#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_২১
পিয়াস অনেকক্ষণ ধরেও চেষ্টা করে এস এম এসটির অর্থ উদ্ধার করতে পারলো না।কে দিতে পারে এমন এস এম এস?নম্বরে ফোন দিলেও কেউ ফোন ধরে না।পিয়াস অনলাইনে এসে দেখলো এতো রাতে শুধু বিদিশা ই অন লাইনে আছে।ও ভাবলো বিদিশাকে কথা গুলো বলে দেখা যাক কি হয়। এস এম এস টির একটা স্ক্রিনশর্ট পাঠিয়ে বিদিশাকে বলল
-আচ্ছা আপনি কি এই এস এম এস টির অর্থ আমাকে বলতে পারেন?কোনো আননোন নম্বর থেকে এস এম এস টি এসেছে।
বিদিশা দেখলো ঠিকই কিন্তু কোনো রিপ্লাই দিল না।পিয়াস এটা দেখে আবার বলল
-আপনি কি অনেক ব্যস্ত?তাহলে থাক পরে কথা বলব।
এটাও সিন করে রেখে দিয়েছে।পিয়াস ভাবলো বিদিশা হয়তো সত্যি সত্যিই অনেক ব্যস্ত।কারণ বিদিশা একবার বলেছিল যে রোজার ছুটির কয়েকদিন পরে ওদের কলেজে পরীক্ষা আছে।তাই ও বিদিশাকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করল না।ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে একটা গ্রুপে ও দেখলো যে কানাডায় একটা ফটোগ্রাফির প্রতিযোগিতা চলছে।সেখানে আবেদন করার সময়সীমা আর এক দিন আছে।আর সেখানে যে ছবিগুলো দিতে হবে তা হলো এমন দৃশ্য যেখানে ছবিটা অর্থবহ হতে হবে । পিয়াস নিজের সবগুলো ছবি ঘেটে দেখলো যে ওর মধ্যে যে ছবি গুলো আছে সবগুলোই সুন্দর কিন্তু ততোটা অর্থ বহ না।ও এখনই আবেদনটা করে রাখল কিন্তু ওর ছবি পাঠাতে কালকে তিনটার ভেতরে।ফোনটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়ল
আরফান তার পারফিউমের ডিজাইন কীভাবে করবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে।তার কাজ ল্যাপটপে হচ্ছে ঠিকই কিন্তু চোখ দুটো মিহুর দিকে যাচ্ছে।মিহু একটু রাত করেই তারাবির সালাত পড়ে।মিহু যখন মোনাজাত ধরে তখন আরফানের মনে হয় এই বুঝি আরফানের জন্য দোয়া করল।মিহুর সালাত শেষ হলে মিহু জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে আরফানের দিকে তাকাতেই দেখে আরফানকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মিহু জিজ্ঞেস করল
-কিছু বলবেন?
-হুম
-বলুন
-তুমি এখন এক ঘন্টার জন্য ছাদে গিয়ে বসবে।লাগলে বাগানেও যাও কিন্তু এখানে এক ঘন্টা থেকো না
-আজব তো।আমি এখানে থাকলে কি সমস্যা?
