আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব -৫৬

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৫৬]

‘অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে। তোমার প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তই আমার উপর জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিলে। মানসিক ভাবে আতঙ্কে ছিলাম সবসময়।’

আবরারের প্রত্যুত্তর শুনে চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করলো রোশান। ক্ষুব্ধ হয়ে কণ্ঠস্বর উঁচু করে বললো, ‘সব তোমার ভালোর জন্যই নিয়েছি।’

নিচের ঠোঁট কামড়ে তুচ্ছরূপে হাসলো আবরার। রোশানের চোখের দিকে তাকিয়ে জড়তাহীন গলায় প্রথমের মতোই বলতে লাগলো, ‘অমত থাকার পরেও অপছন্দের জিনিসটা আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক কতোটুকু ভালো ছিলো আমার জন্য? তোমার জন্য নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী কিছুই করতে পারিনি। কোথায় যাবো, কি খাবো, কাদের সাথে মিশবো, এমন কি কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করবো সবই তোমার ডিসিশন অনুযায়ী করতে হয়েছে।’

রোশান বাকহারা হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রত্যুত্তর করার মতো কোনো শব্দই পেলো না কেউ। তবুও আবরার থামলো না। অতি কষ্টে জর্জরিত হয়ে আবারো বলে উঠলো, ‘শুধু আমাকেই না। সাবিতের সঙ্গেও এমন করেছো তুমি। এই যে তোমরা যাকে ব্যবসায় এতো ভালো বলে বাহবা দিচ্ছো। একবারো জানতে চাইছো সেই ছেলেটা আসলে বিজনেস করতে চায় কিনা?’

সাবিতের কথা তুলায় চমকে উঠলো সে। আবরারকে থামাতে তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো, ‘ভাই প্লিজ থামো। আর কথা বলতে হবে না। রুমে যাও।’

আবরার থামলো না। সাবিতের কথা তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করেই বলতে লাগলো, ‘সাবিত ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলতে বেশি পছন্দ করতো। সে একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলো। কিন্তু তোমার কারণে ভয়ে সে বিজনেস নিয়ে স্টাডি করেছে। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার ব্যবসার হাল ধরেছে। এর পরেও বলবে তুমি আমাদের জন্য যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে সব ভালোর জন্য নিয়েছিলে?’

রোশান নিশ্চুপ। চোখ তুলে পাশে দাঁড়ানো সাবিতের দিকে তাকালো। নিষ্প্রভ তার চোখের দৃষ্টি। এতোদিন তাহলে সে তাদের দুজনের উপর নিজের জোর খাটিয়েছে? তাদের ভালো চাইতে গিয়ে তাদের ইচ্ছে মাটি দিয়েছে? আদৌ কি ভালো বাবা হতে পেরেছে? এইসব ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা তৈরি হলো। নিজেকে অপরাধী মনে হতেই সাবিতের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

আবরার দু-কদম এগিয়ে রোশানের বরাবর দাঁড়ালো। চোখে চোখ রেখে নির্ভয়ে ক্ষুব্ধ গলায় বললো, ‘তোমার এই কঠোরতা তোমার থেকে দূরে যেতে বাধ্য করেছে আমায়। যেইদিন তুমি আমাকে থা’প্প’ড় মে’রে’ছিলে? সেইদিনই তোমার প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধা সব চলে গেছে। আব্বু বলে ডাকার ইচ্ছেটাও হারিয়ে গেছে। তাই নিজেকে নিজের মতো গুটিয়ে নিয়েছিলাম।’

রোশান প্রথমের মতোই বাকহারা। প্রত্যুত্তর করার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেলো না। ভুলটা তাহলে তারই ছিলো? ভাবতেই অনুশোচনা কাজ করলো মনে। শরির দুর্বল লাগছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও বোধহয় হারিয়ে ফেলেছে।

‘আমি চাইনি কেউ আমাকে কন্ট্রোল করুক। আমি সবসময় নিজের ইচ্ছেতেই থাকতে চেয়েছি। কিন্তু সেখানে একমাত্র বাধা ছিলে তুমি! যা আমাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে।’

থামলো আবরার। চোখ লাল হয়ে এসেছে তার। পুরনো সব কথা মনে পরতেই চোখে পানি জমে এসেছে। আবারো কষ্টে জর্জরিত হয়ে বলতে লাগলো, ‘গান গাইতে পছন্দ করতাম। কিন্তু তোমার পছন্দ ছিলো না। তাই গিটার নিয়ে গিয়েছিলে তুমি। মিউজিক ক্লাস করতে দাও নি আমাকে। অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলাম তোমার উপর। এক পর্যায়ে বাধ্য হলাম বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে।’

