#প্রণয়সন্ধি– ২৬ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
–‘ আপনি যখন বাসা ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকে বাসার কেউ আমার সাথে কথা বলত না। জানেন আমার খুব কষ্ট হতো, এমনকি আমার বাবা-মা ও না। এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় আমার সাথে কেউ গেলো না। অথচ যখন আমি এক্সাম হলে গিয়ে পৌছাতাম দেখতাম বাবা-মা’রা তাদের সন্তানকে কত আদর করে বুঝিয়ে দিচ্ছে তখন আমার একা লাগত চারিদিকে সকলে অচেনা অপরিচিত কেউ আমার আপনা না…জানেন বাসার সবাই আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আমি পড়ছি কি-না খেয়েছি কি-না খোঁজ রাখত না। মামনি তো সবসময় আপনার কথা ভেবে ভেবে প্রেশার উঠিয়ে অসুস্থ হয়ে থাকত। আমার এক্সাম শেষ এমন সময় শুনলাম আম্মু প্রেগন্যান্ট আমার কোনো ভাইবোন হবে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। সবাই একটু স্বাভাবিক হলো। কিন্তু সে সুখ, আনন্দ বেশি দিন থাকলো না শিরি থেকে পড়ে আম্মু মাথা গুরুতর আঘাত পেল। বেবি মিসকারেজ হয়ে গেলো। এতো র*ক্তক্ষর*ণে আম্মুর ক্রিটিকাল অবস্থা তখন ফুপি বলল আমি না-কি শিরিতে তেল ফেলে রাখছিলাম। আমার যে কোনো ভাইবোন হবে এটা না-কি আমি মেনে নিতে পারি নি তাই রাগের মাথায় করেছি। ফুপি সেটা নিজের চোখে দেখেছে। আমি শকট হয়ে তাকিয়ে রইলাম। জীবনে প্রথম পাপা আমার গায়ে হাত তুলল। আমি পাথর হয়ে গেলাম। তখন এমন সময় কারোর মাথার ঠিক নাই। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করল না…’
কাঁদতে কাঁদতে শানায়ার বেহাল অবস্থা জুবরান ওকে বিছানায় বসিয়ে পানি খাইয়ে বলল
–‘ কান্না থামিয়ে তারপর বল’
শানায়া কান্না থামাল না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল
–‘ আম্মু চলে গেলো আমাকে ছেড়ে। পাপা সেদিন আমাকে দরজা বন্ধ করে বেল্ট দিয়ে মে*রেছি। বাবাই এসে বাচ্চাল তখন আমার ম*রণ অবস্থা আমি জানি পাপা মা’কে ভালোবাসত তাই অধিক শকটে এমন করেছে। আমাকে চাচু, আর বাবাই মিলে হসপিটালে ভর্তি করল। জানেন আমি কত একা ছিলাম জীবনের মোড় কীভাবে ঘুরে গেছিল। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। আমি সকলে আদরের শানায়া তখন সকলে চোখের বি*ষ’
জুবরানের চোখেও পানি চিকচিক করছে।
–‘ মা’কে হারিয়ে বুঝলাম ও-বাড়িটায় আমার দাম আর নেই পাপা আমাকে সবসময় ইগনোর করত কথা বলত না নিজেকে কতদিন রুমে দরজা বন্ধ করে রাখছে। মামনি আমার সাথে কথা বলত না। শুধু খাবার দিয়ে যেত রুমে। দাদুমণি ও তখন আমাকে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে বলত ‘খু**নি মেয়ে চোখের সামনে থেকে দূর হ’। বাড়িতে শুধু বাবাই আমাকে বুঝত। দিনের পর দিন সবার ধারাল জিহ্বার আঘাত সহ্য করে পড়ে থাকলাম। মা যাওয়া ছয়মাস