সাতরঙা প্রজাপতি পর্ব -১০

#সাতরঙা_প্রজাপতি
লেখনীতে:#মাশফিত্রা_মিমুই
||পর্ব:১০||

সারাদিন কালো মেঘ জমে থাকা আকাশ থেকে এবার বর্ষন হতে লাগলো। বৃষ্টি শুরু হতে না হতেই লোড শেডিং হলো। মাগরিবের নামাজ শেষে বারান্দায় মেলে দেওয়া ভেজা কাপড়গুলো আনতে গেলো জ্যোতি। এক ফাঁকে গ্ৰিলের বাহিরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দিতে লাগলো। চারিদিক ছেয়ে আছে অন্ধকারে। একটু পর পর বিকট শব্দে আকাশ গর্জে উঠছে।

বাজার থেকে আসার সময় সঙ্গে করে কিছু মোম এনেছিল শোভন। একটি মোম জ্বেলে ঘরে নিয়ে এলো। মুহুর্তে অন্ধকার বিলীন হয়ে ঘর আলোকিত হয়ে গেলো। ঘরে স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে মোমটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে অন্ধকার বারান্দার দিকে পা বাড়ালো। জ্যোতি বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজাতে ব্যস্ত। তাকে দেখে যে কেউই বুঝে যেতে পারবে, মেয়েটির বৃষ্টি বড্ড পছন্দের। শোভনও হয়তো বুঝতে পেরেছে। সে তার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,”শুকনো কাপড়গুলো তো ভিজে যাচ্ছে।”

স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনে দ্রুত গ্ৰিলের বাহির থেকে হাতটি ভেতরে নিয়ে এলো জ্যোতি। পরনের জামার মধ্যে হাত মুছে কাপড়গুলো আঁকড়ে ধরে ঘরে চলে এলো। সেই সকালে কাপড়গুলো ধুয়ে বারান্দায় মেলেছিল জ্যোতি। কাপড় শুকিয়ে গেছে কিন্তু তার ভুলোমন তা আনতে ভুলে গেছিল। তারমধ্যে দুয়েকটা কাপড় পুনরায় ভিজে গেছে। ভেজা কাপড় অন্য ঘরে রেখে এসে শুকনো কাপড়গুলো ভাঁজ করতে লাগলো জ্যোতি। শোভন দেওয়ালে হেলান দিয়ে ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি জ্যোতির দিকে।

কয়েক মিনিট নিরবতা পালন করে জ্যোতিকে উদ্দেশ্য করে শোভন প্রশ্ন করল,”বৃষ্টি ভালো লাগে?”

ভ্রু কুঁচকে শোভনের দিকে তাকালো জ্যোতি। শোভন বললো,”ভিজবে?”

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল জ্যোতির। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো,”হ্যাঁ।” পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে হাসি মিলিয়ে গেলো।

শোভন জিজ্ঞেস করল,”আবার কী হয়েছে?”

“ভিজবো কোথায়? বারান্দা দিয়ে তো ভেজার মতো বৃষ্টির ফোঁটাই আসে না।”

“কেন ছাদ আছে না? ছাদে গিয়ে ভিজবে।”

মুখে আবারো হাসি ফুটে উঠল জ্যোতির। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বললো,”তাড়াতাড়ি চলুন তাহলে।বৃষ্টি থেমে যাবে তো।”

“হুম তুমি আগে আগে হাঁটতে থাকো আমি আসছি।”

মোম হাতে নিয়ে, যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো জ্যোতি। পেছন থেকে শোভন প্রশ্ন করল,”সঙ্গে মোম নিচ্ছো কেন? ছাদের কাছে গেলেই তো বাতাসে মোম নিভে যাবে।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো জ্যোতি। মিনমিনে স্বরে বললো, “দেখেছেন কী কান্ড? তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুলভাল কাজ করে ফেলছি। আচ্ছা অন্ধকারে যাবো কীভাবে?”

