#ঝড়ের রাতে
#শেষখন্ড
“কফি খাবে?”
টিভিতে মন দিয়ে দিলওয়ালে দুলহানিয়া দেখছিল শবনম। নায়ক নায়িকাকে নানাভাবে জ্বালানোর চেষ্টা করছে আর নায়িকা রেগে যাচ্ছে। তাই দেখে শবনম ক্ষণে ক্ষণে হেসে উঠছে। এমন মুহূর্তে রিপনের হঠাৎ উদয় হয়ে কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়াকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না সে। বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলো- “আমি কফি খাই না।”
“সেদিনই তো দেখলাম মনিখালাকে কফি বানিয়ে দিতে বললে?”
“এমনি বলেছি। টুনির সাথে খাবো বলে বলেছিলাম।”
রিপন হেসে বললো-“আজ তাহলে আমার সাথে খাও। আমার কফি খেতে খুব ইচ্ছে করছে বাট একা ভালো লাগবে না।”
“খাবো না বললাম তো। কেন বিরক্ত করছেন? দেখছেন না মুভি দেখছি?”
শবনম ভ্রুকুটি করলো। রিপন অবশ্য হার মানলো না। ঘুরে মুভি দেখেই হইহই করে উঠলো- “আরে! এটা তো আমার ফেভরিট মুভি? অলরেডি দু’বার দেখেছি। তোমার সাথে বসে আজ আবার দেখবো। তবে তার আগে..”
আর সহ্য হলো না শবনমের। দু’দিন ধরে আঠার মতো পিছু লেগে আছে রিপন। নানাভাবে ওর সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছে। রিপন কাছে আশার প্রয়াস করছে বুঝতে পেরেই শবনম নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়েছে। ভাগ্যিস গতকাল শেষ পর্যন্ত তার শাশুড়ী মা আর টুনি ফিরে এসেছিল। তা নয়তো এই লোক নির্ঘাত কাল ওর সাথে কিছু করে ফেলতো। আজ দুপুরে ওদের দাওয়াত ছিলো শবনমের মামার বাসায়। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে টিভিতে মুভি ছেড়ে বসেছে সে। কিন্তু রিপন মনেহচ্ছে না ছবি দেখতে দেবে। টুনি উঠে দাঁড়ায়। রিপন অবাক হয়ে জানতে চাইলো- “তুমি কোথায় যাচ্ছ আবার? ছবি দেখবে না?”
শবনম দাঁতে দাঁত চেপে বলে- “আপনি দেখতে দেবেন? আমি যাচ্ছি টুনির রুমে। আপনি আবার দেখুন আপনার পাঁচবার দেখা মুভি।”
“আরে! তুমি রাগ করলে নাকি? এই বন, শোন। আরে শোন না।”
বলতে বলতে দৌড়ে দরজার কাছে চলে এলো রিপন। শবনম দাঁত কিড়মিড় করে- “সরুন সামনে থেকে।”
“রুক যা ও দিল দিওয়ানে
পুছু তো ম্যায় যারা
আরে লাড়কি হ্যায় ইয়া না জাদু
খুশবু হো ইয়া নেশা।”
টিভির গানের সাথে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছে রিপন। শবনম পর্দার নায়িকার চাইতেও খারাপ মুখশ্রী করে দরাম করে আওয়াজ তুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
রাতে খাওয়ার টেবিলে শবনমের শাশুড়ী কথা পারলেন- “রিপু, তোর সব কাজ তো গুছিয়ে এনেছিল তাই না?”
রিপন মাথা দুলায়। রিপনের মা বললেন- “তোর বাবা তোদের হানিমুনের ব্যাপারে জানতে চাইছিল। তোরা কোথাও বেড়াতে যাবি না?”
শবনম মুখ নামিয়ে খাচ্ছিলো। এ কথা শুনে সে তার মুখখানা আরও নামিয়ে নিল। রিপন ওকে দেখে নিল একবার আড়চোখে। তারপর দুঃখী মুখ করে বললো- “তুমি বললে কি হবে মা? তোমার বউমা তো যেতে চায় না। তার নাকি বন্ধুদের ছাড়া কোথায় যেতে মন চায় না।”
শবনম হতবাক মুখ তুলে রিপনকে দেখলো। রিপন ওর দিকে তাকালোই না। নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। শাশুড়ী মায়ের মুখ অন্ধকার-“এ আবার কেমন কথা? হানিমুনে বন্ধুদের নিয়ে যায় কে? তোদের নতুন বিয়ে, নিজেদের মধ্যে জানাশোনা বাড়াতে কোথাও বেড়াতে যাবি। সঙ্গে দশজন থাকলে কি আর জানাশোনা হবে?”