-তুমি আজকে ওয়াদা করেছিলে যে আমি যা বলব তাই শুনবে।এখন কোনো কথা না বলে যেটা বলেছি সেটা করো।
-আমি এখন ঘুমাবো না হলে সেহরী তে উঠতে পারবনা
-আর কোনো কথা না,যাও
মিহুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজকে দিনেও তো কত সুন্দর করে কথা বলছিল কিন্তু এখন কেমন ধমক দিয়ে কথা বলছে।মিহু ওর মায়ের ডায়েরীটা নিয়ে বাগানে চলে গেল।
আরফান মিহুর ভার হয়ে যাওয়া মুখ দেখে বলল
-সরি। আমি অনেক দুঃখিত।কিন্তু কি করব বলো?তুমি আমার আশেপাশে থাকলে যে আমার কাজটা কমপ্লিট করতে পারবো না।আর কাজটা কমপ্লিট না করলে তোমাকে যে সারপ্রাইজটা দেওয়ার কথা ভাবছি সেটা আমি দিতে পারবো না।আমি খুবই খুবই সরি।
আরফান এসব ভাবতে ভাবতেই ওর মাথায় এলো মিহুর নাম দিয়ে পারফিউমের নামটা করার।যেহেতু ওর নাম আরফান আদিত্য।দুটোর প্রথম লেটার ই এ তাই ও এটার নাম দিল এ এম এ অর্থাৎ আমা।এটা নিয়ে অনেকক্ষণ কাজ করার পরে ওর খেয়াল এলো মিহু এখনো বাইরে। তাই ও ছাদে গিয়ে দেখলো বাগানের দোলনায় গুটি সুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।আরফান ছাদ থেকে নেমে ওর কাছে গেল।চারদিক থেকে বেলী ফুলের সুবাস আসছে।মিহুর হাতেও কয়েকটা বেলী ফুল। আরফান অবাক হলো এতো ছোটো চারায় ফুল ফুটলো কীভাবে?তারপর ও ভালো করে দেখলো ওর বেলীর চারাটা ছিল একটা কলম কাটা।তাই এই কয়েকদিনের মধ্যেই ফুল ফুটেছে।আরফান মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল
-মিহু তুমি আমার জীবনের বেলী ফুল।তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে বেলী ফুলের ন্যায় সুবাসে আমার হৃদয় টা ভরে উঠেছে।বেলী ফুলের মতো আমার জীবনটাকে এতো সুবাসে ভরিয়ে দিলে যে অল্প কয়েকদিনেই তোমার মায়ায় পড়ে গিয়েছি।
তারপর মিহুকে কোলে নিয়ে ঘরে আসলো।ওকে ভালোভাবে শুয়ে দেওয়ার পরে খেয়াল করল মিহুর চোখ ভেজা।মানে মিহু কাঁন্না করে ছিল।হাতে এখনো ওর মায়ের ডায়েরী।ডায়েরী টা এনে অন্য জায়গায় রাখল।কিন্তু আরফান খেয়াল করল না যে মিহুর চোখের পানিতে ডায়েরীর কয়েক জায়গা ভিজে কিছু লেখা স্পষ্ট হয়েছে।মিহুর দিকে তাকিয়ে আরফান ভাবতে থাকে কি অল্প সময়ের ভেতরে মিহু ওকে পরিবর্তন করে দিয়েছে ।তারপর মিহুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে ও নিজেও ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই পিহু ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেল।সেহরী খেয়ে ঘুমিয়েছিল সে পর্যন্ত ঠিকই আছে কিন্তু এইটুকু সময়ের মধ্যে ঘরের এত পরিবর্তন হলো কি করে?কোনো ভূমিকম্প হয়েছিল কি?না হলে ঘরের এ জায়গার জিনিস অন্য জায়গায় কেন? নেহালকে সোফায় বসে থাকতে দেখল।পিহু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও কিছু জিজ্ঞেস করল না।কথা বলবে না নেহালের সাথে।ঐদিন রাগ করার ফলে ওর জন্য নেহাল সারপ্রাইজ দিয়েছিল কিন্তু সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নেহাল নিজেও সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছে।পিহুর জন্য অনলাইনে একটা গাউন অর্ডার করেছিল কিন্তু সেখানে গাউন দিয়েছিল ঠিকই তবে সেটা পুতুলকে পরানো যাবে এমন গাউন। একে তো ধোঁকা খেয়েছে আর এক গাউনটির দাম নিয়েছিল সাত হাজার টাকা।মানে একদম পুরাই লস। এর জন্য পিহু নেহালের ওপর আরো রেগে আছে।
