তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো পর্ব ১০এবং শেষ

#তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো

লেখা আশিকা জামান
পার্ট ১০

“কাদঁ কাদঁ বেশি করে কাদঁ আর তুই এটাই ডিজার্ভ করিস।
প্রহরকে পাওয়ার ভুত কি মাথা থেকে নামছে?
নাকী সাড়াজীবন ন্যাকা ষষ্ঠীর মতো আফসোস করতেই থাকবি।
আমি আগেই বুঝেছিলাম, এই ছেলে মোটেই সুবিধার না। কিন্তু তোকে কে বুঝাবো এই কথা?”

তিথির কথাগুলো প্রতিক্ষার কানে পৌছেছে কিনা কে জানে? ও একমনে কেঁদেই চলেছে। তবে এই মূহূর্তে ওর খুব আফসোস হচ্ছে কেন প্রহরকেই ভালোবাসতে গেলো? আর কালকের করা ওই চরম অপমানে ওকে একেবারব স্তব্ধ করে দিয়েছে। কাল সারারাত ও ঘুমাতে পারেনি। আজকেও কান্নার রেশ ওর মধ্যে আছেই…
তবে এই কান্না অপমানের চরম অপমানের।

” তিথি আমার ব্যাগটা একটু এনে দিবি।”
কান্না থামিয়ে কথাটা বললো প্রতিক্ষা।

” কেন ব্যাগে কি স্মৃতি লুকিয়ে রেখেছিস? এখন কি ওইটা ধরে আবার কান্না শুরু করবি? সিরিয়াসলি তুই পারিস।”
কপাল ভাজ করে প্রতিক্ষার দিকে তাকায়।

এই মূহূর্তে তিথিকে ওর চরম অসহ্য লাগতে লাগলো। নিজেই ব্যাগ খুলে প্রহরের ব্লেজারটা এক টানে বের করে নিলো। সেই বৃষ্টিমুখর দিনের কথা মনে হতেই বুকের ভেতর জমাট বাধা চাপা কষ্টটা হু হু করে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
প্রতিক্ষা ছুড়ে মারলো ব্লেজারটা। মূহূর্তেই দরজা খুলে যায় আর ব্লেজারটা প্রিয়মের পায়ের কাছটায় গিয়ে পড়ে।
প্রিয়ম প্রায় সময়ই ওর রুমে নক করে ঢুকে কিন্তু আজকে নক না করেই উদ্ধতভাবেই ঢুকেছে। দুই হাত দিয়ে ব্লেজারটা তুলে প্রতিক্ষার দিকে ভ্রুকুচকে তাকায়।

প্রিয়মের চাহনীর মাঝে যে অবর্ননীয় কঠিন কঠিন প্রশ্ন ঝড়ে পড়ছে
তা প্রতিক্ষার দৃষ্টি এড়ায়নি। ওর একফালি হৃদয়ে চৈত্র্যর খরতাপের ন্যায় শুষ্কতা বিরাজ করতে লাগলো।
কালকে থেকে বাসার সবার স্বভাব ওর কাছে বেশ অস্বাভাবিক লাগছে। সবার ভাষ্যমতে আজকে ওর বিয়ে কিন্তু কালকে থেকে কেউ ওর সাথে ঠিক করে কথা বলছে না। সবাইকে কেমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ের চিন্তিত মনে হচ্ছিলো। অনেক রাত অব্দি নাকি ওর ফ্যামিলির সবাই কি নিয়ে যেন আলোচনা করেছে সকালে তিথির কাছে শুনেছে। ওর মন মেজাজ ভালো না থাকায় যেচে কাউকে জিজ্ঞাস করতে যায়নি।

কিন্তু প্রিয়মের চাহনি দেখে মনে হচ্ছে ও যেন প্রহর আর ওর বিষয়টা সামহাউ জেনে গেছে। এমনকি এই ভয়টাও হচ্ছে যে মা বাবা সহ পুরো বিষয় জেনে গেছে। আল্লাহ এই ভয়টা যেন সত্যি না হয়। নিজের মনে নিজেই বলতে লাগলো প্রতিক্ষা। মূহূর্তেই ও চোরের মত মাথা নিচু করে ফেললো।

” এটা কার? আর এইভাবে ছুড়ে মারলি কেন?”
ব্লেজারটা প্রতিক্ষার সামনে মেলে ধরে প্রশ্নটা করলো প্রিয়ম।

হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন ভাষা বোধ হয় প্রতিক্ষার জানা নেই। অন্তত এখন ওকে দেখে এটাই মনে হচ্ছে।
তিথি পরিস্থিতি সামলে নেয়ার জন্য বলে উঠে,
” ওইটা আমার ভাইয়ার। ইদানীং ও রেগে গেলে সব কাপড়চোপড় ছুড়ে মারে। আজকেও ও খুব রেগে আছেতো তাই সব কাপড়চোপড় ছুড়ে মারতে চাইতেছিলো। ওই ব্লেজারটা প্রথমেই ছিলো তাই ঐটাই আগে মেরেছে। ”
তিথির বুদ্ধির জোড় দেখে প্রতিক্ষা মুগ্ধ। মনে হচ্ছে এ যাত্রায় বেচে গেছে। কিন্তু প্রিয়মের মুখ দেখে আবার উল্টোটা মনে হচ্ছে। আদৌ ভাইয়া কি বিশ্বাস করলো?কথাটা মাথায় এনেই ও ঘামতে লাগলো।

প্রিয়ম বেশ যত্নের সাথেই ব্লেজারটা প্রতিক্ষার হাতে দেয়।
” নাও ধরো।”

প্রতিক্ষা শান্তভাবেই হাত বাড়ায়।

” রাগারাগি করার মত কিছুই আপাতত হয়নি। আমাকে না জ্বালালেতো তোমার শান্তি হবেনা তাই না। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছো তাই পেয়েছো ব্যাতিক্রম কিছুতো হয়নি। ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে অনেক কিছু শোনাতে কিন্তু ট্রাস্ট মি আমি তোমার প্রতি এতোটাই দূর্বল যে কিছুই বলতে পারছি।
তবে একটা কথা বলছি,
আমি বোধ হয় আরো বেটার কিছু ডিজার্ভ করি। তোমার কাছে আমার এক্সপেকটেশন টা বোধ হয় আরো অনেক….

ব্যার্থ আমি বোধ হয় সেই যায়গাটাই তৈরী করতে পারিনি । আমি ভাই হিসেবে ব্যার্থ হয়ে গেলাম রে।”
প্রিয়মের চোখের কাছে জল চিকচিক করতে লাগলো।

প্রতিক্ষার বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। দুচোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ছে।

” ভাইয়া, এইভাবে কথা কেন বলছো? আমাকে বকো, মারো তাও এইগুলা বলোনা প্লিজ। আমি সহ্য করতে পারছিনা। ”

প্রতিক্ষা দুম করে গিয়ে প্রিয়মকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
” আমি অনেক খারাপ । অনেক বড় ভুল করেছি ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দাও না এইবারের মতো। তোমরা যা বলবা আমি তাই করবো। প্লিজ তাও এইভাবে কথা বলোনা।”

প্রিয়ম প্রতিক্ষার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়।

” হাসিখুশি থাকবে সবসময় । কান্না আমি সহ্য করতে পারিনা, এটা জানার পরো, আমাকে দূর্বল না করলে কি তোমার চলছিলো না।”

প্রতিক্ষা চোখ তুলে ভাইয়ের দিকে তাকায়। ঐ চোখে ওর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ছাড়া এই মূহূর্তে আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা।

” তিথি তুমি কি একটু আমার সাথে আসবে?”

” হ্যা আসতেই পারি। সমস্যা নাই।”

” আর প্রতিক্ষা মেন্টালি প্রিপারেশন নাও আজকে তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কেমন।
লাস্ট ওয়ার্নিং চোখের জল যেন আর নেক্সট টাইম না দেখি।”

দুইভাইবোনের এমন ভালোবাসা দেখে তিথির চোখে অজান্তেই জল এসে যায়। ভাইবোনের ভালবাসা বোধ হয় এমনি হয়।

