#কাঞ্জি
#১৭
একজন মা শত কষ্ট না পেলেও নিজের সন্তানকে কষ্ট দিতে চায় না।কিন্তু রত্না বেগম চেয়েছেন।স্বামীর এমন বেঈমানী মেনে নিতে পারেনি।আবৃতি তো তারই অংশ।সে নিজের মাঝেই আবৃতিকে দেখতে পেতো।খাবার কম খেতে দিতো যেন জীবনে কখনো অভাবে পড়লে সে কষ্ট না পায়।ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা তার হোক এবং হোঁচট খেয়ে খেয়ে উঠে দাঁড়াক নিজ পায়ে। অপর দিকে অদিতিকে আদরে বড় করে তোলার পিছনেও একটা যুক্তি রয়েছে। সে চেয়েছে অদিতি কখনো না ভাবুক সৎ মা বলে তাকে অবহেলা করেছে। আবৃতির গায়ে চাদর টেনে দিয়ে রত্না বেগম বেরিয়ে এলেন। শাহরিয়ারের মা এর আগেও একদিন ওর নামে বিচার দিয়েছিল।সেদিন খুব মেরেছিল আবৃতিকে।এখন মনে হচ্ছে সে ভুল করেছে। তার উচিৎ ছিল আদরের সাথে বুঝানোর উচিৎ ছিল আবৃতিকে।ঠিক আজকের মতো।লিফটে নিচ তলায় নামতেই দেখা হলো শাহরিয়ারের সাথে।কিছুটা ইতস্ততভাবে কথা বলার চেষ্টা করছিল শাহরিয়ার।
বলবে না বলবে না করে জিজ্ঞেস করেই ফেলল আবৃতি কোথায়? প্রশ্নে ভ্রু-কুঁচকে রত্না বেগম বলেন,
“আবৃতিকে কেন খুঁজছো? তোমাদের বাড়িতে বিয়ে। সেখানে যাও।”
“কাকী দরকার ছিল।”
“আমার মেয়ের সাথে তোমার কোনো কাজ বা কথা নেই শাহরিয়ার।”
“আপনি রাগ করছেন কেন?”
“তুমি নাইন টেনে পড়া বাচ্চা ছেলে নও শাহরিয়ার। তোমাকে বুঝতে হবে। যখন ওয়াজিফার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েই আছে তবে কেন আমার মেয়েকে তৃতীয় ব্যক্তির দরজায় দাঁড় করাচ্ছো?দূরে থাকো।না হলে আমি ওকে মেরে ফেলবো। কেবল ভালোবাসি বললেক হয় না। ভালোবাসার জোড় দাবি রাখতে হয়। যেটা তোমার বংশের ছেলেরা পারবে না।”
শাহরিয়ার একে একে দুই মিলিয়ে ফেলেছে। গতকাল অনুষ্ঠানে কিছু একটা হয়েছে এবং সেটা তার মা জানে।বাসায় ঢুকতেই তার মা এক গ্লাস শরবত হাতে নিয়ে এসে বলল,
“আব্বা আসছো তুমি?এই নাও শরবতটা খাও।কলিজা ঠান্ডা হবে।”
“আম্মা আপনি আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ঠান্ডা করতে বলতেছেন?”
“কি করেছি আমি?”
“আবৃতির কি হয়েছে? ও কোথায়?”
“আমি কি জানি?”
“ওর ঘড়ি ওয়াজিফার হাতে এলো কি করে?ওটা তো আপনিই এনেছেন।”
“তো?”
“কয়টা আনবেন আপনি? একটা ফেরত নিবেন আমি ওকে দশটা এনে দিবো।”
“তুমি বেশি কথা বলছো।”
“আপনি কি চাইছেন?আপনার মেয়ের বিয়েতে কোনো ঝামেলা হোক?”
“কি ঝামেলা করবে তুমি?”
“আমি থাকবো না বিয়েতে।এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাবো।”
“আব্বা কি বলো এসব।”
“যা বলেছি আমি তাই করবো।যদি আপনি এই মুহুর্তে আবৃতির মায়ের কাছে ক্ষমা না চান। আম্মা সন্ধ্যের অনুষ্ঠানে আমার আবৃতিকে চাই। না হলে আমি বেরিয়ে যাবো।”
শাহরিয়ারের মা অবাক চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইল।সে চিন্তাও করে পারছে না তার একমাত্র ছেলে, যে কি না খাবারটাও তার পছন্দ মতো খায় সেই ছেলে এসব বলে গেল।কিন্তু তার মনেও জেদ কম নয়। ছেলে না গেলে না যাবে বিয়েতে তবুও ওই মেয়ের কাছে যাবে না সে।
নিজের রুমে ফেরত আসতে যেয়েও ফিরে এলো শাহরিয়ার। ফোন কানে নিয়ে সরাসরি প্রবেশ করলো আবৃতির ঘরে।পুরো ফ্ল্যাট ফাঁকা। নিজ রুমে উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে আবৃতি। তাকে ঘুমাতে দেখে রাগ আরো কয়েক দফা বেড়ে গেল শাহরিয়ারের। পুরো রাত শাহরিয়ার ঘুমাতে পারেনি আর সে দুপুর বেলা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে? একবার মনে হলো দিবে না কি মাথায় তুলে আছাড়?আবার ভাবলো থাক, ব্যথা পাবে। কিন্তু এখন তো ঘুম থেকে জাগানো তার প্রয়োজন। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিকে বলল,
“এক মিনিট হোল্ড কর তো।”
আবৃতিকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে শাহরিয়ার ফোনের স্পিকার লাউডে দিতেই সে শুনতে পেল ” রাজি থাকলে বলুন কবুল।”
শাহরিয়ার অকপটে তিন বার বলল ” কবুল,কবুল,কবুল।”
আবৃতি চমকে উঠেছে, তার ঘুম ও উবে গেছে।সে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু শাহরিয়ারের হাত শক্ত হয়ে তাকে প্যাঁচিয়ে ধরে চোখ ইশারায় বলল,
“এই মুহূর্তে কবুল না বললে তোমাকে আমি খেয়েই ফেলবো পাখি।ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে যাও।”
চলবে( ভীষণ ব্যস্ত সময় পার হয় আমার।তবুও ক্ষুদ্র চেষ্টা।
#উজল_প্রাতের_আরশি প্রি-অর্ডার করেছেন তো?)
#ছবিয়াল:তানজিনা