নেহাল এতক্ষণ চুপ ছিল।পিয়াস ওকে বুদ্ধি দিয়েছিল যে যদি ঘর এলোমেলো করে রাখে তাহলে পিহু হয়ত কথা বলবে ওর সাথে।তারপর এক কথা দুই কথা করতে করতে কথা বলবে।কিন্তু পিহু তো মুখে কুলুপ পেতে আছে।কোনো কথা না বলে পিহু উঠে চলে গেল ওয়াসরুমে।ওয়াসরুম থেকে বের হওয়ার সময় একটা তেলাপোকা দেখতে পেল। অন্য সময় হলে ভয় পেতো।কিন্তু এখন রাগে দিক শূন্য হয়ে তেলাপোকা টিকে মারতে মারতে বলতে লাগল
-সময় নাই বেসময় নাই চলে আসো হ্যাঁ? সব সময় ভয় দেখাও?আর আসবি?আর আসবি
পা দিয়ে পিসে একদম ছেচাবেচা করে ফেলেছে।তারপর নেহালের দিকে একটা কড়া চাহুনি দিয়ে চলে গেল।নেহালের মনে হলো পিহু তার চোখ দিয়ে ওকে বলে গিয়েছে যে
-ঘর যদি আগের অবস্থায় না পাই তাহলে এই অবস্থা হবে নেহালের
নেহাল দ্রুত ঠিক করতে লাগল আর মনে মনে পিয়াসের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল।ঠিক সেই সময় পিয়াস ছিটি বাজাতে বাজাতে ওর রুমে এসে বলল
-কি ভাই সকাল সকাল ময়লা পরিষ্কার করছিস?খুব ভালো কথা।কোনো হেল্প লাগলে বলিস আমি বলে দিবো যে কোথায় কি রাখতে হবে।
নেহাল পিহুর একটা হলুদ ওড়না দিয়ে পিয়াসের গলায় ফাস দিয়ে বলল-তোকে তো আমি দেখে নেবো
-ভাই রমজান মাসে খুন করলে তুই সত্তর গুণ পাপ পাবি।তার থেকে বরং রোজা গেলে মারিস
এমন সময় পিহু রুমে এসে এক চিৎকার দিল।পিহুর চিৎকারে দুজনেই থেমে গেল।পিহু তাড়াতাড়ি এসে পিয়াসের গলা থেকে ওড়নাটা টান দিয়ে নিল। পিয়াসের মনে হলো যে ওর গলাটা কে যেন কেটে নিয়েছে।পিহু ওড়নাটা নিয়ে বলতে লাগল
-আমার ফেভারিট ওড়না।কি অবস্থা হলো এটার
তারপর পিয়াসের দিকে তাকাতেই পিয়াস বলে-ভাবি আমি কিছু করি নাই সব নেহাল করছে
তারপর পিহুর অগোচরে নেহালকে বেস্ট অফ লাক দেখিয়ে বেরিয়ে যায়।মনে মনে বলতে থাকে- আহ কি শান্তি।আমাকে রেখে গাড়ি নিয়ে চলে আসা তাই না? এখন সামলা তোর বউকে।
মিহু বাগানে ছিল তখন প্রমি ওকে ফোন দেয়।ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিলে প্রমি বলে
-কিরে আমাকে ভুলে গেছিস বিয়ের পরে?তোর তো কোনো খোঁজ খবর ও নাই
-আমি ভুলে গেছি না তুই লা পাত্তা হয়েছিস।বিয়ের দিন এক নজর দেখা দিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলি
-আম্মু ফোন দিয়েছিল।তাই তোকে না বলে চলে আসতে হয়েছে। আমি না হয় লা পাত্তা হলাম কিন্তু তোর পড়াশোনার কি খবর?
-আর পড়াশোনা!আমার কপালে কি আর অত কিছু আছে?বিয়ে হয়েছে এখন আগের থেকে বেশ ভালোই আছি আল্লাহর রহমতে
-এভাবে বলছিস কেন?ভাইয়া কি তোকে পড়াশোনা করতে দেবে না?