না যেতেই ফুপি, দাদুমণি পাপার বিয়ের কথা তুলল। পাপাও জানি কীভাবে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মন বলল পাপা কী আম্মুকে ভালোবাসে না? ভালোবাসা কী মানুষটার সাথে সাথে ফুড়িয়ে গেলো। পাপাকে বিয়েতে বারণ করার সাহস হলো না যদি আবার মা*রে সেই ভয়ে পাপার থেকে দূরত্ব বেড়ে গেছে। আমার সৎমা হয়ে গেলো তিনি আমার সাথে হ্যাঁ না কিছুই বলতেন না। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বললেও আমাকে দেখে গম্ভীর হয়ে যেতেন। সতীনের মেয়ে কি-না। আমি কিছুতেই তাকে পাপার সাথে আমার মায়ের জায়গায় দেখতে পারছিলাম না খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি নিজেকে দিন দিন ঘর বন্দী করে ফেলাম। একদিন অসাবধানবশত কলেজে যাওয়ার জন্য তারাহুরো করে শিরি দিয়ে নামছিলাম। আমার সৎমাও নামছিল আমার সাথে তার ধাক্কা লাগে পড়ে যায় ওনার কনুই ছিঁড়ে যায়। পাপা আমাকে সেদিন ও মা*রল।… আমি একদম ভেঙে গেলাম। মামনি মনে করে আমার জন্য সে ছেলে, বোন হারিয়েছে। ফুপিত আমাকে অলক্ষি, অপয়া ছাড়া ডাকেই না। আমি দরকার ছাড়া রুম থেকে বের হয় না। খাওয়া দাওয়া প্রায়ই ছেড়ে দিয়েছি। এমন সময় খবর এলো সৎমা প্রগ্ন্যান্টে সবাই খুব খুশি আমি পরিকল্পনা করে নিলাম এ বাড়িতে আর থাকব না এক্সামটা হয়ে গেলেই চলে যাব। এইচএসসি পরীক্ষা কাছে চলে আসল শেষ হওয়ার দিন রাতেই বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম কিছু না ভেবে। সাতক্ষীরা থেকে খুলনা বাসে উঠে। খুলনা থেকে আবার ঢাকার বাসে উঠলাম। আমি আশায় গিয়েছিলাম একজন প্রডিউসারের কথায় উনি আমাকে বলেছিল আমাকে ফ্লিমে কাজ করাবে আপসোস ঠকে গেলাম বাসে বসে কতবার ফোন দিলাম ধরল না। এখন ফিরে যাবার পথও নেই মনে। এদিকে বাসের মধ্যে বাজে স্পর্শে আমার শরীর ঘিনঘিন করছে ভয় করছে। ঢাকায় বাসস্ট্যান্ডে এসে দাড়িয়ে ছিলাম কোথায় যাব কী করব কিছু মাথায় ছিল না। ওখানকার কিছু বখাটে ছেলে… ‘
শানায়াকে থেমে যেতে দেখে জুবরান ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল
–‘ কী? কী করেছে? বলছিস না কেনো’
শানায়া ডুকরে কেঁদে উঠলো বলল
–‘ জীবনে প্রথম আমি নিজে অপবিত্র ভাবলাম ওদের স্পর্শে আমার ম*রে যেতে ইচ্ছে করছিল। জানেন ওরা আমার বুক, পেট…’
শানায়া কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। জুবরানের দম বন্ধ হয়ে আসল। ওর চোখ দিয়েও পানি পড়ছে। শানায়াকে বুকে আগলে নিলো। শানায়া বলল
–‘ জানেন সেদিন চিৎকার করে কেঁদে ছিলাম আমার শেষ রক্ষা হয়েছিল। আমি বেঁচে গেছিলাম। আমার মিরাজ বাবাই ফেরেশতার মতো এসে বাঁচিয়ে ছিল। তার সাথে করে নিজের বাসা নিয়ে গিয়ে নিজের মেয়ের মতো করে আগলে রেখেছিল। নাহলে আজ এখানে থাকতাম না ম*রে যেতাম।’
জুবরান কপালে ঠোঁট চেপে বলল