——————————————————–

বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। যদিও প্রতিক্ষার বিয়েটা ঘরোয়াভাবেই হচ্ছে আত্নীয় স্বজন তেমন কেউই আসেনি। তবুও যারা এসেছে সবার মাঝেই কেমন যেন এক আনন্দের আলোকছটা ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে। প্রতিক্ষার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ওর ইচ্ছে হচ্ছে এটারকে দুঃস্বপ্ন ভেবে এড়িয়ে যেতে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও এটাই সত্যি ওর আজকে বিয়ে! রিজভী আজকে থেকে ওর লাইফপার্টনার হবে । প্রহর নামের মানুষটার ওর লাইফে আর কোন অস্তিত্বই থাকবে না। লাইফটা ঠিক যেমনভাবে চলছিলো ঠিক তেমনিভাবেই চলবে শুধু মাঝখানে এই কয়েকটা দিন ট্র্যাজেডি হিসেবে থেকে যাবে। আসলে নিয়তির অমোঘ পরিকল্পনার কাছে সমস্ত পরিকল্পনাই একসময় ভেস্তে যায়। সবার জীবনের গল্প লিখার ক্ষমতা ঐ
একজনেরই থাকে।
প্রতিক্ষা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে বসা পার্লারের মহিলার দিকে চোখ তুলে তাকালো।

” তিথি কিগো সাজগোজ শেষ হলো।”
প্রতিক্ষার মা মেয়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন।

” এইতো আন্টি শেষ। ওকে বেশ সুন্দর লাগছে তাই না আন্টি।”
তিথি হাসতে হাসতে প্রতিক্ষার দিকে তাকায়।

” মাশ আল্লাহ ওকে সত্যিই বেশ সুন্দর লাগছে।
বিয়ের দিন বোধ হয় সবাইকেই সুন্দর লাগে।
দোয়া করি সারাজীবন এইভাবেই সুন্দর থাকিসরে মা”
শিউলি বেগম মেয়েকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরলেন।
প্রতিক্ষার এই মূহূর্তে ভেঙ্গেচূড়ে কাদঁতে ইচ্ছে হচ্ছে।
কিন্তু না ও ঠিক করেছে বুকের কষ্ট বুকেই মাটিচাপা দিবে কোনভাবেই সেটা প্রকাশ করবে না। সবাই খুশিতেই ও খুশি। আর সবচেয়ে বড়কথা কালকের পর থেকে মা আর ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করেনি। আর যাই হোক ওকে যারা এতো ভালোবাসে তাদের আর কষ্ট দিতে ও পারবেনা।

” তিথি ওকে পাশের রুমে নিয়াসো কেমন।ওখানে সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।”

প্রতিক্ষা মায়ের পথের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। ও বুকের ভেতরকার চিনিচিনে ব্যাথাটা আবার বাড়তে লাগলো। এখন কি বিয়ে পড়ানো হবে?
এটা মনে হতেই অস্বস্তি আরো বাড়তে লাগলো।
মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ কচকচ করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর পারছেনা ও সহ্য করতে। তিথির দিকে অসহায়ের মতো তাকায় …

” কিরে এইভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
ক্লাউম্যাক্স ক্লাইম্যাক্স..!!
আচ্ছা তোর বরের মনে হয় বসে থাকতে থাকতে কোমড় ব্যাথা হয়ে গেলোরে চল…
আমি না একটা কথাই ভাবছি,
তোর জামাইতো আজকে তোরে দেখে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবেরে..”
আবার দাত কেলিয়ে হাসতে লাগলো তিথি।

তিথি সব জানার পরো এই অস্বাভাবিক আচরণগুলো কেন করছে তা প্রতিক্ষার অজানা। তিথির এই উদাসীনতা ওর কষ্টটা আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিতে লাগলো।
তাছাড়া তিথি আর ওর ভাইয়ের মধ্যে কালকে থেকে এতো কিসের কথা চলছে তাও ওর অজানা।
বারবার জিজ্ঞাস করা সত্বেও তিথির মুখ থেকে একটা কথাও বের করতে পারেনি।
মনে হচ্ছে তিথিকে নতুন করে চিনতেছে..
এযেন প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর নতুন রুপ..!

পাশের রুম থেকে ডাক পড়ায় তিথি ওকে একরকম গরুর মতো করেই টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল।
রুমের সবাই ওকে মাঝখানে বসিয়ে গিজগিজ করতে লাগলো। ওর কাছে মনে হচ্ছে এটা বাসা নয় গরুর বাজার..
আর গরুটা যেন স্বয়ং প্রতিক্ষা! সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ওকে কেউ জীবনেও দেখেনি আর আজকেই প্রথম দেখা!
ওর আর দোষ কোথায় যেভাবে সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাতে এটা মনে হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
রুমের চারপাশটায় একটু চোখ বুলিয়ে নিলো। এখানে কিছু অপরিচিত মানুষদের আনাগোনা ও দেখতে পাচ্ছে যাদের আগে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছেনা।
হুট করেই একটা মেয়ে এসে ওর পাশে বসে পড়লো। দেখতে বেশ সুন্দরী ওর থেকে বছর তিনেকের ছোট হতে পারে।
” এইতো আমার মিষ্টি ভাবী। ”
ঝড়ের মতো এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। ও চমকে উঠে মেয়েটির দিকে তাকায়। সহসা ভাবী ডাক শোনে ও খুবই আহত হয়।
মূহূর্তেই মনটা বিক্ষিপ্ত হতে লাগলো।