সোফার সামনে টি-টেবিলের উপর থেকে গাড়ির চাবি আর মোবাইল হাতে নিয়ে পকেটে ঢুকালো। তাচ্ছিল্য একটা হাসি দিতে বললো, ‘বাড়ি ছেড়ে আমি কোনো ভুল করিনি। দেখো আজ আমি আমার ড্রিম নিয়ে সাকসেসফুল এন্ড অনেক হ্যাপি।’

কথাটা বলে এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না আবরার। পায়ের গতি বাড়িয়ে দ্রুত বাড়ির বাহিরে চলে গেলো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো রোশান। নিষ্প্রাণতার সঙ্গে ধীরে ধীরে সিঁড়ির দিকে যেতে লাগলো। তখুনি পিছন থেকে সাবিতে ডেকে উঠলো। রোশানের কাছে এসে নিচু কণ্ঠস্বরে বললো, ‘বড় আব্বু?’

রোশান দাঁড়ালো। মলিন চোখে সাবিতের দিকে তাকালো। আব্বু ডাকটা শুনে বুকটা মুচড়ে উঠলো তার। নিজের ছেলের কাছ থেকে আব্বু ডাক শুনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে নিজের দোষে! কেমন হতভাগা বাবা সে। রোশানকে চুপ থাকতে দেখে সাবিত প্রাণবন্ত হাসি দিয়ে বললো, ‘আবরারের মাথা অলটাইম খারাপ থাকে। রেগে গেলে কখন কি বলে নিজেও জানে। তার কথা পাত্তা দিও না। সে নিজেও তো বেয়াদব হয়েছে সঙ্গে আমাকে বেয়াদব বানাতে চেয়েছে। এইসব ভুলে..’

সাবিতের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই রোশান কণ্ঠস্বর নরম করে বলে উঠলো, ‘তোমাদের দুজনকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। বুঝতে পারিনি তোমাদের উপর এতো চাপ পরবে। পারলে মাফ করে দিও।’

রোশান চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। কেউ পিছু ডাকলো না। নিরবে সকলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
____________________

সকাল থেকে বিষণ্ণতায় কাটলো দীবার দিন। সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ আগে। বারান্দায় বসে অর্ধগোলকাকৃতি চাঁদটা অবলোকন করছে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে বোধহয়। খুব লাগছে আবরারের কথায়। তবুও কান্না পাচ্ছে না কেন? দীর্ঘশ্বাস ফেলল দীবা। নুরা গতকাল রাত থেকে এখন অব্দি কিছুই খায় নি। এভাবে না খেয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে যাবে। বারান্দা থেকে উঠে রুমে আসলো। স্টাডি টেবিল থেকে খুঁজে কলেজ থেকে দেওয়া ডাইরিটা বের করলো। কয়েক পৃষ্টা ঘেটে কলেজের শিক্ষকদের দেওয়া নাম্বার গুলো খুঁজে বের করলো। বইটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে কাঙ্ক্ষিত নাম্বার পাওয়ার সাথে সাথেই মোবাইলে তুলে কল দিলো দীবা। বিলম্ব করলো না একদম।
.

এক কাপ রং চা হাতে নিয়ে চায়ের দোকানের সামনে বসে আছে রাজ। পরিবেশ টা নিরিবিলি। দোকানদার ব্যতিত আর কারোর অস্তিত্ব নেই এখানে। টিনের দোকানের বাহিরে হলুদ বাল্ব লাগানো। তার আলোতে দোকানের সামনের অংশ হলুদ রঙ ধারণ করে আছে। চায়ের কাপের ধোয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজ। তাকে দেখা বুঝা যাচ্ছে সে গভীর মনোযোগ সহকারে ভাবছে কিছু। কিন্তু এই ভাবনার ব্যাঘাত ঘটালো মোবাইলের বিরক্তিকর রিংটোন। চায়ের কাপটা পাশে রেখে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। অপরিচিত নাম্বার দেখে রিসিভ করে স্বাভাবিক ভাবে বললো, ‘হ্যালো কে?’

রিসিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দীবার অস্থির কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো, ‘আসসালামু আলাইকুম স্যার। আমি দীবা। চিনতে পেরেছেন?’

আপনাআপনি ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে এলো রাজের। অবাক হলেও প্রতিক্রিয়া না করে সালামের জবাব দিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘আমার নাম্বার পেলে কোথায়?’

রাজের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপ। তাই অস্বস্তি লাগছে দীবার। কিছুটা বিব্রত হয়ে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো, ‘ওই কলেজের ডাইরিতে দেওয়া ছিলো। আসলে একটা দরকারি কথা বলতেই কল দিয়েছিলাম। আপনি কি ব্যস্ত?’

শব্দ করে একটা নিশ্বাস ফেললো রাজ। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ছোট করে একটা চুমুক দিয়ে বললো, ‘না বলো কি বলবে।’

দীবা জড়তা কাটিয়ে বলে উঠলো, ‘নুরার সাথে কথা হয়েছে আপনার?’