–‘ আ’ম সরি জান। আমি বুঝতে পারি নি এতো কিছু হয়ে গেছে। আমি তখন নিজেকে সামলিয়ে যদি ঠান্ডা মাথায় বাড়ি ছাড়তাম তাহলে তোর ওপর দিয়ে এতো কিছু হতো না। আমি সরি জান। আমার ফুলটাকে আমি আর কষ্ট পেতে দিব না। আমার শেষ একটা চান্স দে।’
–‘আমি আর ধোঁকা, মিথ্যা অপবাদ, খুনি উপাদ্ধি পেতে চাই না। আমি শান্তি চাই। আমাকে প্লিজ আমাকে শান্তির জায়গান নিয়ে চলুন’
শানায়া কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে, মাথা ভার হয়ে গেছে। জুবরান ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে কতটা কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা সবটা তার জন্য নিজেকে দোষারোপ করে বার বার। রুম সাউন্ডপ্রুভ হওয়ায় কেউ দুজনের কথা শুনল না। দুজন দুজনাতে মিশে রইল। সেকেন্ডের কাটা ডিঙিয়ে মিনিট, মিনিট ডিঙিয়ে ঘন্টায় গিয়ে ঠেকলো। আজানে ওদের ঘুম ভেঙে গেলো। কান্না করায়ই দুজনের চোখমুখের বেহাল অবস্থা। চোখমুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। দুজন কেউ কোনো কথা বলল না। নামাজ আদায় করে শানায়া কিচেনে এসে ইফতারি তৈরি করতে লাগল। জিনিয়াও পাশে এসে দাঁড়ালো। অনেকক্ষণ শানায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ওর অস্বস্তি লাগছে বলে জিজ্ঞাসা করল
–‘ কিছু লাগবে আপনার? ‘
–‘ আপনি করে বলছিস কেনো? আমি কি তোর পর?’
–‘আপন ছিলেন কবে?’
–‘ অভিমান, রাগ আমার ওপর? ক্ষমা করে দে না মা’
চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রণয়সন্ধি– ২৭ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
ইফতারে সময় পাপড়ি শাশুড়ির হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। রায়হানের মা থমথমে মুখে কাজ করে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আড় চোখে তাকাচ্ছে। পাপড়ি বুঝতে পেরেও নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে। রোজার মাসের মধ্যে শশুড়বাড়ি এসেছে পাপড়ি এতে কেউ কিছু বলে নি। বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। বিয়ে যখন হয়েই গেছে তাহলে আর বাঁধা দিয়ে কী লাভ। ওদের বিয়ের খবর আশেপাশেরসহ আত্মীয় স্বজনরা জেনে অনেকে অনেক কথা বলেছে। রায়হানের মা সবার কথা শুনে স্বামীর সাথে কথা কা*টাকা*টি করলেও রায়হান বা পাপড়িকে কিছু বলে নি। পাপড়ি এ বাড়িতে আসার পর থেকে শাশুড়ির আশেপাশে থাকছে। এটা ওটা বলে কথা বলছে রায়হানের মা কোনোটার উত্তর দিচ্ছে আবার কোনোটার উত্তর দিচ্ছে না। এই যে পাপড়ি ওনার আশেপাশে থাকছে এই ব্যাপারটা ওনার পছন্দ হয়েছে। বরফের ন্যায় মন গলতে শুরু করেছে। ওনার ইচ্ছে ছিল একটা মেয়ে হবে নিজের মতো করে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে রাখবে ওনার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে।