” ইউ নো ভাবি, আমি কতক্ষণ ধরে আকুল হয়ে বসে আছি তোমাকে দেখার জন্য?
ফাইন্যালি দেখা হলো..
অবশ্য ভাইয়াতো আরো অধীর হয়ে বসে আছে…
আচ্ছা একটু সুন্দর করে বসো একটা পিক তুলি…?”

” এই কিসের পিক?
নো পিক ঠিক কেমন..?”
তিথি মুচকি হাসি দিয়ে কথাটা বললো।

” আপি প্লিজ আমার ভাইয়ের প্রতিতো একটু সদয় হও। নইলেতো বেচারি শেষ হয়ে যাচ্ছে..
বোঝনা ক্যান?
অনলি একটা পিক বেচারার চক্ষু সার্থক হোক।”

” অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হও। গিয়ে তোমার ভাইয়াকে বলিও কেমন..?
তিথি আমার দিকে চোখ মেরে কথাটা বললো।
মূহূরৃতেই তুমুল হাসি আড্ডায় মেতে উঠলো রুমের প্রতিটি আনাচেকানাচে। প্রতিক্ষার চরম অসহ্য লাগলেও নির্বাক নিঃশ্বব্দে বসে থাকলো। যেন এ খেলাও ওর কোন হাত নেই নিশ্চুপ থাকাটাই যেন মঙ্গলকর।
একটু পরেই ওর খেয়াল হলো ও নিঃশ্বব্দে কাঁদছে। বাধ ভাঙ্গা উদ্বেল সমুদ্রের ঢেউএর মত দুচোখ বারবার জলে আছড়ে পড়ছে।

কিছুক্ষণ পর কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়াতে লাগলেন। প্রতিক্ষার শুধু মনে আছে ও কবুল বলেছে বহু কষ্টে । যে কষ্টের গভীরতা বোঝানো হয়তোবা সম্ভবপর নয়। সমস্ত অতীতকে পিছনে ফেলে সামনে আগানোর প্রত্যয় নিয়েও পিছু হটে গেল। দুচোখের জলে শাড়ী ভিজাতে লাগলো। ওর এই কান্না সবার চোখে ধরা পড়তেই বিস্ময়ে ফেটে পড়তে লাগলো।
ওই মূহূর্তে কোন প্রশ্ন ছুড়ার সুযোগটা বোধ হয় কেউ পেলনা।

তার আগেই বরের বেশে রুমে ঢুকলো প্রহর। বসে পড়লো সদ্য বিয়ে করা বউ এর পাশে । প্রতিক্ষার দম যায় যায় অবস্থা । হার্টবিট খুব ফ্রার্স্ট বিট করতে লাগলো । মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠতে লাগলো।
রুমে অট্টহাসির রোল পড়ে গেছে। মূল কারণ প্রতিক্ষা কিছুতেই বরের দিকে তাকাচ্ছে না । ঘোমটা আড়ালে দুচোখ ভিজাতেই ওর দম যায় যায় অবস্থা।
অবস্থা বেগতিক দেখে তিথি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো।
প্রতিক্ষার থুতনি ধরে বেশ জোড়েসোড়েই ওকে প্রহরের দিকে ঠেলে দেয়।
প্রতিক্ষা ধাক্কা কুলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলে প্রহর ওকে ধরে ফেলে। চেনা হাতের স্পর্শে চমকে উঠে প্রতিক্ষা পাশাপাশি বসা মানুষটার দিকে তাকায়।

এ যে ওর স্বপ্নপুরুষ, এও কি সম্ভব!
রুপকথার রাজপুত্রের মত ওর সামনে দৈবাৎ বসে আছে স্বয়ং প্রহর!
এ স্বপ্ন নাকি বাস্তব!
নাকি স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিশেল!
প্রতিক্ষা মূহূর্তের মাঝে জ্ঞান হারায়।

