#কাঞ্জি
#পর্ব-১৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
“আমি তাকে দেখেছিলাম আমার আগুন রঙা পলাশ ভরা যৌবনে।সে ছিল ভোরের আলোর ন্যায় স্নিগ্ধ, মুগ্ধ। তাদের অধরে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা ছুঁয়ে দেওয়ার অমোঘ টানে ভুলে বসেছিলাম সকল নিয়ম। পথভুলা পথিকের খুঁজে হুট করেই এসে দাঁড়িয়ে আমায় জিজ্ঞেস করেছিল “আপনাকে উদভ্রান্তের মতো লাগছে শাহ্। আপনার কি জ্বর এসেছে?”
সদ্য পনেরো পেরোনো কিশোরী দেহ যেন পদ্মের প্রতিটি পাঁপড়ির ন্যায় ভাজে ভাজে লুকিয়ে রেখেছে রহস্য। নিষিদ্ধ জিনিস ছুঁয়ে দেওয়া যায় না। তেইশ বছরের যুবকের পিপাসা বেড়ে গেল।সে চাইছিল সেই কোমল মতী মেদ,খাদহীন চিত্তে মাথাটা রেখে ফিসফিস করে বলতে,
“আমি জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি।আমায় ঠাঁই দিবে একটু? এতো এতো যন্ত্রণা নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়? এরপর আমি ম’রে গেলে তখন কিন্তু দায়ভার হবে তোমার।”
কিন্তু বলা হলো না।শরৎের শিউলির, বর্ষার কদম কিংবা হেমন্তের পদ্মের মতোন সে ধীরেধীরে উষ্ণতা ছড়ালো আমার মন মস্তিষ্কে।”
আধ খাওয়া সিগারেটটা হাতে নিয়ে সিজাদ বলল,
“আগে তো বলিসনি।আমাকে বলতে পারতি।”
“কি বলতাম? আমি পাখিকে ভালোবাসি?ওকে বিয়ে করবো?যোগ্যতা ছিল আমার?বাবার টাকায় প্রেম করা যায়, ভালোবাসা যায় না।আমি ওকে ভালোবেসেছি রে।”
“আমি সাহায্য করতাম তোকে।”
“এটাই তো চাইনি। আমি যোগ্য হতে চেয়েছি।আবৃতি বাকী সবার মতো নয়।ও শিউলি ফুলের মতো রে।কিংবা লজ্জাবতী।”
” আমার মনে হয় তুই সরাসরি বাসায় কথা বলে দেখ কি হয়।এভাবে কিছু করা উচিৎ হবে না।”
“আমরা না জানিয়ে বিয়ে করছি না। আগে তো প্রেমটা করতে হবে। না হলে আমার নাতীদের কি বলবো?”
“আবৃতি রাজি তবে?”
শাহরিয়ারের পেটানো শরীর দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেয়ে পড়ছে।ট্রেড মিলে দৌড়ে কিছুটা অস্থির সে। ঘাড়ের দিকটা তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
“শোন, প্রেম জিনিসটা মধুর মতো। মৌয়াল রিস্ক না নিলে মধু পাবে কি করে?”
বাড়ি ফিরে দাদার ফ্ল্যাটে দেখা হলো আবৃতির সাথে। শাহানারার হলুদের প্রিপারেশন চলছে।শাড়ি ওয়ালা হচ্ছে এই শহরের নাম করা শাড়ির ব্র্যান্ড। তাদের এখানেই ডেকে এনেছেন ফয়সাল সাহেব।বাড়ির মেয়েরা শাড়ি কিনতে বাইরে দশ দোকান ঘুরবে এটা পছন্দ নয় তার। ইতিমধ্যে সবাই শাড়ি সিলেক্ট করেছে। কনের সহচরীদের জন্য একই শাড়ি। সবাই হলুদ এবং সাদার মিশেলে শিফনের শাড়ি পরবে। আবৃতির দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকালো শাহরিয়ার। সে ইশারায় না করলো এই শাড়ি নিতে।অন্য গোলাপী রঙের কাঞ্জিভরমটার দিকে ইশারা করলো।তবে আবৃতি নিরুত্তাপ।সে নিজ ইচ্ছে মতো শাড়ি নিচ্ছে।সবার সামনে যদি শাহ এই শাড়িটা ধরে তবে তার মা এটা ওয়াজিফার জন্য নিবে যেটা সে কিছুতেই চাইছে না।তাই বাধ্য হয়েই সিজাদকে ম্যাসেজ করে বলল,
“গোলাপী শাড়িটা পাখির হাতে দে। অন্য কেউ যেন এটা না।নেয়।”
ভাইয়ের কথা অনুসারে সিজাদ গিয়ে শাড়িটা আবৃতিকে দিলো।প্রথমে না করলেও পরবর্তীতে ছোটো চাচী এবং ফুপু বলল নিতে।তাকে মানাবে বেশ। শাড়িওয়ালাকে পেমেন্ট ফয়সাল সাহেব করছিলেন সেই সময় শাহরিয়ার এসে বলল,
“কাঞ্জিভরমটার দামটা আমি দিবো দাদা।”
“কেন?সব আমি দিচ্ছি তবে ওটার কি সমস্যা?”
“ওটা আমি আবৃতির জন্য নিয়েছি।প্লিজ দাদা না করো না।তুমি তো জানোই সব।”
“হুম এখন দেখছি বিয়ে একটা নয় দুটোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
“পাত্র আমি এক পায়ের উপর খাড়া। পাত্রীকে রাজি করাও তবে।”
আবৃতি যেদিন প্রথম স্কুলে যায় তার কয়েক দিন আগে থেকে শাহরিয়ার তাকে বলেছিল,
” রাস্তায় কেউ কিছু দিলে নিবে না।কারোর সাথে ঝগড়া করবে না।কেউ সাথে যেতে বললে যাবে না।”
যেদিন স্কুলে যায় সেদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“রাস্তায় কেউ কিছু দিলে তুমি কি করবে?”
ছোট্ট আবৃতি উত্তর দিয়েছিল’
“চকলেট হাতে নিয়ে বলবো থাংক ইউ। আর সাথে যেতে বললে বলবো, ইউ আর মোস্ট ওয়েক্কাম।”
শাহরিয়ারের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিল। তাইতো পঞ্চম শ্রেণীর অবধি সে একা ছাড়েনি।শাহানারা কে নিয়ে আসাটা তো বাহানা ছিল মাত্র।
বার বার নিষেধ করা স্বতেও আবৃতি হলুদে সেই শাড়িটা পরলো।কোমরের খালি অংশের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো শাহরিয়ার। এভাবে অন্তত বরপক্ষের সামনে যাওয়া চলবে না। হলুদের কেক নিয়ে আবৃতি যখন সবার পিছনে সে অনুভব করলো ঠান্ডা দুই হাত ছুয়ে গেল তার পুরো পেট এবং কোমড়।আলোর দিকে আসতেই আবৃতি খেয়াল করলো
“তার পুরো পেটে, কোমরে লেপ্টে আছে স্মার্ট মেহেদীর লাল রঙ।”
চলবে (এডিট ছাড়া।যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন। ব্লক কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি মাত্র।আপনাদের মন্তব্য আশা জোগায়।”
#ছবিয়ালঃ Adritya