“মোবাইলের লাইট আছে তো। নাও চলো এবার।”

দরজা ভিড়িয়ে জ্যোতিকে নিয়ে ছাদে চললো শোভন। ঝুমঝুম শব্দে বৃষ্টি হচ্ছে। দৌড়ে ছাদের মধ্যে চলে এলো জ্যোতি। ভিজতে লাগলো। আজ অনেক দিন পর বৃষ্টিতে ভিজছে সে। শেষ যেদিন সে বৃষ্টিতে ভিজেছিল তখনও তার বিয়ে হয়নি। বৃষ্টি হলেই ঘর ছেড়ে উঠোনে এসে হাত মেলে দাঁড়িয়ে ভিজতো জ্যোতি। কিন্তু বিয়ের পর আনোয়ারা বেগমের ভয়ে আর বৃষ্টিতে ভেজার সাহস হয়নি। তখন সে খাঁন বাড়ির নববধূ, বিয়ের দু মাসও পার হয়নি। শোভন সেই যে অফিসের বাহানা দিয়ে চলে এলো তখনও ফিরেনি। বৃষ্টি শুরু হতেই ছাদে গিয়ে ভিজতে থাকে জ্যোতি। যা শাশুড়ির নজরে পড়ে যায়।

আনোয়ারা বেগম তখন কড়াকণ্ঠে পুত্রবধূকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”এভাবে বৃষ্টিতে ভেজার কী আছে?অসুখ বাঁধলে কী হবে তখন?”

এই সামান্য কথাটুকুয় মনে তীব্র ভয় ঢুকে যায় জ্যোতির। তারপর থেকে আর এমন দুঃসাহসিক কাজ করার সাধ্য হয়নি তার। মা সবসময় বলতো, শ্বশুর বাড়ির লোকেদের অবাধ্য হবি না কখনো। তাহলে কিন্তু তোকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে তারা। হয়তো এই ভয়টার কারণেই সে এত নিরব থাকে।

ভিজতে ভিজতে ছাদের দরজার দিকে দৃষ্টি চলে গেলো জ্যোতির। শোভন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়েছে যাতে বৃষ্টির ফোঁটা তাকে ছুঁতে না পারে। জ্যোতি একটু সামনে এগিয়ে এসে বললো,”আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এখানে চলে আসুন, আমরা আজ একসঙ্গে ভিজবো।”

“আমার ভেজার কোনো ইচ্ছে নেই। তুমি ভিজো।”

শোভনের কোনো কথাই এই মুহূর্তে জ্যোতির শুনতে ইচ্ছে হলো না। এখানে আসার পর থেকেই শোভন নামক পুরুষটির উপর তার অধিকার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ভয়ভীতিও কমে গেছে অনেকটা। এগিয়ে এসে শোভনের হাতটি টেনে ধরলো। বায়না করে বললো,”এমন করছেন কেন? আসুন না। একবার ভিজে দেখুন ভালো লাগবে।”

“হ্যাঁ, এটা তো খাবার কিছু যে একটু টেস্ট করে দেখবো ভালো লাগে কিনা।”

“আপনি বাহানা করতে করতেই দেখা যাবে বৃষ্টি থেমে গেছে।”

“যেভাবে শুরু হয়েছে মনে হয় না মাঝরাতের আগে থামবে।”

“সে যখনি থামুক। আপনি আমার কথা শুনবেন কী শুনবেন না?”

শোভন শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে জ্যোতির ডাকে সাড়া দিয়ে ছাদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো,”না শুনে কী আর উপায় আছে? দেখা গেলো এতেও তুমি মন খারাপ করে বসে থাকবে পরে বউয়ের মনে কষ্ট দেওয়ার অপরাধে আমারই পাপ হবে।”

জ্যোতি কান দিলো না তাতে।ভিজতে ভিজতে রেলিং এর ধারে গিয়ে দাঁড়ালো। পুরো অন্ধকার নিস্তব্ধ ছাদ। চারিদিক ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। শোভন এগিয়ে এলো স্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি দাঁড়ালো। জ্যোতি আনন্দিত কণ্ঠে বললো,”জানেন, আজ অনেক দিন পর আমি আবার বৃষ্টিতে ভিজলাম।না না অনেকদিন নয় বরং এক বছর পর।”