‘না!’

‘না’ উত্তর টা বোধহয় দীবা একদম আশা করে নি। রাজের থেকে এমন উত্তর পেয়ে একটু বেশিই বিস্মিত হলো দীবা। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে উঠলো, ‘সিরিয়াসলি? কালকে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটলো অথচ আপনাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয় নি?’

‘কেন কিছু হয়েছে? নুরা ঠিক আছে তো?’

শব্দ করে হতাশার নিশ্বাস ফেললো দীবা। বললো, ‘গতকাল বিকেল থেকেই নুরা রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। এখন পর্যন্ত কিছু খায় নি। এভাবে না খেয়ে কান্নাকাটি করলে শরির খারাপ হয়ে যাবে। স্যার প্লিজ আপনি একটু কষ্ট করে নুরাকে বলুন খেয়ে নিতে। প্লিজ স্যার?’

‘এইজন্যই কল দিয়েছো?’

‘হ্যাঁ। নুরা একদম দরজা খুলছে না। কিছু খাচ্ছেও না। প্লিজ স্যার নুরা আপনার কথা শুনবে। আপনি একটু কথা বলুন তার সাথে।’

‘ঠিক আছে। কথা বলছি আমি।’

বলেই লাইন কেটে দিলো রাজ। দীবা বিছানার হেড সাইডে হেলান দিয়ে বালিশ জড়িয়ে ধরলো। রাজকে যেহেতু জানিয়ে দিয়েছে। সেহেতু বাকিটা রাজই সামলে নিবে। এবার একটু শান্ত হলো দীবা। এতোক্ষণ কান্নাকাটি করার কারণে মাথাটা ঝিমঝিম করছে। একটু ঘুমালে বোধহয় মাথা হালকা হবে। লাইট বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো দীবা।
___________________

মোবাইল কানে ধরে চুপচাপ বসে আছে নুরা। কিছুক্ষণ পরপর নাক টানছে আর চোখের পানি মুছছে। মোবাইলের অপর পাশে থেকে নাক টানার শব্দ শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাজ। শান্ত গলায় বলে উঠলো, ‘এখনো কান্না করছো?’

উত্তর দিলো না নুরা। প্রথমের মতোই চুপচাপ বসে রইলো। রাজ আবারো জিজ্ঞেস করলো, ‘দুপুরে খাবার খেয়েছিলে?’

নুরা কান্নায় ভাঙ্গা গলায় উত্তর দিলো, ‘ক্ষিদে ছিলো না।’

‘সকালে?’

নিরব রইলো নুরা। রাজ উত্তরের অপেক্ষায় রইলো। বেশ কিছুক্ষণ নুরার সাড়াশব্দ না পেয়ে বলে উঠলো, ‘বি স্ট্রং নুরা। এইটুকুতেই ভেঙ্গে পরলে হবে?’

নুরা ঠোঁট উলটে কাঁদু কাঁদু গলায় বললো, ‘আরব ভাই বলেছে আমাকে আর বাহিরে যেতে দিবে না।’

রাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো, ‘বাহিরে তো আর কোনো কাজ নেই তোমার। বেরুতেও হবে না। এখন রুম থেকে বেরিয়ে কিছু খাও।’

নুরা মিনমিনে গলায় শুধাল, ‘খাবো না।’

‘তাহলে আমিও এখন থেকে কিছু খাবো না।’

রাজের কাটকাট গলার কন্ঠ শুনে হকচিকিত হলো নুরা।এক পর্যায়ে রাজের অনুরোধের কারণে রাজি হলো। চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে গেলো। সেখানে নিশিতা, আয়েশা আর রোহানা মিলে রাতের খাবার তৈরি করছিলো। নুরাকে দেখে রোহানা শান্ত গলায় জানতে চাইলো, ‘কিছু লাগবে তোমার?’

কারোর দিকে তাকালো না নুরা। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখে অভিমানী গলায় বললো, ‘আমার অনেক ক্ষিদে পাইছে। খাবার দেন খাবো।’

কথাটা বলেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে বসলো। সবাই খুশি হলো অনেক। রোহানা কথা মতো দ্রুত খাবার নিয়ে নুরাকে দিলো।
_____________________

শ্রাবণের একুশতম দিন। ভোরে পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো দীবার। বারান্দার পর্দার ফাঁকে এক ফালি সূর্যকিরণ এসে পরল দীবার মুখে। মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলেই নিজেকে কারোর বাহুতে আবদ্ধ পেলো দীবা। বিস্মিত হয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই আবরারের ঘুমন্ত মুখখানি তার নজরে আসলো। কখন আসলো লোকটা? গতকালকের কথাগুলো মনে পরতেই বিষণ্ণবদন হলো তার মন। মলিন চোখে তাকালো আবরারের দিকে। নিজেকে ছাড়িয়ে উঠতে গেলেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো আবরারের। দীবাকে ছাড়ার বদলে উলটো জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো, ‘আরেকটু পরে উঠো।’

তবুও আবরারকে উপেক্ষা করে শুয়া থেকে উঠে বসলো। কোনো প্রকার প্রত্যুত্তর না করে বিছানা থেকে নামতে গেলেই আবরার তার বাহু ধরে বললো, ‘এখনো রেগে আছো আমার উপর? দেখো কাল কথাগুলো আমি..’

