#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ছোয়ার কথা শুনে আমান খুশি হয়। তবে সেটা প্রকাশ না করে বলে,
‘আমার মতো কেন? আমি হলে কি প্রব্লেম?’
ছোয়া তখন মৃদু হেসে বলে,
‘আপনি তো আমার ভাইয়া হন। তোমাকে সাইয়া বানালে কি চলে?’
আমানও বলে,
‘তোর সাইয়া আমি হতেও চাইনা। ভাইয়া হয়েই যে প্যারা। সাইয়া হলে প্যারার শেষ থাকবে না।’
ছোয়ার কথা হেসে উড়িয়ে দিলেও মনে মনে খুব রেগে যায় আমান। কারণ কথাটা তার একদম পছন্দ হয়নি। আমান মনে মনে বলে,
‘আমি তোরই হবো। আর তুই আমারই হবি। এটাই এখন আমাদের ভবিতব্য।’
২৩.
ছোয়া আজ সকালে ভার্সিটিতে এসে নাদিয়ার সাথে গোটা ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাদিয়া এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
‘তুই কি এত সকাল সকাল আমায় এখানে হাওয়া খাইতে নিয়ে আসছিস? ক্লাস শুরু সকাল ৮ টায়, আর আমরা ৭ টায় এসে এখানে হুদাই ঘোরাঘুরি করছি।’
ছোয়া হাত চুলকে বলে,
‘আমার বাড়িতে থাকতে দম বন্ধ লাগছিল। তাই তো চলে এলাম।’
নাদিয়া এবার বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে বলে,
‘তোর আবার দম বন্ধ লাগার কি কারণ? তোদের বাড়িতে কি অক্সিজেন পৌছায় না?’
ছোয়া অসহায় গলায় বলে,
‘আসলে একটা ঘটনা ঘটে গেছে।’
নাদিয়া বেশ আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়,
‘কি ঘটনা?’
ছোয়া এবার বলা শুরু করে,
‘আসলে আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ছাদে গিয়েছিলাম। ছাদে গিয়ে দেখি আমান ভাইয়া সিগারেট খাচ্ছে। আমি তখন নিচে নেমে আসতে চাই কিন্তু কি মনে করে যেন আমান ভাইয়ার কাছে গিয়ে তার হাতে থেকে সিগারেট টা নিয়ে নেই৷ অতঃপর ভাষণ দিয়ে বলি, “আপনি সিগারেট খাচ্ছ কেন আমান ভাইয়া? জানেন না এটা স্বাস্থ্যের জন্য কত ক্ষতি কর। এর প্যাকেটেও তো সেটা উল্লেখ করা আছে।” আমান ভাইয়া তখন আমার হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিতে চায় কিন্তু আমি সরে দাড়াই। এভাবে করতে করতে হঠাৎ আমান ভাইয়ার খুব কাছে চলে আসি আমি। আর তখন আমার কেমন জানি লাগছিল। এরপর আরো বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেল, আমি আর আমান ভাইয়া একসাথে ছাদের মধ্যে পিচলে পড়ে গেলাম৷ সেই সময় কি পরিমাণ লজ্জা যে লাগছিল বলে বোঝাতে পারব না৷ আমান ভাইয়া যদিওবা তাড়া তাড়ি করেই উঠে যায় কিন্তু তবুও আমার খুবই অকোয়ার্ড লাগছিল। আমি লজ্জায় তখনই নিজের রুমে চলে যাই৷ সকালে খেতে ডাকলে যাতে আমান ভাইয়ার মুখোমুখি না হতে হয় তাই খাবার না খেয়েই চলে আসি।’
ছোয়ার কথা শুনে নাদিয়া আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারে না। বেশ শব্দ করে হেসে বলে,
‘এতটুকু ব্যাপার নিয়ে এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমান কে তো ভাইয়ার নজরে দেখিস৷ আর ভাই বোনের মধ্যে এই ব্যাপার নিয়ে তো তেমন কোন ঝামেলা হওয়ার কথা না। তুই এত ভাবিস না চল এখন।’
ছোয়া নাদিয়ার কথায় যুক্তি খুজে পায়। সত্যিই তো তার এত রিয়্যাক্ট করার মতো কিছু হয়নি। ছোয়া আর বেশি কিছু না ভেবে বটতলার দিকে যায়। নাদিয়া একটু ফোনে কথা বলতে দূরে সরে যায়। তখন ছোয়া একাই ছিল।
এমন সময় কেউ ছোয়ার পাশে এসে দাড়ায়। ছোয়া প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটু পর পাশে তাকাতেই দেখতে পায় তোরাব তার পাশে দাড়িয়ে আছে। ছোয়া একটু দূরে সরে গিয়ে বলে,
‘আপনি কি কিছু বলবেন?’
তোরাব বলে,
‘বলতে তো চাই, কিন্তু তুমি কি শুনবে?’