শোভনের সেদিকে খেয়াল নেই। তার মন ধ্যান সব যেনো কোথায় চলে গেছে। কোনো এক ভাবনায় বিহ্বল হয়ে আছে।স্বামীর উত্তর না পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো জ্যোতি। কিন্তু অন্ধকারে মুখ স্পষ্ট করে দেখা গেলো না। কিছুক্ষণ নিরবতার পর শোভন বললো,”আকাশ মেঘলা হলেই না আমার মায়ের মুখে আনন্দের রেশ ফোটে উঠতো। বৃষ্টি হলে মায়ের খুশি আর দেখতো কে? উঠোন পেরিয়ে বাগানে কিংবা খোলা ছাদে গিয়ে ভিজতো। জানো আমার মাও না বৃষ্টি অনেক পছন্দ করতো।”

শোভনের কথায় অবাক হলো জ্যোতি। শোভন আবারো বললো,”মায়ের পেছন পেছন আমি আর আপুও গিয়ে ভিজতাম। আর সেদিন রাতেই না আমাদের জ্বর আসতো। তবে তা যে সে জ্বর নয় একেবারে হাড় কাঁপানো জ্বর। মা মাথার ধারে বসে পানি পট্টি দিতেন। একবার আমার কপালে তো আরেকবার আপুর কপালে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আমাদের এই অবস্থা দেখে তো বাবা খুব রেগে যেতেন। মায়ের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতেন কিন্তু মায়ের তাতে কোনোকালেই কোনো হেলদুল ছিলো না। পরবর্তীতে ঠিকই সব ভুলে গিয়ে আবারো বৃষ্টিতে ভিজতো আর আমরা দুই ভাইবোনও ঘুরে ফিরে একই কাজ করতাম।”

জ্যোতি চমকায়িত কণ্ঠে বললো,”মাও বৃষ্টি এত পছন্দ করতেন!”

“হুম।”

“অথচ এখন মা কত বদলে গেছেন। নিজে তো বৃষ্টিতে ভিজেনই না আমাকেও ভিজতে দিতেন না।”

ঘোর কাটলো শোভনের। জ্যোতির কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো,”অনেক ভেজা হয়েছে এবার ঘরে চলো।”

জ্যোতি শুনলো না সেকথা। শুধালো,”একটা প্রশ্ন করবো?”

“হুম করো।”

“বিয়ের পর তো কখনো বড়ো আপুকে দেখলাম না। আচ্ছা উনি কোথায় থাকেন? বাড়িতে আসেন না কেন?”

“বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী সন্তান নিয়ে দেশের বাহিরে থাকে।”

“ওহ। দেশে ফিরেননি কখনো? ফিরবে না?”

“জানি না।”

“আপনার বোন আর আপনি জানেন না?”

কথাটি এড়িয়ে গেলো শোভন। জ্যোতির হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো,”ঘরে চলো তাড়াতাড়ি। অসুস্থ হয়ে যাবে তো।”

চাইলেও আর দাঁড়াতে পারলো না জ্যোতি। অগত্যা শোভনের সঙ্গে ঘরে আসতে হলো তাকে। কারেন্ট এখনো আসেনি। জ্যোতির মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মোবাইলটি জ্যোতির হাতে ধরিয়ে দিলো শোভন। বললো,”দ্রুত ভেজা কাপড় বদলে ফেলো। আমি পাশের রুমে আছি।”

কথাটি বলে শোভন তার কাপড় নিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলো। জ্যোতিও বাথরুমে ঢুকলো পোশাক বদলাতে। মোবাইলের চার্জ প্রায় শেষের দিকে।পোশাক বদলে রান্নাঘরে এলো জ্যোতি। মোম জ্বেলে খাবার গরম করে টেবিলে রাখলো।দুটো প্লেটে খাবার বাড়লো। শোভনও এলো, ভ্রু কুঁচকে স্ত্রীর দিকে তাকালো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,”চুল দিয়ে তো এখনো পানি পড়ছে। না মুছেই এখানে চলে এসেছো কেন?”

