#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-৪৪]
বিষন্নতার শ্রাবণ শতাব্দী পাড়ি দিয়ে গেছে
বছর ফুরায়নি তবু, ক্ষত শুকায়নি কভু
যা ছিলো আমার বিস্বাদ ঢেকে দেওয়া মেঘ
তাও নিয়ে গিয়েছিলে সেই কবে চুপ করে
এক কোটি বছর দেখা হয়না তোমায় দুচোখ ভরে।
শ্রাবণের দিন গুলো অদ্ভুত সৌন্দর্যময়। অম্বরে জমে থাকা কালো মেঘ কাটিয়ে ভারি বর্ষণ ঘোলাটে অম্বর স্বচ্ছ করে তুলে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোটার সঙ্গে যেমন ধুয়ে মুছে যায় অন্তরের যতো গ্লানি। ঠিক তেমনি শতাব্দীকাল ধরে শ্রাবণের মেঘ গুলোর সঙ্গে পারি দিচ্ছে বিষণ্ণতা। বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষত ফুরায় নি। কাছের মানুষটাকে প্রাণ ভরে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা মিটে নি। বুকের বাম পাশটা সর্বদা অপ্রকাশিত দুঃখে জর্জরিত। দীবাকে কাছ থেকে পাবার তীব্র অভিলাষ মন থেকে কাটেনি। কিন্তু কাছে চাওয়া যে মানা। দুজনের মধ্যিখানে রয়েছে অসংখ্য বাধা। দীবা আজ তার না। অন্য কারোর জীবনসঙ্গিনী। বিষয়টা কি আদৌ মেনে নিয়ে সহ্য করার মতো? কিন্তু রাজ তো অন্যান্য ছেলেদের মতো ভেঙ্গে পরেনি। সে যথেষ্ট জ্ঞানী। চুপচাপ সবটা মেনে নিয়ে দীবাকে তার ভালোবাসার কাছে ভালো থাকতে দিয়েছে। এটাকে ত্যাগ বলে না। এটাকে বলে ভালোবাসা। যারা ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখার জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে পারে, তারাই প্রকৃত পক্ষে ভালোবাসতে জানে।
বেখেয়ালি ভাবে হাঁটছে রাজ। মাথায় সর্বদা দীবার চিন্তা নিয়ে ঘুরাঘুরি করে। অন্যত্র মন নেই তার। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ির কাছাকাছি আসলো। মোট তিনটা সিঁড়িতে নামার পরেই দীবার সঙ্গে আকস্মিক ভাবে ধা:ক্কা লাগলো তার। হঠাৎ-ই অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না দীবা। ধা:ক্কা লাগায় সিঁড়ি থেকে পরে যেতে নিলেই রাজ দীবার এক হাতের কব্জি ধরে ফেললো। ভয়ে চোখমুখ খিঁচে ফেললো দীবা। বাড়ির নিচ তলায় বিশালাকৃতির বসার ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো সবাই। কথোপকথনের এক পর্যায়ে দীবা ও রিমির মাঝে ঝগড়া বেধে যায়। দীবাকে প্রকাণ্ড রকম ভাবে রাগিয়ে দিয়ে এক ভু দৌড় লাগালো রিমি। দীবা কিসের ছাড়ার মেয়ে? সেও রিমিকে ধরার জন্য পিছু নিলো। বসার ঘর ঘুরেও যখন নিজেকে বাঁচাতে পারছে না তখন রিমি বসার ঘর ছেড়ে দুতলায় দৌড় দিলো। সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিজে সেইভ ভাবে উপরে উঠলেও রাজকে একদম খেয়াল করে নি দীবা। যার ধরন সিঁড়ির উপরে দৌড়ে উঠার সময় ধা:ক্কা লাগে। ভয়ে চোখ বন্ধ করার পরেও যখন টের পেলো কিছুই হয় নি তখন দীবা আস্তে আস্তে চোখ খোলে সামনে তাকালে রাজকে দেখতে পেল। রাজের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচে তাকাতেই দেখলো সে ঝুলে আছে। রাজ তার হাত ছেড়ে দিলেই ধপাস করে সিঁড়িতে পরে যাবে। ভয়ার্ত হলো দীবা। আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠল, ‘প্লিজ স্যার হাত ছাড়বেন না। প্লিজ, প্লিজ।’
‘ছাড়ছি না।’
দীবাকে ভয় পেতে দেখে আশ্বাস দিলো রাজ। তারপর খুব সাবধানতার সঙ্গে দীবার হাত ধরে সোজা করে দাঁড় করালো। প্রাণপ্রিয় জানটা বাঁচতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দীবা। বুকে এক হাত রেখে লম্বা করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। অপরাধীর মতো তাকিয়ে বোকা বোকা টাইপ হাসি দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করলো, ‘সরি স্যার। আসলে রিমিকে ধরার চেষ্টা করছিলাম। রিমি তো দৌড়ে উপরে চলে গেছে কিন্তু রিমির পিছনে আপনাকে আমি একদম খেয়াল করি নি। আই’ম সরি।’
ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলো রাজ, ‘ব্যাপার না। তোমরা কি সারাদিনই ঝগড়া করো নাকি? যখনই দেখি তখনই কোনো না কোনো ব্যাপারে ঝগড়া করছো।’
দীবা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ‘ওই অল্পসল্প।’
শব্দ তুলে হাসলো রাজ। তার এই হাসিতে ভীষণ রকমের লজ্জা পেলো দীবা। অপ্রস্তুত হয়ে কোনো রকমে রাজের পাশ কাটিয়ে উপরে চলে গেলো। তার এমন হকচিকিত চেহারা দেখে আবারো হাসলো রাজ। ঠোঁটে হাসি রেখেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।
_____________________
সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে ধরনী করলো অন্ধকার। দুপুরে ভারি বর্ষণের পর পরিবেশ একদম নিস্তব্ধ। বাহির থেকে ভেজা মাটির ভ্যাঁপসা গন্ধ ঘ্রাণেন্দ্রিয়তে ছুঁই ছুঁই। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের কর্কষ ধ্বনি পরিবেশ বাকরুদ্ধ। আকাশটা ঘন কালো মেঘেদের কারণে অন্ধকার। অন্যান্য দিনের মতো সাদা কালো মেঘেদের আনাগোনা নেই। পরিবেশ একদম নিবিড়। বারান্দার একদম শেষার্ধে দাঁড়িয়ে এক মনে সামনের ঝোপঝাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে নুরা। নিষ্প্রভ তার চোখের চাহনি। এই কয়দিনে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে চোখের নিচে হালকা কালি পরে গেছে। অন্যান্য দিনের মতো হাস্যউজ্জ্বল এই নুরা আজ নেই। চাঞ্চল্যকর মন ধুলাবালিতে মিশে নিস্তেজ হয়ে গেছে। কারণ নুরার মন ভেঙ্গেছে। এক পাক্ষিক ভালোবাসার মতো বিরাট বড় অপরাধ সে করেছে। কে বলে ভালোবাসা মানে সুখ? নুরার কাছে মনে হচ্ছে ভালোবাসা মানেই দুঃখ। মানুষটাকে হারানোর বেদনা হৃদয়ে সর্বদা বিরাজ করে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নুরা। হাত ঘড়িতে সময় দেখলো অনেক রাত। সময় প্রায় নয়টা ছুঁই ছুঁই। এই বাড়িতে আটটাকেই মধ্যরাত হিসেবে গণ্য করে বাড়ির কর্মচারীগন। সেই অনুযায়ী রাত আটটার মধ্যেই রাতের খাবার শেষ করে যার যার ঘরে অবস্থান করতে হয়। দীবা ও রিমি আনন্দে ব্যস্ত। কিন্তু এই আনন্দে মন বসাতে পারছে না নুরা।।তাই রাইমার কাছে যাবে বলে দুজনের চোখে ফাঁকি দিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। কিন্তু সে আদৌতে রাইমার কাছে যায়নি। একা একা বারান্দায় সময় কাটালো এতোক্ষণ। তাই এখন ঘরে যাবার জন্য পিছু ফিরতেই আবরারকে দেখতে পেলো। আবরারের রাগি চেহারা দেখে বিস্মিত হলো নুরা। আরব ভাই রেগে আছে কেন? চোখ ফিরিয়ে বাড়ির নিচে তাকাতেই রাজকে দেখতে পেলো সে। খেয়াল করলো আবরার রাজের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে আতঙ্কিত হলো নুরার মন। নিজেও অস্থির পায়ের কদম ফেলে আবরারকে ধরার জন্য পিছু ছুটলো।
রাজ এক পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলো। মনে জমে থাকা হাজারো অভিযোগ তুলছিলো। দীবাকে না পাবার যন্ত্রনা গুলো ভুলতে চাইছিলো। তখুনি আবরার আসলো তার কাছে। এসেই রাজের বাহুতে ধা’ক্কা দিলো একটা। হতভম্ব রাজ আকস্মিক ঘটনার মানে বুঝলো না। ধা’ক্কার তাল সামলাতে না পেরে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো। আবরারের রাগি চেহারা দেখে প্রশ্ন করলো, ‘এইসবের মানে কি?’
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আবরারের। রাগে মাথা গরম হয়ে গেলো তার। কপালের রগ ফোলে নীল বর্ণ ধারণ করলো।রাজের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আবারো রাজের বাহুতে ধা’ক্কা দিয়ে বললো, ‘দীবার কাছাকাছি যেতে বারণ করেছিলাম তোকে। তুই আবারো দীবার..!”
আবরারের কথা সম্পূর্ণ হবার আগেই রাজ কিছুটা রাগী গলায় কাটকাট ভাবে বলে উঠলো, ‘দীবার কাছাকাছি কোথায়?”
আবরার প্রথমের মতো ক্রোধান্তিত চোখেমুখে রাজের বাহুতে তৃতীয় বারের মতো ধা:ক্কা দিয়ে বললো, ‘সন্ধ্যায় দীবার হাত ধরলি কেন? সাবধান করার পরেও বারবার দীবার কাছে যাচ্ছিস কেন তুই?’
আবরারের ব্যবহার আজ সীমা অতিক্রম করেছে। এতোদিন দূর থেকে থ্রে’ট দেওয়া পর্যন্তও ঠিক ছিল, কিন্তু আজ গায়ে হাত তুলার ব্যাপার টা রাজ নিতে পারলো না। রাগে শরির মৃদু কেঁপে উঠলো।। চোয়াল শক্ত করে আবরারের কলার ধরে গর্জন করে উঠলো, ‘ব্রাস্টার চোখে কি কালি পরে ছিলো? দীবাকে না ধরলে নিচে পরে যেতো।’
আবরার নিজেও রাজের কলাপ চেপে ধরলো। দুজনের মাঝে মা’রা’মা’রি লাগার আগেই সেখানে উপস্থিত হলো নুরা। মর্মান্তিক অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ নুরা। দৌড়ে এসে দুইজনকে থামানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কেউ তার কথা গুরুত্ব দিচ্ছে না। দুইজন দুজনের কলার চেপে ধরে একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি একে অপরকে আঘাত করবে। নুরা ভয়ে অস্থির হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘আরব ভাই ছাড়ো প্লিজ। থামো তোমরা। ছাড়ো! আরব ভাই?’
ছাড়লো না আবরার। উলটো রাজের কলার আরো শক্ত করে চেপে ধরে হুংকার দিয়ে উঠলো, ‘তোকে আমি জাস্ট সহ্য করতে পারি না। বারবার সতর্ক করার পরেও তুই দীবার পাশেই ঘুরছিস। ইচ্ছে করছে তোকে মে’রে…!!
‘বাড়াবাড়ি করার একটা লিমিট থাকে। আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিবি না। হাত ছাড়!’
‘ছাড়বো না। কি করবি তুই?’
‘আবরার ভালো হচ্ছে না কিন্তু। হাত সরা বলছি!’
নুরা হতবাক। কি করবে কিছুই বুঝে আসছে না। এই মুহূর্তে দুজনকে থামাতে হবে। নাহলে এখানে বড় কোনো ঝামেলা বেধে যাবে। তার মনে হচ্ছে এই ঝামেলা টা রাইমার বিয়েতে বাধা হতে পারে। তাই নিজেও অস্থির হয়ে দুজনকে থামাতে চাইলো। আবরারকে ছাড়তে না দেখে রাজকে বললো হাত ছাড়তে, ‘স্যার প্লিজ আপনি ছেড়ে দেন। আরব ভাই? প্লিজ ঝামেলা করো না। ছেড়ে দাও ভাই প্লিজ।’
নুরার কথা রাখতে রাজ নিজেই কলার ছেড়ে দিলো। কিন্তু আবরার ছাড়লো না। তাই চোয়াল শক্ত করে আবরারের দিকে তাকালো রাজ। নুরা রাজের কলার থেকে আবরারের হাত ছাড়িয়ে আবরারকে দূরে সরিয়ে নিলো। আবরার রাজের দিকে আবারো এগুতে চাইলে নুরা তাকে বাধা দিলো। আবরার রাজের দিকে আঙ্গুল তুলে নুরা কে বলে উঠলো, ‘টেল হিম টু স্ট্যায় আওয়ে ফ্রম মাই গার্ল।’
রাজের মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। আবরারের দিকে এগুতে চাইলে নুরা দুজনের মাঝামাঝি দাঁড়ালো। সামাল দিতে না পেরে নিজেই রাগ দেখিয়ে বলল, ‘কি শুরু করেছো তোমরা? উপরের সবাই টের পেলে কি হবে ভেবেছো? খবরদার কেউ কারোর দিকে আগাবে না। চুপচাপ যে যার রুমে যাও। এখুনি যাও বলছি।’
রাগান্বিত আবরার রাজের দিকে এক আঙ্গুল তুলে কড়া গলায় বলল, ‘সাবধানে থাকবি বলে দিলাম।’
কথাটা বলেই উপরে যেতে লাগলো আবরার। তার এমন কথা শুনে রাজ এগিয়ে যেতে নিলে নুরা রাজের বাহু ধরে আটকে ফেললো। রাজ রেগে দ্বিগুণ চেঁচিয়ে উঠল, ‘তোকে ভয় পাই নাকি আমি? দেখা কি করবি তুই।’
ভয়ার্ত নুরা দৃষ্টি ঘুরিয়ে উপরে তাকালো। কেউ টের পায় নি ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। তারপর রাজের বাহু ধরে জোর করে বাড়ির পিছনের লনের দিকে নিয়ে গেলো। লনের কাছে আসতেই রাজ নুরার হাত ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো। রাগের বশে পাশের একটা টবে লা:থি দিলো। তারপর রাগে কাটকাট ভাবে বলে উঠলো, ‘তোমার ভাই নিজেকে কি ভাবে? যখন খুশি যেভাবে খুশি এসেই থ্রে’ট দিবে? তোমার ভাইয়ের কপাল ভালো আমি এখনো কিছু করি নি। নাহলে এতোদিন হাসপাতালে থাকতে ভাইকে নিয়ে।’
নুরা রাজকে শান্ত করার জন্য বলল, ‘স্যার প্লিজ আস্তে কথা বলুন। কেউ শুনতে পাবে।’
‘তোমার ভাইয়ের কি কমনসেন্স বলতে নেই? দীবা দুতলার সিঁড়ি থেকে পরে যাচ্ছিলো। তখন আমি না ধরলে নিচে পরে গিয়ে সাংঘাতিক একটা ব্যাথা পেতো।’
কথাটা বলেই অশ্রাব্য ভাষায় একটা গালি দিলো রাজ। ভাইয়ের বিরুদ্ধে এমন একটা গালি শুনে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো নুরা। অন্য সময় হলে এই ছোট একটা গালি দেবার অপরাধে জেলের ভাত খাওয়াতো। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই নিশ্চুপ রইলো। রাজ নিজের রাগ সংযত রাখতে লনের মাঝে লম্বা একটা কাঠের ব্যঞ্চের মধ্যে বসলো। হাঁটুতে দুই হাতের কুনই’য়ের ভর দিয়ে ঝুকে এসে মেঝের দিকে তাকালো। পা দুটো নাচাতে লাগলো রাগ কমাতে। নিশ্চুপ নুরা। চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে রাজকে পর্যবেক্ষণ করছে।
” Some say it’s painful to wait for someone. Some say it’s painful to forget someone. But the worst pain comes when you don’t know whether to wait or forget. ”
দুটানার মাঝে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগলো রাজের। নিজেকে ছন্নছাড়া পথিকের মতো লাগছে। যার কোনো চেনা নিদিষ্ট গন্তব্য নেই। কোথায় যাবে সে? পরবর্তিতে কি করবে? কিভাবে দীবাকে ছাড়া নিজের বেখাপ্পা জীবনটাকে গুছাবে? যাকে এতো গুলো বছর ধরে পাগলের মতো ভালোবেসেছে আজ তাকে ছাড়া সে কিভাবে নিজেকে কল্পনা করবে? এখানে তার দোষটা কোথায়? ভাবতে পারলো না আর। মাথা ব্যাথায় চিনচিন করে উঠলো। চোখের শিরা গুলো লাল হয়ে এলো। দুই হাতে মাথার চুল গুলো খামচে ধরলো রাজ। কাঁপা কাঁপা কষ্টকর কণ্ঠে বললো, ‘আই মেডলি লাভ হার। ট্রাস্ট মি নুরা। এতো গুলো বছর শুধুমাত্র দীবার জন্য অপেক্ষা করেছি। দীবাকে আড়ালে ভালোবেসেছি। তাকে প্রোটেক্ট করেছি। আমার সাথেই কেন এমন হলো? আমাকে কেন ভালোবাসলো না দীবা? তোমার ভাই এর কারণ। আবরার চট্টগ্রাম না আসলেই দীবা আমার থাকতো। আই স্যোয়ার নুরা তোমার ভাইকে মে/রে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।’
‘এখানে আরব ভাইয়ার কোনো দোষ নেই। ভাই আর দীবা, দুইজনই নির্দোষ। ভুলটা সম্পূর্ণ আপনার ছিলো স্যার।’
নুরার শান্তশিষ্ট কণ্ঠস্বর শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো রাজ। চটপট মাথা তুলে অবাক চোখে নুরার দিকে তাকালো। নুরা একদম নির্বিকার। রাজকে এভাবে তাকাতে দেখে বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে শব্দ করে নিশ্বাস ফেললো। নিষ্প্রভ কন্ঠে স্বাভাবিক ভাবে শুধাল, ‘আপনি যে দীবাকে ভালোবাসেন তা জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল আপনার। আপনার ব্যক্তিত্ব, পারসোনালিটি, কথাবার্তা অসাধারণ। একটা মেয়েকে প্রেমে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি আগেই জানিয়ে দিতেন তাহলে দীবা আপনার প্রেমে পরতে বাধ্য হতো। কিন্তু আপনি তা করেন নি। এই কাজটাই আপনার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল স্যার।’
নুরার কথা গুলো কর্ণপাত হতেই রাজ যেন তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। হাজার টা শব্দগুচ্ছ তার গলায় দলা পাকিয়ে এলো। প্রত্যুত্তর করার মতো কোনো বাক্য পেলো না। নুরার কথা গুলো নিঃশব্দে শুনতে লাগলো।
‘দীবা এখনো জানে না আপনি তাকে ভালোবাসেন। তাহলে আপনিই বলুন দীবা কেন আপনাকে ভালোবাসবে যেখানে দীবা আজ অব্দি আপনার সঙ্গে পারসোনালি কোনো কথা-ই বলে নি।’
প্রতিক্রিয়াহীন রাজ। ছোট একটা ভুলের কারণে কি সে দীবাকে হারিয়ে ফেললো? নুরার কথানুযায়ী সত্যি কি দীবা তার প্রেমে পরতো? নিজের বোকামোটা ধরতে পেরে চোখ বন্ধ করে সামনের দিকে ঝুকে পূর্ণরায় চুল গুলো খামচে ধরলো রাজ। নুরা থামলো না। নিজের মতো বলতেই লাগলো,
‘আর এখানে আরব ভাইয়ারও কোনো দোষ আমি দেখছি না। চট্টগ্রাম আসার পর হুট করেই অচেনা একটা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেলো। দীবাকে এর আগে কখনো ভাই দেখেনি। মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে তাই ঢাকা ফিরে গেছে। তারপর যখন তিনমাস পর আবারো আসলো তখন দুজনের মধ্যে ভাব হলো। একে অপরকে ভালোবাসতে শুরু করলো।’
এইটুকু বলে থামলো নুরা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজের দিকে তাকালো। রাজকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে রাজের পাশে বসলো। কিছু বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতেই রাজ মৃদু গলায় শান্ত ভাবে বললো, ‘তোমার এইদিকটা আমার ভীষণ পছন্দের। একদম প্রশংসাযোগ্য নুরা। খুব সহজেই মনের কথাগুলো গুছিয়ে বলে দিতে পারো।’
আলতোভাবে একটা স্মিতি হাসি দিলো নুরা। মলিন মুখশ্রীর এই হাসিটা বড্ড মায়াবী আর অসহায় লাগলো। রাজের দৃষ্টি সামনের ছোট ছোট অর্কিড গুলোর দিকে।
‘কোনো মানুষই নিখুঁত হয় না। চলতি পথে কোনো না কোনো ভুল সে করেই। আমিও করলাম। প্রথমত দীবাকে ভালোবাসার মতো মারাত্মক একটা ভুল। দ্বিতীয়ত ভালোবেসেও তাকে জানাই নি। এই দুটো ভুলই আজ আমাকে একদম বিষিয়ে তুলেছে। গুছানো জীবনটা একদম ছন্নছাড়া লাগছে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আমার নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে নুরা। শান্তি পাবার মতো কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় গেলে একটু শান্তি পাবো বলতে পারবে?’
শেষের কথাটা নুরার দিকে তাকিয়ে আকুলিত হয়ে বললো রাজ। প্রশ্নের উত্তরের আশায় নুরার দিকে অধীর আগ্রহভরে তাকিয়ে রইলো। তার এই আশাতীত ব্যাকুল ব্যথিত চেহারার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো নুরা। ঠোঁট নাড়িয়ে জবাব দিলো, ‘বাস্তবতা মেনে নিতে শিখুন। তাহলে শান্তি আপনাআপনি আসবে।’
নুরার উত্তরটা সম্পূর্ণ ভাবে অগ্রাহ্য করে তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে উঠলো রাজ। হাসির শব্দ চারপাশ কাঁপালেও এই হাসিতে প্রাণোচ্ছলের ছোঁয়া পেলো না নুরা। অসহায় মুখে তাকালো রাজের দিকে।
হাসতে হাসতে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো রাজ। শব্দ করে একটা নিশ্বাস নিয়ে উষ্ঠধয় জিভ দিয়ে ভিজালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে করুণ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘বাস্তবতা মানুষকে বাঁচতে শিখায় ঠিকই, কিন্তু সেই বেঁচে থাকায় কখনো সুখ দিতে পারে না। আমি নাহয় দূর থেকে দীবার সুখটাকেই নিজের সুখ হিসেবে আঁকড়ে ধরে বাঁচবো।’
নুরা আশ্চর্যান্বিত বললো, ‘দূর থেকে মানে?’
‘দীবাকে যতো কাছ থেকে দেখবো ততোই কষ্ট পাবো। এখন তো দীবা আমাদের আত্মীয়। দেশে থাকলে কোনো না কোনো ভাবে দেখা নিশ্চয় হবে। তাকে হারানোর বেদনা আবারো জাগ্রত হবে। এই কষ্ট গুলো আমি সহ্য করতে পারবো না।’
শুকনো ঢোক গিললো রাজ। কথাগুলো বলতে পারছে না সে। বারবার দলা পাকিয়ে আসছে তার। তবুও বহু কষ্ট বুকে লুকিয়ে ভাব প্রকাশ করছে। নুরার দিকে ফিরে বসলো রাজ। ব্যথিত চোখেমুখে তাকিয়ে আবারো বলে উঠলো, ‘আমিও রক্তমাংস দিয়ে গড়া একটা মানুষ। কোনো রোবট না। আমারো কষ্ট হয় নুরা। ভীষণ কষ্ট হয়। আমার সবচেয়ে দুর্বলতম একটা মানুষ দীবা। তাকে দেখে আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারি না। দীবাকে হারানোর পর থেকে নিজেকে পাগল পাগল লাগে। দীবার সামনে থেকে নিজেকে কখনো স্বাভাবিক রাখতে পারবো না আমি। দেশে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।’
বুকটা ধক করে উঠলো নুরার। অতিরিক্ত মানসিক যন্ত্রনায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভিতর টা ক্রমশ ভার হয়ে আসছে। দীবাকে ভুলে থাকার জন্য রাজ দেশ ছাড়বে? তাহলে কি রাজকে সে আর দেখতে পারবে না? ভাবতেই ধারালো চাকুর আঘাত বুকে লাগলো। অতিরিক্ত উত্তেজনায় হৃদযন্ত্রটা ঢিপঢিপ করতে লাগলো।
লম্বা একটা দম নিলো রাজ। নিজেকে বহু কষ্টে স্বাভাবিক রেখে আবারো বললো, ‘আমার পড়াশোনা এখনো শেষ হয়নি। আব্বু ইউএস যেতে বলেছিলো। কিন্তু আমি তখন যাই নি দীবার জন্য। এখন ভাবছি ওখানে গিয়ে পিএইসডি করবো।’
‘তারপর কি দেশে ফিরবেন?’
‘দেশে ফিরে আসার চিন্তা কখনো করবো না। ওখানেই সিটিজেনশিপ নিয়ে থেকে যাবো।’
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো রাজ। নুরা বিহ্বল হয়ে জানতে চাইলো, ‘যা বলছেন ভেবে বলছেন তো?’
চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই থেমে গেলো রাজ। পিছু ফিরে নুরার দিকে তাকালো। নির্বাক কন্ঠের উত্তর, ‘ভেবেই বলছি।’
উঠে দাঁড়ালো নুরা। রাজের চোখে চোখ রেখে বিনা সংকোচে বললো, ‘আর যারা আপনাকে ভালোবাসে? তাদের জন্য কি বলবেন?’
‘আব্বু আগেই আমাকে যেতে বলেছিল। এখন আমি যেতে চাইলে কেউ না করবে না। তাদের ছাড়া আমাকে আর কেউ ভালোবাসে না যে তার কথা আমাকে ভাবতে হবে।’
‘হয়তো.. হয়তো এমন কেউ আছে যে আপনার মতোই আপনাকে লুকিয়ে ভালোবাসে। আপনি চলে যাওয়াতে যার ভীষণ কষ্ট হবে।’
‘এমন কেউ নেই।’
‘যদি থেকে থাকে তাহলে কি তাকে ফিরিয়ে দিবেন?’
মনে মনে রাজ বিস্মিত হলেও বাহ্যিক ভাবে প্রকাশ করলো না। নুরার প্রশ্নটা তার অদ্ভুত লাগলো। কেউ একজন তাকে লুকিয়ে ভালোবাসে? এটা কি আদৌতে সম্ভব? প্রত্যুত্তর করলো না রাজ। নুরার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে চুপচাপ চলে গেলো।
নুরা একদম নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়। চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি ঝরতে লাগলো। ঠোঁট ভেঙ্গে আসলো তার। নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তি পেলো না। হাঁটু ভেঙ্গে নিচে বসে পরলো। তখুনি আকাশ কাঁপিয়ে বিদ্যুৎ চমকালো। বড় বড় বৃষ্টির ফোটা ধরনীর বুকে হামলে পরলো। নুরাকে সঙ্গ দিলো শ্রাবণের বর্ষণ। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অপরাধে নিঃশব্দে কান্না করার কারণে আকাশের বুকে জমে থাকা কালো অভিমানি মেঘ গুলো নিজেদের বিলিয়ে দিলো। টুপটাপ বৃষ্টির ফোটা হয়ে ঝড়ে নুরাকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো। শব্দহীন বর্ষণের ফোটা গুলো বলতে লাগলো,
‘এ প্রেম থেমে যায়, রেখে যায় যা কিছু
আমরা ছুটছি অনন্তকাল তার পিছু,
চোখের কার্নিশ হয়ে যায় স্রোতস্বিনী নদী
ছেড়ে যাওয়া মানুষেরা তা জানতো যদি।
কতকাল বৃষ্টি হয়ে মেঘ ঝড়ে পরে
তাদেরও থেমে যেতে হয় দিন শেষে
পৃথিবীর কোনো আঁধার বেয়ে
নক্ষত্র ধরা দেবে তোমায় কাছে এসে।
চলমান..#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-৪৫]
সারারাত নির্ঘুমে কাটিয়ে সকালে গভীর ঘুমে বিভোর হলো নুরা। চোখে তার হাজারটা রাজ্যের ঘুম এনে হানা দিলো। কোনো ভাবেই চোখ খুলতে পারছে না। তবুও রিমির ডাকাডাকিতে কোনো রকমে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো নুরা। মাথাটা ব্যাথায় ঝিমঝিম করছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।
‘তোর চোখমুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? এই নুরা উঠ না। কি হয়েছে তোর?’
রিমির এই কথা গুলো তার আদিখ্যেতা লাগলো। তাই কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ঘুম ভাঙ্গিয়ে এই প্রশ্ন গুলো করতে হবে তোর?’
‘এই জন্য ঘুম ভাঙ্গাই নি তো। একটু পরেই আগ্রাবাদ ফিরছি সবাই। তাই তোকে ডাকতে এলাম। কিন্তু তোর চেহারা কেমন জানি দেখাচ্ছে। তুই কি রাতে কেঁদেছিস? কি হয়েছে তোর? আমাদের থেকে কি লুকাচ্ছিস সত্যি করে বল নুরা।’
সোজা হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করলো নুরা। বা হাত দিয়ে কপাল ঘেঁষে শুয়া থেকে উঠে বসলো। রিমির কথার কোনো প্রকার উত্তর না দিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে চুপচাপ ব্যাগ থেকে কালো কুর্তি বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। হতভম্ব হয়ে গেলো রিমি। কি হয়েছে নুরার? অন্যান্য দিনের তুলনায় বড্ড উদাসীন লাগছে তাকে। চোখমুখ লাল কেন তার? কেঁদেছে নুরা? কিন্তু কেন? মাথায় হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে রিমির। ঠোঁট কামড়ে বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো। অনেকটা সময় অপেক্ষার পরে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো নুরা। রিমিকে তার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্মিতি হেসে উঠলো সে। রিমির দিকে ভেজা টাওয়াল ছুড়ে দিয়ে বলে উঠলো, ‘আরে কিছু হয়নি আমার। রাতে মাথা ব্যাথা করেছিলো তাই একটু কেঁদেছি।’
অন্য সময় হলে টাওয়াল ছুড়ে মা’রায় রাগ দেখাতো রিমি। কিন্তু আজ দেখালো না। টাওয়াল টা তুলে চেয়ারে ছড়িয়ে দিতে দিতে বলল, ‘সত্যি বলছিস তো?’
নুরা ড্রেসিংটেবিলের কাছে গিয়ে ক্রিম হাতে নিয়ে জবাব দিলো, ‘একদম।’
মন বিশ্বাস করতে না চাইলেও বাধ্য হয়ে বিশ্বাস করলো রিমি। সন্দেহপ্রবন চোখে নুরার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। কিছু তো হয়েছে নুরার। দুই দিন যাবত নুরাকে উদাসীন লাগছে। মনে হচ্ছে নুরার প্রাণোচ্ছল হাসি, চঞ্চল স্বভাব হারিয়ে গেছে। কারণ টা জানতে হবে। কিন্তু কিভাবে?
রিমির ভাবনার মাঝেই সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয়ে গেলো নুরা। চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে দিলো যেন চোখের নিচের কালি বুঝা না যায়। ঠোঁটে দিলো ডার্ক মেরুন ম্যাট কালার লিপস্টিক। চুল গুলো উন্মুক্ত, কোমড় ছুঁই ছুঁই। আয়নায় নিজেকে ভালো ভাবে একবার প্রখর করলো নুরা। লম্বা, সৌন্দর্য কোনো দিক দিয়ে তার কমতি নেই। তাহলে কেন রাজের ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা তার মাঝে নেই? রাজ কেন তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলো না? দীর্ঘশ্বাস ফেললো নুরা। ভালোবাসা কখনো সৌন্দর্যের কারণে হয় না। ভালোবাসা হয় ব্যক্তিত্বের কারণে। আর নুরা রাজের সৌন্দর্যে নয়, তার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পরেছে। মানুষটার চোখের মায়ায় পরেছে।
রুমের দরজা খোলার শব্দে দুইজন নিজেদের চিন্তার রাজ্য থেকে বেড়িয়ে আসলো। দরজার দিকে ফিরে তাকাতেই দীবাকে হেলেদুলে ভিতরে আসতে দেখলো। নুরা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে দীবার সৌন্দর্যের তারিফ করলো, ‘তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। মাশাআল্লাহ!’
দীবা লাজুক লাজুক ভাব নিয়ে বলল, ‘থ্যাংকইউ!’
‘এই ওয়েট ওয়েট! তুই আমার টপস পড়েছিস কেন?’
চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে চেঁচিয়ে উঠলো রিমি। ঠোঁট বাঁকিয়ে ভেংচি কাটলো দীবা। ভাব নিয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো, ‘কারোর নাম লিখা ছিলো না।’
নুরা ঠোঁটে ঠোঁট টিপে মুচকি হাসলো। মনে মনে ভাবলো এই সাধারন একটা টপসের কারণে সাংঘাতিক একটা ঝগড়া বাধবে।সেদিন কানের দুল পরায় তাকে চু’ন্নি বলে সম্মোধন করেছিলো দীবা। আজ তাকেও চোর বলার সময় এসেছে। সুযোগ তো আর কেউ ছাড়ে না। নুরাও তাই। সুযোগ পেয়ে ইচ্ছে মতো দীবাকে পঁচানি দিলো, ‘ছিঃ দীবা। তোর জামাইয়ের কি এতোই টাকার অভাব? চুরি না করে আমাকে বলতি। তোকে বস্তা ভরে টপস দিতাম। তবুও কেন চুরি করতে গেলি? জামাইয়ের মানসম্মান সব খেয়ে ফেলছিস দেখছি।’
জামাইয়ের কথা তুলায় শরিরে রাগ রিনরিনিয়ে উঠলো দীবার। চোখমুখ শক্ত করে রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘খবরদার জামাই নিয়ে কথা বলবি না।’
দীবার কথা শুনে ক্যাটক্যাটে শব্দ তুলে হেসে উঠলো নুরা ও রিমি। দীবাকে রাগাতে আর পচানি দিতে এক সঙ্গে বলল, ‘আহাঃ কি টান।’ বলেই আবারো উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
তাদের দুইজনের হাসিটা দীবার কাছে বিদঘুটে লাগলো। রাগে দাঁতে দাঁত খিঁচে বিছানা থেকে বালিশ তুলে দুজনের দিকে ছুড়ে মারলো। তখুনি রুমে আসলো সাবিত আর আবরার। তিনজনকে আবারো ঝগড়া করতে দেখে হতাশ হলো তারা। সাবিত দীবাকে থামাতে দীবার এক হাতের কব্জি ধরে বলে উঠলো , ‘তোরা কি একটু শান্তিতে থাকতে পারিস না? সারাদিন ঝগড়া আর ঝগড়া। তোদের শ্বশুর বাড়ি পাঠালে নির্ঘাত আমাদের সম্মানের কালা ভুনা হয়ে যাবে।’
‘আশ্চর্য ভাই এভাবে বলছো কেন? আমি কিছু করি নি। রিমি আর দীবাই ঝগড়া লেগেছে।’ নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে নুরা বলে উঠলো।
আবরার পকেটে মোবাইল রাখতে রাখতে ঝগড়া লাগার কারণ জানতে চাইলেই রিমি গরগর করে দীবার নামে নালিশ করে বসলো, ‘তোমার ফকিন্নি বউ আমার টপস পরেছে কেন? বউ কে টাকা দিতে পারো না? মাইনষের জিনিস পরে ঘুরে শুধু।’
চোখ-ঠোঁট উলটে রিমির কথার ব্যঙ্গ্য করলো দীবা। হাতের ঘড়িটার দিকে ইশারা করে বললো, ‘তুই এখন কার ঘড়ি পড়ে আছিস? আমর টা। আমি কিছু বলেছি তোকে? বলি নাই। তুই পরেছিস তাই আমিও পরেছি। হিসাব সমান সমান।’
হতাশ হয়ে কপাল চাপড়ালো সাবিত। তিনজন একে অপরের সাথে জিনিসপত্র শেয়ার করবে আর ঝগড়া করবে। তিনজনের এই অসাধারণ বন্ডিং টা সুন্দর। ভাবতেই নিজেই আনমনে হেসে ফেললো সাবিত।
অপরদিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় আবরার। তাদের এই অবস্থা দেখে বিস্ময়ের শেষ নেই তার মাঝে। যেখানে আবরারের ব্যবহারিক জিনিসপত্র অন্য কেউ ধরলে সে একদম পছন্দ করে না। সেখানে কিনা এই তিন মেয়ে কানের ঝুমকা থেকে শুরু করে জামাকাপড় পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করে? ব্যাপারটা উইয়ার্ড লাগলো তার কাছে। তিনজনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলে উঠলো, ‘তোরা একজন আরেকজনের সঙ্গে সব কিছুই শেয়ার করিস?’
রিমি সামনের চুল গুলো পিছনে ঠেলে মিষ্টি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, ‘শ্বশুর বাড়ি বাদে সবই শেয়ার করতে পারি। বেরুবে কখন? আমরা রেডি। আসো।’
রিমি কথাটা বলেই দীবার হাত ধরে ফুরফুরে মেজাজে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। এবার আরো বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলো আবরার। এই মাত্র না ঝগড়া লেগেছে? এখন আবার হাত ধরে হেলেদুলে বাহিরে যাচ্ছে? তাকে এভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে নুরা হাসলো। ঠোঁটে হাসি রেখেই আবরারের কাছে এসে আবরারের বাহু জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো, ‘ওরা এমনই। আসো দেরি হয়ে যাবে।’
আবরারের বাহু ধরে বাড়ির নিচে হাসিখুশি মুখে নামলেও নিচে আসার পর নুরার সেই হাস্যউজ্জ্বল মুখটা একদম ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করলো। অতিরিক্ত উত্তেজনায় কলিজা তার ধুকধুক শব্দ তুলতে লাগলো। হার্টবিট ফাস্ট! নিশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। না চাইতেও বারবার রাজের মলিন চেহারার দিকে চোখের দৃষ্টি পরছে। তবে কি সত্যিই রাজ চলে যাবে?
ফটিকছড়িতে এসেছিলো একটা মাইক্রো কার দিয়ে। কিন্তু আগ্রাবাদ ফেরার প্ল্যান করলো অন্য রকম ভাবে। বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি আনা হলো মোট চারটা। এটা অবশ্য প্ল্যান না। আবরার এক সাথে না গিয়ে দীবাকে নিয়ে পারসোনালি একা যাবার কথা বলেছে। তাই বাকিরাও নিজেদের গাড়ি দিয়ে যাবার চিন্তা করেছে।
সবাই একত্রে নিচে নামতেই প্রথমে আবরার দীবার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সু-সু শব্দ তুলে গাড়ি মুহূর্তেই সুবিশাল রাজবাড়ি পেড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। তারপর সাবিতের থেকে বিদায় নিয়ে রাজিব ও রাজ দুইজন গাড়িতে উঠলো। রাজ বসলো ড্রাইভিং সিটে। রাজিবকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সে যাবে ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে নুরা। ব্যথিত চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। মন বলছে শুধু একটা বার, শুধুমাত্র একটা বার রাজ যেন তার দিকে তাকায়। তার মনের কথা গুলো, চোখের দৃষ্টি যেন রাজ বুঝতে পারে। অন্তর কাঁপছে নুরার। তবুও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।
গাড়ি স্টার্ট দিলো রাজ। দুই হাতে স্টোরিয়ারিং ধরে লম্বা একটা দম নিলো। কি মনে হতেই চোখ ঘুরিয়ে বাহিরে তাকালো। গাড়ির জানালার বরাবর নুরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু একটা হাসি দিলো। হাত উঠিয়ে বাই জানালো নুরাকে। প্রত্যুত্তরে নুরাও স্মিতি হেসে হাত নাড়িয়ে বাই জানালো। অতঃপর বিলম্ব না করে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। রাজের গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই মলিন হলো নুরার মুখশ্রী। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
অভ্র আগ্রাবাদ আসার পর থেকেই বেশিরভাগ সময় আরিয়ানের সঙ্গে কাটায়। সময়ের সময়সীমাঅনুযায়ী দুইজন প্রায় সমবয়সীর পর্যায়ে পরে। তাই দুজনের বন্ডিং টাও বেশ জমানো। তাই দুইজন এক সঙ্গে বাড়ি ফিরবে। সাবিতের সঙ্গে যাবে রাইমা। নুরাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাইমা নুরার হাত ধরে গাড়ির কাছে এনে বললো, ‘মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার সাথে আয় তুই।’
নুরা কিছু বললো না। বাধ্য মেয়ের মতো রাইমার পাশে বসলো। সাবিতও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। অভ্র আর আরিয়ানের মধ্যে কে গাড়ি চালাবে তা নিয়ে কিছুটা বাধলো। সমাধানে আসার জন্য রক, পেপার ও সিজার খেললো। প্রথম তিনবার ধরার পর অভ্র হারলো। আরিয়ান ফুরফুরে মেজাজে ড্রাইভিং সিটে বসলো। অভ্র রিমিকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাক দিল। অভ্রের ডাকে হকচকিয়ে গেলো রিমি। নুরাকে নিয়ে শত চিন্তার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো সে। রিমিকে অন্যমনস্ক হতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো অভ্র। কারণ জানতে চাইলো, ‘তোমাকে অন্যরকম লাগছে আজ। কি হয়েছে রিমি?’
প্রত্যুত্তর করলো না রিমি। শুধুমাত্র মাথা নাড়িয়ে ”কিছু না” বুঝিয়ে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। হতবাক অভ্র। রিমিকে এর আগে কখনো এতো নিশ্চুপ দেখেনি সে। আজ হুট করে কি এমন হলো যে রিমি এতো চুপচাপ? চিন্তিত হলেও প্রকাশ করলো না। চুপচাপ আরিয়ানের পাশের সিটে বসলো। সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে লুকিং মিররে রিমির অন্যমনস্ক মুখখানির দিকে আবারো তাকালো অভ্র। রিমির এই অন্যমনস্কের কারণ না জানা অব্ধি তার মনেও শান্তি নেই। বাড়ি ফিরে জানা যাবে ভেবে শান্ত্বনা দিল নিজেকে।
_____________________
শান্তিনিবাস এতোদিন প্রাণ হারা ছিলো। নিরব নিস্তর বাড়িটিকে আবারো প্রাণোচ্ছল করতে ফিরে এলো তারা। ছেলেমেয়েদের ফিরে আসায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো নিশিতা আয়েশা ও রোহানা। এই কয়েকটা দিনই তাদের জন্য মাসের সমান লেগেছে। কোনো রকমে নিজেদের কলিজাদের ছেড়ে থেকেছে। আজ ফিরে আসছে সবাই। তাই খুশি কারোর মাঝে কমতি নেই। সকালেই ঘুম থেকে উঠে নিজেদের হাতে রান্না করলো নানান রকমের সুস্বাদু সব খাবার। সকালের মধ্যেই রান্নাবান্না শেষ করে ঘড়ি দেখছিলো সবাই ফিরবে কখন। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষে দুপুরের আগেই ফিরলো সবাই। আবারো হাস্যউজ্জ্বল হলো শান্তিনিবাস। নিরব নিস্তর পরিবেশ ভেঙ্গে এখন কোলাহলপূর্ণ হলো বাড়ি। সবাইকে আদরের সঙ্গে ড্রয়িংরুমে আনলো তারা।
ড্রয়িংরুমে সকলের উপস্থিত থাকলেও দীবার অনুপস্থিতি ঠিকই টের পেলো রোহানা। এতোদিন বাদে মেয়েকে দেখার জন্য মনটা তার ছটফট করছে। সবার সাথে দীবাকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে সাবিতকে প্রশ্ন করে উঠলো, ‘দীবা কোথায় বাবা? তোমরা সবাই এখানে দীবা কোথায়?’
সাবিত রোহানাকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো, ‘চিন্তা করবেন না। আবরারের সঙ্গে দীবা আছে। চলে আসবে একটু পর।’
কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলো রোহানা। তবুও মেয়ের চিন্তা থেকে বেরুতে পারলো না। যতোক্ষণ না মেয়েকে দুচোখের সামনে দেখবে ততোক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে শান্ত করতে পারবে না।
রাইমা গলা ঝেড়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। সবাই তার দিকে তাকাতেই বললো, ‘মহা খুশির খবর নিয়ে এসেছি তোমাদের জন্য।’
আয়েশা বললো, ‘ভণিতা না করে বলে ফেল কি?’
রাইমা মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘দীবা আর আরব ভাইয়ের সম্পর্ক একদম স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’
কথাটা শুনে খুশি হলো নিশিতা। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বললো, ‘অবশেষে সব ঠিক হলো। অনেক টেনশনে ছিলাম তাদের জন্য।’
সবার এই আনন্দময় মুহূর্তের প্রতি মোটেও আগ্রহ পেলো না নুরা। চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। সিলিংয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালো। নিষ্প্রভ তার চোখের এই দৃষ্টি। গাড়িত রাজের মৃদু হাসি দেওয়ার চেহারাটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা তপ্ত জল পরলো। ধীরে ধীরে চোখ দুটো বন্ধ করলো। ক্লান্তিকর চোখ দুটো একটু স্বস্তি পেতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।
____________________
বাড়ির ভিতরে ঢুকে গাড়ি থামালো আবরার। গাড়ি থামাতেই দীবা চটজলদি গাড়ি থেকে নেমে গেলো। পিছনের সিট থেকে নিজের ব্যাগটা নিয়ে কাধে দিলো। আবরার গাড়ি থেকে নেমে দীবার উদ্দেশ্যে বললো, ‘কোন রুমে যাবে এখন?’
ভ্রুঁ কুঁচকে চোখ দুটো ত্যাড়া করে পিছু ফিরে আবরারের দিকে তাকালো দীবা। প্রশ্ন করার মতো আর কিছু পেলো না? কোন রুমে যাবো এটা আবার কেমন প্রশ্ন? মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না, ‘আমার রুমেই। কেন?’
‘এখন থেকে আমার রুমে থাকবে। আমি কমলা দাদীকে বলে দিবো। উনি তোমার জিনিসপত্র আমার রুমে শিফট করে দিবে।’
‘দরকার নেই। আমি আমার রুমেই থাকবো।’
আবরার সব কিছু সহ্য করতে পারে। কিন্তু তার কথার বিরুদ্ধে “না” শব্দটা সে মোটেও সহ্য করতে পারে না। দীবা মুখের উপরে না করায় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাগ ভিতরে ভিতরে সংযত রেখে কাটকাট গলায় বললো, ‘আমি বলেছি মানে এখন থেকে আমার রুমেই থাকবে।’
দীবার এক রোখা প্রত্যুত্তর, ‘আমি থাকবো না মানে না।’
আবারো দীবার থেকে সরাসরি না শব্দটা শুনে ধমকে উঠলো আবরার, ‘দীবা?’
ইষৎ কেঁপে উঠলো দীবা। বিস্মিত চোখে আবরারের দিকে তাকালো। আবরার তাকে ধমক দিয়েছে ভেবে খারাপ লাগলো ভীষণ। চোখে পানির বিন্দু বিন্দু কণা জমে চিকচিক করতে লাগলো। নাক টেনে কাদু কাদু গলায় বললো, ‘আপনি অনেক খারাপ। মাথায় যা আসে তাই বলে ফেলেন। আমাদের সম্পর্কের কথা এখনো কেউ জানে না। হুট করে কিভাবে আমি রুম চেঞ্জ করে ফেলবো? অন্যরা কি ভাববে ভেবেছেন? এইসব কিছুই ভাবেন না আপনি। হুটহাট ডিসিশন নেওয়ার অভ্যাস আপনার।’
ফুঁশ করে লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করলো আবরার। জিভ দিয়ে উষ্ঠধয় ভিজিয়ে দীবার কাছে আসলো। আলতো হাতে দীবার দুই গাল ধরে বললো, ‘হোপ বোকা মেয়ে। এখানে কান্না করার কি আছে? তুমি আমার বউ। এটা পরিবারের সবাই জানে। তাহলে কে কি ভাববে?’
নাক টানলো দীবা। ঠোঁট উল্টে ইনোসেন্ট চেহারায় বললো, ‘সবাই জানে না।’
মৃদু শব্দে হাসলো আবরার। দীবার কপালে গভীর একটা চুমু দিয়ে বললো, ‘সবাই জানবে তুমি আবরার জুহায়ের’এর বউ। সবাই জানবে।’
বউ শব্দটা শুনে লজ্জা পেলো দীবা। উন্মুক্ত বাগানে দীবার কপালে চুমু খাওয়ায় লজ্জায় গাল লাল হয়ে এলো। তাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো আবরার। দীবার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে নেশালো গলায় বললো, ‘লজ্জা পেলে তোমাকে মারাত্মক লাগে দীবা। ইশ!’
আবরারের বাহুতে দুই হাতে ধা’ক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। চোখ পাকিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘অসভ্য লোক। সুযোগ পেলেই আজেবাজে কথা বলা শুরু করে। এতো নির্লজ্জ একটা মানুষ আমার কপালে পরলো। ধ্যাৎ!’
বলেই গটগট পায়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো দীবা। পিছন থেকে উচ্চস্বরে আবরারের হাসির শব্দ কানে আসলো শুধু।’
চলমান….