শবনমের গলায় খাবার আঁটকে গেল। খুকখুক কাশতেই রিপন পানির গ্লাস বাড়িয়ে ধরলো। শবনম কটকটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রিপনকে ভস্ম করে দিতে চাইলো। পানি না খেয়ে শাশুড়ীকে বললো- “আমি মোটেও এমন আবদার করিনি মা। উনি বাড়িয়ে বলছে।”
শবনম কাঠ গলায় জবাব দিতেই টুনি ফিক করে হেসে দিলো। রিপন ওর মাথায় গাট্টা দিয়ে জানতে চাইলো- “তুই হাসছিস কেন? কি বুঝে হাসছিস?”
“আমি আবার কি করলাম? হাসাটা ক্রাইম তা জানতাম না।”
শাশুড়ী মা বিরক্ত হলেন- “তোরা থাম তো। শবনম মামনী, কেন যেতে চাইছো না বলতো? ক’দিন পরে রিপন চলে যাবে তখন মন চাইলেও আর ওর সাথে বেড়াতে পারবেনা। বুঝলাম হঠাৎ বিয়ে বলে মানতে কষ্ট হচ্ছে। তাই বলে চেষ্টা করবে না? যাও কোথাও থেকে বেড়িয়ে এসো দু’জন।”
শবনম মাথা দুলিয়ে সায় জানায়। রিপনকে দেখলো আলাভোলা মুখ করে চুপচাপ খাচ্ছে। মনেহলো ওর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি আছে। রুমে চলো আগে তারপর তোমার মজা দেখাব। কথাগুলো মনেমনে কথাগুলো বলে শবনম।
রাতে রুমে ফিরতেই শবনম ধরলো রিপনকে- “এই আপনি মিথ্যে বললেন কেন?”
“কিসের মিথ্যে?”
“এই যে, আমি বন্ধুদের সাথে হানিমুনে যাবো?”
রিপন বিস্ময় নিয়ে বলে- “মিথ্যে হবে কেন? তুমি বলনি তোমার স্বামীর সাথে বেড়াতে ভালো লাগে না? তার মানে কি দাঁড়ায়?”
“আপনি আসলে বেশি বুঝেন। আমি মোটেও এমন কিছু বলিনি।”
“তবে কি বলেছ? স্বামীর সাথে হানিমুনে যাবো?”
শবনম ঠোঁট দু’টো চেপে ধরে রাগ সংবরণ করে- “অসহ্য।”
শবনমের হাত পেছন থেকে টেনে ধরে রিপন। হ্যাচকা টানে ওর বুকের উপর এসে পড়ে শবনম। দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে- “এই অসহ্য আমাকেই সহ্য করতে হবে বাকী জীবন, বুঝলে? যেমন তোমাকে সহ্য করছি এখন। মন চায় তোমাকে বুকে জড়িয়ে আদরে ভরিয়ে দেই কিন্তু তা করছি না।”
হঠাৎ রিপনের কাছে আসা জড়িয়ে ধরায় শবনমের শরীর জুড়ে ভুমিকম্প। একটা শিরশিরে অনুভূতি টের পেল। কম্পিত দূর্বল কণ্ঠে বললো-“কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে।”
রিপন ওর কানের পেছনে ঠোঁট ছোঁয়ায়- “যদি না ছাড়ি?”
শবনমের শরীরের রক্তকনিকাগুলো ততক্ষণে পাগল হয়ে ছোটাছুটি করতে শুরু করেছে। রিপন যদি আর কিছুক্ষণ এমন জড়িয়ে থাকে তাহলে নির্ঘাত অজ্ঞান হয়ে যাবে সে। সে অনুনয় করলো- “প্লিজ, ছাড়ুন।”
আচমকা ওকে ছেড়ে দিলো রিপন- “যাও, ছেড়ে দিলাম।”
একটা কথাও না বলে রিপন রুম ছেড়ে চলে গেল।
শবনম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আচ্ছা, রিপন কি রাগ হলো ওর উপর? এভাবে চলে গেল কেন? মনটা ভার হয়ে গেল ওর। রিপন কাছে এলে মিশ্র অনুভূতি হয় ওর। রাগ আর ভালোলাগা মিলেমিশে কেমন যেন অন্য এক জগতে চলে যাওয়া। মনটাকে কিছুতেই চিনতে পারছে না শবনম। তবে কি রিপনকে একটু একটু ভালো লাগছে তার?