-না সেটা না
-তাহলে?তুই কি তাকে আদৌ বলেছিস?
-না
-তাহলে বলে দেখ
-কি আর বলব? এমনিতে আমাদের বিয়েটা অনেকটা আকস্মিক হয়েছে।তাই ওনাকে আমি তেমন কিছুই বলতে পারি না।
সকাল দশটা বাজে।পিয়াস ওর মায়ের সেই বোনের অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।রাস্তা দিয়ে হেটে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের গাড়ি থাকা শর্তেও ও তেমন গাড়ি ব্যবহার করে না।ওর হেঁটে চলতেই ভালো লাগে।ফোনের দিকে একবার চোখ দিয়ে আবার তাকিয়ে দেখে দশটা বাজে।কি ব্যাপার ও তো নয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছে পনের মিনিট ও হয় নাই তাহলে দশটা বাজে কীভাবে?তারপর হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘড়ি নয়টায় মরে গেছে।পিয়াস একটা রিক্সা ডাক দিল। তারপর সেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল কিন্তু একটু যেতে রিক্সা থামিয়ে নেমে পড়ল। ও একটা ছবি তোলার সিনারি পেয়ে গিয়েছে।তবে তুলতে একটু টাইম লাগবে।ভাগ্য ভালো ক্যামেরা সব সময় সাথে নিয়ে ঘোরে। ইন্টারভিউ গোল্লায় যাক। আজকে এই ছবি টা না তুললে ও আর আবেদন টা কমপ্লিট করতে পারবে না।দ্বিতীয়বারের মতোও ইন্টারভিউটা ভেস্তে গেল।
আরফান অফিসের ল্যাবে আছে।অনেক গুলো কেমিক্যাল আছে এখানে।অফিসে এসেই সরাসরি ল্যাবে চলে গিয়েছে তাই ও যে কাগজ গুলো এনেছিল সব ল্যাবেই নিয়ে গিয়েছে।আরফান যেহেতু বেলী ফুল খুব ভালোবাসে তাই ও চাচ্ছে পারফিউমের ফ্রাগ্রান্স টা বেলী ফুলের ঘ্রাণ ই হোক।আরফান একটার সাথে একটা কেমিক্যাল মিশিয়ে দেখছিল কোনটা ভালো লাগে বেশি আর তথ্য গুলো ফারিশ নোট করছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরফান তার কাংক্ষিত রেজাল্ট পেয়ে গেল। ও কেমিক্যালের টেস্ট টিউব গুলো ভালো ভাবে রেখে বাইরে এলো একটু পরে ফারিশ ও এলো।বাইরে এসে দেখতে লাগলো বাকি কাজ কত দূর।পরে আবার ভেতরে গিয়ে দেখে ওর টেস্ট টিউব টা ভেঙে পড়ে আছে নিচে আর ওর কাগজ পত্র গুলো সবটা কেমিক্যালে ভিজে গেছে।ফারিশ দ্রুত গিয়ে টেস্ট টিউব উঠাতে গেল কিন্তু ওর হাত কেটে গেল। আরফান বলল
-তুই বোকার মতো ভাঙা কাচ ধরতে গেলি কেন? দেখলি এখন হাতটা কাটলো কিভাবে?
-কিন্তু আমাদের এত কষ্টের ফলের কি হবে?