–‘ মা অনেকক্ষণ তো হলো অগুনের পাশে দাড়িয়ে আছেন আপনি গিয়ে রেস্ট করুন না হলে শরীর খারাপ করবে।’
রায়হানের মা হঠাৎ রেগে গেলেন কর্কশ গলায় বলল
–‘ তুমি আগুনের পাশে দাড়িয়ে নেই? আমাকেই কেনো শুধু বলছ? আমাকে এতো নরমাল ভেব না বুঝ বয়স হলে-ও আমি এখনো ইয়াং’
পাপড়ি ফিক করে হেসে ফেলল। রায়হানের মা চোখ রাঙালেন। ও খুব কষ্টে হাসিটা চাপল। রায়হান বাসা ফিরে এসে দুজনের কথপোকথন শুনে ওরও হাসি পেল মুখ টিপে নিঃশব্দে হাসল। দুজনে একটু একটু করে সহজ হচ্ছে হোক না। রায়হান বলল
–‘ মা। এদিকে আসো আমি পাপড়িকে হেল্প করছি। তোমাকেও কত হেল্প করেছি না? তাছাড়া বাড়ি বউ এসেছে তুমি পায়ের ওপরে পা তুলে অর্ডার করবে শুধু’
রায়হানের মা তিক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে ছিল এতোক্ষণ রায়হানের কথা শেষ হতেই বলল
–‘ বউ এনেছি বউ মেয়ের মতো। কাজের লোক আনি নাই যে সারাদিন বউ খাটিয়ে বসে বসে খাব। যতদিন হাঁটুতে জোর আছে আমিই করতে পারব’
পাপড়ির রায়হানের কথা শুনে মুখে আঁধার নেমে মন খারাপ হলে-ও রায়হানের মায়ের কথায় মুগ্ধ না হয়ে পারল না। ওনাকে যতটা খারাপ ভেবে ছিল অতোটা খারাপ ওনি না।
রায়হানের মা কাজ করায় মন দিল। রায়হান মায়ের আড়ালে পাপড়ির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল
–‘ সরি। কষ্ট দিয়ে ফেললাম। আমি জানি মা আমার কথায় সাই দিত না তাই তোমাকে ম্যাজিক দেখালাম।’
পাপড়ি মুচকি হাসল। রায়হানের মা পিছনে ফিরতেই দুজনে হকচকিয়ে গেল। ছিটকে সরে গেলো। ওনি বলল
–‘পাপড়ি তোর চাকরি কী ছেড়ে দিয়েছ? কাজে যা-ও না কেনো?’
পাপড়ি আমতা আমতা করে বলল
–‘ আসলে কয়দিন ছুটি নিয়েছি। ভাবছি চাকরিটা ছেড়ে দিব’
–‘ কেনো বিয়ে হয়ে গেছে বলে চাকরি করবে না? আমরা তো তোমাকে বারণ করছি না। চাকরি করো প্রতিটা মেয়েকেই সাবলীল হওয়া উচিৎ। পড়াশোনা করেছ চাকরি করবা না তাহলে পড়াশোনা করলে কেনো? ভিম দিয়ে হাড়ি মাঝতে?’
ওনার কথায় পাপড়ি হতভম্ব হয়ে গেলো ‘ভিম দিয়ে হাঁড়ি মাঝতে পড়াশোনা করেছে ও? আর পড়াশোনা না করলে ছাই দিয়ে হাঁড়ি হতো!’ রায়হান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।
•
ইফতারি শেষ করে শানায়া সব গুচ্ছিয়ে রাতের খাবারের রান্নার ব্যবস্থা করছিল। জুবরান, নুবাহান, জিনিয়া গল্প করছিল। শানায়াকে কাজ করতে দেখে জিনিয়া এসে কাজ করতে চাইল কিন্তু শানায়া করতে দিল না। জুবরান আর শানায়ার মধ্যে আর কোনো হয় নি। এরইমধ্যে কলিং বেল বাজল জুবরান দরজা খুলে হতবিহ্বল হয়ে গেলো। শানায়ার বাবা আর জুবরানের বাবা এসেছে। শানায়ার বাবা হুইলচেয়ারে বসে আছে একটা পা নেই। জুবরানের মাথা সব গুলিয়ে ফেলল এসব কী হচ্ছে? কিচেন থেকে শানায়াও নিজের বাবার এমন অবস্থা দেখে চমকালো। এসব কী!