★★★
পরের দুটো দিন রিপন সারাদিন গায়েব। সন্ধ্যায় এলেও শবনমের সাথে তেমন কথাটথা বলে না। উপেক্ষা করে চলা যাকে বলে তাই করছে শবনমকে। তাতে শবনমের মনটা আরো বেশি উদাস হয়ে আছে। একা বসে ভালো লাগছিল না। আর বৃষ্টি বৃষ্টি আবহাওয়া বলে বিকেলে চা বানাতে গেছিল রান্না ঘরে তখন টুনি এলো- “এই ভাবি, তোমাদের কি হয়েছে গো? ভাইয়া তার ফ্লাইটের ডেট এগিয়ে এনেছে কেন?”
“মমমম মানে?”
শবনম টুনির কথার আগামাথা ধরতে পারে না। টুনিও আকাশ থেকে পড়ে- “তুমি কিছু জানো না?”
শবনম মাথা নাড়ে।
“ভাইয়ার ফ্লাইট ছিলো আগামী মাসের পাঁচ তারিখ। ভাইয়া পরশুর ডেট নিয়েছে। তার নাকি কি কাজ আছে ওখানে। কিন্তু আমি জানি কোন কাজ নেই। তোমার উপর অভিমান করেছে নির্ঘাত। তুমি বুঝি ভাইয়াকে পচ্ছন্দ করছো না? আসলে কি জানো, ভাইয়া বেশ নরম মানুষ। জোর করে কিছু করতে পচ্ছন্দ করে না। কেউ যদি কোনভাবে বুঝায় তাকে ভাইয়ার পচ্ছন্দ না তাহলে সে তার কাছ থেকে সরে আসে। ভাইয়া মনেহয় তোমার কোন ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে।”
শবনম স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু না বলে ঘুরে চা বানানোয় মনোযোগ দিলো- “চা খাবে টুনি?”
“বানাচ্ছ নাকি? তাহলে আমাকে দিয় এককাপ।”
“তুমি যাও আমি তোমার রুমে দিয়ে আসবো।”
টুনি চলে গেলে শবনম তার আড়াল করা চোখের জল ওড়নার কোনে মুছে নিল। মনের মধ্যে দ্বিধা। লোকটার শেষমেষ তার জন্য এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? নিজেকে কেমন যেন দোষী মনেহয়। ভালো লাগছে না কিছু। টুনিকে চা দিয়ে এককাপ চা নিজের জন্য নিয়ে ঘরে এসে বসলো। টিভি চালিয়ে দিলো বটে তবে টিভির দিকে তাকালো না একবারও। তার কানে কেবল টুনির বলা কথাগুলো বাজছে। চা খাওয়ার কথাও ভুলে গেছে সে। কান্না পাচ্ছে কেন তার?
মাঝরাতে বাজ পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় শবনমের। ভয়ে চিৎকার করে উঠে বসে সে। জানালার থাইগ্লাসগুলো থেকে থেকে কেঁপে উঠছে, বাতাসের সা সা শব্দ দরজা ভেঙে ফেলতে চাইছে। শবনম ভয়ে জড়সড় হয়ে খাটের আরেক কোনে চেপে আসতেই দু’টো হাত তাকে আগলে নিতে চাইলে শবনম চেচিয়ে ওঠে- “কে?”
“শশশশ আস্তে। আমি রিপন। ভয় পাচ্ছ কেন? আমি আছি তো?”
আস্বস্ত হয় শবনম। রিপনের হাতদুটো জড়িয়ে ধরে- “আপনি! এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? আমি ভয় পাচ্ছি দেখতে পাচ্ছেন না?”
“পাচ্ছি। তোমাকে ধরলে যদি রাগ কর।”
কথাটা শুনেই মেজাজ চড়ে গেল শবনমের- “আজব মানুষ আপনি? যখন ধরা উচিত তখন ধরেন না আর যখন ধরা উচিত না তখন জড়াজড়ি করেন।”
রিপন এই আঁধারেই শব্দ করে হাসলো- “এমন পরিস্থিতিতেও তুমি আমাকে বকছো?”
