#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৬
ফুয়াদের কথা যেন হুর শুনতেই পায়নি। হেসেই যাচ্ছে।
ফুয়াদ কপট রাগ দেখিয়ে বললো,একদম হাসবে না বলে দিলাম।
হুর হাসি বন্ধ করে বলে, আমি হাসবো, আপনি মানা করার কে?
ফুয়াদ বললো, দেখো মেয়ে একদম মুখে মুখে তর্ক করবেনা।
আমি কোথায় তর্ক করলাম। আপনি জোক্স বলেছেন আমি একটু জোক্স শুনে হাসলাম। অন্য পুরুষের সাথে তো আর হাসিনি।
-আমি বললাম তোমাকে আমি স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না। এখানে হাসির কি আছে?
– আপনি মানা, আর না মানার কে? যখন উপর থেকেই আমাদেরকে এক হওয়ার দলিল দিয়ে দিয়েছে। তখন আপনি মানলেও আমি আপনার স্ত্রী আর না মানলেও। কালিমা পরে সবাইকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছেন আমায়। এখন বললেই হলো স্ত্রী হিসেবে মানিনা!
– দেখো বিয়ে করেছি মায়ের জন্য আর নূরের জন্য। নয়তো তোমাকে আমি কখন বিয়ে করতাম না।
– সে আপনি যার জন্যই বিয়ে করেন বিয়ে তো হয়েছে।
-দেখো বাসায় তুমি আমার ওয়াইফ না শুধু নূরের ম্যাম হিসেবে থাকবে।
– অ আচ্ছা। তা কোন ম্যাম পার্মানেন্ট ছাত্রীর বাসায় থাকে?
– তুমি প্রচন্ড বিরক্তকর একটা মেয়ে! কই ভাবলাম একটা অসহায় মেয়েকে আমি রক্ষা করি।তুমি তো দেখছি বি/চ্ছু।
হুরতো ভিতরে ভিতরে প্রচুর ভয় পাচ্ছে কিন্তু তা কিছুতেই ফুয়াদকে বুঝতে দেয়া। যাবে না।কারণ আলো বেগমের মুখে ফুয়াদের অনেক কথাই শুনেছে।
আলো বেগম বলেছিলেন,তার ছেলে নে/শা করে কারো কথা শোনেনা। নিজের মন মতলবি। আর ভয়তো কাউকে পায়ই না। কিন্তু হুরকে শক্ত হতে হবে। ফুয়াদকে সঠিক পথে আনতে হলে। ভয়কে জয় করতে হবে।এখন ভয় পেলে সব সময় ভয় পেয়ে থাকতে হবে।
_____________________________________________
আদিয়া এসে হুরের বাসায় উপস্থিত । তখন মাহতাব সাহেব রুহুল মিয়ার সাথে ঝামেলা করছেন। দু’চারজন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। কেউ কোন প্রতিবাদ করছে না। সবার বর্তমানে এমন অধঃপতন হয়েছে, যে নিজের সামনে কাউাকে মে/রে ফেলতে দেখলেও ভাবে,তাকে মা*র*ছে মারুক তাতে আমার কি? আমি মানে মানে বেঁচে থাকলেই হয়। মানবতা যেন বিলীন হওয়ার পথে। আদিয়া ভেতর ঢুকে দেখে মাহতাব সাহেব রুহুল মিয়াকে অকথ্য ভাষায় গা/লা/গা/লি করছেন। এক পর্যায়ে রুহুল মিয়ার গায়ে হাত তোলার জন্য হাত ওঠাতেই, আদিয়া রেগে মাহতাব সাহেবের হাত ধরে বসলো।মাহতাব সাহেব আদিয়াকে দেখে আরো রেগে গেলেন।নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,তোর ভাই আমার মুখের সামনে থেকে খাবার কেঁড়ে নিয়েছে।সেই শাস্তি আমি তোকে দেবো।এবার বিয়ে আমি তোকে করবো।আদিয়া প্রচন্ড ছটফটা মেয়ে। মাহতাব সাহেবের কথা শুনে আদিযা স্বজোড়ে তার গালে ঠাসসসসস করে চড় বসিয়ে দেয়। ঝাঁঝাল কন্ঠে বলে,তোর মতো নর্দমার কিট আমি জীবনে দেখেনি। লজ্জা করলো না এই কথা বলতে। আদিয়া ঘরে তাকিয়ে ফুয়াদকে দেখতে না পেয়ে। আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলো বাহিরে সিএনজি ভাড়া করে নিয়ে এসেছিল। সিএনজিতে উঠে ড্রাইভার কে নিজের বাসার ঠিকানা বলে দেয়ে।ঘৃণায় শরীর কেমন রি রি করছে একটা মানুষ কতটা কলুষিত হলে এমন জঘন্য কথা বলতে পারে!
