#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আমানকে জামিনে বের করে আনেন আব্দুল হোসেন। তবে এর জন্য তাকে ঝক্কি পোহাতে হয়নি, এখান থেকে ওখানে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। শেষ অব্দি তো এমপি লতিফ চৌধুরীকে ঘু’ষ পর্যন্ত দিতে হয়েছে। অতঃপর আমানকে বের করতে আনতে পেরেছেন তিনি।
আসলে বাবারা এমনই হয়, মুখে যতো যাই বলুক সন্তানের বিপদে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে তারা পিছপা হন না। আমানকে নিয়ে আজ বাড়ি ফিরলেন আব্দুল হোসেন। ছোয়া, মতিয়া বেগম, জান্নাতুল খাতুন সবাই ড্রয়িংরুমেই বসে ছিল। আমানকে ফিরতে দেখেই জান্নাতুল খাতুন ছুটে যান তার কাছে। আমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
‘তুই ঠিক আছিস তো আমান? এই ক’দিনেই কতো শুকিয়ে গেছিস।’
আব্দুল হোসেন বেশ জোরালো গলায় বলেন,
‘ছেলের যত্ন পরে করবে আগে ওকে বলে দেও এইবার বাচিয়েছি জন্য বারবার ওকে বাচাতে পারব না। এসব গুন্ডা’মি মস্তামি আর চলবে না। এখন এসব বাদ দিয়ে ওকে আমার অফিসে যোগদান করতে হবে। আমি ভেবেছি এখন ওকে আমার অফিসে আমার আন্ডারেই যোগদান করুক এরপর অভিজ্ঞতা অর্জন করলেই ওকে সিইও পদে বসিয়ে আমি অবসর নেব।’
আমান বিনাবাক্যে তার বাবার কথা নেয়। বলে,
‘ঠিক আছে তুমি যা চাইছ তাই হবে। আমি তোমার অফিসে তোমার আন্ডারেই যোগদান করব।’
আব্দুল হোসেন এবার বেশ খানিকটা নিশ্চিত হন। কারণ তিনি ভাবতে পারেন নি আমান এত সহজে তার কথায় রাজি হবে।
অন্যদিকে আমানের দৃষ্টি ছোয়ার দিকে স্থির। আমান ছোয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
‘আমি এখন ভেতর থেকে অনুভব করেছি ছোয়াকে হারানোর ভয়। এই রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে যেকোনো সময় যেকোনো ক্ষতি হতে পারে। তার থেকে ভালো আমি রাজনীতি বাদ দিয়ে অফিসে যোগদান করি তাহলে আমি ছোয়ার দায়িত্বও নিতে পারব।’
ছোয়া ভাবতে থাকে,
‘তাহলে আমান ভাইয়ার সুমতি হলো। এখন সবকিছু ঠিক থাকলেই হলো।’
মতিয়া বেগম ঠান্ডা সরবত এনে দেন আমানকে। বলেন,
‘এইটা খাইয়া লও। থানায় থাকতে অনেক কষ্ট সইতে হইছে। তাছাড়া এই রোইদে বাইর থাকি আইলা, এইডা খাও দেখবা ভালো লাগবে।’
আমান সরবতটা নিয়ে খেয়ে নেয়।
২৯.
আমান আজ প্রথম বারের মতো অফিসে যাবে। তাই বেশ ভালো করে তৈরি হয়ে নিচ্ছে। স্যুট বুট পড়ে একদম তৈরি হয়ে বের হয়ে পড়ল আমান। নিজের রুম থেকে বের হতেই সবার প্রথমে সাক্ষাৎ হলো ছোয়ার সাথে। ছোয়াকে দেখে আমান এগিয়ে যায় তার দিকে। ছোয়ার কাছে এসে বেশ ভাব নিয়ে তাকে প্রশ্ন করে,
‘আমাকে কেমন লাগছে রে?’