শবনম থতমত খেয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেল। কেউ কারো চেহারা দেখছে না। দু’জনার হাতজোড়া একে অপরকে স্পর্শ করে আছে। শবনমের হাতদুটো বুকের কাছে টেনে নিতেই রিপনের গায়ে হেলে পড়ে সে। বুকের কাছে মাথা থাকায় রিপনের হার্টের দিপদিপ শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সে।
“আমি কি তোমাকে খুব বেশি বিরক্ত করি বন?”
রিপনের নরম কোমল কন্ঠ শুনে শবনম শান্ত হয়ে বসলো। শবনমের কোন উত্তর না পেয়ে রিপন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে- “আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর তুমি স্বাধীন। তোমার ইচ্ছে মতো চলতে পারবে।”
“আপনি আমাকে ‘বন’ বলে ডাকেন কেন?”
সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রশ্ন করে শবনম। যেন রিপনের কথা তার কানে যায়নি। রিপন নিঃশব্দে হাসলো। দশ সেকেন্ড নিরব রইলো। হাত ছেড়ে দিয়ে দু’হাতে ওর কোমড়ে বেড়ি দিয়ে আরও একটু কাছে টেনে কানের কাছে মুখ নেয়- “চারপাশে গাছপালা ঘেরা জায়গায় থেকেছ কখনো? সবুজে যেমন চোখের শান্তি তেমনি মনের। বনে যেমন শান্ত পরিবেশ আছে তেমনি আছে রহস্য আছে ওয়াইল্ডনেস। তোমাকে আমার তেমনই মনেহয়। কিছুটা শান্ত, কিছুটা রহস্যময়তা, কিছুটা ওয়াইল্ডনেস।”
রিপনের বুকের ধুকপুকের সাথে নিজের বিবরণ শুনে ঘোর লেগে যাচ্ছে শবনমের। যেন নিজেকে নতুন করে চেনা। সত্যিই কি সে এমন এত গুনে গুণান্বিত?
কারোও চোখে এতটা স্পেশাল? সত্যি বলতে মনটা তুলোর মতো হালকা হয়ে যায়। প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে চায়। অনেকক্ষণ কোন সারা না পেয়ে রিপন ডাকে- “এই যে ম্যাডাম, নিজের প্রশংসা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?”
“নাহ, জেগে আছি তো।”
“তাহলে কথা বলছ না যে?”
“আপনার কথাগুলো ভাবছি। সত্যিই কি আমি এমন?”
রিপন হাসলো মিষ্টি করে নাকি শবনমের কাছে মিষ্টি লাগলো।
“অন্ধকারের মজা কি জানো?”
“কি?”
“আলোতে আমরা যা করতে পারি না তা সহজেই করিয়ে নেয়। এই যে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছ দিনে হলে এত সহজ হতো না।”
শবনম নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলে রিপন ওকে আরও গভীর করে আগলে নেয়- “এতো সহজে ছাড়ছি না ম্যাডাম। যত যাই কর।”
“আপনি খুব পঁচা। সবসময় জোর করেন।”
“আচ্ছা! আর তুমি বুঝি খুব ভালো? সবসময় আমার সাথে ঝগড়া কে করে শুনি?”
“আপনি।”
বলেই শবনম মুচকি হাসে। জানে আঁধারে ওকে দেখতে পাচ্ছে না রিপন। আজ রিপনের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগছে তার। মনটা হালকা হয়ে যাচ্ছে। এতদিনের অভিমানের বরফ গলে যাচ্ছে। মনেহচ্ছে বিয়ে করাটা খুব একটা খারাপ না। এমন মুহূর্তে জোরে বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে উঠলো আকাশ। বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে চারিদিকে আলোর বিচ্ছুরণ। শবনম ভয় পেয়ে শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে ধরে রিপনকে- “ও মাগে!”
“যাক বাবা, যা আমি করতে পারিনি তা প্রকৃতি করে দিলো। আজকের ঝড়টা আমার জন্য আর্শিবাদ দেখছি?”
শবনম লজ্জা রাখা হয়ে রিপনের বুকে মুখ লুকায়।
রিপন শবনমের কপালে অধর স্পর্শ করে- “কিন্তু একটা জিনিস মিস করছি।”
“কি?”