প্রতিক্ষা পড়ে যাওয়ার আগেই প্রহর ওকে ধরে ফেলে। ওর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। প্রতিক্ষার নিষ্পাপ নিষ্কুলুশ মুখের দিকে তাকিয়ে ওর অপরাধববোধ হতে লাগলো। না বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। এতোটা মানুষিক কষ্ট বোধ হয় ওকে দেয়া ঠিক হয়নি । নিজের মাথার চুল এখন নিজেরি ছিড়তে ইচ্ছে।
ওর কি এমন দোষ!
প্রতিক্ষা কেন বললো, বিয়েতে রাজী না হওয়ার আদৌ কোন কারণ আছে কি?
কোন কারণই কি সত্যি ছিলোনা? বিয়েতে ঠিক রাজী হয়ে গেছে । না করার সাহসটুকুও নেই আবার দেখা করার দুঃসাহস ঠিকি দেখাতে পেরেছে।

আগে থেকে বিয়ের কথাটা কেন ও জানালো না। বিয়েতো আর একদিনেই ঠিক হয়নি?
তাছাড়া ও শুধু একটু সময় চেয়েছিল..
তাতেই এতো কিছু ঘটে যাবেব কে জানতো?
ওর কলিজা যে ছিঁড়ে যাচ্ছিলো এটা কি একবারো প্রতিক্ষা বুঝলোনা?
ওর জন্মই হয়েছে প্রতিক্ষার জন্য। ও যে বড্ড ভালোবাসে প্রতিক্ষাকে। হ্যা অন্য সবার মতো হুট করেই কিছু ওর হয়না একটু সময় লাগে। এর আরকি! কিন্তু ভালোতোবাসে।
ভালবাসা বোধ হয় এমনি!
সমস্ত দ্বিধা সংশয় ভয় কাটিয়ে ও প্রিয়মকে ওর ভালোবাসার কথা জানিয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে ঠিকি বিশ্বাস করেছে।
মা বাবাকে ম্যানেজ করতে যে ওর কতোটা কষ্ট হয়েছে সেটা ওই জানে। ফ্যামিলিতে কি পরিমাণ অশান্তি হইছে সেটা শুধু ও একাই সাফার করেছে। এতোকিছু করার পরো প্রতিক্ষাকে হারানোর ভয় তো ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রেখেছিলোই..।
কি যে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে ও গেলো বলাই বাহুল্য।

” এটা কি বিয়ে নাকি প্রহসন!
তোমাদের আজকালকার যুগের ছেলেমেয়েরা বাবা মায়ের তোয়াক্কা না করেই মনে যা চায় তাই করে বেড়ায়।
মাঝখান থেকে আমার মেয়েটা..
প্রিয়ম তোমার কার্যকলাপে কিন্তু আমি ভারী অসন্তুষ্ট। ”
প্রতিক্ষার বাবা চোখ রাঙিয়ে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলতে লাগলো।
একেকজনের চিল্লাচিল্লি রেশা রেশি কান্নাকাটিতে মূহূর্তেই বাড়িটা কুরুক্ষেত্র পরিণত হল।

অত্যাধিক শোরগোলের ঠ্যালায় প্রতিক্ষার সেন্স ফিরে। চোখ খুলে ও নিজেকে প্রহরের কোলে আবিষ্কার করে। চোখদুটো উপরের দিকে তুলে প্রহরের মুখপানে তাকায়।
প্রহরের চোখের কোণে জল চিকচিক করতে লাগলো। ও হকচকিয়ে উঠে বসে।
ওকে দেখে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে।

সমস্ত রিচ্যুয়াল মেনেই দুজনের বিয়ে হয়ে যায়। নিয়মমতো প্রতিক্ষা বরের পাশে বসে চললো স্বপ্নের শ্বশুরবাড়ীর পথে।
সব পেয়েও কেমন যেন এক কষ্ট ওকে কুড়েকুড়ে খেতে লাগলো।
সব কিছু এতোতাড়াতাড়ি কি করে ঘটে গেলো এটা ওকে বড্ড ভাবাচ্ছে।
তাছাড়া প্রহর ওকে কেন বিয়ে করলো এটাও এই মূহূর্তে ভাববার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও কোনকিছু নিয়ে ভাবতে ওর ভালো লাগছেনা আবার এড়িয়েও যেতে পারছে না।