মাহতাব সাহেব আদিয়ার পিছু পিছু আসে কিন্তু ততক্ষণে আদিয়া তার নাগালের বাহিরে।
______________________________________________
হুর আর ফুয়াদ বাসায় আসতে আসতে প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই। ফুয়াদ সামনে হাঁটছে, হুর ফুয়াদের পিছনে। হাঁটছে আর চিন্তা করছে কি থেকে কি হয়ে গেলো।কিন্তু আমি কি এই মানুষটার সাথে মানিয়ে নিতে পারবো। এসব ভেবে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কিছুর সাথে শাড়ী আটকে পরে যেতে নিলে ফুয়াদ হুরকে আগলে নেয়। এই প্রথম ফুয়াদ হুরের দিকে দৃষ্টি দিলো।পা থেকে মাথা অব্দি আবৃত করা।ফুয়াদ হুরকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,যেটা পরে চলতে সমস্যা হয় সেটা পড়েছো কেন?চোখ খুলে তারপর হাঁটো। হুর চোখের সামনে থেকে কাপড়ের আবরণ সরিয়ে ফেললো।এটাতো আগেই করা উচিৎ ছিলো। নিজেই মনেনে বলছে হুর। ততক্ষণে ফুয়াদ বাসার ভেতর চলে গিয়েছে।
আলো বেগম হল রুমেই পায়চারি করছিলেন।কি এমন হলো সেই চিন্তায় ব্যস্ত। এরমধ্যেই ফুয়াদের গম্ভীর কন্ঠ কানে আসলো, ফুয়াদ বলছে,দেখ বিয়ে করতে বলেছো বিয়ে করেছি এবার তোমরা ওর সাথে কি ভাবে ডিল করবে আমি জানিনা। কিন্তু আমার লাইফে, আমার রুমে আমার কোন জিনিসে যেন ওই মেয়ে অধিকার দেখাতে না আসে। বলেই বড়, বড় পা’ফেলে নিজের রুমে চলে আসে।
ততক্ষণে হুরও ভেতরে এসেছে,ফুয়াদের কথা শুনে স্তব্ধ।মনে মনে বলে, অধিকার যখন পেয়েছি তখন তো অধিকার দেখাবোই।
আলো বেগম হুরের দিকে এগিয়ে এসে হুর কে উদ্দেশ্য করে বল, কিরে বল আমাকে কি এমন হলো আমার ছেলে তোকে বিয়ে করে নিয়ে আসলো?
হুর বোরখা খুলে রাখলো,আলো বেগম হুরের দিকে তাকিয়ে আছেন,হুরের পড়নে লাল বেনারসি হালকা গহনা। আলো বেগম বুঝতেই পারছেনা এসবের মানে কি?
