#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব১২
হুর আস্তে করে নিজের মাথাটা ফুয়াদের বক্ষে রেখে চুপটি করে রইলো।
ফুয়াদ হুরকে সরিয়ে দিতে চাইলে হুর শক্ত করে ফুয়াদকে ধরে বলে,আপনি দেখি কিছুই জানেননা। আপনি দু’মিনট এভাবে থাকুন দেখবেন আপনার অস্থিরতা কিছুটা কমে গেছে। প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
ফুয়াদ হুরকে সরিয়ে দিয়ে বলে,বেশি বাড় বেরোনা।
হুর বলে ঝড়ে পরে যাব তাইতো।পড়ার আগে আপনার হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি করে তবেই পড়বো।
ফুয়াদ পাশ বালিশটা মাঝখানে রেখে বলে,এই লাইন ক্রস করবে না।
– আমি করবো না এটা আমার বিশ্বাস আছে।তবে মনে হচ্ছে আপনি করবেন।
– একটা কথা বললে, একদম চিলে কোঠায় রেখে আসবো।চারটা বাজতে চললো তাড়াতাড়ি ঘুমাও।
মুয়াজ্জিনের আজান কানে আসতেই হুরের ঘুম উবে গেলো।তবে চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাতেই আধো আলোতে ফুয়াদের চেহারা দেখতে পেলো। হুর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ওজু করে বের হয়ে জায়নামাজ খুঁজতে লাগলো। খুঁজে না পেয়ে ফুয়াদকে ডাকতে লাগলো, “এই যে শুনছেন। কয়েকবার ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে।ফুয়াদের কাভার্ড খুঁজে একটা পাঞ্জাবি নিয়ে সেটা বিছিয়ে নামাজ পরলো। নামজ শেষ করে বেশ কিছু আমল করলো।
জগ থেকে নিজের চুল ভিজিয়ে ফুয়াদের সামনে যেয়ে চুল ঝারতে লাগলো। বিরক্ত হয়ে ফুয়াদ উঠে বসে বলে,কার এতো বড় সাহস?
– হুর খিলখিল করে হেসে বলে,এই সাহস আপনার একমাত্র বউয়ের।
– তোমাকে এত সাহস কে দিলে?
– আল্লাহ তায়ালার হুকুমে আপনি দিয়েছেন। আমার মা বলতো, স্বামী যদি মন্ত্রী, মিনিস্টার ও হয়,সেসব বাহিরের মানুষের জন্য। তার ঘরে সে তো সাধারণ একজ মানুষ। বাকি কথা পরে বলবো, এবার যান তো ওজু করে আসেন নামাজের সময় চলে যাবে তাড়াতাড়ি করুন।
– আমি ঘুমাবো।
– নামাজ না পরে কোন ঘুম নেই। হুর হাত ধরে টেনে বলে তাড়াতাড়ি ওজু করে আসুন। ফুয়াদ উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
হুর মধুর কন্ঠে সূরায় ইয়াসিন তেলাওয়াত করছে।
* ফজরের নামাজের পর সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের ফজিলত- আতা বিন আবি রাবাহ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি শুনেছি যে- রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করা হবে।’ (ফাজায়েলে আমাল : ০১/৫২)**
ফুয়াদ হুরকে ডিস্টার্ব না করে নামাজ আদায় করে নিলো। নামাজ পড়ার সময় খেয়াল করলো তার সখের পাঞ্জাবি দিয়ে হুর জায়নামাজ বানিয়েছে। কি ভেবে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। সেখানে বসেই মনযোগ দিয়ে হুরের তেলাওয়াত শুনলো।
তেলাওয়াত শেষ হতেই হুর ফুয়াদের একদম কাছাকাছি এসে মুখোমুখি বসে বলে, আপনি চাইলে আমাদের প্রতিটি সকাল এমন পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণ হবে।
ফুয়াদ হুরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যেনো কত যুগযুগ ধরে ফুয়াদের চোখ এমন একজনকেই খুঁজতে ছিলো। আজ যেনো তার দৃষ্টি তৃপ্তি পাচ্ছে। হুর আস্তে করে ফুয়াদের কাঁধে মাথা রাখলো। ফুয়াদও হুরের কাঁধে মাথা রাখলো। কোন কথা না বলে কিছু সময় এভাবেই পার করলো দু’জনে।
ফুয়াদের হঠাৎ মনে হলে, সে আবেগে গা ভাসাচ্ছে। তাই হুরকে সরিয়ে দিয়ে বলে,তুমি আমার আশেপাশে আসবে না।
ফুয়াদের কথা শুনেই হুর চট করে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে মুয়ানাকার দোয়া পড়ে ফুয়াদকে ছেড়ে দিলো। দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগে হুর বলে,এই যে রাগী ডাক্তার তোমার হৃদয়ে আমার ভালাবাসার শেকড় তৈরি হয়ে গেছে এখন চাইলেও আর পালাতে পারবে না।
হুর চলে গেলো। ফুয়াদ নিজের বুকের বা পাশে হাত রাখলো। আশ্চর্য হলো। এটা কি আগে এখানে হাত রাখলেই বিথীর ধোঁকার কথা মনে পড়তো, কিন্তু আজ কেমন শান্ত হয়ে আছে! তাহলে কি ওই মেয়েটা যা বলছে তাই সত্যি?