জুবরান বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলল
–‘ এসব কী? বাবাই এর এসব কীভাবে হলো? তোমরা আমাকে জানাওনি কেনো?’
জিনিয়া কিচেন থেকে বের হয়ে এসে বলল
–‘ রাগ করিস না বাবা তুই দেশের বাইরে ছিলি তাই তোকে আর চিন্তা দিতে চাই নি’
–‘ তাই বলে আমাকে জানাবে না’
শানায়ার বাবা বলল
–‘ আরে আমি ঠিক আছি। সব পাপের শাস্তি বুঝলি। আমার মেয়ে কোথায় ও? ডাক না’
শানায়া নিজের বাবার এমন অবস্থা দেখে হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। জুবরান একবার শানায়ার দিকে তাকালো। শানায়া বিরবির করে বলল ‘আমি এমনটা চাই নি। চেয়েছি সবাই ভালো থাকুক। আমি চাই নি পাপার এমন কষ্ট’
জিনিয়া বলল
–‘ শানায়া এদিকে আয় দেখ তোর পাপা এসেছে’
শানায়ার বাবা সামনে যাওয়ার সাহস হলো না। বুক কাঁপছে। জুবরান কিছু বলছে না ও শানায়ার ওপরে এব্যাপারে কোনো কথা বলবে না ভেবে রেখেছে সব সিদ্ধান্ত শানায়ার। কিছু বললেই যদি শানায়া ওকে ছেড়ে চলে যায় তখন!
জিনিয়া টেনে আনল শানায়াকে। শানায়ার বাবা ছলছল চোখে অনুতপ্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে। কত অন্যায় করেছে মেয়ের ওপরে এতোগুলো বছর সেই অনুতপ্তর আগুনে দাউদাউ করে পুড়েছে। মেয়ের হাত ধরে হু হু করে কেঁদে দিল উনি। শানায়া কাঠ হয়ে দাড়িয়ে রইল। যেনো অনুভূতিহীন কোনো পুতুল।
–‘ পাপাকে ক্ষমা করা যায় না মা রে। দেখ আমার অবস্থা কয়দিনই বা বাঁচব বল। আমি যে ক্ষণে ক্ষণে পুড়ছি। তোকে, তোর মা’কে হারিয়ে।’
–‘….’
শানায়া নিশ্চুপ। জুবরানের বাবা বলল
–‘ বুড়বুড়িগুলোর ওপরে আর কত রাগ করে থাকবি। দেখ সবাই কত অনুতপ্ত। মানুষ তো ভুল তো হবেই। তাই বলে ক্ষমা করবি না’
শানায়া এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ তুমি তো কোনো ভুল করো নি বাবাই। তুমি তো আমাকে আগলে রেখেছিলে। তাহলে বারবার ক্ষমা কেনো চাইছ’
–‘ না রে মা তোকে আমি আগলে রাখতে পারি নি। আগলে রাখলে তুই বাড়ি ছাড়তি না। ওদের দোষে আমি ও দোষী। ওরা যে নিজের ভুল বুঝতে পারছে। ‘
জুবরান বলল
–‘ তোমরা ফ্রেশ হও অনেক দূর থেকে এসেছ। খেয়েছ কিছু? ইফতার করছ? ‘
–‘ হ্যাঁ ফ্লাইট থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে ইফতার করে আসছি’
শানায়ার বাবা শানায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কত বড় হয়ে গেছে মেয়ে তার। মায়ের মতো হয়েছে। শানায়া এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে বাবার দিকে তাকাচ্ছে যেনো লুকোচুরি খেলছে। ওনি মেয়ের কান্ড দেখে মলিন হাসল।
চলবে ইনশাআল্লাহ
[আসসালামু আলাইকুম। এতোদিন ইদের কাজ, ঘুরাঘুরির জন্য লেখার সময় পাই নি। রেসপন্স পেলে বোনাস পার্ট দিব।]