প্রশ্নটা করেই বুঝতে পারলো বোকার মতো কাজ করে ফেলেছে। কারন রিপন হাসতে শুরু করেছে কিটকিট করে।
“এই আঁধারে তোমার লজ্জা রাখা মুখটা দেখতে পাচ্ছি না। মিস করে গেলাম যে।”
রিপনের বুকে আলতো কিল দেয় শবনম- “খুব খই ফুটেছে মুখে, তাই না?”
“তোমারও। এতোদিন তো কথাই বলনি?”
শবনমের হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায়। সে চুপ করে গেল। রিপন জানতে চাইলো- “কি হলো? মন খারাপ?”
“আপনি ফ্লাইটের ডেট এগিয়ে এনেছেন কেন?”
“কি করবো? বউ যদি কাছে না আসে কথা না বলে তবে দেশে থেকে লাভ কি? এর চাইতে আমেরিকা যেয়ে কাউকে ডেট করবো।”
“কি! মেরে ফেলবো একেবারে।”
“কেন মারবে? তুমি তো আমাকে পচ্ছন্দ করনা ভালোবাসো না। তাহলে কেন মারবে?”
“আপনার বউ যে তাই। আমাকে রেখে অন্য কারো দিকে চোখ দিলে খবর আছে।”
“কি খবর করবে শুনি? বিয়ের বিশ দিন গত হয়েছে একটা চুমোই তো দাওনি? সে বলে আমার খবর করবে? খুব জানা আছে তোমার দৌড়। আমি কাছে আসতে চাইলেই তো ভয়ে পালাও। আর বলে কি…”
কথা শেষ করার আগেই রিপনের অধরজোড়া শবনমের অধরে বন্দী হয়। আচমকা এমন মধুর আক্রমনে রিপন দিশেহারা। বুঝতে যতটুকু সময় লেগেছে তারপর নিজে সমানতালে তাল মেলাল। মিনিট খানেক পরে দু’জনই হাঁপাচ্ছে, নিশ্বাসের জন্য হাসফাশ করছে। শবনম হাফাতে হাফাতে বলে- “ফের যদি এমন কথা শুনি তবে স্রেফ খুন করে ফেলবো।”
“আর আমি এমন খুন হতে বারেবারে রাজি আছি। এমন ঝড়ের রাত আমার জীবনে বারবার আসুক। বউকে এভাবে বারবার পাই।”
রিপন ফিসফিস করে কথাগুলো বলতেই শবনম লাজে মরমে কুঁকড়ে গেল। নিজের কান্ডে নিজেই অবাক। এতো ডেসপারেট কিভাবে হলো সে?
“শুনুন, আপনি এতো তাড়াতাড়ি যাবেন না প্লিজ।”
নিজের মুখের কথায় নিজেই অবাক হলো। এমন কিছু সে বলতে চায়নি অথচ বলে ফেলেছে। কি হয়েছে আজ ওর? হতাশ হয়ে হার মেনে নিল মেয়েটা। রিপন ওর অবস্থার পূর্ণ ফায়দা ওঠালো-
“থেকেই বা কি হবে? তুমি তো আমার সাথে বেড়াতে যাবে না।”
“যাবো। হানিমুনে যাবো আপনার সাথে।”
“সত্যি?”
“হ্যা।”
“বাতিটা জ্বালাবো একটু?”
শবনম আঁতকে উঠলো- “কেন?”
“তোমার চাঁদ মুখটা দেখবো বন। প্রথম স্পর্শ দেওয়ার পর তোমার লজ্জারাঙা মুখটা দেখে একটা গান গাইবো। প্লিজ জ্বালাই?”
শবনম চুপ। কি বুঝে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে শবনমের মুখের কাছে ধরে। মুগ্ধ চোখ তাকিয়ে রইলো পাক্কা এক মিনিট। মেয়েটা চোখ বুজে পড়ে আছে ওর গায়ের উপর। চোখের পাতা কাঁপছে, লাল অধর জোড়া একটু ফুলে আছে। গাল দু’টো লালচে। রিপন ওর আঙুল দিয়ে শবনমের অধর ছুঁয়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ লাগিয়ে গুনগুন করে-
“আর যাবো না আমেরিকা
পেলাম যখন তোমার দেখা
তোমার বাড়ির পাশে
বাড়ি ভাড়া করে
থেকে যাবো ঢাকা।”
সমাপ্ত।
©Farhana_Yesmin