হুর চুপিসারে এসে ফুয়াদের সামনে কফি মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,আমার কথা ভাবার জন্য অনেক সময় আছে।এবার ধরুন এই আপনার মতো এক কাপ কফি পান করুন।
ফুয়াদ নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে বলে আবার তুমি?
– হু আপনার জন্য আপনার মতো কফি।
– আমার মতো কফি মানে?
– আরেহহহ তেতো লোকের তোতো কফি।তবে আপনি চাইলে আমি এক চুমুক খেয়ে দেবো।তাহলে এটা মিষ্টি হয়ে যাবে।
ফুয়াদ কফি মগটা হুরের হাত থেকে নিয়ে বলে,তুমি হলে এ্যাঁচড়ে পাকা।
– সে আপনি যা ইচ্ছে বলতেই পাড়েন। কারন নিজের স্ত্রীকে ভালোবেসে কত কিছুই তো ডাকা যায়।
– তুমি যাবে নাকি?
– এই তো চলে যাচ্ছি। আপনিও আসুন নাস্তা বানাচ্ছি। বলেই চলে গেলো।
কফিটা মুখে দিয়ে দেখে এটার স্বাধ একটু ভিন্ন। মনে মনে বলছে,মেয়েটা সত্যি জাদুকর। কফি শেষ করে রেডি হয়ে নিচে আসলো।
হুর তখন নুরকে খাইয়ে দিচ্ছে। ফুয়াদ আসতেই হুর ফুয়াদকে খাবার বেড়ে দিলো।
ফুয়াদ খবার শেষ করে বলে, নুর আসো তোমাকে আজ আমি দিয়ে আসবো।
নুর বললো,বাবা আজকে আমি ভালো,মা’কে সাথে নিয়ে যাবো। সবাইকে বলবো আমার ভালো মা আছে।
– আজকে না অন্য কোনদিন নিয়ে যাবে।আজ দেরি হচ্ছেতো চলো।
নুর হুরের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো একবার ফুয়াদের দিকে তাকাচ্ছে। হুরও এগিয়ে এসে নুরকে ধরলো, ফুয়াদও ধরলো। একে অপরের হাতের উপর হাত। নুর নিজের দু’হাত দু’জনের কাঁধে রাখে। হুর নুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে,জান বাচ্চা আমার আজ তুমি বাবার সাথে যাও। একদিন আমার সাথে যেও।
নুরও হুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে ঠিক আছে ভালো মা।
নুর আর ফুয়াদ চলে গেলো। নুর দরজায় দাঁড়িয়ে
দোয়া পড়লো….
اَسْتَوْدِعُ اللٰه دِيْنَكَ وَاَمٰنَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ
কোন মানুষকে বিদায় দেয়ার দোয়া।
হুর টেবিলের সামনে আসতেই দেখে আদিয়া খাবার খাচ্ছে।
হুর আলো বেগমের জন্য রং চা বানাতে কিচেনে গেলো।
আলো বেগম নিচে এসে চেয়ার টেনে বসে আদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,তুমি কি চাচ্ছো?
আদিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে, মানে!
– মানে খুব সোজা যেই মেয়ে একজন আদর্শ মেয়ে হয়ে উঠতে পারেনি। তাকে কারো ঘাড়ে বউ হিসেবে কি করে চাপিয়ে দেবো!
– তুমি বলতে কি চাইছো? সোজাসাপটা বলো।
– নাহিদ তোমার চেয়ে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে।
– সেটা নাহিদ বুঝবে।
– তুমি বেহায়ার মতো নিজে নিজে নাহিদের কাছে চলে যেতে চাইলেও নাহিদ তোমাকে একা গ্রহণ করবে না। বুঝে আসে না নাহিদের মত ছেলেকে কি করে বশ করলে।
মায়ের কথাগুলো আদিয়ার হৃদয়ে আ/ঘা/ত করলো।চোখে জল টলমল করছে।
হুর আলো বেগমের দিকে চা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, মা আমাদের আপুও কোন অংশে কম না। একটু রাগী তবে মনটা কিন্তু একদম নরম।
– তুই বুঝবি না। তাই তুই চুপ থাক ইদানীং ওর ব্যাবহার দেখে আমি অবাক হই।
আদিয়া খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেলো।
হুর আলো বেগমের পাসে বসে, বলে আন্টি এভাবে না বলে বুঝিয়ে বললেই তো হয়।
– সবাই বুঝের কথা বোঝেনা। তাইতো কড়া কথা বললাম। বাদ দে ওর কথা তুই নাস্তা করেছিস?
– না এই এখনি করবো।
আলো বেগম আর হুর বসে গল্প করছেন এমন সময় একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা আসলো। একটু এগিয়ে এসে বলল,কেমন আছিস আলো?
সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে আলো বেগম এক মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেন। পাশে থাকা হুরের হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, হুর আমাকে একটু পানি এনে দে মা।
______________________________________________
ফুয়াদ রোগি দেখা শেষ করে, হুরের ভাইকে দেখতে আসলো। হারিসের কেবিনে এসে হারিস কে চেক করে যখন বের হবে। তখন কেবিনের আয়াকে দেখে ফুয়াদের বুকে কেমন চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। বাকহারা হয়ে গেলো স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং।