কাঞ্জি পর্ব -২৫

#কাঞ্জি
#পর্ব-২৫
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

“আমি ছেলে জন্ম দিয়েছি। পৃথিবীতে যদি ওর উপর কারোর হক থেকে থাকে তবে সেটা রয়েছে আমার। আমি চাই না আবৃতিকে আমার জীবনে।”

শাহরিয়ারের মায়ের কথা শুনে ভীষণ বিরক্ত হলো তার স্বামী।বাবার সামনে স্ত্রীর সাথে উঁচু গলায় কথাও বলতে পারছে না। ফয়সাল সাহেব বরাবর ছেলেদের শিখিয়েছে, ঘরের স্ত্রী অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে।তারা বাবার ঘর ছেড়ে পরের বাড়িতে থাকে কেবল স্বামীর ভরসায়৷ তাই স্বামীর উচিৎ সবসময় স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা। আবৃতির বাবা মারা যাওয়ার পর এই কথায় আরো বেশি জোড় দিয়েছেন ভদ্রলোক। স্ত্রীর সাথে কোনো পরিস্থিতিতে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। শাসন করবে ঘরের দরজা দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে। নিজের রাগকে সংযত রেখে ফয়সাল সাহেব বললেন,

“তুমি নিজের জেদ দেখছো অথচ তোমার ছেলে কি চায় সেটা কখনো ভেবেছো?”

“ছেলেরা অনেক কিছুর বায়না করে তাই বলে সব দিতে হবে?”

এমতাবস্থায় শাহরিয়ার প্রবেশ করলো।মায়ের সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে বলল,

“বিবাহিত ছেলের আবার বিয়ে দিবে মা?আমি আবৃতিকে বিয়ে করেছি।”

শাহরিয়ারের মা এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়লেন।তাকে হাত দিয়ে ধরে তার পাশেও বসে পড়লো। ওয়াজিফা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সে রুমের ভিতরে চলে গেল। ব্যাগ গোছানো দরকার। এখানে থাকা সম্ভব নয় আর। নিজেকে আর কষ্ট দেওয়া যায় না। বেঁচে থাকতে হবে তাকে।কারোর জন্য মরে যাওয়ার মেয়ে সে নয়। নিজেকে নিয়ে বাঁচতে হবে।এতোদিন যা সে করেছে সব ভুল করেছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে মাফ চাইলে সবকিছুর মাফ পাওয়া যায়, সে মাফ চেয়ে নিবে কিন্তু পিছন ফিরে তাকাবে না।যদি সে জানতো ইতিমধ্যেই তৃতীয় ব্যক্তি হয়েছে তবে এখানে থাকতো না।যে মানুষের জন্য এতকিছু সেই যদি অন্যের হয়ে যায় সেখানে কিছুই করার থাকে না।করাটাও বোকামী। মিনিট দশেকের পর ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এলো সে। তাকে চলে যেতে দেখে শাহরিয়ারের মায়ের কান্না আরো বেড়ে গেল।সে অনুনয় করে বলল,

” মা রে এখন রাত হয়ে গেছে। তুই এখন যাস না।সকালে যাবি, আমি তোকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি বলে তুই আমারে ফালায় দিবি?”

“না ফুপু, তোমাকে আমি ফেলবো কেন?আমার কাছে তুমি সব সময় আগের মতোই থাকবে।কিন্তু ফুপু এখানে যে আমার আর থাকা চলে না।আমি যাকে চেয়েছিলাম তার ভালোবাসা মেখে অন্য একজন আমার সামনে চলবে এটা সইতে পারবো না।এভাবে বেঁচেও থাকাটা কষ্ট হবে।এর থেকে না হয় আমি দূরেই চলে যাচ্ছি।কারোর সুখে কুনজর হতে চাই না।আমায় আটকে রেখো না।আমি আসছি।”

শাহরিয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে বলল,

“যে মেয়েটার দায়িত্ব নিয়েছো তাকে আগলে রেখো শাহরিয়ার। আমার দোয়া রইল তোমাদের জন্য।আজ থেকে আমার জন্য তুমি মরে গেলে, তোমার জন্য তো আমি ছিলামই না।ভালো থেকো।”

নিজ রুমে সবে মাত্র ফিরেছে শাহরিয়ার। তার এখন ঘুমের প্রয়োজন। সারা দিনের ধকল এবং ছেলের বিয়ের খবর নিতে পারেনি শাহরিয়ারের মা। আপাতত তাকে সামাল দিচ্ছে তার দুই ফুপু।আবৃতির সাথে বিয়ের খবরটা বাতাসের থেকেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। রত্না বেগম আপত্তি করেনি কারণ করেও লাভ নেই।কেবল ক্ষোভটা মেয়ের প্রতি। কবুল বলার আগে একটাবার জানাতে তো পারতো। কিন্তু ফয়সাল সাহেব তাকে বুঝালেন।আবৃতি জানতো না সেসব কিছুই জানালেন।তবুও মায়ের মন কু গাইছিল।তারও তো বিয়ে হয়েছিল খালাতো ভাইয়ের সাথেই। তাকেও বিয়ে করার জন্য পাগলামি করেছিল আবৃতির বাবা।দিন শেষে তাকে ঠকতে হয়েছে। নিঃশেষ হয়ে বেঁচে থাকাটা যন্ত্রণার। কিন্তু মেয়ের বেলায় এমন হতে দিবেন না।কিন্তু যদি এমন কিছুই হয়?তখন কি করবে সে?

রুমে ফিরে শাহরিয়ার শাওয়ার নিয়ে বিছানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।বালিশে মাথা রাখতেই তার দুই চোখ ভার হয়ে এলো কিন্তু বা হাতটা ভীষণ ফাকা লাগছে। পুরো সকাল আবৃতি এই হাতে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে।তার এই মুহুর্তে ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন মেয়েটাকে। কিন্তু এখন গেলে কেমন হবে?কাকী কি ভাববে?তাছাড়া তার বাসায় এতো মানুষের মাঝে সে বের হবে কি করে?এসব ভেবে একবার উঠে বসে পুনরায় বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো শাহরিয়ার।ঘুম ঘুম ভাব অথচ ঘুম না আসাটা আরো যন্ত্রণার। মিনিট বিশেক পর দরজার টোকা পড়লো। কেবল একটু ঘুম এসেছিল সেটাও উবে গেল।আবার কি হলো ভাবতে ভাবতে টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলল সে। দরজায় তার দাদী দাঁড়িয়ে আছে।তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে বর্ণ, রিমঝিম এবং ওর বোন।
দাদী দরজায় দাঁড়িয়েই বলল,

“ভাইজান বিয়ের পর স্ত্রীকে আলাদা রেখে একই বাসায় রাত কাটানো উচিৎ না।যেখানে এক বিছানায় থেকেই মাঝে দূরত্ব রাখতে হয় না।শয়তান ঢুকে পড়ে। এই নাও আমার নাতনী দিয়ে গেলাম।”

শাহরিয়ার তাকিয়ে দেখলো সবার পিছনে গোলাপী রঙা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে আবৃতি। তার হাতে চুড়ি, গলায় পাতলা চেইল এবং নাকে ফুল।ঠিক যেন বৌ বৌ ভাব। স্মিত হাসলো সে। দাদী কি করে জানলো? তার নাতনীকে এই মুহুর্তে না পেলে সে প্রায় দম বন্ধ হয়ে মরতে বসেছিল?

চলবে( এডিট ছাড়া। যারা পড়েন তারা রেসপন্স করবেন। শরীর ভালো লাগছে না একদম।আচ্ছা বইটইয়ের #বেগোনিয়া পড়েছেন তো?)

#ছবিয়াল:z.tuli

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here