ছোয়ার অস্বস্তি হতে থাকে। সে নিজের হাত চুলকে বলে,
‘যা বলার বলুন জলদি আমার ক্লাস আছে।’
তোরাব ছোয়ার কাছে এসে বলে,
‘এত তাড়া কিসের তোমার? আমি যা বলব সেটা একটু সময় নিয়ে শুনতে হবে।’
ছোয়া এবার আর থাকতে পারছিল না৷ যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তোরাব তার হাত ধরে বলে,
‘আমি তোমাকে এটাই বলতে চাই যে, আমার তোমাকে অনেক ভালো লাগে। তুমি কি আমার সাথে রিলেশনে আসবে?’
তোরাবের কথা শুনে ছোয়ার হৃদয় কেপে ওঠে। সে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না৷ হঠাৎ করেই তার হৃদস্পন্দনের গতি অনেক দ্রুত বেড়ে যায়।
তোরাব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
‘আমি তোমাকে সময় দিচ্ছি৷ এত জলদি কোন উত্তর দিতে হবে না। তবে আমি পজেটিভ উত্তরের আশাতেই থাকব।’
কথাটা বলে তোরাব চলে যায়।
২৪.
ছোয়া ভয়ে ভয়ে রাস্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। আজ নাদিয়ার সাথে একটা সিনেমা দেখতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন রাস্তাঘাট বেশ ফাকা। তাই খুব ভয় হচ্ছিল তার। বিশেষ করে জাহিদের দেওয়া হুমকিই তাকে বেশি ভাবাচ্ছিল।
ছোয়া ভয়ে ভয়ে হাটছিল এমন সময় উপলব্ধি করে কেউ তার পেছন পেছন আসছে। ছোয়া ভয়ে মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করে। আর একটু সামনে আগাতেই ছোয়া বুঝতে পারে দুই তিন-জন ছেলে তার পেছনেই দাড়িয়ে আছে এবং তারা সম্ভবত বখাটে।
ছোয়ার আশংকাকে সঠিক প্রমাণ করে একটা ছেলে পেছন থেকে বলে উঠল,
‘কোথায় যাচ্ছ সুন্দরী? আমাদেরও বলো আমরা কোলে করে নিয়ে গিয়ে তোমায় পৌছে দিচ্ছি।’
কথাটা শোনামাত্রই রাগে ক্ষোভে ফে’টে পড়ে ‘ ছোয়া। কোন কিছু বিবেচনা না করে পেছনে ফিরে থা’প্পর বসিয়ে দেয় ছেলেটির গালে। ছেলেটি রেগে গিয়ে তার পাশের দুজন সঙ্গীকে বলে,
‘ধর একে। আজ এর সব তেজ বের করে দেব।’
ছোয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলে দুটো তার হাত ধরে ফেলে। ছোয়া তখন আমানের বলা কথাগুলো মনে করে। এবং মনে সাহসের সঞ্চার করে একটি ছেলের মেইন পয়েন্টে স’জোরে লা’থি দেয়। ছেলেটা ব্যাথায় কুকিয়ে দূরে সরে যায়। তার একটি হাত আলগা হয়ে যায়। এই সুযোগে সে নিজের ব্যাগ থেকে স্প্রে বের করে বাকি দুটো ছেলের চোখে ছিটিয়ে দেয়। ছেলেদুটো চোখ ধরে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে।
ছোয়া এই সুযোগে দৌড়ে পালিয়ে আসে। একটু দূরে এগিয়ে আসতেই তোরাবের দেখা পায় ছোয়া। ছোয়াকে দৌড়ে আসতে দেখে তোরাব বলে,
‘কি হয়েছে? এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন?’
তখন ছোয়া তোরাবকে সব কিছু খুলে বলে। সব শুনে তোরাব বলে,
‘ঠিক আছে চলো, আমি তোমাকে বাড়িতে পৌছে দিচ্ছি।’
ছোয়া আর আপত্তি জানায় না। কারণ এখন এমনিতেই তার বিপদ। তোরাব ছোয়াকে তার গাড়িতে উঠলে বলে। ছোয়া তোরাবের গাড়িতে ওঠে৷ তোরাব ছোয়াকে গাড়িতে করে নিয়ে তার বাড়িতে পৌছে দেয়। ছোয়া গাড়ি থেকে নেমে তোরাবকে ধন্যবাদ জানায়। অতঃপর কিছুটা ভেবে বলে,
‘আমি আপনার তখনকার প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে চাই। মানে রিলেশনে যাওয়ার ব্যাপারে। আমার উত্তর,,,’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨
>>একটা খুশির খবর আছে। এখন থেকে আবার নিয়মিত গল্প দিবো ইনশাআল্লাহ। তবে একটা শর্ত করে আপনারা নাইস, নেক্সট না করে গঠনমূলক কমেন্ট করুন। তাহলে গল্প লেখার এনার্জি পাই।