ছোয়া আমানকে এক পলক দেখে উত্তর দেয়,
‘ঠিকঠাকই তো লাগছে তবে টাই টা ঠিক ভাবে পড়তে পারেন নি।’
আমান বেশ মনোক্ষুণ্ণ হয় কথাটা শুনে। কি শুনতে চাইল আর কি শুনতে পারল। নিজের রাগকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
‘আমি টাইটা ঠিকভাবেই বেধেছি হয়তো খুলে গেছে তুই একটু লাগিয়ে দে।’
ছোয়া বলে,
‘আমি পারবো না। তাড়াতাড়ি বিয়ে করে বউ আনুন ঘরে। তারপর তাকে দিয়েই সব কাজ করিয়ে নিয়েন।’
আমানের রাগ এবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। ছোয়াকে কিছু শোনাতে যাবে তার আগেই আব্দুল হোসেন তাকে ডাক দিয়ে বলল,
‘আমান কোথায় তুই? তাড়াতাড়ি চল এখান থেকে গিয়ে আমাদেরকে জরুরি একটা মিটিং এটেন্ড করতে হবে।’
আমান আর কিছু বলতে পারল না। কিছু না বলেই চলে গেল৷ ছোয়াও চলে গেল নিজের রুমে। একটু পর আবার তৈরি হয়ে ভার্সিটিতেও যেতে হবে।
✨
আমান আজ প্রথম দিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরল। আজকের মিটিংটা বেশ ভালোই হয়েছে। আমানের কাজে ক্লায়েন্টরা সবাই বেশ মুগ্ধ। তবে আমানের আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোন সুযোগ নেই এখন থেকে সব কাজ শিখে নিতে হবে।
আমান বাড়িতে এসেই প্রথমে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। অতঃপর বেশ জোরে বলে,
‘আমার গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্লিজ এসে এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও।’
কিছু সময়ের মধ্যেই জান্নাতুল খাতুন এক গ্লাস পানি নিয়ে হাজির হন। আমানের হাতে পানির গ্লাস তুলে দিয়ে বলেন,
‘আমি আর কত দিন তোকে সামলাব বল তো? এখন তো তুই অফিসেও যোগ দিয়েছিস। এবার বিয়েটা করে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’
আমান বলে,
‘হুম বিয়ে তো করবোই। সময় হোক আমি অবশ্যই বিয়ে করব।’
‘সময় আর কবে হবে বল তো?’
‘আর বেশি দেরি নয় আম্মু। খুব শীঘ্রই তুমি নিজের ছেলের বউ কে বরণ করে ঘরে তুলতে পারবে।’
৩০.
ছোয়ার সামনেই পরীক্ষা। তাই এখন বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে মেয়েটা। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করারও সময় পাচ্ছে না। এসবের মাঝে সব থেকে অসহায় যেন আমান। আগে বাড়িতে থাকলে অধিকাংশ সময়ই ছোয়াকে দেখতে পেত। নিজের চোখের তেষ্টা মেটাতে পারত। অফিসে যোগ দেওয়ার পর তেমন দেখা হয়না, ছোয়ার পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসার পর তো এখন তার দেখা পাওয়া একেবারে অপ্রতুল হয়ে গেছে। ছোয়াকে না দেখতে পেয়ে আমান যেন ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে।
আমান এবার বুঝতে পারছে তার জীবনে ছোয়াকে ঠিক কতটা প্রয়োজন। তাই আমান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল আর বেশি দেরি করবে না স্ব। খুব শীঘ্রই ছোয়াকে নিজের মনের কথা জানাবে। অতঃপর তাকে বউ বানিয়ে ঘরে তুলবে।
✨
আমান আজ অফিস থেকে ফিরল ক্লান্ত শরীরে। ছোয়ার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। ছোয়াও সবেমাত্র ভার্সিটি থেকে ফিরল। ছোয়াকে ফিরতে দেখে আমান তাকে ডাক দিল৷ ছোয়া কাছে আসতেই বলল,
‘তোকে একটা কথা বলার ছিল।’
ছোয়া তখন বলে,
‘আমান ভাইয়া আপনি এসে গেছেন। আমাকে কি বলবেন?’
‘বলছি দাড়া।’
আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই জান্নাতুল খাতুন তাকে ডাক দিল। আমান বিরক্ত হয়ে উঠে দাড়ালো। ছোয়াকে বলল,
‘তুই একটু এখানেই থাক, আমি আম্মুর কথা শুনে এসে তারপর তোর সাথে কথা বলছি।’
ছোয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘জ্বি, আচ্ছা।’
আমান জান্নাতুল খাতুনের রুমে প্রবেশ করেন। জান্নাতুল খাতুন আমানকে দেখেই বলে,
‘তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে?’
আমান ভ্রু কুচকে জানতে চায়,
‘কি খবর?’
জান্নাতুল খাতুন বলেন,
‘দাড়া তোর আব্বু আসুক তারপর বলছি।’
কিছু সময় পরেই আব্দুল হোসেন রুমে প্রবেশ করেন। তিনি রুমে আসতেই জান্নাতুল খাতুন বলেন,
‘তোমাদের বাপ -ছেলেকে আমি অনেক জরুরি একটা কথা জানাতে চাই। তোমরা তো জানোই আমানের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে৷ আর এখন ও তো অফিসেও জয়েন করেছে তাই আমি ওর বিয়ের কথা ভাবছি।’
আব্দুল হোসেন খুশি মনে বলেন,
‘এটা তো অনেক ভালো কথা। পাত্রী দেখা শুরু করে দাও।’
জান্নাতুল খাতুন বলেন,
‘পাত্রী দেখতে হবে না। পাত্রী আমার পছন্দ করাই আছে। আমার ছোট ভাইয়ের মেয়ে আদর, অনেক ভালো মেয়ে। এই বছর মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। ভাই ওর বিয়ে দিতে চায়৷ ভাবছি আদরের সাথেই আমানের বিয়েটা দেব।’
নিজের মায়ের কথা শুনে চমকে যায় আমান। ছোয়া ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা সে ভাবতেও পারে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