-কেন একটু আগে তো নোট করে রেখেছিলাম।সেগুলো দিয়ে আবার করা যাবে
ফারিশ উঠে ল্যাপটপ টা অন করে দেখলো ও এতক্ষণ যা নোট করেছে সব খালি।কোনো লেখাই নেই।এমনকি আগে আরো কয়েকটা নোট করা ছিল একটাও নেই।আরফান এসব দেখে একটু চিন্তিত হলো।তারপর ফারিশ কে বলল
-তুই এখন চলে যা।এটা নিয়ে পরে কাজ করা যাবে
ফারিশ চলে গেলে আরফান কাগজ পত্র গুলো উঠাতে থাকে।কাগজ পত্র উঠাতে গিয়ে খেয়াল করল ওর কাগজ পত্রের মধ্যে মিহুর মায়ের ডায়েরীটাও চলে এসেছে।সেটাও ভিজে একদম একাকার হয়ে গেছে।ও তাড়াতাড়ি ওটা উঠিয়ে শুকাতে যাবে তখন দেখতে পেল ডায়েরীতে যে সাদা পৃষ্ঠা গুলো কেমিক্যাল এ ভিজেছে ঐ গুলোতে লেখা ফুটে উঠেছে।তার মানে মিহুর মা তার ডায়েরি তে এভাবে লুকিয়ে সব লেখা লিখে গিয়েছে।এর জন্যই কি তিনি লিখেছিলেন
“খুঁজছো আমায় কোথায়
আমি তো সেথায়
আবেগ গুলো গুছিয়ে
থাকে যেখানে লুকিয়ে
তার মানে তিনি আগেই ক্লু দিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু কেউ ই বুঝতে পারে নি।আচ্ছা মিহুর মায়ের সাথে এমন কি হয়েছিল যেটা তিনি এভাবে লুকিয়ে গিয়েছেন? আরফান আজকে তার প্রডাক্ট নিয়ে আর কিছুই করবে না।আজকে মিহুর মায়ের রহস্য ভেদ করবে। ও ডায়েরিটা নিয়ে ওর কেবিনে গেল।তারপর পড়তে শুরু করল।
-আমি প্রিয়ন্তি জাহান।বাবা মায়ের অনেক আদরের ছোট মেয়ে।আজকে আমি আমার সাথে ঘটা ভয়ংকর ঘটনা সম্পর্কে লিখতে যাচ্ছি।যেগুলো আমাকে গ্রাস করেছে।আর এই ডায়েরির টা যে পড়বে তার কাছে আমার অনুরোধ সে যেন ডায়েরি টা সব পড়ে আর আমার মেয়েকে আমার সাথে হওয়া ঘটনা থেকে যেন রক্ষা করে। আমি চাই না আমার যে পরিণতি হবে সেটা আমার মেয়ের সাথেও ঘটুক।
#চলবে
(রি চেক করিনি।ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন)#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_২২
গ্রামের নাম হলো শান্তি নগর। আমরা সবাই শান্তিতেই থাকতাম।তবে কে জানতো শান্তির নামে আমাদের গ্রামে অশান্তি চলত? আমার বাবা রউফ কাজী ছিলেন গ্রামের মাতব্বর।সবাই তাকে অনেক গণ্যমান্য করতেন।সেই সময় তার প্রচুর টাকা পয়সা ছিল।তার কাগজের মিল ছিল,ছাপাখানা ছিল,গাছের ব্যবসা ছিল ,কাপড়ের ব্যবসা ছিল এক কথায় তার সব কিছুই ছিল। এগুলো তিনি পূর্বসূত্র অনুযায়ী পেয়েছিলেন।সেই সময় এ এত কিছু থাকা মানে রাজার মতো অবস্থা।আমরা সব সময় রাজার মতোই থেকেছি।আমার বাবা ছিলেন তার ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়।তিনি তার পিতৃপুরুষের সম্পত্তির হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়ার প্রতি অতোটা মনোযোগ দিতে পারেন নি।তবে তিনি তার ভাই বোনদের অশিক্ষিত তৈরি করেন নি।