আবরারের কথা সম্পূর্ণ হবার আগেই দীবা কণ্ঠস্বর কিছুটা শক্ত করে বলে উঠলো, ‘না! কাল কথা গুলো একদম মিথ্যে বলেননি। জোর করেই আপনার উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যেমন আমাদের বিয়েটা। মানসিক ভাবে আতঙ্কে ছিলেন।’

আবরার উঠে বসে অস্থির গলায় বললো, ‘দীবা আমি তখন আমাদের বিয়ের কথা মিন করিনি। তুমি ভুল বুঝছো!’

তাচ্ছিল্য হাসলো দীবা। আবরারের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মলিন কন্ঠে বললো, ‘আমার তো মনে হচ্ছে আপনি বাধ্য হয়ে বিয়েটা মেনে নিয়েছেন। আমার সাথে থাকতে আপনাকে বাধ্য করা হয়েছে। আপনার কথা-ই সঠিক। আসলে দুইদিনের মধ্যে ভালোবাসা হয় না। কখনোই না।’

কথাটা বলে চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো দীবা। ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো, ‘আপনি আরো ঘুমাতে চাইলে রুমে গিয়ে ঘুমান। আমার এখানে অনেক কাজ আছে। আওয়াজে ঘুমাতে পারবেন না।’

বলেই শব্দ করে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলো। তপ্ত শ্বাস ফেললো আবরার। তার কথায় দীবা এতোটা কষ্ট পাবে কখনোই ভাবেনি সে। নিরুপায় হয়ে মাথার চুল গুলো দুই হাতে খামচে ধরলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বেরিয়ে গেলো দীবার রুম থেকে।
_____________________

অন্যান্য দিনের মতোই যথারীতি সকালের নাস্তা শেষ করে কলেজে যাবার জন্য তৈরি হয়ে নিলো তিনজন। নুরাকে স্বাভাবিক ভাবে নাস্তা করতে দেখে দীবা নুরা খুশি। এখন সাথে কলেজে যাবে। খুশিতে দুজন আত্মহারা। ড্রয়িংরুমে এসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই পিছন থেকে ডেকে উঠলো আবরার। দাঁড়িয়ে পরলো তিনজন। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকাতেই আবরার বলে উঠলো, ‘নুরাকে কলেজ যেতে হবে না। ক্লাসের নোট গুলো তোরা নুরাকে দিয়ে দিস।’

রিমি বিস্মিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, ‘মানে কি ভাই? নুরা কলেজ যাবে না কেন?’

নুরা চোখমুখ শক্ত করে আবরারের দিকে তাকালো। রাগে গটগট করে দ্রুত দৌড়ে রুমে চলে গেলো। নিশিতা সেখানে উপস্থিত আবরারকে ধমক দিয়ে উঠলো, ‘এইগুলো কেমন কথা আবরার? কিছুদিন পর ওদের পরিক্ষা। কলেজ না গেলে চলবে এখন? একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছো না তুমি?’

আবরার একরোখা গলায় বললো, ‘দরকার পরলে নুরার জন্য নতুন টিউটর রাখো। তবুও কলেজে যেতে হবে না।’

আবরারের দিকে এগিয়ে এলো দীবা। একদম সামনে এসে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়াল। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কাটকাট গলায় বললো, ‘কাল রোশান আঙ্কেল কে বললেন উনি আপনার উপর জোর করে সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। মানসিক ভাবে আতঙ্কে ছিলেন। খুব কষ্টে পেয়েছিলেন। তাহলে এখন আপনি নুরার উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন? নিজে বড়দের উপর চেঁচাবেন আবার সেম ভুল নিজেই করবেন। বাহ্!’

বলেই রিমি কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো দীবা। আবরারের প্রতি নিশিতা কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘তোর কাছ থেকে এমন অযুক্তিক কিছু মোটেও আশা করিনি আবরার।’

নিশিতাও চলে গেলো। রাগ আরো বাড়লো আবরারের। তবে নিজের উপর। সামনে থাকা টি-টেবিলের উপর একটা লা/থি মা’র’লো। সোফায় বসে চুল গুলো খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিলো।

চলমান…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here