“ভুলে গেছিলাম।”

“ইদানিং দেখছি সবকিছুই ভুলে যাচ্ছো।কিছুদিন পর দেখা যাবে আমাকেও ভুলে গেছো।”

কাজ থামিয়েই শোভনের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকালো জ্যোতি। শোভন বললো,”আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? যাও গিয়ে চুল মুছো।”

জ্যোতি লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে ঘরে চলে গেলো। টাওয়াল দিয়ে ভালো করে চুল গুলো মুছে নিলো।মুছা শেষ হতেই খাবার টেবিলের কাছে এলো। এসে দেখতে পেলো শোভন চুপটি করে বসে আছে। জ্যোতি জিজ্ঞেস করল,”খাবার তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এখনো শুরু করেননি কেন?”

“তোমাকে বলবো কেন?”

কিছু বললো না জ্যোতি। চুপচাপ বসে পড়ল। মনে মনে আওড়াতে লাগলো,”এই লোকটির মুখে কোনো রসকস নেই। একেবারে নীরস একটা লোক। বউয়ের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় তাও জানে না?”

ডান ভ্রু উঁচিয়ে জ্যোতির দিকে তাকালো শোভন।প্রশ্ন করল,”মনে মনে আমায় গা’লি দিচ্ছো নাকি?”

ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো জ্যোতি। আমতা আমতা করে বললো,”কই না তো।”

“দ্রুত খাও। মনে হয় না আজ কারেন্ট আসবে। মোবাইলের চার্জ শেষের দিকে, মোমও তো গলে যাচ্ছে।”

“হুম।”

খাওয়া শুরু করল দুজনে। খাওয়ার ফাঁকে বারবার শোভনের দিকে তাকাচ্ছে জ্যোতি। একপর্যায়ে শুধালো,”খিচুড়িটা কেমন হয়েছে?”

শোভন খেতে খেতে উত্তর দিলো,”ভালো।”

সন্তুষ্ট হলো জ্যোতি। খাওয়া শেষে সবকিছু গোছগাছ করতে লাগলো। শোভনও হাতে হাতে সাহায্য করল স্ত্রীকে। ঘরে এলো দুজনে। মোম নিভিয়ে শুয়ে পড়ল।
_________

রাত পোহালো। রোজকার মতো আজ আর ফজরের সময় ঘুম ভাঙলো না শোভনের। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। জ্যোতিও জাগনা পেলো না। জ্যোতির ঘুম ভাঙতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল আটটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট। শোভনকে এখনো শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। যে ছেলে সবসময় সেই ভোরবেলায় উঠে যায় আজ এত বেলা পর্যন্ত সে কিনা বিছানায় শুয়ে আছে? জ্যোতি উঠে বাথরুমে চলে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে ঘরে এলো কয়েক মিনিট পর। এসেও শোভনকে পূর্বের ন্যায় শোয়া অবস্থায় দেখতে পেলো।

বিছানার একপাশে বসে ডাকলো,”শুনছেন, অনেক বেলা হয়েছে যে। অফিসে যাবেন না?”

শোভনের কোনো নড়চড় নেই। জ্যোতি তার ডান হাতটি শোভনের কপালে রাখতেই চমকে গেলো। শরীর তীব্র গরম হয়ে আছে। নানান শঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল জ্যোতির মন। জ্বরে শোভনের গা পুড়ে যাচ্ছে। গতকালের কথা মনে পড়ল জ্যোতির। শোভন বলেছিল বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসতো তার।

আলতো করে শোভনের গালে হাত রাখলো জ্যোতি। বললো,”আপনার কী খুব খারাপ লাগছে? চোখ খুলুন না।”

চোখ খুললো না শোভন। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো, “বিরক্ত করো না। যাও এখান থেকে।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো জ্যোতি। স্বামীর অসুস্থতায় দূরে সরে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়।এই মুহূর্তে কী করবে বুঝতে পারছে না জ্যোতি। জায়গাটা এখনো তার কাছে অপরিচিত আশেপাশের মানুষজনও বেশ অপরিচিত। কারো কাছে যে সাহায্য চাইবে তারও উপায় নেই। রান্নাঘরে চলে গেলো। একটা বাটিতে করে পানি এনে সুতি একটা কাপড়ের সাহায্যে পানি পট্টি দিতে লাগলো। তাতেও কাজ হচ্ছে না। জ্বর একটুও কমছে না। তৎক্ষণাৎ শাশুড়ির কথা মনে পড়ল।