বাসর ঘরে বসে থেকেও প্রতিক্ষার ছন্নছাড়া ভাবনাগুলো ওকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগলো।
তাছাড়া প্রতিক্ষা প্রহর গাড়িতে বসে কেউ কারো সাথেই কথা বলার চেষ্টা করেনি। ওদের দুজনের মাঝেই এখন এক আকাশ দূরত্ব।
প্রতিক্ষা এই দূরত্ব কমানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা যে করবে না তা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তাছাড়া ওই দিনের অপমান আর দুইটা দিন ধরে এই মাত্রাতিরিক্ত মানুষিক চাপ ওকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে।

প্রহরের ভেতরটা জলে পুড়ে যাচ্ছে সদ্য বিয়ে করা বউ এর এমন উদাসৈন্যতা দেখে। আচ্ছা ওর থেকে কি বেডশিটটা বেশি ইম্পোর্টেন্ট ! ওটার দিকে একমনে তাকিয়ে কি করছে ও?
আচ্ছা আমার দিকে কি একবারের জন্যও তাকাতে পারছেনা।
প্রতিক্ষা বিছানা থেকে উঠে দাড়াতেই প্রহর ওর হাত ধরে ফেলে।
“কোথায় যাচ্ছো?”

প্রতিক্ষা প্রহরের হাত ছাড়িয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা চালালে প্রহর আরো শক্ত করে ওর হাত ধরে ওর ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায়।

প্রতিক্ষা নিমিষেই চোখ বুজে ফেলে।
প্রহর ওর দুই চিবুক ধরে আলতো করে স্পর্শ করে। ও চমকে উঠে প্রহরের দিকে তাকায়।

প্রহর প্রতিক্ষার হাতে একটা রিং পড়িয়ে দেয়। ও এই রিংটার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু মূহূর্তেই মাইন্ড টা ডাইবার্ট হয় অদ্ভুত রকমের শিরশিরানি অনুভুত হওয়ায়।
প্রহর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,
” ভালোবাসি তোমায়, খুব ভালোবাসি। ”

প্রতিক্ষা চমকে উঠে ওর দিকে তাকায়,
” কি বললেন, আবার বলবেন।”

” কেন তুমি শোনতে পাওনি, নাকি দ্বিতীয়বার শোনতে চাও। দয়া করে স্বীকার করো যে , তুমি বারবার এই কথাটার পূনরাবৃত্তি চাও।”

প্রতিক্ষা প্রহরের হাত ছাড়িয়ে বিছানায় বসে পড়লো।
প্রহর ও সাথে সাথে বিছানায় প্রতিক্ষার পাশে বসে পড়লো।
” প্রতিক্ষা আমি জানি তুমি খুব রেগে আছো।
আমাকে কি কোনভাবে ক্ষমা করা যায় এইবারের জন্য। প্রমিজ আর জীবনেও তোমাকে কোন কষ্ট পেতে দিবোনা”

প্রতিক্ষা দিক থেকে কোন সাড়া পাচ্ছিলো না প্রহর।

” কি হলো কিছুতো বলো।”
প্রহর প্রতিক্ষার কোমড় জড়িয়ে ধরে আবার বললো,

” জানোতো প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন থেকেই মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছিলাম একদিন তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো।”

” বিশ্বাস করিনা ”
প্রহরের দিকে ঘুরেই কথাটা বললো প্রতিক্ষা।

” কেন? ”
প্রহর কপাল ভাজ করে প্রতিক্ষার দিকে তাকায়।

” তাহলে আমাকে এতো কষ্ট কেন দিলেন। আপনি খুব খারাপ।
হুম সবাই খুব খারাপ।”

” হুম আমি খুব খারাপ।
খুব পচা আর বাজে একটা মানুষ। তবে আফসোস তোমাকে এই খারাপ মানুষটার সাথেই যে বাকী জীবন কাটাতে হবে।”

” লাভ ইউ। কতটা ভালবাসি বুঝাতে পারবোনা।
” বলেই প্রতিক্ষা প্রহরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ওতো এটাই চায় সারাজীবন এই মানুষটাই ওর পাশে থেকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখুল
প্রহর দুই হাত দিয়ে প্রতিক্ষাকে আগলে রাখলো। ও জানে প্রতিক্ষা এখনি নাকের জলে চোখের জলে এককার করে ফেলবে। এই মূহূর্তে এটা ওর কাম্য নয়।

হ্যাপি এন্ডিং….

*ভালো লাগা মন্দ লাগা অবশ্যই জানাবেন। আর পাশে থাকার জন্য সবাইকেই ধন্যবাদ। *

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here