হুর আলো বেগমকে সব বুঝিয়ে বলা শুরু করলো। কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিয়া হুরকে কষিয়ে এক চড় মা/রে। হঠাৎ এমন হওয়াতে হুর ফ্লোরে ছিটকে পরে। আদিয়া হুরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,ছোট লোক তোদের জন্যই সমাজের উচ্চপদস্থ মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়। বড়লোক দেখলে আর হুশ থাকে না। আলো বেগম আদিয়াকে ধমক দিয়ে বলে,আদিয়া তুমি জানো তুমি কার গায়ে হাত তুলছো!তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে করা বউ। আলো বেগম হুরকে উঠিয়ে বলে, যা মা তুই নূরের রুমে যা। আমি তোর থেকে পরে সব শুনে নেবো। হুর চলে গেলো বিনাবাক্য বিনিময়ে।
আলো বেগম বললেন, আমার ভাবতে অবাক লাগে তুমি আমার মেয়ে!ভিতরে কোন কিছু আছে তোমার! একটা মানুষের গায়ে এতো সহজে হাত তুলে ফেললে,ভবিষ্যতে এই মানুষটার মুখোমুখি হবে কি করে?কথায় আছে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। তুমি ভাবো আমি অনার্সে পড়ুয়া এক মস্ত বড় মানুষ আবার বাবার টাকা আছে আমি মানুষের সাথে যাতা ব্যবহার করতে পারি?কিন্তু ভুলে যাচ্ছ কেন, টাকা আর শিক্ষাই মানুষকে মানুষ গড়ে তোলে না। নৈতিক শিক্ষা আর ব্যাবহার মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে। সকালে যেন তোমাকে আবার বলতে না হয় হুরের কাছে ক্ষমা চাইতে আমি বলার আগেই ক্ষমা চেয়ে নেবে। আদিয়া নিজের পা বাড়িয়ে দিলো দরজার দিকে। আলো বেগম বললেন, কোন ভদ্র পরিবারের মেয়ে রাত বারোটায় ঘর ছেড়ে বের হয় না। অন্যায় করলে সেই অন্যায় মেনে নেয়ার যোগ্যতাও থাকতে হয়। বলেই নিজের রুমে চলে গেলেন। আদিয়া কিছু সময় নিচে দাঁড়িয়ে থেকে। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের রুমে চলে,যাওয়ার আগে ফুয়াদের রুমে উঁকি দিলো। ফুয়াদ তখন নে/শা করতে ব্যস্ত আদিয়া ফুয়াদের রুমে ঢুকে বলল,সারারাত নে/শায় বুদ থাকো। আর দিনের বেলা দ্যা মহান ডক্টর ফুয়াদ সেজে মানুষকে ধোঁকা দাও। নিজের তো ক্লাস রাখনি। এখন বিয়ে করে ও এনেছো একটা লো ক্লাস মেয়েকে! তোমাকে দেখলে আশ্চর্য হই আরে ভাই দুনিয়াতে এরকম কতজনের বউ পরকীয় করে চলে যাচ্ছে। তাতে কি তারা তোমার৷ মতো দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়ায়!আর এমনও তো না ওই বিথীকে তুমি প্রেম পিরিতি করে বিয়ে করেছ!পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে। ওই মেয়ে চলে গেছে তার বিরহে বছরের পর বছর নে/শা করে নিজেকে শেষ করে দেবে।?
ফুয়াদ গ্লাসের শেষ ম/দ টুকু গলায় ঢেলে। আদিয়ার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলে,আমার লাইফ আমি যা খুশি তাই করবো। তাতে তোর সমস্যা কোথায়? আর ওই মেয়েকে বিয়েটা আমি না করলে তোর শ্বশুর করত। সেটা ভালো হত।
আদিয়া কিছু বলতে যেয়েও চুপ করে রইলো, জীবনে এই একটা জিনিসের জন্য তার ছোট হতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় নাহিদকে ভালোবাসাটা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আদিয়া চলে গেলো।
আলো বেগম নিজের রুম থেকে হুরের জন্য একটা সুতির শাড়ি এনে হুরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,যাও তো মা এটা চেঞ্জ করে আসো। হুর ওয়াশরুম থেকে শাড়ী পাল্টে ওজু করে বের হলো। নিজের সাথে থাকা শাড়ি আর গহনা আলো বেগমের কাছে দিয়ে বলে,এগুলো আমার না। তাই এগুলো আপনার কাছে রাখুন আমি সুযোগ করে ওই লোকের কাছে ফেরত পাঠাবো।
আলো বেগম হুরের জন্য খাবর রেখে গেলেন আর বললেন,নামাজ শেষে খেয়ে নিও। আলো বেগম চলে গেলেন নিজের রুমে।
হুর নামাজ শেষ করে। খাবারের সামনে বসলো এক লোকমা তুলে মুখে দিবে তার আগেই হুরের মনে পরলো, স্ত্রীর দায়িত্ব অভুক্ত স্বামীকে আগে পানাহার করানো। হুর খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। কতবার তোমাদের বলছি, নিয়মিত গল্প দেয়া সম্ভব না।তাই আর রিকোয়েস্ট করো না। গল্প কেমন লাগছে সেটা জানাও। সবাই ভালো থেকো।
রমাদান মুবারক।
হ্যাপি রিডিং।