেওয়ার মতোই ঘোলাটে।
_____________
খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই কুঞ্জ ভাই হাত ধুয়ে এলেন। একসাথে চুপিচুপি ব্যালকনির ফ্লোরে বসে আছি দু’জন। কুঞ্জ ভাই আমার ঠিক পাশেই। একদম পাশেই। সময় এখন চারটে। এখনও সমগ্র অন্তরীক্ষ অন্ধরাচ্ছন্ন হয়ে আছে। খানিকক্ষণ বাদেই আলো ফুটবে। নিকষ কালো অন্ধকার পেরিয়েই ভোরের মিষ্টি আলোতে প্রকৃতি স্নান করবে। বাসার পাশের রোড থেকে গাড়ি চলাচলের আওয়াজ ভেসে আসছে।
প্রকৃতি আমার বড্ড ভালো লাগে। তবে কখনও সেভাবে খেয়াল করা হয়নি। কখনও এই প্রকৃতি নিয়ে লেখা হয়নি কোনো কবিতা। সবসময় দৃশ্যমান হয়েও অদৃশ্য একটা বৈশিষ্ট্য নিয়ে থাকা বোধহয় এই প্রকৃতির একটা নিয়ম। এই যে! রোজ দেখছি! কখনও গোধূলিতে প্রকৃতিকে কেমন যেন নববধূর মতো লাগে, মনে হয়– দিনের এই ভাগের চেয়ে সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না। কখনও আকাশে সাঁঝ দেখে মনে হয়, ইশ! এই প্রহর যদি থমকে যেত! কখনও গভীর রাতের নিস্তব্ধতাকে নিজের মন খারাপের সঙ্গী মনে হয়; মনে হয়, এর চেয়ে নিঃস্বার্থ সঙ্গ অন্য কেউ দেবে না। কখনও আবার ভোরের সূর্য উদয়ের আগের এই সময়টা আমাকে ভেঙ্গে পড়া থেকে আটকায়, অনুপ্রাণিত করে। মনে করিয়ে দেয়, মাদার টেরেসার সেই বাণীটি, ‘হতাশার কিছু নেই! শুধু মনে রেখো– অন্ধকার যত গভীর হয়, সূর্য তত দ্রুত উদিত হয়!’
আর, হ্যাঁ! কুঞ্জ ভাই! ওঁর প্রতি অনেক বাজে ভাবেই আসক্ত আমি। সব কিছুতেই কীভাবে যেন মিশে আছেন। চাইলেও ওঁকে ছাড়া কোনো কিছুই ভাবতে পারি না আমি। উনি আমার কিশোরী হৃদয়ের ভালো লাগার প্রথম অনুভূতি। উনি আমার আকাশ-ছোঁয়া মুগ্ধ দৃষ্টির প্রথম সাক্ষী। উনি আমার অঢেল-মিষ্টি পাগলামির এক অযথা কারণ, আমার সব ভুলে খেয়াল-নদীতে ডুবে থাকার এক অনভ্যস্ত অভ্যেস।
বাইরের দিকটা এখনও অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কুঞ্জ ভাইয়ের চোখে স্থির করলাম। কুঞ্জ ভাই শূন্যে তাকিয়ে আছেন। আমি ওঁর ভাবনায় প্রায়শই প্রবেশ করতে পারি। উনি কী ভাবছেন, কিছু কিছু সময় তা বুঝতে পারি। আজও বুঝতে পারলাম, ওঁর ভাবনার সবটা জুড়ে এখন আমারই তাণ্ডব চলছে।
মাথা এলিয়ে দিলাম কুঞ্জ ভাইয়ের কাঁধে। খুব একটা চমকে না গেলেও, ভালো ভাবেই অবাক হয়েছেন। আমি ওঁর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবারও দূর আকাশে স্থাপন করলাম। কুঞ্জ ভাই এক হাতে আমাকে তাঁর উষ্ণ আলিঙ্গনে বেঁধে ফেললেন। কেউ কোনো কথা বললাম না। হয়তো এই স্তব্ধ সময়ে আমাদের নিস্তব্ধতা একে অপরের সাথে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে, খুবই চুপিসারে। পরম শান্তিতে আমিও দু’চোখের পাতা এক করে ফেললাম।
বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যেতেই কুঞ্জ ভাই আমাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিলেন। আমি কিছুটা বিরক্তিপূর্ণ দৃষ্টিতেই ওঁর দিকে তাকালাম। কুঞ্জ ভাই আমার এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বললেন, “যেতে হবে যে আমায়।”
আমি কেঁপে উঠলাম। অস্থির, অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম, “এখনই?”
কুঞ্জ ভাই মৃদু হেসে বললেন, “হ্যাঁ।”
আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। উদাস ও করুণ মুখে কুঞ্জ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কুঞ্জ ভাই উঠতে উঠতে বললেন, “আচ্ছা, যাই এবার।”
আমিও উঠে দাঁড়ালাম। আটকানোর বিন্দু মাত্র প্রচেষ্টা করলাম না। উনি যে এসেছেন, এই অনেক ছিল আমার কাছে। জোরপূর্বক হেসে ওঁকে বিদায় জানালাম। কিছুক্ষণ বাদেই আম্মু উঠে পড়বে। ওঁকে এত রাতে বাসায় দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করবে। তাই আর কিছু বললাম না।
কুঞ্জ ভাইকে এগোতে আমি মেইন ডোর অবধি এলাম। উনি জুতো পড়তে পড়তে অতি সন্তর্পনে আমার দিকে তাকালেন। সেই যে তাকালেন! মাদোকাচ্ছন্ন সেই দৃষ্টিতে ঈষৎ কেঁপে উঠলাম। সেখানে কী ছিল? যত্ন? আবেগ? ভালো লাগা? না-কি ভালোবাসা?
বুঝতে পারলাম না। কুঞ্জ ভাইয়ের ভাষ্যমতে, আমি অতি অবুঝ। কুঞ্জ ভাই সেই দৃষ্টি সেকেন্ড পাঁচেক আমার অশ্রুসজল নয়নে স্থির করেই সরিয়ে নিলেন। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললেন, “উমম…”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী?”
কুঞ্জ ভাই মাথা দু’পাশে নেড়ে রহস্য-মাখা হাসি হেসে বললেন, “কিছু না।”
আমি জানি কিছু বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু কী বলতে চাচ্ছেন, তা জিজ্ঞেস করার আগেই উনি বড়ো বড়ো কদম ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেন। আমি ফ্লোরের দিকে তাকালাম। চোখ বেয়ে পানি পড়ার আগেই তা মুছে ফেললাম। দরজা লাগাতে যাব, তখনই আবারও কুঞ্জ ভাই উপরে উঠে এলেন।
আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হেসে বললেন, “আমার শার্টে তোকে অস্থির লাগছে, নবু। তুই চাইলে বিয়ের পর, প্রতিদিন-রাত আমারই কাপড় পরতে পারিস। আমি মাইন্ড করব না। উলটো আমার খরচ বেঁচে যাবে। কিন্তু… বিয়ের আগেই এরকম হিসেবি হলে হয়? তুইও না!”
কথাটা বলেই যেভাবে এলেন, সেভাবেই চলে গেলেন। আমি স্তব্ধ, বিমূঢ়, হতবাক হয়ে অবিচল নেত্রে কুঞ্জ ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম। গাল দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করতেই আমি বুঝে গেলাম ব্যাপারটা। এতক্ষণ পর নিজের পরনের কাপড়ের দিকে খেয়াল করলাম। ইশ!
চলবে?