কাঞ্জি পর্ব -০৭

#কাঞ্জি
#পর্ব-৭
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

আবৃতি জড়িয়ে আছে শাহরিয়ারের ডান হাত।প্রেয়সীর গাল স্পর্শ করেছে তার নগ্ন গলায়।এক মুহূর্তে তার মনে হলো এই বুঝি ঝলসে যাচ্ছে নিজের গা। জ্বর বেড়েছে অনেক।বার দুয়েক বমি করে ক্লান্ত মেয়েটা গা এলিয়েছে শাহরিয়ারের গায়ে।হাসপাতালে বসে আছে দুজনে।ফয়সাল সাহেবও এসেছেন।ঘটনা ঘটেছিল আজ দুপুরে।পুরো বাড়ি যখন বিয়ের কনেকে নিয়ে ব্যস্ত তখন আবৃতি বার দুয়েক বমি করে শ্রান্ত অবস্থায় পড়ে আছে নিজ রুমে।ফয়সাল সাহেব তাকে ডাকতে ডাকতে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পান। বয়সের ভারে এখনো তাকে কুঁজো করতে পারেনি।যুদ্ধ করেছেন এই দুই হাতে।পাক বাহিনীর ঘাটি যেদিন উড়িয়েছিলেন সেদিন গুলি লেগেছিল তার ডান বাহুতে।তবুও থামেনি।এমন সুপুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন সুফিয়া খাতুন।চেহারা,ব্যক্তিত্বের ঝৌলস সব কিছুই টইটম্বুর করে ঢেলে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা এই মানুষকে। আর উত্তরাধিকার সূত্রে সেসব এসেছে ছেলেমেয়েদের মাঝে। নিজ হাতে আবৃতিকে কোলে তুলে বের হয় ফয়সাল সাহেব। স্ত্রীকে সবটা সামলাতে বলে লিফটে নিচে নামতেই দেখা পাওয়া গেল শাহরিয়ারের।

“শাহ্, তোমার কোনো কাজ না থাকলে আমাদের একটু হাসপাতালে নিয়ে চলো।”

“দাদা ওর কি হয়েছে?”

“জ্বরে অবচেতন হয়ে আছে।চিৎকার করো না।বাড়িতে মানুষ, বিয়ে বাড়িতে এসব জানানোর দরকার নেই।”

“দাদা!”

ফয়সাল সাহেব চকিতে মুখ তুলে চাইলেন।দেখতে পেলেন শাহরিয়ার যেন মৃদু কাঁপছে।দুই হাতে তার হাত দুটো ধরে স্মিত হাসলেন ফয়সাল সাহেব।ফিসফিস করে বললেন,

” সেদিন ও তো নিয়ে গিয়েছিলিস ব্যাটা।তবে আজ কেন ভয় পাচ্ছিস?”

“টায়ফয়েডেও মানুষ মা রা যায়।”

“ও মরবে না।চিন্তা করিস না।আয় বোস।”

কিন্তু গাড়িতে আরো একবার বমি করলো আবৃতি।ফয়সাল সাহেবের পাঞ্জাবি নষ্ট করে ফেলল।হাসপাতালে পৌঁছে শাহরিয়ার তাকে ডাক্তার দেখিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।কিন্তু এই অপেক্ষাটাও সুমিষ্টঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।কেমন?
এই যে শরৎের প্রথম শিউলি যে সুবাস ছড়ায় ঠিক তেমন।আজ আর তার হিংসে হচ্ছে না।এই যে আবৃতি নিজের হাতে জড়িয়ে আছে তার হাত।চুলগুলোর আড়ালে রয়েছে তার অন্য হাত আবার উত্তপ্ত গালটা মিশে আছে তার সাথে।উফ এতো সুখ সে কই রাখবে?আবৃতি বুঝি তাকে এতো সুখ দিবে বলেই অসুখে পড়েছে?
পরক্ষণে মনে হলো কিসব ভাবছে সে?মেয়েটা অসুস্থ। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন বের করে কল দিলো শাহানারাকে।

“শোন আবৃতি আমার সাথে।দাদার ফ্ল্যাটে তো অনেকেই। একটা কাজ করতে পারবি?”

“তোর সাথে? কোথায়?”

“হাসপাতালে আছি।শোন তুই কি তোর সাজগোজের ব্যাপারটা আমাদের ফ্ল্যাটে করতে পারবি?”

“করাই যায় কিন্তু কেন?”

“তবে ও আমাদের ফ্ল্যাটে ঘুমাতে পারতো।ও বাড়িতে এত মানুষ।”

“ভাই তুই কি একটু বেশিই করছিস না?তুই জানিস এই সম্পর্ক

” আমি সব জানি।আর আমি নিজের ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ করি না তুই জানিস।”

“সিজাদ ভাই এসেছেন। দেখিস অন্তত কোনো ঝামেলা যেন না হয়।আমি কিংবা অদিতি না। ও আবৃতি, মেঝ মামনি এটা মেনে নিবে না।তুই সেদিন ওয়াশরুমে ওর পিঠে হাত রেখেছিলি বলে ওকে মেরেছিল মামনি।হয়তো জ্বরের কারণ সেই ব্যথাটাও।”

“এত কিছু শুনতে চাচ্ছি না। তোকে যেটুক বলেছি তুই কর।আমরা আসছি।”

বাড়ি ফিরে আবৃতিকে নিজের রুমে বিশ্রাম নিতে বলেছিল শাহরিয়ার কিন্তু সে যায়নি।আবৃতি ভালো ভাবেই জানে শাহিনা বেগম নিজ ছেলের ব্যাপারে বেশ খুতখুতে স্বভাবের।অন্য কোনো মেয়ে তার রুমে প্রবেশ করুক সেটা পছন্দ করে না।বিশেষত রিমি,রিমঝিম, আবৃতি কিংবা অদিতির প্রতি তার আলাদা একটা বিদ্বেষ প্রকাশ পায়।খুব প্রয়োজন না হলে তাদের ফ্ল্যাটেও কেউ যায় না।সেখানে শাহরিয়ারের রুমে বিশ্রাম?

চলবে (এডিট ছাড়া।আপনাদের রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।এবার আসি এতো কম কেন? কিংবা দেরী কেন হচ্ছে।
শরীরটা তো ভালোই না। যোগ হয়েছে চোখের সমস্যা।আমি সব দেখতে পাচ্ছি কিন্তু মনে হয় হালকা কুয়াশা জমেছে। স্পষ্ট কিন্তু ধোয়াশা। প্রচন্ড কষ্টে এটুক টাইপ করতে পেরেছি তবুও তিন চার ঘন্টায়।আশা করি বুঝেছেন এবং আগামী পরশু আবার দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

#ছবিয়ালঃ জাকিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here