তাদের প্রয়োজনে পিটিয়ে মানুষ করেছেন।তিনি লেখাপড়ার বিষয়ে অত কিছুই বুঝতেন না।তবে তিনি ছিলেন সহজ সরল সত্যবাদি একজন মানুষ।তাকে গ্রামের সব লোকে মান্য করত। আমরা সবাই মিলে জয়েন ফেমিলিতে থাকতাম। আমরা সবাই গ্রামে থাকলেও আমার ছোট চাচা থাকতেন শহরে পড়াশোনা করার জন্য।তিনি মাঝে মাঝে এখানে আসতেন। আবার কয়েকদিন থেকে চলে যেতেন। আমি ছোট বেলাই ই দেখেছি যে তাকে প্রচুর পরিমানে টাকা পাঠানো হতো।ছোট চাচা বলতেন যে তিনি নাকি পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ব্যবসা করবেন।বাবা তার ছোট ভাইকে খুব বেশি ভরসা করতেন আর ভালোবাসতেন।কারণ হিসেবে তিনি বলতেন ছোট চাচাই নাকি একা বেশি লেখাপড়া করেছেন।তিনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সময়ে প্রথম হয়েছিলেন। এতে আমাদের সুনাম বেড়ে গিয়েছিল। আর বাকি চাচারা দুই জনে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাবার ব্যবসায় হাল ধরেছে।আমার ফুফু ছিল তিন জন যার একজন প্রায় আমার সমবয়সী আর দুই জনেই বিবাহিত। আমার সেই ফুফুকে দেখতে একদম আমার মতো।এই ফুফু ছিল ছোট চাচার থেকে বিশ বছরের ছোট। আমার দাদি এই মেয়েকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। আমাদের দুই ফুফু ভাইজিকে দেখে কেউ ই বলতে পারত না কে কোনজন। আমরা দুজনেই ছিলাম দুরন্ত।পুরো গ্রাম মাতিয়ে বেড়াতাম। আমার বাবা বড়ো হলেও আমার বাকি চাচাতো ভাই বোনেরা ছিল আমার থেকে বয়সে বড় কারণ বাবা ব্যাবসা সামলাতে গিয়ে বিয়ের দিকে মন দিতে পারেন নি।পরে দাদির ইচ্ছা তে বিয়ে করেন।তবে দাদির পেটে যে আমার ফুফু হয়েছেন ঐ সময় গ্রামের লোকের কাছে এটা ছিল একটা বিস্ময়কর ব্যাপার।কিন্তু ছোট চাচা শহর থেকে এসে সবাইকে বিজ্ঞানের অনেক কথা বলে বুঝিয়েছিলেন এটা হড়ওয়া সম্ভব।তারপর একদিন আমি আর ছোট ফুফু স্কুলে যাচ্ছিলাম তখন আমাদের গ্রামে স্কুল বলতো না বলা হতো খোলা মাঠ।কারণ স্কুলটা ছিল একটা খোলা মাঠের এক কর্ণারে।সেখানে একটা টিনের বেড়া দেওয়া জায়গায় বসে একজন শিক্ষক আমাদের পড়াতেন। আমাদের গ্রামে ঐ একটাই মাধ্যমিক ছিল আর সেটাও বাবার উদ্যোগে তৈরি করা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। আর দুই একটা ছিল যেগুলো শহরে। খোলা মাঠে যেতে হলে অনেক রাস্তা পারি দিয়ে যেতে হতো।আমরা নৌকায় করে যেতাম।আমি সব সময় চুল খোপা করে রাখতাম কারণ আমার চুল ছিল অনেক লম্বা আর ফুফু বেণী করতেন।নৌকা ভিড়িয়ে যখন কূলে উঠলাম তখন আমাদের বাড়িতে সিদ্দিক নামে একটা ছেলে কাজ করত ও এসে বলে
-পিউ আপা,রেণু ফুফু তালেব মাস্টার আপনাগো নদীর গাটে যাইতে কইছে
তখন রেণু ফুফু ওকে বলে-কেনরে সিদ্দিক? আমাদের যেতে বলেছে কেন?