মোবাইল হাতে নিতেই দেখতে পেলো মোবাইল বন্ধ। মনে পড়ল গতকাল রাতে কারেন্ট না থাকার কারণে মোবাইল চার্জে দেওয়া হয়নি। জ্যোতি নিজের এবং শোভনের মোবাইল দুটোই চার্জে বসালো। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে শোভন। ক্ষণে ক্ষণে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। মোবাইল চার্জে রেখে স্বামীর পাশে এসে বসলো জ্যোতি। শোনার চেষ্টা করছে সে কী বলছে। কিন্তু জ্যোতির চেষ্টা ব্যর্থ হলো। কিছুই বুঝতে পারলো না। শোভনের বলা কথাগুলো অস্পষ্ট।

আবারো মোবাইলের কাছে গেলো জ্যোতি। চালু করল মোবাইল। সবেমাত্র তিন পার্সেন্ট চার্জ হয়েছে। চার্জে লাগিয়েই শাশুড়ির নাম্বারে কল দিলো। বাহির থেকে হেঁটে সবে বাড়ি ফিরেছেন রাউফুন খাঁন। মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটি হাতে নিলেন। স্ক্রীনে বড়ো বউ নামে সেভ করা নাম্বারটি ভাসছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠল রাউফুন খাঁনের।

বিলম্ব না করে কল রিসিভ করে কানের নিকটে মোবাইল রাখলেন। কল রিসিভ হতেই জ্যোতি বিচলিত কণ্ঠে বললো,”হ্যালো মা।”

“মা না আমি তোমার বাবা বলছি বউ মা।”

থমকে গেলো জ্যোতি। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম বাবা। মা কোথায়?”

“ওয়া আলাইকুমুসসালাম। তোমার মা তো নিচে।কেন বউমা কিছু কী হয়েছে?”

“আসলে__!”

রাউফুন খাঁন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। বললেন,”তোমার কণ্ঠস্বর এমন শুনাচ্ছে কেন বউমা? কী হয়েছে? শোভন ঠিক আছে তো?”

“আসলে বাবা উনার না জ্বর এসেছে। জ্বরে পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছে। পানি পট্টি দিয়েছি তাতেও কাজ হচ্ছে না, এখন কী করবো? এখানে কাউকে চিনিও না যে ডাক্তার ডাকাবো।”

রাউফুন খাঁনের কপালে সুক্ষ্ম কয়েকটি ভাঁজ পড়ল। বললেন,”জ্বর এলো কীভাবে?”

কী উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না জ্যোতি। সত্যটা কী বলে দিবে যে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে এমন হয়েছে? বলা কী ঠিক হবে? পুত্রবধূর উত্তর না পেয়ে রাউফুন খাঁন বললেন,”চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই বউমা। বালতিতে করে পানি এনে ওর মাথায় ঢালো। তারপর কিছু একটা খাইয়ে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিও। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।”

“ঠিক আছে বাবা। রাখি তাহলে।”

“আচ্ছা। জ্বর কমলে জানিও কিন্তু।”

“আচ্ছা।” কল কেটে মোবাইলটি যথা স্থানে রেখে বাথরুমে চলে গেলো জ্যোতি। বালতি অর্ধেক ভরে ঘরে এলো। অনেক কষ্টে শোভনকে ঠিক করে শুইয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলো। আচমকা জ্যোতির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো শোভন।

জড়ানো কণ্ঠে বললো,”প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।”

শোভনের গালে হাত রাখলো জ্যোতি। আশ্বস্ত করে বললো,”উহু আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।”

কে জানে শোভন শুনলো কী শুনলো না। কয়েক সেকেন্ড পর আবারো বলে উঠল,”মায়ের মতো করে তুমিও আমায় ছেড়ে যাবে না তো?”

আচমকা এমন একটি কথায় চমকে গেলো জ্যোতি। মায়ের মতো করে মানে?

চলবে ______

(কার্টেসি ছাড়া কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here