-মোরে হেয়া কয় নাই।কইছে তোমাগো নদীর গাটে যাইতে আর এহনি যাইতে কইছে।
আমরা মেয়ে মানুষ বলে আমাদের দেখাশোনার জন্য রুবেল ভাইকে রেখেছেন।তিনি হলেন আমার বড় ফুফুর ছেলে যে কিনা কোনো কাজই করেন না।তাই বড় ফুফু বাবাকে বলছিল যে রুবেল ভাইকে যেন একটা কাজ দেওয়া হয়।রুবেল ভাই ছিলেন একটু গম্ভীর প্রকৃতির। আমাদের সব সময় নৌকায় দিয়ে আসত আর নিয়ে যেতো আর বাকি সময় নৌকায় বসে সিগারেট খেতো।আমরা কোথায় গেলাম না গেলাম তার খবর তিনি রাখতেন না।সব সময় পানির দিকে তাকিয়ে থাকতেন আর সিগারেট খেতেন। আমি রুবেল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি
-রুবেল ভাই আমরা স্কুলে যাই।আপনি ঘাটে নৌকা নিয়ে বসে থাকেন। আমাদের আজকে আসতে দেরী হতে পারে।আমরা একটু দেরি করে আসব।
রুবেল ভাই আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পানির দিকে তাকিয়ে বসলেন। আমি রেণু ফুফুকে বললাম
-রেণু ফুফু চলো আমরা নদীর ঘাট থেকে ঘুরে আসি।দেখি তালেব মাস্টারে কি বলে
-পিউ আমরা যদি ঐ পাড়ে যাই তাহলে যদি আমাদের বড় দাদা দেখে ফেলেন। বড় দাদা নাকি আজকে ছোট দাদাকে শহর থেকে নিয়ে আসতে যাবে।
-আরে বাবায় কি নদীর পাড়ে তাকিয়ে থাকবে?আর তাছাড়াও আমরা তো গিয়েই চলে আসবো।কেউ খেয়াল করবে না
(আমার দরজায় কেউ নক করছে এখন আমার লেখা থামাতে হবে।আর যতই হোক আমার পেটে আমার মেয়ে আছে ওর জন্য হলেও আমাকে চুপ থাকতে হবে।)
_______________
আরফান এই পর্যন্ত পড়ে থামলো তারপর আবার পড়তে বসবে এই সময়ে নীলুর ফোন এলো বাসা থেকে।আরফান ডায়েরীটা বন্ধ করে নীলুর ফোন রিসিভ করল।হ্যালো বলতে না বলতেই নীলু তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগল
-ভাইয়া তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি বাসায় আসো
-কোনো সমস্যা হয়েছে নীলু?
-ভাইয়া ভাবি পাগলেয মতো কান্না করছে আর সারা ঘর তছনছ করে ফেলছে।কিছু জিজ্ঞেস করলে কোনো কথাই বলছে না।আর কতক্ষণ এভাবে থাকলে কিন্তু অজ্ঞান হয়ে পড়বে।তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো
আরফান দ্রুত ডায়েরীটা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।মিহু কিসের জন্য কান্না করছে?এই ডায়েরীর জন্য? এই ডায়েরীটাতে তো কিছুই লেখা ছিল না।মাত্র দুই পৃষ্ঠা লেখা ছিল বাকি পেইজ গুলো খালি ছিল যেটা ইনভিজিবল কিছু দিয়ে লেখা ছিল।কেমিক্যাল পড়তেই সেটা ভিজিবল হলো।মিহু তো এ সম্পর্কে কিছুই জানে না।
——————-
পিয়াস নত মুখ করে দাড়িয়ে আছে ওর বাবা মায়ের সামনে।ওর বাবা কাজের জন্য কুমিল্লা গিয়েছিলেন।তিনি বাড়ি এসে ছেলের কীর্তি কালাপ শুনে পিয়াসের ওপর বেজায় রেগে গেলেন।
#চলবে
(কারেন্ট নাই তাই যেটুকু লিখলাম আগে ভাগেই দিলাম।পরিবেশের অবস্থা ভালো না। আর ভূলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন)